পর্যটকদের জন্য ইতালি খুবই আকর্ষণীয়। আল্পস পর্বতের উঁচু-নিচু শিখর, উত্তর দিক ছাড়া অন্য সবদিকেই নীল পানির সমুদ্র ও সৈকত, উত্তর থেকে দক্ষিণে বিস্তৃত পর্বতশ্রেণি, সবুজ বনরাশি, পাহাড়ের গায়ে গায়ে লুকানো বসতি, ধর্মশালা, আবহাওয়া আর খাবারের সংস্কৃতি ভ্রমণপিপাসু পর্যটকদের অত্যন্ত আকৃষ্ট করে।
প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য ও কৃষ্টি ছাড়াও পর্যটকরা খুঁজে বেড়ান প্রাচীন সভ্যতার নিদর্শন। উত্তর ও মধ্য ইতালির ভেনিস, রোম, ফ্লোরেন্স, নেপলস দেখে তাঁদের খুব কমই সময় হয় হাজার কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে দক্ষিণে যাওয়ার, যেখানে ইতালির প্রাচীনতম সভ্যতার নিদর্শন আছে, যেগুলো প্রাচীনতার দিক দিয়ে ইতালির ৩০০০ বছরের পুরনো এটরুস্ক্যানকেও হার মানায়।
ইতালিতে প্রায় পঞ্চাশটির মতো ইউনেস্কো-অনুমোদিত ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট’ আছে, এবং আরো প্রায় পঞ্চাশটি অনুমোদনের অপেক্ষায়। এটির অনেকগুলিই দক্ষিণে অবস্থিত।
‘সাসি দি মাতেরা’ (যার আক্ষরিক অর্থ হলো ‘সাসির পাথরগুলো’) এমনই একটা অনুমোদিত ‘সাইট’, যেটা প্রাগৈতিহাসিক প্যালিওলিথিক (পুরনো প্রস্তর) যুগের অনেক কীর্তি নিয়ে এখনো বিরাজমান। প্রাচীনতার দিক থেকে ‘সাসি দি মাতেরা’ রোমের কলোসিয়াম, রোমান ফোরাম অথবা রোমের আশেপাশের প্রাচীন পর্যটনের জন্য আকর্ষণীয় স্থানগুলোর চেয়েও প্রায় পাঁচগুণ বেশি পুরনো। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ২০১৯ সালে সাসি দি মাতেরাকে ‘কালচারাল ক্যাপিটাল অফ ইউরোপ’ হিসেবে মনোনীত করে। ফোডোর্স ভ্রমণ গাইডও একে পৃথিবীর অন্যতম আশ্চর্যজনক ‘ল্যান্ডস্কেপ’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
সুদীর্ঘ ৩০ বছর ইতালিতে বসবাসরত আমরাও (অর্থাৎ আমি, আমার স্ত্রী ও দুই মেয়ে) দেশটির অনেক স্থান ভ্রমণ করেছি, তবে নেপলস, ভিসুভিয়াস, পজিতানো ছেড়ে আরো দক্ষিণে, একমাত্র সিসিলি ছাড়া, যাওয়া হয়নি।
তাই ঠিক করলাম এবার আমরা যাবো মাতেরাতে, প্রস্তরযুগের নিদর্শন দেখতে। ছোট মেয়ে পড়াশোনার প্রয়োজনে আমাদের সঙ্গে যেতে পারছে না।
সবকিছু গুছিয়ে, গাড়িতে পেট্রোল ভরে রওনা হলাম সকাল সাড়ে ৯টার দিকে। প্রায় ৬০০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে হবে। হাইওয়ে শেষ করে, বিশ্রামের জন্য মাঝে মাঝে থেমে, লাঞ্চ করে, সুপার স্ট্রাডা ও স্থানীয় বাঁক খাওয়া রাস্তায় ডানে-বাঁয়ে মোড় নিয়ে যখন হোটেলে পৌঁছালাম তখন বিকেল সাড়ে ৫টা।
রাতে কাছেরই একটি ভালো রেস্তোরাঁয় খেতে খেতে ঠিক হলো, সকালে হোটেলেই নাস্তা করে ৯টার দিকে বেরুবো। আশেপাশের গ্রামীণ পরিবেশে কিছুটা ঘুরেফিরে, কোথাও লাঞ্চ করে ২টার দিকে সাসি দি মাতেরাতে যাবো।
পরদিন সাসি দি মাতেরায় পৌঁছলাম আড়াইটার দিকে। শহরকেন্দ্রের কাছাকাছি বেশ ভিড়। একটা কমার্শিয়াল পার্কিংয়ে গাড়ি রেখে ‘গাইডেড ট্যুর’ কেনার জন্য কাছেই একটা পর্যটন কেন্দ্রে ঢুকে পড়লাম।
পর্যটনের জন্য বিভিন্ন প্যাকেজ আছে; শুধু গিরিখাদের এপারের অংশগুলো ঘুরে দেখাবে, অথবা শুধু ওপারের অংশ, যেটা আরো প্রাচীন, অথবা এপার-ওপার মিলিয়ে দুটোই দেখাবে। আমরা এপারের জন্য তিন ঘণ্টার গাইডেড ট্যুরের টিকেট কিনলাম এবং উৎসাহের সঙ্গে আরো বারো জনের সঙ্গে মাতেরার প্রাগৈতিহাসিক বাসস্থান দেখার জন্য রওনা দিলাম।
‘ট্রোগ্লোডাইট’ (গুহাবাসী বসতি) থেকে উদ্ভূত সাসি দি মাতেরাই পৃথিবীর একমাত্র স্থান যেখানে প্রস্তরযুগের মানুষের বাসস্থানের অনেক অক্ষত নমুনা দেখতে পাওয়া যায়। অনুমান করা হয়, এখানে ৯১০০ বছর আগে থেকে মানুষ বাস করত। এখানকার বাড়িগুলো পাথরে খোদাই করা বড়সড় পাহাড়ের গুহা। প্রাচীন শহরটি গ্র্যাভিনা নদী দ্বারা সৃষ্ট গিরিখাতের দুই ঢালে গড়ে উঠেছিল। বলা হয়, সাসি দি মাতেরাই ইতালির প্রথম মানববসতি।
১৯৫০ দশকের শেষের দিকে কার্লো লেভি তাঁর Christ Stopped at Eboli স্মৃতিকথায় এই এলাকার দারিদ্র্যের বিবরণ দেন এবং তারই জের ধরে তখনকার সরকার এই এলাকাটিকে একটি বিশেষ দরিদ্র এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করে এবং অধিকাংশ অধিবাসীকে আধুনিক বসতবাড়িতে স্থানান্তরিত করে। তবে অনেকেই তাদের ঐতিহাসিক পুরনো বাড়িতেই থেকে যায়। মাতেরাই পৃথিবীর একমাত্র জায়গা যেখানে বেশকিছু অধিবাসী এখনো তাদের পূর্বপুরুষদের ৯১০০ বছর আগের বাড়িতেই বসবাস করছে।
সাসি দি মাতেরার পটভূমিতে কিছু নামকরা ইতালীয় এবং হলিউডি সিনেমাও তৈরি হয়েছে। যেমন জেমস বন্ড সিরিজের নো টাইম টুটু ডাই ও সোফিয়া লরেনের লা ভিটা ডাভান্তি আ ছেই। তাছাড়া কার্লো লিজইয়ানির মাতেরার কৃষকজীবনের ওপর ছবি তাদের জীবনের দ্বন্দ্ব, ঘাত ও প্রতিঘাতের চিহ্ন তুলে ধরেছে।
গাইডের পেছনে পেছনে প্রথমেই আমরা নেমে গেলাম বিশাল চত্বরটির কোনায় একটি বিরাট গুহার ভেতর। নেমেই দেখলাম, একপাশে বিরাট একটি হলঘরের মতো, অন্যদিকে একটি গির্জার মতো, পাথরে খোদাই করে তৈরি। এটি ছিল তখনকার দিনের বেশ প্রতিপত্তিশালী কারো বাসস্থান। ওপরের চত্বরে বেশ গরম; কিন্তু গুহার ভেতরে বেশ আরামদায়ক আবহাওয়া। প্রচুর পর্যটক, ছবি তুলছেন। আরো ভেতরে একটি শোবার ঘর দেখা গেল। উঁচু পাথরের বিছানা, একদিকে খোদাই করা আলো-বাতাস চলাচল করার মতো সুড়ঙ্গ। গাইড আমাদের পাথরগুলোর বর্ণনা দিলেন। ৯০০০ বছরের আগের একটি বসতভিটায় কিছুক্ষণ কাটিয়ে ওপরে উঠে এলাম।
এরপর আমরা গেলাম দোকানপাটের পাশ দিয়ে চত্বরের বাইরের প্রান্তে, যেখান থেকে গিরিখাত শুরু। গিরিখাতের দুই পাশে সারি সারি পুরনো গুহা।
এপারের গুহাবাড়িগুলিকে কিছুটা আধুনিকীকরণ করা হয়েছে। উপত্যকার ঢালে গুহাবাড়িগুলি নেমে গিয়েছে অনেক নিচে, আবার ওপরের দিকেও উঠেছে; সিঁড়ি উঠেছে, নেমেছে, বৃত্তকারে, কোনাকুনি। ওখানে চলাচল করা ভীষণ কষ্টসাধ্য ব্যাপার। গাড়িতে ভ্রমণ করে অভ্যস্ত এখনকার শহরবাসী ওখানে একদিনও কাটাতে পারবে না। জিনিসপত্র নিয়ে ওঠানামা করা, খাবারদাবার, পানি টানা! ওপারে অনেক প্রাচীন বসতি। বলা হলো, সেগুলির অনেকই ৫০-৬০ বছর আগেও ব্যবহৃত হতো। ওপারের গুহাবাড়িগুলো অব্যবহৃত; কিন্তু পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন।
আমাদের দেশেও তো পুরাকীর্তি, ইতিহাসের অভাব নেই; কিন্তু আমরা সংরক্ষণ করি না, বা করতে পারি না। ঢাকার এক বাড়িতে দেখেছি আমাদের দেশের প্রাচীন মন্দির থেকে নিয়ে আসা দেব-দেবীর মূর্তিখচিত একটি বিশাল দরজা, হয়তো কোনো পুরনো মন্দির থেকে খুলে আনা। এক বিদেশি ক্রেতার কাছে পাঠানো হচ্ছে, কাগজপত্রও জোগাড় হয়েছে। টাকায় কি না হয়!
প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রায় জীবন্ত একটি ইতিহাসের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখছিলাম আর ভাবছিলাম – হাজার হাজার বছর পরে আমাদের উত্তরসূরিরাও কি এমনভাবে এসে আমাদের এখনকার ‘সভ্যতা’ দেখবে? হয়তোবা তারা আমাদের কীর্তি দেখতে আসবে মহাকাশ পরিক্রম করে আর ভাববে, তাদের পূর্বপুরুষদের ‘সভ্যতা’ও ছিল কত বিশাল! তারা হয়তো জানবেও না, কীভাবে আমরা পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হলাম।
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে, সেখানে আমাদের পায়ের নিচে বেশ বড় বড় পাথর। ভ্রমণগাইডের কথায় বর্তমানে ফিরলাম। তিনি বললেন, আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আছি সেটা প্রায় ৯০০০ বছরের পুরনো কবরস্থান। শরীরটা কি একটু শিরশির করে উঠল?
পুরনো গুহাবসতির সামনে পাহাড়ের চূড়ায় একটা গির্জা, ‘সান্তা মারিয়া দি ইদ্রিস’। ওখানে পৌঁছাতে গেলে বেশ পরিশ্রম করতে হবে। আমরা অবশ্য সেখানে যাইনি। আমাদের জানানো হলো, খ্রিষ্টধর্ম এদেশে আসার পর এই গির্জার পত্তন হয়, প্রায় পাঁচশো বছর আগে।
গাইড এবার আমাদের নিয়ে চললেন এপারের ঢালুতে গুহাবাড়িগুলো দেখাতে।
আস্তে আস্তে আমরা গিরিখাতের বেশ নিচে নেমে গেলাম, যাওয়ার পথে বেশকিছু গুহাবাড়িঘর দেখলাম, যেগুলো এখনো ব্যবহৃত হচ্ছে। দেখলাম কিছু ছোট দোকান, বেকারি, মাঝে মাঝে পানি ধরার পাথরের চৌবাচ্চা। এখন অবশ্য মিউনিসিপ্যালিটি থেকে পাইপ দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়, তবে আগে চৌবাচ্চাগুলো বৃষ্টির পানি ধরার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। আধুনিকীকরণের ফলে এখন বাড়িগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ আছে।
কিছু কিছু গুহাবাড়ি আবার ‘বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্টে’ রূপান্তরিত হয়েছে। পর্যটকদের অনেকেই পছন্দ করেন প্রাগৈতিহাসিক এমন একটি জায়গায় কয়েকদিন কাটাতে। তার জন্য অবশ্য ভাড়াও গুনতে হয় বেশ চড়া।
গুহাবাড়িগুলোর কাঠামোগত কোনো পরিবর্তন করা হয়নি, তবে পুরনো দিনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে দরজা-জানালা লাগানো হয়েছে। বেশ কয়েকটি বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে তখনকার দিনের আসবাব দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে পর্যটকদের দেখানোর জন্য।
গাইড আমাদের দু-একটা বাড়ির ভেতরে নিয়ে গেলেন। তখনকার বাড়িগুলোতে আধুনিক যুগের মতো কোনো দরজা-জানালা ছিল না; বাতাস ও কিছুটা আলো আসার জন্য যতটুকু প্রয়োজন ততটুকুই খোদাই করা হতো। শীতের হাত থেকে বাঁচার জন্য প্রধান ঘর বেশ ভেতরে। পাথরেরই একটা প্লাটফর্মের মতো শোবার জায়গা, পাশে কিছু কৃষি যন্ত্রপাতি, আমাদের দেশের মতো হারিকেন অথবা কুপি; একটা বড় পাথরের গামলা, যেখানে শীতের সময় গাছের ডালপালা পুড়িয়ে ঘর গরম রাখা হতো; ঘরগুলোর ভেতরেই, পেছনের দিকে, বড় পাথরের আড়ালে টয়লেটের ব্যবস্থা।
পাশের একটি গুহায় গৃহপালিত পশুপাখি রাখার স্থান। শীতকালে গবাদি পশুপাখি শোবার ঘরেই রাখা হতো, যাতে তাদের শরীরের উত্তাপে ঘর গরম থাকে।
বেশকিছু সময় ধরে ওপরে-নিচে ঘুরে বেড়ানোর পালা। মাঝপথে গাইড বললেন, আমরা গির্জাটি দেখতে চাই কি না, তাহলে বাঁদিকে মোড় নিয়ে অন্য পর্যটকদের সঙ্গে গেলেই গির্জায় পৌঁছানো যাবে। কয়েকজন কমবয়সী ছেলেমেয়ে চলে গেল গির্জা দেখতে আর আমরা চললাম ওপরের দিকে। সন্ধ্যা হয়ে আসছে, খিদেও লেগেছে।
আমরা বেশ পরিশ্রান্ত, পা চলছে না। মেয়ে চাইছে ভালো একটি কফি বারে গিয়ে কফি ও কফির সঙ্গে অন্য কিছু খাবে। ক্যাফেটেরিয়া অনেক আছে, তবে সবই লোকে ভর্তি।
বারগুলোতে ও চত্বরে লোকজন কমছে, চত্বরের লাইটগুলো জ্বলে উঠেছে, খিদেও চনমনিয়ে উঠছে। আমরা রাতের খাবারের জন্য রেস্তোরাঁ খুঁজতে লাগলাম। দু-একটা পিজ্জাজাতীয় রেস্তোরাঁ ছাড়া সব রেস্তোরাঁই লোকে পূর্ণ। দু-একটি রেস্তোরাঁয় জিজ্ঞেস করতে বলল, ‘আজকে ১৫ই আগস্ট, গ্রীষ্মের শেষদিন, বুকিং না থাকলে আজকে কোনো রেস্তোরাঁতেই জায়গা পাবে না।’ তাই তো! মনেই ছিল না যে আজ ১৫ই আগস্ট!
আমার অবহেলায় এমন একটি পরিস্থিতির উদ্ভব হওয়ায় খারাপ লাগছিল। ভ্রমণটা খুব সুন্দর হতে পারত যদি আমরা ভালো রেস্তোরাঁয় বসে ডিনার করতে পারতাম।
আটটা বাজতে চলল, ভালো রেস্তোরাঁ পাচ্ছি না আর মাতেরায় ওপর-নিচ করে পায়েরও বেহাল অবস্থা। মেয়ের মুখও মলিন।
এমিলি (আমার স্ত্রী) এদিক-সেদিক লোককে জিজ্ঞেস করছে, যদি তারা ভালো রেস্তোরাঁর সন্ধান দিতে পারে, যেখানে হয়তোবা জায়গা পাওয়া যাবে। তিনজন বয়স্ক ইতালিয়ান ভদ্রলোক গল্প করতে করতে যাচ্ছিলেন। মনে হলো তাঁরা স্থানীয়। এমিলি তাঁদের জিজ্ঞেস করতেই বললেন, হ্যাঁ, একটি বেশ ভালো রেস্তোরাঁ আছে, সেখানে দেখতে পারি। আমাদের অনুরোধে তাঁদের মধ্যে একজন, পাওলো, আমাদের রেস্তোরাঁয় নিয়ে যেতে রাজি হলেন।
বেশ কিছুদূর হেঁটে আরেকটা চত্বরের শেষ মাথায় একটি সুড়ঙ্গ দিয়ে কিছুদূর গিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই রেস্তোরাঁটার দেখা পেলাম। সামনেই গিরিখাত। রেস্টুরেন্টের সামনের দিকটা কাঁচ দিয়ে ঘেরা। ভেতর থেকে রাতের সাসি দি মাতেরার পুরোটা দেখা যায়। দূরে পুরনো গুহাবসতি তখনো আবছা দেখা যাচ্ছে। এপারের বসতি আলোয় উজ্জ্বল। চমৎকার দৃশ্য। রাতের মাতেরাকে অনেক বেশি সুন্দর, সাজানো-গোছানো, লাস্যময়ী মনে হচ্ছিল।
রেস্তোরাঁটা বেশ বড় একটি গুহায়, সুন্দর পরিবেশ ও সুন্দর করে সাজানো, পুরোটাই ভর্তি। রেস্তোরাঁয় ঢুকতেই তার ম্যানেজার পাওলোকে স্বাগত জানালেন অন্তরঙ্গভাবে, বোঝা গেল পাওলো ওঁর বেশ পরিচিত। পাওলো বললেন, আমাদের একটি তিনজনের টেবিল দিতে হবে; কিন্তু ম্যানেজারের মুখের ভাব দেখে মনে হলো তেমন ভরসা নেই। ভেতরে গিয়ে অল্প কিছুক্ষণ পরেই ফিরে এসে আমাদের এক কোনায় বেঞ্চিতে বসিয়ে বললেন, দুঃখিত, এখনই আমাদের টেবিল দিতে পারছেন না, অপেক্ষা করতে হবে। উপায় নেই, রাজি হলাম। পাওলো কাজ আছে বলে বিদায় নিলেন। কিছুক্ষণ পর ম্যানেজার এসে বললেন, আমাদের জন্য বসার জায়গা পাওয়া গেছে।
আমাদের বসালেন কাঁচ দিয়ে ঘেরা ঘরে, যেখান থেকে রাতের সাসি দি মাতেরার পুরোটাই দেখা যায়। চমৎকার পরিবেশ। খাবারের মান উঁচু আর সার্ভিসও ভালো। আমাদের মেয়েও ভালো পরিবেশ ও খাবার পেয়ে বেশ হাস্যোজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। মন থেকে একটি ভার নামল। অনেক ছবি তুলে রাত প্রায় ১০টার দিকে হোটেলে ফেরার জন্য রওনা হলাম।
কাল আবার লম্বা ড্রাইভ, যাবো পজিতানোতে, পশ্চিমের দিকে, ভূমধ্যসাগরের পারে …
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.