স্মৃতি

  • মনে পড়ে

    মনে পড়ে

    আমার দাদি পাথরের মতো বসে ছিলেন।

  • তিনি একজন মৃত্যুঞ্জয় শহিদ

    তিনি একজন মৃত্যুঞ্জয় শহিদ

    বাদল বরণ বড়ুয়া তিনি একজন আদম-সন্তান : আশরাফুল মাখলুকাত – সৃষ্টির সেরা জীব -­ মানুষ। তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষক, সুদীর্ঘকালের প্রৌঢ় শিক্ষক। তিনি একজন নিষ্ঠাবান নাগরিক; পাকিস্তানি নাগরিক। না, সব পরিচয় বাতিল -­তিনি একজন বাঙালি, সর্বোপরি হিন্দু (ব্রাহ্মণ হলেও) -­এই তাঁর বড় অপরাধ। তাই তাঁকে ট্রেন থেকে নামানো হলো আরো অনেকের সঙ্গে। ঊনত্রিশ নভেম্বর। উনিশশো…

  • অলস লিপি-লিখা

    সুবর্ণা চৌধুরী আমাদের বাড়ির নিয়ম অনুযায়ী আমাদের ভাইবোনদের ঘুম ভেঙে সকালের প্রথম কাজ ছিল বাবার কাছে ধ্রম্নপদী সাহিত্যের পাঠ নেওয়া।  বাবা বাড়িতে থাকলে সেটা অত্যাবশ্যক বিষয় ছিল। ব্যত্যয় ছিল দেশের বাইরে থাকা দিনগুলো আর একাধিকবারের দীর্ঘ হাসপাতালবাস। সেসব পাঠ অতিঅবশ্যই স্কুলের পাঠ্যক্রমের বাইরের বিষয় – সাহিত্যের হাত ধরে এসে পড়ত বিশ্ব ইতিহাস প্রসঙ্গ আর কিছু…

  • পুরানা পল্টন – ৫নং বাড়ি

    অলকনন্দা প্যাটেল কোনো একসময় আমরা চলে আসি পুরানা পল্টনে, ৫নং বাড়িতে – কবে জানি না। পুরানা পল্টনকে আমরা নতুন ঢাকার অংশ বললেও এর ইতিহাস নতুন নয়। পাঁচশো বছর আগে পাঠানি সুলতান আমল থেকে এ-অঞ্চল ছিল ক্যান্টনমেন্ট বা সৈন্যদের আখড়া। এ ব্যবস্থা চলেছিল ইংরেজ রাজত্বেও, প্রথম মহাযুদ্ধ অবধি। তারপর আখড়া চলে গেল তেজগাঁও; ধীরে-ধীরে শুরু হলো…

  • গ্রামের টান মার্টিন কেম্পশেন

    অনুবাদ : জয়কৃষ্ণ কয়াল আমার ছোটবেলাটা কেটেছে একটা আদ্যিকেলে খামারবাড়ির পাশে। জার্মানির এক অমত্ম্যজ শহরের একটা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন আমার বাবা। জায়গাটা পাহাড়-জঙ্গলে ঘেরা, হাড়-কাঁপানো ঠান্ডা বাতাসের জন্যে বিখ্যাত। সেই শহর থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে একটা গ্রামের ধারে বাসা নিলাম আমরা। আমাদের ঠিক পাশের বাড়িটা ছিল ট্রাপ পরিবারের। তাঁরা কিছু জমি-জায়গা চাষবাস করতেন, গরম্ন-মুরগি-শূকর পুষতেন।…

  • আড্ডার এপার-ওপার

    দেবব্রত চক্রবর্তী আড্ডাপ্রিয় বাঙালি। মাছ, ভাত, রসগোলস্না আর আড্ডা। তবে সেই আড্ডায় ভাটা পড়েছে। সেই রকম জমজমাটি আড্ডা এই হোয়াটসঅ্যাপ আর ফেসবুকের যুগে একটা অন্য রূপ পেয়েছে। বৈঠকি আড্ডায় সেই অনির্বাণ রূপটি আর নেই। তাই আড্ডা এখন নস্টালজিয়া। ফিরে দেখা স্মৃতির পাতা। স্মৃতি-বিস্মৃতির ছবি। কিছু উজ্জ্বল, আবার কিছুটা অনুজ্জ্বলও বটে। তবে আড্ডা কখনো থেমে থাকে…

  • ছেড়ে আসা মাটি : দার্জিলিং

    সুরজিৎ দাশগুপ্ত   দার্জিলিং দার্জিলিং বুকের মধ্যে বাজল ঘণ্টা ঢং ঢং। চোখের সামনে উঠল ভেসে আকাশজোড়া মসত্ম এক বিশাল কুয়াশা এবং সেই কুয়াশার ভেতর থেকে আসেত্ম-আসেত্ম জেগে উঠতে লাগল কোনো গভীর ছায়া, ছায়ার পাহাড়, পাহাড়ের পর পাহাড়ের ছায়া, যেন অমত্মহীন ছায়ার মিছিল। এখন মনে হয় যেন এক স্বপ্ন, এলোমেলো, ছেঁড়া-ছেঁড়া, ঝাপসা-ঝাপসা। দেখা যাক, টুকরো-টুকরো ছবিকে…

  • ঝড় সুনন্দা সিকদার

    সাদিক মিয়া সাতচল্লিশ সালে দেশটাকে দুই ভাগ করে দিয়ে সাহেবরা চলে গেল। গেল ঠিকই, কিন্তু আমরা স্বাধীনতার আনন্দ অনুভব করতে পারলাম না। দেশভাগের কিছুদিন পর থেকেই গ্রামের হিন্দু পরিবারগুলো ভারতের পথে পা বাড়াল। তাঁরাও কাঁদতে কাঁদতে যেতেন, আমরাও চোখের জলে তাঁদের বিদায় দিতাম। তাঁদের বহুপুরুষের ভিটাগুলো আস্তে আস্তে ঝোপ-জঙ্গলে ভর্তি হয়ে উঠল। সম্ভবত সকলেরই তাঁদের…

  • নদী আমায় ডাকে

    কাইয়ুম চৌধুরী হাতের আঙুলের মতো নদী বাংলাদেশজুড়ে। তবু, অনেকের নিজের একটা নদী থাকে, অনেকের থাকে না। শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, কথাশিল্পী হাসান আজিজুল হক ও কবি মোহাম্মদ রফিক বলেছেন তাঁদের নদীর গল্প। নদী আমাকে হাতছানি দেয়, ডাকে আমি প্রলুব্ধ যৌবনবতীর আহবানে, ভেসে যাই তার দুকূল প্লাবিত যৌবনের টানে। আমি অবগাহন করি – দুহাতে উন্মোচিত করি তার…

  • আমেরিকা পর্ব

    সৈয়দ জাহাঙ্গীর ১৯৫৫ সালে ঢাকার চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে পাশ করে সবে বেরিয়েছি। ব্রিটিশ কাউন্সিলের ডিরেক্টর জিওফ্রে হেডলি এবং ইউএসআইএস লাইব্রেরির ডিরেক্টর গেইলর্ড হফ্টাইজার – এ দুজন আমাকে বেশ সহযোগিতা করেছিলেন সে-সময়। জিওফ্রে হেডলি ছিলেন আমার ছবির বিশেষ ভক্ত। আমার ছবি তিনি কিনেছিলেন এবং অন্যদের কাছে আমার ছবি বিক্রি করাতেও তিনি সচেষ্ট থাকতেন। ওই সময় তিনি…

  • সত্যজিৎ রায়ের ছেলেবেলা

    নলিনী দাশ মাণিকের, মানে সত্যজিৎ রায়ের ছেলেবেলার কথা সুসংবদ্ধভাবে লেখা আমার পক্ষে কঠিন, কারণ আমার নিজের সুমধুর বাল্যস্মৃতির সঙ্গে তা মিলেমিশে গেছে। আমার মা পুণ্যলতা চক্রবর্তী ছিলেন মাণিকের বাবা সুকুমার রায়ের পিঠোপিঠি ছোটবোন। একশ নম্বর গড়পার রোডের যে-বাড়িতে ১৯২১ সালের মে মাসে মাণিকের জন্ম হয়েছিল, আমারও জন্ম হয়েছিল সেই একই বাড়িতে, তার প্রায় পাঁচ বছর…

  • আত্মপ্রতিকৃতি : স্মৃতির মানচিত্র

    সৈয়দ জাহাঙ্গীর শৈশব-কৈশোর মায়ের কাছে শুনেছি আমরা ছিলাম চার ভাই আর এক বোন। বোনটা মারা যায় মাত্র ১২ বছর বয়সে। ওর মুখে একটা ফোঁড়া হয়েছিল। কুলগাছের একটা কাঁটা লেগে ফোঁড়াটা ছিঁড়ে গেলে টিটেনাস হয়ে সে মারা যায়। সে-সময় টিটেনাসের লাগসই চিকিৎসা ছিল না। এক ভাই মারা যায় দু-তিন বছর বয়সের সময়। আমরা তিন ভাইয়ের মধ্যে…