বাঙালি ছাড়াও এদেশে বসবাস করছে আরো অনেক জাতি, যারা আদিবাসী নামেই অধিক পরিচিত। ‘কড়া’ তেমনই একটি জাতির নাম। এ-আদিবাসীরা নিজস্ব ধারার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য লালন করে গড়ে তুলেছে বৈচিত্র্যময় জীবনপ্রণালি। কিন্তু এ-দেশ থেকে জাতিটি প্রায় হারিয়ে যেতে বসেছে। কড়া জাতির ভাষা, সংস্কৃতি ও আচারগুলো সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী সংস্কৃতিকে। ফলে সরকার এরই মধ্যে কড়া জাতিটিকে তালিকাভুক্ত করেছে।
এদেশে কড়া আদিবাসীদের একমাত্র গ্রামটি দিনাজপুরের বিরল উপজেলার হালজায় মৌজায়, ঝিনাইকুড়ি গ্রামে। এখানে বাস করে কড়াদের ১৭টি পরিবার। এছাড়া বৈরাগীপাড়ায় একটি এবং দিনাজপুর সদর উপজেলার ঘুঘুডাংগার খাড়িপাড়ায় রয়েছে আরো দুটি পরিবার। সবমিলিয়ে এদেশে কড়াদের মাত্র ১৯টি পরিবার টিকে আছে। তাদের মোট জনসংখ্যা মাত্র ৮৫ জন, যার মধ্যে শিশুদের সংখ্যা ত্রিশ।
বাংলাদেশে টিকে থাকা এ-আদিবাসীদের একমাত্র গোত্রপ্রধানের নাম জগেন কড়া। তিনি জানান, ‘কড়া’ মানে মাটি খোঁড়া। কোনো একসময় এ-আদিবাসীরা দিঘি খোঁড়ার কাজে যুক্ত ছিল। সে থেকেই এদের ‘কড়া’ নামকরণ হয়েছে। ইংরেজ আমলে ভারতজুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বসেছে রেললাইন। পাহাড় কেটে, মাটি খুঁড়ে সেই রেললাইন বসানোর কাজে ঘাম ঝরিয়েছে এই আদিবাসীরাই। মূলত রেললাইনের কাজের সূত্র ধরেই ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্য থেকে এদের আগমন ঘটে এ-অঞ্চলে। একসময় দিনাজপুর ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে কড়াদের একাধিক গ্রাম ছিল। নানা কারণে এরা পাড়ি জমায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে। এখনো ভারতের ঝাড়খন্ড রাজ্যের দুমকা, গোড্ডা, পাকুর, শাহীবগঞ্জ, হাজারিবাগ প্রভৃতি অঞ্চলে কড়াদের বসবাস রয়েছে।
সমতলের বেশ কয়েকটি আদিবাসী জাতির উৎসবের নাম কারমা বা কারাম। কড়া আদিবাসীরা এটিকে কারমা উৎসব বললেও অন্য আদিবাসীদের কাছে এটি কারাম উৎসব। এ-উৎসব পালিত হয় প্রতি ভাদ্রে। উৎসবে কড়ারা বিরল প্রজাতির ‘খিল কদম’ গাছের ডাল কেটে এনে বিশেষ আচারের সঙ্গে পূজা করে। এ-বৃক্ষটি তাদের কাছে অতি পবিত্র। উৎসবে তারা অভাবমুক্তি ও সৌভাগ্য লাভের আকুতি জানায় দেবতা কারাম গোসাইয়ের কাছে।
কড়ারা তাদের পূর্বপুরুষদের জাত-ধর্ম ও বিশ্বাসগুলোকে এখনো আগলে রেখেছে। দিনাজপুরের ঝিনাইকুড়ি গ্রামে পরপর তিন বছর কড়াদের কারমা উৎসব দেখেছি খুব কাছ থেকে; তাদের সঙ্গে মিশে গিয়ে। সে-অভিজ্ঞতা ও আদিবাসীদের ভাষ্য থেকেই জানাচ্ছি কারমা উৎসবের আদ্যোপান্ত।
ভাদ্র মাসের চাঁদের পূর্ণিমায় ‘কারমা’ উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। এ-উৎসবে মাহাতো বা মহত বা গ্রামপ্রধান আগে থেকেই অবিবাহিত কোনো যুবককে খিল কদমের ডাল কেটে আনা ও তা বিসর্জনের জন্য মনোনীত করেন। বিবাহিত কোনো যুবকের দ্বারা এ-গাছের ডাল কাটা একেবারেই নিষেধ। সাধারণত গহিন বনে মিলবে পবিত্র এ-গাছের সন্ধান। কড়া আদিবাসীরা দিনাজপুরের ধর্মপুর শালবনের গহিনের ‘খিল কদম’ গাছ থেকে ডাল সংগ্রহ করে। এ-গাছের ডাল কেটে আনার রয়েছে বিশেষ নিয়ম। যে-ডালটি কাটবে তাকে বিশেষ আচারও পালন করতে হয়। এ-সময় প্রয়োজন হয় তেলের পিঠা, ধূপ, পাটখড়ি, সিঁদুর। সাধারণত বিকেলের দিকে ডাল কাটতে বের হয় কড়া আদিবাসীরা। ফিরে আসে সন্ধ্যার পরপরই।
যে ডাল কাটবে সে গোসল সেরে প্রথমে পবিত্র হয়ে নেয়। অতঃপর গাছটির কাছে গিয়ে ধুতি পরে গোড়ার জংলা পরিষ্কার করে পানি দিয়ে মাটি লেপে দেয়। এ-সময় গাছটিকে পূর্বদিকে রেখে তাকে বসতে হয় পশ্চিমে। অতঃপর সেখানে পাটকাঠি জ্বালিয়ে, ধূপ দিয়ে, তিনটি সিঁদুর ফোঁটা গাছে ও মাটিতে লাগিয়ে ভক্তি করে। এরপর গাছের সঙ্গে বেঁধে দেয় দুটি তেলের পিঠা। এ সময় মনে মনে সে বলতে থাকে – ‘কারাম গোসাই প্রতিবছরের মতো আজো আমরা তোমাকে নিতে এসেছি, তোমার পূজা দেব বলে।’ গাছের গোড়ায় তিনটি কোপ দেওয়ার অঙ্গভঙ্গি করেই সে গাছের ডালে উঠে বসে। অতঃপর ‘বিসক্রম’ বলে এক বা তিন চটে কেটে নেয় খিল কদম গাছের বড় একটি ডাল বা ছোট তিনটি ডাল। সে-ডাল মাটিতে ফেলা নিষিধ। তাই যুবকটি ডালটি মাটিতে পড়ার আগেই তুলে নেয় ঘাড়ে। ডালসহ সে গ্রামের কাছাকাছি আসতেই ঢোল বাজিয়ে বিশেষ ভক্তি দিয়ে দেবতারূপী ডালটিকে কড়ারা নিয়ে আসে পূজাস্থলে। সেখানে আগে থেকেই বাঁশ দিয়ে মাড়োয়া তৈরি করে রাখা হয়। শাপলা ফুল দিয়ে সাজানো হয় মাড়োয়াটিকে। অতঃপর ঢাকঢোল বাজিয়ে খিল কদম গাছের ডালটিকে বরণ করে মাড়োয়ার চারপাশে আড়াই পাক ঘুরে তা মাটিতে পুঁতে দেওয়া হয়।
সন্ধ্যার পর থেকে শুরু হয় পূজার আনুষ্ঠানিকতা। প্রতিটি বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ও আঙিনা পরিপাটি করে সাজানো হয়। সবার ঘরেই এ-সময় তেলের পিঠা ভাজার শো-শো শব্দ পাওয়া যায়। কড়ারা বলে – তেলের পিঠা ছাড়া কারমা উৎসব হয় না। উৎসবের শুরুতেই গ্রামপ্রধান বা তার মনোনীত যে-কোনো ব্যক্তি ধুতি পরে ডালটির সামনে পূজা দেন। ডালটিকে পূর্বদিকে রেখে পূজারিকে বসতে হয় পশ্চিমে। মাটি লেপা একটি স্থানে কলাপাতা বিছিয়ে পাশে রাখা হয় একটি কাঁসার থালা। থালায় থাকে প্রদীপ, কাঁচা ছোলা, জুঁই ফুল, শসা ও সিঁদুর। এ-সময় দুটি লাল মুরগা (মোরগ) বলি দিয়ে কারমা উৎসবের শুভ সূচনা করা হয়।
প্রথমে কলাপাতায় চাল ছিটিয়ে মোরগ দুটিকে খেতে দেওয়া হয়। পরে তার মাথায় হাড়িয়া ঢেলে সিঁদুর দিয়ে বলি দেওয়া হয়। অতঃপর মোরগ দুটির ঠোঁট কেটে পূজাস্থলের মাটিতে ঢেকে দেওয়া হয়। এ-পর্ব শেষ হওয়ার পরপরই উপোসের ডালা দুটি এনে রাখা হয় কারমা ডালের (খিল কদম) সামনে।
কী এই উপোসের ডালা? কারমা উৎসবের পাঁচদিন আগে থেকে কড়া আদিবাসীরা ধর্মের পরীক্ষা শুরু করে। বাঁশ দিয়ে এরা দুটি ডালা তৈরি করে নেয়। একটি ডালা থাকে ছোট, অন্যটি বড়। কড়াদের কাছে একটি কারমা, অপরটি ধারমা। ডাল দুটির মধ্যে এরা কালাই বীজ রেখে বালু ও মাটি দিয়ে তা ঢেকে দেয়। নিয়মানুসারে ওইদিন থেকেই এরা উপাস (উপোস) থাকতে শুরু করে। এ-সময়টাতে মাছ, মাংস, রসুন, পেঁয়াজ খাওয়া নিষেধ। খেতে হয় শুধুই নিরামিষ। গরম ভাত খাওয়া যায় না। তাই ভাত খেতে হয় ঠান্ডা করে। যে-কজন উপোস থাকে, সে-কটি ছোট কাঠি পুঁতে দেওয়া হয় ডালায়। ডালায় প্রত্যেকের সীমানাও চিহ্নিত করে দেওয়া হয়। উপোসকারী অবিবাহিত হলে কাঠির গায়ে কাজল আর বিবাহিত হলে সিঁদুর লাগানো হয়। ডালাতে প্রতিদিন ছিটানো হয় হলুদধোয়া পানি। এদের বিশ্বাস, উপোস অবস্থায় ধর্মমতে না চললে ডালায় তাদের হাতে লাগানো বীজ থেকে কোনো চারা গজাবে না। উৎসবের দিন নতুন চারা গজানো ডালা দুটিকে রাখা হয় খিল কদম গাছের ডালের সঙ্গেই।
কারমা উৎসবে কড়ারা তাদের আত্মীয়স্বজন সবাইকে দাওয়াত করে। সাধ্যমতো সবাই নতুন কাপড় পরে। মেয়েরা শাঁখা, সিঁদুর, টিকলি, খাড়ু পরে নেয়। বলিপর্বের পরেই শুরু হয় উৎসবের পেছনের পৌরাণিক কাহিনি বলার আসর। মূলত এ-কারণেই প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সহজেই ছড়িয়ে পড়ে আদিবাসীদের কারমা বা কারাম উৎসবের বিশ্বাসটি। কাহিনি বলার পর্বে খিল কদম বা কারাম ডালটিকে ঘিরে বসে আদিবাসী নারীরা। সেজেগুজে ঘোমটা টেনে বসে তারা। সামনে কাঁসার পেয়ালায় রাখা হয় প্রদীপ, তেলের পিঠা, ছোলা, দূর্বাঘাস ও জুঁই ফুল। গোত্রপ্রধান বা মাহাতো বলতে থাকেন উৎসবের পৌরাণিক কাহিনিটি। মাঝে মাঝে তিনি উঁচুস্বরে বলেন – ‘ফুল ফেকিয়ে।’ ঠিক তখনই সবাই একমুঠো জুঁই ফুল বা ঘাস ছুড়ে দেয় ডালটির দিকে। কাহিনিশেষে মনের নানা ইচ্ছা নিয়ে সবাই তাদের বানানো তেলের পিঠা বেঁধে দেয় কারমা ডালটির সঙ্গে। কারমা উৎসবের পূজার এই পর্বটিতে শুধু মেয়েরা অংশ নিতে পারে। পূজাশেষে উপোসকারীরা উপোস ভাঙে।
অতঃপর রাতভর তারা ডালটির চারদিকে নেচে-গেয়ে হাঁড়িয়া খেয়ে আনন্দ করে। ভোরবেলা গ্রামপ্রধান বা মাহাতো স্নান সেরে প্রথমে এক বাটি দুধ ঢেলে দেয় খিল কদম গাছের ডালের মাথায়। এর পরপরই অন্যরা একে একে দুধ ঢালতে থাকে। অতঃপর যে-যুবকটি ডাল কেটেছিল, সে প্রথমে ডালটির চারদিকে তিন পাক ঘুরে ডালটিকে কাঁধে তুলে ঢাকঢোলের তালে তালে সেটিকে বিসর্জন দেয় নিকটবর্তী নদী বা পুকুরে। কড়াসহ অন্য আদিবাসীদের বিশ্বাস, এই পূজা বা উৎসবের মাধ্যমেই তাদের অভাবমুক্তি ও সৌভাগ্য লাভ ঘটে।
এ-উৎসবে কড়ারা নাচ-গানের মাধ্যমে আনন্দও করে থাকে। উৎসবে কড়ারা গায় :
তারক পাতা তেরকি
খেজুর পাতা দনা
নাচ গেয়ে ময়না
ভাতারে দেতো আয়না।
কেন এবং কোন সময় থেকে কড়া আদিবাসীরা কারমা উৎসব পালন করে থাকে? এটি জানা যায় উৎসবে তাদের বলা লোকগাথা থেকে। গোত্রপ্রধান জগেন কড়ার মুখে শোনা লোকগাথাটির ভাবার্থ :
কারাম আর ধারাম দুই ভাই। কারাম বড়। ধারাম ছোট। পারাবেতী তাদের একমাত্র বোন। ভাদ্র মাসে একবার গ্রামের এক ধনী ব্যক্তি ঢোল পিটিয়ে তার জমিতে ‘হাউলি’র (ধান গাড়ার) ডাক দেয়। অন্যদের সঙ্গে কারাম-ধারামও যায় সেখানে। কাজ শুরু হয় খুব ভোরে। কিছু চারা লাগানোর পরেই সকালের নাস্তা বা পান্তার ডাক পড়ে। দু-ভাই তখন কলাপাতা বিছিয়ে বসে যায় লাইনে। কিন্তু তাদের কাছে এসেই তা শেষ হয়ে যায়। পান্তা না পেয়ে বড়ই দুঃখ পায় তারা। নিজেকে সামলে নিয়ে দুপুরে খাবারের আশায় তারা আবার কাজে ফেরে। কিন্তু এবারো ঘটে একই ঘটনা। তাদের কাছাকাছি এসেই খাবার শেষ! ব্যথিত হয় দুই ভাই-ই। রাগে-কষ্টে তারা তাদের হাতে লাগানো রোয়া তুলে ফেলতে রওনা দেয়।
পথেই ছিল একটি বটগাছ। দুঃখের কারণ জানতে চাইলে দুই ভাই বটগাছকে সব খুলে বলে। সব শুনে বটগাছ বলে, ‘তোদের কারমা কপাল জেড় গেলে (তোদের কর্মভাগ্য পুড়ে গেছে)। সাত সমুদ্র লংকা পাড় হয়ে আনতে হবে কর্মভাগ্যকে।’
বটগাছের কথায় কারাম-ধারাম রওনা হয় কর্মভাগ্য ফিরিয়ে আনতে।
পথে তাদের সঙ্গে দেখা একটি কুলগাছের। কারাম-ধারামের কথা শুনে সেও জানায় তার দুঃখের কথাটি। তার ফল পেকে মাটিতে পড়ে থাকে কিন্তু কেউ সে-ফল খায় না। তার ভাগ্যটিও জেনে আসতে দু-ভাইকে সে অনুরোধ করে। যেতে যেতেই কারাম-ধারামের দেখা হয় একটি ডুমুর গাছের সঙ্গে। তাদের লংকা পার হওয়ার কথা শুনে সে আফসোস করে বলে – ‘আমার এমন সুদৃশ্য ফল পেকে থাকে কিন্তু মানুষ ও পাখি সেদিকে ফিরেও তাকায় না।’ তাদের সে অনুরোধ করে তার ভাগ্যটিও জেনে আসার। কিছুদূর যেতেই কারাম আর ধারামের সামনে পড়ে একটি নদী। নদীতীরে দুটি হাতি নিজেদের মধ্যে মারামারি করছিল। তাদের পুরো শরীর কাদায় ঢাকা। কারাম-ধারামের কথা শুনে তারা দুঃখ করে বলে, ‘আমরা নিজেদের মধ্যে মারামারি করে আর কত কাল কাদায় ঢাকা থাকব? আমাদের কি কেউ গোসল করিয়ে পরিষ্কার করে রাখবে না? তোমরা আমাদের ভাগ্যটিও জেনে এসো।’
নদী পাড় হয়ে কিছুদূর যেতেই পড়ে লংকা সমুদ্র। কিন্তু বিশাল এ-সমুদ্র কারাম-ধারাম কীভাবে পার হবে?
সমুদ্রে ছিল বড় একটি কুমির। সাতদিন আগে তার গলায় বিঁধেছে আড় মাছের কাঁটা। যন্ত্রণায় তার ঘুম হারাম। সে কারাম-ধারামের সাহায্য চাইল। সমুদ্র পার করা ও নিয়ে আসার শর্তে দুই ভাই কুমিরের গলার কাঁটা বের করে দিলো। অতঃপর কুমিরের পিঠে চড়ে লংকা সমুদ্র পার হতেই তারা দেখা পায় তাদের কর্মভাগ্যের। সারা শরীর তার পোকায় খাচ্ছিল। কারাম-ধারাম স্পর্শ করতেই সেটি গাছ হয়ে গেল। দুই ভাইয়ের মনে তখন অন্যরকম শক্তির সঞ্চার হলো। তারা সেই গাছ ঘাড়ে নিয়ে আবার বাড়ির দিকে রওনা দিলো।
ফেরার পথে হাতি দুটো তাদের ভাগ্যের কথা জানতে চাইলে, কারাম-ধারাম বলে – এমন একজন লাগবে যে তোমাদের শরীর পরিষ্কার করে দেবে। হাতি দুটি মিনতি করে তাদের সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার। দুই ভাই তখন দুই হাতির পিঠে চড়ে বসে। এরপর ডুমুর গাছ তার ভাগ্যের কথা জানতে চাইলে তারা বলে – তোমার গোড়ার মাটির নিচে সাত কলসি ধন আছে। সেটি সরালেই তোমার ফল সবাই খাবে। ডুমুর গাছ কারাম-ধারামকে তা তুলে নেওয়ার অনুরোধ করে। তারা তখন সাত কলস ধন হাতির পিঠে তুলে নেয়। কুলগাছের সঙ্গে দেখা হতেই কারাম-ধারাম তাকেও একই কথা বলে। সেও মাটির নিচের সাত কলস ধন তুলে নেওয়ার মিনতি করে।
এভাবে দুই ভাই কর্মভাগ্য নিয়ে আসে ওই বটগাছটির কাছে। বটগাছ কর্মভাগ্যরূপী ওই গাছটিকে মাটিতে গেড়ে তাদের বোন পারাবেতীকে দিয়ে পূজা করার নির্দেশ দেয়। তারা তাই করে। কড়াদের বিশ্বাস, সে-সময় থেকেই পৃথিবীতে কারমা উৎসবের আয়োজন হয়ে আসছে।
কারমা উৎসবের মতো এদেশে বসবাসরত আদিবাসীদের রয়েছে হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত নিজস্ব আচার, উৎসব ও সংস্কৃতি। দারিদ্র্য ও সংখ্যাগরিষ্ঠের আগ্রাসী সংস্কৃতির চাপে আজ তা প্রায় বিপন্ন। তবুও আদিবাসীরা ধরে রেখেছে নিজেদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও উৎসবগুলোকে। উৎসবগুলোর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে আদিবাসী বিশ্বাসের চমৎকার সব
লোকগাথা। যুগে যুগে যা সমৃদ্ধ করেছে আদিবাসী সাহিত্যকে।
নিবন্ধের সব ছবি : সালেক খোকন
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.