এই তো সেদিনের কথা। ১৭ই নভেম্বর। একটু রাত করেই ঘুমোই। হঠাৎই ফেসবুকে ভেসে উঠল অলোকদার প্রয়াণসংবাদ। চমকে উঠলাম। সুশীলদা মানে আমাদের সুশীল সাহাকে ফোনে ধরার চেষ্টা করলাম। ফোন বন্ধ। সারারাত জেগেই কাটল। ঘুমবো কী করে? মনে পড়ে এরকমই অবস্থা হয়েছিল সমালোচক অধ্যাপক উজ্জ্বলকুমার মজুমদারের প্রয়াণসংবাদে। যে কয়েকজন প্রথিতযশা মানুষের কাছে এসেছি, ভালোবাসা পেয়েছি তাঁদের মধ্যে এঁরা প্রথম সারিতেই থাকবেন। মনে পড়ে গেল কত সোনালি স্মৃতি। মনে পড়ে গেল অলোকদার সঙ্গে প্রথম পরিচয়ের সান্দ্র মুহূর্ত!
বছরটা ছিল ২০১২। বন্ধু দীপঙ্কর মোশান জানালো, রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে আন্তর্জাতিক সেমিনার এবং সেই সেমিনারে উপস্থিত থাকবেন ‘যৌবন বাউল’খ্যাত কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক জ্যোৎস্না চট্টোপাধ্যায়ও আসতে বললেন। আনন্দে উদ্বেল হয়ে পৌঁছলাম রবীন্দ্রভারতীর সেমিনার কক্ষে। সেখানে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্তের সংলাপ আমাকে কার্যত মন্ত্রমুগ্ধ করে দিয়েছিল। তিনি বলতে উঠে বললেন, ‘আমি এখন ইতালিয়ান ভাষায় রামায়ণের অনুবাদের কিছু অংশ গান করব।’ এ-কথা শুনে তো বাকস্তব্ধ হয়ে গেলাম। শুরু হলো গান। ইতালিয়ান থেকে ফরাসি, ফরাসি থেকে জার্মান! বক্তৃতা তো নয়। সম্মোহন জাল! কথার সম্মোহন। পাণ্ডিত্য কাকে বলে তা বোধহয় সেমিনারে উপস্থিত সমস্ত শ্রোতা সেদিন বুঝেছিল! সেই সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন সুমিতাদি, মানে অধ্যাপক সুমিতা চক্রবর্তী। তিনিই আমাকে অলোকরঞ্জনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তারপর গাড়িতে যেতে যেতে কত কথা। আমি শৈলজানন্দকে নিয়ে কাজ করেছি শুনে তিনি সুস্মিত স্বরে বললেন, ‘কবিদের নিয়ে তোমরা কাজ করো না কেন!’ আমি আবেগস্পন্দিত হয়ে বলে উঠলাম, ‘আপনাকে নিয়ে কাজ করব।’ আমার এই সাহসী উচ্চারণের আন্তরিকতায় সেদিন যে খুব খুশি হয়েছিলেন তা পরবর্তীকালে বুঝেছি। কখন যেন আমি তাঁর ভেতরমহলের বাসিন্দা হয়ে পড়েছিলাম। আপনি, স্যার – এই দূরত্ববাচক শব্দগুলো দূরে সরে গিয়ে তিনি কখন আমারও অলোকদায় পরিণত হলেন আমি নিজেও তা জানি না। যাই হোক তাঁর কবিকৃতি নিয়ে অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল মিলল। ‘পারুল বই’ থেকে প্রকাশিত হলো আমার বই কবিতার অলোকরঞ্জন : ভুবনডাঙার বাউল। এই বই তাঁকে খুশি করেছিল। আমাকে প্রাণভরে তিনি আশীর্বাদ করেছিলেন। আজ সেই মানুষটি আর নেই এ-কথা ভাবতেই দু-চোখ আমার জলে ভরে উঠল। মনে পড়ল মাত্র এক মাস পূর্বেই তো ওনার সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছিল। তখনো তো বিন্দুমাত্র বুঝতে পারিনি তিনি এতটা অসুস্থ। পায়ের বা কোমরের সমস্যার কথা জানতাম। কিন্তু এমন করে হঠাৎ তিনি চলে যাবেন তখন তো বুঝতে পারিনি।
যাক, কথায় কথায় অনেক কথা হলো। এখন ফিরি তাঁর কবিতার কথায়। আনন্দবাজারে শমীক বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিবেদন পড়ে মনটা ভরে গেল। অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত যে জঙ্গম কবিস্বভাবী ছিলেন তা তিনি অকপটে বলেছেন। আমি বর্ষীয়ান সমালোচকের সঙ্গে এ-ব্যাপারে পুরোপুরি একমত। আমি একধাপ এগিয়ে নির্মোহ দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বলতে চাই, এমন জঙ্গম কবিপ্রতিভা রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ এবং সুভাষ মুখোপাধ্যায়, শঙ্খ ঘোষের ছাড়া বাংলা সাহিত্যে আর আসেনি। কথাটা অতিভক্তির বাড়াবাড়ি মনে হতে পারে। কিন্তু না, এখানে আমি চূড়ান্ত নিরাসক্ত। কেউ কেউ বলতেই পারেন, আপনার যুক্তিটা কী? আমার বক্তব্য হলো, সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব, শামসুর রাহমাদ, আল মাহমুদ এমনকি সুনীল, শক্তি, বিনয় মজুমদার প্রমুখ অসামান্য কবির কবি-কৃতি যাবতীয় পারঙ্গমতা সত্ত্বেও বিরাট কোনো ভাংচুর প্রায় কারো কবিতার মধ্যে লক্ষ করি না। সুভাষ মুখোপাধ্যায় ছন্দোস্পন্দের সঙ্গে বাকস্পন্দনকে বুনে দেওয়ার কুশলী শিল্পী। বাংলা ছন্দের নির্দিষ্টতাবাদী অবকাঠামোকে তিনি অন্তর্ঘাতের তীব্রতায় ধূলিসাৎ করেছেন অনেকটাই – এ-কথাই বা অস্বীকার করি কী করে! কিন্তু তিনিও নিজের তৈরি ইমেজ থেকে পুরোপুরি বেরোতে পারেননি। আর সেখানে অলোকরঞ্জন জীবনদৃষ্টি এবং কাব্যশৈলী দুদিক থেকেই নিজেকে প্রতিমুহূর্তে ভেঙেছেন। গড়েছেন নিজের সৃষ্টিকে নিত্যনতুন করে। আমৃত্যু তিনি এই সাধনাতেই ছিলেন অপরিক্লান্ত।
যৌবন বাউল পর্বে অলোকরঞ্জন প্রকৃতিলগ্ন ঈশ্বরবিশ্বাসী একজন বাউল। তাঁর একতারায় মগ্নকণ্ঠে সেদিন বেজে উঠেছিল জীবনবাদী সুর। আলোক সরকারের সঙ্গে ভিনদেশী ফুল নামে পঞ্চাশের দশকের প্রথমদিকে একটি অনুবাদ কাব্য সংকলিত করলেও যৌবন বাউলই (১৯৫৯) প্রকৃত অর্থে তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ। এখানেই তাঁর কবিপ্রতিভার মৌলিক প্রবণতাগুলির কোরক প্রথম উন্মোচিত হয়। অলোকরঞ্জন যখন কবিতা রচনা শুরু করেন তখন বাংলা কবিতা আরেক বাঁকবদলের মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে। রবীন্দ্রনাথের কাব্যাদর্শের বাইরে গিয়ে বাংলা কবিতা ততদিনে নতুন পথ, আদর্শ খুঁজে পেয়েছে। নতুন যুগের অধিপতি তখন জীবনানন্দ দাশ। সুধীন্দ্রনাথ, বিষ্ণু দে, বুদ্ধদেব বসুর প্রভাবও তখন কম ছিল না। কিন্তু সব ছাড়িয়ে জীবনানন্দের প্রভাব বনস্পতির চেহারা নিচ্ছিল। নতুন যুগের কবিদের চোখে জীবনানন্দের কাব্যশৈলী যেন মোহাঞ্জন পরিয়ে দিয়েছিল। অন্যদিকে ছিল সুভাষ মুখোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথদের দাপুটে উপস্থিতি। সমাজবদলের স্বপ্ন বাংলা কবিতায় ডানা মেলেছিল। অসাম্য, শোষণ-বঞ্চনার দুর্গ ভাঙার শপথে বাংলা কবিতার রাজপথ তখন মন্দ্রিত হচ্ছিল। এমন পটভূমিতে অলোকরঞ্জন, আলোক সরকার, সুনীল, শঙ্খ ঘোষ, কবিতা সিংহ, নবনীতা দেবসেন প্রমুখ একঝাঁক কবির আবির্ভাব ঘটল। তাঁরা নতুন পথে চলতে চাইলেন। তিরিশের কবিদের মতো পাশ্চাত্য রীতিতে কবিতা রচনায় দেখা গেল এঁদের প্রবল অনীহা! আবার চল্লিশের কবিকুলের উদ্দেশ্যমূলক স্লোগানের কবিতা রচনার প্রবণতাকেও তাঁরা নস্যাৎ করলেন। এসবের পুরোভাগে যিনি ছিলেন তিনি হলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত। তাঁর কবিতায় শোনা গেল সম্পূর্ণ নতুন সুর। সেই সুর রাবীন্দ্রিক কাব্যাদর্শ থেকে বহুদূরে। আবার সেখানে জীবনানন্দের বিষণ্নতা, অস্তিবাদী চেতনার কোনো ছাপ নেই। শোষণমুক্তির স্বপ্নও তাঁর কবিতার আকাশে নিশান ওড়ায়নি। তাঁর কবিতায় এলো আঞ্চলিকতার স্বপ্ন, এলো মানুষ ও প্রকৃতিকে আবজে থাকা ঈশ্বরচেতনা, এলো সহজ যৌবনের গীতল সুর। এলো রোমান্টিকের সহজ বিস্ময়ের স্বপ্নিল উজ্জীবন। অন্ধকার পরিপ্রেক্ষিতকে স্বীকার করে আলোকের অভিসারের একান্ত এষণা!
যৌবন বাউল থেকেই কবির এই অনন্য পরতন্ত্র জীবনদৃষ্টি ডানা মেলতে থাকে। অধুনা ঝাড়খন্ডের রিখিয়ায় ছিল কবির নিজের বাড়ি। ইভাকুয়েশনের সময় তাঁর দাদু কলকাতা থেকে রিখিয়ায় চলে আসেন। সেই রিখিয়ার সহজ মানুষ ও মায়াঘন প্রকৃতি তাঁর কবিতায় জীবন্ত হয়ে উঠেছে। সেখানে আছে রিখিয়ার গ্রামীণ বালক বুধুয়া। তার চোখ দিয়ে কবি রিখিয়ার প্রকৃতিকে কবিতায় তুলে এনেছেন। তার সরল চোখে ভরে দিয়েছেন নিজের অন্তরে উপচেওঠা অবাক বিস্ময় :
এবার রিখিয়া ছেড়ে বাবুডির মাঠে
বুধুয়া অবাক হয়ে হাঁটে,
দেহাতি পথের নাম ভুলে
হঠাৎ পাহাড়ে উঠে পাহাড়ের মতো
মুখ তোলে
ভাবে : ওটা কার বাড়ি, কার অতো
নীল
তার সরল মন সেই স্বপ্নরাজ্যে পৌঁছে যেতে চায়। কিন্তু সেখানে বুধুয়া যাবে কেমন করে! তার ডাকের আন্তরিক সরলতা আলোর জন্ম দেয়। পথের কলস সেই আলোয় ভরে ওঠে। তার আকর্ষণে নামতে থাকে ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি। তারা যেন সেই অমর্ত্যলোকের দূত। তারাই বুধুয়ার অনাবিল হাসি অমর্ত্যলোকে বয়ে নিয়ে যায় : ‘ঝাঁকে-ঝাঁকে পাখি আসে, কেউ তার দিদি, কেউ মাসি/ রুপোলি ডানায় যারা নিয়ে বুধুয়ার হাসি।’ extraordinary development of imaginative sensibility-র এক আশ্চর্য উদাহরণ এই কবিতা। স্বাদে, গন্ধে এই কবিতা আমাদের মনে করায় Wordsworth-এর ÔThe Solitary ReaperÕ-এর কথা। ‘অরণ্যমধু’, ‘দেবযান’, ‘নামখোদাই’ ইত্যাদি কবিতাতে এসেছে আঞ্চলিক পটভূমি। সেখানে আর্ত হয়ে উঠেছে নাগরিক মানুষের অরণ্যপ্রকৃতি ও আরণ্যক মানুষকে ভোগ করা নাগরিক এষণায় অরণ্যলালিত মানুষগুলির বিপন্ন প্রশ্ন :
অরণ্যমধু ভরে নিতে মৌচাকে
শহুরিয়া যতো গ্রামে কেন বাঁধে
ডেরা॥
এরপর আসল ‘নিষিদ্ধ কোজাগরী’। বদল এতটাই যে, এই কবি এবং যৌবন বাউলের কবিকে এক বলে বিদেশি কোনো মননশীল অনুভবী পাঠক ধরতেও পারবেন না। ঈশ্বরবিশ্বাসী, অলোকরঞ্জন এখানে প্রণিপাত করেছেন মানুষের দরবারে। অকুণ্ঠ বিশ্বাসে বলেন : ‘যেদিকে ফেরাও উট, এই দ্যাখো করপুটে একটি গণ্ডুষ/ বিশ্বাসের জল, তুমি পান করো, আমি জল না খেয়ে মরব।’ এখানে তিনি বলিষ্ঠ জীবনবাদী। তাই অকুণ্ঠে বলতে পারেন :
আমরা
দ্বিতীয় চুম্বনের আশায়
থাকব না॥
এখন তিনি ক্ষমতাতন্ত্রকে বিদ্ধ করতেও অকুণ্ঠ। তাই রচনা করতে পেরেছেন ‘এক বেশ্যা অনায়াসে ভিতরমন্দিরে ঢুকে যায়’-এর মতো বিপ্লবী কবিতা। এখানে তিনি তীর্যকতার মন্ত্রেও দীক্ষিত। তাই অনায়াসেই আঁকতে পেরেছেন পূজার সময়ে সংরাগের প্রবলপ্রতিমা। ঈশ্বর প্রেম করতে দেখতে পাচ্ছেন বললেও তাঁর কবিতার প্রেমিকপুরুষ ভীত হয় না। এমন স্মার্ট প্রেমিক বাঙালি আগে কি কখনো দেখেছে! এরপর কবি ঝরোখা থেকে পৃথিবীর দিকে তাকিয়েছেন। সেই ঝরোখায় লেগে আছে রক্ত। তাই কাব্যের নাম রক্তাক্ত ঝরোখা। এই রক্ত অনেকটাই হৃদয়ের। স্বাধীন দেশে তখন বেকারি ছাইছে। বাড়ছে দারিদ্র্য। অর্থনৈতিক সংকট যাপনকে জটিল করে তুলেছিল। পাশাপাশি নতুন নাগরিক সংস্কৃতিও মানুষের মনকে জটিল করে তুলেছিল। প্রেমের সম্পর্কের আন্তরিক বিশুদ্ধতার জায়গাগুলোও ধূসর হচ্ছিল। বাড়ছিল ভুল-বোঝাবুঝি, বিশ্বাসঘাতকতা। এই সমাজবাস্তবতাই উৎকীর্ণ হয়েছে বক্ষ্যমাণ কাব্যগ্রন্থে। এই কাব্যের ‘নাকের একটি নথ’ কবিতাটির সূচনা ধ্বস্ত প্রেমের কথায় : ‘চোখের সামনে শুধু মিলায় নিজস্ব রাজধানী পল-বিপলের কত শহর রক্তে উপার্জিত,/ভিতরবাগান ঘুরে এসে একহাঁটু জলকাদা/ যা ছিল খুব আলুথালু, ক্রমশ মার্জিত।’
বাইরের ধ্বস্ত পরিবেশের সাযুজ্যে কথকের ব্যক্ত জীবনও ছিন্নভিন্ন : ‘চোখের সামনে মিলায় আমার বলিষ্ঠ দুই হাত,/ ভালোবাসার উঠান জোড়া মেধাবী নীল তাঁবু,/ অবাধ্যতা শিখেছে সেই অঙ্গনার গ্রীবা,/ ভ্রাম্যমাণ এখন সেই মুখাপেক্ষী পাহাড়!’ কবিতার সমাপ্তিতে সেই অন্ধকার আরো গাঢ় হয়ে উঠেছে। প্রেমিকার বিশ্বাসভঙ্গের প্রতিক্রিয়ায় প্রেমিকের বিষণ্ন মুখচ্ছবি আমাদের মন খারাপ করে। ‘বিষণ্নতায় সান্দ্র সারা শহরে কুয়াশা’ কবিতাও। তবে সমাজের বিষণ্নতা এর অবলম্বন। কবিতাটির প্রথম স্তবকের সূচনায় আঁকা হয়েছে ষাটের দশকের অন্ধকার-আবৃত বাংলার চিত্র :
সারা শহরে কুয়াশা
মস্ত বড়ো ছাউনি ফেলে
কেড়ে নিল আমার ভাষা,
এই অন্ধকারে আলোকজাগানিয়ার দেখা অবশ্য মিলেছিল : ‘আমায়, তুমি স্তব্ধ থাকতে দাওনি/ আমার হাতে কলম দিলে, প্রদীপ জ্বেলে।’ কিন্তু সেই প্রদীপের আলো কুয়াশার অন্ধকার দূর করতে শেষ পর্যন্ত পারল না :
পাঁচমাত্রার ছন্দে
যেই আমি কুয়াশা
ধরতে গেলাম, বাণীবিহীন মন্ত্রে
ছমাত্রা কুয়াশা এসে ছিঁড়ল আমার
ছাউনি॥
এই কাব্যগ্রন্থের পশ্চাদভূমি অলোকরঞ্জনেরই এক শ্রুতিলিখনে কীর্ণ হয়েছে চিরকালের ভাষায় :
শান্তিনিকেতনে ছাত্রদশাতেই মার্ক্সবাদে অকালদীক্ষিত হয়ে পড়ি, ঘন ঘন কলকাতায় যাওয়া-আসা সূচিত হয়, সেই সুবাদে বীরভূমের গ্রামেগঞ্জে শুরু হয়ে যায় আমার ঘুরে বেড়ানো। কার্ল মার্ক্সের সৌন্দর্যতত্ত্ব নিয়ে একটি লেখায় হাত দিয়েছি শুনে ছাত্র ফেডারেশনের কর্মীরা আমায় এই বলে ধিক্কার দেয় যে, নন্দনতত্ত্ব কার্ল মার্ক্সের এলাকা-বহির্ভূত। অতএব আমি যেন অনধিকার চর্চা থেকে বিরত হই। এইসব বিতর্কভাবনার এক কথায় বন্ধুদের সঙ্গে আমার এই মেঘ এই রৌদ্র যৌবন বাউলেই বীজাঙ্কুরিত হয়ে দশ বছর পরে প্রকাশিত হয় রক্তাক্ত ঝরোখায় (১৯৬৯) স্পষ্ট আকার নিয়েছে বলে আমার মনে হয়।
এখানে অলোকরঞ্জন আসলে একটি যুগসত্যকে উন্মোচিত করেছেন। যৌবন বাউল থেকে রক্তাক্ত ঝরোখা আসলে একটি সময়। সেই সময়ের সূচনায় মুখ তুলছিল অন্ধকার একটু একটু করে। যৌবন বাউলের ‘বিভাব’ কবিতাতে সেই অন্ধকারের বাস্তবতাই সংকেতিত : ‘পটভূমিকা অন্ধকার আপন স্বত্ব অধিকার/ রাখুক আমি শরীর নোয়াবো না।’ এই অন্ধকার বাংলার আর্থ-সামাজিক-রাজনৈতিক অন্ধকার। বেড়ে ওঠার পর্বে কী দেখেননি অলোকরঞ্জন! সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা, মন্বন্তর, দেশভাগ। দেশ স্বাধীন হলেও অবস্থার কোনো বদল ঘটল না। দেখলেন উদ্বাস্তুর ঢল, ক্ষুধার্ত মানুষের হাহাকার, দেখলেন স্বাধীন দেশের সরকারের উদাসীন নৃশংসতা। সেইসঙ্গে রাজনৈতিক সংস্কৃতির আকাশ ছাইছিল গুমোট বাষ্পে। বামপন্থী দলগুলোকেও অচলায়তনিক যুক্তিবাদগ্রস্ত করল। শ্রমজীবী মানুষের মুক্তির কথা বলা মানে একমাত্র সমাজতান্ত্রিক বাস্তবতার দাসত্ব, সেখানে সৌন্দর্যচেতনা বুর্জোয়া পাপ এমন একদেশদর্শিতা তাদের কূপমণ্ডূক হওয়ার পথে এগিয়ে দিলো। এই পটভূমিকে সঙ্গে করেই অলোকরঞ্জনের পথ চলার সূচনা। যৌবন বাউলের কবি এই অন্ধকার পটভূমিতে জ্বেলেছিলেন আলো। তাই তো তাঁর কবিতায় তখন আঁকা হয় আলোকদাত্রী এক নারীর কথা : ‘সূর্যকে যে পথ দেখাবে, কাল সে আমার স্বপ্নে এসেছিল’ – এই বলে ‘এক সূর্যমুখী নারী/ আকাশ থেকে আনল টেনে আলোর তরবারি/ আকাশ ভরে উঠল গানে গানে।’ কিন্তু নিষিদ্ধ কোজাগরীতে এই কান্তিময় আলোর দীপ্তি ক্ষীণ হয়ে এলো। আর রক্তাক্ত ঝরোখায় আলো কখন যেন শিশিরের শব্দের মতো মিলিয়ে গেল। ভেতরে-বাইরে অন্ধকার তখন গাঢ়তর। রক্তাক্ত ঝরোখা সেই অন্ধকারের মহাকাব্য। ‘নির্বাসন’, ‘ভাঙা সাঁকোর ধারে’, ‘বধূবরণ’ ইত্যাদি কবিতায় অনুভব করি অন্ধকার সময়ের অলখ-ইশারা। ‘নির্বাসন’ কবিতার গহনস্তরে স্তম্ভিত হয়ে আছে উদ্বাস্তু জীবনের প্রতি কবির আন্তরিক বিষণ্নতা। এই বিষণ্নতাবোধ কবিকে আচ্ছন্ন রেখেছে সারাজীবন। জীবনের গোধূলিলগ্নে এই বিষাদখিন্ন অনুভবের গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছে ‘বাস্তুহারার পাহাড়তলি’র মতো কাব্যগ্রন্থ। রক্তাক্ত ঝরোখা কাব্যগ্রন্থের নামকবিতা বাংলা কবিতার ইতিহাসে এক স্বতন্ত্রচিহ্নিত বিস্ময়দ্রাঘিমা! ২৪টি সংখ্যায় বিতত এই কবিতায় আধুনিক যুক্তিবাদ ধ্বস্ত হয়েছে কবির সৃজনী সংরাগে। প্রথমসংখ্যক কবিতাতে তিনি নিজের তথাকথিত ঈশ্বরবিশ্বাসের প্রকৃতিকে যেভাবে বিরোধাভাসের মধ্য দিয়ে তুলে এনেছেন তা আধুনিকতাবাদের ভিতটাকে দেয় আলগা করে। কবিতার সূচনা তত্ত্ব এবং বাস্তবের বিরোধের কথায় : ‘… তাই ভাবি, ঈশ্বর বললেই ক্ষণে-ক্ষণে/ বিদ্যুতের মহিমায় অনীশ্বর নরকের গলি/ হঠাৎ ফুটে বেরোয়, শয়তানের ললাটে ত্রিবলী,/ সন্ন্যাসীর ঘনশ্যাম বিশ্বাস রহে না ত্রিভুবনে।’
এরকম অবস্থায় কথক বিপরীত পথের যাত্রী হন : ‘আমার মন্দিরে তবে পশ্চিমি গির্জার দেখাদেখি/ কারে ঝরোখা গড়ি, স্টেইনড গ্লাস, নকশার উল্লেখে/ এঁকে তুলি দাগী দস্যু, পুণ্যলতা, কুরূপা সুরেখী, -/এঁকে তুলি বৈরাগী আভোগী পাপী অথবা নিজেকে,/ এসব চরিত্রছবি আমার হৃদয়রক্ত লেগে।’ আর তখনই আসে বিস্ময়সিক্ত ক্লাইম্যাক্স : ‘ঘূর্ণিযোগে অবশেষে ঈশ্বরে পরিগণিত … একি … ।’ এইভাবে অনায়াসে কবি যুক্তির শাসনকে অনায়াসে ভেঙে দেন দুই বিরোধী দ্যোতককে সামনে রেখে। প্রথম স্তবকে ঈশ্বর দ্যোতক। দ্যোতিত ‘অনীশ্বর নরকের গলি’, ‘শয়তানের ললাটে ত্রিবলী’ ইত্যাদি। ঈশ্বরের এরকম দ্যোতিত আমাদের ঐতিহ্যলালিত সংস্কারকে মুহূর্তে বিদ্ধ করে। একইভাবে দ্বিতীয় স্তবকে আবার দ্যোতক এবং দ্যোতিতের প্রকৃতি আমাদের চেতনাকে বিস্ময়াহত করে। এখানে ‘দাগী দস্যু’, ‘পুণ্যলতা’, ‘কুরূপা সুরেখী’, ‘বৈরাগী আভোগী পাপী’ হয়ে উঠেছে ঈশ্বরের দ্যোতক। শব্দের যে নির্দিষ্ট কোনো অর্থ নেই, সমাজের পরিপ্রেক্ষিত এবং ব্যক্তির মনভেদে অর্থের বদল ঘটে – এখানে এই তত্ত্ব অনায়াসে প্রমাণিত হয়ে যায়।
এই কবিতার ৩নং অংশ খিন্ন সমাজের প্রবল প্রতিমা। কবিতার সূচনায় এসেছে ঈশ্বরের আঙুরবাগানে শ্রমিকতার কথা। এই শ্রমিকতা কথকের কাঙ্ক্ষিত। অথচ সেই কাঙ্ক্ষিত স্বর্গে কথকের থাকা হলো না। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হলো বন্যার্তের তহবিলে চাঁদা তুলতে। সাজানো হলো ‘আতুর-সংঘের বক্তা’। হঠাৎই কথক দেখেন সেই ‘আতুর-সংঘের স্ফূর্তি!’ আর তারপর আঘাত, গালিগালাজ আরো কত কী! সেকালে জনদরদি দলগুলোর জনদরদের আড়ালে কী চলত কবি অনায়াসে তা এখানে জানিয়ে দেন। সমকাল, সমাজ যেভাবে কবির দৃষ্টিপথে ধরা পড়েছে, যেভাবে সেই চোখে-দেখা বাস্তবতাকে কবি অনুভব করেছেন তারই কাব্যস্পন্দন এইভাবে হয়ে উঠেছে রক্তাক্ত ঝরোখা।
আমি মনে করি, যৌবন বাউল থেকে রক্তাক্ত ঝরোখা – সব মিলিয়ে একটাই অধ্যায়। এ-কথা সত্য যে, উদারতা, গ্রাম্য প্রকৃতিকে ও প্রকৃতিলগ্ন মানুষগুলোকে আবজে নিয়ে থাকার সহজ মানসিকতা, যে সহজ ঈশ্বরবিশ্বাস যৌবন বাউল কাব্যে কীর্ণ হয়েছে সেই সকল বৈশিষ্ট্য-পরবর্তী কাব্যগুলিতে ক্ষীণ হয়ে এসেছে, পূর্বের সহজ রোমান্টিক মনের ঝরোখায় পড়েছে রক্তাক্ত সময়ের প্রতিভাস। তবু এগুলোকে যৌবন বাউলের সঙ্গে একই সঙ্গে রাখব। কারণ, পূর্বের মতো এখনো কবি শেষ পর্যন্ত ঈশ্বরবিশ্বাসী। রক্তাক্ত ঝরোখার সমাপ্তি কবিতায় এই সত্যই মায়াঘন সুরে উচ্চারিত :
বাটিকে-আঁকা আকাশে দিনশেষে
তুমি আমার প্রিয়,
রয়েছে যারা তোমার পরিবেশে
তারাও ঈশ্বরীয়;
তোমাকে সব দিলাম ভালোবেসে
তুমি ওদের দিয়ো।
বাটিকে-আঁকা তোমার মুখে মেশে
বিষম রাত্রিও॥
সর্বোপরি যৌবন বাউলের সহজ আশাবাদী মানসিকতা নানা বিপর্যয় সত্ত্বেও এখনো অমলিন।
অলোকরঞ্জনের কবিতায় সত্যিকারের বাঁকবদলের সূচনা ছৌ-কাবুকির মুখোশ (১৯৭৩) কাব্যগ্রন্থ থেকে। যে-বৈশ্বিক চেতনা অলোকরঞ্জনকে সৌরদিগন্তে অভিষিক্ত করেছে তার প্রকৃত সূচনা এই কাব্যগ্রন্থে। শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নয়, তাঁর আগামীকালের চলা যে দুইয়ের মধ্যে ফল্গুসঞ্চারী সামঞ্জস্যকে পাথেয় করেই তার ইঙ্গিত এর প্রথম কবিতাতেই আমরা পেয়ে যাই : ‘তুমি নারী ট্রাক্টর চালিয়ে এলে গমখেত থেকে আঙিনায়/ বীজগম নেবে বলে/ তোমার হাতে দেব বলে সোনারপুরের শাঙন কাজললতা/ যশোরের চিরুনি হাতে দাঁড়িয়ে আছি।’ এই নারী ভারতীয় নারী নয়। জার্মান নারী। ট্যুবিঙ্গেনের কিষানি সে। তার হাতে কথক সোনারপুরের কাজললতা এবং যশোরের চিরুনি তুলে দেওয়ার জন্য অপেক্ষারত। এইভাবে প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যকে মেলানোর কথা আগে কে ভেবেছেন! এই কাব্যগ্রন্থে ফ্রেস্কো, হিপি, বাভারিয়ার জঙ্গল, হাইডেলবার্গের মঞ্চ ইত্যাদির প্রসঙ্গ যেমন এসেছে, তেমনি এসেছে দেশজ খালুই, সুন্দরবন, যযাতি, যামিনী কৃষ্ণমূর্তির কথা। এভাবে ক্রমশই পালটে যেতে থাকে অলোকরঞ্জনের কবিতার ভূগোল-পরিসর। রিখিয়ার দেহাতি বালকের পাহাড়ের ওপরে উঠে আকাশের অপরিমেয়তা দেখে মুগ্ধ হওয়ার মধ্য দিয়ে অলোকরঞ্জনের উদার আকাশে উড়াল দেওয়ার যে-স্বপ্ন কীর্ণ হয়েছিল সেই স্বপ্নই ছৌ-কাবুকির মুখোশে এসে বাস্তব হয়ে উঠেছে। ইতিমধ্যে তিনি হুমবোল্ট স্কলারশিপ পেয়ে জার্মানি গেছেন। ফলে সেই দেশের প্রকৃতি, মানুষ এবং সংস্কৃতিতে অবগাহন করার সুযোগ তাঁর হয়েছে। কিন্তু দেশের শিকড় তিনি ভোলেননি। তাই তাঁর কবিতায় শোনা যায় সমন্বয়ের সুর। এই প্রবণতাই অব্যাহত থেকেছে আজীবন।
পরবর্তী কাব্যগ্রন্থ গিলোটিনে আলপনা কবির সমকালমনস্কতার সঙ্গে আরেকটি মাত্রা যুক্ত করেছে। তা হলো, তীক্ষ্ণ প্রতিবাদী মানসিকতা। এর অবশ্য কিছু আভাস ছৌ-কাবুকির মুখোশ কাব্যগ্রন্থেও আছে। আসলে যে-কোনো সৎকবির মতো অলোকরঞ্জনও জানতেন – প্রতিদিন যার অস্তিত্ব বিপন্ন, কণ্ঠ রুদ্ধ, বিচ্ছিন্নতার বোধে ক্লান্ত, অসহায়, পর্যুদস্ত, একনায়কত্ব আর স্বেচ্ছাচারিতার শিকার যাকে হতে হয় প্রতিমুহূর্তে একজন প্রকৃত অর্থে সৃষ্টিশীল কবি এ-সবকিছুকে এড়িয়ে চলতে পারেন না কখনো। আর তাই সত্তরের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের দিনগুলিতে সমপ্রাণ কবি শঙ্খ ঘোষের মতোই তাঁর লেখনী ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে ওঠে। অবশ্য তাঁর প্রতিবাদের ভাষা অনেক প্রতীকী। যেমন আন্তিগোনে, মঞ্চ : কলকাতার কথাই ধরা যাক। আন্তিগোনে নাটকে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং কেয়া চক্রবর্তীর অভিনয় আজ লোককথায় পরিণত। সেই নাটকের একরাত্রির অভিনয়কে সামনে এনে কবি এখানে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের বাস্তবতাকে প্রবল প্রতিমায় প্রাণস্পর্শী করে তুলেছেন। কবিতার সূচনায় আঁকা হয়েছে অভিনয়ের মাঝে লোডশেডিংয়ের চিত্র। আর তারপরেই পরবর্তী দুটি লগ্নস্তবকে আঁকা হয়েছে শাসকের দমননীতির চিত্র : ‘কেন এত অন্ধকার, আরো কতক্ষণ এই অন্ধকার/ একাকার দর্শক সত্তার/ জিজ্ঞাসার মাঝখানে কারা যেন মঞ্চে উঠে গিয়ে/ জ্বেলে দিলো কয়েকটি মোম, তার সংক্ষিপ্ত আগুনে/ ক্রেয়নের উত্তরীয় জ্বলে যায়, অগ্নিকাণ্ডে ঘৃতের আহুতি/ আন্তিগোনে॥’ ‘জ্ঞানপাপ’ ‘নির্ধারণ’ ইত্যাদি কবিতায় রয়েছে নকশাল আন্দোলনের নিরপেক্ষ মূল্যাঙ্কন। একটি আন্দোলনে কতশত সবুজ প্রাণ বলি হলো – এর জন্য একটা গভীর ব্যথা কবির অন্তরে ছিল। সেই ব্যথারই প্লুতস্বর এইসব কবিতা!
এরপর ‘লঘু সংগীত ভোরের হাওয়ার মুখে’, ‘জবাবদিহির টিলা’, ‘দেবীকে স্নানের ঘরে নগ্ন দেখে’ পর্যন্ত অলোকরঞ্জনের যাত্রাপথও বাঁকচিহ্নিত। নির্মিত দেবায়তন থেকে কবি সমকালের সঙ্গে লগ্ন হয়েছিলেন পূর্বেই। সেই প্রবণতা এখনো অব্যাহত। দূরান্বয়ের শৈলী আগেই আয়ত্তে এসেছিল। অতিকথন ছেড়ে নিঃশব্দের দিকে শুরু হয়েছিল তাঁর যাত্রা। এই পর্বে এসে অলোকরঞ্জনের ভাষা আরো স্মার্ট হয়ে উঠেছে। ভাষায় এসেছে তীর্যক চলন। সেইসঙ্গে লক্ষগোচর হয় মাটির পৃথিবীর সঙ্গে আরো বেশি করে নিজের সৃষ্টিকে লগ্ন করার প্রবণতা। এখানেই দেখি তৃতীয় বিশ্বের ক্ষুধার্ত শিশুর জন্য তাঁর ব্যাকুলতা : ‘সান্ত্বনাময় শিশু এখন আবজে আছে মাকে/ আজকে নেই তো রুটি,/ কাল। আমি ঠিক তোমার জন্যে মুক্তি নিয়ে এসে/ হাসতে হাসতে বন্দিশালায় যাব …।’ মানুষের প্রতি এই আন্তরিক ভালোবাসা থেকেই ওয়ার্ডসওয়ার্থের মতো মানুষ আর প্রকৃতি তাঁর দৃষ্টিতে এক হয়ে যায়। জবাবদিহির টিলা কাব্যগ্রন্থের ‘বিভাব’ কবিতা এই উপলব্ধিরই স্বরলিপি : ‘আর আমার কোনো নিসর্গ নেই, মানুষজন যখন ঘুমিয়ে পড়ে,/ আপাত মৃত লোকালয়ের মধ্য দিয়ে যেতে যেতে অনুভব করি অনন্ত নিসর্গের আস্বাদ।’ দেবীকে স্নানের ঘরে নগ্ন দেখে কাব্যগ্রন্থের ‘বিভাব’ কবিতারও আলম্বন বিভাব এই অনাবিল মানবমুখিনতা : ‘আজ দেখি তুমি এক লহমায় সমস্ত কাজ ফেলে/ ও-পাড়ার শিশুটিকে/ বাঁচাতে গিয়েছ, তোমার কান্তাসস্মিত কজ্জল/গিয়েছে ঈষৎ বেঁকে/ সেই দেখাটাই আজ আমার পার্বণ।’ এই গ্রন্থে দেখি বক্রভাষণে কবির দক্ষতা তুঙ্গস্পর্শী হয়ে উঠেছে। কখনো তাঁর বক্রবাচনের লক্ষ্য হয়েছে ভণ্ড প্রগতিশীলের দল : ‘আর সে-তথাকথিত প্রগতির দালালেরা তার/ সদ্য-ষোড়শীর দেহে রাখল না কাপড়/ যেন কোনো ব্যবধান নেই আর শৃঙ্গার ও খুনে!’ কখনো পিতাকেও বক্রবাচনের লক্ষ করেন : ‘তাঁকে দেখাচ্ছে অবিকল/ পাড়ার এক মাস্তানের মতো।’ এবার চলো বিপ্রতীপে কাব্যগ্রন্থেও একই প্রবণতা অব্যাহত। যেমন ‘গোমূর্খের সঙ্গে এক পাখি’ কবিতার শেষ স্তবকের কথা স্মরণ করা যাক : ‘কৌতূহলে কাছে আসি, পুরুষ আমাকে/ ভোম্বল-গম্ভীর স্বরে প্রশ্ন করে : কী চাহ? কী চাহ?/ আমি শাখামৃগোপম খল ক্ষিপ্রতায় বৃক্ষশাখে/ উঠে বলি : গোমূর্খের সঙ্গে এক পাখির বিবাহ!’ ধুনুরি দিয়েছে টংকার (১৯৮৮) কাব্যগ্রন্থে বৈদগ্ধ্যের দ্যুতি কবিতার শরীরে এক ভিন্ন লাবণ্যের সঞ্চার করেছে। এখানেই আছে ‘খেলার মতো চিত্রস্বভাবী’ পরাবাস্তববাদী কবিতা। এই কবিতার কেন্দ্রীয় বিষয় জিপসিদের তৈরি এক দোলনা। তারা চলে গেলেও গাছের শরীর থেকে নির্মিত এই দোলনা গাছের শরীরে দুলছে। তাদের এই দান নিতে অপারগ গুরুজনেরা। কারণ তাঁরা মনে করেন, এই ঝুলন ব্যবহারের পরিণামে শিশুরা হবে যাযাবরদশার শিকার। তাদের এই কিংকর্তব্যবিমূঢ়তা দোলনাটার আচরণকে বিন্দুমাত্র প্রভাবিত করতে ব্যর্থ হয়। তার এই নিস্পৃহভাবে দোলার চিত্রকল্পেই ঘটেছে কবিতার সমাপ্তি : ‘ছোটো ও বড়োরা/ জায়গাটা ঘিরে দেখছে দোলনা নিজেই দুলছে।’
অলোকরঞ্জনের কবিতার আরেকবার দিকবদল ঘটেছে সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরবর্তীকালে, বিশেষত গাল্ফ যুদ্ধের সময় থেকে। অলোকরঞ্জন বোধহয় একমাত্র ভারতীয় কবি যিনি গাল্ফযুদ্ধে মানবতার অপমৃত্যু দেখে শিউরে ওঠেন। এর অভিঘাতে তাঁর জীবন ও কাব্যদর্শনটাই যায় বদলে। চিন্ময় গুহের সঙ্গে এক কথালাপে এই বদলের দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে : ‘এইখানে আমি বলব, বার্লিনের দেয়াল থেকে শুরু করে গাল্ফ যুদ্ধ পর্যন্ত ঘটনার আবর্ত আমাকে ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছে। তার কারণ আমি তাদের প্রত্যক্ষ সাক্ষী থেকেছি। … মিলেনিয়াম শেষ হওয়ার সময় আমার মনে হলো এইসব কথা আমি যদি এখন না ভাবি, যা ভাবছি তা যদি না বলি, তাহলে আমার অসততা করা হবে কবিতার কাছে।’ এই দায়বদ্ধ মানসিকতার প্রথম প্রকাশ আমরা লক্ষ করি আয়না যখন নিশ্বাস নেয়, রক্তমেঘের স্কন্দপুরাণ ইত্যাদি কাব্যগ্রন্থে। এই সকল কাব্যগ্রন্থে বারংবার এসেছে উদ্বাস্তু সমস্যা, শরণার্থীদের কথা, সোভিয়েত রাশিয়ার পতনের পরবর্তী সময়ে তৃতীয় বিশ্বে শক্তির ভারসাম্য সম্পর্কে কবির আন্তরিক উদ্বেগ ইত্যাদি। যেমন ‘শরণার্থীর আর্জি’। এই কবিতার সূচনা শরণার্থীদের নিরুপায়তা এবং দূতাবাসগুলির আশ্চর্য নিষ্ক্রিয়তার কথায়। তারপর এরই সূত্র ধরে ক্ষমতাতন্ত্রের নিষ্ঠুর চেহারাটি কবি তুলে ধরেছেন বক্রবাচনে : ‘এ শহরে আছে ন লক্ষ চোরা কুঠুরি চমৎকার/ সেসব গহনে আমাদের নিয়ে চলছে জবরখেলা/ দলাদলি থেকে মুক্ত একটা খেলোয়াড় খুঁজে তবু/ পথে পথে ঐ হন্যে ঘুরছে বিষণ্ন স্টেডিয়াম।’ এই কাব্যগ্রন্থের ‘জ্বরের কাঁথা’ কবিতায় সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির ‘তেল রাজনীতি’, অস্ত্রব্যবসা এবং এর বিপরীতে সাধারণ মানুষের অসহায়তার সত্য সংবেদী চিত্রকল্পে উৎকীর্ণ! এই কাব্যগ্রন্থেই আছে যুদ্ধবিষয়ে কয়েকটি ভগ্নাংশ। এর প্রথমটিতে তিনকোনা একটি ঘরের চিত্র অবকীর্ণ হয়েছে। সেই ঘরের একদিকে আছেন সর্বশক্তিমান আমেরিকান সেনাপতি যাঁর ‘ডেসকের কিনারে আনব্ধ একটা বোতাম’। সেই বোতামে চাপ দিলেই ‘একটার পর একটা স্কাড-রকেট ঝনঝন করে বেজে উঠে/ দূরদূরান্ত গ্রামগঞ্জের নিরপরাধ মানুষদের গুঁড়িয়ে দেবে।’ ঘরের অন্য কোণে বসে আছেন প্রতিষ্ঠাবান একজন লেখক। তাঁর কবিতায় এই নারকীয়তার সত্য উন্মোচিত হয় না। বাস্তবতা ভুলে তিনি তখন নিছক শব্দ-ব্যবসায়ী! এই প্রবল প্রতিমাকে আশ্রয় করে কবিতা পৌঁছে যায় তীক্ষ্ণ উপসংহারে : ‘আমাদের এই গ্রহের তিনকোনা ঘরে মগ্ন মুখোমুখি দুজন/ টেবিল-আততায়ীকে দ্যাখো।’
এই পর্যায়ের ৬নং কবিতাটিতে চারদিক ছাপিয়ে ওঠা যুদ্ধের আতঙ্ক, মৃত্যুর নীলত্রাস স্তম্ভিত হয়ে আছে : ‘মাকে বললাম তুমি রাতারাতি সমস্ত অভ্যেস/ বদলিয়ে ফেলো, চশমাটা কেন যেখানে-সেখানে রাখো/ অত অর্চনা করতে যেয়ো না কাক ডাকবারও আগে/ গেলে অন্তত মোজা পরে যেয়ো, হাতে রেখো দস্তানা/ শেফালির মুখে বারুদ এখন, মৃত্যু দূর্বাঘাসে।’ এই ধরনের কবিতা সংবেদী পাঠককে আতঙ্কে স্তব্ধ করে দেয়। রক্তমেঘের স্কন্দপুরাণ কাব্যগ্রন্থে দেখি গীতলতার শেষ প্রহর অস্তমিত। নগ্ন বাস্তব উৎকীর্ণ হয়েছে দৈনন্দিনতার ভাষায়। যেমন : ‘একটু আগেই এক পুরোহিত এল সালভাদরে/ গায়েব হলেন, তাঁর শরীরের একটি রক্তমাখা/ পালক নিয়ে মেহনরত মোহান্তেরা এখন/ দিগি¦দিকে মহান পুরুষ কাল মার্কসের নামে/ লেলিয়ে দিচ্ছে খচ্চরদের।’ এখানেই রয়েছে কাব্যগ্রন্থের সংলাপিকা ‘চতুর্থ আগুন’। কবি যে কবিতার নির্দিষ্টায়তন ছেড়ে নতুনতর দিকে এগোতে উৎকর্ণ এখানে তার ইঙ্গিত স্পষ্ট।
এই পর্যায় থেকেই দেখি অলোকরঞ্জনের ঈশ্বরবিশ্বাসের আয়তনটি টলমল হয়ে গেছে। এখন অনেকটাই অনীশ্বর তিনি। সমস্ত হৃদয় শুধু ভূকম্পপ্রবণ হয়ে আছে। কাব্যগ্রন্থের ‘ভাবমূর্তি’ কবিতায় স্পষ্টই বলেন : ‘একটু একটু অনীশ্বর হয়েছি/ প্রেতপিশাচের দল ডম্বরু বাজায় শর্বরীতে/ তথাপি যেহেতু কবে যৌবন বাউল লিখেছিলাম/ ঈশ্বরের কথা বলি, ভাবমূর্তিটুকু রেখে দিতে।’ এরপর অলোকরঞ্জন আরো বেশি করে সম্পৃক্ত হয়ে যান নিপীড়িত মানবভাগ্যের সঙ্গে। ক্ষমতাতন্ত্রের বিরুদ্ধে কবিতায় তুলে আনতে থাকেন প্রতিবাদের স্বর। সেখানে কখনো আসে ড্যামোক্লেসের ছোরার মিথ :
সেই যে তুমি একফোঁটা মসলিনে
বুনতেছিলে দামাস্কাসের গোলাপ
মাথার উপর তখনো ঝুলছিল
ড্যামোক্লেসের ছোরা।
(‘ড্যামোক্লেসের ছোরা’/ এখনও নামেনি, বন্ধু, নিউক্লিয়ার শীতের গোধূলি)
কখনো অলঙ্কারের গভীরে ফল্গুসঞ্চারী হয় প্রতিবাদের বারুদ :
যারা বলেছিল ঈশ্বর মৃত
এখন তারাই বলছে প্রোথিত
পুঁথি আর বইগুলি।
যারা বলেছিল মৃত ঈশ্বর
ধর্মের ভয়ে খুঁজছে শিকড়
তাবিজ আর মাদুলি।
(‘হাওয়া ঘুরে গেলে’, এখনও নামেনি, বন্ধু, নিউক্লিয়ার শীতের গোধূলি)
এরপর এসেছে নতুন শতক। আবারো অলোকরঞ্জনের কবিতার জঙ্গম প্রবাহে এসেছে নতুন বাঁক। শরণার্থী, উদ্বাস্তু সমস্যার প্রতি উদ্বেগের সঙ্গে পরিবেশের ভারসাম্যহীনতার জন্য উদ্বেগ সংহত হয়েছে তাঁর কবিতায়। তবে আসল পরিবর্তন এসেছে আঙ্গিকে। কবিতার আধুনিকতাবাদী ছাঁচটিকে ভেঙে কবিতার পরিসর বাড়ানোর বিপ্লবী সাধনায় তিনি ব্রতী হয়েছেন। সেই সাধনা ছিল আমৃত্যু অনির্বাণ। বিষয়টা একটু ভেঙেই বলি। জার্মান ভাষায় একটি শব্দ আছে : Weites Feld। এর অর্থ হলো প্রশস্ত মাঠ বা বিরাট এলাকা। এই এলাকা শিল্পের। অলোকরঞ্জন মনে করতেন, আজকের দিনে কবিতা ইত্যাদি কোনো শিল্পকেই কৌম আয়তনে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। সবাইকে সবার সঙ্গে মিলিয়ে দিতে হবে। এরকমটা বহুপূর্ব থেকে চলে আসছে জার্মানিতে। জার্মান ভাষায় তো এজন্যই বোধহয় একটি গোটা শব্দই আছে : Gesamtkunstwerk। এর অর্থ হলো সমগ্র শিল্পকর্ম। একটি শিল্পকে অন্য শিল্পশাখার সঙ্গে অন্বিত করে দেখার এষণা এই শব্দের মধ্যে অন্তঃশীল হয়ে আছে। ওবারামার্গাউ গ্রামে রবীন্দ্রনাথ যে-প্যাশন প্লে দেখে কোলাজধর্মী কবিতা রচনা করেছিলেন সেখানে সমন্বিত শিল্পের এই প্রণোদনাটি প্রচ্ছন্নসঞ্চারী ছিল। অলোকরঞ্জন একেই বলেছেন ‘সমবায়ী শিল্পের সাধনা’। এই সাধনাই তিনি সচেতনভাবে বিগত দুই দশক ধরে করে গেছেন। প্রণীত অগ্নি কাকে বলে তুমি জানো?, নিরীশ্বর পাখিদের উপাসনালয়ে, দোলায় আছে ছ’পণ কড়ি, এখন নভোনীল আমার তহবিল, তোমরা কী চাও শিউলি না টিউলিপ, ঝাউশিরীষের শীর্ষ সম্মেলনে, উদ্বাস্তুর পাহাড়তলি পর্যন্ত সকল কাব্যগ্রন্থে লক্ষগোচর হয় এই সাধনার অকুণ্ঠ এবং ধারাবাহিক প্রয়াস। যেমন ধরা যাক ‘নিরীশ্বর পাখিদের উপাসনালয়’ শীর্ষক কবিতাটির কথা। এখানে কবিতার মধ্যে বুনে দেন খ্রিষ্টান মিথকথা। সেই মিথকথার কেন্দ্রীয় চরিত্র সেন্ট ফ্রান্সিস। মনে হয় কবিতা নয় একটি সুডৌল গল্প পড়ছি। এই গল্পে ঢুকে পড়েছে নীতিকথামূলক প্রাচীন কথিকার ঢং। আখ্যানের শেষে ঈগলের তীক্ষ্ণ জিজ্ঞাসা নিয়ে আসে পষরসধী : ‘উনি কেন আমাদের/ সবাইকে বোন বলে করলেন এ হেন সম্ভাষণ!/ আমি কি পুরুষ নই?’ এখানে আখ্যানটির বিনির্মাণ ঘটে যায় অনায়াসে। আখ্যানের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসে এর ধ্বংসের বীজ। নারীবাদ এবং পুরুষতান্ত্রিকতার বিরদ্ধে যুগ্মকের সম্ভাবনা যে নিহিত ছিল সেন্ট ফ্রান্সিসের আখ্যানের অবকাঠামোয় তা পূর্বে কে জানত! গোধূলি পর্বে অলোকরঞ্জনের কবিতায় এইভাবে ঢুকে পড়েছে গল্পের আদল। মাথা তুলেছে নীতিকথা। কোথাও কবিতার আদলে কবি চেনা মানুষের স্মৃতিচারণায় প্রবৃত্ত হয়েছেন। প্রমথ চৌধুরী থেকে বুদ্ধদেব বসু, শহীদ কাদরী থেকে উমবের্তো একো কে নেই সেখানে? কখনো অনুবাদ করেছেন উপনিষদের গদ্যশ্লোক (যেমন ‘দেবীর জন্ম’)। কখনো কবিতার বইতে ঠাঁই পেয়েছে সংলাপিকা। কখনো কবিতার মধ্যে প্রবেশ করেছে পত্র। কখনো কবিতার আলম্বন বিভাব হয়েছে একটি ছবি কিংবা একটি সিনেমা। এসব দেখে আমার মধ্যে থাকা কবিতার সংজ্ঞার শিলায়তনখানি বারংবার নড়ে উঠেছে। তখন সমন্বিত শিল্পের বিষয়টি জানতাম না। একবার অলোকদাকে বলেও ফেলেছি অকপটে : ‘আপনার কবিতা আমাকে স্পর্শ করছে না। এসব কী লিখছেন!’ অশীতিপর কবি প্রশ্রয়ের সুরে স্মিত হেসে বলেছেন : ‘বেশ কথা। তোমার প্রশ্নবাণে আমি বিদ্ধ হলাম।’ বলে উনি আমাকে তাঁর সমবায়ী শিল্পের গরজে বইখানি পড়তে দেন। বইটি পড়ে আমার চোখ খুলে যায়। বুঝতে পারি এই সমালোচকের অশিক্ষিত ঔদ্ধত্যকে তিনি কী উদারতায় সহ্য করে তার অন্ধ চোখে কত সহজে জ্বালিয়ে দিলেন সত্যের আলো। দিলেন নতুন দারুচিনি দ্বীপের সন্ধান! আজ অকপটে বলি, এমন বিপ্লবী কবি সাম্প্রতিককালে বাংলায় কেউ আসেননি। ইমেজের তোয়াক্কা না করে এমন নির্মম নিরাসক্তি নিয়ে যিনি নিজের সৃষ্টিকে বারংবার ভাঙতে পারেন, যিনি সারাজীবন ধরে প্রথাভাঙার দুশ্চর সাধনায় মগ্ন থাকতে পারেন, তাঁর জন্য কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট নয়। অথচ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত তাঁর প্রাপ্য সম্মান জীবৎকালে পাননি। তাঁর সৃষ্টির মর্ম কজনেই বা বুঝলেন! আমাকে এক কৃতবিদ্য মানুষ বলেছিলেন :
অলোকরঞ্জন বাঙালির বিটোফেন। ওঁর কবিতায় লুকোনো সুর থাকে। ভারতীয় ক্ল্যাসিক গানের শিল্পীর মতো ওর কবিতার ভাঁজে আছে সূক্ষ্ম কারুকার্য। আজ বুঝতে পারি তাঁর কথার মর্ম। এরকম অলোকসামান্য কবির সৃষ্টির মূল্যায়ন করে তাই নিজেকে সম্মানিত বোধ করছি।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.