প্রয়োজন

অনুবাদ : সাদাত উল্লাহ খান

নাই পান হলেন প্রতিবেশী খ্যাতিমানদের একজন। তিনি খ্যাতিমান এ-কারণে নয় যে, তিনি একজন তারকা নৃত্যশিল্পী, নতুবা এমন নয় যে, তিনি নিজেকে রাজনীতি বা সাহিত্যে বিশিষ্ট করে তুলেছেন। সম্ভবত তিনি একজন প্রতিভা যার চমৎকার বিরিয়ানি রান্নাই তাকে অমরত্বের দাবিদার করেছে। তবে এমনকি তার রান্নাবান্নার উপহার বিশিষ্ট হয়ে না থাকলেও তিনি খ্যাতিমান হতেন। কারণ তিনি তার গ্রাহকদের অসীম বাকি প্রদানে তৈরি ছিলেন।

তিনি শিশুদের কোনো টাকার কথা না বলেই মিষ্টি বিতরণ করতে পছন্দ করতেন। অবশ্য এই ব্যাপারে তার বউ সর্বদা অভিযোগ করতেন। তবে তিনি জবাবে বলতেন, ‘বিশ পয়সা মূল্যের মিষ্টি পরিবারের ভাগ্য পাল্টাবে না।’ থান কুন নামে একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এই একই গলিতে বসবাস করতেন। তিনি এক কাপ চমৎকার কফি পান করতে চাইলে প্রায়শই তার ছেলেকে বলতেন, ‘নাই পানের দোকানে যাও এবং কফি নিয়ে এসো। তিনি প্রচুর পরিমাণে দুধ মজুদ করেছেন। তুমি মনে করতে পারো তিনি এ-কাজের জন্য একটা দুধেল গাভি রেখেছেন।’ সেই একই গলিতে একজন মদ্যপ বসবাস করতো এবং সে খাবার দোকানে যেতে ভালোবাসতো আর সেখানে বসে কুন চাংগ এবং কুন পায়েনের কাহিনি থেকে কবিতা আবৃত্তি করতো। নাই পান বিমুগ্ধ হয়ে সেই আবৃত্তি শুনতেন। কবিতা আবৃত্তি শেষে মদ্যপ লোকটি এক কাপ বিনা মূল্যের ঠান্ডা চা চাইতো, নাই পান খুশিমনে তাকে চা দিতেন আর সঙ্গে ভালোবাসা হিসেবে একটা ডাউগনাট পিঠাও ছুড়ে দিতেন।

নাই পান বৃষ্টির সময় তরুণী ছাত্রীদের বলতেন, ‘হে মেয়েরা তোমাদের জুতায় তো কাদামাটি লেগেছে। তোমরা এখন থেকে তোমাদের জুতা আমার দোকানে রেখে যেতে পারবে।’ তিনি সব সময় ছাত্রীদের পা ধোয়ার জন্য পরিষ্কার পানি দিতেন।

তবে প্রতিরাতে কাঁটায় কাঁটায় ৮টার সময় দোকান বন্ধ করতেন। তার বন্ধুরা তাকে বলতেন, ‘রাতের বেলায়ও তোমার দোকান খোলা রাখা উচিত; রাতের বেলায় ব্যবসা ভালো। তুমি দ্রুতই বড়লোক হয়ে যাবে।’

নাই পান হেসে হেসে চমৎকার রসিকতার সুরে বলতেন, ‘দ্রুত ধনী হওয়ার চেয়ে ঘুমানোই উত্তম।’

নাই পানের এই পাল্টা জবাব শ্রোতাদের অনেকের হৃদয় ছুঁয়ে যায়, যারা নাই পানের চেয়ে ধনীতর ছিলেন। তথাপি যারা তখন পর্যন্ত তাদের সম্পদ নিয়ে সন্তুষ্ট ছিলেন না, বরং আরো অধিকতর ধনসম্পদ পুঞ্জীভূত করার সংগ্রামে লিপ্ত ছিলেন।

সেই গলিতে বসবাস করা লোকজন, সারাদিন টাকার পেছনে ছোটার পর বিলম্বিত রাতে বাসায় ফিরে আসে; দেখতে পায় নাই পান তার ছোট ডেকচেয়ারে হেলান দিয়ে তার বউয়ের সঙ্গে খুশিমনে আলাপ-আলোচনা করছেন। অতঃপর তারা নিজেদের সম্পর্কে চিন্তা করেন, ‘তারা দেখতে যতই না সুখী, সম্পদের জন্য তীব্র লালসা থেকে মুক্ত। তারা আমাদের চেয়ে সচ্ছল।’

একদিন সন্ধ্যায় তার স্ত্রী সিনেমা দেখতে যান এবং নাই পান তখন ছিলেন একা। সেই সময় অন্ধকার নেমে আসছিল এবং তিনি দোকান বন্ধের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, এমন সময় একজন তরুণ তীব্রবেগে দোকানে ঢুকে পড়ে।

নাই পান জিজ্ঞাসা করেন, ‘স্যার, আপনার জন্য কি করতে পারি?’

আগন্তুক যুবকটি কোনো ধরনের জবাব না দিয়ে একটা বন্ধ অস্ত্র বের করে এবং অস্ত্রটি তার বুকে চেপে ধরে। নাই পান বুঝতে পারেননি তবে তিনি উপলব্ধি করলেন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।

অস্ত্রধারী যুবকটি চড়া গলায় অভদ্রভাবে বলে, ‘তোমার টাকাপয়সা দিয়ে দাও, যা আছে সব, তোমার হাতে যা আছে সবই। আজকাল খুন করা একটা ফ্যাশনই মনে হয়। প্রতিদিন লোকজন একে অপরকে গুলি করছে। আমি যদি তোমাকে খুন করি তাতে বিশেষ কিছু একটা হবে না এবং তুমি যদি আমাকে খুন করো, তাও তেমন একটা বেশি অদ্ভুত হবে না; সুতরাং দ্রুত করো। আমি যদি টাকা না পাই আমার হাতে তোমাকে গুলির স্বাদ গ্রহণ করতে হবে।’

নাই পান বিন্দুমাত্র ভীতসন্ত্রস্ত হননি। তিনি সম্পূর্ণ শান্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকেন এবং সংলাপের ঢঙে বলেন : ‘আমি তোমাকে টাকা দেব, তবে তোমার অস্ত্রের কারণে নয়, আমি তোমাকে টাকা দেব কারণ মনে হয় তোমার টাকার অশেষ প্রয়োজন। হয়তো বা বিষয়টা হতে পারে জীবন ও মৃত্যুর। এখানেই আমার সমস্ত টাকা আছে। টাকা নাও এবং দ্রুতই বাড়ি যাও। কে জানে হয়তো বা তোমার মা অসুস্থ; হয়তো বা তিনি অনেকদিন যাবৎ খাদ্য গ্রহণ করেননি। দ্রুত বাড়ি যাও; হয়তো বা অনেক লোক তোমার জন্য সেখানে অপেক্ষায় আছে। তুমি টাকা নিয়ে আসবে কি আসবে না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন আছে। তুমি এই টাকা নিয়ে ফেরার ওপর অনেকের জীবন নির্ভর করছে। আমি পুলিশকে জানাবো না। এখানে নগদ প্রায় নয়শো টাকা আছে; অথবা অধিকও হতে পারে – এসব নিয়ে যাও।’

তিনি টাকাগুলো টেবিলের ওপর রাখলেন তবে মনে হয় অস্ত্রধারী যুবকটি টাকাগুলো ছোঁয়ারও সাহস পাচ্ছে না।

নাই পান জিজ্ঞাসা করেন, ‘এগুলো নিচ্ছো না কেন? এদিকে তাকাও, কেন আমি তোমার সঙ্গে চালাকি করবো? আমি জানি তোমার অর্থকষ্ট আছে। আজকাল আমরা সবাই অর্থকষ্টে আছি। আমি বিশ্বাস করি না, তুমি একজন খারাপ মানুষ। কে চোর হতে যাবে যদি না তার সামর্থ্য থাকে? হয়তো বা তোমার বাবা স্ট্রোক করেছেন এবং তোমাকে বাবার দেখাশোনা করতে হয়। তার জন্য এই টাকা নিয়ে যাও তবে সমস্ত টাকা ওষুধের পেছনে ব্যয় করো না। আমার কথা বিশ্বাস করো, একজন চিকিৎসক শরীর ঠিক সুস্থ করতে পারেন, তবে অনুরূপ একজন মানুষের প্রয়োজন তার মন ও আত্মা সুস্থ করা। সুগন্ধিযুক্ত কিছু পুষ্প ক্রয় করো, তোমার মায়ের জন্য একটা ফুলের মালা ক্রয় করো যেন বাড়িতে পবিত্র মূর্তির সামনে নিবেদন করতে পারেন। প্রতিরাতে আমি তাই করি। তোমার জানা নেই পবিত্রতা কি অথবা কোথায় থাকে। নিজের মধ্যে নিজে শান্তি অনুভব করাই যথেষ্ট। সেটাই স্বর্গ। উহ্! তোমার অস্ত্র ত্যাগ করো – তাৎক্ষণিকই তোমার ভালো লাগবে। অস্ত্রধারী লোক জানে না শান্তি কী, ত্রাস ও সন্দেহ এবং বিপদের ঘ্রাণ দ্বারা তার হৃদয় নিপীড়িত। আমাদের হাতে যতদিন অস্ত্রের ঝনঝনানি থাকবে ততদিন আমরা সুখী হতে পারব না।’

যুবকটি বাধ্য বালকের মতো অস্ত্রটি তার পকেটে ঢুকিয়ে রাখে। সে দুই হাত উঁচু করে কপালে ঠেকিয়ে করজোড়ে নাই পানকে সালাম জানায়। বিরিয়ানি, কফি এবং উদারতার জন্য নাই পান ছিলেন প্রসিদ্ধ।

তারপর যুবকই বললো, ‘আপনাকে গুলি করার পরিবর্তে আমার নিজেকেই গুলি করা উচিত।’

যুবকটির হাতে টাকাগুলো হস্তান্তর করে দোকানদার বললেন, ‘বিকারগ্রস্তের মতো কথা বলো না। এখানেই সমস্ত টাকা। নাও, এগুলো তোমার। এটা কোনো রাগের উপহার নয়। আমি জানি জেলখানা পরিপূর্ণ তবে অপরাধী দ্বারা নয়। তুমি আমার মতো একজন মানুষ, অন্য যেকোনো মানুষের মতো; যেকোনো মানুষ, এমনকি একজন মন্ত্রীও কাজ করতে পারেন।’

অস্ত্রধারী যুবকটি বসে পড়ে আর বলে, ‘আপনার সঙ্গে আমার কখনো দেখা হয়নি এবং আমি জীবনে এমন কারো সাক্ষাৎ পাইনি যিনি আপনার মতো কথা বলেন। আমি আপনার টাকা নেব না। তবে আমি অস্ত্রটি পরিত্যাগ করবো। এখন আমি আপনার কথামতো আমার মায়ের কাছে যাবো।’ যুবকটি কিছুক্ষণ কাশি দেয় এবং আবার কথা বলতে শুরু করে, ‘আমি একজন দুষ্ট সন্তান। আমার মায়ের দেওয়া সমস্ত টাকাই আমি ঘোড়ার পেছনে খরচ করেছি এবং আর বাদবাকি যৎসামান্য টাকা মদের পেছনে খরচ করেছি।’

জবাবে নাই পান বলেন, ‘সবাই ভুলভ্রান্তি করে। অভিজ্ঞতা, ভুলভ্রান্তি এবং ব্যর্থতার সংমিশ্রণ ছাড়া জীবন আর কী?’

যুবকটি বলতে থাকে, ‘আপনি জানেন, আমি খুব একটা শক্তিশালী নই। আমার ভয় করছে আমার যক্ষ্মা হয়েছে। আমার ধারণা, আমার যক্ষ্মা হবে, কারণ আমি অনেক খারাপ কাজ করেছি। বাস্তবিকপক্ষে যতটা দ্রুত আমার মরে যাওয়া উচিত। দুনিয়ার বুকে বোঝা হয়ে আমি বাঁচতে চাই না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ এবং বিদায়।’

দোকানদার বলেন, ‘তুমি ঠিক এখনই যেও না। কিছুক্ষণ  অপেক্ষা করো এবং আমি কথা বলি। আমি তোমার সম্পর্কে কিছুটা জানতে চাই। তুমি কোথায় বাস করো? তোমার আগ্রহ কিসে? আমি বলতে চাইছি তুমি কিসে বিশ্বাসী?’

যুবকটি হতাশভাবে মাথা নাড়ে আর বলে, ‘আমি জানি না এখন আমি কোথায় যাব। আমি কোথায় যেতে পারি, আমি কিসে বিশ্বাসী – আমি জানি না। আমার মনে হয় না এই দুনিয়াতে বিশ্বাস করার মতো মূল্যবান কিছু আছে।’

‘আমার জন্মের দিন থেকেই আমি একজন শোচনীয় দুর্দশাগ্রস্ত মানুষ। বিস্মিত হবেন না আমি স্বদেশের কাউকে পছন্দ করি না। মাঝেমধ্যে আমি চিন্তা করি আমার এই ভাগ্যের জন্য অবশ্যই সকলে দায়ী। আমি লোকজনের কাছাকাছি যেতে চাই না। আমি কাউকে বিশ্বাস করি না। লোকজন যেভাবে পরস্পর কথা বলে, তাদের জীবনযাত্রা, যেভাবে পরস্পরকে ভালোবাসে ও প্রশংসা করে এবং যেভাবে তারা অট্টহাসি ও মৃদুহাসি দেয় – আমি সবই ঘৃণা করি।’

যুবকটির এসব কথা শুনে নাই পান সহমর্মিতাপূর্ণভাবে মাথা নাড়েন আর বলেন, ‘একসময় সকলেই সেই রকমই অনুভব করে।’

যুবকটি আবার বলে, ‘আপনি আমাকে বিশ্বাস করতে পারেন? আমি কোনোমতেই কোনো কিছুতে আর আগ্রহী না। আমি সবকিছুতেই বেশ ক্লান্ত। সারা দুনিয়া মনে হয় শূন্য। কোনো অন্তঃসার নেই; মানুষের কোনো কিছু ধারণ করার বা শ্রদ্ধা করার নেই। আমি যদি সত্যিকার অর্থে কাজ করতে চাই আমার মনে হয় আমি সর্বদা কাজের সন্ধান করতে পারি। তবে আমি মানুষের দয়াকে ঘৃণা করি, আমি তাদের কোনো অনুগ্রহ চাই না। আমি এক কাজে এক সপ্তাহ, দুই সপ্তাহ অন্য কাজে এবং আমি কখনো কোনো কাজে দীর্ঘস্থায়ী হই না।’

নাই পান জানতে চান, ‘তুমি কি বইপুস্তক পড়ো?’

‘আমি আগে পড়তাম। তবে এখন এসব বাদ দিয়েছি। এমনকি আমি এখন পত্রিকাও পড়ি না। আমি কেন পড়ব? তাতে কি লেখা থাকে আমি ভালো করেই জানি। আছে শুধু গোলাগুলি, রাহাজানি, খুনোখুনি। তারা শুধু স্থান ও নামের পরিবর্তন ঘটায়। তবে কাহিনিগুলো সর্বদা একই রকমের।’

যুবকটি নিজের চিবুকে আস্তে করে হাত বুলায় এবং তীর্যকদৃষ্টিতে চিন্তাপূর্বক নাই পানের দিকে তাকায়। আর বলে, ‘আপনার ভাগ্য ভালো যে আপনি কোনো ধরনের ভয় বা ক্রোধ দেখাননি যখন আমি অস্ত্র দিয়ে আপনাকে হুমকি দিয়েছিলাম। আমি নিশ্চিত আপনাকে খুন করতাম। এই দুনিয়াটা সেসব লোকে ভরপুর যারা রাগ দেখায়, ছোটলোক, যারা সর্বদা চিৎকার করে বলছে সভ্যতা ও নৈতিকতা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আমি এটা বিশ্বাস করি না। আমি এটা বিশ্বাস করি না। কারণ শত শত বা হাজার হাজার লোক নষ্ট হয়েছে, সকল মানুষ অবশ্যই এক কাজ করে। আমি বর্তমানে জানি যে, আমি এখানে টাকার জন্য আসিনি, তবে আমার নিজস্ব বিশ্বাস সঠিক এটা নিজের কাছে প্রমাণ করার জন্যই এসেছি। আমি প্রায়শই চিন্তা করি যে, যদ্যপি দুনিয়াটা আশা হারাচ্ছে এবং মানুষের পাপের কারণে অতল গহ্বর, নোংরা এবং মাটিতে ডুবে যাচ্ছে, তথাপি একজন মানুষ আছেন যিনি কেবল দেখতে একজন মানুষের মতো নন, তবে সত্যিকার এক মানবীয় সত্তা। তিনি অবশ্যই জানেন অন্যদের কিভাবে ভালোবাসতে হয়, কীভাবে অন্য মানুষের শ্রদ্ধা আদায় করতে হয়। তবে আমি এটা পুরোপুরি বিশ্বাস করি না, কারণ আমি কখনো তেমন কারো সঙ্গে দেখা করিনি। বছরের পর বছর আমি চিন্তা করে চলেছি, আমাকে এমন একজন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে হবে যিনি নষ্ট দুনিয়ার সঙ্গে নষ্ট হয়ে বেড়ে ওঠেননি। সুতরাং আমি বিশ্বাস করতে পারি যে, এখনো মহত্ত্ব আছে। সুতরাং আমার বেঁচে থাকার শক্তি রয়েছে। বর্তমানে আমি এমন একজন মানুষের সাক্ষাৎ পেয়েছি। আমি যা চাই আপনি সবই দিয়েছেন। অতিরিক্ত আর কিছু দেওয়ার নেই। আমি এখন বাড়ি যাচ্ছি। আমি দৃঢ় আত্মপ্রত্যয়ী যে, আমি আর কখনো দুনিয়াকে ঘৃণা করবো না। আমি অবশেষে আবিষ্কার করেছি যে, আমি কোন ধরনের জীবনযাপন করতে চাই।’

আগন্তুক যুবকটিকে দেখে মনে হয় এখন যেন অধিক প্রফুল্ল­ ও তুষ্ট। সে চলে যাওয়ার জন্য ওঠে দাঁড়ায় এবং তারপর তার মনে পড়ে সঙ্গে করে নিয়ে আসা অস্ত্রের কথা। সে তার অস্ত্রটি দোকানদারের হাতে দিয়ে দেয়।

আর সে বলে, ‘দয়া করে ওটা নিন। আমার ওটার আর কোনো প্রয়োজন নেই। এটা হিংস্রতার চিহ্ন। অস্ত্রধারী ব্যক্তির অন্য মানুষের প্রতি কোনো সমবেদনা বা শ্রদ্ধা নেই। সে শুধুই অস্ত্রকে শ্রদ্ধা জানায়। রাহাজানরা তাদের অস্ত্র নিয়েই বেঁচে থাকে, তবে তাদের জীবন সর্বদা হুমকির সম্মুখীন থাকে এই বাস্তবতা দ্বারা যে, তাদের শত্রুরা আচমকা তাদের মুখোমুখি এসে দাঁড়াতে পারে। সূর্যাস্ত বা সংগীতের প্রতি মনোযোগ দেওয়ার তাদের কোনো সময় নেই। একজন মানুষের যখন গান শোনার কোনো সময় থাকে না, তার একটা ঝিঁঝি পোকা অথবা ময়না পাখি হওয়া উত্তম।’

অস্ত্রধারী যুবকটি আনন্দভরে হাসে এবং হাত নেড়ে বিদায় জানিয়ে বলে, ‘আমি আপনাকে দেখার জন্য আবার আসবো, তবে অস্ত্রটি আর আমাকে দেখাবেন না। এটা হলো বিশুদ্ধ জীবনের শত্রু। বিদায়।’

আগন্তুক যুবকটি রাতের অন্ধকারে মিশে যায়। নাই পান, দোকানদার, মাথা নিচু করে তার নতুনতম অর্জন অস্ত্রটি পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি চিন্তা করেন, আগামীকাল অস্ত্রটি বিক্রি করবেন। তার নতুন একটা কফি ছাঁকনি যারপরনাই প্রয়োজন।

লেখক-পরিচিতি : ভিলাস মানিভাত (১৯২৪-২০০৩) শ্যামদেশের একজন খ্যাতিমান লেখক । সেদেশের দক্ষিণের পার্বত্য অঞ্চলে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি একজন প্রকৃতিপ্রেমী লেখক। গাছকাটা, বনাঞ্চল ধ্বংস ইত্যাদির বিরুদ্ধে তিনি সর্বদা তৎপর ছিলেন। তাঁর বউ সুরিপুন মানিভাত একজন লেখক ও ঔপন্যাসিক। শ্যামদেশের সাহিত্যজগতে এই লেখক দম্পতি ব্যাপক প্রসিদ্ধ ও জনপ্রিয়। তিনি অনেক দেশ সফর করেছেন এবং সফরনামাও লিখেছেন। তাঁর লেখা আমেরিকা ও লন্ডন সফরনামা শ্যামদেশে সর্বাধিক পরিচিত বই। তিনি সেদেশের থাম্মাসাত বিশ^বিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তাছাড়া তিনি একটা ম্যাগাজিনও সম্পাদনা করেছেন। তাঁর প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক। অনেক ভাষায় তাঁর বই অনুবাদ হয়েছে। বর্তমান গল্পটি জেনিফার ড্রাসকাউ-সম্পাদিত তাউ অ্যান্ড আদার স্টোরিস (১৯৭৯) শীর্ষক বই থেকে নেওয়া হয়েছে।