কবিতা

  • নিশিজন্ম

    নাজমীন মর্তুজা   যাক রজনীতে ঝড় হয়ে যাক তুমুল তোমায় বৃষ্টির গানে সাজাবো – সম্পূর্ণ রাতের শেষে প্রিয় পরিচ্ছন্ন ঘুমে! আমার অনিয়ম লাবণ্য সরোবরে আত্মার পূর্ণস্নান করো জেনে রেখো আমার শরীরের উপত্যকায় খুঁজে পাবে নিরাকার সত্য ও প্রত্যক্ষ বাস্তবের সন্ধিক্ষণ।   আমরা উঠবো গগনতলে সমস্ত কুজ্ঝটিকাকে দূরে ঢেলে অযুত আঙুলের ছোঁয়ায় জ্বলে উঠবে শরীরে জল…

  • মমি ও মর্মরিত ধ্বনি

    রাহমান ওয়াহিদ   শিল্পী, তুমি দারুণ আঁকো, নিখুঁত পরিপক্বতায়। মুজিবের ধূমায়িত পাইপের দ্রোহী উদ্গিরণ নূর হোসেনের অবিস্মরণীয় খোলা বুক বিস্ফোরণ এমনকি মোনালিসা হাসির অবাক সিম্ফনিও তোমার রংতুলিতে নিখুঁত হয়ে ওঠে, যেন তুমিই সদ্য জেগে ওঠা পিকাসো, অনন্য কাইয়ুম।   সেই তোমার রংতুলিটা এমন বিবর্ণ, ডিমশাদা কেন? আমার মুখের ফ্রিকোয়েন্ট বিবর্তনে বিব্রত কি তুমি? ধরতেই পারছো…

  • দুটি কবিতা

    রঙ্গীত মিত্র রেললাইন   তখনো নীলরঙা ট্রেনটি বিকেল নিয়ে আসেনি পাহাড়ের ঢালে সূর্য গড়িয়ে পড়েছে। যদিও আমাদের পায়ে, তুমুল শীতকাল অভিজ্ঞ গাছেদের সাক্ষী রেখে কুয়াশাকে ডেকে আনতে গেছে। অথচ এখনো তোমার স্কুলে ছুটির ঘণ্টা বাজেনি। টাইমলাইনের মতো জেগে আছে পাহাড়ের নিচের রেললাইনটা।   বিপদ   জল নেই, ঝরনাও শুকিয়ে গিয়েছে। বৃদ্ধ ঘোড়ার মতো, পাহাড়ের শরীর…

  • পোশাক

    কামরুল ইসলাম ব্যক্তিত্বের হ্যাংগারে ঝোলানো কারিকুলাম – এইসব পোশাক-আশাক মধ্যপ্রহরের প্রার্থনা বেয়ে ঢুকে পড়ে বসন্তের এলোমেলো বাগানে- পোশাক মূলত একরং থেকে আরেক রঙে যাবার সহজ উপায়, আর এই জাগতিক খেলা পাতাঝরার আকৃতি নিয়ে বনবাদাড়ের স্বপ্নের দিকে ওড়ে   খোলা পথের চারপাশে বিবাহিত মনের কুমারীগণ বৈধব্যের পাঠ নিচ্ছে এমনই ছায়ায়। পোশাক কখনো জটিল জ্যামিতির অদৃশ্য থিওরেম…

  • দুটি কবিতা

    একরাম আলি   এক আমরা পাশের বাড়ি থাকি   এ-বাড়িতে কেউ থাকে দুটো ছায়া নড়েচড়ে, ঘোরে কখনো লম্বা কখনো এইটুকু মা আর মেয়ে   সারা দিন গান শোনা যায় সারা রাত থিতিয়ে থাকে গান পরী, ওগো শীতল হাওয়ার পরী ফুঁপিয়ে কান্নার শব্দ কার?   মায়ের পোশাকে মেয়ে, মেয়ের পোশাকে মা ডানা মেলে ওড়ে, হাঁটে, তর্ক…

  • জলবতী নারী

    মুজিবুল হক কবীর   আমার কবিতা দাঁড়ায় সংকটে, বিরহে তোমার পাশে – ঋতুর নিয়মে যখন আকাশ ছেয়ে যায় মেঘের আঁচলে গভীর বিচ্ছেদ বাড়ে, আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে, আসে বৃষ্টি, জলের সংসার – যেন বৃষ্টিজলে ক্ষয়ে যায় হৃদয়ের ভার – তুমি আছ কাছে – তবু মনে হয় বেড়ে গেছে ব্যবধান, প্রান্তরেখা ছেড়ে যেন আকাশসমান। যদি বৃষ্টি বুনোট দিবসে…

  • এ আমি অন্য কেউ

    খালেদ হোসাইন   আজকাল আমাকে আর আমার মতো দেখাচ্ছে না। সবাই ভাবছে, আমি অন্য কেউ। নন্দ অন্যভাবে চুল ছাঁটছে। বারান্দায় দাঁড়িয়ে চমকে উঠছি – দোলনচাঁপা গাছে ফুটে থাকছে বেলি বা জুঁই।   অন্য একটা ডাইনিং টেবিলে বসে অন্য-কারো ব্রেকফাস্ট করছি।   বাসার সামনে দাঁড়িয়ে থাকছে অন্য গাড়ি। ড্রাইভারের নাম পিয়াস নয়, আবুল। আমি ওকে তালবাগানে…

  • শব্দ ও উপাধি

    সুধীর দত্ত   রাশি রাশি ঢেকে আছে এক লজ্জা-কাতরতা, খুলি – খুলে ফেলি উপায় ছিল না, আজো নেই। উপাধি জড়িয়ে যায়, কাশ্মির থেকে আনা বহুমূল্য মেষশাবকদের তৃণ, আলোয়ানগুলি।   বাতাসও সম্ভ্রান্ত বড়। আগুনের কাছে তাই রেখে আসি পশু-মাংস, ম ম করবে পুড়তে পুড়তে, না হয় তখন যাওয়া যাবে, একা একা, সমুদ্রের ধারে, প্রেয়সীর চুল ওড়ে,…

  • ভাঙতে যে পারে

    পবিত্র মুখোপাধ্যায়   ভাঙতে যে পারে, গড়তেও তাকে জানতে হয়; শুধুই ভাঙার খেলায় যে থাকে, ধ্বংসেই দক্ষতা তার; টানতে নিয়ত অবক্ষয় হিংস্রতা, ঘৃণা শরীরের প্রতি অংশেই।   সৃষ্টির কাছে মগ্ন যে থাকে, সময় তার আবিষ্কারের তুরীয়ানন্দে দিন কাটে; সময় থাকে না কে কাকে দেখছে অবজ্ঞার হিমচোখ মেলে বাংলা অথবা গুজরাটে।   নির্মাণ অথবা সৃষ্টির মহাযজ্ঞে…

  • তৃণে-ছাওয়া আদিম ঠিকানা

    আসাদ চৌধুরী   খালি হয়। ঠিক খালি হয়। দেখা যায় না, তা’তে কী! কি ওয়েস্ট, জলেশ্বরী, জোড়াসাঁকো আঁকো, যত পারো এঁকে যাও, পেনসিল কী জলরঙে অশ্রম্ন-আর্তনাদে আঁকো নানা ঢঙে কেবল ভরাট করা নয় ঠিকঠাক ছেড়ে দেওয়াই শিল্প কিছু খালি থাক শেষ অব্দি কী ক’রে যে খালি হয় সে কি নিসর্গের সরল সিগন্যালে?   বুকে পুরে…

  • দুটি কবিতা

    আলোক সরকার   কাঁসর ঘণ্টা   পাহাড় থেকে নেমে আসছে। ছায়া ওই পিছন দিকে সর্বস্ব। ওইবার বাঁপাশে, এবার ডানদিকের হু-হু নিঃস্বতা। পাহাড় থেকে নেমে আসছে। অহিসাব, অর্ধহিসাব।   তোমার অনুপস্থিতির হিসেবগুলো ক্রমান্বয় ক্রমক্রিয় হয়েছে, সংগৃহীত হয়েছে। যোগফল হয়নি।   যোগফল নিকটবর্তী মেঘের বুকে হরিতবর্ণ, তাম্রবর্ণ তাদের কোলাহল চতুষ্পার্শ্বে থমথম নিরতিশয়।   শোনো শোনো মেঘাঞ্জলির অবতরণ,…

  • প্রথম অর্জুন

    জলধি হালদার এক এই বাংলার সব পাখি ও নদীর মতো আপনার সমূহ গা-ীব আর অগাধ জলের তূণীর চলে গেল বঙ্গোপসাগরে। কে ডাকবে তাঁরে! আমাদের লোক ও অলোককাহিনিতে এখন শূন্যতার প্রহর অভিদ্রোহী গাছের শিকড়ে। মনে করো সাবলীল, এসব বৈশাখে রচিত হয় ধারালো বঁটির সামনে ছাই মাখানো মাছ পরানের গহিন ভিতরে। দুই আমি নেপেন দারোগা থেকে আসছি…