প্রতিভা বসুর কয়েকটি ও রাজেশ্বরী দত্তের একটি চিঠি

অমিয় দেবকে লেখা

(কোনও চিঠির পাঠে কিছু যোগ করে থাকলে আমি তৃতীয় বন্ধনী,

[ ], ব্যবহার করেছি।)

প্রতিভা বসুর চিঠি

কথাসাহিত্যিক প্রতিভা বসুর (একদা কাজী নজরুল, দিলীপকুমার রায় ও সত্যেন্দ্রনাথ বসুর প্রিয়পাত্রী ঢাকার গায়িকা রানু সোম : ১৯১৫-২০০৬) স্নেহ আমি পেয়েছিলাম স্বামী বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র হিসেবে। তাঁর প্রথম তিনটি চিঠি নিউ ইয়র্ক থেকে লেখা। ১৯৬১-তে যখন বুদ্ধদেব বসু নানা দেশে রবীন্দ্রশতবর্ষ বক্তৃতার আমন্ত্রণ পান তখন এক টার্ম নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবারও আমন্ত্রণ আসে। প্রতিভা বসু এই যাত্রায় তাঁর সঙ্গী হয়েছিলেন। পরেও তাই : চতুর্থ চিঠি যে ব্লূমিংটন, ইন্ডিয়ানা থেকে লেখা তার কারণ ১৯৬৩-৬৪-র ‘ফল’ সেমেস্টার ব্দ্ধুদেব বসু ইন্ডিয়ানা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রিত অধ্যাপক ছিলেন। তার পরের সেমেস্টার তিনি পড়ান নিউ ইয়র্কের ব্রুকলিন কলেজে। প্রতিভা বসুর পঞ্চম ও ষষ্ঠ চিঠি ব্রুকলিন, এন.ওয়াই. থেকে লেখা।

চিঠি ১

এয়ারোগ্রাম : শুধু ভিতরের অংশই প্রতিভা বসুর লেখা। বাইরের অংশে লেখা বুদ্ধদেব বসুর এক চিঠি (ষষ্ঠদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা, পৃ ৩১-৩২ দ্রষ্টব্য)।

অমিয়,

এখানে এসে আমি তোমাকে চিঠি লিখিনি, লিখতে পারিনি বলেই লিখিনি। প্রথম তিন সপ্তাহ প্রচণ্ড ঘোরাঘুরি ক’রে কেটেছে, এই সাতদিন বাড়ি বদলানো, বাড়ি গোছানো ইত্যাদিতে সময়ের টান পড়েছে। অবিশ্যি তুমিও আমাকে লেখোনি। তোমার তো এ সব ছিলো না। মাস্টার মশাইকে যখন লিখেছ, মাসীমাকেও তো এক লাইন লিখতে পারতে। মাস্টার মশাই তোমাদের গুরু শিক্ষক, তোমাদের শ্রদ্ধাভক্তি ভালোবাসার পাত্র, তেমনি আমিও তোমাদের মা, আমি তোমাদের আমার সন্তানদের মতোই ভালোবাসি, অনুভব করি। তোমাদের কাছেও আমার অনেক আশা আকাঙ্ক্ষা জমা হ’য়েছে।

এখানে অসম্ভব ঠাণ্ডা। এ রকম ঠাণ্ডা ৮০ বছরের মধ্যে হয়নি বলে সরকারি ঘোষণা। পর্শু আর কাল বরফের ঝড় গেছে, ১৭ ইঞ্চি পুরু হ’য়ে বরফ জমা হ’য়েছে সহরে। বিস্তর লোক মারা গেছে। আমরা সেদিন না জেনে না বুঝে, মিমিদের চিঠি আনতে কলেজে গিয়েছিলাম, প্রায় একমাইল হেঁটেছি একটা খাবার দোকানের জন্য। রাস্তায় লোক ছিলো না, গাড়ি ছিলো না। যান বাহন স্তম্ভিত ছিলো বরফের জন্য। এমন কি সাবওয়ে পর্যন্ত বন্ধ হ’য়ে গিয়েছিলো। রাস্তা এতো পিছল হ’য়ে গিয়েছিলো যে আমি হুমড়ি খেয়ে পড়ে গিয়েছিলাম বরফের ভিতরে। আজকের কাগজে দেখলাম কাল যারা রাস্তায় বেরিয়েছিলো (বাধ্য হ’য়ে) বেরুবার কৃতিত্বের জন্য তাদের ছবি বেরিয়ে গেছে। দুঃখের বিষয় তার মধ্যে আমরা দুই বঙ্গবীর অনুপস্থিত। আমরা থাকি ওয়াশিংটন স্কোয়ারে, কবি সাহিত্যিকের আদ্যাপীঠ বলে ইতিহাসে এর নাম যতোই ফলাও ক’রে লিখুক না কেন, ম্যানহাটনের মধ্যে এটি মফঃস্বল, অর্থাৎ দ্বিতীয় যাদবপুর। সুতরাং কাগজওলারা আমাদের ছবি তুলতে এ পাড়ায় আসেনি। আমরা যে এ্যাপার্টমেন্টে আছি, সেটি ভালোই। ওরা যাকে লিভিং রুম বলে আর আমরা যাকে বসবার ঘর বলি সেটি বেশ বড়ো, ভালো ফার্নিচার আছে, লিখবার টেবিলও আছে দু’টি, – বই রাখবার সুন্দর বন্দোবস্ত। রান্নাঘরটি ভালো, ব্যবস্থা চমৎকার। একটি শোবার ঘরও আছে ছোট্টো। তার উপরে রাস্তার পাশেই, একতলা। সব মিলিয়ে অখুশি হবার কিছু ছিলো না, কিন্তু যেটা ত্রুটি সেটা হচ্ছে, ঘরগুলো একেবারে অসূর্যম্পশ্যা। তবু রান্নাঘর শোবার ঘরে একটু একটু ঝিলিক আসে, বসবার ঘরটিতে মোটেই না। সারাক্ষণ আলো জ্বালিয়ে বাস করতে হয়। সবাই বলে নিউইয়র্কে এটুকু পাওয়াই নাকি ঢের। সে-কথা ভেবেই মনকে ঠান্ডা করেছি। আজ সকালে এতো সুন্দর রোদ উঠেছে কী বলবো। সহরে বরফ ছাড়া কিছু নেই। রাস্তা নেই, ফুটপাত নেই, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকা গাড়ি নেই, সব পুঞ্জ পুঞ্জ বরফের তলায় আবৃত। মনে হচ্ছে অদ্ভুত এক সমুদ্র। তার উপরে রোদের আলো পড়ে সহরটা একেবারে রুপোর মতো ঝকঝকে সাদা দেখাচ্ছে। তাকালে ঝলসে যাচ্ছে চোখ। বেরিয়েছিলাম, সামান্য বাজার ক’রে, রান্না সেরে এই তোমাকে চিঠি লিখতে বসেছি। আশা করি উত্তর দিতে দেরি করবে না। আমি যে তোমাদের চিঠির আশায় কতো উতলা হ’য়ে থাকি সে কথা আমি বোঝাতে না পারলেও তোমাদের পক্ষে কল্পনা ক’রে নেয়া বোধহয় শক্ত নয়। পাপপাকে তুমি সব সময় সাহায্য করো বলে লিখেছে পাপপা, তাতে আমার অনেক চিন্তার লাঘব হ’য়েছে। বেচারার প্রথম পরীক্ষার বছর, এভাবে যে রেখে আসতে পেরেছি, সে তোমরা আছ বলেই। আমার এই বিশ্বভ্রমণের পুণ্য তালিকায় তোমাদের নাম সবচেয়ে আগে। তোমাদের সকলের মিলিত ভালোবাসার ত্যাগেই আমার পক্ষে এটা সম্ভব হতে পারলো। মা হ’য়ে আমি আমার সন্তানদের কাছে এই পাওনার জন্য অশেষ কৃতজ্ঞ রইলাম। আশীর্বাদ সহ

  প্রতিভা বসু   ৫/২/৬১

চিঠি ২

এয়ারোগ্রাম

অমিয়,

      তোমার তিনটি চিঠিই আমি পেয়েছি। তুমি যে চিঠির উত্তর প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা না ক’রেই আমাকে পর পর চিঠি লিখে গেছ, এটা তোমারই উপযুক্ত। তোমার চরিত্রের একটা বিশেষ লাবণ্যই এতে প্রকাশ পেয়েছে। আর আমি যে কী খুশি হ’য়েছি তার কোনো বর্ণনা নেই। মাঝে আমি দাঁত নিয়ে ভারি অসুবিধায় পড়েছিলাম। ভাগ্যের দোষে একটা কাঁচা দাঁত উপড়ে ফেলতে হ’লো। মন্দ ভোগান্তি যায়নি তাতে। একটা সেলাই পর্যন্ত দিতে হ’য়েছিলো। সে জন্য বাসায় ওদের কাছেও মাঝে ক’দিন চিঠি লিখতে পারিনি। এখানে একটা ইংরিজির কোর্সে ভর্তি হ’য়েছিলাম। চারমাসের কোর্স, প্রত্যেক বৃহস্পতি[বার] যেতে হয়। সেই দাঁতের কারণে তাতেও এ মাসটা যাওয়া হ’লো না। অবিশ্যি তার কারণ শুধুই দাঁত নয়। নিমন্ত্রণ আমন্ত্রণেও বিঘ্ন হয়। তার উপরে ওঁর বাইরে বাইরে বক্তৃতা। কাল অর্থাৎ এ[ই] বৃহস্পতিবার শিকাগো নরেশদের ওখানে। ঠিক নরেশদের ওখানে নয়। প্লেন শিকাগো থামবে, আমি ব্লুমিংটনে যাবো, ইনি ম্যাডিসনে যাবেন। নরেশ চিনু এয়ারপোর্টে এসে অপেক্ষা করবে, আমি আর চিনু ফিরে আসবো, নরেশ ওঁর সঙ্গে যাবে এবং ম্যাডিসন থেকে পঁচিশ তারিখে ওঁকে নিয়ে ফিরবে। শিকাগোতে বক্তৃতা হ’লে ব্লুমিংটন। ব্লুমিংটন হ’য়ে ২৯ তারিখে আবার নিউইয়র্কে ফিরে আসবো। তুমি এর মধ্যে নরেশের ঠিকানায় চিঠি দিতে পারো। পুরো পাঁচদিন তোমাদের চিঠি না পেয়ে তিষ্টোবো আমার কলিজায় ততো জোর নেই। বাড়িতে ওদেরও লিখে দিলাম ওখানে চিঠি দিতে, তোমাকেও লিখলাম। প্রণবেন্দুও ওখানেই আমাদের সঙ্গে দেখা করবে। সবাইকে দেখবো ভাবতেই আমার ভালো লাগছে। স্বজন-বিরহিত জীবনে এই দূর দেশে এই পাওয়া আমার কম পাওয়া নয়। নবনীতার সঙ্গে এখনো দেখা হ’লো না। কবে যে হবে তা-ও বুঝতে পারছি না। অথচ মনটা অধীর হ’য়েছে। ওদের আসতে লিখেছিলেন উনি, নেহাৎ যদি না-ই আসে, না দেখে কী আর দেশে ফিরে যাবো? তা কখনো হয়? কিন্তু কী যে সময়ের অভাব তা বলা যায় না। তুমি নিশ্চয়ই রোজ আমাদের বাড়ি যাও। ওদেরও এই খবরগুলো বোলো। পাপপাকে কেমন দেখছো? কেমন তৈরী হ’য়েছে বলে মনে হচ্ছে? আমি দিনরাত শুধু তাই ভাবি। কখনো নিরিবিলি হ’লেই যতোরাজ্যের ভাবনা চিন্তা ভিড় ক’রে আসে। দু’টো মাস তো প্রায় কাটলো, দিন এগুলো। ইয়োরোপে বোধহয় আমরা জুনের আগেই যাবো। এখানে ওঁর কাজ পঁচিশ তারিখে শেষ হবে, আর শেষ হ’লে দেরী করবো না।  আমেরিকায় আতিথেয়তার অভাব নেই। সহৃদয় লোকজনের সংখ্যা নিতান্ত কম নয়। ফিরে গিয়ে প্রশংসা না করলে সত্যের অপলাপ হবে। মাঝে ডেলাওয়ার গিয়েছিলাম। ভারি সুন্দর বিশ্ববিদ্যালয়। অধ্যাপকরা অধ্যাপকদের গৃহিণীরা সকলেই সদালাপী এবং ভারতবর্ষ বিষয়ে উৎসুক। শোনা গেছে, ছাত্রছাত্রীরাও নাকি খুব খুশি হয়েছে ওঁর বক্তৃতায়। সুতরাং সবই ভালো, শুধু তোমরা আছ এগারো হাজার মাইল দূরে এই হৃদয়বেদনাই সব কিছু সম্পূর্ণভাবে উপভোগের মস্ত অন্তরায়। তোমরা ভালো থেকো, সুখে থেকো। সব সময় মনে মনে শুধু এই বলছি আর তোমাদের মুখগুলো ভাবতে চেষ্টা করছি। গেল শনিবার এখানকার মডার্ন আর্ট গ্যালারি দেখতে গিয়েছিলাম। ভালো কি মন্দ তার ব্যখ্যা কী ক’রে দেবো। ছবিতে আমার শিক্ষা নেই, তবে চোখের আবেদন থেকে ঈশ্বর নিষ্ঠুরের মতো বঞ্চিত করেননি বলে এটুকু বলতে ভালো লাগছে সময়টা সুন্দর কেটেছিলো। শুধু ছবিই নয়, সময় যাতে সুন্দর ভাবে কাটে, তার ব্যবস্থাপনায় এদের মনোযোগের অন্ত নেই। কতো সুন্দর বাগান, বসবার আসন, খাবার জায়গা, লবি আরো কতো কিছু।

সুখ সুবিধের দিকটা এরা বোঝে। তবে একটু বোধহয় বেশী বোঝে, তাই মাঝে মাঝে মুখ বদলাবার জন্য কৃত্রিম অসুবিধের সৃষ্টি ক’রে নেয়। কেবল কল কল আর কল। চলা ফেরা শোয়া বসা রান্না খাওয়া কী যে কলে হয় না জানি না। সবচেয়ে অদ্ভুত লাগে এস্কেলেটরগুলো যখন ঢেউয়ের মতো উঠতেই থাকে আর নামতেই থাকে। আর মাটির তলার রাজত্ব যে কী প্রকাণ্ড, কী করে বোঝাবো। গাড়ি যখন সমুদ্রের তলায় ঢোকে আমার কিন্তু বুকটা কেমন করে। মনে মনে না ভেবে পারি না, বেরুবো তো, ফিরবো তো, আবার দেখবো তো তোমাদের? বাঙাল আর কাকে বলে।

                    ভালোবাসা নিও।

                                  মাসীমা ১৫.৩.৬১

চিঠি ৩

এয়ারোগ্রাম : বাইরের একাংশ বুদ্ধদেব বসুর লেখা (যষ্ঠদশ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী সংখ্যা, পৃ ৩২ দ্রষ্টব্য)।

অমিয়,

        তোমার চিঠি পেয়ে খুব ভালো লেগেছে। শুধু ভালো লাগাই নয়, খুব ভালোও হ’য়েছে। পাপপার পরীক্ষার খবরের জন্য যখন আমি প্রায় উদভ্রান্ত হ’য়ে কলকাতার চিঠির প্রত্যাশা করছি, ঠিক সেই সময়ে সমস্ত খুঁটিনাটি নিয়ে ঠিক তোমার মতো ক’রেই তোমার চিঠিটি এসে হাতে পৌঁছুলো। কোনোরকম ডাকের গোলমালে সেই সময়ে মিমিরুমির কাছ থেকে কোনো খবরই পাচ্ছিলাম না। তোমার চিঠিটি প্রায় বিধাতার আশীর্বাদের মতো মনে হচ্ছিলো আমার। তোমাকে যে আমি কী বলে আমার খুশি জানাবো জানি না। শুধু সর্বান্তঃকরণে তোমার সুখ শান্তি আর সাফল্যের জন্য আমার দীন প্রার্থনা জানাই ঈশ্বরকে। এখানে এবার আমাদের যাবার পালা। আজ সতেরো তারিখ রাত্রি। দিন আমি ঠেলছি বটে, কিন্তু এ কথা স্বীকার না করলেও সত্যের অপলাপ হবে, এখানকার আকাশ বাতাস, মানুষজন সব কিছুর উপরই একটা মমতা না রেখে যেতে পারবো না। বিশেষ ক’রে এই চেলসী হোটেলের ঘর দু’টির আরাম, আর চেলসী হোটেলের কর্তৃপক্ষের কর্মচারীদের সদানন্দ ব্যবহার।

নিউইয়র্কের আবহাওয়ার কোনো মাথামুণ্ডু নেই। একদিন রোদ, একদিন বৃষ্টি। একদিন হিমবহ শীত, অন্যদিন বসন্তের চাপল্য। এর মধ্যেই দিন কাটছে। বরফ অবিশ্যি অনেক আগেই গলে গেছে। সহর এখন ধুয়ে মুছে ফিটফাট বাবু। এ্যাভিনিউর মাঝে মাঝে টেরিকাটা স্ট্রীটগুলোকে মাঝে মাঝে এতো পরিচ্ছন্ন লাগে যে প্রায় ফাজিল ছোকরা মনে হয়। অথচ এই কিছুদিন আগে কী দশা ছিলো। বরফ এখানকার অভিশাপ। বরফ দেখলে এদের পিলে চমকায়। মাঝে এক ভদ্রলোক, এখানকার বিশিষ্ট নাগরিক, ধনী আইনজীবী সহসা একটি গাড়ি ক’রে আমাদের নিয়ে হাডসন নদীর ধারের Cloisters, গোগেনহাইম মিউজিয়াম আর ফ্রীক মিউজিয়াম দেখিয়ে আনলেন। Cloisters টির পাথরের সূক্ষ্ম কাজ দক্ষিণভারতের বিখ্যাত মন্দিরগুলোর সমতুল্য। কিন্তু গোগেনহাইম দেখে এদের স্থাপত্য বিদ্যাকে সাংঘাতিকভাবে এ্যাডমায়ার করলাম। বাড়িটি চারতলা, কিন্তু কোনো সিঁড়ি নেই। লিফটও নেই। গড়িয়ে গড়িয়ে গোল গোল প্রশস্ত পথ কখন যে উপরে গিয়ে ওঠে বুঝতেই পারি না। আর ছবিগুলোকে দেয়ালের হেলানে রাখেনি, এমন এক অদ্ভুত ভঙ্গিতে রেখেছে যে মনে হয় বাতাসে ভেসে আছে। প্রত্যেক তলা থেকে প্রত্যেক তলার ছবিগুলো দূরের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা যায়, আর তাতে একটা স্বপ্নের মতো হালকা আবেশ হয়। মনে হয় একটা অপার্থিব জগতের বাসিন্দা হ’য়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি। আর ফ্রীক মিউজিয়ামটি একান্ত ভাবে তার উল্টো। বাড়িটিতে একটি সমগ্র সংসারের উদ্ভাস। এই ফ্রীক ভদ্র্রলোকেরই বসতবাড়ি এটি। ঘরে ঘরে ছবি এই ভদ্রলোকেরই দান। কারুকার্য খচিত ঢালু সিঁড়ি বেয়ে দোতোলায় উঠতে পারলে এখনো এঁর পরিবারের অবশিষ্টাংশ একজন মহিলাকে দেখা যায়। তিনি বাস করেন সেখানে। নীচেটা মিউজিয়াম। বুদ্ধদেবের ভীষণ ভালো লেগেছে ফ্রীক মিউজিয়ামের এই ঘরোয়া অভ্যর্থনা। আমার ভালো লাগা মন্দ লাগার বিশেষ কোনো অর্থ নেই, তার কারণ, যা বড়ো, যা মহৎ তার সঙ্গে জ্ঞানে হোক অজ্ঞানে হোক, মনের বিশেষ কোনো সূক্ষ্মচেতনার সম্পর্ক স্থাপিত না হ’লে তার বিষয়ে কথা বলতে সঙ্কোচ হয়, মনে হয় অসম্মান করছি। ছবি বিষয়ে আমার জানালা খোলেনি।

সেদিন ফোনে ওদের ডেকে ছিলাম। কী মুহূর্ত সময়। কারো গলা শুনতে না শুনতে, বুঝতে না বুঝতেই শেষ হয়ে গেল। বিশ্রী লাগলো। শুনলাম ওরা আগে থেকেই খবর জানিয়ে রেখেছিলো তোমাদের। সেদিন তোমরাও বসেছিলে, কিন্তু কানেকসন দিতে যে কী দেরি করলো কী বলবো। এটুকু বোঝা গেল, ইচ্ছে করলেই ডাকা যায় না, তার তোড়জোড় অনেক। আগে থেকে বুক ক’রে রাখলেও যে পাবোই এমন কোনো স্থিরতা নেই।

প্রণবেন্দুর সঙ্গে দেখা হয়ে খুব ভালো লেগেছে। তোমরা ওকে চিঠি লেখো না কেন? ভীষণ – অভিযোগ আছে তাই নিয়ে ওর। আজ, এই আর একটু পরে নরেশরা আসছে, এসে কয়েকদিন থাকবে। তাই আমার মনটা খুব ভালো আছে। একটু পরেই ওদের দেখতে পাবো ভেবে উত্তেজিত আছে। শুধু নবনীতার সঙ্গেই এখনো দেখা হ’লো না।

 ১৭.৪.৬১           প্রতিভা বসু

চিঠি ৪

খাম

Indiana University

Ballantine Hall, Room 402

Bloomington, Indiana

Comparative Literature

অমিয়,

আমি রোজ ভাবি কবে তুমি আসবে। যদি বা একই দেশে সকলে মিলে আসা গেল, কিন্তু দেখা হওয়া যে এতো কঠিন সেটা কলকাতা থাকতে ভাবা যায় না। তখন মনে হয় দেশ যখন একটা জায়গা ভিন্ন হ’লেও কিছু এসে যাবে না। কতো যে এসে যায় তা এখন বেশ ভালো ক’রেই বুঝতে পারছি। কিন্তু, তবু এই কতো ভালো যে তুমি কলকাতা নেই, এখানেই আছ। শুধু তাই নয়, শীগগিরই যে তোমার সঙ্গে দেখা হবে এটা ভেবেই দিন আশায় ভরে আছে।

পাপপা দুর্দ্ধর্ষভাবে পড়ছে। মনে হয় শেষ পর্যন্ত ভালোই হবে সব। এখন ঈশ্বরের দয়া। রুমিরা ভালো আছে এবং আশায় আছে কবে তুমি আসবে। প্রদীপ পায়তাড়া কষছে তুমি এলেই গাড়ি নিয়ে শিকাগো পাড়ি দেবে। আমরা যে এরপরে আবার কোন সহরে গিয়ে বহাল হবো জানি না। জানলে বাঁচি। অনিশ্চয়তা বড়ো খারাপ।

আশাকরি ভালো আছ। ভালোবাসা নিও।

                         মাসীমা     ১৭.১০.৬৩

চিঠি ৫

খাম

অমিয়,

     বাড়িঘরের খবর সবই জেনেছ, শেষ পর্যন্ত একটা লেখার টেবিলও কেনা গেল। একসঙ্গে টেবিল, চেয়ার, আলো। ভেবেছিলাম রান্নাঘর না থাকাটাই বুঝি চরম অসুবিধে, তারপরে দেখলাম জীবনে অসুবিধের অজস্র রন্ধ্র। তার একটিও প্রবোধ মানবে না যতোক্ষণ না ঠিক মতো ঠিকটি পাওয়া যাবে। আর প্রকৃতপক্ষে একজন লেখার মানুষের লেখার টেবিল থাকবে না এটা অভাব্য। এমন হোটেলও আর দেখিনি। অথচ এমনিতে অন্যান্য আসবাব নিতান্ত মন্দ নয় যদিও বাথরুমের আয়নাটাতে মুখ দেখতে হ’লে টুল পেতে দাঁড়াতে হয়। তোমাদের মাস্টারমশায়ের রোজ সকালে মন্দ ব্যায়াম হচ্ছে না, পায়ের বুড়ো নোখের মাথায় ভর দিয়ে দিয়ে দাড়ি কামাতে কামাতে লম্বা হ’য়ে যাবেন বোধহয়। লম্বা হবার ব্যায়ামটা তো এই রকমেরই। না?

তুমি কেমন আছ? কেমন লাগছে? ফিলাডেলফিয়ার থেকে এই বিশ্ববিদ্যালয়টিকে কি ভালো বলে মনে হচ্ছে? আর কিছু না হোক, তোমরা যে একসঙ্গে আছ এটাকে ভাগ্যের দয়া ছাড়া আর কী বলা যায়? তোমার কাছে পাপপাকে রেখে এসে আমার একটুও ভাবনা হচ্ছে না। ওর দাদা থাকলে কি আমি এর চেয়ে বেশী ভরসা করতাম? তোমার শান্ত, সুধীর অধৈর্যহীন স্বভাব অনুকরণযোগ্য। তোমার কথা ভাবলেই আমি মনের মধ্যে আরাম পাই। ঈশ্বর তোমাকে সুখী করুন।

রেজিস্ট্রার আটাশে মার্চ আসবেন বলে লিখেছিলেন। আমার মনে হচ্ছে তুমি আর পাপপা সেই সময়টাতে থাকবে। ভাবতে ভালো লাগছে যে যাদবপুরের কর্তৃপক্ষের একজন মানুষকে আমরা এখনো সবেগে ভালোবাসতে পারছি, দেখা হবে ভাবতে খুশি হচ্ছি এবং উনিও আমাদের বিপরীত নন। জগৎটা ভালোমন্দ মিশিয়ে মোটের উপর ভালোই। আর ভালোমন্দ না থাকবে যদি তা হ’লে একঘেয়েমির অত্যাচার থেকে অব্যাহতি পাবো কেমন ক’রে।

ব্লুমিংটনের মতো সহরে সারারাত ধ’রে আড্ডা দিয়েছ এটা একটা খবরের মতো খবর। কলকাতাতেই বা এমন আর কদিন হয়! যা দেখছি এসবের জন্য হককেই ধন্যবাদ দিতে হয়। বুদ্ধির ধার দিয়ে যদি না কাটে হৃদয়ের ভারে কাটতে পারাটাও মানুষের পক্ষে কম সুখের কারণ নয়। বুদ্ধির একটা আঘাত দেবার প্রবণতা থাকে। যদি না তাতে হৃদয় মেলে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই সেই বুদ্ধি অপরকে বিদ্রূপ ক’রেই নিজেকে খাড়া রাখে। তার চেয়ে এই ভালো। অবিশ্যি দু’য়ের মিলনই সোনায় সোহাগা।

অমিয়, আমি তোমাকে উপরের ঐ অংশটুকু পর্শুরাত্রে, অর্থাৎ ২২ তারিখে লিখতে লিখতে খাবার বন্দোবস্ত করতে উঠে গিয়েছিলাম। সে সব সাঙ্গ ক’রে, বাসন মেজে উনুন ধুয়ে রাত বেড়ে গেল বলে শুয়ে পড়লাম। কাল সারাদিন সময় পাইনি। মার্সেলদের আর প্রফুল্ল মুখার্জিকে সস্ত্রীক খেতে বলেছিলাম রাত্রে। কেনাকাটা রান্নাবান্না আর আড্ডা গল্পেই দিন কেটে রাত বারোটার ওপিঠে পৌঁছোলো। এখন, আজ, সকাল দশটাতে একঘর রোদে পিঠ দিয়ে বাকিটুকু শেষ করতে বসলাম। আজও অবিশ্যি এক বন্ধুর আসবার কথা। জর্জ ওপেনের কথা কি উনি বলেছেন তোমাকে? বিট কবি। ওঁকে আজ রাত্রে খেতে বলা হ’য়েছে। সেজন্য অবিশ্যি খাটুনি বেশী নেই, কালকের উদ্বৃত্ততেই প্রায় হ’য়ে যাবে। তুমি কি এখনো সেই পলিসিতেই মাংস রাঁধো? একদিনে সাতদিনেরটা? পাপপা ঘরটর গুছিয়ে রাখে তো? সকালে কি তোমার সঙ্গে ব্রেক ফাস্ট খায়? তোমার ক্লাশ কি এখনো বিকেলেই চলছে? সব খবর দিয়ে বড়ো ক’রে চিঠি লিখো। তোমাদের চিঠিই এখন আমার সঙ্গী।

                     মাসিমা

চিঠি ৬

খাম

Hotel Bossert, Apt. 433

98 Montague Street

Brooklyn

অমিয়,

      তোমাকে আর আমার চিঠিই লেখা হচ্ছে না। অথচ রোজ ভাবি। ফোনে সেদিন তোমার আর প্রদীপের গলা শোনা হ’লো না। সব সময়ে এতো ত্রাসিত হ’য়ে কি কথা বলা যায়? অথচ মিনিটগুলো ফোনের কাছে এসে মোষের সিংয়ে সর্ষে গড়াবার মতো লহমায় কেটে যায়। আমার খুব ইচ্ছে ছিলো তোমার সঙ্গেও একটু বদলি। তোমার ফেলোশিপের খবরে যে কতো খুশি হ’য়েছি সে কথাটা জানাই। কী করবো, হ’লো না। কতো রকমের চিন্তা ভাবনাতেই যে এখন দিন কাটছে! তার মধ্যে এই খবরটি একটি গ্রন্থিকে অন্তত আলগা করলো। এখন প্রদীপের কাজ আর আমাদের থাকা বিষয়ে সঠিক কিছু জানতে পারলেই বাঁচা যায়। মনে মনে দেশে ফিরে যাবার জন্যই প্রস্তুত হচ্ছি। এখনো যখন কোনো কিছু হ’লো না তখন হবে না ভেবেই অগ্রসর হওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে। অথচ কী দুর্দৈব দেখ। তোমরা তো নেই-ই দেশে, মিমি জ্যোতি সুদ্ধু চলে আসছে। যাকগে এ নিয়ে আর আর বলে লাভ কী, ভাগ্যের দয়া নিতান্ত মন্দ বলা যায় না, নইলে তুমি আর কেন ব্লুমিংটনে আসবে। আমার সব ভাবনা এখন পাপপার জন্যই। ও-ই এখনো ছোটো আছে, মেয়েরা তো আর দায়িত্বের আওতায় পড়ছে না। তাদের রক্ষণাবেক্ষণের যোগ্য মানুষ আছে।

তুমি যে ওয়াশিংটনের চিঠি লিখতে ইচ্ছুক আছো সে-খবর আমি সাগরবাবুকে জানিয়ে দিয়েছি। ওঁর খুব বাসনা এ ভারটা আমি গ্রহণ করি, কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছিলেন না। পরে সে কথাটাও জানিয়েছেন। আমি ওদের প্রথম লেখাটা পাঠিয়ে দিয়েছি। লিখেছি ওঁর অনুরোধে লিখলাম বটে কিন্তু অধিক দিন পারবো না। তুমি যদি মনে করো প্রত্যেক মাসে নিয়মিত ভাবে লিখে পাঠাতে পারবে তা হ’লেই দায়িত্ব নিও, নইলে ওঁরাও মুশকিলে পড়বেন, তোমারও দুর্ভাবনা। এতো পড়ার চাপের মধ্যে বোঝার উপরে শেষে না শাকের আটি হ’য়ে ওঠে। তোমার তো আবার লিখতে প্রচুর সময় লাগে। আমি আগামী ১৭ই এপ্রিল ব্লুমিংটনের জন্য রওনা হবো, যেদিন পৌঁছুবো সেদিন শনিবার থাকবে, যদি এমন হয় যে প্রদীপ গাড়ি নিয়ে আসতে পারলো না, তুমি আর পাপপা অথবা তুমি কি পাপপা ইন্ডিয়ানাপোলিসে আমাকে নিতে এসো। আর সেই সময়ে গিয়েই এই বিষয়ে আমি তোমার সঙ্গে কথা বলবো।

                                   মাসিমা   ৫।৪।৬৪

চিঠির উপরের এক কোণে বুদ্ধদেব বসুর হস্তাক্ষরে লেখা ছিল :

চিঠিটা ডাকে পাঠাতে দেরি হল।

রাজেশ্বরী দত্তের চিঠি

রবীন্দ্রসংগীত গায়িকা, সংগীত শাস্ত্রবেত্তা, বিদূষী রাজেশ্বরী দত্তের (জন্মসূত্রে লাহোরবাসী রাজেশ্বরী বাসুদেব, ১৯১৮-৭৬) স্নেহ আমি পেয়েছি তাঁর স্বামী সুধীন্দ্রনাথ দত্তের (১৯০১-৬০) ছাত্র হিসেবে। ১৯৬১-তে তিনি রবীন্দ্রশতবর্ষ উপলক্ষে লন্ডনে আমন্ত্রিত হন। পরে প্যারিসে ও রোমে। প্যারিসে তিনি কিছুদিন ছিলেনও। ক্রিস্তিন বসনেকের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘ছেলেবেলা’-র ফরাসি অনুবাদ করছিলেন (১৯৬৪-তে তা গালিমার থেকে বেরোয়)। ভারতীয় সংগীতভাবনা নিয়েও ব্যাপৃত ছিলেন।

13 rue de Presles,

Paris 15e

————

                                                                                                                                                              8.12.61

My dear Amiya,

                          How very good of you to write to me even before I could manage to answer your first letter. Thank you so much for your Bijoya greetings; it helps so much to know that one is remembered still. I think of you all so much and have at times a mad desire to be back in Calcutta, in our flat, both of us – Sudhin and me – to receive friends like you, Buddhadeva, Jyoti
and others and spend many more of those very happy evenings we had together on that lovely verandah of ours. But, alas, that chapter is finished, and here, though it is Paris, a place which had the charm of magic for me before, it no longer attracts me; and though some people think that just being here is such bliss that one can forget everything else, I am afraid it dose not apply to me. The wound is too fresh and the shock is so great that my eyes seem to have got blind to the beauty all [a]round. There are moments when I seem to suddenly wake up to everything that surrounds me – the beautiful river and the bare trees lining the two edges and the lovely avenues and buildings, but the feeling lasts for so short a while that it is almost as if I was not here in Paris. The flat is mine – here I can sit and think of him and feel I am with him and he is with me. Today I received also the few books Buddhadeva has sent me and on one of these, the date 30th October on which he pencilled them to me has moved me to tears. That was the date when he so often found a book near his pillow on waking up and was always so happy to have it from me and promised it would be the next book he would read. So, this is life! What more shall I say? Write again if you can. Love to you & all other friends.

Rajeshwari

তথ্যসূত্র

প্রতিভা বসুর চিঠি

১.      নিউ ইয়র্কে তাঁদের প্রথম বাসা, 205 W 15th Street-এ এক প্রায়ান্ধকার ফ্ল্যাট থেকে লেখা।

        মিমি : প্রথম সন্তান, জ্যেষ্ঠ কন্যা মীনাক্ষী দত্ত। মডার্ন হাই স্কুলে শিক্ষকতারত।

        পাপপা : তৃতীয় সন্তান, পুত্র শুদ্ধশীল। তখন বয়স ষোলো, স্কুলশেষের পরীক্ষা দেবে। (অকালপ্রয়াত)

২.      বাসস্থান পালটেছে; 222 W 23rd Street-এ চেলসী হোটেল থেকে লেখা।

        চ্যাপেল হিল : নর্থ ক্যারোলাইনা ইউনিভার্সিটির অবস্থান যেখানে – মার্কিন তুলনামূলক সাহিত্যের এক তদানীন্তন কর্ণধার হ্বের্নার ফ্রীডরিশের কর্মস্থল।

        নরেশ : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তুলনামূলক সাহিত্যের অধ্যাপক, নরেশ গুহ তখন শিকাগোর উপকণ্ঠ এভান্সটন-স্থিত নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটিতে পিএইচ.ডি. করছেন। কবি। (প্রয়াত)।

        চিনু : নরেশ গুহর স্ত্রী অর্চনা গুহ। আগে স্কুলে পড়িয়েছেন। তখন নর্থ ওয়েস্টার্নে এডুকেশন-এ এম.এ. করছেন।

        প্রণবেন্দু [দাশগুপ্ত] : যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্যে বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র, আমার সহপাঠী। কবি। (প্রয়াত)

        নবনীতা [গোড়ায় দেব; তখন সেন; পরে, দেব সেন] : যাদবপুরে বুদ্ধদেব বসুর ছাত্র, প্রণবেন্দু ও আমার সহপাঠী। সেই সময় স্বামী অমর্ত্য সেনের সঙ্গে কেম্ব্রিজ, ম্যাসাচুসেট্সে। কবি ও গদ্যলেখক। (প্রয়াত)

৩.      মিমিরুমি : দ্বিতীয় সন্তান, রুমি (দময়ন্তী বসু সিং) কনিষ্ঠ কন্যা। তখন যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্যে এম.এ. পাঠরত। (প্রয়াত)

৪.      পাপপা দুর্দ্ধর্ষভাবে পড়ছে : ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটিতে বি.এ.-তে ভর্তি হয়ে ফল সেমেস্টারের সবকটা কোর্স নিচ্ছে।

        প্রদীপ : রুমির প্রথম স্বামী প্রদীপ ঘোষ। তখন ইন্ডিয়ানাতে রসায়নে পিএইচ.ডি.-র ছাত্র।

৫.      হোটেল : Hotel Bossert, ব্রুকলিনে তাঁরা যেখানে ছিলেন।

        ফিলাডেলফিয়ার এই বিশ্ববিদ্যালয় : ইউনিভার্সিটি অব পেন্সিলভেনিয়া।

        রেজিস্ট্রার : যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম রেজিস্ট্রার প্রবীরচন্দ্র বসু মল্লিক। (প্রয়াত)

        হক : ঢাকা থেকে আগত জহরুল হক, ইন্ডিয়ানাতে ফোকলোর বিভাগের ছাত্র।

        ২২ তারিখ : ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৪।

        মার্সেলদের : রডারিক ও মার্গারেট ওয়াইলি মার্শাল। রডারিক মার্শাল ফুলব্রাইট অধ্যাপক হয়ে যাদবপুরে তুলনামূলক সাহিত্য বিভাগে এসেছিলেন।

        প্রফুল্ল মুখার্জি : বিপ্লবী। ইংরেজ সরকারের বৈরী হয়ে মার্কিনদেশে চলে যান।

৬.      জ্যোতি : জ্যোতির্ময় দত্ত, জামাতা, মীনাক্ষীর স্বামী। তখন ‘স্টেটস্ম্যান’ পত্রিকায় সাংবাদিক। কবি।

        সাগরবাবু : সাগরময় ঘোষ, ‘দেশ’ পত্রিকার সম্পাদক।

        ওয়াশিংটনের চিঠি : আমি শেষ পর্যন্ত লিখিনি।

প্রতিভা বসুর চিঠিগুলি মীনাক্ষী দত্ত পড়ে দিয়েছেন। তাঁকে বিশেষ কৃতজ্ঞতা। একটি তথ্যের জন্য কৃতজ্ঞতা সুচরিতা গুহকেও।