নগ্নতা

ফরিদ আহমদ দুলাল
এক
নগ্নতার প্রস্রবণ ছুঁয়ে শুয়ে থাকা সারারাত
নগ্নতা উদার আকাশ বনভূমির কাঁধে পূর্ণিমা-মৌতাত
সরিষার ক্ষেতে পতঙ্গের ভিড় ফুলের সুগন্ধ শোভা
কামরাঙা-বরই-মটরশুঁটি ফুলের নগ্নতা মনলোভা;
দুব্বার চূড়ায় জমে শিশিরে মুক্তোর দ্যুতি, জেগে ওঠে ভোর
মেঘের নগ্নতা ছুঁয়ে সুদর্শন ওড়ে চিলের চিকন কণ্ঠে বাজে শোর,
বৈদ্যুতিক তারে নগ্নতা কাকের বৃষ্টিতে ভেজার নেশা
কাঁটাতারের দিগন্ত ছুঁয়ে কবি পেয়েছে পথের দিশা।

নগ্নতা কিংখাব ছেড়ে আসা তৃষ্ণার্ত চকচকে তরবারি
কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরের ঘাটে আবরণ পালটে নেয় সুনেত্রা সুন্দরী
মোরগের বাকে স্পর্ধার নগ্নতা মাখা পাখিদের গানে নগ্ন সুর
সুরেরা মাতাল নগ্ন আমন্ত্রণে কাছে আসে শত দূর;
নাব্য নদীরা জোয়ারে নগ্ন সমুদ্রের সগর্জন আবাহনে
তাথিয়া-মাতিয়া ছোটে কুমারী চঞ্চল নদী সমুদ্রসঙ্গমে।

দুই
প্রকৃতির যত বিস্তৃতি এনেছে অকপট নিঃশর্ত মিলন
জড় পাহাড়ের নগ্নতা ঢেকেছে সবুজের নগ্ন-আবরণ,
গাভির ওলানে শাবকের ক্ষুধার্ত চুম্বন কী-যে মায়ামাখা
জলমগ্ন ধানক্ষেতে শীতের সম্ভ্রম খোঁজে অপুষ্ট চারার শাখা;
পাতা ঝরে গেলে বৃক্ষ নগ্ন – শুকালে জলের ধারা নগ্ন জলাশয়
গায়ে বৃষ্টি মেখে সারাদিন সঞ্জীবনী পানে নিশি নগ্ন হয়,
নগ্নতায় ম্যালে নিঃসঙ্গ শিকারি সচকিত বকের পালক
নগ্নতা সর্বাঙ্গে মেখে ছায়ার বিশ্রামে শোয় রাখাল বালক।

নগ্নতা টিনের চালে শিশিরের মৌন গান
কাকভোরে ঘুম ভেঙে গেলে রজনীর চোখে নম্র-অভিমান।
অদৃশ্য নিলুয়া বাতাস নগ্নতা নিয়ে আসে – নগ্ন করে যায়
ভেতরের কলুষতাগুলো বিচূর্ণ লুটায় নগ্নতার পায়;
নগ্নতার ভিড়ে পৃথিবীতে মানুষের নিঃশঙ্ক আশ্রয়
নগ্ন প্রকৃতি – মানুষ তবু সভ্যতার চোখে বিপন্ন বিস্ময়।