বর্তমানে সাহিত্যাঙ্গনে একটি কথা বারবার উঠে আসছে যে, পাঠক নেই। অর্থাৎ বইয়ের পাঠক নেই, সাহিত্যেও পাঠক নেই। পাঠক সংকটের কারণে কবি-সাহিত্যিকদেরও মধ্যে ফুটে উঠছে হতাশা এই জন্য যে, তাঁরা লিখছেন, বইপত্রও ছাপা হচ্ছে; কিন্তু এসব বই পড়ার মতো পাঠক নেই। যেহেতু পাঠক নেই, সেহেতু বই বিক্রিও নেই, অথবা প্রত্যাশিত পর্যায়ে বই বিক্রি নেই। যেহেতু বই বিক্রি হয় না সেহেতু প্রকাশকরাও টাকা লগ্নি করে বই ছাপাতে আগ্রহী হন না। এর ফলে, অনেক লেখকের উদ্যম থমকে গেছে, যাচ্ছে এবং অনেকের লেখালেখির ক্ষেত্রে স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে। অনেক নবীন লেখক বিপুল উৎসাহে নিজেদের ট্যাঁকের পয়সা খরচ করে বই প্রকাশ করছেন, নিজেরাই কিনছেন এবং হয়তো ঘরে স্তূপ করে রাখছেন অথবা বন্ধুবান্ধব বা আত্মীয়স্বজনকে দিচ্ছেন নিজেকে লেখক হিসেবে পরিচিত করানোর জন্য, আত্মতৃপ্তির জন্য। এই চর্চা যে শুধু বাংলাদেশে, তা নয়, বরং পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও আছে। কিছু নবীন লেখক এভাবেও একসময় প্রতিষ্ঠিত লেখক হন – এমন নজির ও ইতিহাস বাংলাদেশে আছে। পৃথিবীর অন্য দেশেও হয়তো আছে যা আমাদের জানা নেই।
তবে আজকের ও অতীতের, ধরা যাক চল্লিশ বছর আগের, প্রেক্ষাপট থেকে নানা কারণেই ভিন্ন। চল্লিশ বছর আগের পৃথিবীর সাহিত্যাঙ্গন বর্তমানের অবস্থা থেকে ছিল ভিন্ন। বর্তমানে প্রযুক্তির কারণেই কাগুজে বইয়ের পাঠক সারা পৃথিবীতেই নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। বরং বলা যায়, বাংলাদেশে আগেও বইয়ের পাঠক কম ছিল এখন আরো কমে যাওয়াতে সাহিত্যের বাজারে পাঠকসংকট দেখা দিয়েছে। এই সংকট থাকা সত্ত্বেও বাংলাদেশে মাসব্যাপী বইমেলা অনুষ্ঠিত হওয়ার কারণে বই কিন্তু কম ছাপা হচ্ছে না। বইমেলা সংস্কৃতির প্রভাবে বাংলা সাহিত্যের কতটুকু লাভ হচ্ছে অথবা আদৌ কোনো লাভ হচ্ছে কি না, তারও গবেষণা হওয়া দরকার। যা হোক, বইমেলাকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর আনুমানিক গড়পড়তায় চার হাজারের মতো বই ছাপা হয়ে থাকে। অবশ্যই ষোলো কোটি মানুষের দেশে বছরে চার হাজার নতুন বই ছাপা হওয়া বড় কোনো ঘটনা নয়।
যদি বইয়ের পাঠকই না থাকে তাহলে বই ছাপিয়ে লাভ কী? বই যদি পাঠকের হাতেই না গেল, পাঠক যদি বই না পড়ল তাহলে সেসব বই কেন ছাপাতে হবে? এক কথায় বলা যায়, কোনো লাভ নেই। কোনো লেখা যদি কোনো পাঠক না পড়েন তাহলে এই লেখা চিরকালের জন্য মৃত এবং তা কাগজের আর সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। একসময় এই বইয়ের কাগজ ঠোঙা হিসেবে মানুষের কাছে যাবে এবং ঠোঙার পরিণতি সম্পর্কে আমরা সবাই কমবেশি অবগত।
বর্তমানে লেখালেখির কিছুটা ইজ্জত রক্ষা করছে ফেসবুক নামক সামাজিক মিডিয়া। ফেসবুকের লেখা কেউ পড়ুক কিংবা না পড়ুক কিছু মানুষ অন্তত সেই লেখার ওপর চোখ বুলিয়ে তার ইজ্জত বাঁচাচ্ছে। এটা কম কথা নয়।
আমাদের ভাবতে হবে, সাহিত্য মানুষ কেন পড়ছে না? আবার অন্যভাবেও প্রশ্নটা করা যেতে পারে যে, সাহিত্য মানুষ কেন পড়বে? সাহিত্য ছাড়া কি জীবন অচল? জীবন কি থেমে থাকে? এই প্রশ্নগুলির দুটি উত্তর পাওয়া যেতে পারে, যার একটি হলো হতাশাব্যঞ্জক ও অন্যটি আশাব্যঞ্জক। হতাশাব্যঞ্জক এই জন্য যে, সাহিত্যপাঠ ছাড়াও মানুষের জীবন দিব্যি চলে এবং সারা পৃথিবীতে অসংখ্য মানুষ সাহিত্যপাঠ ছাড়া অনায়াসে জীবন চালিয়ে দেয়। আর আশাব্যঞ্জক উত্তর দিতে হলে একটু গোড়ার দিকে যেতে হয়। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া মানুষের জীবনও কিন্তু অচল নয়। তাহলে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কী প্রয়োজন? পৃথিবীর মানুষ কেন শিক্ষা গ্রহণ করছে? এই প্রশ্নের উত্তরের ফয়সালার মধ্য দিয়ে সাহিত্যপাঠের প্রয়োজনের বিষয়টিও উন্মোচন করা যেতে পারে।
মানুষ অন্যান্য প্রাণীর মতো নয় যে, তার বিবেকবোধ ও রুচিবোধের পরিবর্তনের প্রয়োজন নেই, কিংবা তার নান্দনিক ও পরিশীলিত জীবন যাপনের প্রয়োজন নেই। মানুষ পশু নয় যে তার বিবেক, চিন্তা, চেতনা, আবেগকে জাগিয়ে তোলার বা বিকশিত করার প্রয়োজন নেই। যদি মানুষের বিবেক, চিন্তা, চেতনা, নান্দনিকতা ও আবেগকে জাগিয়ে তোলার প্রয়োজন হয় তাহলে শিক্ষাই একমাত্র পন্থা যার মাধ্যমে তা সম্ভব। যদি তা না হতো তাহলে আজকের সভ্য জগতের মানুষ এখনো গুহাবাসী হয়ে অরণ্যে বসবাস করত আর পশুপাখিমৎস্য শিকার করে খেয়ে জীবন চালাত। মানুষ জ্ঞানের আলোর জগতে প্রবেশ না করে পড়ে থাকত অজ্ঞতার গভীর অন্ধকারে। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করেছে শিক্ষার আলো। শিক্ষা তৈরি করেছে আলোকিত মানুষ এবং আলোকিত মানুষরাই পৃথিবীকে বদলে দিয়েছে জ্ঞানবিজ্ঞানের সম্প্রসারণের মাধ্যমে। তাহলে এক বাক্যে স্বীকার করতে হয় যে, শিক্ষার প্রয়োজন আছে এবং পৃথিবীর মানুষ যে নিরক্ষরতার অন্ধকার দূর করে শিক্ষার আলো ছড়ানোর প্রয়াসে ব্যাপৃত, তার এর জীবন পরিবর্তনকারী প্রয়োজনীয়তা আছে।
শিক্ষার সঙ্গে সাহিত্যপাঠের রয়েছে নিবিড় সম্পর্ক। কীভাবে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে? হয়তো আবারো প্রশ্ন দেখা দিতে পারে। এর জবাব হতে পারে, শিক্ষার জন্য ভাষার দক্ষতা বিশেষভাবে প্রয়োজন এবং ভাষা-শিক্ষার প্রাথমিক ধাপ হলো সাহিত্য। শিশুরা কীভাবে ভাষা শেখে একটু নজর দেওয়া আবশ্যক। শিশুশিক্ষা শুরু হয় বর্ণমালা ও সংখ্যা দিয়ে। এই দুটির ক্ষেত্রেই ভাষার দক্ষতার প্রয়োজন রয়েছে। সে-দক্ষতা অর্জিত হয় মূলত সাহিত্যের মাধ্যমে, যে-সাহিত্যকে আমরা শিশুসাহিত্য বলে থাকি। এখানে বলা প্রয়োজন যে, শিশুসাহিত্যই ভাষা শিক্ষা ও দক্ষতা বাড়ানোর প্রাথমিক সোপান। ভাষার দক্ষতা বলতে কেবল পড়তে পারা নয়, বরং পড়তে, লিখতে, বুঝতে ও ব্যাখ্যা করতে পারার দক্ষতার সমষ্টিকে বোঝানো হয়ে থাকে। বাংলাদেশে অনেকেই আরবি পড়তে পারে, কোরআন মুখস্থ বলতে পারে; কিন্তু তাদের অধিকাংশই ভাষাটি এবং সেই ভাষায় নিহিত অর্থগুলি বুঝতে পারে না এবং ব্যাখ্যা করার দক্ষতাও তাদের নেই। তাই তাদের আরবি ভাষার দক্ষতা আছে – এমনটি স্বীকার করে নেওয়ার সুযোগ নেই।
একজন শিক্ষার্থী শিক্ষার যে-কোনো শাখায় লেখাপড়া করুক না কেন সাহিত্যপাঠ তার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন। বিত্তের বিকাশ ঘটাতে হলে চিত্তের বিকাশ ঘটাতে হবে আগে। চিত্তের বিকাশ ঘটবে তখনই যখন মনন পরিমিত পুষ্টি পাবে। পরিমিত পুষ্টিই হলো শিল্পসাহিত্য। শিল্পকে বুঝতে হলেও সাহিত্যপাঠ অপরিহার্য। সাহিত্যপাঠ তথা শিল্পসাহিত্যের ছোঁয়ায় মানুষ লাভ করে পরিশীলিত জীবন, যে-জীবন হয় নান্দনিক, শিল্পময়, আনন্দময়, চর্চিত ও উৎকর্ষিত। উৎকর্ষ ছাড়া কোনো জীবন বন্ধ্যা জমিনের মতোই – মাটি আছে কিন্তু ফসল নেই।
জ্ঞানের মূল উৎস হলো দর্শন। দর্শন সত্যকে অনুসন্ধান করে। সত্যের অনুসন্ধানে মানুষ লাভ করে উৎকর্ষিত ও পরিশীলিত জীবন। দর্শনের প্রসারের মাধ্যমে জ্ঞান-বিজ্ঞান বিস্তার লাভ করেছে যেখান থেকে মানুষের চিন্তার প্রসার ঘটছে। দর্শনে যেমন সাহিত্য আছে, তেমনি সাহিত্যে দর্শন আছে। সে-কারণেই নান্দনিকতা ও বিচারবোধের জন্য সাহিত্য অপরিহার্য। কারণ সাহিত্য জীবন, সমাজ ও সংস্কৃতিকে অনুধাবন করতে শেখায় এবং নিয়মতান্ত্রিক সুশৃঙ্খল জীবনে অভ্যস্ত করতে সহায়তা করে।
বাংলাদেশে কেন পাঠক সংকট – এই প্রশ্নটির উত্তর অনুসন্ধান করা যেতে পারে। প্রসঙ্গত, বর্তমান বিশ্বের তথ্যভাণ্ডার হলো গুগল, যা থেকে চাহিদা অনুযায়ী মোটামুটি সব তথ্য পাওয়া যায়। গুগলে সার্চ দিলে ÔWhich country is the most advenced in reading?Õ যে-তালিকাটি দেখা যায় তাতে পাওয়া যায় ভারত সবার ওপরে। সেখানে প্রত্যেক মানুষ প্রতি সপ্তাহে ১০.৪২ ঘণ্টা পড়ার জন্য সময় ব্যয় করে। এই তালিকায় বাংলাদেশের নাম পাওয়া যায় না, অথবা কখনো পাওয়া গেলেও নিঃসন্দেহে তা অবশ্যই তলানিতে থাকবে। বাংলাদেশের ভারতের লেখাপড়ার মান, সে-দেশের মানুষের পাঠাভ্যাস সম্পর্কে ধারণা রাখেন তাদের কাছে এই তথ্যটি অভাবনীয় মনে হবে না। আমাদের অনেকের ধারণা ছিল যে, জাপানিরা পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পড়ুয়া জাতি। তারাও যে পড়ুয়া তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু ওই তালিকার নিচের দিকে জাপান অবস্থান করছে। বাংলাদেশের বাইরে যাঁরা ইউরোপ, আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, কোরিয়া, কানাডা ভ্রমণ করেছেন বা করেন তাঁরা নিশ্চয়ই স্বীকার করবেন যে, ওসব দেশের মানুষ প্রচুর পড়ে; এমনকি, ভ্রমণের সঙ্গী হিসেবে তাদের হাতে থাকে বই, বর্তমানে কাগজের বইয়ের পাশাপাশি ইবুক (কিন্ড্ল)। শুনেছি, ওসব দেশে বিভিন্ন পাবলিক পয়েন্টে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন রকমের বই রাখা থাকে, যেখান থেকে পড়ুয়ারা বই নিয়ে পড়তে পারেন, এজন্য তাঁদের কোনো পয়সা দিতে হয় না। সেসব দেশে সরকারিভাবেই মানুষকে পড়তে উৎসাহিত করা হয়, যা সেসব দেশের সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে তুলনা করলে খুব সহজেই বুঝতে পারা যায়, তারা পড়ে বলেই তারা উন্নত জাতি এবং আমরা পড়ি না বলে আমরা দরিদ্র এবং বিভিন্ন বিষয়ে ওদের সাহায্যের জন্য আমরা তীর্থের কাকের মতো চেয়ে থাকি। আমরা শুধু অর্থনৈতিকভাবে দরিদ্র না, আমরা দরিদ্র চিন্তাচেতনায়, মানসিকতায়, সংস্কৃতিতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে। আমরা পড়ুয়া না বলেই তাদের সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল জাতি আমরা। তবে সমস্যার কথা হলো যে, বই পড়ার কথা হলেই হাজারো রকম অজুহাতে পড়াকে আমরা খারিজ করে দিই। আমরা দরিদ্র থাকতে ভালোবাসি বলেই বই না পড়ার অজুহাত দিই; কিন্তু একবার চিন্তা করে দেখি না যে, পৃথিবীর উন্নত দেশগুলি কীভাবে তাদের জীবনকে গড়ে তুলেছে, কীভাবে তারা উন্নত হয়েছে, কীভাবে সভ্য সমাজে পরিণত হয়েছে, কীভাবে জ্ঞানবিজ্ঞানে অবদান রাখছে। এদিক থেকে যদিও আমাদের লজ্জিত হওয়ার কথা, কিন্তু লজ্জিত কি আমরা কখনোই হয়েছি বা হই? আমাদের অনেকে মেধাবী মানুষ ওইসব দেশে পড়তে যায় কেন? তাদের দেশের কোনো মানুষ তো আমাদের দেশে পড়তে আসে না। কেন আসে না? কারণ, আমাদের এমন কোনো জ্ঞান-বিজ্ঞান নেই যেখান থেকে তারা কিছু শিখতে পারে। আমাদের কাছে এমন কোনো প্রযুক্তি নেই যা তাদের প্রয়োজন। আমাদের দেশে তারা আসে দারিদ্র্যর ওপর গবেষণা করার জন্য। উন্নত বিশ্বের শিক্ষার জন্য আমরা গিনিপিগ।
বাংলাদেশের মানুষের পাঠাভ্যাস কেন গড়ে ওঠেনি এই বিষয়টির গভীরে যাওয়া এবং ইতিহাস ঘাঁটা দরকার। বাংলাদেশে পাঠসংস্কৃতি গড়ে না ওঠার পেছনে প্রধান কারণ হলো বাংলাদেশের মুসলমান সমাজ প্রথমত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাওয়া শুরু করেছে সনাতন ধর্মালম্বীদের অনেক পরে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গেলেও মুসলমান সমাজ মাদ্রাসার শিক্ষা দিয়ে শুরু করেছে, তারা ইংরেজি পড়াকে ইহুদি-নাছারাদের ভাষা, যা পড়লে ধর্ম থাকবে না, ইমান থাকবে না ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষাগ্রহণ না করে মাদ্রাসায় পড়াশোনা শুরু করে। মুসলমানদের মধ্যে খুব সামান্যই অগ্রসর চিন্তার মানুষ ছিলেন যাঁরা মাওলানাদের ফতোয়াকে উপেক্ষা করে স্কুলে বা ইংরেজি শিক্ষার প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের পাঠিয়েছেন। যাঁরা লেখাপড়ার ব্যাপারে সচেতন ছিলেন তাঁদের অধিকাংশের বাড়িতেও আরবি ও ফার্সি ভাষায় রচিত ধর্মীয় পুস্তকাদি পড়তে দেওয়া হতো, ফলে শিক্ষার হার হিন্দুদের তুলনায় অনেক পিছিয়ে গেল। হিন্দু পরিবারে বিদ্যাচর্চার পাশাপাশি পাঠাভ্যাসও গড়ে উঠেছিল এবং অনেক পরিবারে সমৃদ্ধ লাইব্রেরি থাকত, পরিবারের সবাই পাঠের সংস্কৃতির মধ্যে বড়ো হতো, অনেক পরিবারে সংগীতের চর্চা হতো। এ-কারণেই তাদের মধ্যে শিক্ষাদীক্ষার বিস্তার ঘটে মুসলমানদের চেয়ে অনেক বেশি। এর ফলে কী হলো? যোগ্যতাবলেই তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। বাংলাদেশে প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলির প্রায় সবই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্যোগে, দানে ও ত্যাগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যা অস্বীকার করার উপায় নেই। তার মানে শিক্ষা বিস্তারে ও গ্রহণে মুসলমানদের ভূমিকা ছিল অত্যন্ত নগণ্য। ওই সময়টা বর্তমান যুগ থেকে কত প্রজন্মের আগে তা মোটা দাগে হিসাব করলে বোঝা যায়, সেটি আজ থেকে কমপক্ষে পাঁচ-ছয় প্রজন্ম আগে শুরু হয়েছিল। তার মানে পাঁচ-ছয় প্রজন্ম আগে থেকে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িতে বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল, যেখানে এদেশের মুসলমানরা ক্ষেতে-খামারে কাজ করতেন, দোকানদারি ইত্যাদি করতেন। লেখাপড়ার ধার ধারতেন না, বই পড়ার তো প্রশ্নই আসে না।
অনস্বীকার্য যে, পাঠাভ্যাস পারিবারিক সংস্কৃতির বলয়ে গড়ে ওঠে। যেসব পরিবারে মা-বাবা পড়ুয়া সেসব পরিবারের শিশুরা পড়াশোনার মধ্য দিয়ে বড় হয় এবং তাদের মধ্যে পাঠাভ্যাস স্বতঃস্ফূর্তভাবে গড়ে ওঠে। ব্রিটিশ আমল থেকে ভারতবর্ষের সনাতন ধর্মাবলম্বীরা ইংরেজি শিক্ষায় যখন শিক্ষিত হতে শুরু করেছে তখন মুসলমান সমাজ ধর্মের দোহাই দিয়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানবিমুখ হয়েছে। তৎকালীন ধর্মীয় নেতারা শুধু নিজেরাই ইংরেজি শিক্ষার প্রতি বিরাগভাজন ছিলেন না, বরং বলা যায় তাঁদের ফতোয়ার কারণে সাধারণ মানুষও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানমুখী হয়নি। সামান্য কিছু অগ্রসর চিন্তার ও মুক্তমনা মানুষ ওইসব ধার্মিকের ফতোয়া গ্রহণ না করে ইংরেজি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে লেখাপড়া করেছিলেন, তাঁদের পারিবারিক সংস্কৃতিতে বইপড়া হতো, তাঁরা প্রগতিশীল ছিলেন এবং বংশপরম্পরায় আজকে অনেক মানুষ নিজেদের শিক্ষিত, প্রগতিশীল ও সংস্কৃতিমনা দাবি করতে পারেন। কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া, আজকের বাস্তবতায়ও তাই দেখা যায়।
এবার বাংলাদেশের গ্রামের দিকে দৃষ্টি দেওয়া যাক। গত শতাব্দীর শেষদিকে সরকারিভাবে ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা’ নীতি ঘোষণার পর এবং বৈশ্বিক চাপে ও অর্থায়নে আর্থিক ও শিক্ষা উপকরণ দিয়ে এই নীতি বাস্তবায়নের পর অনেক পরিবার শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো শুরু করে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো এই লক্ষ্যমাত্রা শতভাগ অর্জিত হয়নি। তবে স্বীকার করতে হবে যে, বর্তমানে প্রতিটি পরিবারের শিশুরা প্রাথমিক স্কুলে ভর্তি হয়, সারাদেশে প্রাথমিক পর্যায়ে লেখাপড়ার আবহ তৈরি হয়েছে। যেসব পরিবারের শিশু প্রথম শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছে এবং ওইসব পরিবারের পূর্ববর্তী প্রজন্মের কেউ আগে লেখাপড়া করেনি, তাদের শিক্ষাক্ষেত্রে প্রথম প্রজন্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অর্থাৎ এই প্রজন্মের আগের প্রজন্মের দেশের জনসংখ্যার একটি বড় অংশই কিন্তু নিরক্ষরতার অভিশাপ থেকে মুক্ত হতে পারেনি, ফলে সেসব পরিবারে পাঠাভ্যাসের সংস্কৃতিও গড়ে ওঠার প্রশ্নই আসে না। সুযোগও নেই। পক্ষান্তরে, যেসব পরিবারে দ্বিতীয় বা তৃতীয় প্রজন্ম হিসেবে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশ করেছে সেসব পরিবারেও পাঠাভ্যাসের সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি কিছু ভ্রান্ত ধারণার জন্য যেমন, ‘আউট বই’ অর্থাৎ স্কুল-কলেজের পাঠ্য তালিকার বাইরের বই পড়লে ছেলেপুলে নষ্ট হয়ে যাবে। এই ভ্রান্ত ধারণার কবলে পড়ে বাংলাদেশে কিছু অগ্রসরচিন্তার মুক্ত ও সংস্কৃতিমনা পরিবার ছাড়া বাকি পরিবারে বই পড়ার সংস্কৃতি গড়ে ওঠেনি এবং পরিণতিতে শিশুদের তথা মানুষের মধ্যে পাঠাভ্যাসও গড়ে ওঠেনি। এখন ভেবে দেখুন এদেশে পাঠক কেন সৃষ্টি হয়নি। তার মানে আমাদের শিকড় অত্যন্ত দুর্বল। আমাদের চিন্তা-চেতনা অজ্ঞতা ও কুসংস্কারের বৃত্তে বন্দি এবং সে-কারণে আমরা অনগ্রসর জাতি হিসেবে রয়ে গেছি।
বই পড়ার মাধ্যমে কেবল জ্ঞান বৃদ্ধি, চিন্তা-চেতনার পরিবর্তন করে সংস্কৃতিমনস্ক হওয়া যায় এবং পরিশীলিত জীবন যাপন করা যায় তাই নয়, বরং কর্মজীবনেও সাফল্য অর্জন করা যায়। যাঁরা বিভিন্ন পেশায় জড়িত আছেন তাঁরা নিজেদের আশেপাশে বা অফিসের সহকর্মীদের সম্পর্কে ভাবলে স্পষ্টভাবে বুঝতে পারবেন যে, যাঁরা শৈশব থেকে পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্যান্য বই পড়েছেন কর্মজীবনে তাঁদের সাফল্য বেশি অর্থাৎ কর্মজীবনে তাঁরা বেশি ভালো করছেন। অনেকেই বিশ্বাস করবেন, পেশাগত জীবনে কর্মদক্ষতা বেশি প্রয়োজন এবং কর্মদক্ষতার মাধ্যমে বেশি সাফল্য অর্জন করা সম্ভব। এই কথা অনেকাংশে ঠিক হলেও পরিষ্কারভাবে বলা যায়, নীতিনির্ধারকদের ক্ষেত্রে দক্ষতার চেয়ে জ্ঞানের মূল্যায়ন অধিক। বলা বাহুল্য, জ্ঞান একদিনে অর্জিত হয় না, দীর্ঘদিনের ধারাবাহিক পঠনপাঠন ও কর্মের ভিত্তিতে জ্ঞান অর্জিত হয়। এজন্য শৈশব থেকে জ্ঞানের ভিত্তি স্থাপন করতে হয়।
বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টরে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় ও শ্রীলঙ্কার জনবল কাজ করছে এবং তারা প্রচুর পরিমাণে রেমিট্যান্স তাদের দেশে পাঠাচ্ছে। বাংলাদেশ বেকার সমস্যায় জর্জরিত হলেও বিদেশিদের কেন আনতে হয়? বাংলাদেশে কি যোগ্য লোকবল নেই? হ্যাঁ, বাংলাদেশে লোকবল আছে কিন্তু একটি সেক্টরের লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রত্যাশিত মানের যোগ্য লোক যখন পাওয়া যায় না তখন বিদেশিদের ওপর নির্ভর করতে হয়। প্রাইভেট সেক্টরে যেসব বিদেশি এদেশে কাজ করতে আসেন তাঁদের যোগ্যতাবলেই আসেন, স্বজনপ্রীতিতে বা অনুকম্পায় বা ঘুস দিয়ে আসেন না। এই যোগ্যতা মেধার, প্রজ্ঞার ও দক্ষতার। পূর্বেই ভারতের মানুষের গড়পড়তা লেখাপড়ার একটি পরিসংখ্যান উল্লেখ করা হয়েছে, যেখান থেকে অনুধাবন করা যায় যে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম পড়ার সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে তারা উচ্চতর মেধার অধিকারী হয়েছে এবং এজন্য শুধু বাংলাদেশে নয় সারাবিশে^ ভারতীয়রা বিভিন্ন পেশায় উচ্চতর পদে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে। বাংলাদেশে মেধাবী নেই – এ-কথা বলা ঠিক নয়, বাংলাদেশেও আছে। বাংলাদেশের অনেক মেধাবী দেশের বাইরে কাজ করছেন – এ-কথাও সত্য; কিন্তু গবেষণা করলে হয়তো দেখা যাবে ভারতীয়রা এক্ষেত্রে বাংলাদেশিদের চেয়ে বহুদূর এগিয়ে আছে। এ-রূপ এগিয়ে থাকার কারণ তাদের পেশাগত দক্ষতা ও ভাষাশৈলীর জন্য। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, তাদের পাঠাভ্যাসের কারণেই ভাষাশৈলী বাংলাদেশিদের চেয়ে উন্নততর এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের কারণে ভাষাশৈলীর জনবল প্রয়োজন বলে প্রাইভেট সেক্টরে নিয়োগ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে পরীক্ষায় পাশ করে চাকরির প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়া এবং পাঠাভ্যাস না থাকার কারণে আমরা দক্ষ জনবলও তৈরি করতে পারছি না। মানুষের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে জাগিয়ে তোলা ও বিকশিত করার জন্য যে-প্রক্রিয়া দরকার সে-প্রক্রিয়া আমরা শুরু করতে পারছি না। বই পড়ার গুরুত্ব যে অপরিসীম সে-কথা স্বীকার করে দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা মানুষকে পাঠকমুখী করে তোলার জন্য কোনো প্রয়াস না চালিয়ে উল্টো শুধু হতাশার হা-পিত্যেশ করেন।
এমন কোনো নজির কি পাওয়া যাবে যে, না পড়ে কোনো জাতি জ্ঞানের শিখরে আরোহণ করেছে? জ্ঞান ছাড়া কোনো জাতি উন্নতির শিখরে আরোহণ করেছে? এমনটি কোথাও দেখি না।
বই পড়ার ক্ষেত্রে বর্তমানে আরেকটি সমস্যা সৃষ্টি করেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। স্কুল থেকেই শিক্ষার্থীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসক্ত হয়ে পড়ে এবং স্কুলের পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঢুকে সময় কাটায়। বলতে গেলে প্রায় সব শিক্ষার্থী পাঠবিরাগী। এখন যারা স্কুল-কলেজে আছে তারা আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম এবং এই প্রজন্ম কতটুকু মেধাবী হয়ে বিশ^দরবারে হাজির হবে তা ভাবার বিষয়। এই প্রজন্ম বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে কি না তা ভেবে দেখা দরকার। শুধু কর্ম করে কোনোমতে বেঁচেবর্তে থাকা তো জীবন নয়, বৈশি^ক মেধাবীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকাও দরকার। আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছে, একটি দুর্বল প্রজন্ম আগামীদিনের বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় মেধাহীনভাবে অংশ নিতে যাচ্ছে। তাই পাঠবিরাগ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ খুঁজতে হবে যদি বর্তমান ও ভবিষ্যতের প্রজন্মকে পাঠমুখী করার প্রয়োজন মনে করা হয়।
বাংলাদেশের পরীক্ষা পদ্ধতিও পাঠবিরাগী হওয়ার পেছনে দায়ী। পূর্বের পরীক্ষা পদ্ধতির জন্য শিক্ষার্থীরা ভাষার দক্ষতা অর্জনে অতিরিক্ত শ্রম ও সময় দিত বই পড়ায়। কিন্তু বর্তমানে টিক চিহ্নের পরীক্ষা পদ্ধতির সূচনার পর শিক্ষার্থীদের ভাষার দক্ষতা বাড়ানোর প্রতি কোনো মনোযোগ নেই, নেই আগ্রহও। মনোযোগ নেই এজন্য যে, তাদের প্রয়োজন নেই, পরীক্ষায় ভালো করার জন্য কোনো ভাষার দক্ষতার প্রয়োজন পড়ে না। তাই এর চাহিদাও নেই। ফলে এর প্রভাব পড়ছে পেশাগত জীবনে, প্রভাব পড়ছে পরবর্তী প্রজন্মের ওপর। এজন্য জাতীয়ভাবে পাঠাভ্যাস সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য এই দিকটিও ভেবে দেখা প্রয়োজন।
পাঠক কেবল সাহিত্যের হতে হবে এমন কোনো কথা নেই। কিন্তু তাকে পাঠক হতে হবে এ-কথা অনিবার্য সত্য।
অন্যথায় বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় সারা জনমই পেছনে পড়ে থাকতে হবে। পেশাদারির জন্য পাঠক হতে হবে। বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার দৌড়ে টিকে থাকার জন্য পাঠক হতে হবে। দর্শনের অগ্রযাত্রার জন্য পাঠক হতে হবে। রাষ্ট্রচিন্তায় অগ্রগামী হওয়ার জন্য পাঠক হতে হবে এবং পাঠের সংস্কৃতি প্রতিটি পরিবারে, প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গড়ে তুলতে হবে যদি আমরা বৈশি^ক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে চাই। অস্বীকার করার কি উপায় আছে যে, শিল্পসাহিত্য শিক্ষা-সংস্কৃতির অনেক কিছুর ক্ষেত্রেই বিদেশিদের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী আমরা কাজ করি। আমাদের নেই কোনো আবিষ্কার, আমাদের নেই কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্ভাবন। এই জড়তার সৃষ্টি হয়েছে কেবল বই না পড়ার কারণে। এই জড়তা ভাঙতে হলে বই পড়ার সংস্কৃতি সারাদেশেই গড়ে তুলতে হবে।
পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার জন্য আন্তরিক হতে হবে প্রথম শিক্ষকদের এবং দ্বিতীয়ত অভিভাবকদের এবং তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন করতে হবে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মানুষের জীবনাচার, সংস্কৃতি, শিক্ষাদীক্ষা, দৃষ্টিভঙ্গি এবং জ্ঞানবিজ্ঞানের সঙ্গে তুলনা করে আমাদের অবস্থানের পরিবর্তনের প্রয়োজন আছে কি না তা তাঁদের অনুধাবন করতে হবে। শুধু পরীক্ষায় পাশ আর সিলেবাসের মধ্যে আটকে থাকলে কখনোই পাঠের সংস্কৃতি গড়ে তোলা এবং আলোকিত মানুষ হওয়া সম্ভব নয়। তাঁদের চিন্তার সম্প্রসারণ করতে হবে এবং আলোকিত মানুষ হওয়ার উদ্দীপনা শিক্ষার্থীদের মননে ছড়িয়ে দিতে হবে।
দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কথা চিন্তা করলে ধরে নিতে হবে যে, যেসব পরিবারের প্রথম বা দ্বিতীয় প্রজন্ম শিক্ষাগ্রহণ করছে তাদের পক্ষে পারিবারিকভাবে সচেতন হওয়া সম্ভব নয় এবং পাঠাভ্যাসও গড়ে তোলা সম্ভব নয়। এ-কারণে আগে শিক্ষকদের ট্যাবু ভাঙতে হবে, তাদের বুঝতে হবে যে, ‘আউট বই’ বলতে কিছু নেই, বরং সব বই পড়া উচিত। যার যে-বিষয় ভালো লাগে, সেটি পড়বে। সাহিত্য, বিজ্ঞান, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন, শিল্পকলা, পরিবেশ ইত্যাদি নানা বিষয়ের বই পড়ার জন্য শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে তাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ বই দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে পড়ার উপকরণ হিসেবে বইয়ের অভাব নেই। যেখানে বই নেই কোনো না কোনোভাবে চাইলে সেখানে বই পৌঁছে দেওয়ার মানুষের অভাব নেই। বহু মানুষকে প্রতিবছর বিনামূল্যে বিতরণ করতেও দেখা যাচ্ছে।
পরিশেষে বলা যায়, পাঠাভ্যাস যদিও ব্যক্তিগত ব্যাপার তবুও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ও পারিবারিকভাবে যদি পড়ার সংস্কৃতি গড়ে তোলা যায় তাহলে আমরাও পারব উন্নত বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে। এজন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই পড়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা প্রথম এবং এলাকায় এলাকায় শিক্ষা-সংস্কৃতি-বিজ্ঞানের ক্লাব তৈরি করে বই পড়ার প্রতিযোগিতার আয়োজন করা যেতে পারে। পাশাপাশি সুষ্ঠু সংস্কৃতি বিকাশের আয়োজনও করতে হবে। তাহলে আমরাও হতে পারব আলোকিত মানুষ আর তখনই অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, পরিবেশগত দিক থেকে সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে জীবন গঠন করতে পারব। তাহলে আর সবকিছুর জন্য পৃথিবীর অন্যান্য দেশের মুখাপেক্ষী হতে হবে না। একটি আলোকিত সমাজ প্রতিষ্ঠা করে মর্যাদাশীল জাতি হিসেবে আমরাও সারা পৃথিবীতে মর্যাদা পাব। এজন্য প্রয়োজন সরকারি পৃষ্ঠপোষকতাসহ সর্বস্তরের মানুষের বিশেষত বিত্তবানদের সহযোগিতা, আন্তরিকতা ও উদ্যোগ।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.