কবিতা

  • ভূমিকা

    রেজাউদ্দিন স্টালিন   জীবনের বিরম্নদ্ধে যারা অত্যন্ত গোপনে তারাও বিশ্বাস করে সুদিন আসবে। একজন ভিখারিও বিশ্বাস করে দাতাদের অন্তর আরো দয়ার্দ্র হবে। খরাকবলিত কৃষকের বিশ্বাস এই খাঁ-খাঁ প্রান্তরে বর্ষণ হবে একদিন। মা ভাবে তার নিরম্নদ্দিষ্ট সমত্মান দিগমেত্মর খোলস ভেঙে বেরিয়ে আসবে, রংধনু। পরাজিত নিরস্ত্র ভাবে, বন্দিশালার দেয়াল অকস্মাৎ একদিন ভেঙে পড়বে। একজন ঈশ্বরে অবিশ্বাসীও ভাবে,…

  • আকাশে মেঘ

    আশিস সান্যাল   আকাশে দুরন্ত মেঘ হাওয়া বয় শোনা যায় দূর থেকে সমুদ্রের স্বর। পাতা ঝরে – মনে হয় অন্ধকারে ত্রসত্ম যেন সমসত্ম প্রহর।   হয়তো এখানে আমি মনে পড়ে হায় একদিন স্বপ্নময় বিজন সন্ধ্যায় তোমার দু-হাত ভরে দিয়েছি বকুল ছুঁয়েছি স্বপ্নের মাঝে জলের মতন স্নিগ্ধ তোমার বর্তুল।   তারপরে ভেসে গেছি দুজন দুদিকে হায়…

  • বাগানের দেবী

    রণজিৎ দাশ   যখনই তোমাকে দেখি, অদম্য রমণী তুমি – চৈত্রঝড়ে তছনছ বাগানের মতো এত প্রাণবন্ত, টাটকা, সতেজ? ভাঙা ডালে, ছেঁড়া ফুলে, ঝরাপাতা, পাখির পালকে ল-ভ-, বৃষ্টিভেজা মাটির সুগন্ধে-ভরা দুরন্ত যুবতী! তোমাকেই দেখি আমি, ঘুরেফিরে, শীতে গ্রীষ্মে কলহে বিচ্ছেদে অটুট, ভ্রূক্ষেপহীনা; যেন তুমি তুফান-শিকারি – বজ্রপাতে শুদ্ধ-হওয়া তোমার বাতাসে আরো ঘন অক্সিজেন বুক ভরে টানি,…

  • কাটাকুটি

    শিহাব সরকার   ধ্রম্নবসত্য অবশেষে বোবাকান্না, কাটাকুটি ছিঁড়ে-ছেনে কত পঙ্ক্তি বানাই, পঙ্ক্তি ভাঙি ছিল এইসব আমাদের কুহেলিকালে নিকষ অন্ধকারে এখন চোখ খুলি   রাত জেগে সারারাত তারা খুঁজি আকাশে।   নক্ষত্রেরা জ্বলে ওঠে কী মনোহর উজ্জবল আকাশের ওপারে শোক, আহা, ওই সুপারনোভা! অন্ধগলি ধরে হাঁটার পরে মৃত্যুর কুয়াশা পথ গিয়ে ঢুকেছে হারানো গুহামুখে।   ওইখানে…

  • বৃত্তান্ত

    সাবেরা তাবাসসুম   কী করলে এ-জীবন নিয়ে?   লিখলাম ‘একটা চুমু দাও তো, খাই’ আর বৃষ্টি এল বৃষ্টিগুলো নারকেল পাতা বেয়ে সুড়সুড়িয়ে নেমে এল নেমে আসা পানিগুলো ফোঁটা-ফোঁটা পিঁপড়ে হয়ে মাটি ছুঁল – এই দেখে-দেখে কেটে গেল একটা জীবন!   কী করলে এ-জীবন নিয়ে?   হিন্দি ছবির কোমর-বাঁকানো সুখ আর বুক-ঝাঁকানো দুঃখ দেখে-দেখে – শাম্মী…

  • মন

    রাহুল ঘোষ ভিতরঘরে তুমি অনেকক্ষণ নেই দেখে বিষাদ সাজাই কী করে যে এখনো অমন নিষ্পৃহতা আঁকো   এখানে উদ্বেগ তাই পেতে বসে নিজস্ব সাঁকো।     এখানে পাতার ফাঁকে মাঝেমাঝে রোদ, কতদিন পরে উঁকি দেয় অক্ষরযাপনে, অতল দিঘির মতো টানে যোজন দূরত্বের রহস্য মিশে যায় চুলের বন্যায়   ঘুম-ঘুম অনাবিল ঠোঁট জাগে মনের আভায়।  …

  •   বিভ্রান্ত ঈশ্বর

    খোরশেদ বাহার   বিভ্রান্ত ঈশ্বরের দৃষ্টি আজ ছানি পড়া বৃদ্ধের চোখ ভোরের কুয়াশায় রেখে পা সমুদ্র বিলাসে মগ্ন তিনি, উলটোরথের যাত্রী পলকে পেরিয়ে গেছেন হাজার বছর ইতিহাসের পাতাকে রেখেছেন বুকপকেটে বন্দি চতুর্ভঁাজে।   সভ্যতার গোলক-ধাঁধায় আক্রান্ত উন্নয়নের আলোক রশ্মি সুরম্য অট্টালিকা আর কনক্রিটের দেয়ালে পেরেকবিদ্ধ মানবতার বিলবোর্ড অতিক্রান্ত সুপার হাইওয়ের মোড়ে-মোড়ে রঙিন আলোর ঝলকানিতে ঝুলছে…

  • চিহ্নহীন দিনের ডায়েরি

    শুভাশিস সিনহা   এক দূরে যে দাঁড়িয়ে থাকে, সে পেছনে দেখে না তাকিয়ে কেবল এদিকে চায়, মাপে পথ চোখে-চোখে, জানে নয়া ঠার, নীরব ধ্বনিতে ওড়াবে মরণধূলি, তারপর হাতে হাত মেলাবে আনন্দে, ‘পরিচয় পেয়ে ভালো হলো’ দূরে থাকে, আরো দূরে তার ছায়া ছুটে গেছে শরীরের দাসত্বের শিকল আলগা করে সে তা দেখল না, এদিকে তাকাল, দেহ…

  • ভাঁটবনে বসন্ত উৎসব

    শামসুল ফয়েজ   রাঘবপুরের ভাঁটঝাড়ে বসন্তবাহার মৌমাছি ও প্রজাপতি মেতেছে উৎসবে রেললাইনের দুধারে, ধানক্ষেতের চিকন আলে বাঁশঝাড়ের কিনারে ভাঁটফুল ফুটেছে থরে-বিথরে ভাঁটবনে সারা বাংলায় পথপাশে প্রচারের শুভেচ্ছাবিহীন প্রতিটি বছর এই অঘোষিত বসন্তবরণ মৌমাছি ও প্রজাপতির নাচে তো কমতি নেই। নেপথ্য সংগীতে দূরাগত কুহুতান। বিমুগ্ধ হাওয়াও মাতোয়ারা ছড়ানো সৌরভে না থাকুক বাতিসাজ, গিটারের টুংটাং কী যে…

  • অন্য মুখোশ

    ওমর কায়সার   এবার নতুন করে সাজিয়েছি আমার মুখোশ বোধের অতীত কোনো রঙে ভিন্ন কোনো ভাবের বিন্যাসে। এ আমার লুকোচুরি খেলা নিখিল ব্রহ্মা– একমাত্র আমার আড়াল তুমি তাকে খুঁজেও পাবে না।   মৃত সব নদীর স্রোতরেখা ধরে হেঁটে যাও মানচিত্রে খুঁজে দেখ চুম্বনে রক্তিম হয়ে-ওঠা কালো তিল চিহ্নিত হবে না।   স্মৃতির অতলে কোনো গান…

  • আসে যায় মাঝখানে সামান্য সময়

    মাহমুদ কামাল   আসে যায় মাঝখানে সামান্য সময় এর মাঝে ঝর্ণাধারা এর মাঝে ঢেউহীন নদী যখন অচেনা সুর বেজে ওঠে বিকল্প বাগানে শোক তাপ তুলে রেখে ভ্রমণে – বিষাদ জাগে ভোর অপাপ ভোরের শুচিস্নিগ্ধ হয়ে উঁকি দেয় রোদ জীবন-যতির ছায়ায় অতিদ্রম্নত বিকেলের নদী বিকেল পড়ন্ত হয়ে ঢেউগুলো নীরব সন্ধ্যায় রাতের যৌবনধ্বনি স্রোতনদী ভেঙে দেয় বৃতি…

  • শুয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস

    মিনার মনসুর   শুয়ে আছে দীর্ঘশ্বাস। মাটিও বিব্রত। হাড়-মাংস গিয়েছিল খসে ঢের আগে – তাচ্ছিল্যে-বিদ্রূপে; তবু সতত জাগ্রত ব্যাকুল হৃদয় ছিল পূর্ণ অনুরাগে। ছিল না সম্বল কিছু – চিরঅনিকেত। ঘাসেও রাখেনি পা – সে কষ্ট পায় যদি! আকণ্ঠ কণ্টক তার; বঞ্চনার প্রেত তবু করেছে আদিম নৃত্য নিরবধি।   বণিকের বেটা করে নাই মাথা নত –…