তিনি ২ কিংবা চক্রান্ত

কার্তিক লাহিড়ী

 

ইদানীং তিনি ঘন ঘন জেগে উঠছেন দুঃস্বপ্ন দেখে, জেগে উঠে অবাক হচ্ছেন খুব, কেননা এখন তো সব ঠিকঠাক চলছে, ঠিকঠাকের চেয়ে হাজার হাজার গুণ বেশি মসৃণভাবে, নিজের বিচার অনুযায়ী এরই মধ্যে তিনি নাইনটি নাইন পারসেন্ট কাজ শেষ করে ফেলেছেন, বাকি এক পারসেন্ট কাছ তুড়ি মেরে শেষ করে ফেলবেন যে-কোনো মুহূর্তে, সকলে অবাক হয়ে যাচ্ছে তাঁর কর্মক্ষমতা দেখে, যেখানে তিনি হাত দিচ্ছেন সোনা ফলে উঠছে, তাই

মানুষের মুখে কথা নেই আর, দিকে দিকে ছড়িয়ে আছে ফেস্টুন, ব্যানার তাঁর ছবি সংবলিত – সেই হাসি যা কিনা ফিসফিসিয়ে গোপনে দুর্মুখরা বলে – হাফ্ ইডিয়টিক-হাফ্ নিউরোটিক, প্রকাশ্যে বলার হিম্মত নেই কারো, সামান্য টুঁ-ফাঁ করলে দেখতে হবে না আর, সোজা যেতে হবে হাজতে এটা সেটা যে কোনো কারণে যা সে ভাবতেই পারে নি, পারে না কখনো, তিনি নিশ্চিন্ত,

অথচ একের পর এক দুঃস্বপ্ন দেখছেন যখন-তখন

কেন, কেন, উত্তেজিত হয়ে উত্তর খুঁজতে থাকেন, কিন্তু কে উত্তর দেবে, কোথা থেকে পাবেন উত্তর – কখন, কোন সময়, উত্তেজিত হয়ে তিনি অন্বেষণ-পর্দার আলো জ্বালেন

সবুজ আলোয় ভরে গেল পর্দা, কোথাও কোনো লেখা ফুটে উঠল না, তা দেখে স্বস্তির শ্বাস ফেলেন তিনি, তার মানে মিছিমিছি উদ্বিগ্ন হচ্ছিল, সবই ঠিকঠাক চলছে, কোথাও অশান্তির লেশমাত্র নেই, অর্থাৎ

সহচর সহকারী খোচর আরক্ষ গুপ্তবাহিনী যে-খবর পাঠাচ্ছে শতকরা তা একশ ভাগ কাঁটায় কাঁটায় ঠিক, তার মানে কেউ খুলছে না মুখ, তার দাপটে সব ভয়ে সিঁটিয়ে আছে, অথচ তিনি মাত্র            তিন-চারটে নমুনা রেখেছেন জনসাধারণের সামনে, এক

জনৈক মহাবীর পাল নামে এক কার্টুনিস্ট শেষ নৈশভোজের এক কার্টুন অাঁকে এবং তা পোস্ট করে দেয় ফেসবুকে, চিত্র-বিশেষজ্ঞ গুপ্ত বিভাগে জানালেন, নৈশভোজের মধ্যমণিকে যেন তাঁর মতো দেখাচ্ছে, কথা কানে যেতেই সঙ্গে সঙ্গে শিল্পীকে অ্যারেস্ট করার আদেশ দিলেন, মহাবীর জামিন-অযোগ্য ধারায় এখন জেলে পচে মরছে

দুই. সভায় বক্তৃতা দিচ্ছিলেন, সেই সময় একজন ফিসফিসিয়ে কিছু বলছিল তার পাশের জনকে, নজরে পড়ামাত্র চোখের ইশারায় দেহরক্ষী তাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেদম প্রহার করে, আহত এখন সে হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে যুদ্ধ করছে

তিন. তাঁর আবক্ষ ছবিসমেত তিনটে প্ল্যাকার্ড কে বা কারা বিকৃত করলে সেই এলাকায় ধার্য হয় পিটুনি কর

এ রকম কিছু পদক্ষেপ নেওয়ার ফলে কেউ টুঁ-শব্দ করতে সাহস পায় না, সামনে অন্যায় দেখেও প্রতিবাদ করতে ভরসা পায় না, মুখে কুলুপ এঁটে থাকে, শত বিপদেও রা কাড়ে না, এদিকে গুপ্তবাহিনী খোচর আরক্ষা সমানে খবর পাঠাতে থাকে – চারদিকে শান্তি বিরাজ করছে, উন্নয়নের ফসলে সকলে এতই উপকৃত যে, তারা ঘরে বসেই তার ফল পেতে পেতে নিশ্চুপ হয়ে যাচ্ছে, একসময় তাঁর বিশাল অর্থাৎ জায়েন্ট পর্দায় ভেসে ওঠে – ভয়ে সকলে সেঁধিয়ে গেছে, একেবারে কেঁচো হয়ে গেছে যাকে বলে, দেখে

তিনি খুশি হলেন-খুশি হচ্ছেন, এই তিনি চেয়েছিলেন এবং চান, ভয়ে কেঁচো! অনেক অনেকদিন বাদে তা আওড়ে মনে মনে হেসেছিলেন খুব, আর অবাক কান্ড কয়েকদিন স্বপ্নও দেখেন রাশি রাশি কেঁচোর, অথচ

সেদিন এ কি দেখলেন তিনি! রাশি রাশি কেঁচো উঠে আসছে, তাকে ঘিরে ধরছে, তিনি ঝটকা মেরে সরিয়ে দিচ্ছেন তাদের, ঝটকা মারছেন আর কেঁচোরা পড়ে যাচ্ছে মাটিতে, হঠাৎ একি দেখছেন? কেঁচোগুলো পড়ে যাচ্ছে, আর ওই ফাঁক দিয়ে সাপ উঠে আসছে, সাপ সব এগিয়ে আসছে, পিছু হটছেন তিনি, হটতে হটতে খাদের কিনারায় চলে এসেছেন, আর একটু হলে…

এই স্বপ্ন কেন দেখলেন তিনি, ভেবে কূল-কিনারা পান না,               এ-স্বপ্নের মানে কি? তবে কি শত্রু কোথাও আত্মগোপন করে আছে? তিনি বা তাঁর সহচরদের কেউ তা জানতে দেখতে পারছেন না? সাপ কিসের প্রতীক? কোনো ভয়াবহ সর্বনাশের, নাকি উর্বরতার? মনোবিদকে জিজ্ঞেস করতে হবে

মনোবিদকে ডাকবো কি? ইতস্তত করতে থাকেন, ডাকলেই তো জানাজানি হয়ে যাবে, মনোবিদরা মনের অাঁতের কথা টেনে বার করে, তা বার করলে তো এক কেলেঙ্কারিই হয়ে যাবে, অবশ্য আমি নিজেই জানি না আমার মনের গভীরে কী লুকিয়ে আছে, মনোবিদ যদি সেটা টেনে বের করে, মানে, তবে আমার দুর্বলতা সে জেনে ফেলবে, আর যতই মানা করি না কেন, সেসব কথা এ-কান থেকে সে-কান হয়ে একদিন সববাই জেনে যাবে আমার গূঢ় কথা সব, নাহ! সেটা সম্ভব নয়, তাহলে

দীর্ঘশ্বাস পড়ে হতাশায়, সেই নিঃশ্বাসের শব্দ শুনে তৎক্ষণাৎ চাঙ্গা হয়ে ওঠেন, সামান্যতম দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়, সেই দুর্বলতা বাড়তে বাড়তে সব চিন্তা-ভাবনাকে গ্যারেজে পাঠিয়ে দেবে, ভেবে বেশ চঞ্চল হয়ে পড়েন এবং উত্তেজিত, কিন্তু এটা উত্তেজনার সময় নয়, উত্তেজনার মাথায় কাজ করলে সব পন্ড হয়ে যাবে, অতএব তিনি শান্ত হতে চেষ্টা করলেন, এ-সময় শান্ত থাকার সময়, এবং

তিনি শান্ত থাকতে চেষ্টা করছেন, কিন্তু যতই ভাবছেন শান্ত থাকব শান্ত থাকব ততই অশান্ত হয়ে পড়ছেন – কেবলই অশান্ত, অথচ কোথাও কোনো ঝগড়াঝাঁটি মারামারি দাঙ্গা-হাঙ্গামা নেই, রোজই রিপোর্ট জানাতো, চারদিকে শান্তি বিরাজ করছে, অশান্তির ছিটেফোঁটাও কোথাও নেই, বরং এত শান্তি-শান্ত পরিবেশ কখনো দেখা দেয় নি। এ-তল্লাটে, সবই তাঁর অবদান, আর

তিনি আদেশ দিলেন তথ্যচিত্র সংস্কৃতি বিভাগের প্রধানকে এই শান্তির তথ্যচিত্র নির্মাণ করে ব্যাপক প্রচার করতে : শান্তি আছে মানে বিক্ষোভ নেই, মানুষজন খেয়ে-পরে বাঁচছে ঠিকঠাক, উন্নয়নের গতি সমৃদ্ধির রাস্তায় চলছে, মানুষজন আনন্দে উৎসবে মেতে আছে, কোথাও অভাব নেই কোনো, মুখ বুজে কাজ করে চলেছে যে যার জায়গায়, এবং তারা খুশিতে আছে, খুশি হচ্ছে…

মুখে তিনি কিছুই বললেন না, ঠারে-ঠোরে ইঙ্গিত-ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন তথ্যচিত্রটিতে কী থাকবে এবং কী বাদ যাবে, চিত্রনির্মাতা কলাকুশলীদের বুঝিয়ে দিলেন চোখের ভাষায়, আর তিনি খুশি হলেন – হাঁ, এই-ই…

তবু মন শান্ত হচ্ছে না, ছটফট করছে –  কেন কী জন্য, বুঝতে পারছেন না কিছুতেই, একটা কিছু করার জন্য কি? ছটফট করতে করতে হঠাৎ ঘেমে পড়েন, আচ্ছা, ঘনশ্যামকে কাজে লাগালে হয় না? ও তো একজন দমদার প্রযোজক, একের পর এক ছবি করে যাচ্ছে, কয়েকটা স্টুডিও আর চ্যানেলের মালিক, কত কত স্টার ওর আন্ডারে কাছ করে, ওকে বললেই তো হয়… স্টারদের জুটিয়ে আনবে আমার প্রচারে! ভাবতেই খুশিতে উছলে ওঠেন, হ্যাঁ, পাবলিক ওদের দেখার জন্য হেঁদিয়ে মরে, নামিদামিদের আনলে তো কথাই নেই, তাছাড়া খুচরো রেজগি যারা এক-দুবার পর্দায় মুখ দেখিয়েছে তাদের সম্বন্ধে পাবলিকের আগ্রহের অন্ত নেই, হাঁ হাঁ ওদের কাজে লাগাতে হবে, ঘনশ্যাম মুঠোয় আছে, আর ওরা আছে ওর মুঠোয়, অতএব…

কিন্তু, থামলেন তিনি, এখনি বিনোদনীদের কাজে লাগানো কি ঠিক হবে? ইলেকশনের বেশ বাকি আছে, এখন ওদের চোখের সামনে আনলে…, ভাবতে পারলেন না আর, আপাতত মুলতবি রাখলেন পরিকল্পনাটি, তাহলে

যতই নতুন কিছু করার কথা ভাবছেন, দুঃস্বপ্নের বিষয় কাছছাড়া হতে চাইছে না, সকলে কি দুঃস্বপ্ন দেখে? হয়তো দেখে, কিন্তু এত ঘন ঘন! সেদিন আবার দেখলেন – হঠাৎ

মেঝে থেকে পিলপিলিয়ে ডেয়ো পিঁপড়ে সব পা বেয়ে সারা শরীরে, ছড়িয়ে পড়ে কামড়াতে শুরু করে, সেই কামড়ে জ্বালা ধরতে থাকে, বিষের জ্বালা যেন – চোখ-মুখ-নাক-কান-বুক সব বিষে বিষে জর্জরিত হয়ে নীল হয়ে যাচ্ছে, আর তার শরীর নীল হতে হতে নিথর হয়ে যাচ্ছে, আর করার কিছু নেই, পিঁপড়েরা তাকে ঘিরে ধরেছে, পালানোর পথ নেই, আমাকে বাঁচাও কে আছো, কিন্তু কথা স্ফুট হয় না, ঘুম ভেঙে যায় অথচ…

নাকি তন্দ্রাচ্ছন্ন ছিলেন? জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছিলেন তবে? দিবাস্বপ্ন। মনে পড়তেই খুশিতে উছলে ওঠেন, কারণ দিবাস্বপ্ন মানে তো অলীক কল্পনা, অলীক মানে অমূলক অসার অবাস্তব মিথ্যে, তার মানে এতদিন যে দুঃস্বপ্ন সব দেখছিলাম তা সব তন্দ্রাচ্ছন্ন অবস্থায় আধো জেগে জেগে দেখেছি, তার মানে তার মানে…

খুশিতে নেচে উঠবেন যেন, মাথা থেকে লাখ লাখ মণ ভয় দুশ্চিন্তার বোঝা নেমে গেল এক ঝটকায়, তিনি খুশিতে ডেকে পাঠাচ্ছেন তার একান্ত সচিব, প্রধান সচিব, অর্থ-উপদেষ্টা, আরক্ষাপ্রধান সকলকে, ঘরে তারা পা দিয়েছে কি দেয়নি, ঘোষণা করলেন তিনি :

পাঁচশো টাকা বিনোদনবৃত্তি সকলের জন্য মঞ্জুর করলাম এই মাসে খুশিতে থাকার জন্য

তাঁর এই হঠাৎ ঘোষণায় উপস্থিত সকলে চমকে ওঠে, এর মানে কী? বিনোদনবৃত্তিই বা কি, মহার্ঘ্যভাতা দুর্মূল্যভাতা ইত্যাদি ভাতার কথা জানা ছিল, কিন্তু বিনোদনবৃত্তি? আর সকলের মানে কী? সরকারি-বেসরকারি সাধারণ মানুষ বেকার, নাকি

অর্থসচিব এবং উপদেষ্টা মনে মনে তল্লাশি চালিয়েও ঠিক করতে পারছেন না তহবিলের কোন ‘হেড’ বা খাত থেকে টাকাটা মঞ্জুর করা যাবে, প্রধান সচিব একান্ত সচিবও ভেবে পাচ্ছেন না, এটা ভাতা নাকি…, তবু

সাহস করে জিজ্ঞেস করতে পারছে না তাঁকে, জিজ্ঞেস করলে যদি রেগে যান, আর রেগে গেলে কথা নেই, সঙ্গে সঙ্গে বাধ্যতামূলক অকেজো করে দেবেন, নইলে লম্বা ছুটি নিতে বলবেন, অতএব

নিশ্চুপ হয়ে থাকা, বোবার শত্রু নেই কোনো, কিন্তু

প্রশাসনের উচ্চকর্তাদের কপালে ভাঁজের পর ভাঁজ পড়তে থাকে, চুল লোম সব খাড়া, আর অসহায়তা, কোন খাতে যাবে এই বিনোদনবৃত্তি, এতদিন এ-খাত থেকে সে-খাতে টাকা নিয়ে নানা বিনোদন খেলাধুলো মঠ মসজিদ ইত্যাদি ইত্যাদি টাকা গেছে সরকারি কোষাগার থেকে, সরকারি তহবিল তলানিতে এসে ঠেকেছে, বাজারে ধার হয়েছে প্রচুর, তাহলে?

প্রশাসনিক কর্তাদের মাথার চুল ছিঁড়তে শুধু বাকি, এরই মধ্যে তিনি ডেকেছেন সভা, যেখানে উদ্বোধন হবে অন্যান্য প্রকল্পের সঙ্গে বিনোদনবৃত্তির সূচনার শুভ-অনুষ্ঠান, এসব অনুষ্ঠানও উদ্বোধনের প্রচুর প্রস্ত্ততির দরকার, প্রথমত

সভামঞ্চ তৈরি করা, সঙ্গে শ্রোতাদের বসার জায়গা ও মাথার ওপর আচ্ছাদনের ব্যবস্থা করা, তার জন্য ডেকোরেটরকে বরাত দেওয়া

দ্বিতীয়ত, মঞ্চ ও সভাকক্ষের ভিতরে ও বাইরে মাইকের ব্যবস্থা করা

তৃতীয়ত, আগত ভিআইপিদের গাড়ি রাখার জায়গা              পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা

চতুর্থত, আরক্ষা বাহিনীকে তাঁর সুরক্ষার জন্য কোন কোন দিকে ও মঞ্চে, দর্শকদের মধ্যে কতজনকে পোশাকে ও বিনা পোশাকে মোতায়েন করা হবে, তা নিয়ে শলাপরামর্শ করা

পঞ্চমত, কিছু ভলান্টিয়ার ঠিক করা, একেবারে শেষে

চা-চাপাটির (টি অ্যান্ড স্যানক্স) ব্যবস্থা করা। এ এক বিষম ব্যাপার, খুব কম হলেও চা-র সঙ্গে অন্তত দুটো করে বিস্কুট দিতে হবে, কিন্তু প্রশ্ন – কতজনের জন্য চা-বিস্কুটের বন্দোবস্ত করতে হবে, একশ দুশো না তার চেয়েও বেশি, সবার ওপরে মঞ্চ বাঁধা থেকে শুরু করে শেষে আপ্যায়নের জন্য যে-খরচ তা দেবে কে, কোন ডিপার্টমেন্ট কোন খাতে? শেষে কি যে আধিকারীকরা অনুষ্ঠানটি দেখভাল করছেন তাদের পকেট থেকে যাবে? এবং তিনি কাউকে অর্থাৎ কোনো কন্ট্রাক্টারকে ধরবেন পুরোটার জন্য? যাইহোক

তিনি এ-সম্বন্ধে মাথা ঘামান না, তিনি জানেন যার বা যাদের ওপর ভার দেওয়া আছে, সব ম্যানেজ করে নেবে তারা, অনুষ্ঠানের কথা জানালেও এখনো দিনক্ষণ ঠিক হয় নি, তবে তিনি ঠারে-ঠোরে জানিয়ে দিয়েছেন বিশাল জমায়েত করতে হবে, ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড, ব্যানারে তাঁর দাঁড়িয়ে থাকা ছবি আবক্ষ ছবি হাতজোড় অবস্থায় কিংবা আকাশের দিকে হাত তোলা অবস্থায় ভরে দিতে হবে, দিকে দিকে লাগাতে হবে বিনোদনবৃত্তির গুণগান গেয়ে ছোট-বড় নানা অক্ষরের লেখা সব, সচিব ও দলীয় কর্মীদের ওপর এসব কাজের দায়িত্ব দিয়ে চুপচাপ বসে নেই তিনি, বিরাট পর্দায় নানা               আদেশ-উপদেশ দিয়ে তদারকি করে চলেন, ঘুম নেই চোখে, একটা মৃদু উত্তেজনা রক্তের গভীরে টের পান, সেই উত্তেজনা যত তীব্র হচ্ছে তত ছটফট করতে থাকেন, অবাক কান্ড

দেখতে থাকেন একের পর এক স্বপ্ন :

সারা শরীর বেয়ে হেঁটে বেড়াচ্ছে কেঁচো সব, তাদের হিমহিম ছোঁয়ায় ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে শরীর, আর হঠাৎ-ই এক তীব্র দংশন, কেঁচোর দঙ্গল থেকে সাপ উঠে এসে বসিয়ে দিয়েছে কামড়, শরীরে জ্বালা, নীল হয়ে যাচ্ছে, মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বেরুতে শুরু করেছে, ধড়াস করে মাটিতে শুয়ে পড়ছেন, হঠাৎ কোথা থেকে মুখোশধারী কয়েকজন তুলে নিয়ে শুইয়ে দিচ্ছে তারই ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড পোস্টারে সাজানো মান্দাসে, আর সে…

অন্ধকার হিমশীতল ঘর, বিছানাও বরফের মতো ঠান্ডা, দরজা জানালা বন্ধ, হঠাৎ বন্ধ জানালা ভেদ করে হাড়ের মতো শুকনো এক লম্বা হাত এসে টিপে ধরছে গলা, সারা শরীর ছটফট করতে করতে নিথর হয়ে যাচ্ছে…

অনেকদিন পর ঘুম গাঢ় হচ্ছে, সেই ঘুমের মধ্যে নিঃশব্দে দরজা খুলে যাচ্ছে, আর চুপি চুপি এসে ঢুকছে একজন। এসেই জলের গেলাসে মিলিয়ে দিচ্ছে সাদামতো পাউডার, আর তিনি ঘুমচোখে সেই গেলাস থেকে ঢোকঢোক করে জল খেয়ে ফেলছেন, তারপরই ব্যস্…

ধড়মড়িয়ে উঠে বসেন প্রত্যেকবার, আর ভাবতে থাকেন, কূলকিনারা পান না এইসব স্বপ্নের মানের, শুধু আমাকে মেরে ফেলার স্বপ্ন?

কেন? কেন? তবে কি একটা চক্রান্ত আমাকে মেরে ফেলার? স্বপ্নের মধ্যে তাই…

সভায় হাজির হতেই জয়ধ্বনি উঠতে থাকে, সেই জয়ধ্বনির তোড়ে যেন ভেসে যাবেন তিনি, সেই ভাসন্ত অবস্থায় বলে ওঠেন :

একটা চক্রান্ত, চক্রান্ত হচ্ছে আমাকে মেরে ফেলার। রোজ রোজ তাই দুঃস্বপ্ন পাঠিয়ে পাঠিয়ে আমাকে কাবু করা হচ্ছে, কারা পাঠাচ্ছে এইসব দুঃস্বপ্ন, চক্রান্ত, আমি জানি বিরাট এক চক্রান্ত হচ্ছে আমাকে নিকেশ করার, তাই পাঠাচ্ছে দুঃস্বপ্ন সব, কিন্তু…

ততক্ষণে শ্রোতৃমন্ডলী বিমূঢ় হয়ে পড়ছে, কেউ বলতে পারছে না, এটা অসম্ভব, দুঃস্বপ্ন কখনো পাঠানো যায় না, তবু

বলতে পারছে না, চক্রান্ত চক্রান্ত শুনতে শুনতে শ্রোতারাও চক্রান্তের জালে জড়িয়ে পড়তে থাকে, তখন এ-ও সম্ভব, দুঃস্বপ্ন পাঠিয়ে পাঠিয়ে তাঁকে নাশ করার চক্রান্ত চলছে – ভাবনাটা মনে গেঁথে যেতে থাকে, আর তারা চক্রান্ত চক্রান্ত শুনতে শুনতে নিজেরাও মনে মনে জপ করতে থাকে – চক্রান্ত চক্রান্ত…