কবিতা

  • আমার নতুন বিয়ে

    হাফিজ রশিদ খান   সরে যাচ্ছে কবিতা আমার দুয়ারের ছায়া ঘেঁষে-ঘেঁষে পা থেকে নীলাভ নখরঞ্জনীর মৃদু ছটা এসে আমাকে আবার বিয়ে দিচ্ছে কাঁদতে-কাঁদতে শোনাচ্ছে দূরের ভালো জীবনের কিচ্ছে   তার সম্ভাব্য গমনপথে দৃষ্টি রেখেছি বিছিয়ে যেন তাকে না-আনে পিছিয়ে –   এই দৈবদুর্বিপাকের বসতে আমার মতন হাড়কিপ্টে অসতে…

  • হাততালি সংক্রান্ত

    প্রবালকুমার বসু হাততালিতে বিশ্বাস রাখুন একজন প্রকৃত বন্ধুর মতো হাততালি বারবার আপনাকে আশ্বস্ত করবে সকল উত্তেজনা থেকে বিরত থাকতে   ঘুম থেকে উঠে একবার; স্নানের আগে ও পরে একবার করে আর অবশ্যই বদহজম হলে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটলে অথবা ভিতরে প্রতিশোধস্পৃহা জেগে উঠলে নিয়ম করে হাততালি দিন দিনে সাড়ে চারবার, সপ্তাহে আড়াই দিন   ভাবছেন এটা…

  • আমার স্বপ্ন এখন

    উত্তম দাশ   আমি স্বপ্ন ছাড়া বাঁচতে পারি না। রাতভোর এখন স্বপ্ন দেখি বিলুপ্ত সভ্যতার সাত হাজার বছরের পুরনো দেয়ালে রক্তের দাগ ঠিক চিনতে পারি, আক্রান্ত নগরে নারীদের আর্তনাদ, ধর্ষণের পর সমস্ত শরীর নিয়ে আমরা জয় করে এসেছি, সভ্যতা শব্দটি খুব অস্ফুটে উচ্চারিত হয়।   আমি স্বপ্ন দেখি পরিত্যক্ত গ্রামের কিশোর বয়সেই মেয়েগুলো বিক্রি হয়ে…

  • খুকিরা ঘুমায়

    শিহাব সরকার   খুকিরা ছায়া দেখেনি কোনোদিন ছায়া কী তারা জানে না।   আজন্ম কারাগার থেকে বেরিয়ে খোলা মাঠে দেখেছে নিজেদের ছায়া, ভীতত্রস্ত পড়িমরি ছোটে খুকিরা সামনে দৌড়ায় তাদেরই তাদেরই ছায়া।   উলটো দৌড়ালে ছায়া আসে পিছু-পিছু তেপান্তরে কে শোনে বালিকাদের কান্না, কে বোঝাবে ওদের ছায়ার রহস্য ছায়া শুধু ছায়া নয়, অতিরিক্ত কিছু যে!  …

  • নদী যার মাতা

    মুহম্মদ নূরুল হুদা   নদী যার মাতা জাতিভূমি সেই বাংলাদেশে নদীগুলি ক্রমেই ছড়িয়ে পড়ছে তার জলে-স্থলে-অন্তরীক্ষে, ঘাট ছেড়ে খাত ছেড়ে চর ছেড়ে ধারা ছেড়ে ঢেউ ছেড়ে কেউ কেউ উঠে এসেছে এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে, নানা প্রশাসনিক ভবনে; আজ জয়পুরহাটের এই সার্কিট হাউসেও দেখি ধরা পড়েছে গোটা আটেক নদী, পদ্মা, যমুনা, মেঘনা, কপোতাক্ষ, করতোয়া, তিস্তা, তুলসীগঙ্গা, কর্ণফুলী…

  • চশমার উত্তরাধিকার

    হারিসুল হক আমার চশমাটা নিয়ে আয় হারু, খুব সাবধান পড়ে না যেন… আববার আয়েশি ফরমান। ইজি চেয়ারে শোয়া পিতা হাতে ধরা খবরের কাগজ স্বচ্ছ কাচের ভেতর নেচে ওঠা সংবাদমাছ – থেকে থেকে গম্ভীর হয়ে ওঠা।   এখন আমার বিকেল বাইফোকাল লেন্সে সেঁটে থাকা সমুদয় দেখা। দিগরাল রেখা বেয়ে উঠে আসা দুর্বার লতানো জিভ কানের পেছন…

  • কেউ কেউ যখন চলে যায়

    ইকবাল আজিজ কেউ কেউ যখন চলে যায়, মিথ্যেবাদীদের জগৎ তখন আলস্যে ঘুমায় অবিকল চারিদিক আচ্ছন্ন করে বৃষ্টি নামে এ-শহরে বংশাল রোডে সদরঘাটে ফরাশগঞ্জে গেন্ডারিয়ায় ঝিরিঝিরি বৃষ্টি কিংবা বজ্র-বিদ্যুৎসহ বৃষ্টি মহাখালী উত্তরায় কেউ কেউ চলে যায়, কেউ পথ হাঁটে অবিকল আগের মতো এ-জীবনে জয়ী কে? পরাজিত কারা? কারা স্বপ্নাচ্ছন্ন?   বহুকাল ধরে পথগুলি যেন পথের মতো…

  • অপার্থিব সেই রাত

    মারুফ রায়হান   নদীতীর বারান্দায় মধ্যরাত চুম্বনে চুম্বনে আশ্চর্য বিহবল – চাঁদ নেই তবু জোছনা অপার রচিত হয়েছে এইখানে অভিনব অভিসার দুটি নরনারী জানে এই রাত স্বপ্নমূল্যে পাওয়া হয়তোবা ভোরে এ-সৌন্দর্য মিলাবে ধুলায়, তবু যতক্ষণ জীবন্ত এ-রাত ততক্ষণই স্বর্গসুখ ওঁৎ পেতে থাকে যদি দোজখ তো থাক – অধরের অনিঃশেষ তৃষ্ণা নিয়ে অন্ধকার আরো ঘন হোক…

  • নদী বা নারী

    বিশ্বজিৎ চৌধুরী     নদী শাসনের নামে কী হাল করেছো!   মানি, বালিকা দুরন্ত ছিলো সীমানা ভাসিয়ে দিতো জলে যারা সীমানা সীমানা বলে পাড়া মাতিয়েছো ভাবো নাই বিদ্যুতের জন্ম হতো প্রবাহ-চঞ্চলে।   আজ নিয়ন্ত্রিত স্রোত দেখে বুক ভেঙে যায়… সেই দুঃখ ছড়িয়ে পড়েছে কিছু নদীলগ্ন গৃহস্থ বাড়িতে, কিছুবা দীর্ঘশ্বাস সূর্যাস্তে গাছের পাতায়।   হিজাবের কালো…

  • দুটি কবিতা

    মারুফুল ইসলাম পথ অমৃতের অন্বেষণে যাই আলো আর অন্ধকারের অরণ্যে দেহতত্ত্বে মুক্তি খুঁজি পাইনি কূল ওখানে নৌকোর মাস্ত্তলে নিঃসঙ্গ লণ্ঠন সারারাত জ্বলে জ্বলে অবসিত   ভয় নেই চলায় পথ অচেনা বটে, তবে আমিও নাছোড় পথিক তুমি কোন উদ্যানে সুশোভন করতে চাও নিজেকে প্রশ্ন করে জেনে নাও এই বেলা   কেননা পাথেয় ফুরিয়ে যায় কিন্তু ফুরায়…

  • শূন্যতায় শিল্প অবগাহন

    কাইয়ুম চৌধুরী   সবুজ পটভূমিতে উথাল-পাথাল সর্পিল সাদা ওয়াকওয়ে মনে হয় যেন বহমান নদী ওপরে উদার আসমান ছুঁয়ে।   গাঢ় নীল সমুদ্রে নৃত্যরত সূর্যরশ্মি আকাশ অরণ্য সেরো সাগরে নেই জলযান নৌকো সাম্পান কী বিশাল অবকাশ অন্তর-মাঝারে।   পাহাড়ে সবুজ ঢালে ধানের আবাদ ভূমিতে একফোঁটা জলের পতন মুক্তো আধারসম প্রার্থনাগৃহ ধ্যানরত মানুষের বিশাল সৃজন।   ডিম্বাকৃতি…

  • দুটি কবিতা

    মিনার মনসুর আমি শুধু তাহাদের যাওয়া-আসা দেখি মুখোমুখি বসে আছি। যেন কতো কাছে। শরতের সপ্রতিভ মেঘের মতো ওরা আসে। আপনমনে হাসে কদাচিৎ। ফের ভেসে যায়। তার অবাধ্য চুল এসে ডাকাতের মতো হামলে পড়ে কামরাঙা ঠোঁটে। চলে খুনসুটি। আমার ভারি ঈর্ষা হয়। একদা যার পদভারে প্রকম্পিত হতো বিশ্ববেহায়ার বুক – তাকেও হেঁটে যেতে দেখি টলোমলো পায়ে।…