হুমায়ুন আজাদ
পরিত্যক্ত কক্ষ
দুঃখ পেয়ো না, কষ্ট পেয়ো না হে জীর্ণ
পরিত্যক্ত কক্ষ, শান্ত হও, অধৈর্য হোয়ো না।
একটা সময় ছিল যখন দরোজা ঠেলে
ঢোকে নি ভেতরে সে, একটা সময় ছিলো
যখন পায়ের শব্দে তার শিউরে ওঠো নি তুমি,
একটা সময় ছিলো তুমি তার সুগন্ধ পাও নি।
তারপর তুমি তাকে পেয়েছিলে, এটাই কি
তোমার জন্যে যথেষ্ট জীবন নয়? – নয়??
কেনো কষ্ট পাও, কেনো হাহাকার করো?
তুমি তার পদশব্দ শুনতে চাও? তার কণ্ঠস্বরে
কেঁপে কেঁপে উঠতে চাও? চিরবসন্ত চাও
তুমি তোমার আসবাবপত্রে? তুমি চাও
প্রতিটি চেয়ারে আগের মতোই ফুটবে
গুচ্ছ গুচ্ছ ফুল, আঙিনা ভ’রে থাকবে বকুলে?
শান্ত হও, হাহাকার কোরো না, জীর্ণ কুটির।
তুমি শুধু স্বপ্নে থাকো, ঘোরে থাকো, দেখবে আবার
তার পায়ের শব্দে শিউরে উঠছো তুমি,
দেখবে তুমি, তার শাখা থেকে ফুল ঝ’রে
ভ’রে গেছে তোমার আঙিনা।
লবঙ্গের সুগন্ধ
বহুদিন পর ঘরে ঢুকে থমকে দাঁড়াই।
কিসের সুগন্ধ স্থির হয়ে আছে এই কক্ষে
প্রাচীন স্মৃতির মতো? বুক ভ’রে ঘ্রাণ নিই,
লবঙ্গের বিষণ্ণ গন্ধে ভরে ওঠে বুক, মাংসকোষ
হাহাকার ক’রে ওঠে। এখানে কখন ভালো
লেগেছিল সুগন্ধী লবঙ্গতরু, লবঙ্গের ডালে
ফুল ফুটে কখন এ-ঘর ভ’রে উঠেছিলো
গন্ধে আর রূপে? কোথায় লবঙ্গতরু আজ?
প্রাণপণে ঘ্রাণ নিই, কিন্তু ঘ্রাণ বাতাসে মিলিয়ে
যেতে থাকে, আমি প্রাণপণে শ্বাস নিই
যতোটুকু পলায়নপর গন্ধ আমি ধ’রে রাখতে পারি
অসুস্থ ফুসফুসে। অ্যালবাম খুলে দেখি
লবঙ্গের গাছ হাসে, তার দেহভরা লবঙ্গের লাবণ্যের
সুদূর সুঘ্রাণ। এখানে ভাসে না আর
তার সোনালি দেহের গন্ধ, তার ফুল ফোটে
না এখানে। আমি অন্ধ হয়ে স্মৃতিকে জড়িয়ে ধরি,
সেখানেও সুগন্ধ ক্রমশ ক’মে আসে, আর
আমার নিশ্বাস ভ’রে ওঠে ব্যাপক দূষণে।
[২১-৮-৮১ তারিখে রচিত কবিতাদুটি সুলতানা আজিমের সৌজন্যে প্রাপ্ত।]
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.