স্মৃতি

  • রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    আট প্রতিমা পূজায় আমার দাদুর  খুব আগ্রহ আমরা দেখিনি। তিনি প্রতি রোববার এক ধরনের মেডিটেশন বা কায়মনে চুপচাপ বসে ধ্যান করতেন। তার সঙ্গে পাড়া-প্রতিবেশী কয়েকজন যোগ দিতেন। ধ্যানশেষে ভক্তিমূলক গান হতো। দু-একটি গানের কথা আমার এখনো মনে আছে : গুরু আমায় করো করুণা আমি ঝড়বাদলে বেয়ে যাবো তোমার তরীখানা। অথবা ও গো তুমি চক্ষু দিলে…

  • রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    পাঁচ জন্মস্থান রায়পুরায় আমি যতদিন থেকেছি তার চেয়ে বেশিদিন কাটিয়েছি ময়মনসিংহে। তারপরও ঘুরেফিরে রায়পুরার স্মৃতি কিছুতেই মন থেকে দূর হয় না। রায়পুরায় বালিকাবেলায় কত আনন্দ-উল্লাসের সঙ্গে সময় কাটাতাম। সমবয়সী ছেলেমেয়েরা খেলাধুলা করে, হইহুল্লোড় করে দিনের কতটা সময় চলে যেতো তার হিসাব করার প্রয়োজন বোধ করিনি। মনে আছে, আমরা ছেলেমেয়ে একসঙ্গে গলা ছেড়ে গাইতাম সুরে কিংবা…

  • রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    রায়পুরা থেকে ময়মনসিংহ

    আমার বয়স যখন বছর ছয়েকের মতো তখন আমাকে ময়মনসিংহে দাদুবাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য পড়াশোনা। যমুনাপাড় থেকে ব্রহ্মপুত্রপাড়ে আমার এই যাত্রায় যে আমি খুব খুশি হয়েছিলাম তা নয়। বাবা-মা, ভাইবোনসহ এতদিনের স্বজন-পরিজন এবং পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে নতুন জায়গায় যেতে আমার খুব ভালো লাগেনি। তবু যেতে হয়েছিল বাবা-মায়ের ইচ্ছেতেই। তখন মেয়েদের তেমন লেখাপড়ার চল না থাকলেও…

  • একাত্তরে আমি ও আমার গ্রাম

    একাত্তরে আমি ও আমার গ্রাম

    সুনন্দা সিকদার ’৬১-র জানুয়ারিতে যখন দশ পূর্ণ হয়ে এগারোয় পা তখনই দাদার সঙ্গে চিরবিচ্ছেদ ঘটে আমার। কাঁটাতারের ওপারে পড়ে রইল দাদা, যে ছিল আমার দশ বছরের শৈশবে আমার সব থেকে বড়ো সত্য। আমাকে এপারে আসতে হলো, আর নিরন্তর এই বিচ্ছেদ-বেদনা গোপন রাখার সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হলো। যে-বেদনা থেকে রেহাই নেই, প্রকাশ করার কোনো জায়গা নেই,…

  • মেঘনা পাড়ের মেয়ে আমি

    মেঘনা পাড়ের মেয়ে আমি

    দেখতে দেখতে বয়স তো কম হলো না। অনেকটা পথ হেঁটেছি এই সময়কালে পৃথিবীর পথে। অনেক কিছু দেখেছি। মিশেছি কত মানুষের সঙ্গে। কত মানুষের কত কথা, কত গল্প। স্মৃতিরা এখন প্রায়ই হানা দেয়, মনের পর্দায় ভেসে ওঠে কত ছবি, কত মুখ। ফেলে আসা দিনগুলো আমাকে ভাবায়, তাড়া করে। কে যেন বলে ওঠে, অলস সময় না কাটিয়ে…

  • জলময় মধ্যবঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাত্রাপথ শত বৎসর পরে অনুসরণ

    জলময় মধ্যবঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের যাত্রাপথ শত বৎসর পরে অনুসরণ

    (প্রথম পর্ব) পূর্বকথন ‘মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন হয়েছেন প্রাতঃস্মরণীয়’ বহুলপঠিত এই আপ্তবাক্যটিতে যে-অর্থে ‘মহাজনের পথ’ ব্যবহৃত, তা তো পষ্টত ‘জীবনাদর্শে’র পথ। কিন্তু প্রাত্যহিক জীবনযাপনে এমতো মহাজন ব্যক্তিদেরও তো সাধারণ অর্থের পথে নামতে হয়? আর এমন প্রতিটি যাত্রার জন্য পূর্বনির্দিষ্ট থাকে অন্তত একটি উদ্দেশ্য –    যার কেন্দ্রে থাকে হয় ‘সম্পদ’ (অর্জন বা সুরক্ষয়) নয়…

  • এক নিভৃতচারীর সক্রিয় জীবন

    এক নিভৃতচারীর সক্রিয় জীবন

    সত্তর-উত্তীর্ণ মানুষ ক্রমান্বয়ে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ে। বিগত কয়েক মাসে স্বল্পকালের মধ্যে অভিভাবকতুল্যজন, সহপাঠী ও নিকটজনের তিরোধানের ফলে আমাকে একাকিত্ব গ্রাস করেছে। বিশেষ করে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ও আবুল হাসনাতবিহীন কালি ও কলমে হাসনাত সম্পর্কে কিছু লেখা বেশ কষ্টকর। আবুল হাসনাত সারাজীবন স্বল্পবাক ও নিভৃতচারী। এজন্য আত্মজীবনীতে সে তার আত্মবিশ্বাসের অভাবকে দায়ী করেছে, যদিও বস্তুতপক্ষে দায়টি তার…

  • স্মৃতির দর্পণে

    স্মৃতির দর্পণে

    ১৯৩৭ সালে আমার মা অশ্রুবালা দাশগুপ্তকে জলপাইগুড়ি হাসপাতালে লেডি ডাক্তার হিসেবে চাকরি দেওয়া হয়। কোয়ার্টারও দেওয়া হয় হাসপাতাল-লাগোয়া। হাসপাতাল আর কোয়ার্টার্সের মধ্যে হাতদুয়েক দূরত্ব। হাসপাতালের দোতলায় ছিল লেবার ওয়ার্ক। ডেলিভারি কেসের সময় হলে ওয়ার্ডের জানালা খুলে নার্সরা চিৎকার করে বলতেন, ‘মেমসায়েব, মেমসায়েব, এবার আসুন, টাইম হয়ে গেছে।’ একদিকে হাসপাতাল, অন্যদিকে একটা মক্তব, মুসলমান বস্তি। সামনে…

  • কবিতা-গান-শিল্পের   ঝরনাধারায়

    কবিতা-গান-শিল্পের ঝরনাধারায়

    মানুষ হলো নদীর মতো দুজনই তরুণ। একজন সুমনকুমার দাশ, অন্যজন নর্মদা দাশ – আমাদের সঙ্গে কাজ করে, পড়াশোনা-লেখালেখিতে আগ্রহ। তারা আমাকে বলল, ‘আপনি তো সিলেটে যাবেন। এক ঘণ্টা সময়ের জন্য যদি আপনার পুরোনো বন্ধুবান্ধবকে ডাকি, কথা বলেন, তাহলে কেমন হয়?’ বললাম, ভালোই হয়। রফিকুর রহমান আমার দীর্ঘদিনের বন্ধু। এমাদ উল্লাহ্ শহীদুল ইসলাম, কবি তুষার করও…

  • এক পরিক্রমা কথা

    এক পরিক্রমা কথা

    ১৯৫০-এর জুন মাসে দার্জিলিংয়ে ‘বনলতা সেনে’র সঙ্গে আমার হঠাৎ দেখা। তাঁকে জিজ্ঞেস করি, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?’ এটুকু পড়ে পাঠক অবাক হচ্ছেন নিশ্চয়ই। তাহলে খুলে বলি। ১৯৫০-এ গরমের সময় মা ও দাদার সঙ্গে আমরা জলপাইগুড়ি থেকে দার্জিলিংয়ে গিয়েছিলাম। তখন দারুণ ধস হয়। ধসে সব পথঘাট বন্ধ হয়ে যায়। কিছু করার নেই। আমি কাছের একটা বইয়ের দোকান…

  • কলকাতার বাঙাল  বৃন্দাবন মল্লিক লেন

    কলকাতার বাঙাল বৃন্দাবন মল্লিক লেন

    কলকাতা শহরে এমন মানুষ আছে, যারা একসময়ে পূর্ববঙ্গবাসী বা কোনো পূর্ববঙ্গবাসীর উত্তরপুরুষ হলেও কলকাতায় এসেছে, এবং থেকেছে নানা কারণে – অনেক আগে থেকে আজ পর্যন্ত – কখনো পড়াশোনার জন্য, কখনো চাকরিবাকরির সন্ধানে, কিংবা পরবর্তীকালে দেশভাগে বিপর্যস্ত হয়ে। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় তো দেশত্যাগের আরেক পালা। এরাই বস্ত্তত কলকাতার বাঙাল। কলকাতায় থাকলেও পূর্ববঙ্গের অনেক অভ্যাস ও স্বভাব…

  • দৃশ্যাবলি : অন্নদাশঙ্কর

    দৃশ্যাবলি : অন্নদাশঙ্কর

    জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে ১৯৪৮ সালে পড়ার সময় ক্লাসে একটি ছেলে আসে, আমার সহপাঠী হয়, সেন্ট্রাল ব্যাংকের ম্যানেজারের ছেলে। তার জন্মদিনে আমাকে নেমন্তন্ন করে। সেদিন তার বোনের সঙ্গেও আলাপ হয়। ভাইবোনে মিলে আমার মাথা খারাপ করে দেয় ছেলেমেয়ের শরীর নিয়ে নানা কথা বলে। তারা আমার বয়ঃসন্ধির অভিশাপ। কোনোমতে নবম শ্রেণিতে উঠি। নবম শ্রেণিতে সহপাঠী…