শ্রদ্ধান্জলি
-
চিরপ্রেমিক কবি কবি অরবিন্দ গুহের প্রয়াণলেখ
তাঁর একটি কবিতায় সঞ্জয় ভট্টাচার্য লিখেছিলেন : ‘তোমার মৃত্যুর দিনে মনে পড়ে অনেক মৃত্যুরে।’ ব্যঞ্জনার্থে নয়, বাচ্যার্থেই যেন সত্যি হয়ে উঠল এই কাব্যপঙ্ক্তি – যেদিন বাংলা সাহিত্য হারাল কবি অরবিন্দ গুহকে। একইসঙ্গে পঞ্চভূতে বিলীন হলো আরো অনেক সত্তা। একজন প্রধান কবি, একজন প্রখ্যাত গবেষক, একজন প্রসিদ্ধ ছোটগল্পকার তথা ঔপন্যাসিক এবং একজন প্রকৃষ্ট রম্যরচনাকার। দিনটি ছিল…
-
শিল্পী ধীরাজ চৌধুরী : আধুনিকতার অন্যতম রূপকার
শিল্পী ধীরাজ চৌধুরী (১৯৩৬-২০১৮) প্রয়াত হলেন গত ১ জুন। ষাটের দশকের শিল্পীরা, যাঁরা ভারত-বাংলাদেশের চিত্রকলায় আধুনিকতার নতুন দিশার সন্ধান দিয়েছিলেন, এবার তাঁরা একে একে বিদায় নিচ্ছেন। গত কয়েক বছরের মধ্যে চলে গেলেন শ্যামল দত্তরায়, বিকাশ ভট্টাচার্য, গণেশ পাইন, প্রকাশ কর্মকার, বিজন চৌধুরী, কার্তিক চন্দ্র পাইন, সুহাস রায়, বিআর পানেসর, অনিতা রায়চৌধুরী – এরকম আরো অনেকেই।…
-
বেলালকে ভুলি কী করে?
বেলাল চৌধুরীকে একটা লম্বা সময় শুধু বেলাল বলেই চিনতাম এবং ও যে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা মানুষ তাও জেনেছি ঢের পরে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়া থেকে। ছিপছিপে, সুদর্শন বেলালকে দেখতাম ছোটখাটো কবিতার আসরে কবিতা পড়তে। তাতে যে ওপার বাংলার আভাস থাকত না, তা নয়; তবে সব বাঙালির মধ্যেই তো তখন প্রবল অনুভূতি ওই বাংলার…
-
বেলাল চৌধুরী : সন্ধানী পর্ব ও তাঁর মুক্তিযুদ্ধের কবিতা
‘অল্প বয়সেই পেকে গিয়েছিলাম বাড়িতে বইয়ের আলমারি আর সিন্দুকের বদৌলতে।’ – এই আত্মকথন মনোহর চমক দানে যিনি মনস্বী, চিন্তা ও কল্পনা বিন্যাসে বিশিষ্ট রথী, কী মজলিশি অন্তঃপ্রাণ মানুষ সেই বেলাল চৌধুরী। কেবল বই ও পত্রিকা পাঠ, দশদিগন্তের নির্যাস গ্রহণ এবং স্বীয় সাহিত্যচর্চা নয়, বাড়ি থেকে পালিয়ে কখনো জলে, কখনো ডাঙায় এই মানুষের ভুবনভ্রমণ, লৌকিক জীবনাচার…
-
বেলাল চৌধুরীকে নিয়ে দু-চার কথা
(কৃত্তিবাস গোষ্ঠীর কবি শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুলিখন : সুশীল সাহা) যথাযোগ্য স্মরণসভার আয়োজন করেছে এবং করবে। আমরা তখন জোরকদমে কৃত্তিবাস পত্রিকা চালাই। হঠাৎ একদিন আমাদের আড্ডায় হাজির হলো একজন, পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসা এক তরুণ – নাম বেলাল চৌধুরী। বেলাল প্রায় নিঃসম্বল অবস্থায় উপস্থিত হয়েছিল। সে এসেছিল পশ্চিমবঙ্গ তথা কৃত্তিবাসের আকর্ষণে। তারপর ক্রমশ সে আমাদের…
-
বাঙালির আভিজাত্য আর একটু ম্লান হলো
গল্প দিয়েই শুরু করা যাক। অশোক মিত্র তখন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী। ন্যায়সংগত কারণেই সরকারি গাড়ি পান সরকারি কাজে যাতায়াতের সূত্রে। তাঁর গাড়ির যিনি চালক তিনিও সরকারি কর্মী। একদিন অশোকবাবুকে বাড়ি থেকে নিয়ে যাওয়ার সময় সেই চালক ভদ্রলোক দেখেন অশোকবাবুর স্ত্রী সামনে হেঁটে হেঁটে যাচ্ছেন। জিজ্ঞাসা করে ম্যাডামের গন্তব্যও একই দিকে জেনে স্বাভাবিকভাবেই তিনি গাড়ির দরজা খুলে…
-
অশোক মিত্র (১৯২৮-২০১৮)
প্রখ্যাত অর্থনীতিবিদ, মার্কসবাদী, লেখক ও বাংলাদেশের অকৃত্রিম সুহৃদ অশোক মিত্র চলে গেলেন। গত পয়লা মে কলকাতার একটি হাসপাতালে, নব্বই বছর বয়সে, শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। অশোক মিত্র জন্মেছিলেন বাংলাদেশের ঢাকায়, ১৯২৮ সালের ১০ এপ্রিল। ঢাকার আরমানিটোলা স্কুলে তাঁর শিক্ষাজীবনের শুরু। আরমানিটোলা স্কুলে পড়ার সময়েই সোভিয়েত বিপ্লবের কথা শুনেছেন, নাৎসিদের বিরুদ্ধে রেড আর্মির অভিযানের কথাও…
-
সাহিত্যপ্রেমিক ও মার্কসবাদী অশোক মিত্র
আমাদের কালের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ভাবুক, অর্থনীতিবিদ, চিন্তাবিদ ও সাহিত্যিক অশোক মিত্র গত পয়লা মে চলে গেলেন। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শূন্যতার সৃষ্টি হলো। এমন নীতিবান এবং নীতির প্রশ্নে আপসহীন মানুষ আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা পালটে দিয়েছিলেন। বুদ্ধিজীবীর কর্ম ও দায় তাঁর জীবন ও মননে সমার্থক হয়ে উঠেছিল; যদিও নিজেকে বুদ্ধিজীবী বলতে তিনি…
-
বহুদর্শী মুস্তাফা নূরউল ইসলাম
মুস্তাফা নূরউল ইসলাম ছিলেন একজন বহুদর্শী মানুষ। তিনি অধ্যাপক ছিলেন, ছিলেন গবেষক, লেখক, গ্রন্থ-রচয়িতা, সম্পাদক, বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের প্রধান কাণ্ডারি, টিভি উপস্থাপক-সংগঠক ইত্যাদি। কিন্তু সবচেয়ে বড় কথা হলো, তিনি ছিলেন একজন মানবতাবাদী অসাম্প্রদায়িক উদার হৃদয়ের গণতান্ত্রিক চেতনাধারী প্রাণোচ্ছল মানুষ। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল এই মানুষটির ছাত্র হওয়ার। অনেকেই পড়ান, কিন্তু সবাই শিক্ষক নন। শিক্ষক শব্দের সঙ্গে…
-
মুস্তাফা নূরউল ইসলাম : তাঁর দায়বোধের সীমানা
বিশ্ববিদ্যালয়-পর্বে অনেকের নানা ধরনের অর্জন থাকে, আমার তেমন কোনো অর্জন নেই। কয়েকজন শিক্ষকের সংস্পর্শে এসেছিলাম – এই মাত্র। এঁদের মধ্যে প্রথমেই যাঁর নাম বলতে হয় তিনি মুস্তাফা নূরউল ইসলাম। অনেক কিছুর সঙ্গে তিনি আমাদের আধুনিক কবিতাও পড়িয়েছিলেন। কবিতা কী, আধুনিকতা কী, কেন আধুনিক কবিতা – এসবের বিস্তারে তিনি আমাদের নিয়ে যেতেন। দু-দুটো বিশ্বযুদ্ধ, ভারতবর্ষে ব্রিটিশবিরোধী…
-
রবীন্দ্রনাথের নাটকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা এবং বন্ধনের সত্য
নাটকে প্রাণ থাকে দ্বন্দ্বে, রবীন্দ্রনাথের নাটকেও সেই দ্বন্দ্বটা আছে, এবং তা প্রধানত মুক্তির আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বন্ধনের বাস্তবতার, যেন অচলায়তনের সঙ্গে মুক্তধারার। ওই দু’টি তাঁর নাটকের নাম; এবং অচলায়তনে (১৯২২) যেমন মুক্তধারাতেও (১৯২২) তেমনি বন্ধন আছে, আর আছে সেই বন্ধন থেকে মুক্তির তীব্র আকাঙ্ক্ষা। শেষ পর্যন্ত মুক্তির আকাঙ্ক্ষাটাই জয়ী হয়। রবীন্দ্রনাটকের পরিণতি বিয়োগান্ত নয়, মিলনান্ত; যদিও…
-
বর্ষা-বর্ষণের রূপচিত্রকর রবীন্দ্রনাথ
মেঘ-মাখা বৃষ্টি ঝরানো আকাশের দিকে তাই তাকাতে হয়, তেমনি নজর ফেরাতে হয় ‘বর্ষার অজস্র জলধারে