ছোট গল্প
-
আঁধারে আলোর যাত্রী
আনিসুল হক সাইকেল চালাচ্ছেন তাজউদ্দীন। নবাবপুর রোডে একটা ঘোড়াগাড়ির পেছনে পড়েছেন তিনি। ঘোড়াগাড়িটাকে ক্রস করতে পারছেন না। বিপরীত দিক থেকেও গাড়িঘোড়া আসছে। রিকশা আসছে। বসন্তকাল। সন্ধ্যার পরে দখিনা বাতাস বইতে শুরু করেছে। এই সময় সাইকেল চালাতে বড় ভালো লাগে ৩২ বছর বয়সী তাজউদ্দীনের। তার গায়ে একটা হাফহাতা সুতির শার্ট। পরনে প্যান্ট। পায়ে স্যান্ডেল। চোখে…
-
১৩
ইমদাদুল হক মিলন তেরো সংখ্যাটা নাকি অশুভ। সবাই বলে আনলাকি থারটিন। আমার কাছে তেরোর চেয়ে শুভসংখ্যা আর নেই। আমার কাছে থারটিন মানে লাকি থারটিন। আমরা দুভাইবোন দাদুর মুখের দিকে তাকালাম। আমি আর মিতু। আমি কথা বলবার আগেই মিতু বলল, কী রকম? দাঁড়া, চা খেতে খেতে বলি। দাদু কলিংবেল বাজালেন। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে দৌড়ে এলো সানোয়ার।…
-
খেলাধুলা
ওয়াসি আহমেদ দোতলার টু/ বি-র শামত্মা, চারতলার ফোর/ এ-র কণা ও ফোর/ ডি-র টক্কা ওরফে শিবলি আর ছয়তলার সিক্স/ সি-র মৌ এই সকাল সাড়ে দশটায় শূন্য ফ্ল্যাটটাকে ভরিয়ে রেখেছে। আজ কার পালা কে জানে! মনে হচ্ছে মৌর। ওকে দেখা যাচ্ছে না। শামত্মা ড্রইংরুম ও গেস্টরুমে চক্কর দিয়ে পা টিপে কিচেনে ঢুকছে। কণা পুবদিকের বড় ব্যালকনিতে…
-
মুনশী আবদুল হাকিমের কোট
দর্জি কুতুব মিয়া গম্ভীরমুখে বসে আছে। মেয়ে হালিমা এসে বাবাকে বলে – বাবা, আজ তো ভাড়া নিতে আসবে। আপনি কি ভাড়া দিতে পারবেন? কুতুব মিয়া উত্তর করেন না। তার পকেট শূন্য। কিছুদিন হলো তেমন কোনো কাজ পাননি। টাকা নেই। মেয়ের জন্ম থেকেই হার্টের অসুখ। ওকে ডাক্তার দেখাতে যা ছিল সব শেষ। বাড়িওয়ালা তো বলছে, ভাড়া…
-
চাঁদের ক্ষত
সাধন চট্টোপাধ্যায় ঢ্যাঙা, উদখুলে চেহারার লোকটা দোকানে ফিরে আসতেই ক্যাশবাক্স থেকে মালকিন বলল ললিতকে, যান এবার।… পূজা দ্যান গিয়া… জুতা, গঙ্গাজলের বোতলটা থাউক এখানে… ফিরে এসে চা-ফা খাবেন তো এখানে? ললিত মুখুজ্জে তদ্গত। খালি পায়ে বেরিয়ে এসে বউকে বলে, ডালির দোকানটোকান দেখো।… কত টাকার পুজো দেবে? সুনন্দা সামান্য মেজাজ খিঁচড়ে বলে, কেন? সঙ্গে থাকবে…
-
মানুষ প্রথম খাবারের কথা বলে
সুশান্ত মজুমদার হাড্ডি ঠাটে চামড়ার পাতলা খোসা প্যাঁচানো না থাকলে বুড়োকে কিছুতেই প্রাণী মনে হতো না। কোলবাঁকা এই কাঠামোর চোয়াল চিমসে, মাথায় চুলের নামে আছে উসকোখুসকো আগাছা, দুই চোখের কোয়া ঘোলা, তক্ষকের পেটের মতো খরখরে ছবি মিলিয়ে বুড়োকে ইতর জন্তু বলেও শনাক্ত করা যায়। আশ্চর্য! বুড়োর সামর্থ্যের সব শাঁস ফুরালেও কানে সে কম শোনে না।…
-
মহাজাগতিক
অমর মিত্র আকাশ মেঘে ঢেকেছে দুপুর থেকে। এখন অন্ধকার যেন যুগান্তে ধেয়েছে, এমনই তার ব্যাপ্তি। সন্ধে পার হয়ে গেছে ঘণ্টা-দুই আগে। চায়ের দোকানটিতে বসে দুলু – আবদুল লতিফ কামিল্যা বড় – মোবাইল ফোনের সাইজের একটি যন্ত্র কানে লাগিয়ে উৎসুক হয়ে আছে, ব্যাটারি ডাউন। তাই শব্দ ক্ষীণ হয়ে গেছে। কষ্ট করে শুনতে হচ্ছে। চায়ের দোকানটি মহকুমা…
-
জমি দিয়ে মানুষ কেনা
সেলিনা হোসেন ঝর্ণার বয়স বাড়ে, কিন্তু শরীর বাড়ে না। শেষ পর্যন্ত ও একটি বামন মেয়ে হয়ে থাকে। বুঝতে শেখার পর থেকে এ-নিয়ে ওর দুঃখের শেষ নেই। একজন মেয়ে এভাবে বড় হলে ওর নিজের কিছু করার থাকে না, কিন্তু বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন, পাড়াপ্রতিবেশী যখন নানা কথা বলে তখন ওর সামনে দুনিয়া ভেঙে আঁধার নামে। ও কেঁদেকেটে…
-
সাহানা
বুলবন ওসমান ইউ কে। সাহানা। নামার্থ? রাগ। রাগিণী! যথার্থ। অনুপান ধরন অনেক। বজ্রপান? ইন্দ্রজাল। বড়চাচা, মেসেঞ্জার থেকে স্কাইপে আসুন। সুমিত। ভ্রাতুষ্পুত্র। মেলবোর্ন। অসমর্থ। অপেক্ষা করুন। মেসেঞ্জারে স্কাইপ। প্রতিকৃতি স্পষ্ট। চুশমি-মুখে অরস্ত্ত। পৌত্র। বড়চাচা, প্যাডটা সামান্য নামিয়ে। ভেবেছিলাম, আপনি ওটা টাচও করবেন না। অনেক অগ্রগতি। অরস্ত্তর মুখে চুশমি? মা হাসপাতালে। ওকে স্থির রাখতে। কিছু কথা…
-
দুজন ভীরু ও একজন সাহসীর গল্প
হাসনাত আবদুল হাই রাস্তাটা হঠাৎ যেন দৌড় দিয়ে এসে ঢুকেছে এখানে, এখন চারিদিক অন্যরকম দেখাচ্ছে। গাড়ির ভিড় নেই, যান্ত্রিক শব্দ আর মানুষের স্বরের কোলাহল শোনা যাচ্ছে না। ডিজেল, অকটেনের কড়া গন্ধে ভিজে যাচ্ছে না লাংস, বিদ্যুচ্চমকের মতো গাড়ির হেডলাইট ঝলসে দিচ্ছে না দুই চোখ। দেখে মনেই হয় না এলোমেলো দালানে ভিড়াক্রান্ত, ট্রাফিক জ্যামে নিথর একই…
-
আসলে আমরা সবাই শ্লেভ
বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর তুমি জানো কেন তোমাকে এখানে এনেছি? না। তোমার পেছনে দেখো একটা মাটির ঘর। মাটির ঘর? এখানে আমি জন্মেছি, এই মাটির বাড়িতে। বিল ঘুরে দাঁড়ায়, তারপর হাঁটা শুরু করে। আমিও পেছন পেছন হাঁটি। দুজনকে বিকেল ঘিরে ধরে। চারপাশে গাছপালা নিথর। পায়ের নিচে পাতার শব্দ। বিলের সঙ্গে আমার ভাব সম্পর্ক বিয়ে, এসবই আসেত্ম…