অনন্যা মোহরদি

রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা

বিখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায় ছিলেন আমার গুরু। আমরা তাঁকে মোহরদি হিসেবেই চিনি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর নাম রেখেছিলেন ‘কণিকা’। মোহরদি যেমন গান গাইতেন, তেমনই ছিল তাঁর গায়নভঙ্গি, পোশাক-পরিচ্ছদ; নিমিষে সকল ভক্ত-শ্রোতার মন জয় করে নিতেন।

এ নিয়ে অনেকেই অনেক লেখা লিখেছেন। চমৎকার সব বর্ণনা এসেছে। তাঁর শোভন সুন্দর গায়কির কথা ও নানা প্রসঙ্গে নানাজনে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। শান্তিনিকেতনে থাকাকালে কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের বাইরে আমার ‘এক অসম’ নিবিড় বন্ধুত্বের বন্ধন তৈরি হয়েছিল। বাক্যে যা ব্যাখ্যা করা কঠিন। ওঁর জীবনের নানা সুখ-দুঃখ আনন্দ-বেদনার গল্প করতে করতে ফিরে যেতেন ওঁর ফেলে আসা সোনালি অতীতে। চোখে-মুখে খেলা করতো সেই রঙিন জীবনের উচ্ছ্বাস। কখনো না-পাওয়ার অব্যক্ত বেদনা, কখনো হাস্যোচ্ছ্বাসে লাল হয়ে উঠতো সারামুখ। শ্রোতা কেবল আমি। অবাক বিস্ময়ে শুনতাম ওঁর সব রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতার কথা, যা তখন ছিল আমার কাছে স্বপ্নের মতো। মোহরদি পেছনের পথ বেয়ে পাড়ি দিতেন সুদূর অতীতে। গল্প করতে করতে হারিয়ে যেতেন স্মৃতির ছবিতে। আর আমি গল্প শুনতে শুনতে পৌঁছে যেতাম সেই সময়ে। পেতাম ভবিষ্যতের এক রঙিন জীবনের হাতছানি। এই গল্পে গল্পেই পথের দিশা পেতাম ভবিষ্যতের পথ চলার। গল্প করতে করতে বলতেনও কখনো কখনো, ‘শুনে রাখো ভবিষ্যতে কাজে দেবে।’ সত্যিই তাই, জীবনে নানা সংকটে-সংশয়ে মনে হয়েছে মোহরদি ওই সময় কী করতেন, আর পথের দিশা পেয়ে গেছি সেই সংকট উত্তরণের।

ওঁর মধ্যে এক অদ্ভুত ছেলেমানুষি সরলতা ছিল। গাইয়ে হিসেবে স্বীকৃতি ও সম্মান যতখানি পেয়েছেন তা সবাই জানেন। দেখতে তিনি খুবই সুন্দরী ছিলেন। সেই সৌন্দর্যের মধ্যে অহমিকার বদলে এক ধরনের সরলতা ছিল। আদিখ্যেতা ছিল না কিন্তু এক ধরনের শৌখিনতা ছিল। আপনাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে – বললে শিশুর সারল্যে খুশি হয়ে উঠতেন। গান দারুণ হয়েছে বললে সঙ্গে সঙ্গেই বলে উঠতেন, ‘না না ঠিক করে গাইতে পারিনি। এটা ঠিক হয়নি আরেকটু অন্যরকম করলে ভালো হতো।’ এক ধরনের অতৃপ্তি ঘিরে থাকতো সর্বক্ষণ। এ নিয়ে অনেক গল্প প্রচলিত আছে।

রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকীর পরে মোহরদির খ্যাতি তখন তুঙ্গে। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে ‘শ্যামা’ রেকর্ড বেরিয়েছে। অসম্ভব তাঁর জনপ্রিয়তা। মোহরদির ব্যস্ততাও আকাশছোঁয়া। রোজই কোথাও না কোথাও অনুষ্ঠান করতে হচ্ছে।

এরই মধ্যে হঠাৎ করেই একদিন আবিষ্কার করলেন, ঠোঁটের পাশে ছোট একটা সাদা দাগ। তার কয়েক বছর আগে পেটের কিছু সমস্যার কারণে ভালো করে চেকআপ করার জন্য ‘Calcutta Hospital’-এ ভর্তি হয়েছিলেন। তখনই সেখানকার ডাক্তার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর বলেছিলেন, ‘আপনার Colities (কোলাইটিস)-এর সমস্যার কারণে পরবর্তীকালে লিউকোডার্মার প্যাচ বেরোতে পারে, যেটাকে আমরা ‘শ্বেতি’ বলে দেখি।’ স্বভাবতই মোহরদি খুব মুষড়ে পড়লেন। তাহলে কি ডাক্তারদের কথা সত্যি হলো? এটাই কি তাহলে শ্বেতির প্রথম লক্ষণ? যদিও একের পর এক ডাক্তার দেখানো চলতে লাগলো। নানা রকমের চিকিৎসা, ওষুধ, হোমিওপ্যাথি, কবিরাজি কিছুই বাদ গেল না। কিন্তু অবস্থার বিশেষ পরিবর্তন হলো না।

ক্রমশ বিষণ্ণতার অন্ধকার ঘিরে ধরে মনকে। বাইরের অনুষ্ঠানে গান করা হঠাৎ করেই বন্ধ করে দিলেন, জনসমক্ষে যেতে সংকোচ। রেকর্ডিং, রেডিও অনুষ্ঠান করতেও দ্বিধা। কেবলই নিজের মনে প্রশ্ন জাগে, কেন ঈশ্বর তাঁর সঙ্গেই এমন করলেন? এতো খ্যাতি, এতো সম্মান সব দিয়ে আবার কেড়ে নিলেন?

বাড়ির লোকেরা বিশেষত স্বামী বীরেন বন্দ্যোপাধ্যায় এবং পুত্রসম ছাত্র গোরা সর্বাধিকারী। গোরাদা তখন বাড়িতেই থাকতেন। নানাভাবে সবাই বোঝানোর চেষ্টা করেন – আপনার পরিচয় তো গান দিয়ে, মুখে একটু দাগে কী এসে-যায়? কিন্তু মোহরদি মানতে পারেন না। একসময় সুন্দরী হিসেবে এতো নাম ছিল, আজ ভগবান দিয়েও তা কেড়ে নিলেন, কোন অপরাধ! এ কিসের শাস্তি? ক্রমশ বিষণ্ণতার ঘনঘোর অন্ধকার চারদিক থেকে ঘিরে ধরতে থাকে, মৃত্যুচিন্তাও যে আসে না কখনো কখনো তা নয়।

তখনো তো মোহরদির খ্যাতি তুঙ্গে। দেশ-বিদেশ নানা জায়গা থেকে ডাক আসছে গান গাইবার। মোহরদি সব বারণ করে দেন, গোরাদা, বীরেনদা বুঝিয়ে রাজি করাতে পারেন না।

এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডাক এলো গান গাইবার। বেশ কয়েকটি শহরে গান গাইতে হবে। আয়োজকরা খুবই উৎসাহী। প্রতিদিনই ফোন করেন। গোরাদা, বীরেনদা সবাইকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন ওদেশে যেতে। মাসখানেক বা মাস দেড়েক থাকতে হবে। আয়োজকদের এতো উৎসাহ যে শেষ পর্যন্ত আর না বলতে পারেন না।

আয়োজকদের পীড়াপীড়ি, এদিকে গোরাদার-বীরেনদার উৎসাহে অবশেষে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে রাজি হলেন মোহরদি। সঙ্গে গোরাদা-বীরেনদাও যাবেন। খুবই দ্বিধাগ্রস্ত আর বিষণ্ণমনে যাওয়ার প্রস্ত্ততি শুরু করলেন, নির্দিষ্ট দিনে রওনা হলেন। ট্রেনে শান্তিনিকেতন থেকে কলকাতা, তারপর কলকাতা থেকে প্লেনে। ট্রেনে বসে আছেন, ট্রেন চলতে শুরু করেছে। মোহরদির মনে নানা ভাবনার আনাগোনা। ঠিক হলো কি বিদেশ যাওয়ার এই সিদ্ধান্ত? নাকি নিজের মনে ঘরের কোণে থাকলেই ভালো হতো? কে জানে ভগবানের কী ইচ্ছা। ট্রেনে উল্টো দিকের সিটে এক সৌম্য দর্শন মাঝবয়সী গৈরিক পোশাক পরা সন্ন্যাসীও চলেছেন কলকাতা। ট্রেন চলতে শুরু করার পর গোরাদার সঙ্গে এ-কথা সে-কথা আলাপ শুরু করলেন।

হঠাৎ করেই মোহরদির দিকে তাকিয়ে বললেন – মা আপনি মন খারাপ করে থাকবেন না। আপনার সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। যেখানে যাচ্ছেন সেখানে একজন আসবেন আপনার সব সমস্যার সমাধান করে দেওয়ার জন্য, লম্বা মতো কোঁকড়া চুল, চশমা পরা, উজ্জ্বল গৌরবর্ণ। মোহরদি, বীরেনদা, গোরাদা সবাই অবাক। একটু বিব্রতও। ভদ্রলোক কী ভেবে এ কথাগুলো বললেন? ওঁর তো এসব জানার কথা নয়। সন্ন্যাসী মানুষ কী জানি কী ভেবে কথাগুলো বললেন। সবাই পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করেন। মোহরদির মন বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সংশয়ে দুলতে থাকে। এই সন্ন্যাসীর কথা কি সত্যি হবে?

আমেরিকা পৌঁছে গেলেন ভালোমতোই। অনুষ্ঠানও শুরু হলো। প্রথম অনুষ্ঠান বস্টনে। খুব ভালো হলো সেখানকার অনুষ্ঠানটি। প্রচুর দর্শক-শ্রোতার উচ্চ প্রশংসায় সার্থক হলো এই অনুষ্ঠান। দ্বিতীয় অনুষ্ঠান পিটসবার্গে। সেখানে যথারীতি অনুষ্ঠানে মঞ্চে বসে আছেন, ওখান থেকেই দেখতে পাচ্ছেন দর্শকসারিতে বসে আছে শান্তিনিকেতনের অনেক পুরনো ছাত্রী। মোহরদির প্রথম দিকের ছাত্রী। বিয়ের পর ডাক্তার স্বামীর সঙ্গে আমেরিকা প্রবাসী। অনুষ্ঠান শেষে যথারীতি প্রচুর ভক্ত এসে ঘিরে ধরেছেন। অটোগ্রাফ চাই, ছবি তোলা হচ্ছে। হঠাৎ দেখা সেই ছাত্রী রমা এসে ‘মোহরদি’ বলে জড়িয়ে ধরেছেন। কিছুতেই আর ছাড়ছেন না। – ‘তোমাকে আমাদের বাড়িতে নিয়ে যাবো। তোমরা আমার ওখানে থাকবে সবাই।’ মোহরদিও খুশি এতোদিন বাদে এই দূরদেশে প্রিয় ছাত্রীটিকে পেয়ে।

রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর সবাই বসেছেন, গল্প করছেন।           এ-কথা সে-কথার পর রমা জিগ্যেস করলেন, ‘মোহরদি কিছু মনে করো না। তোমার মুখে দাগ দেখতে পাচ্ছি, কী ব্যাপার?’ মোহরদি কিছু বলার আগেই গোরাদা সব খুলে বললেন, এমনকি এ নিয়ে মোহরদির যে ভয়ঙ্কর ডিপ্রেশন সে-কথাও। রমা সঙ্গে সঙ্গেই আশ্বস্ত করলেন, ‘কিছু চিন্তা করো না, আমার স্বামী যে হাসপাতালের ডাক্তার সেখানে যিনি চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ তিনি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ দশজনের মধ্যে একজন। তোমাকে তাঁকে দেখানোর ব্যবস্থা করছি।’ পরদিন হাসপাতালে ফোন করা হলো অ্যাপয়েন্টমেন্টের জন্য। কিন্তু সে এক দুরূহ ব্যাপার। এতো নামী আর ব্যস্ত ডাক্তার যে তিন মাসের আগে তাঁর কোনো সময়ই হবে না। সব অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকড। মোহরদির আশার আলো আবার অন্ধকারে নিমগ্ন। রমার ডাক্তার স্বামী তাঁর নিজের নাম দিয়ে নাম লেখালেন, যদি কোনো সুযোগ হয়!

পিটসবার্গে রমা এবং তাঁর স্বামী মোহরদিদের নানা জায়গায় নিয়ে বেড়াচ্ছেন, বেশ আনন্দেই সময় কাটছে। হঠাৎ করেই দু-তিনদিন পরে দুপুরবেলা হাসপাতাল থেকে ফোন; একজন রোগী অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেছে, এঁরা যদি আধঘণ্টার মধ্যে পৌঁছতে পারেন, তবে ডাক্তার দেখে দিতে পারেন। কী ভাগ্য! সবাই তখন বাড়িতেই ছিলেন। তাড়াতাড়ি সবাই বেরোলেন হাসপাতালের উদ্দেশে, আধঘণ্টার মধ্যে যাতে পৌঁছানো যায়।

ডাক্তারের ঘরে মোহরদির জন্য আরেক বিস্ময় অপেক্ষা করছিল। খালি ঘরে মোহরদি আর গোরাদা অপেক্ষা করছেন, দরজা খুলে সেই ডাক্তার ঢুকলেন। কী বিস্ময়! সেই সন্ন্যাসীর কথামতো লম্বা, চশমা পরা, মাথায় কোঁকড়া চুল এক হিম্পানিক ডাক্তার, মোহরদির মুখ দিয়ে কথা সরছে না। সন্ন্যাসীর কথা কি সত্যি ছিল! ডাক্তার ভদ্রলোক খুবই হাসিখুশি, খুব মন দিয়ে সব শুনলেন, কাগজপত্র দেখলেন, তারপর বললেন, ‘মন খারাপ করো না। আমি এখন যে ওষুধ দিচ্ছি তাতে তোমার শরীরের এই দাগ যতটুকু আছে তা আর বাড়বে না। পরবর্তী পর্যায়ে যে ওষুধ দেব তাতে শরীরের বর্তমান দাগগুলো আস্তে আস্তে কমে যাবে।’ বলে খুব একটা আশ্বস্ত করা হাসি দিয়ে বললেন, ‘ঠিক হয়ে যাবে।’ মোহরদি তখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না। এ কী কাকতালীয়, নাকি সত্যি সন্ন্যাসীর ভবিষ্যদ্বাণী!

মোহরদি হাওয়ায় উড়তে উড়তে বাড়ি ফিরলেন। সেদিন থেকেই ওষুধ খাওয়া শুরু করলেন। এক মাস ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে অনুষ্ঠান এবং ওষুধ সবই চলতে থাকলো সমানভাবে। তারপর দেশে ফেরার সময় হলো। পুরো ডোজ ওষুধ নিয়ে মোহরদি দেশে ফিরে এলেন।

শান্তিনিকেতনে ফিরে এসেছেন। আস্তে আস্তে কাজকর্ম শুরু করেছেন। এরই মধ্যে একদিন সংগীতভবনের নৃত্য বিভাগের আরেক ছাত্রী সেও শ্বেতিতে আক্রান্ত। তার আরো বেশি। পুরো মুখেই ছোপ ছোপ দাগ পড়েছে।

বাচ্চা মেয়ে মাত্র পাঠভবন থেকে পাশ করে সংগীতভবনে ঢুকছে। খুবই ভালো নাচে। এরই মধ্যে শান্তিনিকেতনে সবার নজর কেড়েছে কথাকলি আর মণিপুরী নাচে, এলো মোহরদির কাছে কোনো কারণে দেখা করতে। ‘মোহরদি মোহরদি’ করতে করতে সে তখন ভেতরের ঘরে ঢুকে পড়েছে। মোহরদি তখন বিদেশ থেকে আনা স্যুটকেস থেকে জিনিসপত্র গোছাচ্ছিলেন। ওর সঙ্গে কথা বলতে বলতে মোহরদির ভেতরে এক অদ্ভুত দোলাচলের উপলব্ধি হচ্ছে। ওর সঙ্গে কথা বলছেন বটে কিন্তু মনের মধ্যে চলছে আরেক ভাবনা। তারপর মেয়েটি যখন বিদায় নিচ্ছে তখন ওর হাতে দিয়ে দিলেন সেই মহার্ঘ্য প্যাকেট। বিদেশি ডাক্তারের দেওয়া দ্বিতীয় পর্বের ওষুধের পুরো ডোজের প্যাকেট।

এবার বিস্মিত হওয়ার পালা আমার। এ কী করলেন? এতো কষ্টের ওষুধ সব দিয়ে দিলেন। মোহরদির মুখে একটা স্নিগ্ধ শান্ত হাসি। এক অন্যরকমের প্রশান্তি। বললেন, ‘জানো তো যখন ওকে দেখলাম হঠাৎই উপলব্ধি করলাম, ওর কষ্ট তো আমার চেয়ে বেশি। এতো কম বয়স, এতো ভালো নাচে, মুখখানিই তো শক্তি, সম্বল  যা-ই বলো না কেন। সেই মুখখানি যদি নষ্ট হয়ে যায় ওর তো আর কিছুই থাকবে না। এই ওষুধ যদি এতোটুকু উপকারে লাগে তবে ওষুধ সার্থক।’ তারপর স্বগতোক্তির মতো যেন নিজের জন্যই উচ্চারণ করেন এক অমোঘ উক্তি। ‘ঠাকুর যখন অর্থ, যশ, সম্মান দিয়েছেন তখন দুহাত ভরে গ্রহণ করেছি। একবারও মনে হয়নি, কেন দিলেন, আমি কী সত্যি এর যোগ্য। আর যখন রোগ দিলেন কেবলই প্রশ্ন করেছি, কেন দিলেন? আমাকেই কেন? সবই ঠাকুরের ইচ্ছা। যে হাতে অর্থ-যশ-সম্মান নিয়েছি ঠাকুরের আশীর্বাদ বলে, সে-হাতেই রোগ শোক দুঃখকেও নিতে হবে ঈশ্বরের ইচ্ছে আর তাঁর দান বলে। নাহলে এতোদিন শান্তিনিকেতনে থেকে গুরুদেবের কাছ থেকে কী শিক্ষা নিলাম? সেই মুহূর্ত থেকে মন একেবারে শান্ত হয়ে গেল।’

পুরো গল্প শুনে মনে হলো, মোহরদি সত্যিকার অর্থেই গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের শিষ্যা, কেবল গানে নয়, আধ্যাত্মিক উপলব্ধিতেও। তাই তো সংগীতকে জীবন-সাধনায় একাত্ম করতে পেরেছিলেন।