ফ্ল্যাট নম্বর ৭/সি

রাজাবাজার তেরো নম্বর রোডে গিয়েছিলেন কখনো? যাননি মনে হয়। ওদিকের বাসিন্দা না হলে কে যায় ওই ঘিঞ্জি এলাকায়। কোনো অফিস-আদালত নেই, ভালো কোনো মার্কেট বা রেস্তোরাঁ নেই – কেন যাবেন? কখনো গেলে দেখবেন ওই রোডের মাথায় পানির পাম্পটির পাশেই একটি আটতলা বাড়ি। গেটের ওপর লেখা ‘একরাম ভিলা’। বাড়ির কোনায় একটি নারিকেল গাছ মরি মরি করেও টিকে আছে। নিচতলার গ্যারেজটায় একটি প্রাইভেট কার, তিনটি বাইক ও একটি সাইকেল দেখতে পাবেন। সিকিউরিটি গার্ডের বসার জন্য ছোট্ট একটি রুম আছে, কিন্তু গার্ড নেই। রুমটা ভাঙাচোরা কিছু আসবাবপত্রে ঠাসা।

বাড়িটা দেখে আপনার মনেই হবে না এর সাততলার দক্ষিণ পাশের ৭/সি নম্বর ফ্ল্যাটটি একটি বেশ্যালয়। আঠারো বছরের তরুণী থেকে চল্লিশের যুবতী – সবই পাবেন। তারা এখানে থাকে না, যাতায়াত করে। তারা আসে আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, মুগদা, বাসাবো, মগবাজার, রামপুরাসহ শহরের নানা জায়গা থেকে। সার্ভিস দিয়ে চলে যায়।

ফ্ল্যাটটির ভাড়াটিয়া প্রায় বত্রিশের এক যুবতী,  নাম মোহিনী। আমি সন্দিহান মোহিনী তার আসল নাম কি না। সম্ভবত ছদ্মনাম। তিন বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে থাকে। প্রথম যখন এই ফ্ল্যাটে গিয়েছিলাম তখন মোহিনী বলেছিল, তার স্বামী প্রবাসী। কোন দেশে থাকে জিজ্ঞেস করিনি। আমার ঠিক বিশ^াস হয়নি। মনে হয়েছিল, নিশ্চয়ই সে মিথ্যে বলেছে। আসলে তার স্বামী নেই। ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। শহরে টিকে থাকার স্বার্থে সে এই পেশা বেছে নিয়েছে। সে একটা চেইন মেইনটেইন করে। প্রস্টিটিউটদের খুঁজে বের করে কাজে লাগায়। প্রস্টিটিউটরা তার ফ্ল্যাটে এসে সার্ভিস দিয়ে পায় দুই হাজার টাকা, আর মোহিনী এক হাজার।

ফেসবুকে শাড়িপরা মোহিনীর যে-ছবিটি দেওয়া, সেটি দেখলে আপনার মনেই হবে না সে একটি ক্ষুদ্র বেশ্যালয় চালায়। মনে হবে সহজ-সরল কোনো গৃহবধূ, যে কি না স্বামী-সংসার ও সন্তান ছাড়া আর কিচ্ছু জানে না, কিচ্ছু বোঝে না। তার মোবাইল নম্বরটি আমার মোবাইলে ‘রাজাবাজার জি মার্কেট’ নামে সেভ করা। এই নামে সেভ করার কারণ, আমি তখনো তার নাম জানতাম না। তার নম্বরটি দিয়েছিলেন ইফাজউদ্দিন। অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক অফিসার। তাঁর মতো বহুগামী চরিত্রের মানুষ দ্বিতীয়টি দেখিনি। একবার বলেছিলেন, জীবনে তিনি আটশো সাতান্নজন নারীর সঙ্গে বিছানায় গিয়েছেন। আমি অবাক হয়েছিলাম। চাপাবাজি মনে হয়েছিল। এও কি সম্ভব! হিসাব রেখেছেন কেমন করে। এমন বহুগামী মানুষের কি নারীর প্রতি কোনো আকর্ষণ থাকে? একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম এ-কথা। তিনি বলেছিলেন, আকর্ষণ থাকবে না কেন? প্রকৃতির সব প্রাণীই বহুগামী। মানুষ আলাদা কিছু নয়। সুযোগের অভাবে মানুষ বহুগামী স্বভাবকে চেপে রাখে। আমি রাখি না। ক্ষতি তো করছি না কারো। আমার টাকায় বরং অনেক মেয়ে উপকৃত হচ্ছে।

করোনার প্রথম ধাক্কায় তিনদিন ভেন্টিলেশনে থেকে মারা যান ইফাজউদ্দিন। তাঁর মৃত্যুর খবর শুনে খুব বিপন্ন বোধ করেছিলাম। মৃত্যুর মাস ছয় আগে আমাকে মোহিনীর নম্বরটি দিয়ে বলেছিলেন, যখন ইচ্ছা ফোন করে চলে যাবেন। কোন ধরনের জিনিস চান আগে থেকে বলে রাখবেন। মোহিনী ম্যানেজ করে রাখবে।

আমার পছন্দের ধরন তো একটাই – উন্নত স্তন। কেননা নারীর স্তনের চেয়ে সুন্দর পৃথিবীতে আর  কিছু নেই। যেন দুটি পাহাড়, প্রকৃতি যেখানে লুকিয়ে রেখেছে অপার্থিব মধু। মাসুমার স্তন ছিল ছোট। বিয়ের পর ভেবেছিলাম, ধীরে ধীরে আমার মনের মতো হয়ে উঠবে। তিন বছরেও হলো না। হয়তো এ-কারণেই তার সঙ্গে আমার হলো না। না হওয়ার পেছনে দায় অবশ্য আমার বেশি। আমার আচরণে সে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। আমাকে সে বারবার হুঁশিয়ার করেছিল। বলেছিল, আর কখনো এমন আচরণ করলে সে চলে যাবে। আমি পাত্তা দিইনি। মনে হতো, মেয়েমানুষ, স্বামী-সংসার ছেড়ে কোথায় যাবে? রাগ করে কদিন বাপের বাড়ি গিয়ে থাকবে, তারপর লেজ গুটিয়ে সোজা স্বামীর ঘরে ফিরবে।

ইফাজউদ্দিনের কাছ থেকে নম্বরটি নেওয়ার পর মোহিনীকে ফোন দেব দেব করেও দেওয়া হচ্ছিল না। একদিন ডিপিএল বার থেকে টাল হয়ে ফেরার পথে ফোন দিলাম তাকে। ধরা দিতে চাইছিল না। ইফাজউদ্দিনের কথা বলতেই ধরা দিলো। হোয়াটসঅ্যাপে তিন তরুণীর ছবি পাঠাল। একটি ছবি সিলেক্ট করে তাকে ম্যানেজ করতে বললাম। মোহিনী কল করল তরুণীকে। পরদিন সন্ধ্যার পর গেলাম মোহিনীর ফ্ল্যাটে। খুব ভয় করছিল। কখন আবার পুলিশ হানা দেয়। মোহাম্মদপুরের এক ফ্ল্যাটে একবার রেড দিয়ে এক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারিকে অ্যারেস্ট করেছিল পুলিশ। শুনে খুব ভয় পেয়েছিলাম। যে-ফ্ল্যাট থেকে সেক্রেটারি অ্যারেস্ট হয় সেই ফ্ল্যাটে আমি দুবার গিয়েছি। মোহিনী বলল, তার ফ্ল্যাটে পুলিশের ভয় নেই। পুলিশ তো দূর, এখনো বাড়িওয়ালাও মোহিনীর কারবার সম্পর্কে কিচ্ছু জানে না।

আশ^স্ত হলেও আমার ভয় কাটছিল না। বুক কাঁপছিল খুব। নিস্তেজ হয়ে পড়ছিলাম বারবার। জীবনে প্রথমবারের মতো টের পাচ্ছিলাম এমন ভয় নিয়ে সেক্স করা আমার পক্ষে যে কঠিন। কেননা সেক্স একটি আনন্দ। আর আনন্দ সবসময় রিলাক্সেবল হতে হয়। কিন্তু সেদিনের মেয়েটি ছিল পারঙ্গম। আমাকে পূর্ণরূপে জাগিয়ে তুলেছিল সে। তবু আমি বেশিক্ষণ থাকতে পরিনি, মাত্র পাঁচ মিনিটে শেষ করে দ্রুত বেরিয়ে পড়েছিলাম।

মাঝখানে কেটে গেল প্রায় দেড় বছর। বহু মানুষ মারা গেছে করোনায়। চাকরি হারিয়ে বহু মানুষ ছেড়ে গেছে ঢাকা শহর। হঠাৎ একদিন মেসেঞ্জারে মোহিনীর ম্যাসেজ। পাঁচ প্রস্টিটিউটের পাঁচটি ছবি পাঠিয়েছে। চারজন তরুণী, একজনকে মনে হলো গৃহবধূ। আজকাল গৃহবধূরাও ঢাকা শহরে সার্ভিস দেয়। আমার এক সাবেক কলিগ, যার সঙ্গে এক করপোরেট হাউজে সাত বছর চাকরি করেছি, যে কি না সমকামী, তার স্ত্রী এখন ফ্ল্যাটে ফ্ল্যাটে গিয়ে সার্ভিস দেয়। শুনে প্রথমে খুব খারাপ লেগেছিল। পরে ভাবলাম, ওটা তো তার পেশা। সে তো চুরি-ডাকাতি করছে না, মানুষ খুন করছে না; নিজের শরীর বিক্রি করছে, আমার খারাপ লাগার কী আছে?

গৃহবধূ আমার অপছন্দ। কোনো গৃহবধূর সঙ্গে আমি কখনো বিছানায় যাইনি। কেন কে জানে, আমার কেবলই মনে হয়, গৃহবধূ মানেই মাসুমার মতো ঝগড়াটে। স্বামীর সঙ্গে কেবলই ঝগড়া করে। ঝগড়াটে নারী আমার চক্ষুশূল। নারী হবে মধুর মতো তরল, শিশুর মতো সরল। নারী ঝগড়া করবে কেন? আমার পছন্দ অবিবাহিত তরুণী, যার অমলিন হাসি, যার মধ্যে নেই কোনো সাংসারিক জটিলতা।

গৃহবধূ অপছন্দের পেছনে অবশ্য আরো একটি কারণ আছে। আমার এক্স প্রেমিকা সুক্তি একবার আমাকে বলেছিল, টিনএজ মেয়ে আর চল্লিশোর্ধ্ব নারী থেকে সাবধান থেকো। টিনএজ মেয়েকে প্রশ্রয় দিলে আবেগের বশবর্তী হয়ে সে তোমার গলায় ঝুলে পড়তে পারে। আর চল্লিশোর্ধ্ব নারীরা, যারা মেনোপজ অতিক্রম করছে, তারা ক্রেজি হয়ে ওঠে। পৃথিবীর সমস্ত পুরুষকে তারা পদানত করতে চায়। সুক্তির কথাটি মনে গেঁথে গিয়েছিল। গৃহবধূ মানেই এখন আমার কাছে চল্লিশোর্ধ্ব নারী মনে হয়, যারা পুরুষকে পদানত করতে চায়, যারা জটিল ও কুটিল।

মোহিনীর পাঠানো পাঁচটি ছবি থেকে এক তরুণীর ছবি সিলেক্ট করে লিখলাম, একে চাই। মোহিনী লিখল, কবে আসবেন? লিখলাম, আজ বিকেলে। সে লিখল, টাকা কিন্তু তিন হাজার। দুই তার, এক আমার। আমি লিখলাম, তা নিয়ে আপনি ভাবেন কেন? গতবার কি কম দিয়েছি? সে লিখল, না, অনেকে ঝামেলা করে তো, তাই আগে বলে রাখলাম।

সাড়ে পাঁচটায় পৌঁছালাম মোহিনীর ফ্ল্যাটে। শাড়ি পরা মোহিনীকে এতোই সুন্দর লাগছে যে, ইচ্ছে করছে তার  সঙ্গে বিছানায় যাই। একবার ফোনে তার কাছে এই আকাক্সক্ষা ব্যক্তও করেছিলাম। সে রাজি হয়নি। বলেছিল, আমি ভাই ভদ্রঘরের মেয়ে, কখনো কারো সঙ্গে প্রোগ্রামে যাই না। বিপদে পড়ে এসব করছি, নইলে কে নেয় এতো রিস্ক। আমার ঠিক বিশ^াস হয়নি তার কথা। এমন আগুনসুন্দরী, যে কি না স্বামী ছাড়া এই শহরে থাকে, কারো সঙ্গে যায় না – এটা কি বিশ^াসযোগ্য কথা? হয়তো আমাকে তার পছন্দ হয়নি। সে যাদের সঙ্গে ‘প্রোগ্রাম’ করে তারা হয়তো টাকা-পয়সার মালিক। দশ-পনেরো হাজারের কমে সে যায় না।

ড্রইংরুমে পাশাপাশি দুটি সোফার একটিতে বসলাম। খানিক পর বেজে উঠল কলিংবেল। দরজা খুলে দিলো মোহিনী। কালো বোরকা পরা এক তরুণী ঢুকল। মাস্কটা খুলতেই তাকে চিনতে পারি। তার ছবিই সিলেক্ট করেছিলাম। সে হাত নাড়ল। আমিও। বোরকা খুলে সে ভেতরের রুমে চলে গেল। ফ্রেশ হতে যাবে ওয়াশরুমে। মোহিনীর মেয়েটা টিভিতে কার্টুন দেখছে। আমি তার কথা ভাবি। কয়েক বছর পর তো মেয়েটির বুঝ হবে। মোহিনী তখন কী করবে? মেয়ের সামনে কেমন করে চালাবে তার কারবার?

চা খাবেন? জানতে চাইল মোহিনী।

হাত নেড়ে বললাম, নাহ্। বাইরে এখন  কিছুই খাচ্ছি না। চারদিকে করোনার দাপট। ইন্ডিয়ান ব্ল্যাক ফাঙ্গাসও নাকি ঢুকেছে দেশে। এখন বাইরে  কিছু না খাওয়াই নিরাপদ।

মোহিনী হাসে। বলে, এতো ভয় করলে চলবে? যার সঙ্গে এখন শোবেন তার কাছ থেকেও তো আক্রান্ত হতে পারেন।

তা অবশ্য ঠিক। আমি বলি। কিন্তু কতদিন এভাবে থাকা যায় বলেন? শরীরের তো চাহিদা থাকে। সেই যে দেড় বছর আগে আপনার এখানে এলাম তারপর আর কারো সঙ্গে যাইনি। করোনার কারণে সাহস পাইনি।

মোহিনী বলে, হুঁ, আমার অবস্থাও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। প্রোগ্রাম অনেক কমে গেছে। করোনার ভয়ে সহজে কেউ আসতে চায় না। ইফাজ সাহেবের মৃত্যুর পর তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। মৃত্যুর মাত্র আটদিন আগে আমার এখানে এসেছিল। যে-মেয়েটার সঙ্গে গেছিল তার খোঁজ পাচ্ছি না বহুদিন। মোবাইলও বন্ধ। জানি না সেও আক্রান্ত হয়ে মরেটরে গেল কি না।

আমার একটু ভয় জাগে। যার সঙ্গে এখন যাব সে কতটা নিরাপদ? করোনা আক্রান্ত নয় তো! কতজনের সঙ্গে বিছানায় যায়, হতেও তো পারে, বলা তো যায় না। মুহূর্তে আবার কেটে গেল ভয়। শরীর জাগলে ডরভয় কাবু করতে পারে না। মোহিনী হাতের ঈশারায় ডানের রুমটি দেখিলে বলল, যান, ও মনে হয় রেডি হয়েছে।

রুমটিতে ঢুকলাম। একটি সিঙ্গেল খাট। কালো চাদর বিছানো। পাশেই একটি ড্রেসিং টেবিল। মেয়েটি চুলের কাঁটা খুলে রাখল সেই টেবিলে। হাত ধরে তাকে আমি খাটে বসালাম। কাঁধে হাত রাখলাম। নাম জিজ্ঞেস করতেই বলল, বসরি। তার নাকের ডগায় আঙুল ঠেকালাম। আমি নিশ্চিত এটি তার আসল নাম নয়, ছদ্মনাম। প্রস্টিটিউটরা সবসময় একটা ছদ্মনাম নেয়। বসরিকে জড়িয়ে ধরে তার মাথায় মুখ ঠেকালাম। চুলে শ্যাম্পুর ঘ্রাণ। কী শ্যাম্পু? সানসিল্ক, না ডাভ? সম্ভবত ডাভ। ঘ্রাণটা দ্বিগুণ উত্তেজিত করে তুলল আমাকে। নারীর শরীরের ঘ্রাণ আমাকে উন্মাতাল করে তোলে। মাসুমার গায়ে কোনো ঘ্রাণ ছিল না, ছিল গন্ধ। ঘামের দুর্গন্ধ। কত পারফিউম এনে দিতাম, একটাও ইউজ করত না।  কিছু বললেই বলত, আমার মতো সারাদিন রান্নাঘরে থাকো, তারপর দেখবে তোমার গা থেকে গুলপচা গন্ধ বের হয় কি না।

বসরির বাঁ হাতের আঙুলগুলোর ফাঁকে আমার ডান হাতের আঙুলগুলো ঢুকিয়ে হাতটা কোলের ওপর রেখে বললাম, ম্যারিড?

বসরি মাথা নেড়ে সায় দিলো, হুঁ। তবে এক বছর হলো গেছেগা।

কোথায় গেছে? ডিভোর্স?

হ, আরেকটা বিয়া করছে। কোথায় আছে জানি না।

ওহ! কত বছরের সংসার ছিল?

আড়াই বছর।

এখন তুমি কী করো?

এক প্রাইভেট হাসপাতালে জব করি, রিসেপশনে।

এই লাইনে কতদিন?

বেশিদিন না, অল্প কদিন। আপনে মনে হয় সাত-আট নম্বর হবেন।

কেন এলে এই লাইনে?

চাকরি করে ক-টাকা বেতন পাই বলেন? ঠিকমতো ঘরভাড়াটাও তো হয় না। দুই রুমের একটা ফ্ল্যাট নিয়া থাকি। কত খরচ! তিরিশ হাজারের কমে চলে না।

বসরিকে জামাকাপড় খুলতে বলি। খোলে। ব্রা’র হুক দুটি আমি খুলে দিই। তার দেহের সৌন্দর্য আমাকে মুগ্ধ করে। জড়িয়ে ধরে তাকে চুমু দিই। কয়েক মিনিট। তারপর শুইয়ে দিই খাটে। উঠে বসি তার জানুর ওপর। দুই পাশে হেলে থাকা তার স্তন দুটোর ওপর হাত রাখতেই সে আমার হাত দুটি চেপে ধরে। বলে, মুখ দেবেন না প্লিজ। মেয়েটার বয়স তিন মাস। সে খাবে। আমার জন্য সে অপেক্ষা করছে।

আমি হাত সরিয়ে নিলাম। ডানের স্তনটার দিকে চোখ গেল। টপটপ করে গড়িয়ে পড়ছে সাদা দুধ। বিছানার চাদরটা ভিজে যাচ্ছে। সেদিকে তাকিয়ে থাকি। নিস্তেজ হয়ে যেতে থাকি। চট করে তার ওপর থেকে নেমে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ি খাটে। সে বলল, কী হলো? বললাম,  কিছু না। তুমি কাপড় পরে নাও।

করবেন না?

না।

কেন?

উত্তর না দিয়ে আমি উঠে দাঁড়ালাম। মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার দুটি নোট দিলাম তার হাতে। বসরি নোটটি হাত থেকে নিয়ে হাঁ করে তাকিয়ে রইল আমার দিকে। দ্রুত প্যান্ট-শার্ট পরে মোহিনীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। লিফটে না উঠে সিঁড়ি বেয়ে সোজা নেমে পড়লাম নিচে। চড়ে বসলাম একটা রিকশায়। রিকশা চলতে লাগল। পাশাপাশি চলতে লাগল বহু বছর পর স্মৃতিতে ভেসে ওঠা দৃশ্যটি : একটি শীতল পাটিতে কাৎ হয়ে শুয়ে আমার বোনকে দুধ খাওয়াচ্ছিল মা। সেই শোয়া থেকে মা আর উঠল না। মৃত মায়ের দুধ চুষছিল বোনটি। চুষতে চুষতে কেঁদে উঠেছিল। মায়ের স্তন থেকে দুধ গড়িয়ে ভেসে যাচ্ছিল শীতলপাটি।

রিকশা চলছে। আমি সিগারেট ধরালাম। মনকে অন্যদিকে সরিয়ে নিতে চাইছি। কিন্তু না, মায়ের সেই স্তন কিছুতেই চোখের সামনে থেকে সরাতে পারছি না।