কবিতা

  • পাথর ও রক্তের বিবাদ

    কি আছে অনাস্বাদিত? ঠোঁট রেখে কঠিন শিলায় পাথরের গন্ধ শুঁকি পেতে চাই সৃষ্টির লবণ। গ্রানিটে জিহ্বা লাগে, আলজিহ্বে শ্যাওলার স্বাদ স্বাদ নয়, এ কেবল পাথর ও রক্তের বিবাদ। অভুক্ত কবির মুখে, আলজিহ্বে জমেছে যে পানি এ দিয়ে নরম হয় জগতের প্রকৃতিনিচয়, কেবল অনম্য তুমি। পাথরের চেয়েও পাথর। হাসো বাসো নাশ করো মানুষের সব বরাভয়। ২…

  • সংশয়

    রক্ত এবং মাংস জুড়ে তোর কেন এই ভয় ভালো যদি বাসিস নারী কেনরে সংশয় ভালো যদি বাসিস তবে মাতাল হয়ে যা অন্ধ এবং বধির হয়ে অধীর হয়ে যা ভালো যদি বাসিস নারী ঢেউ তুলে যা মনে ভালোবাসা মরণ খেলা খেলবি দুইজনে তুইতো জানিস কেমন ক’রে বাসতে ভালো হয় কেমন ক’রে ঝড়ের মতো বাতাস শুধু বয়…

  • রমিত বসন্তে

    আদিতে তুমিই ছিলে অন্তে ছিলে তুমি আকাশ সমুদ্র ছিলে, ছিলে বনভূমি আঁধার আলোর মতো ছিলে গোধূলিতে বিশাল প্রকৃতি জুড়ে বিপুল সংগীতে প্রবল অস্থির ছিলে বাতাসের স্বরে নদীর বিস্তারে আর পাতার মর্মরে অস্থিতে মজ্জায় তুমি ছিলে চিরকাল আমার মাংসের মধ্যে আমার কঙ্কাল চুম্বনে নিমগ্ন একা ছিলে আলিঙ্গনে উন্মত্ত বৃষ্টির গানে শ্রাবণে শ্রাবণে স্তম্ভিত শব্দের মধ্যে ধ্বনিত…

  • একটি কবিতা

    এবার একটি কবিতা দিতে একটু দেরি হল। খুব দেরি হয়তো নয়,                       তবুও তো। আসলে আমার কোনো দোষ নেই। কবিতাটি এসে গিয়েছিল,                আশেপাশেই ঘুরপাক খাচ্ছিল। কখনো পাখির পালকের মতো উড়তে উড়তে, কখনো ঝিঁঝির ডাকের মতো ক্রমাগত, কখনো জানলার খড়খড়ির ফাঁকে আলো, কবিতাটি এদিক ওদিক ঘুরপাক খাচ্ছিল। এর মধ্যে কয়েকদিন খুব ঠান্ডা পড়ল, একদিন…

  • প্রেমের চতুর্দশপদী

    চঞ্চুতে চঞ্চুতে প্রেম হলে মন্দ নয়। পাখি সব যেমন প্রণয় করে পাখার ঘর্ষণে, পালকের স্পর্শ পেলে শিহরণ ঘটে যায়, তেমনি উড়ালে ভালোবাসা হবে আমাদের। খড়কুটো ঠোঁটে নিয়ে বাঁধব না কেউ ঘর, বাবুই পাখির কারুকাজ হয়ত হবে না। কোকিলের মতো ডিম পেড়ে যাব অন্য কারো ঘরে। পাখিরা জানে না কবে কার বাসে জন্মেছিল! কোথায় নিবাস ছিল…

  • বিব্রত সংলাপ

    তুমি বারবার নতুন কিছু শুনতে চাইলে বোল্লে : ‘আমাকে নতুন কিছু শোনাও’ আমি বোল্লাম : ‘অমাবস্যার পুঞ্জপুঞ্জ অন্ধকার একদল কালো মুখোশ-পরা ডাকাতের মতো শিকার করতে চাইছে শাদা খরগোশের মতো কম্পমান চাঁদটাকে’ তুমি বোল্লে : ‘এর কোনো অর্থ নেই!’ আমি আবার বোল্লাম : ‘তুমি কী শোনোনি তিনটে মাছের আক্রমণে নিহত মাছরাঙা প’ড়ে আছে নদীর ওপারে’ তোমার…

  • এই বেলা

    তাড়া নেই কোথাও যাওয়ার, অপেক্ষায়ও ব’সে নেই কেউ – বিছানায় রোদের ধমক নির্বিকার পর্দা জানালার। সাদা-কালো ফটো ঝাপসা বড়ো – কালো চুল। বিস্মিত নয়নে শুধু ওড়ে শুভ্র কেশদাম। কাজ নেই, অবসরও নেই বইপত্র নাড়াচাড়া করি, সময়ের ধুলোর আলপনা মুছে রাখি, ফেরে না সময়। মন চায় যেতে যে আড্ডায় হায় নেই শরীরের সায়। চমকে উঠি রিকশায়…

  • উই গট হিম

    দু’পাশে রাইফেল ছিল           যদি লক্ষ ভেদ করতে হয়, গুলিভর্তি পিস্তলও ছিল যদি আত্মঘাত হয় সহজ উপায়। কিন্তু এ সব তাকে করালো না কিছু – ক’মাস ইঁদুর-গর্তে নির্বাসনে থেকে দাড়ি গজিয়েছে আর ভুলে গেছে          কোন লক্ষ্যে বাঁচা। ধন্য আমেরিকা। হিরোশিমা নাগাসাকি ভিয়েতনাম               আরও আরও আরও ভয়ংকর সন্ত্রাস পেরিয়ে এখন ইরাকে পৌঁছে শিখেছ অনেক।…

  • নিজামালি মুঘলের সাফ কবলা

    হলফনামা ‘আমি, নিজামালি মুঘল, জন্মদাতা গোলামালি মুঘল হাল সাকিন হুকুমাসন, থানা কোতয়ালী, পেশা হুকুমর্বদার, কর্মসূত্রে এবং ভোগদখলে বাংলাদেশের নাগরিক বটে; দালাল আইনে আট নম্বরি ধারায় আমার আটকাদেশ নাই, রাষ্ট্রবিধানের পরিপন্থি কোনো কর্মেও যুক্ত নহি – তদুপরি তথাকথিত অস্ত্র ও বারুদ, মাদক ও ঘাতকের                                          সংস্পর্শ-রহিত, হক-হালালের উপার্জনে প্রতিপালিত হয় বৈধ পরিবার; মাথার উপরে মেঘ এবং…

  • তিন মাথার মোড়

    ১.ওয়াশিংটন দুরন্তকে বাগে এনেছ বিদ্রোহীকে আপোস কিন্তু তোমার হাত ফস্কে শোল পালালো সেটাই আপসোস আমার সেটাই আপসোস! ২. চমস্কি আপনি কারো চাকর নন আপনি কারো মাতব্বর নন ভিক্ষে দেননি, ভিক্ষে নেননি পৃথিবী জুড়ে তবু আপনার ভক্ত অগণন। গোলাপ খেয়ে গোলাপ বমি করে মরার কথা ছিল না যাদের তারাও গেছে মরে। ওরা যখন গায়ের জোরে, বোমার…

  • বেহুলা বাংলা : সনেট এক

    কী বাঁধনে বেঁধেছ এক অজানা অচিন মায়াবী সুরে কত আকুতিতে চেয়েছি মুক্তি ছুটে চলে গেছি দিগন্ত দূরে তবু সার্সির মতো মোহিনী মায়ায় রেখেছ জড়িয়ে মুগ্ধ করে বারেবারে তাই ফিরে আসি এই জলজ বাংলার বিজন নীড়ে স্মৃতির বাংলা সবুজ বাংলা এই বেহুলা বাংলার বিষাদ তীরে নৌকা আমার তেরো নদী ঘুরে নির্জন এই ঘাটেই ফেরে সব স্রোত…

  • শোনা কথা 

    শুনলাম যারা অনেক উঁচু অট্টালিকায় থাকে – আকাশের সিঁড়ি বেয়ে  অনেক ওপরে  – নামিদামি ফ্ল্যাটে তারা বৃষ্টির শব্দ শুনতে পারে না।  এই রকম ফ্ল্যাটবাসীদের আরো  কতিপয় অসুবিধা আছে। যেমন তাদের রাত্রি পোহায়  অনেক আগে  – আর সন্ধেও হয় অনেক পরে।  সূর্যের আলো ধীরে ধীরে সরে।  তারা মশকমুক্ত থাকে – জনকোলাহলমুক্ত – এটা ভালো কি না জানি…