এবার ভাদ্রের গরম এমন পড়েছে যে রাস্তার পিচ গলে যাচ্ছে। খালি পায়ে রাস্তায় পা ফেলা যায় না, তবে স্যান্ডেল ছাড়া লোকের সংখ্যাও খুব বেশি নেই শহরে। শহরের নেড়ি কুকুর এবং রনবী যাঁদের নাম দিয়েছিলেন টোকাই, তারাই একমাত্র খালি পায়ে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে বেড়ায়। নূরবানু এতো কিছু বোঝে না, যেদিন মাদারীপুর থেকে লঞ্চে করে ঢাকা শহরে পা দিলো, তখন থেকেই খালি পায়ে সারা ঢাকা শহর চষে ফেলেছে। গ্রামে স্যান্ডেল পরার অভ্যাস ছিল না, তাই এখনো
সে-অভ্যাস তৈরি করতে পারেনি। প্রথমদিকে একটা বড় পলিথিনের ব্যাগে ডাস্টবিন থেকে, রাস্তা থেকে জিনিস কুড়িয়ে বেড়াতো। যেখানে যা পেত সব ব্যাগে ভরতো। দিনশেষে রায়েরবাজারের তল্লাবাগের ঘুপচি ঘরে সব মাল মেঝেতে ঢেলে সেখান থেকে খুঁজে বের করতো বিক্রয়যোগ্য প্লাস্টিকের বোতল, পুরনো ঘড়ি, চিরুনি, ভাঙা আয়না, কাচের টুকরো,
স্নো-পাউডারের কৌটো – আরো কত কী!
নূরবানু মাঝে মাঝে ভাবে, এই শহরটার মইধ্যে কত কিছু যে লুকানো আছে, খালি চক্ষু খুইল্যা রাইখ্যা খুঁইজ্যা বাইর করতে হবে। তাইলে আর কোনো চিন্তা নাই। একদিন একটা নাকফুল পায় নূরবানু। কেমন ঝকমকে, সোনার মতো ঝিলিক দিচ্ছিল। পাশের ঘরের আলেয়াকে দেখালে আলেয়া বলে, দামি জিনিস মনে লয়, কেউ ভুলে ফালাইয়া দিছে। শেষে দুজনে মিলে জিগাতলায় এক ছোট সোনার দোকানে গিয়ে দেখালে বলে, এ-জিনিস কি তোমাদের? আলেয়া বলে, হ, আমার মায়ের জিনিস, বিক্রি করুম। দোকানদার ওদের হাতে এক হাজার টাকা তুলে দেয়। নূরবানু অনিচ্ছাসত্ত্বেও কম মূল্যে নাকফুলটা বিক্রি করে। এরপর থেকে জিনিসপত্র যা কুড়িয়ে পায় কালাচান মিয়ার দোকানে বিক্রি করে। আলেয়াকে আর কিছু দেখায় না।
করোনার সময়ে নূরবানু খালি পায়ে সারা শহর ঘুরে বেড়ায়। দরকারি জিনিস খুব একটা পায় না, তবে প্লাস্টিকের বোতলের কমতি ছিল না। কিন্তু সেসব কেনার লোক ছিল না। কালাচান গ্রামে চলে গিয়েছিল। নূরবানু একদিন আধপেটা অন্যদিন না খেয়ে থাকলেও গ্রামে ফিরে যায়নি। গ্রামের কথা মনে হলে নূরবানুর কলিজাটা ধক্ করে ওঠে। আটাশির বন্যার সময়ে বাড়িঘর সব ভেসে গিয়েছিল, ভিক্ষা দেওয়ারও লোক ছিল না, কোনো কাজকর্মও পাওয়া যেত না গ্রামে। নূরবানু শুনেছে, করোনার সময় হাজার হাজার মানুষ ঢাকা ছেড়ে গ্রামে ফিরে গেছে। শাকপাতা খেয়ে দিন কাটিয়েছে। জমানো টাকায় আর কতদিন চলে? আর যারা দিনমজুর, তাদের সঞ্চয় বলতে কিছুই থাকে না তেমন। নূরবানুর বোন মঞ্জিলের ভালো ঘরে বিয়ে হয়েছিল, কোনোদিন অভাব-অভিযোগের কথা কানে আসেনি। কিন্তু করোনার সময়ে ওদের গঞ্জের দোকান চলেনি, ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেছে। গ্রামে খাবারের অভাব, ছেলেমেয়েরা খাবারের জন্য কান্নাকাটি করে। এসব শুনলে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে। নূরবানু তখন অনেক ছোট, আট-নয় বছর হবে। যুদ্ধের পরপর তখন দেশে অভাব। চালের অভাব, তেলের অভাব, চারদিকে খালি হাহাকার। বাপজান চিকিৎসার অভাবে ঘরে দাপাইয়া মরলো, কলেরায় মরছিল, ঘরে দানা-পানি কিছু ছিল না। কলেরার ভয়ে একটা জনমানুষ আসে নাই মুর্দা দাফন করতে। শেষে রাতের অন্ধকারে বাঁশঝাড়ে বাপকে মাটিচাপা দেওয়া হইছে। নূরবানু ভাবে, কত বছর তো গেল, কত ঝড়-তুফান, বান আইলো, গভর্নমেন্ট বদলাইলো, কিন্তু অবস্থার তেমন কোনো বদল ঘটলো না। বছরের পর বছর এক কাপড়, ছেঁড়া ব্লাউজ পইরা দিন কাটাইতে হইলো। সব কপাল! কপালে না থাকলে কিছু হয় না। চোখের সামনে কত মানুষ দালানকোঠা বানাইলো, লাটসাহেব হইয়া গেল। কিন্তু নূরবানু সেই নূরবানুই রইয়া গেল।
নূরবানু বড় রাস্তার পাশের ডাস্টবিনে জিনিস ঘাঁটাঘাঁটি করে আর গুনগুন করে গান গায়। পাশের ঘরের মতির মা বলে, কী রে নূরী, আইজ কী পাইলি?
– এখন পর্যন্ত প্লাস্টিকের বোতল ছাড়া আর কিছু পাই নাই।
– শোন, পনেরো নম্বরে বড় রাস্তায় ট্রাকে কম দামে চাল বিক্রি করতাছে, যাবি নাকি?
– কত টাকা দর?
– পনেরো টাকা।
– চিন্তা কইরা দেখি ।
– চিন্তা করনের কী আছে? কাইল বেইন বেলা চল আমার লগে।
নূরবানু ভাবে, করোনার সময়ে শুনেছে ট্রাকে ট্রাকে চাল বিক্রি করে। কিন্তু কোনোদিন যাওয়া হয় নাই। এইবার একটু বেশি কইরা চাইল আইন্যা রাখলে ভালোই হয়। দরকারে দু-এক সের বেচন যাইবো।
নূরবানু ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে ঘরে ঝোলানো আয়নার দিকে তাকায়। আয়নাটা ময়লা পড়ে ঝাপসা হয়ে গেছে, তার মধ্যে দিয়েই নূরবানুর বিড়াল চোখ নির্নিমেষ তাকিয়ে থাকে। ঘরের মধ্যে নানা জিনিসের স্তূপ। একপাশে বস্তার মধ্যে প্লাস্টিকের বোতল, কাচের টুকরা, কতগুলি নষ্ট ঘড়ি, একটা ভাঙা চেয়ার, রান্নার টুকিটাকি জিনিস – পাতিল, দুটো চিতনা হাঁড়ি, টিনের কৌটা – আরো কত কী। ঘর থেকে কেমন একটা বোটকা গন্ধ আসে। এইসব পুঁতিগন্ধময় পরিবেশ নূরবানুর অভ্যাস হয়ে গেছে। নিজেকে মাঝে মাঝে নূরবানুর ওই ভাঙা চেয়ারটার মতো মনে হয়, যার আর কোনো দরকার নেই, যাকে জীবন থেকে বাতিল করা হয়েছে। বাতিল জিনিস কার বা কামে লাগে?
প্রাত্যহিক কর্ম শেষ করে নূরবানু টিনের কৌটা থেকে চিড়া বের করে ভিজিয়ে খায়। সঙ্গে এক কাপ চা। চা খাওয়ার নেশা হয়েছে ঢাকা শহরে আসার পর থেকে। এক কাপ চায়ে এক চামচ চিনি না খেলে নূরবানুর শরীরটা চলে না। খালি শরীর ব্যথা করে। স্বামী মারা যাওয়ার পরের বছর দুধের ছেলেটাও তিনদিনের জ্বরে চলে যায়। তারপর গ্রাম ছাড়ে নূরবানু। অনেকে বলে, ঢাকা শহরে যাইস না। চরিত্র খারাপ হইয়া যাইবো। কুকুর-বিড়াল টানাটানি করবো। নূরবানু কারো কথা শোনে না। মনে মনে ভাবে, তোমরা কি আমারে ভাত-কাপড় দিবা? তারচেয়ে শহরে গতর খাটাইয়া নিজের ভাত জোগাড় করুম। প্রথম প্রথম শহরে এসে নূরবানু কয়েক বাড়িতে ছুটা বুয়ার কাজ করে। বেতন যা পেত তা দিয়ে দুই বেলা চলে যেত। কিন্তু বাড়ি বাড়ি ঘোরা আর মালিকদের বউদের গালাগালি হজম হতো না নূরবানুর। ধানমন্ডি পনেরো নম্বরে এক বাসার বিবি সাহেব নূরবানুর হাতে গরম খুন্তির ছ্যাঁকা দেয়। রুটি পোড়ানোর অপরাধে এই শাস্তি।
এই ঘটনার পর ছুটা বুয়ার কাজ ছেড়ে কিছুদিন ইট ভাঙার কাজ নেয়। সে-কাজেও ঝামেলা হয়। কন্ট্রাক্টরের শালা ফজলু নূরবানুকে তার ঘরে যাওয়ার প্রস্তাব দেয়। কাজের সময় হায়েনার মতো ওর দিকে তাকিয়ে থাকে। নূরবানু ভয়ে কাজ ছেড়ে চলে আসে। কয়েকদিন রাস্তার পাশে পলিথিন দিয়ে ঘর বানিয়ে থাকে। ওইখানেই মতির মায়ের সঙ্গে পরিচয়। মতির মা বলে, তুই ভাঙারির জিনিস টুকাইয়া বিক্রি করতে পারোস, আমি তরে পথ-ঘাট দেখাইয়া দিবো। সেই থেকে রাস্তায় নামে নূরবানু। ভাঙা জিনিস, প্লাস্টিকের বোতল, যা পায় সব কুড়িয়ে নিয়ে বিক্রি শুরু করে। প্রথমদিকে তেমন একটা লাভ হতো না। ধীরে ধীরে শিখে নেয় কোন জিনিসে ভালো দাম পাওয়া যাবে। কোনো জিনিস রেখে দিলে পরে বিক্রি করা যাবে। ভাঙারির দোকানে সব ফেলানো জিনিসের মূল্য। দুনিয়ায় যে ফেলানো জিনিসেরও এতো দাম আছে আগে জানা ছিল না তার। ভাঙা কাচের টুকরা, প্লাস্টিকের বোতল, ওষুধের শিশি, স্নো-পাউডারের কৌটা – সবকিছুর দাম আছে ভাঙারির দোকানে। খালি নাই মানুষের দাম।
নূরবানু ঘরের মধ্যে হাঁটে আর ভাবে, এতো বড় দুনিয়ায় কত মানুষ, কত কী করতাছে, চাঁদে যাইতাছে; কিন্তু নূরবানুর জীবন যেন এই চার দেয়ালের খাঁচায় বন্দি। ঢাকা শহরের অলিগলি, পচা ডাস্টবিন, ময়লার গাড়ি, ভাগাড়, ভাঙারির দোকান – এই হলো তার দুনিয়া। সব বাতিল মাল বিক্রি করে তার জীবন চলে; কিন্তু বাতিল হয়ে যাওয়া নূরবানুর যেন কোনো মূল্য নেই। শক্ত মাটিতে পা ঘষতে ঘষতে নিজেকে টেনে নিয়ে চলা সকাল থেকে রাত অবধি। প্রতিদিন একই রুটিন। সকালে একটা বনরুটি আর এক কাপ চা মুখে গুঁজে ঢাউস এক পলিথিনের ব্যাগ নিয়ে ময়লার ভাগাড়ে ভাগাড়ে ঘুরে বেড়ানো। ময়লা-কাদা ঘেঁটে জীবনকে খুঁজে বেড়ানো। সবাই চায় সুন্দর-সুবাসিত জীবন; কিন্তু নূরবানুর সমস্ত দিন কাটে পুঁতিগন্ধময় এলাকায়। এই ভাগাড়েই একদিন এক শিশি আতর পেয়েছিল নূরবানু। কি তার সুগন্ধ! বস্তির ছোট্ট ঘর সেই সুগন্ধে ম-ম করছিল। সারারাত ঘুম আসেনি। গ্রাম ছাড়ার পর সব ছাড়লেও ভাত খাওয়া ছাড়ে নাই নূরবানু। কিন্তু ইদানীং চালের এতো দাম বেড়ে গেছে, প্রতিদিন ভাত খাওয়া কঠিন হয়ে গেছে। মোড়ের দোকান থেকে বনরুটি আর কলা কিনে খেয়ে দিন কাটিয়ে দেয়। বেশি খিদা লাগলে দুটা শিঙাড়া কিনে খায়। মতির মা যে ট্রাকের কথা বলেছে, নূরবানু শুনেছে, সেখানে চাল, ডাল, তেল, চিনি সবকিছু ন্যায্যমূল্যে বিক্রি হয়। নূরবানুর মতো মানুষদের জন্য গভর্নমেন্ট এই নিয়ম চালু করেছে। যুদ্ধের পর গ্রামে গ্রামে রিলিফের গম দেওয়ার কথা এখনো মনে আছে নূরবানুর।
ঘুম থেকে উঠে মোড়ের দোকান থেকে এক কাপ চা আর দুটো লাঠি বিস্কুট খেয়ে নূরবানু মতির মায়ের সঙ্গে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে যায়। বরাবরের মতো আজো পায়ে স্যান্ডেল নেই, হাতে বড় পলিথিনের ব্যাগ। জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডের উত্তরপাশে মানুষ আর মানুষ। বড় একটা লাইন ধরে সবাই দাঁড়িয়ে আছে। এখনো রেশনের ট্রাক আসেনি। সকাল নয়টায় আসবে। সকাল সাতটায় বিশাল লাইন হয়ে গেছে। যত বেলা বাড়ছে লাইন তত বড় হচ্ছে। ভাদ্রের গরমে নূরবানুর মাথার তালু ফেটে যেতে চায়। বড় রাস্তার পিচ গলে পায়ে ছ্যাঁকা লাগে। নূরবানু বলে, মতির মা, আর কতক্ষণ? আর তো পারি না, গলা শুকাইয়া কাঠ, পা বেদনা শুরু হইছে। মতির মা সঙ্গে আনা পানির বোতল দেয়। নূরবানু ঢক্ঢক্ করে বোতলের পানি খেয়ে ফেলে, তবু তার পিপাসা মেটে না। নয়টায় চাল-ডাল বিক্রি শুরু হয়ে এগারোটার মধ্যে শেষ হয়ে যায়; কিন্তু নূরবানুদের চালের দেখা মেলে না। লাইনের অনেক সামনে থেকেই চাল বিক্রি বন্ধ হয়ে যায়। দুজন ঠা-ঠা রোদে জিগাতলা বাসস্ট্যান্ড ছেড়ে মহল্লার দিকে পা বাড়ায়। তাদের সারা শরীর দিয়ে দরদর করে ঘাম ঝরতে থাকে। সূর্যও খাড়াভাবে উত্তাপ ছড়াতে থাকে। পুরো এলাকা নূরবানুর কাছে কারবালার ময়দানের মতো লাগে, এক মাইল হেঁটে একটা কল পায়। কলে মুখ লাগিয়ে পানি খেতে থাকে। মনে হয় পানির কলটাকে নূরবানু যেন গিলে খাবে। গরমের হলকা চোখে-মুখে ঢুকে পড়েছে। অনেকটা বেহুঁশের মতো দুজন রাস্তার পাশে বসে বিশ্রাম নেয়। আজ আর মাল টোকানোর ইচ্ছা নেই। ঘরে ফিরে যায় দুজনে। পরদিন আরো সকালে, ছয়টার সময় জিগাতলা বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে চালের জন্য লাইনে দাঁড়ায়। আজো অনেক ভিড়। লোকজন ভোর হওয়ার আগেই লাইনে এসে দাঁড়ায়। চাল দেওয়া শুরু হলে লাইনের আর ঠিক থাকে না। যে যেভাবে পারে একজন আরেকজনকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে সামনে এগোয়। নূরবানু শরীরের সব শক্তি দিয়ে লাইন ভেঙে সামনে এগোয়; কিন্তু ট্রাকের কাছ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে না, তার আগেই সব চাল শেষ হয়ে যায়। সে হতাশ মনে ঘরে ফিরে আসে। আজকেও ভাত খাওয়ার ইচ্ছে মেটে না। একটা বনরুটি কিনে পানি দিয়ে ভিজিয়ে খায়। পরদিন ফজরের আগে রওনা দেয়। তখনই
বিশ-তিরিশজন লাইন করে দাঁড়িয়ে গেছে। নূরবানু প্রতিজ্ঞা করে – চাল না নিয়ে আজ এই জায়গা ছাড়বে না। চাল-ডাল-তেল-চিনি বিক্রি শুরু হলে শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে লাইন এগোতে থাকে। নূরবানু প্রায় ট্রাকের কাছে পৌঁছে যায়। ঠিক তখন একদল জোয়ান ছেলে ধাক্কাধাক্কি করে লাইনের সামনে চলে যায়। নূরবানুসহ অন্যরা গায়ের সব শক্তি দিয়ে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করে। একটা ধস্তাধস্তি শুরু হয়ে যায়। ট্রাক থেকে একজন বলশালী লোক বলে, কমিশনারের লোক আসছে। সবাই ওনাদের পিছনে দাঁড়ান। লোকজন চিৎকার করতে থাকে, ধাক্কিয়ে সামনে যেতে চায়। নূরবানুও সেই দলে শামিল হয়। ছেলেগুলি কিছু লাঠি জোগাড় করে বেধড়ক পেটাতে শুরু করে। নূরবানু একজনের হাতের লাঠি কেড়ে নিতে চেষ্টা করে। ছেলেটি নূরবানুকে ধাক্কা দিয়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ঘুসি মারতে থাকে। নূরবানুও ছেলেটিকে ঘুসি মারতে থাকে। দাঁত দিয়ে রক্ত পড়তে থাকে। মতির মা টানতে টানতে নূরবানুকে ভিড়ের বাইরে নিয়ে আসে। নূরবানুর সারা শরীরে ঘুসির জন্য প্রচণ্ড ব্যথা, উঠে দাঁড়াতে পারে না। সামনের দাঁত ভেঙে রক্ত পড়ছে। সস্তার সরকারি চাল আর খাওয়া হয় না। ন্যায্যমূল্যের চাল সংগ্রহ করতে অনেক দাম দিতে হলো। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে ঘরে ফেরে নূরবানু। সারা শরীরে ব্যথা, কোঁকাতে থাকে। মতির মাকে গালাগালি করতে থাকে। রাত বাড়তে থাকলে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। স্বপ্নে এক থালা জুঁই ফুলের মতো সাদা ভাতের সুগন্ধ ভেসে বেড়ায় বাতাসে। নূরবানু পাশ ফিরে শোয়।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.