অনুবাদ : সম্পদ বড়ুয়া
একটা সময় ছিল, আমি সপ্তাহের পর সপ্তাহ নিরবচ্ছিন্নভাবে লন্ডন ঘুরে বেড়াতে পারতাম। ভ্রমণের কোনো সুযোগ এলে আমি এখনো তা ধরার জন্য অস্থির হয়ে উঠি। তবে এখন আমার বয়স হয়েছে, খুব সহজেই দিকভ্রম হয়ে যাই। তাই আঁধার নামার পরপরই গ্রামে পৌঁছালে আমি এ-জায়গার সঙ্গে সম্পৃক্ততার বিষয়টি একেবারে হারিয়ে ফেলি। আমি বিশ্বাস করতে পারি না যে, বেশিদিন আগে নয়, এই গ্রামেই আমি ছিলাম আর অনেক কিছুতে প্রভাবও খাটিয়েছি।
আমি কিছুই চিনতে পারছি না, নিজেকে আবিষ্কার করতে ঘুরে ঘুরে চারদিকে চক্কর খাচ্ছি। রাস্তাগুলোতে আলো বিশ্রীভাবে জ্বলছে, রাস্তার দুপাশে পরিবেষ্টিত ছোট ছোট পাথরের কুটিরে তা প্রতিফলিত হচ্ছে। রাস্তাগুলো প্রায়ই এত সরু যে, একটি খসখসে দেয়াল থেকে অন্যটির গায়ে আমার ব্যাগ বা কনুই না ঘষে একটুও এগোতে পারছিলাম না।
তারপরও আমি চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। অন্ধকারে চারদিকে বারবার হোঁচট খেতে খেতে এ-আশা মনে জাগল যে, একসময় এ-গ্রামের উন্মুক্ত স্থানের দেখা পাব, যেখানে আমি আমার অবস্থান সম্পর্কে অন্তত নিশ্চিত হতে পারব, কিংবা গ্রামবাসীদের কোনো একজনের সঙ্গে দেখা হয়ে যাবে। কিছু সময় পার হলো, আমি কিছুই করলাম না, ক্লাস্তি এসে আমার ওপর ভর করল। ঠিক করলাম আমার সবচেয়ে ভালো পথ হচ্ছে এলোপাতাড়িভাবে একটা কুটির বেছে নেওয়া, তার দরজায় করাঘাত করা এবং আশা করছি এমন কেউ দরজাটা খুলবে যার আমাকে স্মরণে আছে।
দেখতে অনেকটা ভগ্ন দুর্বল দরজার সামনে এসে আমি থেমে যাই। ওপরের কড়িকাঠ এত নিচে নেমে এসেছে যে, আমাকে গুটিসুটি মেরে ঢুকতে হবে। দরজার প্রান্ত থেকে একটা ক্ষীণ আলো বেরিয়ে আসছে, আমি অনেকের গলার শব্দ আর হাসি শুনতে পাচ্ছি। আমি জোরে করাঘাত করি, যাতে ভেতরের লোকজন তাদের কথা ছাপিয়ে আমাকে অবশ্যই শুনতে পায়। ঠিক তখনই আমার পেছন থেকে একজন বলে উঠল, ‘হ্যালো।’
আমি ঘুরে তাকালে একজন যুবতী মেয়েকে দেখতে পাই। বয়স বিশের কাছাকাছি, পরনে জিন্স আর ছেঁড়া জাম্পার। আমার থেকে একটু দূরে খসখসে অন্ধকারে সে দাঁড়িয়ে আছে।
‘আপনি একটু আগে আমাকে অতিক্রম করে হেঁটে এলেন’, মেয়েটি বলে, ‘আমি অবশ্য আপনাকে ডাকও দিয়েছিলাম।’
‘সত্যিই আমি এমন করেছি? ঠিক আছে, আমি দুঃখিত। আমি আসলে অত রূঢ় কখনো ছিলাম না।’
‘আপনি তো ফ্লেচার, তাই না?’
‘হ্যাঁ’, আমি বলি, আর কিছুটা আত্মতৃপ্তি অনুভব করি।
‘আপনি যখন আমাদের ছোট্ট বাড়িটা অতিক্রম করছিলেন, ওয়েন্ডি ভাবল আপনিই হবেন। আমরা সবাই খুব উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠলাম। আপনি তো সেই গ্রম্নপের একজন ছিলেন, তাই না? ডেভিড ম্যাগিস আর অন্যরাও ছিল।’
‘হ্যাঁ’, আমি বলি, ‘তবে ম্যাগিস ওখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। আমি অবাক হলাম আপনি তার নামটা তুললেন। আরো অনেকেই ছিল যারা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’ আমি দ্রম্নত অনেক নাম উচ্চারণ করতে থাকি। প্রত্যেককে চিনতে পেরে সে মাথা নোয়াচ্ছে দেখে আমার ভালো লাগল। ‘তবে এরা সবাই আপনার সময়ের অনেক আগে ছিলেন’, আমি বলি, ‘এসব আপনার জানা আছে দেখে বিস্মিত হয়েছি।’
‘এটা ঠিক যে আমাদের সময়ের আগের বিষয় এটা, তবে সবার ব্যাপারে আমরা সবাই অভিজ্ঞ। এখানে তখন যারা বয়োবৃদ্ধ ছিলেন তাদের সম্পর্কে আমরা অনেক কিছু জানি। আপনার ছবি দেখেই ওয়েন্ডি তাৎক্ষণিক আপনাকে চিনতে পেরেছেন।’
‘আমাদের বিষয়ে আপনাদের মতো তরুণদের এতো আগ্রহের ব্যাপারে আমার কোনো ধারণা ছিল না। আপনাকে কিছুক্ষণ আগে আমি অতিক্রম করে এসেছি – এজন্য আমি দুঃখিত। আপনি দেখলেন তো, এখন আমি বয়োবৃদ্ধ, ভ্রমণের সময় আমি কিছুটা এলোমেলো হয়ে পড়ি।’
দরজার পেছনে থেকে হইচই, কথাবার্তা আমার কানে আসে। আমি দরজাটির ওপর আবার সজোরে আঘাত করি, এবার অনেকটা অস্থিরভাবে, যদিও আমি চাই না কেউ বের হয়ে এ-মেয়েটার খুব কাছে এসে পড়ুক।
মেয়েটা ক্ষণিকের জন্য আমার দিকে তাকাল এবং বলল, ‘আপনারা যারা সে-সময়ের লোক সবাই এ-রকমই করেন। কয়েক বছর আগে ডেভিড ম্যাগিস এখানে এসেছিলেন। ’৯৩ সালে, কিংবা ’৯৪ সালেও হতে পারে। তিনিও একই প্রকৃতির। কিছুটা অস্পষ্ট। দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করার কারণে একসময় এটা আপনারও হবে।’
‘তাহলে ম্যাগিস এখানে এসেছিল। কি আশ্চর্য! আপনি জানেন, সে তো সত্যিকারভাবে সেরকম গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন না। এরকম ধারণা আপনার বয়ে বেড়ানো ঠিক হচ্ছে না। প্রসঙ্গক্রমে বলছি, এ-কুটিরে কে থাকেন আপনি আমাকে বলতে পারেন।’ আমি আবার দরজায় দুম করে ধাক্কা দিলাম।
‘পিটারসন্স’, মেয়েটি বলল, ‘এই পুরনো বাড়িতে থাকে। তারা হয়তো আপনাকে চিনতে পারবে।’
‘পিটারসন্স’, আমি পুনরায় উচ্চারণ করি, কিন্তু নামটি আমার কাছে কোনো অর্থ বহন করে না।
‘আপনি আমাদের কুটিরে আসছেন না কেন? ওয়েন্ডি তো এসে একেবারে উচ্ছ্বসিত হয়ে পড়েছিলেন। বাকিরাও তাই। এটা সত্যিই আমাদের জন্য একটা দুর্লভ সুযোগ, সত্যিকার অর্থে সে-সময়ের কারো সঙ্গে আলাপচারিতা চালিয়ে যাওয়া।’
‘আমারও তা করতে খুব ইচ্ছা হয়। তবে প্রথমে নিজেকে একটু খাপ খাইয়ে নেওয়া ভালো। আপনি বলছিলেন পিটারসন্স।’
আমি আবার দুম করে দরজায় আঘাত করি, এবার অনেকটা শক্তি প্রয়োগ করে। শেষ পর্যন্ত দরজাটা খুলে গেল, ভেতরের উষ্ণতা আর আলো ছিটকে রাস্তায় এসে পড়ল। একজন বৃদ্ধ লোক দরজার মুখে দাঁড়িয়ে আছেন। তিনি খুব মনোযোগ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন, তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘ফ্লেচার না, ঠিক তো?’
‘হ্যাঁ, এইমাত্র গ্রামে ঢুকেছি। বেশকিছু দিন ধরেই আমি ঘুরে বেড়াচ্ছি।’
ভদ্রলোক কিছুক্ষণের জন্য ব্যাপারটা চিন্তা করলেন, তারপর বললেন ‘ঠিক আছে, আপনি বরং ভেতরে আসুন।’
অমসৃণ কাঠ আর ভাঙা আসবাবপত্রে ঠাসা একটা বদ্ধ, অপরিষ্কার রুমের মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করলাম। আগুন জ্বালানোর স্থানে একটা গাছের গুঁড়ি জ্বলছে আর সেটাই আলোর একমাত্র উৎস। ওই আলোতে ঘরের চারপাশে বসে থাকা কুঁজো লোকগুলোর অবয়ব চোখে পড়ল। বৃদ্ধ লোকটি আমাকে আগুনের পাশে একটা চেয়ারে নিয়ে বসালেন অনেকটা অনিচ্ছাকৃতভাবে, যার অর্থ হচ্ছে আসনটা খালি করেই আমাকে বসতে দিলেন। একবার যখন বসে পড়লাম, খেয়াল করলাম ঘরের চারপাশটা কিংবা অন্যদের দেখার জন্য আমার মাথা সহজে ঘোরাতে পারছি না। তবে আগুনের উষ্ণতা খুব ভালো লাগল, কিছুক্ষণের জন্য আমি জ্বলন্ত শিখার দিকে তাকিয়ে থাকি, একটা আরামদায়ক মাতাল ভাবনা আমাকে আবিষ্ট করে রাখল। পেছন থেকে কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম, জানতে চাচ্ছে আমি ভালো আছি কিনা, অনেক দূর থেকে এসেছি কিনা, ক্ষুধা লেগেছে কিনা। যতটুকু সম্ভব আমি এসবের উত্তর দিতে থাকি, যদিওবা বুঝতে পারি আমার জবাব যথেষ্ট নয়। পরিণামে যা হলো প্রশ্ন থেকে গেছে, আর মনে হচ্ছে আমার উপস্থিতি একটা দারুণ বিশ্রী পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে। তবে ঘরের উষ্ণতা আর বিশ্রাম নেওয়ার সুযোগটার জন্য আমি কৃতার্থ বোধ করছি।
তা সত্ত্বেও আমার পেছনে বিরাজমান নীরবতা যখন কয়েক মিনিট অব্যাহত থাকল, আমি আমার চেয়ারটা ঘুরিয়ে নিলাম। তখনই হঠাৎ উপলব্ধির একটা প্রচ- ধারণা আমাকে গ্রাস করল। এ-কুটিরটা আমি এলোপাতাড়িভাবে নির্বাচন করেছি; কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি এটাই সে-স্থান, যেখানে আমার সেসব বছর কাটিয়েছি। কক্ষক্ষর দূরের কোণায় আমার দৃষ্টি দ্রম্নত সরে এলো – এ-মুহূর্তে সব অন্ধকারে ছেয়ে আছে – একেবারে কোনাটার অংশে যেখানে একসময় আমার ম্যাট্রেসটা পাতা ছিল। অনেক শান্ত-নিরিবিলি সময় আমি ওখানে কাটিয়েছি, বইয়ের ওপর চোখ বুলিয়েছি কিংবা কেউ হঠাৎ এসে পড়লে তার সঙ্গে আলাপচারিতায় মেতে উঠেছি। গরমের দিনগুলোতে সতেজ নতুন প্রাণশক্তিময় বাতাস বয়ে যাওয়ার জন্য জানালা আর দরজাগুলো খোলাই রাখা হতো। সেসব দিনে এই ছোট বাড়িটি খোলা বিসত্মৃত মাঠে পরিবেষ্টিত ছিল। লম্বা ঘাসের ওপর অলসভাবে সময় কাটানো বন্ধুদের গলার শব্দ বাইরে থেকে ভেসে আসত, কখনো কবিতা বা দর্শনের বিষয়ে বিতর্ক শোনা যেত। অতীতের এসব মূল্যবান টুকরো টুকরো ঘটনা এত প্রবলভাবে আমার কাছে ফিরে এলো যে, আমি তাৎক্ষণিকভাবে সেই পুরনো স্থান নিয়ে অকপটে কিছু বলতে পারলাম না।
কেউ একজন আমাকে কিছু বলছে, সম্ভবত কোনো প্রশ্ন করছে। কিন্তু আমি ঠিক শুনতে পারছি না। একটু উঠে দাঁড়িয়ে ছায়ার ভেতর দিয়ে সেই কোনা স্থানে উঁকি মারলাম। এবার বুঝলাম সেখানে একটা সরু বিছানা রয়েছে। পুরনো পর্দায় ঢাকা। আমার ম্যাট্রেসটা যতটুকু জায়গা জুড়ে থাকত, প্রায় কমবেশি সেরকম জায়গাই দখল করে নিয়েছে। বিছানা দেখে মনে হলো পরিপূর্ণভাবে তা আমাকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে। বৃদ্ধ লোকটি যে-কথাটা বলেছিল, তার মাঝেই আমি নিজে ছেদ টেনে দিয়েছি।
‘দেখুন’, আমি বলি, ‘আমি জানি বিষয়টি একটু বোকামি ধরনের হয়েছে। তবে আপনি দেখুন, আমি আজ দীর্ঘপথ ভ্রমণ করে এসেছি। আমার সত্যিকার অর্থে ঘুমে শুয়ে পড়ার কথা, চোখদুটো বুজে আসছে, এটা কয়েক মিনিটের জন্যও হতে পারে। এরপর আমি আপনাদের পছন্দ অনুযায়ী কথা বলতে আনন্দবোধ করব।’
কক্ষক্ষর ভেতর চারদিকে চেহারাগুলো অস্থিরভাবে স্থান পরিবর্তন করছে। তখন একটা নতুন কণ্ঠস্বর চাপা রাগে বলে ওঠে, ‘তাহলে তাই করেন। একটু ঘুমিয়ে নেন। আমাদের কথা ভাববেন না।’ এতসব হইচইয়ের ভেতর আমি ইতোমধ্যেই সেই কোনা জায়গায় যাওয়ার পথ বের করে নিয়েছি। বিছানাটা মনে হচ্ছে একটু স্যাঁতসেঁতে। আমার শরীরের ভারে বিছানার স্প্রিং ক্যাঁচক্যাঁচ শব্দ করে উঠল। তবে কক্ষক্ষর দিকে পিঠ রেখে কুঁচকে শুয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার এই দীর্ঘ সময়ের ভ্রমণ আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরতে শুরু করল। যখন ধীরে ধীরে আমি নিদ্রাদেবীর কোলে ঢলে পড়ছি, বৃদ্ধ লোকটিকে বলতে শুনছি – ‘ও হচ্ছে ফ্লেচার, ঠিক আছে। হায় ঈশ্বর, ওর বয়স হয়েছে!’
একজন মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা গেল, ‘তাঁকে কি এভাবে ঘুমানোর ব্যবস্থা করে দেওয়া ঠিক হলো? কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাঁর ঘুম ভাঙবে আর তখন তাঁর সঙ্গে আমাদেরও জেগে থাকতে হবে।’
‘তাকে এক ঘণ্টার মতো ঘুমুতে দিন’, কেউ একজন বলল, ‘এক ঘণ্টা পরও যদি সে ঘুমিয়ে থাকে আমরা তাকে ডেকে তুলব।’
এ-পর্যায়ে নিদারুণ শ্রাস্তি আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখল। এটা একটানা বা আরামদায়ক ঘুম ছিল না। আমি নিদ্রা আর জাগরণের মধ্যেই দোলাচলে ছিলাম। সবসময় রুমের ভেতর পেছন থেকে কণ্ঠস্বর সম্পর্কে সতর্ক থাকতাম। মাঝে একসময় একজন মহিলার কথায় আমি কান খাড়া রাখি, ‘আমি জানি না কী করে আমি একসময় তার সম্মোহনে ছিলাম। এখন তো তাকে ছেঁড়া কাপড় পরা ইতরের মতো দেখাচ্ছে।’
ঘুমের কাছাকাছি থাকার অবস্থানে আমি নিজের সঙ্গে তর্কে মেতেছি এ-কথাগুলো আমার উদ্দেশে বলা হয়েছে কিনা; নাকি ডেভিড ম্যাগিসকে বলেছে। কিন্তু দীর্ঘ নিদ্রা আমাকে আবার সম্পূর্ণভাবে আচ্ছন্ন করে ফেলেছে।
আমার যখন ঘুম ভাঙল, পুরো কক্ষটাকে আরো বেশি অন্ধকার আর ঠান্ডা মনে হলো। আমার পেছনে নিচু স্বরে অবিরাম কথা শোনা যাচ্ছে, তবে এসব আলাপচারিতার কোনো অর্থ বুঝতে পারছি না। এভাবে ঘুমিয়ে পড়ার জন্য আমি এখন বিব্রত বোধ করছি। আরো কিছু সময় দেয়ালের দিকে মুখ রেখে চুপচাপ নিঃসাড় হয়ে শুয়ে থাকি। কিন্তু আমার সম্পর্কে একটা ধারণা হয়েছে যে, আমি জেগে আছি যখন দেখি সাধারণ আলাপচারিতার ভেতর থেকে একজন মহিলা বলে ওঠে, ‘ওহে, দেখো, দেখো।’ কিছু ফিসফিস শব্দ বিনিময় হলো। তখনই কেউ একজন আমার কাছাকাছি কোনায় আসার শব্দ পেলাম। আমার কাঁধের ওপর আস্তে করে একটা হাতের স্পর্শ অনুভব করি। চোখ তুলে তাকালে একজন মহিলাকে আমার কাছে হাঁটু গেড়ে বসতে দেখলাম। রুমের সবকিছু দেখার জন্য আমি আমার শরীরকে পুরোপুরি কাত করতে পারিনি, তবে এ-ধারণা পেয়েছি যে, ওটা নিভন্ত আগুনে আলোকিত আর মহিলার মুখটা ছায়ার মধ্যেই কেবল দৃশ্যমান হচ্ছে।
‘এখন ফ্লেচার’, মহিলা বলল, ‘এখন আমাদের কথা বলার সময় হলো। আপনি জেগে ওঠার জন্য আমি দীর্ঘ সময় প্রতীক্ষা করেছি। আপনার কথা আমি প্রায়ই ভাবতাম।’
মহিলাকে ভালোভাবে দেখার জন্য আমি প্রবল চেষ্টা করলাম। তার বয়স চলিস্নশের ঘরে হবে, বিষাদের মধ্যেও আমি লক্ষ করেছি তার চোখে ঘুম ঘুম বিষণ্ণতা। কিন্তু তার চেহারা, অবয়ব আমার ভেতর স্মৃতির কানাকড়িও বের করতে সমর্থ হয়নি।
‘আমি দুঃখিত’, আমি বললাম, ‘আপনাকে আমার ঠিক মনে পড়ছে না। আমাদের যদি আগে কখনো দেখা হয়ে থাকে, দয়া করে আমাকে ক্ষমা করবেন। এ-সময় আমি বড় বিভ্রাস্তির মধ্যে পড়েছি।’
‘ফ্লেচার’, মহিলা বলল, ‘যখন আমরা একে অপরকে চিনতাম, আমার বয়স কম ছিল আর আমি সুন্দরী ছিলাম। তখন আমি আপনাকে দেবতা মানতাম, আপনি যা বলতেন আমার কাছে তা যথাযোগ্য সমাধান বলে মনে হতো। এখন আপনি এখানে আছেন, আবার ফিরে এলেন। অনেক বছর ধরে আমি আপনাকে একটা কথা বলতে চেয়েছিলাম, আপনি আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছেন।’
‘আপনি অন্যায্য কথা বলছেন। ঠিক আছে, অনেক কিছুতেই আমাকে ভুল বুঝেছে অনেকে। তবে আমি কখনো দাবি করিনি আমি সঠিক সমাধান দিয়েছি। সে-সময় আমি যা বলেছি তা আমাদের দায়িত্ববোধ থেকে বলেছি, আমরা সবাই সেই বিতর্কে ছিলাম। এখানকার সাধারণ লোকের চেয়ে সেই বিষয়গুলো সম্পর্কে আমাদের অনেক বেশি ধারণা ছিল। আমরা বিষয়গুলো এখনো ভালোভাবে রপ্ত করিনি, তবে যদি লোকজন চায় আমরা কাজগুলো মুলতবি রাখি বা সম্পাদনে বিলম্ব করি; তাহলে কে সেখানে কাজ করবে? আমি কখনো দাবি করিনি আমার কাছে সবকিছুর সমাধান বা উত্তর আছে। না, আপনি বড় অন্যায্য কথা বলেছেন।’
‘ফ্লেচার’, মহিলার কণ্ঠ এবার অস্বাভাবিক শান্ত, ‘আপনি একসময় আমাকে ভালোবেসেছিলেন, এখানে আপনার রুমে প্রায় সবসময়ই আমি ঘুরঘুর করতাম। রুমের এই কোনায় আমরা দুজনে সুন্দরভাবে সব অশস্নীল কাজগুলো করেছি। আমি কী করে একসময় আপনার সঙ্গে শারীরিকভাবে রোমাঞ্চিত হয়েছিলাম এখন ভাবলে অস্বাভাবিক মনে হয়। এখন আপনি এখানে গন্ধ-ছড়ানো ছেঁড়া কাপড়ের পুঁটলি ছাড়া আর কিছু নন। কিন্তু দেখেন, আমি এখনো আকর্ষণীয়া। আমার মুখের চামড়া একটু কুঁচকে গেছে, তথাপি গ্রামের রাস্তা ধরে যখন হাঁটি, আমি সেসব পোশাক পরি, যা আমার শরীর দেখানোর জন্য বিশেষভাবে বানিয়েছি। অনেক পুরুষ এখনো আমাকে কামনা করে। কিন্তু আপনি, কোনো মহিলা আপনার দিকে এখন তাকাবে না। আপনি দুর্গন্ধে ভরা ছেঁড়া কাপড় আর মাংসের পুঁটলি একটা।’
‘আপনাকে আমার ঠিক মনে পড়ছে না’, আমি বলি, ‘আর এ-সময় শারীরিক ভালোবাসা করার মতো সময়ও আমার নেই। আমি অন্য বিষয়গুলো নিয়ে চিস্তিত। খুবই গুরুতর বিষয়। এটা ঠিক, সেই সময়ে অনেক কিছু নিয়ে আমাকে ভুল বোঝা হয়েছিল। তবে কোনো কিছুর জন্য চেষ্টা করা আর প্রয়োজনীয় সংশোধন করার চেয়ে আমি অনেক বেশি কাজ করেছিলাম। আপনি দেখছেন, এখনো আমি ভ্রমণ করছি। কখনো থেমে থাকিনি। আমি ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি যাতে একসময় যে-ক্ষতি করেছি সেটা পুষিয়ে দিতে পারি। সে-সময় হতে অন্য কারো জন্য কিছু বলার চেয়ে আমার ওই কাজটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আমি ম্যাগিসের সঙ্গে বাজি ধরতে পারি, উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সবকিছু ঠিকমতো রাখা আর পরীক্ষার জন্য অত কঠোর পরিশ্রম সে করেনি।’
মহিলা তখন আমার চুলে আঘাত করছিল। ‘আপনার দিকে তাকান। আমি প্রায়শই যা করতাম, আপনার মাথায় আঙুল বুলিয়ে দিতাম। চুলের নোংরা অবস্থার দিকে তাকান। আমি নিশ্চিত, সব ধরনের জীবাণু দ্বারা আপনি সংক্রমিত হয়েছেন।’ আমার চুলের ময়লা গিঁটগুলোর ভেতর দিয়ে ধীরে ধীরে আঙুল চালনা করার কাজটা সে করেই যাচ্ছে। আমি এতে কোনো যৌন প্রবৃত্তি অনুভব করিনি হয়তো এজন্য যে, সেও তাই চেয়েছে। বরং তার আদরকে মাতৃসুলভ মনে হলো। সত্যিই ক্ষণিকের জন্য আমার মনে হলো আমি শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার রেশমগুটিতে পৌঁছে গেছি আর আমার আবার ঘুম পাচ্ছিল। কিন্তু হঠাৎ সে থেমে গেল আর আমার কপালে সজোরে থাপ্পড় মেরে বসল।
‘আমাদের বাকি অন্যদের সঙ্গে আপনি এখনো যোগ দিচ্ছেন না কেন? আপনি তো ঘুমিয়েছেন। আপনাকে অনেক কিছুর ব্যাখ্যা দিতে হবে’, এই বলে মহিলা উঠে দাঁড়াল এবং স্থান পরিত্যাগ করল।
পুরো রুমটাকে পর্যবেক্ষণের জন্য প্রথমবারের মতো আমি পরিপূর্ণভাবে শরীরটাকে ঘোরালাম। মহিলাকে দেখি মেঝেতে হট্টগোলের মাঝ দিয়ে পার হয়ে চুলিস্নর পাশে দোলনা চেয়ারে বসে পড়েছে। আরো তিনজনের ছায়া চোখে পড়ল, যারা নিভু নিভু আগুনের পাশে কুঁজো হয়ে বসে আছে। এদের মধ্যে বুড়ো একজনকে চিনতে পারলাম যে দরজা খুলে দিয়েছিল। বাকি দুজন একত্রে বসে আছে, তাদের দুটো গাছের গুঁড়ির মতো দেখাচ্ছে। তাদের বয়স আমার সঙ্গে যে-মহিলা কথা বলেছিল তার সমান হবে। আমি যে নড়েছি বৃদ্ধ লোকটি তা খেয়াল করল। সে অন্যদের ইঙ্গিত দিয়ে বলল যে, আমি সব দেখছি। তাদের চারজন সামনে এগিয়ে শক্ত হয়ে বসে পড়ল, কোনো কথা বলল না। শুরু থেকেই তারা এ-কাজ করছিল। এটা পরিষ্কার যে, যতক্ষণ আমি ঘুমিয়েছিলাম তারা আমাকে নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করেছে। প্রকৃতপক্ষে পুরো আলোচনা কী রূপ ধারণ করেছে আমি তাদের দেখে তা কমবেশি অনুমান করতে পারি। উদাহরণস্বরূপ আমি দেখতে পাচ্ছি, যে-যুবতী মেয়েটার সঙ্গে বাইরে আমার দেখা হয়েছে তার সম্পর্কে উদ্বিগ্ন থাকা এবং তার সঙ্গীদের ওপর আমার কী প্রভাব পড়তে পারে এসব ভেবে তারা বেশকিছু সময় ব্যয় করেছে।
‘তারা এত সহজে প্রভাবিত হয়ে পড়ে’, বৃদ্ধ লোকটি বলে ওঠে, ‘আর আমি শুনেছি মেয়েটাই তাকে তাদের সবার সঙ্গে দেখা করার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিল।’
সন্দেহ নেই, এ-কথায় গাছের গুঁড়ির মতো বসা মহিলাদের একজন তখন বলে ওঠে, ‘তবে সে এখন আর তেমন ক্ষতি করতে পারবে না। আমাদের সময়ে আমরা সবাই তার দয়ায় পরিবেষ্টিত ছিলাম – মেয়েদের বয়স কম আর তারা আকর্ষণীয় ছিল। কিন্তু এখন এই অদ্ভুত লোকটি সময়ের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করছে, দেখছে ধ্বংসের চূড়ান্ত রূপ আর পুড়ে পুড়ে নিঃশেষ হওয়ার অবস্থা – যদি কিছু থাকে তাহলে পুরনো দিনের আলাপচারিতাকে কম রহস্যপূর্ণ করা যেতে পারে। যাহোক, এ সময়ে তার মতো লোকজন তাদের অবস্থান অনেকখানি বদলে ফেলেছে। তারা কী বিশ্বাস করে তা তারা নিজেরাই জানে না।’ বৃদ্ধ লোকটি তার মাথা ঝাঁকাল, আমি দেখলাম কমবয়সী মেয়েটি তার দিকে সে-দৃষ্টিতেই তাকাল। ঠিক আছে, তাকে ওখানে দেখতে এখন করুণ ও অগোছালো মনে হচ্ছিল। কিন্তু একসময় তার অহমিকা প্রবল ছিল, কমবয়সী লোকদের সে তোষামোদী করত, তারা তার ধারণাগুলো কীভাবে শুনতে চায় তা দেখত, তারপর তার আর থামাথামি ছিল না। সব আগের মতোই চলত। তাদেরকে সে নিজের প্রয়োজনেই কাজে লাগাত। যুবতী মেয়েদের তাই এখন বিশ্বাস করার তেমন কিছু অবশিষ্ট নেই। তবে হীন-ইতর ভবঘুরের মতো এ-লোকটি তাদের কোনো কাজেও আসতে পারে।
আমি যতক্ষণ ঘুমিয়েছিলাম, তাদের কথাবার্তা এভাবেই চলছিল। তবে এখন রুমের এক কোণ থেকে আমি পর্যবেক্ষণ করি তারা আগুনের শেষ শিখার দিকে তাকিয়ে অপরাধবোধের নীরবতার মধ্যে বসে থাকে। কিছুক্ষণ পর আমি দাঁড়িয়ে পড়ি। অদ্ভুতভাবে ওই চারজনই তাদের দৃষ্টি আমার কাছ থেকে সরিয়ে নিল। তারা কোনো কিছু বলে কিনা তা দেখার জন্য আমি কিছু সময় অপেক্ষা করি। শেষে আমি বলি, ‘ঠিক আছে, আমি আগেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম, তবে অনুমান করতে পারি আপনারা কী বলছিলেন। ভালো কথা, আপনারা যেটা ভয় পান সেটাই আমি করতে চাচ্ছি জেনে আপনারা এ-ব্যাপারে অবশ্যই আগ্রহী হবেন। আমি এ-মুহূর্তে কমবয়সী লোকদের কুটিরে যাচ্ছি। আমি তাদের বলতে যাচ্ছি সব কর্মশক্তি নিয়ে, সব স্বপ্ন নিয়ে তারা কী করবে। তাদের আগ্রহ এ-পৃথিবীতে স্থায়ী ভালো কোনো কিছু অর্জন। নিজের দিকে তাকান, কী করুণ অবস্থা! ভয়ে নিজের ছোট বাড়িতে গুটিসুটি মেরে আছেন, কোনো কিছু করতে সদা ভীত; আমাকে ভয় পাচ্ছেন, ম্যাগিসকে ভয় পাচ্ছেন কিংবা সেই সময়ের যে-কারো ভয়ে তটস্থ হয়ে আছেন। আমরা সে-সময়ে কিছু ভুল করেছি বলে পৃথিবীতে কোনো কিছু করতেই সাহস পাচ্ছেন না। ঠিক আছে, এত বছরে এসব কমবয়সী ছেলেমেয়েদের সব অস্বাভাবিক তন্দ্রাচ্ছন্ন অবসাদ গ্রহণের যতই উপদেশ প্রদান করেন না কেন তারা এখনো এত নিচে নামেনি। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলব। আধাঘণ্টার মধ্যে আমি আপনাদের শোচনীয় শক্তিগুলো প- করে দেবো।’
‘তোমরা দেখো’, বৃদ্ধ লোকটি অন্যদের বলল, ‘আমি জানি এরকমই হবে। তাকে আমাদের থামানো উচিত। সেক্ষেত্রে আমরা কী করতে পারি?’
আমি হুড়মুড় শব্দ করে কক্ষক্ষর মাঝবরাবর হাঁটতে শুরু করি, আমার ব্যাগটা তুলে নিয়ে রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পড়ি।
আমি বেরিয়ে এসে দেখি কমবয়সী মেয়েটি এখনো বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হলো আমি আসব এটাই সে আশা করেছিল। ঈষৎ মাথা নেড়ে সে পথ দেখিয়ে চলতে লাগল।
রাতটা ছিল অন্ধকার, গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা শরীর মুচড়ে কুটিরগুলোর মাঝখানে যে সরু পথ চলে গেছে সে অভিমুখে যাত্রা করি। কিছু কিছু বাড়ি আমরা অতিক্রম করলাম যেগুলো দেখতে এতো জীর্ণ আর চূর্ণবিচূর্ণ হওয়ার মতো ঠুনকো যে আমার ইচ্ছা হলো, তাদের একটাতে দৌড়ে শুধু আমার সব শক্তি দিয়ে গুঁড়িয়ে দিই।
মেয়েটি আমার কয়েক পা আগে আগে হাঁটছিল, মাঝেমধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে আমাকে দেখছে। একবার সে বলল, ‘ওয়েন্ডি এত খুশি হবেন। তিনি নিশ্চিত ওটা আপনিই ছিলেন যখন একটু আগে আপনি তাঁকে অতিক্রম করছিলেন। এখন তিনি বুঝতে পারবেন তাঁর ধারণাই ঠিক। কারণ আমি অনেকদিন দূরে ছিলাম, তিনিই সবাইকে জড়ো করেছেন। তারা অপেক্ষা করছে।’
‘আপনারা কি ডেভিড ম্যাগিসকেও এরকম অভ্যর্থনা জানিয়েছিলেন?’
‘হ্যাঁ, তিনি যখন এলেন আমরা সত্যিই খুব উচ্ছ্বসিত ছিলাম।’
‘আমি নিশ্চিত, এতে তিনি খুব খুশি ছিলেন। নিজের অতিগুরুত্ব সম্পর্কে তার ভেতর একটা অতিরঞ্জিত ভাব রয়েছে।’
‘ওয়েন্ডি বলেন – ম্যাগিস ছিলেন আকষর্ণীয় লোকদের একজন, যেরকম আপনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আপনাকে সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ ভাবেন।’
আমি এ-বিষয়ে কিছুক্ষণ ভাবতে থাকি। ‘আপনি জানেন’, আমি বলি, ‘অনেক বিষয় নিয়ে আমি আমার মনকে পরিবর্তন করেছি। ওয়েন্ডি যদি আশা করে যে আমার জানা সেই দিনগুলোর কথা আমাকে শোনাবে, তাহলে সে হতাশ হবে।’
মেয়েটি মনে হয় এ-কথাগুলো শোনেনি, তবে সে গুচ্ছগুচ্ছ বাড়িগুলোর ভেতর দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমাকে পথ দেখানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর টের পাই, পেছনে এক ডজন বা সেরকমই পায়ের শব্দ আমাদের অনুসরণ করছে। আমি ধারণা করেছিলাম হয়ত কিছু গ্রামবাসী ঘোরা পথ পরিহার করে হাঁটতে বেরিয়েছে। তখন মেয়েটি রাস্তার বাতির নিচে থেমে আমাদের পেছনে তাকাল। আমারও তাই থামতে হলো এবং পেছনে তাকালাম। কালো ওভারকোট পরা মধ্যবয়সী এক লোক আমাদের দিকে আসছিল। কাছে এসে ভদ্রলোক হাত বাড়িয়ে দিলো এবং আমার সঙ্গে হাত মেলাল। তার মুখে কোনো হাসি ছিল না।
‘তাহলে’, সে বলে, ‘তুমি এখানে।’ বুঝতে পারলাম লোকটাকে আমি চিনেছি। আমাদের বয়স যখন দশ বছর এরপর থেকে আমাদের আর দেখা হয়নি। তার নাম রজার বাটন। আমার পরিবার ইংল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার আগে কানাডায় স্কুলে দু-বছরের জন্য পড়ার সময় সে আমার ক্লাসে ছিল। আমরা দুজন তেমন ঘনিষ্ঠ ছিলাম না, তবে যেহেতু সে একটু ভীতু প্রকৃতির ছেলে আর সেও ইংল্যান্ড থেকে এসেছে, সে কিছু সময়ের জন্য আমাকে অনুসরণ করত। সে-সময়ের পর থেকে আমি আর তাকে দেখিনি বা তার কাছ থেকে কোনো সাড়া পাইনি। এখন রাস্তার আলোর নিচে তার চেহারা লক্ষ করে দেখেছি, অতিক্রান্ত দীর্ঘ সময় তার প্রতি সদয় ছিল না। তার মাথা ন্যাড়া, মুখে বসন্ত রোগের গুটি আর লম্বা দাগ। সারা অবয়বে যেন ক্লাস্তির ছাপ নেমে এসেছে।
‘রজার’, আমি বলি, ‘আমি শুধু এই মেয়েটির বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বের হয়েছি। তারা আমাকে সাদরে গ্রহণের জন্য একত্রিত হয়েছে। অন্যথায় আমি এসে সোজাসুজি তোমাকে খুঁজে বের করতাম। আর তাই আজ রাতে ঘুমিয়ে পড়ার আগেই কী কী করতে হবে তাই মনে মনে ভাবছিলাম। আমি নিজে নিজেই চিন্তা করছিলাম। যাহোক, পরের বিষয়গুলো যুবকদের কুটিরে সম্পন্ন হবে। এরপর আমি যাব আর রজারের দরজায় কড়া নাড়ব।’
‘কিছু ভেব না’, আমরা সবাই আবার হাঁটতে শুরু করলে রজার বাটন বলে ওঠে, ‘আমি জানি তুমি কত ব্যস্ত। তবে আমাদের কথা বলতে হবে। পুরনো বিষয়গুলো আলোচনা করতে হবে। যখন সর্বশেষ তুমি আমাকে দেখেছিলে – আমি জানি স্কুলে আমি বড় ক্ষীণ দুর্বলচিত্তের প্রজাতি ছিলাম। তবে তুমি জানো, আমার বয়স যখন চৌদ্দো-পনেরো সবকিছু তখন বদলে যায়। আমি সত্যিই অদম্য কঠিন হয়ে উঠি। অনেকটা নেতার মতো। কিন্তু তুমি অনেক আগেই কানাডা চলে গেলে। আমি সবসময় আশ্চর্য হয়ে ভাবতাম পনেরো বছর বয়সে আমাদের যদি আবার পরস্পর দেখা হতো তাহলে কেমন হতো। আমি তোমাকে নিশ্চিত বলতে পারি, আমাদের মধ্যে বিষয়গুলোর অনেক পার্থক্য হতো।’
সে যখন কথাগুলো বলছিল, আমার ভেতরে স্মৃতির পস্নাবন নেমেছে। সেসব দিন রজার বাটন আমাকে পরম ভক্তির পাত্রে পরিণত করেছে। আর এর বিনিময়ে আমি ক্রমাগতভাবে তাকে পীড়ন করে এসেছি। তবে আমাদের মধ্যে একটা কৌশলী বোঝাপড়া ছিল যে, আমার সব উৎপীড়ন তাকে ভালো করার জন্যই হচ্ছে আর তাই কোনোরূপ সতর্কবার্তা ছাড়াই আমি হঠাৎ খেলার মাঠে তার পেটে ঘুসি মেরে বসি, কিংবা করিডোরে তাকে অতিক্রম করার সময় আমি হঠাৎ সজোরে তার বাহু পেছনের দিকে মোচড়াতে থাকি যতক্ষণ না সে কান্না শুরু করে। আমি এসব করছি তাকে শক্ত-সামর্থ্য হিসেবে গড়ে তুলতে সহায়তা করার জন্য। এসব করার ফলে আমাদের সম্পর্কের মধ্যে প্রধান যে-প্রভাব পড়েছে সেটা হচ্ছে আমার সম্পর্কে তার মনে ভয়। এসব স্মৃতি আমার মধ্যে ফিরে এলো যখন আমার পাশে হাঁটতে থাকা এই পরিশ্রান্ত লোকটির কথা শুনছিলাম।
‘অবশ্যই’, রজার
বাটন বলতে থাকে। হয়তো সে আমার চিন্তার
গতিপ্রকৃতি কিছুটা অনুমান করতে পেরেছে, ‘তুমি আমার প্রতি
যে-আচরণ করছ তা না করলে পনেরো বছরে আমি যা করেছি তা কখনো করা সম্ভব হতো না।
যাহোক, সে-সময় আমি প্রায়ই আশ্চর্য হয়ে ভাবতাম আর কয়েক বছর পর যদি আমাদের দেখা হতো
তাহলে কী ঘটত। তখন নিশ্চয়ই আমি দেওনা-পাওনা বুঝে নিতাম।’
কুটিরগুলোর মাঝখান দিয়ে সরু বাঁকানো পথে আমরা আবার হাঁটতে থাকি। মেয়েটি এখনো পথ দেখিয়ে সামনে হাঁটছে, তবে এখন তার চলার গতি আগের চেয়ে বেড়েছে। আমরা কোনোরকমে তাকে একপলক দেখার কাজটা সম্পন্ন করেছি, যখন সামনে দিয়ে সে পথের বাঁকে চলে যাচ্ছে। আমার মনে হলো, আমরা তাকে হারাতে না চাইলে আমাদের আরো সতর্ক হতে হবে।
‘আজ, অবশ্যই’, রজার বাটন বলতে থাকে, ‘আমি নিজেই একটু দায়িত্ব থেকে সরে কেমন যেন হয়ে গেছি। তবে বলতে পারি, ওহে পুরনো বন্ধু, তোমাকে দেখে আরো খারাপ মনে হচ্ছে। তোমার সঙ্গে যদি তুলনা করি, আমি একজন ক্রীড়াবিদ। এটাকে বেশি গুরুত্ব না দিয়েও বলতে পারি তুমি এখন শুধু একজন নোংরা বৃদ্ধ ভবঘুরে, সত্যি বলছি, তাই তো? কিন্তু তুমি জানো তোমার চলে যাওয়ার পর দীর্ঘ সময় আমি তোমাকে উপাস্য মেনেছি। ফ্লেচার কি তা করত? আমাকে এসব করতে দেখলে সে কী ভাবত? হ্যাঁ, যখন আমার বয়স পনেরো হলো তখনই আমি পেছন ফিরে তাকাই এবং তোমার ভেতর দিয়ে সবকিছু দেখতে থাকি। অবশ্যই আমি খুব রেগে গিয়েছিলাম। এমনকি এখনো আমি মাঝেমধ্যে এটা নিয়ে ভাবি। আমি পেছনে তাকাই আর ভাবি। তাই তো, সে ছিল একজন পুরোপুরি কদর্য ধরনের লোক। সেই বয়সে আমার চেয়ে ওর ওজন আর মাংসপেশি একটু বেশি ছিল, একটু বেশি আত্মপ্রত্যয়। আর সে এটার পূর্ণ সুযোগ নিল। হ্যাঁ, এটা খুব পরিষ্কার, অতীতে ফিরে তাকালে দেখা যাবে তুমি কি জঘন্য ছোটলোক ছিলে। অবশ্য আমি তোমার বর্তমান সময়ের কথা বলছি না। আমরা সবাই বদলে গেছি। এটুকু পরিবর্তন আমি সাদরে গ্রহণ করতে পারি।’
‘তুমি কি এখানে অনেক দিন থেকে আছ?’ আলোচনার বিষয় পরিবর্তনের জন্য আমি প্রশ্ন করি।
‘হ্যাঁ, সাত বছর বা তার কাছাকাছি হবে। এখানে চারদিকে ওরা তোমার সম্পর্কে অনেক কথা বলে। আমি তাদের মাঝেমধ্যে আমাদের প্রথম জীবনের পরিচয়ের কথা বলেছি। ‘কিন্তু ও তো আমাকে মনে করতে পারছে না’ – আমি তাদের সবসময় এসব বলি। কেনইবা সে চর্মসার ছোট্ট বালককে মনে রাখবে, যাকে সে নির্মমভাবে পীড়ন করেছে আর তার সম্পূর্ণ আজ্ঞাবহ হিসেবে কাজ করেছে? যাহোক, এখানে কমবয়সী ছেলেমেয়েরা সম্প্রতি তোমার বিষয়ে প্রচুর কথা বলছে। অবশ্যই যারা তোমাকে দেখেনি তারা তোমাকে আদর্শ হিসেবে গণ্য করার দিকে ঝুঁকছে। আমার ধারণা এ-বিষয়গুলোকে কাজে লাগানোর জন্য তুমি ফিরে এসেছ। তথাপি এখনো আমি তোমাকে অপবাদ দেবো না। তুমি চেষ্টা করে দেখতে পারো আত্মসম্মান কিছুটা রক্ষা করা যায় কিনা।’
আমরা হঠাৎ নিজেদের একটা খোলা মাঠে আবিষ্কার করি, দুজনেই দাঁড়িয়ে আছি। পেছনে তাকিয়ে দেখি আমরা হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের বাইরে চলে এসেছি। শেষ কুটিরটি আমাদের বেশ পেছনে দেখা যাচ্ছে। আমি যা ভয় পাচ্ছিলাম, কমবয়সী মেয়েটাকে আমরা হারিয়ে ফেলি কিনা। শেষে টের পেলাম কিছু সময় থেকে আমরা আর তাকে অনুসরণ করছি না।
ঠিক সে-সময় আকাশে চাঁদ উঠেছে, আমি দেখলাম এক বিশাল ঘাসের মাঠের কিনারে আমরা দাঁড়িয়ে আছি, আমার ধারণা, চাঁদের আলোয় দৃষ্টিসীমানার বাইরেও আমি অনেক দূর দেখতে পাচ্ছি।
রজার বাটন আমার দিকে ফিরে তাকাল। চাঁদের আলোয় তার মুখখানি শান্ত, আবেগপূর্ণ বলে মনে হলো।
‘এখনো’, সে বলে ওঠে, ‘সময় আছে ক্ষমা করার। তোমার এত দুশ্চিন্তা করার কারণ নেই। তুমি দেখ, অতীত থেকে কিছু জিনিস শেষ পর্যন্ত তোমার কাছে ফিরে আসবে। যৌবনে যা করেছি তার জন্য আমাদের এখন আর দায়ী করা যাবে না।’
‘তুমি ঠিকই বলেছ, সন্দেহ নেই’, আমি বলি। তারপর আমি ফিরে অন্ধকারে চারদিকে তাকাই। ‘তবে এখন আমি নিশ্চিত নই কোথায় যাব। দেখ, কুটিরগুলোতে কিছু কমবয়সী ছেলেমেয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। এরই মধ্যে তারা আমার জন্য উষ্ণ আগুন আর গরম চা তৈরি করে রেখেছে। তার সঙ্গে থাকতে পারে ঘরে বানানো পিঠা কিংবা ভাপে সেদ্ধ করা ভালো খাবার। যখনই আমি ঘরে ঢুকব, কিছুক্ষণ আগে যে কমবয়সী মেয়েটাকে অনুসরণ করেছি সে সাদরে ভেতরে নিয়ে যাবে, সবাই প্রশংসাধ্বনি দেবে। সেখানে হাসির ফোয়ারা ছুটবে, আমার চারদিকে ভক্তিপূর্ণ মুখগুলোকে দেখা যাবে। আমার জন্য কোথাও এরকম পরিস্থিতি অপেক্ষা করছে। শুধু বুঝতে পারছি না কোথায় আমি যাব।’
রজার বাটন কাঁধ ঝাঁকাল, ‘কিছু চিন্তা করো না, তুমি সেখানে সহজেই অনেক পাবে। শুধু তুমি জানো, ওই মেয়েটা একটু ভুল বুঝিয়ে ওয়েন্ডির কুটির পর্যন্ত তোমাকে হেঁটে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে। ওটা অনেক দূরে। ওখানে যেতে হলে তোমাকে বাস ধরতে হবে। তারপরও ওটা একটা দীর্ঘ যাত্রা। আমি বলব প্রায় দু-ঘণ্টা। তবু ভেবো না, আমি দেখিয়ে দেবো কোথা থেকে তোমার বাস ধরতে হবে।’
এই বলে সে পেছন ফিরে কুটিরের দিকে হাঁটতে থাকে। তাকে যখন অনুসরণ করছি, আমি ধারণা করতে পারি, আজ বড্ড দেরি হয়ে গেছে আর আমার সঙ্গের লোকটাও একটু ঘুমানোর জন্য কাতর হয়ে আছে। আমরা কুটিরগুলোর চারপাশে আবারো হেঁটে হেঁটে কিছু সময় ব্যয় করি। তারপর সে আমাদের গ্রামের ছোট এবং উন্মুক্ত স্থানে নিয়ে আসে। আসলে এ-স্থানটি এত ছোট এবং দেখতে জীর্ণ যে, এটাকে উন্মুক্ত স্থান বলা কঠিন। এটা একটা নির্জন রাস্তায় বাতির পাশে ছোট্ট একটা স্থান, যা একটুকরো সবুজের চেয়ে হয়তো একটু বড়। বাতির আলোয় কিছু দোকান দেখা যাচ্ছে, যেগুলো রাতের কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। পূর্ণ নীরবতা বিরাজ করছে, এতটুকু নড়াচড়া নেই। কুয়াশাচ্ছন্ন আলো মাটির ওপরে বাতাসে ঘুরপাক খাচ্ছে।
সবুজ মাঠে পৌঁছার আগেই রজার বাটন থেমে গেল এবং আঙুল তুলে দেখাল। ‘ওইখানে’, সে বলে ‘তুমি যদি ওইখানে অপেক্ষা করো, একটা বাস এসে দাঁড়াবে। যা বলেছিলাম, ওটা কিন্তু সংক্ষিপ্ত যাত্রা নয়। প্রায় দু-ঘণ্টা। তবে চিন্তা করো না, আমি নিশ্চিত কমবয়সী লোকজন অপেক্ষা করবেই। এ-সময়ে তাদের একটু বিশ্বাস করা ছাড়া আর কী আছে, তুমি দেখ।’
‘অনেক দেরি হয়ে গেছে’, আমি বলি, ‘তুমি কি নিশ্চিত যে বাস আসবে?’
‘হ্যাঁ, অবশ্যই, তোমাকে একটু অপেক্ষা করতে হবে। শেষ পর্যন্ত একটা বাস আসবে।’ আমার কাঁধ স্পর্শ করে সে আবারো নিশ্চিত করল। ‘আমি দেখতে পাচ্ছি এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে কিছুটা একাকিত্ব এসে ভর করবে। তবে বাস এসে গেলে তোমার মেজাজ উজ্জীবিত হবে, বিশ্বাস করো। সত্যি বলছি, ওই বাসটা সবসময় আনন্দের। ওটা উজ্জ্বলভাবে আলোকিত, সর্বদা হাসিখুশি লোকদের দ্বারা পূর্ণ থাকে যারা হাসে, মজা করে আর জানালার দিকে তাকিয়ে থাকে। একবার ওই বাসে উঠলে, তুমি উষ্ণ আর আরাম বোধ করবে, অন্য যাত্রীরা তোমার সঙ্গে গল্পে মেতে উঠবে, তোমাকে কিছু খেতে বা পান করার অনুরোধ জানাবে। সেখানে গানও হয় – সেটা চালকের ওপর নির্ভর করে। কিছু চালক আছে যারা গানকে উৎসাহিত করে, আবার অন্যরা করে না। ঠিক আছে ফ্লেচার, তোমাকে দেখে সত্যিই ভালো লাগল।’
আমরা হাত মেলাই, তারপর ঘুরে দাঁড়িয়ে হাঁটতে থাকি। আমি দেখি দুটো কুটিরের মাঝখানে অন্ধকারে সে মিলিয়ে যাচ্ছে। আমি হেঁটে সবুজ চত্বরে এসে আমার ব্যাগটা ল্যাম্পপোস্টের তলায় রাখি। দূরে একটা গাড়ির শব্দ শুনতে পাই, রাতটা একেবারে নীরব। রজার বাটনের বাসটির বর্ণনা আমাকে সত্যিই আনন্দ দিলো। তাছাড়া আমার ভ্রমণের একেবারে শেষে যে-অভ্যর্থনা অপেক্ষা করছে সেটা নিয়ে ভাবতে থাকি – কমবয়সী ছেলেমেয়েদের ভক্তিভরা মুখগুলোর কথা মনে পড়ছে আর আমি বুকের ভেতর কোনো এক জায়গায় আশার আলোড়ন অনুভব করি। [কাজুও ইশিগুরো : কাজুও ইশিগুরোর জন্ম ১৯৫৪ সালের ৮ নভেম্বর জাপানের নাগাসাকিতে। পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পরিবার যুক্তরাজ্যে চলে আসে এবং স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করে। ইশিগুরো একাধারে ঔপন্যাসিক, গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার। তাঁর প্রথম উপন্যাস A Pale View of Hills ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হয়। উল্লেখযোগ্য উপন্যাস হচ্ছে – An Artist of the Floating World (১৯৮৬), The Remains of the Day (১৯৮৯), The Unconsoled (১৯৯৫), When We Were Orphans (২০০০), Never Let Me Go (২০০৫), The Buried Giant (২০১৫)। The Remains of the Day এবং Never Let Me Go উপন্যাসদুটোর কাহিনি অবলম্বনে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। ইশিগুরো তাঁর রচনায় সমাজের চেয়ে সময়কে বেশি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। কালসচেতন হওয়াটা বেশ জরুরি বলে তিনি মনে করেন। তিনি মানবজাতিকে গভীর নৈতিক অবস্থানের দিকে প্রভাবিত করার প্রয়াস পান। Fellow of the Royal Society of Arts (FRSA)সহ তিনি ব্রিটেনের প্রায় সবকটি পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন। The Remains of the Day উপন্যাসের জন্য তিনি ১৯৮৯ সালে বুকার পুরস্কার পান। তাঁর সামগ্রিক সাহিত্যকর্মের জন্য তাঁকে ২০১৭ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। ‘আঁধার নামার পর সেই গ্রামটি’ গল্পটি তাঁর ‘A Village After Dark’ গল্পের বাংলা অনুবাদ।]
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.