ছোট গল্প

  • ঠিকানা  তোমার  হারিয়ে  ফেলেছি 

    সালেহা চৌধুরী লিলিকে অয়ন প্রথম দেখেছিল ভিনসেন্ট বুলাভার্ডে। একটি ফুলের দোকানে ফুল কিনছিল লিলি। অয়ন তখন পড়াশোনা করত প্যারিসে। অয়নের পরীক্ষা হয়ে গেছে। দুদিন পরে সে দেশে ফিরে যাবে। ঠিক তখনই।  চমৎকার ফরাসি মেয়ে। ভাঙা-ভাঙা ইংরেজি বলে। একরাশ লম্বা চুল। আর একটি কিউট মুখ এবং অড্রে হেপবার্নের মতো হাসি। সেই হাসি থেকেই কাছাকাছি আসা। অয়ন…

  • বিভ্রান্তি অথবা বাস্তবতা অথবা কাকতালীয়

    নকিব ফিরোজ ট্রেনটা রাত দশটায় স্টেশন ছাড়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যেই আশ্বিনের ঠান্ডা হাওয়ায় যাত্রীরা ঝিমুতে শুরু করে। ঘুমোনোর পরিকল্পনা করেই যেন এসব যাত্রী রাতের ট্রেনে রওনা হয় দূর-দূরান্তের পথে। তাই কামরার একদিকে একটা হলুদ আলো ছাড়া আর সব আলো নিভিয়ে দেওয়া। লোকজনের কথাবার্তাও কমে এসেছে। শুধু কানে বাজছে একলয়ে ছুটে চলা ট্রেনের ধাতব শব্দটা। শরীরে একরাশ…

  • যামিনী

    হাবীবুল্লাহ সিরাজী যখন প্রথম মিলিল, তখন চতুর্দিকে হা-পিত্যেশ করিতেছে ফাল্গুনের রৌদ্র। অবলোকনের মাত্রাটি বিসত্মৃত হইতেই ঝলমল করিয়া ওঠে পূর্ণ অবয়ব। হস্তবন্ধনী বাজিল, দুলিল কর্ণলতিকা এবং ক্ষীণ হইলেও নাসিকায় জানান দিলো কাঁচা অহংকার। মাভৈঃ, পুষ্পবিলাসে কেশ জুতসই। ছায়াপতাকা পশ্চিমে দোল খাইতেছে, পদপ্রান্তের সবুজ তৃণশীর্ষে পিপীলিকাকুল আহার্য-সন্ধানে নিমগ্ন। ভোগী পলাশের ওষ্ঠে ভাঙিতেছে সিঁদুরের নবীন কৌটা। তাহাকে দেখিয়া…

  • স্থির আনন্দ

    সমরেশ মজুমদার সোমলতা বলেছিল, ‘আপনার সঙ্গে ফোনে কথা বলে সুখ হয় না।’ শোভনলাল জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘সেকি! কেন?’ ‘এই যে দেখুন, কখন ফুড়ুৎ করে কুড়িটা মিনিট চলে গেল অথচ মনে হচ্ছে মাত্র দুমিনিট কথা বলেছি। সাধ মিটিয়ে যদি অনন্তকাল আপনার কথা শুনতে পেতাম।’ সোমলতার কথায় পুলক এল মনে, শোভনলাল গদগদ হলেন, ‘আমার কথা শুনতে তোমার ভাল…

  • নদীটি ও জারুল গাছ 

    দেবেশ রায় নদীছুট বলে কাকে? যে-জায়গা থেকে সেই জায়গার নদী ছুটে গিয়েছে। জায়গা না হয়ে মানুষও হতে পারে। যে-মানুষ থেকে তার নদী ছুটে গিয়েছে। মানুষ না হয়ে একটা গাছও হতে পারে। যে-গাছের তলা থেকে তার নদী ছুটে গিয়েছে। গাছটা তো নদীর পাড়ে এক বিরল ভঙ্গিতে বরাবর ছিল। অতবড় একটা জারুল গাছ নদীর একটা আড়ড়ির ওপর…

  • চারটি জোড়াতালি দেওয়া একটি প্রেমের গল্প

    পিয়াস মজিদ জোড়াতালি দেওয়া গল্প হয় নাকি? হবে না কেন? জোড়াতালি দেওয়া ফিল্ম যদি হতে পারে, কবিতা হতে পারে, চিত্রকর্ম হতে পারে, তবে গল্প নয় কেন? আর গল্প যদি হয় জীবনের প্রতিভাস তবে বিচার করে দেখলে দেখা যাবে মানুষের জীবন কত না জোড়াতালির সমাহার। এই সব জোড়াতালি রিফু করে তবে একটা ধোপদুরস্ত জীবন মেলে, এই…

  • বাস্কারভিল অভিযান

    অমর মিত্র এ-পাড়ায় যে তার একজন পাঠক আছে, হিতেন রায় তা নিজেই জানত না। হিতেন লেখে। কেউ-কেউ তা পড়ে। কেউ আবার দ্যাখে। দেখে ভ্রু কোঁচকায়, হাসে, মনে-মনে বলে, কী যে করে হিতেন, লিখে কী হয়। কেউ আর এক কাঠি, বলে, ও আবার লিখল কবে, এ-বাজারে সবাই লেখক। তবু হিতেন লম্বা-লম্বা দূরের চিঠি পায়, মোবাইলে মেসেজ…

  • উত্তল আকাশ

    ইমরান খান রাত তেপ্রহরের চায়ের দোকান আকাশবিহীন মেঘরঙের একটি পর্দা কেঁপে উঠতে দেখে ঘুম ভাঙল, নাকি ঘুম ভেঙে আকাশবিহীন মেঘরঙের একটি পর্দা দুলে উঠতে দেখেছিল, ভাবতে শুরু করার আগেই রশিদ আলি বুঝতে পারল তার ঘুম ভেঙেছে আর ঘুম ভেঙে স্বপ্ন দেখা যায় না বিধায় সে চুপচাপ পড়ে রইল। তার উপলব্ধি হলো, সে এখনো ঘুমিয়ে আছে।…

  • হাওয়ার সংকেত

    মণিকা চক্রবর্তী আমিন অনেকক্ষণ ধরেই দাঁড়িয়ে আছে মেইন সড়কে। মেইন সড়ক মানে বিশ্বরোড। চারদিক থেকে চারটি রাস্তা এসে মিশেছে এই সড়কটিতে। জব্বর মিয়ার চায়ের দোকানের পাশ দিয়ে যাওয়া সরু রাস্তার পুবপাশের খোলা জায়গায় অনেকটা জমির ওপর একটা বড় বটগাছ, সঙ্গে আরো কয়েকটা গাছ মিলে একটা আশ্রয় তৈরি করেছে। সড়কের পাশে এই জায়গাটি ঘিরে প্রতি সোমবার…

  • কাঠগড়ায় কদম আলি

    হাসনাত আবদুল হাই ঘরভর্তি লোক, দাঁড়াবার জায়গা নেই, এত মানুষের ভিড়, তার মধ্যেই গায়ে গা লাগিয়ে, ঠেসাঠেসি করে কোনোমতে দাঁড়িয়ে আছে লোকজন, ধাক্কাধাক্কিতে পড়ে যেতে পারত অনেকেই, কিন্তু শরীরের সঙ্গে প্রায় লেপ্টে থাকায় কেউ পড়ছে না, বেশ জড়াজড়ি করে দাঁড়িয়ে আছে, যেন একে অন্যকে ধরে আছে দুহাত দিয়ে, বুক আর পিঠ লাগিয়ে। এমন ঘরে কখনো…

  • বরিষ ধরা মাঝে

      পূরবী বসু মানিকের আকাশের সবকটি তারা একসঙ্গে দপ করে নিভে গেল। দুহাত দিয়ে ঘোর আঁধার হাতড়িয়েও মানিক দিশা পায় না। ঠাহর করতে পারে না সামনের দরজাটা ঠিক কোন দিকে। খুঁজে না পেয়ে একরকম ব্যর্থ হয়েই যেন বাইরে বেরোবার বদলে আবার ঘরের ভেতরেই ফিরে আসে মানিক। মাঘ মাসের বিকেল চারটা। ঝকঝকে রোদ্দুরে চোখে কিছুটা ধান্ধা…

  • হুনমোন

    বুলবন ওসমান গ্রামে পৌঁছতে-পৌঁছতে বেশ বেলা হয়ে গেল। অটোটা  রায়মনির ডাঙ্গার পাশে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ওপর থেকে অপেক্ষমাণ সবাই হুড়মুড় করে নেমে আসে। বয়োজ্যেষ্ঠ ভগ্নিপতি কাইয়ুমভাই বললেন, আমরা কখন থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। সে ঘণ্টা দেড়েকের ওপরে হবে… ভাই… রাস্তার যা অবস্থা… বারেক পেটে ভাত ছিল না… বলে ফজল, অটোচালকের পাওনা মিটিয়ে দিতে-দিতে। ততক্ষণে তার…