কবিতা

  • নদীই উপাত্ত যখন

    হারিসুল হক   ক. কী ছন্দে তুলি তাল টুং টাং নবাবি ঘরানা   ভিতরে যে ঝড় বয় ভাঙে এ কোন তারানা   খ. এ  আমার ক’টাকে  ভাঙি ষোলবার আছড়ালেও টোপর পড়ে না তাই ঝাঁকাই   গ. নদীই উপাত্ত যদি মেঘ কার শিখ-ী বাহন ঘুমচোখে চেয়ে দেখি সজারুর যাপিত জীবন   ঘ. উল্টাও উল্টাতে উল্টাতে  তুমি…

  • হে শহিদ

    মোহাম্মদ রফিক   শত্রুপক্ষ প্রেমের, মানব-মানবীর রাষ্ট্র, দুষ্ট-রাজনীতি, সরকার-কাঠামো, ক্ষমতার দম্ভ, লোভ, কামার্ত লালসা,   ইতিহাস, দীর্ঘ সিঁড়ি বেয়ে তৈরি সব সুরম্য প্রাসাদ, অত্যাচারী, শাসক-শোষক, ফড়ে, বেনিয়া, বাইদ্যার দলবল, অনুচর, ছুরি-কাঁচি হননের, নরমেধযজ্ঞ অতঃপর   অনুভব, অনুভূতি, উষ্ণ আবেগের টান, স্বার্থ-পরিপন্থী, সুতরাং ধ্বংস করো, যেখানেই পাও, এভাবেই চলবে, চলে যদি না আমূল পালটে যায়, বা…

  • শহীদ কাদরীর তিনটি কবিতা

    মানুষ, নতুন শতকে   আজ আবার উদ্যত ছুরি মানুষের হাতে, ওর পায়ের নিচে পিষ্ট হচ্ছে নারী, শিশুরা নিহত হচ্ছে চতুর্দিকে!   কবি, তোমার বর্মগুলো বের করে নাও। তোমার কবিতাই শ্রেষ্ঠ বর্ম আজ!   মধ্যযুগের অন্ধকার ছিঁড়ে আবার উদ্যত ছুরি মানুষের হাতে। আমাদের চেনা নগরগুলো থেকে উঠছে ক্রন্দনধ্বনি কবি, ওকে প্রতিহত করো। কবি তুমি জানো আমাদের…

  • একা পাখি

    নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী   জামরুল গাছের পত্রপুঞ্জের আড়ালে ছুঁচোলো ঠোঁটের সেই ছোট্ট পাখিটিকে আমি একবার দেখেছি আজও, শুনতেও পেয়েছি তার ডাক : চিড়িক, চিড়িক। ওটি যে টুনটুনি পাখি, তা-ই বা কে না জানে। কিন্তু ঠিক এই মাঘ মাসের শীতে ওদের কি এখানে দেখা যায়?   বর্ষার দাপট শেষ হবার বেলায় ওরা আসে। কখনও দু-চার জোড়া, আবার…

  • জীবন

    জুননু রাইন প্রতিদিন চলে যায় একটি দিন একটি দিনের অপেক্ষায় সূর্য একটি দিনের অপেক্ষায় চাঁদ একটি দিনের অপেক্ষায় অন্ধকার …কিশোরের দুরমত্ম মাঠ ফুলের মুকুল জেলের নৌকো ফসলের হাট পুকুরে সন্ধ্যার ঘাট …প্রেমিকার চোখের কাজল নিয়ে নদীর হাহাকার ছুঁয়ে সমুদ্রের বৃহৎ শূন্যতা নিয়ে চলে যায় চলে যায় মানুষের প্রতিদিনের একটি দিন।

  • তোমার বাড়িয়ে দেওয়া হাত

    অর্পিতা বন্দ্যোপাধ্যায় তোমার বাড়িয়ে দেওয়া হাত ছুঁয়ে দিতে চাইনি কখনো শুধু বুঝে নিতে চেয়েছি প্রতিরোধগুলো, যে-রোদ স্তব্ধ করে লেবুফুলের একা নির্জনতা সে-রোদে পুড়ে তামাটে হয়েছে হাত ও-হাতের আড়াল ভেঙে ডিঙোবে না নির্জন দুপুর ও-হাত জানে নির্জনতা মানে কিছু অলীক সংলাপ ও-হাত জানে অন্ধকার লেখা আছে হাতের তালুতে, ওই প্রসারিত হাতে মূল্যহীন কিছু অমূল্য দায়, হাতটা…

  • বিশব শিশুর খেলা

    স্বদেশ রায় গাঢ় অন্ধকারে দূরতম সমুদ্রবুকে ঝড়ো হাওয়া আর মেঘের ডানায় ঢেউগুলো উঠলো ফুলে, তাদের মাথায় মাথায় তখন এক একটি কেশর ফোলানো সিংহ তাদের কণ্ঠ থেকে বেরিয়ে এলো মহাকালের সিংহনাদ বাতাসে বাতাসে ছড়িয়ে পড়লো মহাকালের সেই শব্দতরঙ্গ পৃথিবীতে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়গুলো করলো মাথা নত আর গভীর অন্ধকার তাকে জানালো অভিবাদন সূর্যের আলো তখনো জানেনি মহাকালের…

  • রুটিগাছ

    মজনু শাহ রুটিগাছ তলে বসে সারারাত দেবনিন্দা করি – রাতের বাগানে ঢুকে স্মৃতিগুলো বাদুড়ের মতো নষ্ট করে ফল, দেখি, ডুবে যাচ্ছে কর্দমাক্ত পথে গরুর গাড়ির চাকা, সাত মিনিটের আয়ু নিয়ে এক্ষুনি জন্মালো কেউ, তুমি কেন অস্থির কুসুম? আজ সুফি-ধূলিকণা যত আছে এখানে ওখানে বাতাসে গভীরভাবে অন্ধ হতে হতে উপস্থিত। ভ্রমণশীল উদ্ভিদ, এত কেন ভয় হেমমত্মকে?…

  • লাংকাওয়ি

    শিহাব শাহরিয়ার প্রেমিকার ঠোঁটের মতো ছুঁয়ে দিলাম আন্দামানকে মার্জিত রূপে আমার কাছে ও খুলে দিলো গতর ভাবতে পারিনি ও এতো সুন্দর! এ আমার দ্বীপবাস নয় তবু লাংকাওয়ি আমাকে বাড়িয়ে দিলো বনলতার হাত সুভলংকে মনে হলো ছোট বোন এসো আমরা নীল জলের শরীরকে ঘুমকাতর করি

  • আমার ঘুমের রক্ত

    জলধি হালদার শেষ রাতে মাঝে-মাঝে আমি বিছানা ভিজিয়ে ফেলি। গতকাল যেমন মরুভূমিতে বেড়াতে গেছি পঁয়তালিস্নশ পঞ্চাশ ডিগ্রিতেও গরম লাগছে না। কোনো দিন মধ্যশীতের আইসল্যান্ডে আমি দিব্যি হাফহাতা গুরু পাঞ্জাবি। মাঝে-মাঝে কুয়াশামাখা একটি মেয়ে খুব পরিচিত, মনে হয় কাছাকাছি থাকে শহর জুড়ে খুঁজে পাইনি কোনো দিন। মেয়েটির শরীরে আজো ‘জল পড়ে পাতা নড়ে’। ঘুমের রক্তে যখন…

  • পতিতপাবনী

    গোলাম কিবরিয়া পিনু পড়শি, আমার বিপদের সময়ে আরো মূল্যহ্রাস করে ঠেলে দিলো পতনের মুখে! পড়পড় অবস্থায় যখন কারো হাত ধরতে চেয়েছিলাম – তখন পালক-রক্ষক ও অধীশ্বর হয়ে কেউ ঝাঁপ দিয়ে পতিতপাবনী হয়নি! পত্রপাঠ শুধু! মুখে মধু শুধু! ক্ষতস্থানে জড়ানোর জন্য – একখ- কাপড়ের টুকরোও পাইনি! প্রতিবেশী উত্তরীয় পরে শুধু – আগুন তাপাবে? ধাতুপাত গলিয়ে নিজেরই…

  • সতত এ-নদ

    সায়ীদ আবুবকর শরীর শীতল করে, ভিতর শীতল করে এই ঘোলাপানি, এ-পানিতে সণান করে ভোরের দোয়েল আর আমার হৃদয়; পূর্ণিমার পূর্ণ চাঁদ এখনো আগের মতো করে কানাকানি তখন এ-নদ দেখে কত মধু মধুদেশে মহাকবি হয়! অন্য কোনোখানে গিয়ে বাঁচবো কি একদিনও এ-জমিন থুয়ে? বিদেশবিভুঁই গিয়ে কী করে মানুষ বাঁচে, আমি ভেবে মরি; আমার কেশবপুর জননীর মতো…