অর্ধনারীশ্বর

বিকেল চারটে বেজে পাঁচ। নারকেলবাগান মোড়টা ছেড়ে রবীন্দ্র-তীর্থের সামনে আসতেই মোবাইলটা  বেজে উঠল, যতদূর দূর থাক, শুধু যে চেয়ে থাক …।

ব্যস্ত রাস্তা। সামনে-পেছনে সারি সারি গতিময় যান। বাইকের গতি কমিয়ে মোবাইলটাকে ঘাড়ে-কানে চেপে ধরার চেষ্টা করল অহিঞ্জিত।

কত দিন কত মাস এই সুরটা শোনার অপেক্ষায় ছিল অহিঞ্জিত।  সেই কবে লাজুলি তাকে নীরবে ছেড়ে চলে গেছে। কিছুই জানতে  দেয়নি, বুঝতে দেয়নি কী দোষ করেছিল অহিঞ্জিত।

একেবারে নিঃশব্দে-নীরবে নিজেকে সরিয়ে ফেলল লাজুলি। ওর বান্ধবীদের কাছে ফোন করেও লাজুলির  কোনো সংবাদ পাওয়া গেল না। পরে অবশ্য জানতে পেরেছিল, লাজুলি এ-শহর ছেড়ে চলে  গেছে।

চিন্তার ফাঁকে মিজোরাম হাউসের সামনে আসতেই হঠাৎ একটা কুকুরছানা ছুটে এলো বাইকের সামনে, যেন তুলতুলে একটা উলের বল।

সর্বনাশ!

কিছু বোঝার আগেই বাইক, লাজুলি, উলের বল – সব একাকার হয়ে গেল মুহূর্তের ভেতর। পেছনদিক থেকে ছুটে আসা ট্রাকটা সজোরে ধাক্কা মারল বাইকের পেছনে। একেবারে রেসিং কারের মতো পালটি খেতে খেতে টেকনো ইন্ডিয়ার গেটের সামনে গিয়ে পড়ল।

কলেজ ছুটির পরে অনেকেই তখন জটলা করছিল গেটের সামনে, রেলিংয়ের ধারে। চোখের সামনে এতবড় একটা অ্যাক্সিডেন্ট  দেখে তারা ছুটে এলো। ধুলোমাখা শরীরটা থেকে রক্ত চুয়ে চুয়ে পড়ছিল। কপাল বেয়ে একটা রক্তের ধারা গড়িয়ে আকাশ-নীল শার্টটাকে ভিজিয়ে দিলো। মেয়েরা ভয়ে মুখ ঢেকে ছেলেদের কিছু একটা করার কথা বলল।

ছেলেগুলো সময় নষ্ট না করে অহিঞ্জিতকে পাশের টাটা সেন্টারে নিয়ে গেল।

ঘোরলাগা চোখে অহিঞ্জিত ওদের অনুরোধ  করল, ‘ভাই, আমার বাইক আর মোবাইলটা পিস্নজ!’

‘ডোন্ট ওরি, – কিছু চিন্তা করবেন না। আমরা সব ঠিক করে রাখব। এ-মুহূর্তে আপনার ট্রিটমেন্টটা খুব জরুরি।’

অহিঞ্জিতকে আশ্বাস দিলো ছেলেগুলো।

এরপর অহিঞ্জিতের মোবাইল থেকে ওর মাকে একটা ফোন করে দিলো। তবে বেশ সাবধানে কথাটা বলল, মাকে।

একজনের বাইকের পেছনে বসিয়ে আর একজন ওকে ধরে রাখল। এতটুকু সময় নষ্ট না করে ওরা অহিঞ্জিতকে একেবারে টাটা  সেন্টারের গেটের সামনে নিয়ে এলো।

খবর পাওয়া মাত্র ইমারজেন্সি থেকে একজন অ্যাটেন্ড্যান্স এসে অহিঞ্জিতকে ট্রলি-বেডে শুইয়ে সরাসরি ইমারজেন্সিতে ঢুকিয়ে দিলো।

দুজন কলেজছাত্রের কাঁধে ভর দিয়ে অহিঞ্জিত যখন টলোমলো পায়ে টাটা সেন্টারের পাথুরে রাস্তা ধরে হাসপাতালে প্রবেশ করছিল, ওর মাথায় তখন অসহনীয় যন্ত্রণা করছে। তবু তার ভেতর ও মাথা তুলে গাছেঘেরা পরিবেশটা একনজর দেখে নিল। কী সুন্দর ফুলে ফুলে সাজানো হাসপাতালের ভেতরটা। নাম-না-জানা গাছগুলো থেকে পাখিদের কলরব শুনতে পেল। একটু এগোলেই ইমারজেন্সি গেট। সামনেই পদ্মপুকুর। বাঁধানো পুকুরের চারধারে রোগীর  আত্মীয়স্বজন সবাই বসে আছে।

অহিঞ্জিতের চোখদুটো হঠাৎ এক জায়গায় আটকে গেল। ও কি ঠিক দেখছে? নাকি ওটা হ্যালুসিনেশন? বিএম স্যার বলতেন, ‘রজ্জুকে সর্প দেখার ভ্রম!’

তাই কি?

ওই তো দাঁড়িয়ে আছে একটা পান্থপাদপ গাছের নিচে – ও কি লাজুলি নয়?

বেশি কিছু ভাবনার সুযোগ না দিয়ে ছেলে চারজন ওকে অ্যাডমিট করে দিলো। একজন সিস্টার এসে অহিঞ্জিতকে ইমারজেন্সি টেবিলের ওপর শুইয়ে প্রথমে ওর ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে ব্যান্ডেজ বেঁধে ওকে বেডে শুইয়ে ইঞ্জেকশন, স্যালাইন চালিয়ে দিলেন। তারপর ওর পালস, বিপি সব চেক করলেন। ছেলেগুলো অহিঞ্জিতকে রেখে বাইরে অপেক্ষা করতে লাগল, যতক্ষণ না ওর বাড়ি থেকে কেউ আসে।

অহিঞ্জিত ওর আশপাশের মুমূর্ষু রোগীদের দেখতে দেখতে  চেতনার অন্য স্তরে প্রবেশ করে।

 

দুই

আষাঢ়স্য প্রথম দিবস। মহাকবির চোখে দেখা উজ্জ্বয়িনীর আকাশের মতোই আজো কলকাতার আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। কালো কালো পরির মতো মেঘগুলো যেন ডানা মেলে উড়ে সবাই এক জায়গায় জড়ো হচ্ছে।

সকাল নটা। এই সকালেই কেমন যেন একটা গুমোট গরম পড়েছে। এতটুকু বাতাস নেই কোথাও। বাতাসে একশ শতাংশ আর্দ্রতার কারণে গলদঘর্ম অবস্থা সকলের। চিংড়িঘাটার মোড়ে দাঁড়িয়ে উৎস আজ আকাশটাকে নিয়ে পড়েছে। গজগজ করতে করতে বলছে – ‘দেখ, দেখ, আকাশটা কেমন মুখ গোমড়া করে  থুম্ব মেরে বসে আছে। কী এত শোক রে বাবা? নাকি কারো সঙ্গে কাট্টি হয়ে গেছে? ল্যাং খেলেও কারো মুখ আজকাল এত কালো হয় না।’

প্রায় চলিস্নশ মিনিট দাঁড়িয়ে পা ব্যথা হয়ে গেল, তবু বাসের দেখা  নেই। অহিঞ্জিত বিরক্ত হয়ে উৎসকে বলে, ‘তুই এবার একটু থামবি? ঘড়ির দিকে তাকিয়েছিস একবারও? কটা বাজে সে-খেয়াল আছে?’

উৎস এদিক-ওদিক তাকিয়ে মাফ চেয়ে নিল, ‘সরি, বস। ঠিক আছে এই মুখে কুলুপ আটকালাম।’

কথাটা শেষ হতে না হতেই ও হঠাৎ পাগলা জগাইয়ের মতো শূন্যে দুই হাত ছুড়ে চিৎকার করে বলে উঠল, ‘আসছে, সে আসছে।’

‘কে আসছে?’

আকাশের দিকে তাকিয়ে কথাটা বলতে বলতেই দারুণ তোড়ে বৃষ্টি নামল। কে কোথায় ছুটে শেল্টার নেবে খুঁজতে খুঁজতেই অহিঞ্জিত দেখল, একটা এসি বাস এদিকে আসছে।

‘যাক বাঁচা গেল’, বলে ভিজতে ভিজতে বাসের পেটে সেঁধিয়ে  গেল ওরা দুজনে।

এদিক-ওদিক তাকানো বৃথা। বাসের ভেতরে তখন হেঁচকি ওঠার মতো অবস্থা। এতক্ষণ বাদে বাস এলে অফিস টাইমে যা হয় তাই। উৎস ওর কালি-পটকার মতো সরু শরীরটা নিয়ে সুরসুর করে ভিড়ের ভেতর দিয়ে একটু একটু করে পেছনের দিকে চলে গেল। অহিঞ্জিতের প্রায় ছয় ফুট বিরাশি কেজি শরীরটাকে কেউ জায়গা ছাড়তে রাজি নয়। অগত্যা দুই দরজার মাঝে দাঁড়িয়ে বেচারা চাপ খাচ্ছে।

এরকম অসহনীয় পরিস্থিতিতে একটা মিষ্টি গন্ধ এসে ওর নাকে লাগে। অহিঞ্জিত দেখল ওর প্রায় বুকের কাছে রেশম-কোমল চুলগুলো থেকে ভেসে আসছে গন্ধটা। ও ঘাড় নিচু করে দেখল,  মেয়েটা ওর চাইতে বেশ খানিকটা ছোট উচ্চতায়। মেয়েটা মুখ উঁচু করে নিশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করছে। এ রকম পরিস্থিতিতে দমবন্ধ হয়ে যাওয়ার কথা। এসি বাস, তাই রক্ষা।

এই মেয়েটাকেই ও বেশ কিছুদিন ধরে এই রুটের বাসে যাতায়াত করতে দেখেছে। রূপ লাগি আঁখি না ঝুরলেও এ-মুহূর্তে অহিঞ্জিত চোখ সরাতে পারছে না।

রাজারহাটের ভেতর দিয়ে খুব জোরে ছুটছে বাসটা। মাঝেমধ্যে কড়া ব্রেকের কারণে মেয়েটা তাল সামলাতে না পেরে ওর গায়ে পড়ে যাচ্ছে। আর প্রতিবারই ‘সরি’ বলছে।

এই সরি কথাটা শুনতে শুনতে অহিঞ্জিতের বুকের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা প্রজাপতিটার আসেত্ম আসেত্ম যেন ঘুম ভাঙছে। এরপর  সেটা ডানা মেলে উড়তে যাওয়ার আগেই বাসটা ইকো পার্কের সামনে চলে এলো আর একদল তরুণ-তরুণী কলকল করতে করতে  নেমে গেল।

অহিঞ্জিতের সামনের সিটটা ফাঁকা হতেই ও মেয়েটাকে বসার অনুরোধ জানায়।

‘নো, থ্যাংকস’, ছোট্ট এই শব্দদুটো সিম্ফনি হয়ে অহিঞ্জিতের হৃদয়তন্ত্রীতে কাঁপন লাগায়। এই প্রথম অহিঞ্জিত মেয়েটাকে ভালোভাবে তাকিয়ে দেখতে পাচ্ছে। বৃষ্টি থেমে গেছে কিছুক্ষণ আগেই। মেঘের ভেতর থেকে একফালি রোদ্দুর এসে পড়েছে  মেয়েটার মুখে। যেন ভোরের প্রথম আলো পাকা গমের ক্ষেতে পড়ে ঝলমলিয়ে উঠল। অহিঞ্জিত অবাক হয়ে দেখছে মেয়েটাকে। ডিম্বাকৃতি মুখের ওপর যামিনী রায়ের আঁকা দুখানি দিঘল চোখ। দিঘির চারপাশে নারকেলবীথির মতো ঘন কালো আঁখিপলস্নব। সেই  চোখের দিকে তাকালে মনে হয় যেন বহুদূর থেকে হেঁটে আসা ক্লান্ত তৃষ্ণার্ত পথিক সেই দিঘির জলে তৃষ্ণা নিবারণ করে নারকেলগাছের ছায়ায় দুদ- বিশ্রাম পায়।

অহিঞ্জিতের মার কথা মনে পড়ে যায়। বেশ কিছুদিন হলো, অফিস থেকে বাড়ি ফিরলেই মায়ের মুখে একটাই কথা, ‘এবার বিয়ের কথা ভাব। কাউকে মনে ধরলে বলেই ফেল না।  রাস্তাঘাটে এত মেয়ে দেখিস কাউকেই কি তোর মনে ধরে না?’

মা বন্ধুত্বের সুরে কথাটা বলে।

অহিঞ্জিত দেখল ওর সঙ্গে চোখাচোখি হতেই মেয়েটা লজ্জায় মাথা নিচু করল। ‘লজ্জা নারীর ভূষণ’ – প্রচলিত এ-বাগধারাটা আজ সে প্রত্যক্ষ করল মেয়েটার ভেতর। অহিঞ্জিত বেশ অবাক হলো, কেননা এই বয়সী মেয়েদের অভিধান থেকে আজকাল ‘লাজুক’ শব্দটা উধাও হয়ে গেছে। কালিদাসের নায়িকার মতোই মুখে তার লোধ্ররেণু লীলাপদ্ম হাতে সে লাল রঙের ভ্যানিটির হাতল নিয়ে নাড়াচাড়া করছিল।

খুব বেশি সময় হাতে ছিল না অহিঞ্জিতের, তাকে সামনেই নেমে পড়তে হলো হৃদয়কে অতৃপ্ত রেখে।

 

তিন

‘কী রে, খাবি না? খেতে চল’ – কথাটা বলতে বলতে লাজবমত্মীর ঘরের দিকে এগিয়ে এলো অভিনন্দা।

লাজবমত্মীর ঘর অন্ধকার আর ওর দরজাটাও হাট করে খোলা  দেখে ও বেশ অবাক হলো।

অভিনন্দা এরপর লাজবমত্মীর ঘরে ঢুকে ওর সুইচ চেপে ঘরে আলো জ্বালায়। তাকিয়ে দেখে ওর ঘরে জিনিসপত্র তেমন কিছুই  নেই, ঘর ফাঁকা। ফাঁকা টেবিল, বিছানা, টেবিলের এককোণে পড়ে থাকা জলের জগ, ফাঁকা ওয়ারড্রোব – সবকিছু যেন আজ ওকে ব্যঙ্গ করছে। লাজবমত্মীর কাপড়-চোপড়, লাগেজ, ব্যাগ, ছড়ানো-ছিটানো জিনিসপত্র কিছু নেই।

একেবারে নিঃশব্দে চলে গেল লাজুলি? কাউকে কিছু না জানিয়ে  কোথায় গেল? ঘুণাক্ষরেও তো কেউ বুঝতে পারেনি ওর মনের কথা।

অভিনন্দা দ্রম্নত ঘর থেকে বেরিয়ে করিডোর ধরে নিজের ঘরে ঢুকে ডাকল শ্রমণাকে। শ্রমণা প্রাণায়াম ছেড়ে ধড়ফড় করে উঠে পড়ে অভিনন্দার গলা শুনে। কিছু একটা নিশ্চয়ই হয়েছে, নইলে এমন তারস্বরে চিৎকার করবে কেন?

‘কী রে, ডাকছিস কেন?’

অভিনন্দার মুখ থেকে কথাটা শোনার পড় শ্রমণার চোখেও ঘোর বিস্ময়, ‘কী বললি, লাজুলি চলে গেছে? কোথায়?’

‘জানি না রে, ঘরে ঢুকে দেখি ওর ঘর ফাঁকা, জিনিসপত্র কিছুই  নেই।’

 

তিন বছর হতে চলল ‘নিজ নিকেতনে’র এই মেসবাড়িতে ওরা তিনজনে থাকত। এখানে এসেই ওদের পরস্পরের সঙ্গে আলাপ। ফুলিয়া থেকে এসেছিল লাজবমত্মী ওরফে লাজুলি। স্বল্পবাক লাজুক স্বভাবের মেয়ে ছিল ও। তবে হাসি-ঠাট্টা-তামাশায় যোগ দিত আর মজাও পেত। নিজেও কিছু কিছু মজার কথা শেয়ার করত। রাজারহাটের একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করত ও। শ্রমণা বেলেঘাটার একটা নার্সিংহোমের রিসেপশনিস্ট আর অভিনন্দা কাকুড়গাছিতে শিক্ষকতা করত। দুই-তিন বছর বয়সের তফাৎ ছিল ওদের। তাই তিনজনে একেবারে বন্ধুর মতো মেলামেশা করত। তবে অভিনন্দার সঙ্গে লাজুলির মনের মিল ছিল বেশি। অভিনন্দা আর শ্রমণা বরাবর এক ঘরে থাকত। ওরা এখানে আসার বেশ কিছুদিন বাদে লাজবমত্মী ঢুকল। ও তখন পাশের ছোট ঘরটায় একাই থাকত।

রাতে তিনজন যখন এক জায়গায় মিলিত হতো, তখন শ্রমণাই  খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে এর-তার প্রেমের গল্প শুনত। স্বল্পবাক লাজবমত্মীকে ও নানান টিপস দিত। একদিন লাজুলির গলায় লালচে দাগ দেখে নন্দা আর শ্রমণার সে কী মুখ টিপে হাসি, ‘বল, কবে হলো তোদের হানিমুন?’ ‘এই ডুবে ডুবে জল খাচ্ছিস তুই, ভালো হবে না কিন্তু। সব কথা মাসিমাকে বলে দেবো।’

তারপর তিনজনে খাওয়ার টেবিলে হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ত। কখনো নিজের প্রেমের গল্পও বেশ রসিয়ে রসিয়ে বলত। কয়েকবার অহিঞ্জিতের সঙ্গে দেখাও হয়েছে নন্দা আর শ্রমণার। লাজুলিই ওদের সঙ্গে অহিঞ্জিতের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে।

‘দুটিতে মানিয়েছে বেশ’, দুজনেই স্বীকার করেছে।

আজ লাজুলির ঘর শূন্য দেখে তাই ও আর কান্নার বেগ সামলাতে না পেরে বলে, ‘দেখ, দেখে যা, লাজুলি কোথাও নেই। আমাদের কাউকে কিছু না বলে ও কোথায় যে চলে গেল। জানিস, গতকাল ওকে দেখে আমি চমকে উঠেছিলাম। স্কুল থেকে ফিরে দেখি অন্ধকার ব্যালকনির গ্রিলে মাথা ঠেকিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আমি জিজ্ঞেস করি – কী রে, এভাবে একা অন্ধকারে কী করছিস? তোর কি মন খারাপ? ও উত্তর না দিয়ে শুধু মাথাটা একটুখানি নাড়িয়ে আসেত্ম আসেত্ম ঘরে ঢুকে গেল। ভাবলাম, অহিঞ্জিতের সঙ্গে হয়তো কিছু ঘটতে পারে। প্রেমিক-প্রেমিকার এ-জাতীয় মান-অভিমানের খেলা  তো হামেশা ঘটে। আমারও একগাদা খাতা দেখা বাকি ছিল, তাই তখন এর বেশি কিছু ভাববার অবকাশ পাইনি।’

কথাটা বলতে বলতে একবুক শ্বাস ছাড়ে অভিনন্দা।

এরপর শ্রমণা আর অভিনন্দা ওদের মেসবাড়ির মালকিনের কাছে গিয়ে জানতে পারে, গতকালই লাজুলি টাকা-পয়সা মিটিয়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে দিয়েছে। নন্দার কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না, লাজুলি ওকে  কোনো কিছু না জানিয়ে চলে যাবে। কতদিন কত কথা আলোচনা করেছে দুজনে। সেসব কথা শ্রমণাও জানে না।

 

চার

অহিঞ্জিতেরও একই রকম অভিজ্ঞতা হলো।

বেশ কয়েকদিন হলো লাজুলির কাছ থেকে কোনো ফোন বা সংবাদ না পেয়ে অহিঞ্জিত প্রথমে ধরে নেয়, হয়তো ওর শরীর খারাপ করেছে। কিন্তু সুইচ অফ দেখে অনেক খারাপ চিন্তাও মাথার ভেতর পাক খাচ্ছে। দিন দিন শহরটা যা হয়ে উঠছে, কত অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে প্রতিদিন। তাই সেদিন অফিস থেকে একেবারে ওদের  মেসবাড়িতে চলে আসে। এখানে এসে ও জানতে পারে, এরাও লাজুলির খবর না পেয়ে দারুণ মনমরা হয়ে আছে। পরে যখন জানল, লাজুলি টাকা-পয়সা মিটিয়ে দিয়ে চলে গেছে, তখন অন্য এক চিন্তা গ্রাস করে অহিঞ্জিতকে। কী এমন ঘটনা ঘটল যে, কাউকে কিচ্ছুটি না জানিয়ে নিঃশব্দে চলে গেল।

কিন্তু কোথায় গেল? এটাও তো ভাববার বিষয়।

অহিঞ্জিতের মুখের দিকে সত্যি তাকানো যাচ্ছে না। যেন বিরহকাতর যক্ষ। অথচ লাজুলির কাছ থেকে ওদের বাড়ির ঠিকানাটাও ঠিকঠাক নেওয়া হয়নি। আজ না কাল করতে করতে বড্ড দেরি হয়ে  গেছে। শুধু শুনেছিল শামিত্মপুর নইলে ফুলিয়ার দিকে ওদের বাড়ি।  সেটা এখন টের পাচ্ছে। বলতে গেলে প্রতিদিন লাজুলির সঙ্গে তো ওর দেখা হচ্ছে, তাই আর গ্রামের বাড়ির ঠিকানার প্রতি তেমন  কোনো আগ্রহ ছিল না। সেদিন অহিঞ্জিত ওর মাকে লাজুলি সম্পর্কে সবকিছু খুলে বলায় তিনিই লাজুলিদের বাড়ি কোথায়, ওর বাবা-মা ছাড়া পরিবারে আর কে কে আছে সে-ব্যাপারে খোঁজ নিতে বলেন। লাজুলিকে একদিন ওদের বাড়িতে এনে কিংবা কোনো রেস্টুরেন্টে মায়ের সঙ্গে পরিচয় করাবে, সেটাও ভেবে রেখেছে।

প্রথমদিকে একরাশ অভিমান হয়েছিল অহিঞ্জিতের, এভাবে কাউকে কিছু না জানিয়ে লাজুলি হঠাৎ কেন চলে গেল। তারপর উৎসের তৎপরতায় একদিন লাজুলির অফিসে গিয়ে জানতে পারল  যে ও এখান থেকে মুম্বাইয়ে ট্রান্সফার নিয়ে চলে গেছে।

কথাটা শোনার পর অহিঞ্জিতের প্রথমে রাগ হলো, তারপর রাগ  থেকে দুঃখ, দুঃখ থেকে বেদনা, বেদনার পরে হতাশা এবং তারও পরে লাজুলি সম্পর্কে ওর ধারণা হলো, আপাতদৃষ্টিতে লাজুলিকে যতটা লাজুক, সরল, সাদাসিধে বলে মনে হয়েছিল, আদতে ও একজন ফ্রড। খেলুড়ে মেয়ে। বিষকন্যা। এমন মেয়ের হাত থেকে  যে ও নিষ্কৃতি পেয়েছে সেটাই মঙ্গল। বড় কিছু ঘটে যাওয়ার আগেই ও জীবন থেকে সরে গেছে। ঈশ্বর যা করেন, ভালোর জন্যেই করেন।

নানাভাবে অহিঞ্জিত ওর ব্যাকুলতাকে সান্তববনা দিয়েছে।

তবু উৎস কিন্তু এত সহজে লাজুলি সম্বন্ধে এ-জাতীয় ব্যাখ্যা  মেনে নিতে পারছে না। অহিঞ্জিতের চাইতে ও ঢের বেশি মেয়েদের সঙ্গে মিশেছে, তাই ওর অভিজ্ঞ চোখ নাকি অন্য কথা বলে।

সেদিন লাজুলিকে নিয়ে অহিঞ্জিতের সঙ্গে উৎসর একপ্রকার  গোলমাল বেধে গেল। না পেরে উৎস বলেই বসল, ‘আসলে তোর ওকে খোঁজার কোনো ইচ্ছাই নেই। যা না একবার, মুম্বাইয়ের অফিসে গিয়ে খোঁজ নে। এখানকার অফিস থেকে অ্যাড্রেস জোগাড় করে ওখানে চলে যা। বলিস তো আমিইও যেতে পারি তোর সঙ্গে।’

উৎসর এই অতিরিক্ত উৎসাহ অহিঞ্জিতের কাছে বাড়াবাড়ি বলে মনে হলো। কথার পিঠে অহিঞ্জিত সেদিন রাগের মাথায় উৎসকে  বেশ একটা খারাপ কথা বলে ফেলে। তারপরে অবশ্য ওর কাছে ক্ষমাও চায়।

এরপর থেকে উৎসও আর এ-ব্যাপারে মাথা ঘামায় না।

 

লাজুলি কলকাতা ছেড়ে চলে যাওয়ার পরও প্রায় দশ মাস কেটে  গেছে। প্রথমদিকে নিদারুণ মানসিক কষ্টে কাটালেও অহিঞ্জিত এখন অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। বর্তমানে সে-যন্ত্রণার তীব্রতা না থাকলেও লাজুলি নামক কাঁটাটা এখনো অহিঞ্জিতের বুকের গভীরে খচখচ করে বিঁধে।

আর সেদিন একেবারে অপ্রত্যাশিতভাবে অহিঞ্জিতের মোবাইলে  ফোন আসে। লাজুলির ফোন, যে-ফোনের জন্য অহিঞ্জিত একেবারে তীর্থের কাকের মতো বসে ছিল। আর সেদিনই ঘটে গেল সেই দুর্ঘটনা।

 

এরপরও প্রায় দুই মাস কেটে গেছে। অহিঞ্জিত এখন অনেকটাই সুস্থ। কয়েকদিন হলো ও অফিসে জয়েন করেছে। তবে শারীরিকভাবে এখনো বেশ দুর্বল। ওর মস্তিষ্কের আঘাতটা বেশ গুরুতর ছিল। সিটিস্ক্যান, এমআরআই, ইসিজি সেইসঙ্গে একগাদা বস্নাড টেস্ট  –  প্রায় তিরিশ হাজার টাকা ইনভেস্টিগেশনেই বেরিয়ে গেল।

অফিসে জয়েন করার পর আবার সেই ব্যস্ত শিডিউল। আজকাল বাড়ি ফিরতে ফিরতে কোনোদিন রাত দশটা বেজে যায়। মা
ঘর-ব্যালকনি পায়চারি করে। বাড়ি ফিরে কোনোরকমে ডিনার সেরে আবার ল্যাপটপের সামনে বসে পড়ে।

 

পাঁচ

আজ ষষ্ঠী। আজই অহিঞ্জিতের শেষ অফিস। এরপর একেবারে লক্ষ্মী পুজোর পরে অফিস খুলবে। অফিসে বসে কাচের জানালা দিয়ে বাইরেটা দেখে অহিঞ্জিত। বর্ষা বিদায় নিয়েছে। আকাশে সোনালি পরশ। বাতাসে ভাসছে খুশির গান। রাজারহাটের বিস্তীর্ণ প্রান্তরে কাশফুলের মেলা বসেছে। সোনা-রোদ্দুরে চারিদিক ঝলমল করছে। এমন দিনে কাজে মন বসে না অহিঞ্জিতের। বুকের অর্গল ঠেলে একরাশ ভারী বাতাস বেরিয়ে আসে। কাজের ফাঁকে ও ভাবতে বসে, হিসাবে কোনো ভুল ছিল কি? নাকি ও কোনোদিন এ-পথের পথিক ছিল না বলে বুঝতে পারেনি পথটা হঠাৎ কোথায় শেষ হয়ে গেল।

 

সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে অফিস থেকে বেরিয়ে পরে অহিঞ্জিত। রাস্তার দুপাশ আলোকমালায় সেজে উঠেছে। আজ বাইক নিয়ে এসেছে অহিঞ্জিত। আর্মেনিয়া, আর্সেলান ছাড়িয়ে চীনা পার্কের সামনে আসতেই রাস্তার বাঁদিকে চোখ চলে যায় হঠাৎ ওর। চমকে ওঠে অহিঞ্জিত। বাইকের গতি কমিয়ে রাস্তার একপাশে দাঁড় করায়। হৃদস্পন্দন বাড়ছে দ্রম্নত। ও কি ঠিক দেখেছে?

আরো একবার তাকিয়ে দেখল মেয়েটিকে। হ্যাঁ, ঠিকই তো, ও লাজুলি না হয়ে যায় না। একটা দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। কারো জন্য কি ও অপেক্ষা করছে? নীল লেহেঙ্গা পরেছে মেয়েটা।  গোলাপি আঁচল ঘুরিয়ে রাখা আছে বুকের ওপর। হেয়ার স্টাইল  চেঞ্জ করার জন্য মনে হয় একটু অন্যরকম লাগছে। নইলে আর সব  সেই আগের মতোই। অহিঞ্জিত মুগ্ধ হয়ে দেখতে লাগল নীলাম্বরী রাধিকাকে। শুধু কদমগাছটাই নেই। না থাকুক, হৃদয়ের বানভাসি যমুনা তো আছে। অহিঞ্জিতের বুকের ভেতর উথাল-পাতাল ঢেউ আছড়ে পড়ছে।

অহিঞ্জিত দ্রম্নত মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ায়। তারপর হঠাৎ ওর হাতটা ধরে বলে, ‘এতদিন কোথায় ছিলে? একটা ফোন পর্যন্ত করোনি, সুইচ অফ করে রেখেছিলে কেন? কী হয়েছিল তোমার?’

অহিঞ্জিত যেন মুখখোলা শ্যাম্পেনের বোতল। হুড়মুড় করে এতদিন যা কিছু চেপে রাখা ছিল সব বেরিয়ে পড়ল। অভিযোগ- অনুযোগের তীরে বিদ্ধ করতে লাগল লাজুলিকে।

লাজুলি নির্বাক, নিরুত্তাপ, ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল অহিঞ্জিতের মুখের দিকে। সেই দৃষ্টিতে কোনো দুঃখ, বেদনা, অভিমান কিছুই ছিল না। ছিল না কোনো কপটতা কিংবা চাওয়া-পাওয়ার হিসাব-নিকাশ।

অহিঞ্জিত লক্ষ করল, এখানে অনেকেই ওদের দেখছে। ও তৎক্ষণাৎ লাজুলির হাত ছেড়ে দিয়ে আসেত্ম আসেত্ম বলল, ‘একবার আমার কথাটা শোনো, কী হয়েছিল আমি তো তার কিছুই জানি না। আমার অপরাধটা যে কী তা-ই তো বুঝলাম না। আমার সঙ্গে একটু এদিকে এসো, পিস্নজ।’

মন্ত্রচালিত পুতুলের মতো লাজুলি অহিঞ্জিতের পেছন পেছন এসে ওর বাইকে উঠল।

কলকাতায় নিরিবিলিতে দুদ- কোথাও যে একটু বসে কাটাবে  সে-জায়গাটাই নেই। ইচ্ছা ছিল, ওকে কোনো রেস্টুরেন্টে নিয়ে যাবে; কিন্তু সেখানেও সেই ভিড়। তাছাড়া লাজুলিও যেতে রাজি হলো না।

কোথায় যেতে পারে, ভাবতে ভাবতে অহিঞ্জিত লাজুলিকে একেবারে ওদের বাড়িতে নিয়ে এলো। মনে পড়ল, আজ তো মা প্রতিবেশী কাকিমার সঙ্গে দক্ষিণেশ্বর গেছে। বলেছে ফিরতে রাত হবে। একেবারে সন্ধ্যা আরতি দেখে ফিরবে। কথা বলার মতো এমন আদর্শ জায়গা আর হতে পারে না।

 

বেশ কিছু সময় ধরে অহিঞ্জিত নিজেই একটানা কথাগুলো বলে  গেল। ওদের সম্পর্কটা তো প্রায় বিয়ে পর্যন্ত গড়িয়ে গিয়েছিল। মা  তো ওদের পরিবারের সঙ্গে কথা বলবে বলে ঠিক করে রেখেছিল। হঠাৎ কী এমন হলো যে, সবকিছু ছেড়ে দিয়ে কাউকে কিছু না জানিয়ে কেটে পড়ল। এতক্ষণ লাজুলি নির্বাক শ্রোতা হয়ে সব শুনছিল। অহিঞ্জিতের ভেতর আসেত্ম আসেত্ম ক্ষোভ বাড়ছিল, বিশেষ করে লাজুলির এহেন চুপচাপ থাকাটা ও কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না।

একসময় লাজুলি ধীর-শান্ত গলায় জানায়, ‘আমার পক্ষে আর বিয়ে করা সম্ভব নয়।’

রাগে-দুঃখে চিৎকার করে ওঠে অহিঞ্জিত, ‘কেন? কেন? বলো  কেন, কী দোষ করেছি আমি?’

কথাটা বলতে বলতে অহিঞ্জিত লাজুলির হাতটা চেপে ধরে।

লাজুলি এই প্রথম শক্ত হাতে অহিঞ্জিতের হাতটা এক ঝটকায় সরিয়ে দেয়। তারপর ওর গায়ে পাথর-বসানো সোনালি জরির কাজ করা অপূর্বসুন্দর লেহেঙ্গার বস্ন­vউজটা এক টানে খুলে ফেলে বলে, ‘দেখো, দেখো, এর পরও তুমি বিয়ে করবে আমায়?’

ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত লাজুলির এই চেহারা দেখে চমকে ওঠে অহিঞ্জিত। ভয়ে দু-পা পিছিয়ে আসে। থরথর করে কাঁপতে থাকে ওর সমস্ত শরীর। কী দেখছে ও?

 

লাজুলি তখন দুই হাতে ওর মুখ ঢেকে হাপুস নয়নে কাঁদতে কাঁদতে বলছে, ‘কীভাবে বলতাম কথাটা তোমাকে, আমার সামনে তখন জীবন-মৃত্যু একটা প্রশ্নচিহ্নের মতো ঝুলে রয়েছে। ডা. বসু যখন ফাইনাল ডায়াগনোসিস করলেন যে, আমার ব্রেস্ট ক্যান্সার হয়েছে, তখনই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম, আমি তোমাকে ঠকাতে পারব না। তাই নীরবে তোমার জীবন থেকে সরে যেতে চেয়েছিলাম। ডা. বসু ট্রিটমেন্টের জন্য আমাকে মুম্বাই যাওয়ার ঠিকানা বলে দিলেন। ইমিডিয়েট অপারেশনের কথা বললেন। তখন আমার টাকার ভীষণ প্রয়োজন। আবার চাকরিটাও রাখতে হবে। এমজিকে পুরো ঘটনাটা খুলে বলায় তিনি সব ব্যবস্থা করে দিলেন। তিন মাস ছুটির ব্যবস্থাও করে দিলেন। তাই সবকিছু ভেবে এখান থেকে ট্রান্সফার নিলাম।’

কথাটা বলে ও মেঝেতে বসে পড়ে।

অহিঞ্জিত সেবার বারোপলিস্নতে দেবীর এই অর্ধনারীশ্বর রূপ  দেখে চমকে উঠেছিল। একদিকে সুডৌল স্তনসমৃদ্ধ নারীসত্তা, অপরদিকে চ্যাপ্টা বক্ষের কঠোর পুরুষশরীর।

 

অহিঞ্জিত ধাতস্ত হতে কয়েকমুহূর্ত সময় নেয়। তারপর দুহাত বাড়িয়ে লাজুলিকে বুকের ভেতর টেনে নিয়ে ওকে বস্ত্রাবৃত করে বলে, ‘এতবড় একটা অসুখের কথা কেন আমায় বললে না? তোমার কি এতদিনে আমার সঙ্গে মিশে এটাই মনে হলো যে, আমি শুধু  তোমার দেহটাকেই ভালোবাসি? আমাদের প্রেম কি শুধুই দেহজ? তাহলে সেদিন আমায় ফোন করেছিলে কেন?’

কথাটা বলে অহিঞ্জিত লাজুলিকে ওর বুকের ভেতর সজোরে  চেপে ধরে আদরে-চুম্বনে ওর যাবতীয় ক্ষতে প্রলেপ লাগাতে থাকে।

 

লাজুলি অহিঞ্জিতের বাইকের সওয়ারি হয়ে দেখতে পায় রাস্তার দুপাশের বিস্তীর্ণ কাশের বন। শুনতে পায় শরতের স্নিগ্ধ বাতাসে  ভেসে মহাসপ্তমীর মহাসংগীত। কলেস্নালিনীর সমস্ত কলধ্বনি পেছনে  ফেলে ওরা নতুন জীবনের পথ ধরে।