গল্পহীনতার রাতগুলি

প্রায়ই এমন ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন রাত্রিগুলি হাঁটতে থাকে। বড় বড় পাইপ … সড়ক থেকে অদূরে তার পাশেই ছাতাহীন জীর্ণ ঘর, এঁদো আঁশটে নর্দমার পাশেই শতছিন্ন কাপড় খাবলা খাওয়া মেঝেতে, তার ওপরই চিৎপাত পড়ে আছে গুগলু, পাশে কুকুরটা রাজকীয় হাই তুলছে, তার পাশেই একটা বাক্স, এর ভেতর থেকে সাপ এসে গুগলু যেনবা কোনো দেবতা তার কণ্ঠ পেঁচিয়ে মাঝেমধ্যে ঊর্ধ্বমুখী প্রাণচঞ্চল তারের মতো জিব বের করছে।

উড়ে আসে শকুন … ডানার শব্দে ঘুম ভাঙে গুগলুর।

আজো কেউ মরে নাই?

গুগলু বিরক্ত হয়, আমার বাপ মরলে আইসো, এর মধ্যে এই ঘরের আর কেউ মরলে তুই তার লাশে ঠোঁট দিলেও সাপের চৌদ্দগুষ্টি নিয়া আসব, তরে ধরতে।

উই আর ফ্রেন্ড! হা হা হাসে শকুন … তোমারে ক্ষেপানির জন্য বলি নাইলে মরার দেশে মড়ার অভাব আছে? বাবা-মা বাইরে, গুগলু বলে, যা ইচ্ছা করো। সাপ মাথা দোলায় কুকুর দাঁত কেলায়, মাছিরা আঁশটে পচার ওপর ঘুরে ঘুরে নাচে – উই আর ফ্রেন্ড।

বাতায়নের ঝালর পাশে সরিয়ে অভিজাত কক্ষে বসা নিঃসঙ্গ বিমর্ষ অসুস্থ কিশোরটির মধ্যে এই চিত্র গেঁথে যায়, তার বাবা-মাও বাইরে, বেশিরভাগ  সময় তারা বাইরেই থাকে। কিন্তু গুগলুদের স্বাধীনতার মধ্যে এখন যে হিল্লোলের কুচকাওয়াজ এর ঘরে তার ছিন্নমাত্র স্পর্শ করে না।

কিছুক্ষণ পরে নিচে হুড়মুড় শব্দ। এই যাঃ এসে গেছে ওরা, কিছু পরেই পার্টি শুরু হয়ে যাবে।

প্রাণ বাঁচাতে প্রায়ই কিশোর যা করে, আমূল গুগলুর মধ্যে ঢুকে পড়ে।

আবার শরীরটা ভারী লাগতেছে, কাঁচুমাচু কাপড় থেকে যেন বা দিগন্তের তরী বেয়ে ওপরে উঠে গুগলু। মনে হয় কোনো আত্মা ভর করছে।

আঁস্তাকুড় থেকে আজ রাক্ষসের মতো খাইছো, কুকুর বলে, আমার মুখ থাইক্যা মরা মুরগিটা নিয়াও টানাটানি করছ, এমন রাক্ষুসে খিদায় পেট ভইরা ঘুম দিলে শরীর তো ভারী হইবই।

বাপটা রাতে ফিরবে। মা’র ঠিক নাই। শব্দ পেলেই সবাইকে সরিয়ে গুগলু বোদাই মুখ নিয়ে বসে থাকবে।

শৈশব থেকেই মদখোর বাবাটার অত্যাচারে যখন পাগল পাগল গুগলু … একদা ফর্সা মা, জীবনের বিপাকে পড়ে শ্যাওলা পড়া গাল গুগলুর গায়ে লাগিয়ে শীর্ণ আঙুলে আছারি-বিছারি জাপটে খালি কেঁদেছে – পুত আমার। তুই-ই তো ভরসা। বড় হইলে তুই-ই তো এই দোজখ থাইক্যা আমারে উদ্ধার করবি। ধৈর্য ধর, শান্ত হ।

তখন গুগলুর চারপাশে যেনবা সারি সারি হাঙর-কুমির চক্কর খেত। ঘরে ছাদ ছিল তখন। ভীত গুগলু উপায়হীন ভয়ে মাকে ধরে থরথর কাঁপত।

বদমাশ সৎবাবাটার বিভিন্ন নারীর গর্ভ থেকে এবং গুগলুর মা’র পেট ফুঁড়ে বের হওয়া বাচ্চার মধ্যে সবগুলোই মেয়ে শিশু। অন্যদের খবর জানে না, কিন্তু তার সহোদরাদের মা’র ঘুমন্ত অবস্থায় বাপ কোথায় কোথায় যে ফেলে এসেছে, গুগলু জানে না।

প্রথমদিকে কষ্ট হলেও এইসবসহ নানা বিষয়ে মা’র বিলাপ ফ্যাচফেচে কান্না এখন ক্রমে ক্রমে অসহ্য ঠেকতে থাকে গুগলুর কাছে।

কিন্তু এক রাতে যখন গুগলু অকূল পাথারে খেই খাচ্ছে দেখে আচমকা ভেলকিতে মা উল্টি মেরেছে, লম্বা চুলের মুঠি ধরে যে-ই বাবা বরাবরের মতো মা-কে আছড়াতে যাবে, তক্ষুনিই মা ইয়া লম্বা পা দিয়ে মদ্যপ বাপটাকে এক্কেবারে টাল সামলে বলে, এইবার তোর বাপেরে আমি চুদি … আমার মা’র ইজ্জত গেলে তর বাপের যাইব না?

ওয়াও … হা! হা! সাবাশ। গুগলু এমন একটি কাণ্ডে আচমকা নিজচ্যুত হয়ে লাফ দিলো, হাততালি দিলে ঘোঁতঘোঁত করে দেয়াল খাবলে গুগলুকে ধরতে আসে বাপ। মা এক্কেবারে সাক্ষাৎ বাঘিনী হয়ে দা নিয়ে গুগলুকে সেদিন রক্ষা না করলে ব্যাটা তাকে দুমড়ে-মুচড়ে ভেঙে কী করত আল্ল­াহ জানে।

এরপর কী হয়, মা’র প্রতি বেহরম বাপটা তার সঙ্গে একটু হলেও হিসাব করে চলে, তার জমে থাকা রাগ ক্ষোভ ঘৃণা সব গুগলুর ওপর বর্ষিত হতে থাকে।

গুগলুকে বাঁচাবে মা?

সেদিন দেহ-মনে সাহস শক্তির ভায়াগ্রা খেয়ে আচমকা দস্যুরানী হয়ে ওঠা মা-ও তো বাইরে বাইরে থাকে, পুরুষদের সঙ্গে লড়াইয়ে মেতে স্টেশনে কুলিগিরি করেও কোনো অনির্ভর ভয়ে যে আহত গুগলুকে ওষুধ লাগিয়ে আদর করতে করতে বুকে টেনে বলে, ‘তুই আমার ব্যাটা, তুই জলদি বড় হ। তুই-ই তো আমার শেষ বয়সের লাঠিরে বাপ।’ গুগলু নিজেও জানে না।

এদিকে যন্ত্রণা সয়ে যেতে যেতে একটু করে বাড়তে থাকা গুগলু ধীরে ধীরে নিজের রূপান্তরণের প্রভাবে ঘর থেকে বেরোয়, শহরে এসে দিশেহারা হয়ে পড়া কিছু প্রাণীর বন্ধু হয়। গুগলুর সাহায্যে তারা বিভিন্ন গোপন স্থানে বাঁচার আশ্রয় পায়।

এর মধ্যেই কত যে ভোঁজভাজি চাঁদমারিময় কাণ্ড ঘটে! মা ইনিয়ে-বিনিয়ে দুঃখে নয়, যেন শখে কাঁদত, আমার সব মাইয়ার গালে তোর মতো রক্তরঙের লাল তিল। গর্ভেই তোর মতো ওগোর ভাগ্যে বেদনা লেখা আছিল, এরই লাইগ্যা … তখনই তাগোর বেদন রক্তচিহ্ন হইয়া পেটের মধ্যেই বুঝলি আমার গালেও কালা একটা তিল ছিল, এই সংসারে আইসা দেখ কেমুন লাল হয়া গেছে। এইটাই পাইছে ওরা। তোরাও …

একবার মা’র খোঁজে স্টেশনে গেছিল গুগলু … মাকে না পেয়ে উড়ালপাড়াল মন নিয়ে ফিরবে, দেখে মালগাড়ির ওয়াগনের পেছনে এক নারী কোনো না কোনো ব্যাটার সঙ্গে ব্লাউজের হুঁক খুলে লটরপটর করছে। দেহে কেমন যেন একটা তরঙ্গ বয়ে যায়। বিমূঢ় দাঁড়িয়ে থাকা গুগলুর সামনে মেয়েটি এসে দাঁড়ালে গুগলু তাজ্জব হয়ে দেখে, ওর গালে লাল তিল। মেয়েটিও সিগ্রেট টানা বন্ধ রেখে কিছুক্ষণ নির্নিমেষ তাকিয়ে থেকে তার হাতে বিশ টাকার নোট দিয়ে বলে, ভাই, বাড়ি যা, এইসব জিনিস দেখনের বয়স তর হয় নাই। তুই এইখানে আর আসিস না।

ভিড় অদৃশ্যে মেয়েটি মিলিয়ে গেলে আরো দুই সহোদরাকে দেখেছে, একজন ভিক্ষারত, একজন বুয়ার কাজ করে ফিরছে, লাল তিলমুখো ওদের সবার আচরণই তার সঙ্গে একই রকম ছিল।

সবচাইতে টাসকি খেয়েছিল সেদিন, যখন সে ফুল বিক্রেতা তার কিশোরী প্রেমিকার শরীর ঘেঁষে গাড়ি থেকে গাড়িতে ছুটছিল, আচমকা দেখে মা’র মুখের আদলের ফর্সা টুকটুকে এক মেয়ে গাড়িতে বসে মোবাইলে কীসব টিপছে। যানজটে আটকা ছিল গাড়ি, যুবতী মেয়েটি এর ফাঁকেই পাশে বসা মহিলাকে ‘মাম্মি’ সম্বোধনে কীসব বলছিল। মেয়েটি জানালার দিকে মুখ ঘোরাতেই ফের তাজ্জবে টানটান গুগলু … গালে রক্ততিল। গুগলুর দিকে তারও চোখ পড়ায় ত্রাহি দশা শুরু হয়, যেনবা জন্মের পরিচয়ে বিলোড়িত সত্তা থেকে গুগলুর দিকে এগিয়ে আসে হাত, ওষ্ঠ স্ফুরিত হয় জাস্ট, কিন্তু গাড়ি ছাড়তেই ভাইফাই কিছু না বলে সে সটান গুগলুর হাতে এক হাজার টাকা দিয়ে হাওয়া হয়ে যায়। সেই টাকাটাও টিকটিকির মতো পইপই আবিষ্কারে বাগিয়ে নিয়েছে বাপ। নিরন্তর জ্বলন্ত বলয়ে বাসরত গুগলুর জীবনে এখন নানারকম অভিজ্ঞতা বিবর্তনের মাঝে বিচিত্র প্রাপ্তিতে মুখর থাকে। কেবল বাপটা বাড়িতে এলে না? গুগলু ভাবতে চায় না। যা হোক এখন বাপের সঙ্গে তাল মিলিয়ে মা-ও মদখোর হয়ে পড়েছে। সাবাস! রাতে তাদের দুজনের বীভৎস খিস্তিখেউরসহ সমানে সমানে লড়াইয়ের সময়টায় গুগলু দাঁতে দাঁত চেপে টাসকি মারলেও ক্রমে ভেতরে স্বর্গীয় উল্লাস জমে, এরা নিজেরা যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে শেষমেশ ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়লে গুগলুর অস্তিত্ব বেঁচে যায়।

তারপরও আশৈশব বাপকে ডরানো গুগলুর হৃৎপিণ্ডে শুকনো রক্তের মতো জমে যাওয়া ভয়ের কারণে মদ্যপায়ী বাপের পায়ের শব্দ শুনলেই বুক কাঁপে। মা’র আগে সে চলে এলে খাবারদাবার নিয়ে বা যে-কোনো উছিলায় গুগলুর দেহে ঝাল না মিটিয়ে শুতে যায় না।

সিনেমায় দেখেছে, নায়ক দুঃখ ভুলতে মদ খায়। এ কোন জগতে বাস করে গুগলু? কোন মদ খায় তার বাপ-মা’তে যার মধ্যে পিশাচ ভর করে, আর ভেতরের গু-মুত না উগলে তাদের ঘুম হয় না? মা বরং প্রায়ই খুকি হয়ে যায়, সে তার স্বাভাবিক প্রবণতা ছাপিয়ে গুগলুর সামনে কাঁদে-হাসে, গুগলুর গালে চটাস চুমু খেয়ে আই লাভ ইউ বেটা, তু মেরা সাচ্চা পেয়ার হ্যায়, কাভি মুঝে ছোড়ো না বাপ …। কী কী সব যে বলে, লজ্জায় গুগলুর কাতুকুতু লাগে। বাংলা-হিন্দি সব ভাষাতেই মা’র তাকে ছেড়ে না যাওয়ার একটা দুর্মর আকুতির কারণেই গুগলু এখান থেকে কোথাও পালিয়ে যেতে পারে না। আর মা’টাও আজব, এই ব্যাটার সঙ্গেই মারপিট করে, রান্না করে খাওয়ায় কখনো কখনো, গুগলুকে শরমে-অস্বস্তিতে আধমরা করে দিয়ে এর সঙ্গেই মাঝরাতে সেক্স করে, কিন্তু এ-ব্যাটাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারে না। হাজার হইলেও তর বাপ। আর সব মাতারি ফালায়া আমার কাছেই ফির‌্যা আসে, এইটা কি আমার কম ইজ্জত?

ইজ্জত? হি হি … শকুনটা হাসতে থাকলে ধমক দেয় গুগলু … শকুনের মুখ তোর, সবকিছুতেই নষ্ট শব্দ … টিটকিরি, তা আজ কী খায়া আসলি? মুখ থেকে ভুরভুর গন্ধ বাইর হইতেছে?

এইবার যেন শকুনটাকে দুর্নিবার স্রোত ঠেলতে থাকে, এই শহরে আর না, ইট-পাত্থরে আর পচা মাংসে পেট গুলায়, গাছগাছালি নাই, আসমানে খালি ধোঁয়া, আমার দোস্তরা আমার খোঁজ পাইয়া কাইল পাক্কা ভোরে আমারে গেরামে নিতে আইবো, আমি গাঁজাপট্টিতে গিয়া আধঘুমে পইড়া থাকা মানুষের ওইখান থাইক্যা গাঁজা খাইছি।

গাঁজা? ক্যান, ফুর্তিতে?

না, তুমারে ছাইড়া যাওনের কষ্টে।

তখনই কুণ্ডলি পাকিয়ে কণ্ঠে বসে থাকা সাপটা নিচে নেমে এসে নড়েচড়ে মস্তক তোলে, আমারেও নিয়া চল ভাই। মাইনসের ডরে ডরে এই নগরে লুকানো দায়, প্রাণ আমার যায় যায়, গুগলুর এখন নিজেরে নিজেই বাঁচানির তাগদ হইছে, যখন অসহায় আছিল, তখনো ওর বদমাইশ বাপটারে কোনোদিন ছোবল দিতে দেয় নাই, এখন তো নিজেই ঘুইরা খাড়াইছে, দেহো না বাপের ব্যাপারে সিনা টান কইরা কেমনে কয়, এইটা আমার হিসাব, আমিই আদায় করমু, তো?

যা-ও যাও … গুগলু অভিমানে মুষড়ে ওঠে।

কুকুর আর মাছিগুলি গুগলুর চারপাশে চক্কর খায়, বেচারার আত্মায় আর কষ্ট দিয়ো না। আমরা তো আছিই তোমার সঙ্গে। একসময় দূর আসমানে সাপটাকে ঠোঁটে নিয়ে শকুনটা উড়াল দিলে কষ্ট হলে যে গুগলু গজরাত, গড়াগড়ি দিত মেঝেতে নিজেকে হালকা করতে, তার চোখে নিঃশব্দ জল জমে, না, সে বাপের আর একটি আঘাতের আঁচও সহ্য করবে না, আচমকা নির্ভার বোধ করে গুগলু উঠে দাঁড়ায়।

কিশোরটি উড়ে গিয়ে একাকী কক্ষে বসে জীবনের প্রথম কান্না বাদ দিয়ে ফুঁসতে থাকে, ডুপ্লেক্স অভিজাত বাড়ির আসবাব ছাপিয়ে তার নটঙ্গী টাইপের সৎমা যে-অবহেলায় মানসিক আঘাতে কিশোরকে দিনের পর দিন কঠিন নৈঃশব্দ্যের বেদনাতুর অসুখে ঠেলে দিয়ে বাবাকে কব্জা করে রেখেছে, সেই মহিলা আজো নিচে মদ্যপানের পার্টিতে মেতেছে, তাদের প্রতি এই প্রথম ঘৃণায় বমি উগলে আসে তার। বাবা প্রায়ই টাল হয়ে হয় নিজের অতলে তলিয়ে যায়, কিশোরের খোঁজও নেয় না, কখনো গুগলুর কাছে এসে তার বার্ধক্য ভয়ের দৈন্যের কথা জানায়, ইউ আর মাই অনলি ওয়ান সান, আমাকে তুমি ছাড়া কে দেখবে? তোমার ওপর আমার অনেক ভরসা … তার  প্রতিও আজ ন্যূনতম ফিলিংস বোধ করে না।

গূঢ় অন্তঃসার অত্যাশ্চর্য আলোকচ্ছটায় ঘরের জিনিসপত্র এসপার-ওসপার করে ক্রমশ সে শান্ত হয়ে আসে। পাশের ঘরের দুই সৎবোনের হি-হি শব্দ আজ তাকে কোনো কিছুর অনুভব দেয় না।

মা ফেরেনি।

নিজ আহ্লাদে বেসামাল বাপ যখন শূন্য হাঁড়িপাতিল দেখে … কুত্তা, শয়তানির ডিম … এইসব বলে বলে গুগলুর দিকে এগিয়ে আসে, আচমকা জোয়ান হয়ে ওঠা গুগলুর হাতে যেন লৌহ অঙ্কুশ এসে পড়ে, সটান দাঁড়িয়ে টালমাটাল বাপকে পিটিয়ে মাটিতে ফেলে যখন সে তার টুঁটি চেপে ধরেছে, হাউমাউ করতে করতে এগিয়ে আসা মা’র দিকে গুগলু এই প্রথম ঘৃণার চোখে তাকায়।

কিশোরটির মধ্যেও ভর করে যুবক সত্তা। সে ঘরের টাকাপয়সা পাসপোর্ট সব শার্ট-প্যান্টের মস্ত ফোকরে ঢুকিয়ে ঝিমুতে থাকা দারোয়ানকে ছাপিয়ে যখন মুক্তির আনন্দে খোলা রাস্তা ধরে ছুটতে শুরু করেছে, গুগলুও তখন চন্দ্ররাতের মস্ত আসমানের নিচে ঠিকানাহীন এক বিরাট আঁস্তাকুড়ের পাশে বসে কুকুর-মাছি আর মশাদের সঙ্গে হট্টগোলে মেতে উঠেছে।