\ ১৪ \

The lunatic is in my head
The lunatic is in my head
You raise the blade, you make the change
You rearrange me till I’m sane
You lock the door
And throw away the key
And there’s someone in my head but it’s not me

জেরেমিস ও অ্যালেক্স, লোরেনটিনা ও লিলির ঠোঁট নড়ছে। এ-গান তাদের চেনা। অমলিনী শুনছে মন দিয়ে। পিঙ্ক ফ্লয়েডের মধ্যে এক মনবিদ্ধকর যন্ত্রণা আছে। আসেত্ম আসেত্ম সবাই গম্ভীর ও নিবিষ্টচিত্ত হয়ে উঠেছে। টুং-টাং, ঠক-ঠকাস, ঝনঝন শব্দের শেষ নেই। তার সঙ্গে বহুতর রান্নার মিলিত গন্ধ। এ যেন গন্ধের ঐকতান।
সহসা, গানের শেষ পর্বে অ্যালেক্স চিৎকার করে গাইতে শুরু করল। সে ভারি ছটফটে, প্রাণচঞ্চল। বেশিক্ষণ গম্ভীর থাকতে পারে না। তার কণ্ঠে তেমন সুর নেই। তাতে কী! প্রাণে গান উথলে উঠলে কে কবে সুরমাত্রার পরোয়া করেছে!
And if the cloud bursts, thunder in your ear
You shout and no one seems to hear
And if the band you’re in starts playing different tunes
I’ll see you on the dark side of the moon
অমলিনী জেরেমিসের পাশে। দুজনে প্রায় গায়ে গায়ে দাঁড়িয়ে খুমিত্ম নাড়ছে। জেরেমিস মাঝে মাঝে সরে গিয়ে হারিককে জায়গা করে দিচ্ছে। লম্বা-চওড়া হারিকের অনেকটা জায়গা লাগে।
অমলিনী বলছে, ‘পিঙ্ক ফ্লয়েডের গানে গীতিকাব্যপঙ্ক্তি অত্যন্ত মেধাবী। তাই না জেরেমিস? ভাবতে বাধ্য করে।’ ইয়াকভ জেরেমিসের পেছনে ছিল। বলল, ‘শুধু ভাবায় না। চোখের সামনে ছবি ফুটিয়ে তোলে। আমি মনে করি, কাব্যধর্মিতা তখনই সার্থক যখন তা ছবির সঞ্চার করে। সে-ছবি কোনো নিটোল স্থিরচিত্র না-ও হতে পারে, ছেঁড়া ছেঁড়া ছবি হতে পারে, বা অনুভূতির নানা রঙের চলচ্ছবি; কিন্তু ভালো কবিতা ছবি এঁকে তুলবেই। লিরিক তো কবিতাই।’
জেরেমিস হাতে হাতা নিয়ে বলে উঠল, ‘কবিতাই বলো আর গানই বলো, অ্যালেক্স না থামা পর্যন্ত it is thundering in my ear!’
হা হা করে হেসে উঠল ইয়াকভ ও অমলিনী।
অ্যালেক্স বলল, ‘আমার গান শুনে সবারই মাথায় বাজ পড়ে। কিন্তু কে কবে শুনেছে মেঘ কারো আপত্তি শুনে বজ্রপাত বন্ধ করেছে!’
‘আমাকে জায়গা দাও, আমার রান্না পুড়ে যাবে!’ হারিক তাড়া দিলো। মানঘিল গম্ভীরভাবে বলল, ‘যারা রান্না করছ না, এ-ঘরে এই সোফায় এসে বসলেই তো পারো। ওখানে ভিড় করলে কাজের অসুবিধা হয়।’
‘ঠিক ঠিক!’ মাথা নাড়ল ইয়াকভ। হারিক অমলিনীর দিকে তাকিয়ে হাসল।
শবনম, রোজানা, হারিক সম্মিলিতভাবে রান্না করছে। বিফ বিরিয়ানি। শবনম সারাঘর ঘুরছে আর বলছে, ‘একটু অ্যালকারকুম আনলাম না। আহা একটু অ্যালকারকুম আনলাম না। ইস! কী দিয়ে রং করব? রং ছাড়া তো বিশ্রী। জঘন্য। আই হেত হোয়াইত ফুদ।’
মোলি : তুমি ঠিক কী খুঁজছ?
শবনম : রং, রং। অ্যালকারকুম। রান্নায় রং হয়। ইংরেজিটা মনে আসছে না।
মোলি : কী রং!
শবনম : হলুদ। খুব রাগ হচ্ছে। কী করে এটা ভুললাম আমি। সাদা খাবার আমি কিছুতেই খেতে পারব না। খাবার কি শুধু স্বাদ? না না! এর বর্ণ চাই, গন্ধ চাই! আমাদের শরীরের মতো, বুঝলে? এখন কোথায় একটু অ্যালকারকুম পাই! হারিক, মানঘিলকে বলো না, একটু এনে দিক বাজার থেকে! তুমি বললেই দেবে। কিন্তু বোঝাই কী করে? দুচ্ছাই!’ মোলি : দেখো তো, এটাই চাইছ কি না তুমি, টারমেরিক।
শবনম : টারমেরিক! টারমেরিক! ও! ইউ সেভ মাই ফুদ।
মোলিকে জাপটে ধরে চকাস চুকুম চুমু খেল শবনম। সামান্য হলুদ পেয়ে কেউ এত খুশি হতে পারে অমলিনীর ধারণা ছিল না। সে দেখল, বিরাট ডেকচির ঢাকনা তুলে দক্ষ-হাতে মশলা মেশাচ্ছে শবনম। খানিক আটা ঠেসে ঢাকনার প্রান্তভাগ এঁটে দিলো সে। তারপর আঁচ কমিয়ে ছবি তুলতে লাগল। স্মার্টফোনের মুভি ক্যামেরা। হেসে হেসে বলে উঠল, ‘অনলাইন। দাইরেক্ত কমেনতরি। কারো আপত্তি নেই তো?’
হাসি আর বন্ধই হচ্ছে না শবনমের। হলুদ পেয়ে সে প্রায় নেচে উঠেছে। এবার তার রান্না সর্বাঙ্গসুন্দর হবে। রোজানা বলল, ‘হ্যাঁ, আমারও টারমেরিক শব্দটা মনে পড়ছিল না। মোলি, তোমরাও রান্নায় এটা দাও!’
মোলি : হলুদ ছাড়া রান্না হয় না আমাদের।
শবনম : আমাদেরও! রোজানা তুমি মোলির সঙ্গে কথা চালিয়ে যাও পিস্নজ। এই রান্নাঘরে মশলাবিষয়ক আলোচনা একেবারে আদর্শ। বলো মোলি, তোমরা রান্নায় আর কী কী মশলা দাও!
মোলি : মশলা তো অনেক। জিরে, ধনে, আদা, মেথি, মৌরি, কালোজিরে!
রোজানা : ওহ্! কী মিল বলো তো! এসব আমরাও ব্যবহার করি। কিন্তু ওটা কী বললে? ফেনুগ্রিক! আর ফেনেল সিডস!
মোলি : বাংলার মেথি আর মৌরি। দুটোরই খুব সুন্দর গন্ধ।
রোজানা : হ্যাঁ, গন্ধের জন্য আমরা সিনামন, কার্ডামম এসব দিই। তোমরা দাও না?
মোলি : নিশ্চয়ই। কিন্তু সব রান্নায় নয়। দাঁড়াও আমার কাছে মেথি আছে। দেখো তো, তোমরা এটা ব্যবহার করো কি না।
সে তার মেথির ছোট্ট প্যাকেট বের করল মশলার থলে থেকে। দেখে লাফিয়ে উঠল শবনম। হারিক চেঁচিয়ে উঠল – ‘এই তো! এই তো!’ রোজানা বলল, ‘এ হলো নবতুলহালবাতি!’
অমলিনীর হাসি পেল। সে একটি ছোট্ট খাতায় লিখে নিল শব্দটা। নবৎ-উল-হালবাতি! মানে কী? না মেথি! ‘নবৎ’ বলছে যখন রোজানা, একটা সুর আসছে। ‘ব’ বলছে উঁচু গ্রামে! সে বলল, ‘ফেনেল সিডস তো নেই। এছাড়া রাঁধুনি বলেও একটা মশলা দিই আমরা।’
রোজানা : ফেনেল সিডস দেখতে কেমন?
মোলি : ওই জিরের মতো। কিন্তু একটু মোটা। এমনি চিবিয়ে খাওয়া যায়।
শবনম : ওহ্! বুঝেছি! বুদুরুলফিনাল! কিন্তু রাঁধুনি কী?
মোলি : সেলেরি! যতদূর মনে পড়ছে এর ইংলিশ সেলেরি। আমরা যখন শুক্তো রাঁধি, কিংবা ধরো কলাই ডাল, এই রাঁধুনি বাটা না দিলেই নয়।
জেরেমিস : সেলেরি তো সবজি। লম্বা ডাঁটার মতো।
মোলি : তা হলে রাঁধুনির ইংলিশ ঠিক জানি না বোধহয়।
শবনম : সে ছাড়ো। শুক্তো ব্যাপারটা একটু বুঝিয়ে বলো।
মোলি : অনেক রকম সবজি, করলা, পোস্ত, দুধ, আদা বাটা দিয়ে আর ওই রাঁধুনি বাটা মিশিয়ে তরকারি। একটু তেতো কিন্তু বাঙালিদের খুব প্রিয়। এটা নিরামিষ পদ।
রোজানা : খাদার উন মুশকিলাতুন মায়েল কোরায় মারজা।
মোলি : তোমরাও তবে শুক্তো খাও?
শবনম : আমরা যারা প্রাচীন সংস্কৃতির বাহক – আমাদের পারস্পরিক শিল্প-সংস্কৃতির মিল থাকা স্বাভাবিক।
সে ঘুরে ঘুরে সাক্ষাৎকার নিতে লাগল রন্ধনশীল রাইটারদের। ধীরে ধীরে পাশের ঘরে চলে গেল জিনেট। সেখানে সোফা ও টেবিল পাতা। টিভি। খাবার টেবিল। এক অন্ধকার কোণে সে চুপটি করে বসে রইল। সে জানে, শবনম তার সাক্ষাৎকার নেবে না! যে-গান বাজছিল তার একটি পঙ্ক্তি ছিল – দি ডার্ক সাইড অফ দ্য মুন।
এখন সে-গান থেমে গিয়েছে। রাইটাররা কথা বলছে। রান্নার ঠুং ঠাং চলছে। তাকিকো আপনমনে বই পড়ছে। অ্যালেক্স জিনেটের পাশে গিয়ে বসল। ইয়েরমেন কাঁধ জড়িয়ে ধরল তার। তারা নিচু স্বরে বাক্যালাপ করছে।
পোঁ ও ও ও। পুঁ উ উ উ। প্যাঁ ও ও ও। ইয়াকভের বাঁশি বেজে উঠল। স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, অনেকদিন অভ্যাস নেই। তবু তার উৎসাহের অভাব নেই।
একে একে রান্না নামছে। একে একে রাইটাররা বিদায় নিচ্ছে। কীভাবে আড়াই ঘণ্টা কেটে গেল। সে দেখল, জেরেমিস একটা ডেকচিতে সবজেটে সঘন তরল ঘেঁটে চলেছে। তার মুখে খুশির হাসি। প্রায় হয়ে এসেছে। অমলিনীরও রান্না শেষ। হাত ধোয়ার জন্য সিঙ্কে গিয়ে তার চক্ষুস্থির হয়ে গেল। ভয়ানক নোংরা। সে দলা পাকানো ন্যাপকিনগুলো কেচে ক্লিপ আটকে ঝুলিয়ে দিলো। সিঙ্ক পরিষ্কার করতে লাগল। দেখল সারাক্ষণ সেজেগুজে থাকে যে লোরেনটিনা, নাইজের সরকারের সাংস্কৃতিক মন্ত্রণাদাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, লেখক, যে দৈনিক ত্রিশ ডলারের পরোয়া করে না, সে ন্যাতা ডান্ডা নিয়ে ঘর সাফ করছে। এবং সুন্দরভাবে করছে।
মোলি : তুমি এসব পারো?
লোরেন : কেন নয়? তুমিও তো পারছ।
মোলি : আমার অভ্যেস আছে।
লোরেন : আমারও আছে মোলি। আমি মোটেই কুইন নই। আর কাজকে আমি ভয় পাই না।
মোলি : কী করে কিছু লোক সব নোংরা ফেলে চলে গেল?
লোরেন : কারণ, পরিষ্কার করার জন্য কিছু লোক আছে। যে কোনো দলবদ্ধ কাজের এমনই পরিণতি, প্রিয় বন্ধু। দায়িত্ববোধ সবার সমান হয় না।
রান্না করা খাবারগুলো পস্নাস্টিকের ঢাকনাওলা পাত্রে ঢেলে, ঠান্ডা হওয়ার অবকাশে নিজের বাসন মেজে রাখতে গেল অমলিনী। ফিরে এসে দেখল বিমর্ষ মুখে মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে জেরেমিস। তাকিকো বিব্রত মুখে বলছে, ‘পাবলিক কিচেনে, আই মিন, কমিউনিটি কিচেনে রান্নার বাসন দেয়, কিন্তু খাবার নিয়ে যাবার কনটেইনার তো দেয় না।’
জেরেমিস : কী করি তা হলে?
তাকিকো : যা করবার তাড়াতাড়ি করতে হবে কিন্তু। ছটার পর বড়জোর আধঘণ্টা থাকতে পারি আমরা।
জেরেমিস : আমি এই ডেকচি ধরেই নিয়ে যাই? পরের সপ্তাহে ফেরত নিয়ে আসব।
তাকিকো : সেটা আমরা করতে পারি না জেরেমিস। একটা চামচ খোয়া গেলেও ক্ষতিপূরণ করতে হবে। তুমি একবার নিচের ক্যাবিনেটগুলো দেখো তো। কিছু পেয়েও যেতে পারো।
ক্যাবিনেটে কয়েকটা পাতলা পস্নাস্টিকের বাক্স পেল সে। কয়েকটি শোলার গেলাস। বাক্সগুলো সার্ভিস বক্স। খাবার এনে ভাগ করে দেবার জন্য। মুখ বন্ধ করার উপায় নেই, ঢাকনা আছে। অনেকটা অমলিনীর দেশে মিষ্টির চৌকো বাক্সের মতো। কাগজের বদলে পস্নাস্টিক।
পুরো সপ্তাহে আর রান্নার সুযোগ নেই। তাই সকলেই একটু বেশি বেশি রান্না করেছে। পুরো সপ্তাহে আর হাইভির মতো বড় বাজারে যাবার সুযোগও নেই। যারা কেনা খাদ্যনির্ভর তারা কুকড রাইস, নুডলস, রোটেসারি চিকেন, নাগেটস প্রভৃতি বিস্তর বাজার করেছে। ব্রেকফাস্ট বাদ দিলে আরো অন্তত দুবার খেতে হবে। জেরেমিস তার ঘন সবজেটে অর্ধতরল খাদ্য শোলার কাপগুলোয় ভরতে লাগল। অন্তত পনেরোটি কাপ লাগবে জেরেমিসের। হায় রে! এভাবে অত দূর সে যাবে কী করে এসব নিয়ে! ভারি মায়া হলো অমলিনীর।
মোলি : এগুলো কীভাবে নিয়ে যাবে?
জেরেমিস : জানি না। কিন্তু সময় ফুরিয়ে যাচ্ছে। রান্নার পাত্রটা মেজে দিতে হবে তো।
মোলি : আমার দুটো কনটেইনার তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি। নেবে তুমি?
জেরেমিস : দেবে? খুব উপকার হয়। কিন্তু তুমি কিসে নেবে?
মোলি : এই দেখো, খিচুড়ির দুটো কনটেইনার। বাকি ডিম-আলুর কারি আর মাশরুম-বেগুন ভাজা। ওগুলো শুকনো খাবার। ঝোল-টোল নেই। ওই বাক্সয় নিতে পারব।
জেরেমিস : ওহ্! খুব দয়ালু তুমি মোলি। ধন্যবাদ তোমাকে। এগুলো কোথায় পেলে?
মোলি : আজ হাইভিতে কিনেছি।
জেরেমিস : মানে, তুমি জানতে এগুলো লাগবে। তোমার তো খুব বুদ্ধি।
মোলি : জেরেমিস, এখানে যারা রান্না করেছে, সবাই আজ বুদ্ধি করে কনটেইনার কিনেছে।
জেরেমিস : আমায় তুমি বোকা বললে?
মোলি : না। অসতর্ক বললাম।
জেরেমিস : আমি সত্যিই তাই মোলি। তুমি আমাকে বাঁচালে।
খুব যত্নে নিজের খাবার অমলিনীর দেওয়া পাত্রে ভরতে লাগল জেরেমিন তার কাজের ধরনে একরকম চারুশীলতা আছে। ধীর, নিঃশব্দ। যখন যা করে, সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে করে। অমলিনী তাকে সাহায্য করতে লাগল।
লোরেনটিনা পুরো ঘর মুছে পরিষ্কার করেছে। অমলিনী দুটো সিঙ্ক ও গরম পাত্র ধরার কাপড়গুলো ধুয়েছে।
জেরেমিস একেকটি ঝুড়িতে বাসনগুলো ভালো করে সাজিয়ে দিলো। উনুনগুলো একে একে নিভে আসছে।
‘শোনো শোনো সবাই শোনো।’ খুব জোরে চেঁচিয়ে উঠল শবনম। ‘তোমাদের একটা ম্যাজিক দেখাব।’
তাকিকো : আমাদের তাইম প্রায় শেষ। বাড়তি সময়ে চলেছি।
শবনম : চুপ করো। অত সময় মানতে পারলাম না। দুঃখিত। তখন থেকে তোতাপাখির মতো তাইম তাইম করছ। পঁচিশজনকে ঠেসে কিচেনে ঢুকিয়ে তিন ঘণ্টায় সব সারতে চাইছ, এভাবে হয় না, বুঝলে? রান্না করতে সময় লাগে।
রোজানা : উত্তেজিত হয়ো না শবনম। তাকিকো কী করবে? ও ওর নিয়ম মানছে।
হারিক : শবনম ঠিক বলেছে। তিন ঘণ্টায় হয় না। তাড়া দেওয়াও উচিত নয়। আমরা তো চেষ্টা করছি। না হয় চার ঘণ্টাই লাগবে, তাতে কী? আর কোনো দল কি আমাদের পরে রান্না করবে?
তাকিকো : আমি দুঃখিত। আমি সত্যিই দুঃখিত।
শবনম : আমার যা সময় লাগবে, নেব। তোমার যা করার করো। শাম্বাগ হাউসে গিয়ে নালিশ করবে? করোগে যাও!
মুখ চুন করে বসে রইল তাকিকো। হারিক, রোজানা, শবনম তিনজন মিলে খাবার টেবিল পর্যন্ত বয়ে নিয়ে গেল বিশাল ডেকচি। খাবার টেবিলে বিশাল বারকোশ। দেখে মুগ্ধ হলো অমলিনী। খুঁজে পেতে ঠিক অতবড় থালাটা সংগ্রহ করেছে এরা। কিন্তু থালা দিয়ে কী হবে? এখানেই কি খাওয়া-দাওয়া সারবে? ম্যাজিকটাই বা কী?
সে দেখল জিনেট কখন চলে গিয়েছে! অ্যালেক্স ও ইয়েরমেনকেও দেখা যাচ্ছে না। শবনমের জাদু দেখার জন্য টেবিল ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াকভ, জেরেমিস, জর্জ আমাদায়ুং, লোরেনটিনা, হাসিন, মানঘিল আর লিলি। জার্মান লিলি হেববারের হাতে শবনমের
ফোন-ক্যামেরা।
হারিক, রোজানা, শবনম ডেকচিটা একটু তুলে দোলাতে দোলাতে একসঙ্গে চেঁচিয়ে উঠল – ওয়াহিদ-অ্যাথন্যান-ইথালথা। ওয়ান-টু-থ্রি। প্রায় হেঁইয়ো বলে ভারি গরম ডেকচিটা বারকোশের মাঝে উপুড় করে দিলো তিন স্বাস্থ্যবতী, সুন্দরী ইরাকি, ইজিপ্শিয়ান, প্যালেস্টিনিয়ান।  (চলবে)