ভূমিকা
কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন মানুষের জীবনযাত্রা, সংস্কৃতির নিদর্শন হলো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন। প্রত্নতত্ত্ব একটি নির্দিষ্ট সময় ও ভূখণ্ডে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত সব ধরনের সাংস্কৃতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক আলোচনার মাধ্যমে ইতিহাস রচনার সূত্রাদি তুলে ধরে। হিমালয়ের পাদদেশে বরেন্দ্র অঞ্চলের উত্তরে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও জেলা। ভ‚-অবস্থানগত বিবেচনায় বর্তমান বাংলাদেশের উত্তরের প্রত্যন্ত অঞ্চলের অবহেলিত জেলা হলেও বঙ্গবিজেতা মুহাম্মদ বখতিয়ার খিলজির (১২০৪-১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ) দ্বিতীয় রাজধানী দেবকোটের অতি সন্নিকটের একটি জনবহুল ও সমৃদ্ধ জনপদ ছিল এটি। ঠাকুরগাঁও জেলার সমতল ভূমি, নদী, নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু এ-অঞ্চলের জনপদ সৃষ্টিতে এবং সমৃদ্ধিতে সমান উপযোগী। তাই এ-জেলায় পাওয়া যায় যুগে যুগে গড়ে ওঠা মানুষের বসতির ইতিহাস আর প্রাচীন কীর্তিসমূহ। ঠাকুরগাঁও জেলার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম হলো বালিয়া ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ। মসজিদটি নিয়ে বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় কিছু লেখালেখি হলেও এটি নিয়ে এখন পর্যন্ত কোনো গবেষণা হয়নি। আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া-রচিত বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ গ্রন্থে ঠাকুরগাঁও জেলার কয়েকটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন বাংলাগড়, নেকমরদ ও গড়গ্রাম, গোরকুই কূপ, মন্দির ও শিলালিপি, জগদল ও ধর্মগড়, রাণীশংকৈল গড়, মাল দুয়ার, গোবিন্দনগর দুর্গ ও মন্দির, রামদাঁড়া, কোরমখান গড়, কোয়েলি বাজার গড়, মহলবাড়ি মসজিদ ও অন্যান্য ধ্বংসাবশেষ, গড় ভবানীপুর খোদ ও ভাতুরিয়া ইত্যাদি নিদর্শন সম্পর্কে উল্লেখ করা হলেও বালিয়া জামে মসজিদ নিয়ে কিছু লিপিবদ্ধ করা হয়নি। বাংলাদেশের এশিয়াটিক সোসাইটিক থেকে প্রকাশিত বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ (পঞ্চম খণ্ড) গ্রন্থটিতে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার গোবিন্দনগর মন্দির, জামালপুর জামে মসজিদ, কোরমখান গড়, বৃষমূর্তি, দেবীপুরের খুররম খাঁ পুকুর, গোবিন্দ জিউ মসজিদ প্রভৃতি প্রত্নতাত্ত্বিক প্রাচীন নিদর্শনের কথা উল্লেখ থাকলেও বালিয়া ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ সম্পর্কে কোনো তথ্য উল্লেখ করা হয়নি।
ঠাকুরগাঁও ফাউন্ডেশন কর্তৃক-প্রকাশিত ঠাকুরগাঁও পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থটিতে ঠাকুরগাঁও জেলার ২৬টি প্রতœতাত্তি¡ক নিদর্শনের কথা লিপিবদ্ধ করা হলেও বালিয়া মসজিদ নিয়ে কোনো তথ্য নেই। মো. সোহেল রানা-রচিত ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য গ্রন্থটিতে এ-জেলার প্রত্বতাত্ত্বিক নিদর্শন অধ্যায়টিতে ‘বালিয়া মসজিদ’ নামে সংক্ষেপে লেখা রয়েছে, যা বালিয়া জামে মসজিদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানার জন্য পর্যাপ্ত নয়। শাহানা ফেরদৌস-রচিত বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য গ্রন্থটিতে দিনাজপুর জেলার সূরা মসজিদ এবং পঞ্চগড় জেলার মির্জাপুর শাহি মসজিদের বর্ণনা লিপিবদ্ধ করা হলেও ঠাকুরগাঁও জেলার কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন সম্পর্কে কোনো তথ্য লিপিবদ্ধ করা হয়নি। বালিয়া জামে মসজিদটি বালিয়ার চৌধুরী পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অন্যতম ধারক ও বাহক। এ-মসজিদটি বালিয়ার চৌধুরী পরিবারের পাশাপাশি ঠাকুরগাঁও জেলার গৌরবময় ইতিহাসেরও স্বাক্ষর বহন করছে। ফলে এ-মসজিদ নিয়ে গবেষণার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
অবস্থান
ঠাকুরগাঁও জেলা সদর থেকে ১৭ কিলোমিটার দূরে বালিয়া গ্রামে বালিয়া মসজিদটি অবস্থিত। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা থেকে উত্তর-পূর্বদিকে বোদা পঞ্চগড় যাওয়ার পথে ভুল্লী বাজার থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে বালিয়া গ্রামের শাঠবন্দি এলাকায় মসজিদটির অবস্থান। অন্যদিকে ভুল্লী বাজার থেকে গড়েয়া হাট যাওয়ার পথে তুরুকপথা নামক বাজার থেকে তিন কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বালিয়া মসজিদ।
প্রচলিত উপকথা
বালিয়া মসজিদটি স্থানীয় জনগণের কাছে ‘জিনের মসজিদ’ নামে অধিক পরিচিতি। এ-মসজিদের নির্মাণ ইতিহাস নিয়ে অনেক ইতিহাস প্রচলিত রয়েছে। অনেকের মতে, কোনো এক অমাবস্যার রাতে জিন-পরীরা বালিয়া গ্রামের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার সময় গ্রামটি তাদের পছন্দ হয়। তারপর জিন-পরীরা মাটিতে নেমে আসে এবং মসজিদ নির্মাণ শুরু করে। মসজিদটি তৈরি করা হয়েছিল একরাতেই। জিন-পরীরা সারারাত জেগে এ-মসজিদটি নির্মাণ করে। অনেক কারুকার্যময় অলংকার ও পুরু দেয়াল তৈরি করতে করতে ভোর হয়ে যায়। ফলে মসজিদের গম্বুজ তৈরির কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যায় জিন-পরীরা। জিন-পরীরা মসজিদের কিছু অংশ তৈরি করেছে বলে মসজিদটি স্থানীয়দের কাছে ‘জিনের মসজিদ’ নামে পরিচিত। বর্তমানের বালিয়া মসজিদটি ২০০৫ সালের পূর্বে জঙ্গলে ঢাকা ছিল। কারো কারো মতে, পূর্বে এই মসজিদের পুকুরঘাটে বাঘ নাকি পানি খেত। পানি খেয়েই পাশের জঙ্গলে এক বিশাল গর্তে ঢুকে যেত। সঙ্গে কয়েকটা বাঘের বাচ্চাও ছিল। বাঘের সঙ্গে আবার অনেক খরগোশও বাস করত। চৌধুরী পরিবারের সদস্য আহমেদ কবীর তাঁর মামা আইনুদ্দীন আহম্মেদের (৮৬) (অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক, বোদা সরকারি পাইলট মডেল স্কুল) কাছে শুনেছিলেন, মসজিদ তৈরি শুরু হওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই প্রধান স্থপতি মারা যান এবং আরো কিছুদিন পর মসজিদের কাজ অসমাপ্ত রেখে মেহের বকস চৌধুরী মারা যান। এরপর এলাকায় গুজব ছড়ায় – মসজিদটি আল্লাহর কাছে কবুল হয়নি, তাই মসজিদ তৈরিতে এত বাধা। ফলে মসজিদটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল বাকির সঙ্গে সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে জানা যায়, মসজিদটির বয়স ১০৮-১১০ বছরের মতো। ২০০৫ সালের পূর্বে মসজিদটি জঙ্গলে পরিপূর্ণ এবং জায়গাটি উঁচু পিরামিড আকৃতির ছিল। এই মসজিদের পাশেই একটি ছোট ঘর তৈরি করে স্থানীয় মুসল্লিরা নামাজ আদায় করতেন।
২০০৫ সালে মসজিদটির সংস্কারকাজ শুরু হয়। পরবর্তীকালে ২০১০ সালে এখানে নামাজ আদায় শুরু হয়। মেহের বকস চৌধুরী তৈরি করেছেন বলে স্থানীয়ভাবে এটি চৌধুরী মসজিদ নামেও পরিচিত। এছাড়া ছোট বালিয়া গ্রামে স্থানীয়ভারে মসজিদটি ছোট বালিয়া মসজিদ নামে পরিচিত। ২০১০ সালে মসজিদটি সংস্কারের পর উদ্বোধনের সময় এলাকার জনগণের সর্বসম্মতিক্রমে মসজিদটির নামকরণ করা হয়, ‘বালিয়া ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ’। তখন থেকে মসজিদটি এ-নামেই পরিচিত হয়ে আসছে।
মসজিদ নির্মাণের ইতিহাস
বালিয়া মসজিদটি নির্মাণের সাল নিয়ে মতবিরোধ আছে। মসজিদের সামনে নির্মিত স্মৃতিফলকের গায়ে খোদাই করা আছে – মসজিদ নির্মাণ করা হয় ১৩১৭ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৯১০ সালে। আবার মসজিদের নির্মাতা মেহের বকস চৌধুরীর কবরে তাঁর মৃত্যুসাল উল্লেখ করা আছে ১৩১৭ বঙ্গাব্দ। তবে স্থানীয় মানুষ ও মেহের বকস চৌধুরীর আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে বালিয়া মসজিদের নির্মাণ কাজ শুরু হয় এবং মেহের বকসের মৃত্যুর সময়, অর্থাৎ ১৯১০ সালে মসজিদটির বেশিরভাগ কাজ শেষ হয়ে যায়। স্থানীয় ইতিহাস থেকে জানা যায়, মেহের বকস সরকারের পিতা ছিলেন রাজ-এ-মোহাম্মদ। তাঁদের আদি নিবাস ছিল ভারতের বিহারে। পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর মেহের বকসের দাদা সপরিবারে বিহার থেকে জলপাইগুড়ি চলে আসেন। পরে মেহের বকসের বাবা রাজা-এ-মোহাম্মদ ব্যবসা করার জন্য তৎকালীন বৃহত্তর দিনাজপুরের অন্যতম মহকুমা (বর্তমান জেলা) ঠাকুরগাঁওয়ে আসেন এবং স্থানীয়ভাবে বসবাস শুরু করেন। রাজ-এ-মোহাম্মদ খুব দ্রুতই ব্যবসার সমৃদ্ধি অর্জন করেন। স্থানীয় জমিদারের সঙ্গে সুসম্পর্কের ফলে
রাজ-এ-মোহাম্মদের ছেলে মেহের বকসের সঙ্গে তৎকালীন জমিদার তার কন্যা বিবি গুলমতি নেছার বিয়ে দেন। পরবর্তীকালে গুলমতি নেছা বাবার মৃত্যুর পর জমিদারির উত্তরাধিকারী হন। যদিও জমিদারি গুলমতি নেছার নামেই ছিল, কিন্তু কার্যত শাসন করতেন মেহের বকস। গুলমতি নেছা ব্রিটিশদের কাছে সময়মতো জমিদারি কর পৌঁছানোর জন্য চৌধুরাণী উপাধি লাভ করেন। মেহের বকস সরকারও সে-সূত্রে চৌধুরী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে ১৮৬০ সালের দিকে জমিদার মেহের বকস চৌধুরী বালিয়া গ্রামে একটি মসজিদ নির্মাণের পরিকল্পনা করেন। তাঁর আগ্রহেই তাঁর স্ত্রী গুলমতি চৌধুরাণী মসজিদ নির্মাণে এগিয়ে আসেন। মুঘল স্থাপত্যরীতি অনুযায়ী ডিজাইনকৃত এ-মসজিদটি নির্মাণের জন্য দিল্লির আগ্রা, মতান্তরে মুর্শিদাবাদ থেকে স্থপতি আনা হয়। মুঘল স্থাপত্যশৈলীর জটিল নকশার মসজিদটি নির্মাণ যেমন ছিল ব্যয়বহুল, তেমনি সময়সাপেক্ষ। হঠাৎ মসজিদ নির্মাণের প্রধান স্থপতির মৃত্যুর ফলে নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। মেহের বকস চৌধুরী স্থানীয় কারিগরদের সহায়তায় মসজিদটির কাজ পুনরায় শুরু করলেও স্থানীয় কারিগররা মসজিদের গম্বুজ তৈরি করতে ব্যর্থ হন। ১৯১০ সালে মেহের বকস চৌধুরী মারা গেলে পুনরায় মসজিদের নির্মাণকাজ বন্ধ হয়ে যায়। মেহের বকসের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর তার ছোট ছেলে মাসির উদ্দীন চৌধুরী মসজিদটি নির্মাণের জন্য পুনরায় কাজ শুরু করেন। কিন্তু তিনিও মসজিদের নির্মাণকাজ সমাপ্ত হওয়ার আগেই মারা যান। ফলে মসজিদটি দীর্ঘ প্রায় ১০০ বছর গম্বুজ ছাড়াই অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকে এবং মসজিদের চারপাশ জঙ্গলে পরিপূর্ণ হয়ে যায়। ফলে মসজিদটি লোকচক্ষুর আড়ালে চলে যায়। ২০০৫ সালে মেহের বকস চৌধুরীর ছেলে বসরত আলী চৌধুরীর কন্যা শিল্পপতি তাসরিফা খাতুনের পৃষ্ঠপোষকতায় এবং প্রত্নতত্ত্ব ইনস্টিটিউটের কারিগরি সহায়তায় গম্বুজের নকশা করেন স্থপতি সৈয়দ আবু সুফিয়ান কুশল এবং মসজিদটির সংস্কারকাজ তত্ত¡াবধান করেন শিল্পী কামরুজ্জামান স্বাধীন ও জাকিরুল হক চৌধুরী শাহেদ। মসজিদটি সংস্কারের সময় প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন ফিরোজ এম হাসান। ২০১০ সালে মসজিদটির সংস্কার কাজ শেষ হলে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
মসজিদের বর্ণনা
বালিয়া মসজিদের নির্মাণশৈলীর সঙ্গে মুঘল আমলের স্থাপনার সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়। তিন গম্বুজবিশিষ্ট এই মসজিদের নির্মাণশৈলী মনোমুগ্ধকর। মসজিদটিতে কোনো পিলার নেই। মসজিদটি সমতল ভ‚মি থেকে পাঁচ ফুট তিন ইঞ্চি উঁচু প্লাটফর্মের ওপর অবস্থিত। এর পূর্ব-পশ্চিমে ৬২ ফুট ছয় ইঞ্চি ও উত্তর-দক্ষিণে ৬৯ ফুট দুই ইঞ্চি আয়তাকার কমপ্লেক্স অবস্থিত। মূল ভবনটি পূর্ব-পশ্চিমে ২৫ ফুট ১১ ইঞ্চি প্রশস্ত। প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাদের উচ্চতা ১৭ ফুট। মসজিদের প্রধান ফটকের দৈর্ঘ্য ২১ ফুট এবং প্রস্থ নয় ফুট। বিশাল আকৃতির কারুকার্যমণ্ডিত সদর দরজাটি মসজিদের অন্যতম আকর্ষণ।
এর ছাদে একই সাইজের তিনটি গম্বুজ ও আটটি মিনার আছে। ছাদের চার কোণে অবিস্থত চারটি মিনারের আকৃতি বড় বড়, বাকি চারটি মিনার আকৃতিতে ছোট। ভিত্তিসহ পুরো মসজিদটিই হাতে পোড়ানো ইট, চুন-সুরকির মর্টার দিয়ে তৈরি। মসজিদের ইটে কোনো কাজ না থাকলেও দেয়ালের বিভিন্ন অংশে ইট কেটে ফুল, কলস, ডিস, ঘণ্টা, বাটি, আমলকী ইত্যাদি নকশা তৈরি করা হয়েছে। আয়তাকার কমপ্লেক্স সিঁড়িসহ প্রবেশপথ, খোলাচত্বর ও মূলভবন বা নামাজঘর এ-তিনটি অংশে বিভক্ত। মসজিদের ভেতরে প্রবেশদ্বার তিনটি। প্রতিটি দরজার ওপর খোদাই করে লেখা আছে ‘হিজরি ১৩২৭ সাল’। মসজিদের পশ্চিম পাশে ছোট একটি জানালা এবং উত্তর-দক্ষিণে একটি করে জানালা আছে। মসজিদের ভেতরে তিনটি কাতারে প্রায় ৩০০ জন একসঙ্গে নামাজ পড়া যায়।
ইতিহাস রচনার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান প্রত্নতত্ত্ব। যে-কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় সমসাময়িক ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের মাধ্যমে জানা যায় ওই এলাকার মানুষের জীবনযাপনের ধারা, আচার-ব্যবহার, পেশা, সংস্কৃতি প্রভৃতি। বরেন্দ্র অঞ্চলের অন্তর্গত বর্তমান ঠাকুরগাঁওয়ের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন অপেক্ষাকৃত কম। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য নিদর্শন হলো – বালিয়া ঐতিহ্যবাহী জামে মসজিদ। মেহের বকস চৌধুরীর শাসনামলে বালিয়ার যে জৌলুস ছিল তা কালের বিবর্তনে অনেকটাই হারিয়ে গেছে। বালিয়ার চৌধুরী পরিবারের এই ঐতিহ্যবাহী মসজিদটি তাদের পরিবারের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের চিহ্ন বহন করছে। মসজিদটি প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের অধিভুক্ত হলে সুন্দরভাবে সংরক্ষণের পাশাপাশি এর ঐতিহাসিক গুরুত্ব জাতির সামনে উন্মোচিত হবে বলে আশা করা যায়।
তথ্য-সহায়িকা
১. বেলাল রব্বানী, আমাদের প্রত্ননিদর্শন, ঠাকুরগাঁও পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য, ঠাকুরগাঁও ফাউন্ডেশন, সেপ্টেম্বর ২০০৫, পৃ ১৩৬।
২. আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া, বাংলাদেশের প্রত্নসম্পদ, দিব্যপ্রকাশ, ফেব্রুয়ারি ২০০৭, পৃ ৫৫।
৩. সিরাজুল ইসলাম (সম্পাদক), বাংলাপিডিয়া, বাংলাদেশের জাতীয় জ্ঞানকোষ (খণ্ড ৫), বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি, মার্চ ২০২৩, পৃ ২৮৩।
৪. ঠাকুরগাঁও ফাউন্ডেশন, ঠাকুরগাঁও পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐহিত্য, ঠাকুরগাঁও ফাউন্ডেশন, সেপ্টেম্বের ২০০৫,
পৃ ১৩৬-১৫৫।
৫. মো. রাসেল রানা, ঠাকুরগাঁও জেলার ইতিহাস ও ঐতিহ্য, অবসর প্রকাশনী, ডিসেম্বর ২০১৮, পৃ ১৬০-১৬৩।
৬. শাহানা ফেরদৌস, বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য, নীতিরীতি প্রকাশনী, ফেব্রুয়ারি ২০১৬ (তৃতীয় সংস্করণ), পৃ ৯৬।
৭. ‘ঠাকুরগাঁওয়ে এক রাতেই নির্মাণ হয়েছিল বালিয়া মসজিদ’, বাংলাদেশ জার্নাল, ১লা অক্টোবর ২০২৪।
৮. ‘বালিয়ার চৌধুরীদের মসজিদ’, কালের কণ্ঠ, ৫ই ডিসেম্বর ২০১৬।
৯. সাক্ষাৎকার : আহম্মেদ কবীর (৬৮), অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক, সালন্দর ডিগ্রি কলেজ, ভুল্লী, ঠাকুরগাঁও। সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ : নিজ বাসভবন, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪।
১০. সাক্ষাৎকার : আব্দুল বাকি (৭৪), পেশা কৃষি, গ্রাম বাবুপাড়, শুখানপুকুরি, ঠাকুরগাঁও। সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ : নিজ বাসভবন, ২৬শে ফেব্রুয়ারি ২০২১।
১১. বালিয়া মসজিদ, উইকিপিডিয়া, তথ্য সংগ্রহের তারিখ : ১০ই সেপ্টেম্বর ২০২৪।
১২. মসজিদের সামনে নির্মিত স্মৃতিফলক।
১৩. মেহের বকস চৌধুরীর কবরে খোদাইকৃত স্মৃতিফলক।
১৪. সাক্ষাৎকার : জাকিরুল হক চৌধুরী (৫০), সহকারী শিক্ষক, বোদা সরকারি পাইলট মডেল স্কুল। সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ : নিজ বাসভবন, ১৫ই অক্টোবর ২০২৪।
১৫. বালিয়া মসজিদ, উইকিপিডিয়া, তথ্য সংগ্রহের তারিখ : ১লা সেপ্টেম্বের ২০২৪।
১৬. ‘জিন মসজিদের কথা’, দৈনিক ইত্তেফাক, ২রা অক্টেবর ২০২০।
১৭. সাক্ষাৎকার : নূর আলম (৫০), সহকারী শিক্ষক, সালন্দর আলিয়া মাদ্রাসা, ঠাকুরগাঁও। সাক্ষাৎকার গ্রহণের স্থান ও তারিখ : নিজ বাসভবন, ১লা জুন ২০২৪।
১৮. ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মসজিদ, Bangla Tribune, তথ্য সংগ্রহের তারিখ : ২রা সেপ্টেম্বর ২০২৪।
১৯. ‘ঠাকুরগাঁওয়ের ঐতিহ্যবাহী বালিয়া মসজিদ’, প্রথম আলো, ১০ই মার্চ ২০২৩
২০. ‘ঐতিহাসিক বালিয়া মসজিদ’, প্রতিদিনের সংবাদ, ১১ই এপ্রিল ২০২৩।
২১. Mosque is one of the Distingusihed archaeological Landmarks in Thakurgaon, THE ASIAN AGE, 17 October 2024.
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.