নদী কারো নয়

সৈয়দ শামসুল হক

॥ ২০ ॥

খ্যাতিমান ঔপন্যাসিক মকবুল হোসেন – যার এত সাক্ষাৎকার, এত ফটোগ্রাফ পত্রপত্রিকায় বেরোয়, যেন এক খোলা বাগানই সে, যে-কেউ বলে দিতে পারবে কোথায় কোন গাছ, কোন ঝিল, ডালেই বা কোন ও কী কী পাখি, কিন্তু এতেও কি সবটুকু তার উন্মোচিত? – আমরা ধন্দে পড়বো যদি তেমন ভেবে নিই এবং পড়বো না যদি আমরা জেনে নিই যে কে তার ব্যক্তিগত মহলে উঁকি দিতে পারে, যদি সে নিজেই নয়? – না, সে এইসকল আবৃত উপাদান তার উপন্যাসে কখনই ব্যবহার করে
নাই – কেন করে নাই? – বেদনার কথা তার ভেতরে এতটাই রক্তপাত ঘটিয়েছে যে, সেই রক্ত মুছে আপন চেহারাটি এখনো তার পরিষ্কার করে ওঠা হয় নাই। মকবুলের চোখে ভোরের এই মোহময় আঁধারিতে, দুধের সরের মতো আলোয়, আধকোশা নদীর সমুখে দাঁড়িয়ে, সেই লাল পাখিটিকে দেখে ওঠার বিস্ময়ের ভেতরে তার মনে পড়ে যায় সহেলির কথা – সেই সহেলি! এখন নিউজিল্যান্ডে; এখনো তো তাকে সে ভোলে নাই – আমাদের বিস্ময়ের কিছু নাই, কারণ আমরাও আমাদের প্রিয় কাউকে না কাউকে এমন অপরের ঘরে চলে যেতে দেখেছি – দেখি নাই? – বুকে হাত দিয়ে কে বলতে পারে, বিস্মরণের পথে মুক্তি আমাদের এসেছে! – মানুষ কি তার রক্তের ভেতর থেকে ব্যক্তিগত কোনো নক্ষত্রের সম্পাতকে ভুলে থাকতে পারে? জাতীয় ইতিহাস বিস্মরণ তো ঘোর নিন্দার্হ এবং আত্মঘাতী, তবে ব্যক্তিগত ইতিহাস প্রসঙ্গেও তা নয় কেন?
না, মকবুল ভোলে নাই, কিছুই সে ভোলে নাই। সহেলি! সহেলি! বুকের পাড়ভাঙা মানুষ বলে নিজেকে প্রত্যক্ষ করে ওঠে মকবুল হোসেন। বুকের পাড়! নদীরও পাড় আছে, নদীর পাড়ও তুমুল বন্যার তোড়ে ধসে পড়ে, বাড়িঘর বৃক্ষ বাজার তলিয়ে যায় নদীজলে, আর, নদীও এক মুহূর্তের জন্যে দাঁড়ায় না, কলকল খলখল করে দক্ষিণের দিকে বয়ে যায়। একদা যদি মকবুল হোসেনের বাবা মইনুল হোসেন মোক্তারও এই নদীগর্ভে হারিয়ে গিয়ে থাকে, এ যাবৎ যতটুকুই তথ্য মকবুল তার বাবার অপঘাতে মৃত্যু সম্পর্কে জানতে পেরেছে, সে এখন মনের মধ্যে তৌল করতে থাকে – কোনটি নিয়ে সে অগ্রসর হবে, বাবা না সহেলি! সহেলিকে না-হয় আপাতত ঠেলে সরিয়ে দেওয়া গেলো, কিন্তু প্রিয়লি? সহেলির নামের সঙ্গে মিলিয়ে মেয়ের নাম রেখেছিলো মকবুল – লি আর লি, সেই প্রিয়লির কথা মনে পড়তেই বুক চিরে যায় মকবুলের। মেয়েটি বাড়ি পালিয়ে বিয়ে করেছিলো, এখন তার সেই আগুনধরা বিয়ের আগুনতপ্ত ছাই উড়ছে বাতাসে, মকবুলের মুখে এসে পড়ছে, পুড়ে পুড়ে যাচ্ছে। – আহ্, বাবা, আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও! আর্তনাদ! মোবাইল ফোনের ভেতর দিয়ে সেই তীব্র হাহাকার আর তার পরেপরেই পুরুষকণ্ঠে অশ্লীল ধমক –  হারামজাদি! মাগি! আহ্! মেয়েকে! তার মেয়েকে!
মকবুল শান্ত হতে চেষ্টা করে। নিজেকে সে কঠোর হাতে দমন করে। নদীর পাড় বরাবর নেমে গিয়ে হাঁটতে থাকে। ওপারে ভোরের আলোয় গ্রামখানি ধূসর রঙে জেগে উঠছে। নদীর বুকে খেয়া নৌকো ঠেলে আসছে এপারের দিকে। নৌকোয় যাত্রীরা কেউ বসে কেউ দাঁড়িয়ে। ওই এক কিশোরী বসে আছে আগা নায়ে, তার চুলে গোলাপি ফিতে, মুখখানাও রাঙা দেখাচ্ছে ভোরের আলোয়, বুকের কাছে তার বই ধরা, এপারে বালিকা বিদ্যালয়ে বুঝি সে আসছে ক্লাস করতে। সহেলিকে মনে পড়ে যায় মকবুলের – মেয়েরা  কি এই রকমই সবার, সবখানে? – এই রকমই বুকের কাছে বই ধরে ইশকুলে যায়? যায় তারা স্তনের উদ্গম বইয়ের আড়ালে ঢেকে রেখে? না, প্রিয়লির কোনো সংকোচ ছিলো না, বুকে তার যৌবন ফুটে উঠছিলো ফুলের কুঁড়ির মতো, আর মেয়েদের তুলনায় বারো-তেরো বছর বয়সেই তার বুকজুড়ে যৌবন জানান দিতে শুরু করেছিলো, কিন্তু প্রিয়লি বুকে বই চেপে ইশকুলে তো যেতোই না, কলেজেও না। নিজেকে তো মেয়েই মনে করতো না সে! বাবা, আমি তোমার মতো লেখক হবো। – মা, লেখক হওয়া যায় না, লেখক আপনা থেকেই হয়ে ওঠে, ভেতর থেকে! – তুমি কী করে লেখক হলে? – আমি? কী জানি! হয়তো জীবন দেখতে দেখতে। – তবে যে লোকেরা বলে, তোমার লেখায় জীবন নেই?  – জীবন! জীবন তো একেকজনের কাছে একেকরকম। – তুমি জীবন দেখেছো? – এখনো খুঁজে চলেছি কাকে বলে জীবন আর কোথায় আছে জীবন!
আধকোশার বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে জীবন দিয়েছে মকবুলের বাবা মইনুল হোসেন মোক্তার। মকবুলের চোখে এখন ছবিটা ভেসে ওঠে – সেই ছবি! – না, নদীতে তার ঝাঁপিয়ে পড়ার নয় – সেই ছবি, সাতচল্লিশ সালের চোদ্দই আগস্ট আধকোশা নদীর পাড়ে মইনুল – যখন সবাই কাছারির মাঠে নামিয়ে আনছে ব্রিটিশের নিশান, তুলছে পাকিস্তানের নিশান, মহকুমার হাকিম নেয়ামতউল্লাহ্ দিয়ে চলেছেন ভাষণ – আজ থেকে আজাদ এই মাটি! আজাদ আজ মুসলমান! আজাদির চেয়ে মিঠা লব্জ আর ইনসানের জবানে নাই! – মইনুল হোসেন মোক্তার সেই সমাবেশে নাই, কেন নাই কেউ একবারও প্রশ্ন করে নাই, কেউ তাকে সন্ধান করে নাই, কারণ আজাদির জোশে সবাই আজ মাতোয়ারা, কারো দিকে লক্ষ দেওয়ার মন কারো নাই, যেন আসমান থেকে নেমে আসছে বেহেশতি ঝালর এই জলেশ্বরীর ওপরে, ভোরের আলো তো নয়, যেন খোদার গায়েরই সোনালি জরির জামা কিংখাব, সেইদিকে সবার চোখ! – কে এই স্বর্গীয় মুহূর্তে মোক্তারের খোঁজ করে!
আধকোশার পাড় এখন নির্জন; শহরের সমস্ত মানুষ এখন কাছারির মাঠে; সমস্ত মানুষ বলতে কেবল মুসলমানেরা, কারণ হিন্দুরা পাকিস্তানের জন্ম প্রত্যক্ষ করার তাড়া অনুভব করে নাই; তারা যে যার বাড়িতে, কেবল কংগ্রেসের কয়েকজন কাছারির মাঠের অদূরে এসে ঘন হয়ে আছে – কাছেই হাই ইশকুলের মাঠের পাশে। ইশকুলের হেডমাস্টার শ্রী যতীন্দ্রমোহন গাঙ্গুলিকে কেউ কখনো তার ধবধবে খদ্দরের চাপকান ছাড়া দেখে নাই, সেই হেডমাস্টারও আজ তার বিখ্যাত চাপকানটি পরেন নাই, শাদা চিটময়লা ফতুয়াতেই বেরিয়ে এসেছেন পথে, ইশকুলের মাঠে হিন্দুদের জমায়েতে তিনি দাঁড়িয়ে আছেন। তিনিই প্রথম কথাটা উত্থাপন করেন – আপনারা কেউ লক্ষ করেছেন, আমি যেন মুকুলের মাকে দেখলাম নদীর দিকে যেতে! – মুকুলের মা! কোন মুকুল! আবছা একটা গুঞ্জন ওঠে সমাবেশে। মনের মধ্যে প্রশ্ন ওঠে তাদের – এই পাকিস্তান হয়ে যাওয়ার এমন ভয়ের দিনে কোথাকার কোন মুকুলের মা-র কথা ওঠে কেন? তার চেয়ে ভাবুন আমাদের কথা! পাকিস্তান যে হয়ে গেলো, আমাদের এখন কী উপায়? এদেশে কি আমরা থাকতে পারবো পাকিস্তানের পরেও? কিন্তু এ-ভয় তারা ভাষায় উচ্চারণ করে না, ভয়ে বরং তারা আরো ঘন হয়ে দাঁড়ায়। কাছারির মাঠে পাকিস্তানের নিশান তোলার উল্লাসে তোপ শব্দে তারা চমকে চমকে ওঠে। মুকুলের মাকে চেনে না তারা এমন নয়, কিন্তু তোপের শব্দে বুদ্ধিনাশ তাদের।
বাজারে ফার্মেসির মালিক হেমেন্দ্রবাবু অস্ফুটস্বরে হেডমাস্টারকে প্রশ্ন করে – কার কথা বলেন? যতীন্দ্রমোহনের বেদনার্ত স্বরে উত্তর, মুকুলের মা! এত তাড়াতাড়ি ভুলে গেলেন? কে একজন পাশ থেকে বলে, শোনা যায় – দ্যাখেন না কেনে, পাকিস্তানের নিশান তো উড়িলো, বলে বাপের নাম অ্যালা ভুলিয়া দিবার জোগাড় হইচ্ছে! আরেকজন স্মৃতি খুঁচিয়ে আরেক কথা তখন বলে –  মাস্টারবাবু, আর মাসবাদে যে দুগ্গাপূজা আসিচ্ছে, পূজা কি করিবার পাইবেন? গত বচ্ছরের পূজায় বিটিশ থাকিতেই মজিবরের দল কী হুজ্জত করিছিলো, সে-কথা তো বিস্মরণ হও নাই! ঢোল না বাজাবার দেয় বিসজ্জনের দিন! কয় বলে নমাজে ব্যাঘাত হইবে! মজ্জিদের অপমান হইবে! মনে নাই সে কথা! মনে থাকবে না কেন, খুব মনে আছে।
মাত্রই গত বছরের কথা। ছেচল্লিশ সাল। মাত্রই মাস দশেক আগের ঘটনা। জলেশ্বরীর পথে পথে মজিবররা মিছিল করছে যখন-তখন; গ্রামোফোনের চোঙা খুলে মুখে লাগিয়ে অবিরাম স্লোগান দিচ্ছে – হাতে বিড়ি মুখে পান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান! কবুল মোদের জানপরান, লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান! জিন্দাবাদ জিন্দাবাদ পাকিস্তান জিন্দাবাদ! সত্যি সত্যি বিড়ি মুখে যুবকেরা। বিড়ির অভাব নাই। মুসলিম লীগের বেঙ্গল অ্যাসেম্বলি মেম্বার নজির হোসেন সাহেব থাকতে বিড়ির জোগানে টান নাই। শুধু কি বিড়ি? ঈদগা মাঠের পাশে পাঠশালার বারান্দায় খিচুড়ি চড়ছে দুবেলা। এর মধ্যে মজিবরদের উল্লাসে একটা গরু জবাইও হয়ে গেছে, সে-জবাইকে ভালোভাবে নেয় নাই জলেশ্বরীর হিন্দুরা, কারণ ওপাশেই একেবারে নাক বরাবর বকশিদের বাড়ির খোলা চওড়া বারান্দায় প্রতিমা গড়ছিলো মান্দারবাড়ির বিখ্যাত কুমোর পরিবারের প্রশান্ত পাল। সেই কবে রাজাদের আমল থেকে এই কুমোর পরিবারের খ্যাতি; হাতের কাজও চমৎকার; মাটির ঠাকুর তো নয়, যেন দেবী স্বয়ং মাটির ধরায় নেমে এসে করুণার চোখ মেলে আছেন – এত জীবন্ত। হিন্দুদের না-হয় পূজার ঠাকুর, তারা অপলক চোখে তাকিয়ে দ্যাখে প্রশান্ত পালের হাতের কাজ, পথচারী মুসলমানেরাও দুদণ্ড দাঁড়িয়ে পড়ে, তাদের চোখেও বড় মনোহর লাগে, এমনকি দেবী দুর্গাকেও মনের মধ্যে ভক্তির জায়গায় তারা একটু ঠাঁই দিয়ে ওঠে। জলেশ্বরীর আশেপাশের গাঁয়ে এখনো অনেক মুসলমান গরিব ঘর আছে, যারা আল্লাহও মানে, লক্ষ্মী-সরস্বতী-দুর্গা-মহাদেবের মূর্তি সাক্ষাতেও হাত তুলে সালাম জানায়। দুর্গা প্রায় গড়ে উঠেছেন, এখন শুধু চক্ষুদান বাকি, ঠিক সেকালে প্রশান্ত পাল মশাইয়ের নাকে গোমাংসের ঘ্রাণ বজবজ করে ঢোকে, রাস্তার ওপারেই তো চুলার ওপর ডেকচিতে টগবগ করে তেল-মসলায় গোস্তো ফুটছে, হাঁই হাঁই করে হাতা নাড়ছে – আর কে? – খোদ মজিবর – মজিবর গুণ্ডা – শহরের শুধু হিন্দুরা নয়, মুসলমানেরাও তাকে দেখলে তৎক্ষণাৎ রাস্তার পাড় বদল করে। প্রতিমার এত কাছে গোমাংস রন্ধন – হিন্দুরা এটাকে মুসলমান যুবকদের ইচ্ছাকৃত বলে ধরে নেয়, কিন্তু প্রতিবাদ করার সাহস পায় না; জলেশ্বরী শহর জিন্নার ছবি – ঘোড়ার পিঠে সওয়ার তিনি তলোয়ার খাড়া করে ধরে, আর মুসলিম লীগের নিশানে ছেয়ে গেছে, যেন পাকিস্তান এসেই গেছে।
পূজা তো হয়ে যায় নির্বিঘেœই, শহর আর গাঁয়ের শিক্ষিত বাড়ির মুসলমানেরা পূজায় আর এবার আসে না, কিন্তু গরিব ঘরের মুসলমান বউঝিয়েরা ঝুপঝুপ করে আসে, বিস্ফারিত চোখে তারা ঠাকুর দ্যাখে, ভক্তিসংশয় তাদেরও মনে, কিন্তু চোখে তাদের স্বর্গবিহ্বলতা, ফেরার পথে পূজার মেলা থেকে চিনির সাজ শোলার পাখি কিনে সন্তানের হাতে দেয়। তবে হ্যাঁ, নজির হোসেন সাহেব একঝলক মণ্ডপে এসেছিলেন বরাবরের নিয়ম রক্ষার্থে; হাজার হোক তিনি বেঙ্গল অ্যাসেম্বলির স্থানীয় নির্বাচিত মেম্বার, তাঁকে একবার আসতেই হয়। প্রতিবারের মতো সবই ঠিক ছিলো; শুধু তফাতের মধ্যে নজির হোসেনের সঙ্গে মজিবরের দল আসে মণ্ডপে – এবং তারা পূজার আয়োজকদের একটা নির্দেশ দিয়ে যায় – আধকোশায় ঠাকুর নিয়া যায়া ডোবান তাতে আপত্তি নাই, তবে মেম্বার সায়েবে কইছে এই যাত্রায় বাইদ্য বাজনা না চলিবে। সত্য এই, এই নির্দেশের সঙ্গে নজির হোসেনের কোনো যোগ ছিলো না, রাজনীতির মানুষ তিনি, দুই দিক রক্ষা করে তাঁকে চলতে হয়, তাঁর ভোটারদের মধ্যে হিন্দুও তো আছে! তাছাড়া লোক শোনাশোন কথা যে, নজির হোসেনের বড়দাদা মানে তাঁর দাদার বাবা নাকি হিন্দু ছিলেন, হিন্দু থেকে তিনি মুসলমান হন; তবে সে এত জন্মের আগের কথা যে সাক্ষাৎ কোনো জীবিত সাক্ষী নাই; তবে বছর দুয়েক আগে একবার টাউন হলে নদীর ভাঙন রক্ষার্থে শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মিটিংয়ে কে যেন কী একটা কথার ভাঁজে হিন্দু বংশের কথাটা মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলো, নজির হোসেন সেটাকে পাকিস্তান আন্দোলন বানচাল করার জন্যে হিন্দুদের অপবাদ রটনা বলে হুংকার দিয়ে ওঠেন – অ্যাইও, কাঁই কয় মোর পরদাদা হেন্দু ছিলো! কলিকাত্তায় যায়া লাটসায়েবের কাছে নালিশ দিলে পুটকির মইধ্যে শাল ঢুকিবে সব শালার! সাবোধান হয়া যান! এবার পূজাটা আর বছরের মতো নির্বিঘেœই হয়ে গেলো বটে, গণ্ডগোল লাগলো বিসর্জনের দিন। কী না, আধকোশার উদ্দেশে প্রতিমা নিয়ে যাওয়ার সময় মসজিদের সামনে ঢাকবাজনা হয়েছে। তাগরাই বলদ গাড়ির ওপর বাঁশের চওড়া মাচা বেঁধে, তার ওপর প্রতিমা বসিয়ে মিছিল বেরিয়েছিলো নদীর পথে; শুধু একখানা ঠাকুর তো নয়, ঘোষপাড়ার, বুড়ির চরের, মজুমদার কাছারির, কাশিমবাজার কুঠির, তারপর টাউনের সর্বজনীন পূজার সারি সারি প্রতিমা। আহা, মা এসেছিলেন, মা চলে যাচ্ছেন – ভক্তের চোখে জল, হিন্দু যুবকদের শেষ উদ্দাম আরতি বলদ গাড়ির মাচার ওপরেই, পায়ে পায়ে শহরের হিন্দুরা চলেছে মিছিল করে; আগে থেকেই তারা ঠিক করে রেখেছিলো পথে কোনো বাজনা নয়, একেবারে নদীর কাছে গিয়ে যখন ঝাউবন পড়বে, সেখান থেকে ঢাকে পড়বে কাঠি। কিন্তু কোথা থেকে মজিবররা এসে পথ আটকে দাঁড়ায়। আর চিৎকার – শালার ঘর, কানে যায় নাই কথা! কাছারির মসজিদের সামনে বাইদ্য করেন তোমরা! না যাবার দেমো নদীতে। আগে ইয়ার ফয়সালা, তার বাদে তোমার ঠাকুর চুবান! মুহূর্তে সারা শহরে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। দারোগা-পুলিশ এসে যায়। ঘোড়ার পিঠে দারোগা। ঘোড়ার পা অস্থির মাটি ঠোকে। থেকে থেকে ডাক ভাঙে। নজির হোসেন উকিল তাঁর বাড়িতে মক্কেলদের নিয়ে তখন মামলার আলাপ করছিলেন, খবর পেয়েই হুংকার দিয়ে ওঠেন – এইবার দেখি নেমো হিন্দুর ঘরের আস্পদ্দা কতখান আর শালা গান্ধীর কোন জারুয়া ব্যাটা আসে তাদের উদ্ধার করিতে! কথাটা বোধহয় যত না হিন্দুদের প্রতি, তার অধিক সমুখে উপস্থিত মক্কেলদের প্রতি। মক্কেলের সাক্ষাতে নিজের দবদবা দেখানোর সুযোগ বোধহয় হাতছাড়া তিনি করতে চান নাই, তাই অমন গান্ধীর বংশ ধরে হুংকারটা তিনি ছাড়েন। কিন্তু পথের ওপর আটকানো মিছিলের উদ্দেশে তাঁকে রওনা হতে দেখা যায় না। মিছিলে আসে মইনুল হোসেন মোক্তার, প্রায় কাছাখোলা ছুটে আসে সে। রাস্তার ওপরেই দুপক্ষ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, যেন কেরোসিনের ডিপোয় দেশলাই হাতে দুই দল, একটা কিছু হলেই ফস্ করে কাঠি উঠবে জ্বলে, লাগবে আগুন। মইনুল হোসেন ছুটে এসে দুই পক্ষের মাঝখানে ঘোড়ার পিঠে চড়া দারোগাকে বলে – এ সকল মিছা কথা, মসজিদে মুঁই ছিলোম, কাজা নমাজ পড়িচ্ছিলোম মগরিবের, না, মসজিদের সামনে ঢোল বাজে নাই, সক্কল ওই মুসলিম লীগের নজির মিয়ার মিছাও আন্দোলন! একটা ছুতা ধরিয়া বিভেদ ছিরিষ্টির হুজুগ তাঁই তুলিচ্ছে! তৎক্ষণাৎ মজিবরের হুংকার শোনা যায়, মইনুল হোসেনের ওপর প্রায় লাফিয়ে পড়েই সে বলে – মোক্তার তোমার দিন শ্যাষ, হায়দর শেখের দোকানে যায়া কাফনের কাপড় কিনি রাখো, রাইত না পোহাইতেই দরকার হইবে। না, তার দরকার হয় নাই। ইংরেজের দারোগার দরকার ছিলো একজন সাক্ষী, পাওয়া যায় সাক্ষী, মোক্তারের মতো মাতবর এক সাক্ষী – মইনুল হোসেন; অচিরে ঘোড়ার পেটে বুট পরা পা দিয়ে জোড়া লাথি মারে দারোগা, ঘোড়া অস্থির হয়ে জনতার ওপর পালটা লাথি ঝাড়ে কি এই ঝাড়লো, ভয়ে লোকেরা পিছিয়ে যায়; দারোগা যথাসম্ভব গলা ফাটিয়ে বলে, ইংরাজের শাসন এখনো বহাল আছে। শান্তিরক্ষা না করিলে গেরেফতার! হাজত! লাল দালানে যাবার চাও তোমরা? যাঁতা পিষতে কোমর ভাঙি যাবে! তারপর ঘোড়ার আবার দাবড়ানি। লোকেরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। বিসর্জনের মিছিল অগ্রসর হতে থাকে নদীর দিকে।
না, কাফনের কাপড় দরকার হয় নাই মইনুল হোসেনের। ব্রিটিশের আমলে অন্তত জলেশ্বরীর যুবকদের এত সাহস দেখা যায় নাই যে দারোগার ওপরে কথা বলে। তবে মজিবরকে দেখা যায় রাতে মেথরপট্টিতে আড্ডায় সে বসেছে, মদ রাঙা চোখে বলছে, বুঝলু রে জলিল, মুখে পাকিস্তান তলায় তলায় তার হিন্দুস্থান! – কার কথা কন? – আর কার? নজির হোসেনের। মুসলিম লীগের নেতা সাজি বসি আছে! বোলে জিন্নার সেনাপতি! সরোয়ার্দি সেইবার যে এঠায় আসিলে, ডাকবাংলায় বোলে নজির হোসেনোক্ বগলে বসায়া কমলোর কোষ ভাঙি খাওয়াইছে! সেই গপ্প জনে জনে ধরি ধরি করে! সরোয়ার্দির তো খবর নাই তলে তলে তাঁই হেন্দু! – সে কোন্কালের কথা, মিছাও হবার পারে! – নয় হে নয়! এলাও তাঁই হেন্দু, নাইলে তাঁই আসিলে না কেনে? হেন্দু শালাক্ ধমকি না দিলে ক্যানে? দুগ্গার শাড়ি ধরি টানিলে না ক্যানে? আসলে ঝে হেন্দু! উয়ার বংশ এলাও পূজা করে শুনি রাখ্ আমার কাছে! মদে বিভোর মজিবর গভীর রাতে বাড়ি ফিরতে ফিরতে পথের ওপর থেকে কংকর তুলে মইনুল হোসেনের বাড়ির টিনের চালে ঢিল মারে। দনাদন পর পর কয়েকটা। ওতেই শান্ত হয় তার মন। টলতে টলতে বাড়ি ফেরার রাতঘোর নির্জন পথে আচমকা একবার স্লোগান দিয়ে ওঠে একাই – ল-ল – লড়কেএএ লেঙ্গেএএ পাকিস্তাআআন!
কিন্তু সে চোদ্দই আগস্ট রাতের কথা। গভীর রাত তখন জলেশ্বরীতে। বাঁশবনের ভেতরে লাশকাটা ঘরে তখন শেয়ালের আনাগোনা, যদি কোনো লাশ তারা পায় ছিঁড়ে-খুঁড়ে খাবার। ডিস্ট্রিক্ট বোর্ডের সড়কের ওপর নুড়ি পাথর, এ-পাথর ফেলা হয়েছিলো দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ আমলে, আসামের দিকে কনভয় চলার সুবিধার্থে। সড়কটি নাকি মীরজুমলা আমলের, এই পথেই নাকি তিনি কোচবিহারের উদ্দেশে যুদ্ধে রওনা হয়েছিলেন। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ মাত্রই দু-তিন বছর আগের কথা, কিন্তু তিন চার শতাব্দী আগের মীরজুমলার সৈন্যসামন্ত নাকি জলেশ্বরীর গভীর রাতে এই সড়কের ওপর দিয়ে কুচকাওয়াজ করে যায়; অনেকেই নাকি দেখেছে; যারা দেখেছে তারা বলে, সিপাইরা কুচ করি যাইতে যাইতে ঝেই তোমার নিকটে আসিলো কি তোমার মাথার উপর দিয়া তারা উঠি গিয়া ফির ওইপাকে সড়কে নামি আসিলো, তারবাদে নদীর উপর দিয়া হাঁটি পার হয়া গেইলো!
নদীর পাড়। আধকোশা নদী। নদীর কাছেই কাছারি, কাছারির মাঠে নেয়ামতউল্লাহ্র ভাষণ এখনো শেষ হয় নাই। – জানপ্রাণ কবুল করে কায়েদে আজম ইসলামের বিজয়নিশান যে উড়িয়ে দিয়েছেন তাকে আল্লাহ্ চিরদিনের জন্যে আকাশে-বাতাসে উড্ডীন রাখুন, হে আল্লাহ্ তোমার দরবারে এই আমাদের মোনাজাত। আর কাছারির উলটোদিকে হাই ইশকুলের সমুখে শহরের হিন্দু গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জটলা আর গুঞ্জন – এবার কি দুর্গাপূজা হতে পারবে?
কিন্তু মুকুলের মায়ের কথা তুলেছিলেন ইশকুলের হেডমাস্টার শ্রী যতীন্দ্রমোহন গাঙ্গুলি; শিক্ষক বলেই তার মনে করুণার ধারা বয় – তিনি মুকুলের মাকে ভুলতে পারেন না; বিধবা, তরুণীই বলা যায় এখনো, একা একা নদীর দিকে সে কেন যায়? মুকুলের মায়ের সূত্রে তাঁর মনে পড়ে, এরই বাড়িতে কংগ্রেসের যুবক কয়েকজন ফরোয়ার্ড ব্লকের অফিস খুলেছিলো; শহরের কোথাও যখন কংগ্রেসের বিদ্রোহীরা সুভাষ বসুর ফরোয়ার্ড ব্লকের জন্যে বাড়ি খুঁজে পায় নাই, ভাড়া কেউ দেয় নাই, মুকুলের মা তার বাড়ির সমুখের বাংলাঘরটিকে তাদের অফিস করবার জন্যে দিয়েছিলেন। সারি সারি সুপারি গাছঘেরা টিনের আটচালা বাংলাঘর, সুপারির একটা গাছে পেরেক ঠুকে লাগানো টিনের সাইনবোর্ড – ফরোয়ার্ড ব্লক, জলেশ্বরী। বিধবা হয়তো রোজগার বৃদ্ধির আশায় ঘরটা ভাড়া দিয়েছিলো; অকালে মুকুলের বাবা বসন্ত রোগে মারা যাওয়ার পরদিন তার চলতো হরিষালের বিঘা পনেরো জমির ধানে আর শহরের বাড়ির সুপারি বিক্রি করে। এত যে রূপসী মুকুলের মা, হিন্দুধর্মে বিধবা বিবাহ নাই – রামমোহন রায়ের পরেও বিধবা বিবাহ চালু হয় নাই, তাঁর আর-সকল গুণকীর্তি যতই আমরা করি বিধবা বিবাহ চালু না হওয়াটা সে মহামানুষটির পরাজয়ের একমাত্র উদাহরণ হয়ে আছে। কিন্তু বিধবা বিবাহ চালু নাই এক কথা আর লোকের কাছে নারীর সৌন্দর্য জ্বলজ্বল করা আরেক কথা। কিন্তু শহরের কেউ বলতে পারবে না মুকুলের মায়ের কুচাল বেচাল দেখেছে। বরং তারা প্রশংসাই এযাবৎ করে এসেছে তার কঠোর বৈধব্য পালন আর সন্তানকে মানুষ করে তোলার যতœ দেখে। কাল হলো তার ফরোয়ার্ড ব্লকের জন্যে বাংলাঘর ভাড়া দিয়ে। সারাদিন যুবকদের আনাগোনা সে-অফিসে। গভীর রাত পর্যন্তও তারা কোনো কোনোদিন অফিস করে। বাড়ির ভেতরে মাঝে মাঝে যায় কুয়ো থেকে খাবার জল আনতে। রাত বেশি হলে মাঝে মাঝে তারা মুকুলের মায়ের কাছে চা-পাতা দুধ চিনি পাঠিয়ে চা করে দিতেও বলে; মুকুলের মা চা বানিয়ে কাঁসার থালার ওপরে গেলাশ সাজিয়ে পাঠায়। জলেশ্বরীর কংগ্রেস নেতা শ্রী রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তী ফরোয়ার্ড ব্লকের তরুণদের শায়েস্তা করতে একদিন বলে ওঠেন, এই যে দিনমানে তারা হেথায় অফিস করে, রাইতের দুপহর পর্যন্ত আড্ডা মারে, খালি কি সুভাষ বসুর কারণে? – না সুন্দরী বিধবার আকর্ষণে, কথাটা ভাবিয়া দেখিও। মুখে মুখে দাবানলের মতো অপবাদটা ছড়িয়ে পড়ে জলেশ্বরীর হিন্দু সমাজে। রাজেনবাবুর ইশারাতেই মুকুলের মায়ের পথ কালীবাড়িতে রোধ করে দাঁড়ায় পুরোহিত বামুন। – হেথায় দুশ্চরিত্রা নারী পূজা না দিবার পারিবে! মুকুলের মা পূজার অর্ঘ্য নিয়ে শুদ্ধবস্ত্রে মন্দিরে গিয়েছিলো, আমাদের মনে পড়বে, নিশ্চয় এখন যতীনবাবুর মনে পড়েছে, পুরোহিতের কথাটা শোনামাত্র মুকুলের মা মন্দিরের চত্বরে মূর্ছিত হয়ে পড়ে যায়, হাতের সাজানো থালা পড়ে যায়, ঝনঝন করে ওঠে, ছড়িয়ে পড়ে জবা ফুল, কিন্তু প্রদীপ মাটিতে পড়েও ছড়ানো তেলের মধ্যেই সলতেটি তখনো জ্বলতে থাকে।
শ্রী যতীন্দ্রমোহন গাঙ্গুলি শ্রী রাজেন্দ্রলাল চক্রবর্তীকে তিরস্কারের ক্রুদ্ধ চোখে খানিক নিরিখ করে বলেন, দুর্গাপূজা হবে কি হবে না, ভাবনা করিয়া লাভ নাই। অনেকের পূজা অনেক আগেই তো আমরা বন্ধ করে দিয়েছিলাম, নাকি! খোঁচাটা হজম করে নেন রাজেনবাবু, পালটা ফুঁসে ওঠার শক্তি তিনি পাকিস্তানের নিশান দেখেই হারিয়ে ফেলেছেন, সেটাও আজ চোদ্দই আগস্ট ব্রিটিশের নিশান নামিয়ে পাকিস্তানের নিশান তোলা দেখে নয় – সেই মাস দুয়েক আগেই, যখন পাকিস্তান হওয়ার চূড়ান্ত ঘোষণা দেন বড়লাট মাউন্টব্যাটেন অল ইন্ডিয়া রেডিওতে। রাজেনবাবু একটু সরে দাঁড়ান যতীনবাবু থেকে; যতীনবাবুর কথাটা জটলার কানে পশলেও মর্মার্থ তারা ঠিক অনুধাবন করতে পারে না। যতীনবাবু তখন ঘায়ের মুখে লবণ ডলে দেওয়ার জন্যে বলে ওঠেন, এই পাকিস্তান হিন্দুস্থানও হতো না, বাংলাও ভাগ হওয়ার ছিলো না, যদি নেতাজী আজ থাকতেন। এরপরই একটু থেমে যতীনবাবু, সম্ভবত তিনি ইশকুলের শিক্ষতার সঙ্গে জড়িত বলেই, আরো একটি নাম উচ্চারণ করেন –  রবীন্দ্রনাথ! তিনি বলেন, হাঁ, রবীন্দ্রনাথও বাঁচিয়া থাকিলে বাংলা ভাগ হইতো না!
বাংলাভাগ! বাংলার বুক চিরে বিভক্তির লাল রেখা। সে-রেখা মানচিত্রেই এখনো। মানুষ এখনো তার পূর্বাপর বুঝে ওঠে নাই। কিন্তু এতটুকু তারা এখনি অনুভব করে যে কাকে বলে আপন আর কাকে বলে পর, কোনটি আমার দেশ আর কোনটি আমার দেশ নয় – সব গোলমাল হয়ে গেছে। আধকোশা নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে মইনুল হোসেন মোক্তার। কাছারির মাঠে পাকিস্তানের পতাকা তোলার তামাশায় সে যায় নাই। সেখানে কেউ তাকে খোঁজ করে নাই। তার অনুপস্থিতি সেখানে কেউ অনুভব করে নাই। দুর্গাপূজার বিসর্জন মিছিলের সেই হুজ্জতে মইনুল হোসেন শহরের হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষ নিয়েছিলো শত শত মানুষের সমুখেই, মজিবরেরা তাকে হিন্দুর পা-চাটা বলে চিহ্নিতও করেছিলো, মইনুল কিন্তু ইশকুলের সড়কে সেই হিন্দুদের জটলাতেও দাঁড়ায় নাই। সে আধকোশার পাড়ে।
রোদ এখন চড়া। খোলা প্রান্তরে আছড়ে পড়েছে রোদ। নদীর বুক ঝকঝক করছে আয়নার মতো। কিন্তু কোনো ঢেউ নাই। নদী যেন প্রাণহারা। নদীর সেই গতিবেগ নাই। দেখেও কল্পনা করা আর নাই যে, এই নদী একদিন বর্ষাকালে কী প্রচণ্ড রূপ নেবে ও অতীতে নিয়েছে – ধড়াসধস পাড় নদীগর্ভে তলিয়েছে, বাড়িঘর গিলেছে, সড়ক খেয়েছে, মানুষও খেয়েছে উন্মাদিনী আধকোশা। মইনুল হোসেন স্থিরদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নদীটির দিকে। এই সেই নদী! যতই সে চণ্ড হোক, যতই সে শহরখাদক হোক, যতই সে আমাদের দুঃখের কারণ হোক, তবু সে আমার নদী! আমার আধকোশা! জননী যতই মারুক ধরুক, তবু সে জননী। তার দুগ্ধ তারপরও পান করিবার মতো হে!
মইনুল হোসেনের মনে হাহাকার – ওই যারা কাছারির মাঠে পাকিস্তানের নিশান নিয়ে নাচানাচি করছে, তাদের কি জানা নাই আধকোশা আর আমার দেশের নদী নয়? র‌্যাডক্লিফ সাহেবের লাল পেনসিলের দাগে আধকোশা এখন হিন্দুস্তানের! জলেশ্বরীর পাড় বরাবর নদীই এখন হিন্দুস্তান-পাকিস্তানের সীমান্ত। হাহাকার –  আজ থেকে নদী তবে আর আমার নয়! (চলবে)