বাংলাদেশ : তিমিরবিদারউদার অভ্যুদয়

বিংশ শতাব্দীতে ইতিহাসের এক বিস্ময়কর উপহার এই বাংলাদেশ। বাঙালিকে, পৃথিবীকে। উনিশশো সাতচল্লিশেও দেশভাগ-বিধ্বস্ত বাঙালি অতি দুঃসাহসী স্বপ্নেও প্রার্থনা বা কল্পনা করতে পারেনি যে, তার জন্য এ-রকম একটি গর্বের মুহূর্ত অপেক্ষা করছে। পৃথিবীই কি আদৌ ভাবতে পেরেছিল?

এমন নয়, এবং আমরা সবাই জানি যে, রাষ্ট্র বা জাতির ভৌগোলিক সীমানা চিরকাল অনড় আর নিশ্চল থাকে, এক বা একাধিক রাষ্ট্র ভেঙে নতুন রাষ্ট্রের জন্ম হয় না। বিংশ শতাব্দীতে, বহু বহু দেশ স্বাধীন বা স্বনির্ভর হয়েছে – আজারবাইজান (১৯৯১) এবং একাধিক সোভিয়েত অঙ্গরাজ্য, বিষুবীয় গিনি (১৯৬৮), ইরিত্রিয়া (১৯৪৭) থেকে শুরু করে ভিয়েতনাম, স্লোভানিয়া, স্লোভাকিয়া, এমনকি হাইতি পর্যন্ত বিশ শতকে স্বাধীনতা পেয়েছে, তা তো নথিবদ্ধ ঘটনা। ইতিহাস-নিরীক্ষকরা এও নজর করে থাকেন যে, বিশ শতকেই দুটি বিশেষ ধাক্কায় একসঙ্গে গুচ্ছে গুচ্ছে বেশ কিছু দেশ স্বাধীন হয় – এক, ১৯৪৫-এ দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এশিয়া আর আফ্রিকার অনেক দেশ : আর দুই, ১৯৯১-এ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভাঙার ফলে আবার কিছু দেশ। বাংলাদেশ এই দুই ঐতিহাসিক কার্যকারণের ফসল নয়।

এও তো বহুজ্ঞাত যে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে যেসব দেশ স্বাধীন হয়েছে, সেগুলো শুধু ইতিহাসের বা সময়ের দাক্ষিণ্যে স্বাধীনতা পেয়েছে, এ-কথা বললে তাদের নিজস্ব ইতিহাসের প্রতি অবিচার করা হবে। প্রতিটি দেশেই দীর্ঘ বৃত্তান্ত ছিল স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা আর সংগ্রামের, তা আমরা ভুলে থাকতে চাই না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলিকে দুর্বল করে ফেলে সাম্রাজ্যের কফিনে শেষ পেরেক পুঁতেছে মাত্র, কফিনের অন্য পেরেকগুলো প্রস্তুতই ছিল। বিশ শতকের শেষে সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধেও নানা অংশে বিরোধ-বিক্ষোভ তৈরি হচ্ছিল, ফলে একদিকে তার ভেতরকার অসন্তোষ আর ষড়যন্ত্র, আর অন্যদিকে ধনতান্ত্রিক দেশগুলোর কলাকৌশল সোভিয়েত ব্যবস্থাকে ভেঙে দেয়, তার ফলে তার অঙ্গগুলো স্বাধীনতা পায়।

দুই

যখন বাংলাদেশের কথায় আসি, তখন আমাদের ওপরের বৃত্তান্ত একটু শুধরে নিতে হয়। এ-কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পরে, ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশও স্বাধীনতা পেয়েছিল। অন্তত এখনকার বাংলাদেশ-অঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ মনে করেছিলেন যে, তাঁরা তা পেয়েছেন। আমি নিজে যেটুকু ইতিহাস বুঝি, তাতে এই ‘পাওয়া’র বোধকে আমি খাটো করে দেখি না। কারণ এ শুধু সাম্রাজ্যবাদী আধিপত্য থেকে মুক্তি ছিল না বাঙালি মুসলমানের কাছে, এ ছিল বিভাগ-পূর্বকালে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ওপর হিন্দুদের সামন্ততান্ত্রিক, অর্থনৈতিক আর সাংস্কৃতিক – এবং এক ধরনের শ্রেণি-আধিপত্য থেকেও মুক্তি। এই আধিপত্য যে সবসময় সাম্প্রদায়িক ছিল তা নয়। দক্ষিণ এশীয় রাজনৈতিক আর সামাজিক শ্রেণিবিন্যাসই এমন ছিল যে, কোথাও মুসলমান এবং অনেক বেশি জায়গায় হিন্দু জমিদাররা শাসন করেছেন, এবং বাংলাভাষী অঞ্চলে হিন্দু জমিদাররা ছিলেন বহুলসংখ্যক, আর নবজাগরণ ইত্যাদি কারণে হিন্দু সম্প্রদায়ে শিক্ষিত চাকরিজীবী মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের উদ্ভব আগে হওয়ায় তাঁরা আধিপত্যকারী শ্রেণি হিসেবে আগে প্রতিষ্ঠা ও অধিকার পেয়েছিলেন। এ-কথা সকলেই জানেন যে, ঊনবিংশ শতাব্দীতে বাংলায় যে বহুনন্দিত নবজাগরণ ঘটেছিল, তার সুফল সমাজের নিচের স্তরে ততটা পৌঁছোতে পারেনি, কি হিন্দু কি মুসলমানদের কাছে – যাঁরা ওইখানে বাস করতেন। এমনকি বঙ্কিমচন্দ্রের চোখেও এটা ধরা পড়েছিল, তাই তিনি মেকলের ‘ফিল্টর ডৌন’ (filter down) তত্ত্ব নিয়ে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ করেছেন। ফিল্টার ডাউন যাদের জন্য দরকার ছিল তাদের একটা বড় অংশই ছিল মুসলমান। এর একটা প্রমাণ হলো ঊনবিংশ শতাব্দীতে সাক্ষরতার হার, যা বঙ্গদর্শন পত্রিকা শুরু হওয়ার সময়ে (১৮৭৩) ছিল ৩ শতাংশের মতো, আর বিশ শতকের গোড়ায় (১৯০১) দাঁড়ায় ৬ শতাংশের কাছাকাছি। তার মধ্যে মুসলমানদের হার ছিল আরো কম। অর্থনীতির অবস্থাও যে ভালো ছিল না, তার প্রমাণ ঊনবিংশ শতাব্দের নানা কৃষক বিদ্রোহ, যার তালিকা এখানে করা নিষ্প্রয়োজন। অনেক বাঙালি মুসলমানের বঙ্কিমচন্দ্র সম্বন্ধে একটা প্রতিরোধ আছে, আমরা জানি। কিন্তু তা কাটিয়ে যদি বঙ্কিমচন্দ্রকে আবার পড়েন, তাহলে দেখবেন, বাংলার কৃষকে ‘দেশের শ্রীবৃদ্ধি’ অংশে ‘হাসিম শেখ’ আর ‘রামা কৈবর্ত’র কথায় তিনি নবজাগরণের তলাকার অন্ধকারও লক্ষ করেছিলেন। তারই ফলে ১৯০৬-এ মুসলিম লিগ তৈরি হয়, আর আস্তে আস্তে মোহাম্মদ আলি জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের উপক্রমণিকা প্রস্তুত হতে থাকে। তার মূলে ভারতের জাতীয় কংগ্রেসে তাঁর ব্যক্তিগত প্রত্যাশা আর হতাশার ইতিহাস আমাদের আলোচ্য নয়। লোকশ্রুতি আছে যে, জিন্নাহ সাহেব যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার প্রতিশ্রুতি পেতেন তাহলে হয়তো ভারতভাগ হতো না। ইতিহাস আর ব্যক্তির সেই দ্বান্দ্বিক সম্পর্কের মধ্যে যেতে হলে আমাদের হাতে অনুমান ছাড়া আর কোনো উপাদান থাকে না, তাই তা পরিত্যাজ্য।

দেখা গেল, ১৯৪৭ সালে বাংলাদেশ একভাবে স্বাধীন হলো বটে, তবে বাংলাদেশ হিসেবে নয়, বকলমে। প্রথমে পূর্ববঙ্গ, তার পরে পূর্ব পাকিস্তান। আমেরিকান সমরবিদরা যে-নাম জনপ্রিয় করেছে, সেই দক্ষিণ এশিয়া উপমহাদেশকে সাম্প্রদায়িক ভিত্তিতে ভেঙে দুটি দেশে ভাগ করে স্বাধীনতা দেওয়া হয়, একটি হিন্দুপ্রধান ভারত, আর একটি মুসলমানপ্রধান পাকিস্তান। এই পাকিস্তানেরই প্রায় হাজার মাইল পূর্বে, হিন্দু ভারতের দ্বারা হাজার মাইল ব্যবহৃত, দক্ষিণ এশিয়ার পূর্ব প্রান্তের আর একটি অংশ তার একটি প্রদেশ হলো। একজন ঐতিহাসিকের ভাষায় এমন একটা রাষ্ট্র হলো geographical absurdity। এখানেই সংখ্যাগুরু প্রজার বাস, প্রায় একমাত্র ভাষা বাংলা –    যে-বিষয়টা পরে এমন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে যে, আন্তর্জাতিক রাজনীতিকে টালমাটাল করে তুলবে, সাংস্কৃতিক ইতিবৃত্তে নতুন মাত্রা যোগ করবে। সাধারণত সাম্রাজ্যেরই এমন বিচ্ছিন্ন অংশ থাকে, রাষ্ট্রের নয় –    ইতিহাস-ভূগোলের এই ব্যাপারটাও আমাদের মনে রাখতে হবে। ফ্রান্সের যেমন ছিল ভিয়েতনাম, ডাচদের ইন্দোনেশিয়া, ব্রিটেন আর জার্মানির এশিয়া-আফ্রিকায় বহু বহু দেশ।

তিন

আমি নিজে কিন্তু বাংলাদেশের ওই প্রথম ‘স্বাধীনতা’কে নিরর্থক বা সম্পূর্ণ ক্ষতিকর মনে করি না। ইতিহাসের নিরপেক্ষ বিচারে দেখা যাবে, ১৯৪৮-এর ১১ মার্চ থেকে রাষ্ট্রপতি জিন্নাহর ভাষণ এবং ঢাকার ছাত্রদের তার প্রতিবাদ থেকে ভাষাবিরোধ শুরু হয়ে গেলেও বাঙালি মুসলমান একটি মুক্তির আনন্দ বা স্ফূর্তি পেয়েছিল, যার ফলে ওই পর্বে তার শিক্ষা, গবেষণা, সাহিত্য, অর্থনীতি একটি নতুন উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছিল। রাস্তাঘাট, প্রতিষ্ঠান, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ইত্যাদি প্রচুর হয়েছে। আর সবচেয়ে বড় কথা, বাংলাদেশের বাঙালিরাও নানাদিকে উদ্যোগী হয়েছেন। এসব আমি পরিসংখ্যান আর দৃষ্টান্ত দিয়ে তুলে ধরতে পারব না, কিন্তু শিক্ষা আর সাহিত্যে বড় অগ্রগতির কথা আমরা সকলেই জানি। এই আমলে (১৯৫৫) প্রতিষ্ঠিত বাংলা একাডেমিও তখন অনুবাদ ও গবেষণার নানা দিগন্ত আবিষ্কার করার চেষ্টায় ছিল। এখনকার প্রায় সব বড় কবি ও লেখকের ওই সময়ের সৃষ্টিকর্মগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। নিশ্চয়ই সাংস্কৃতিক সংঘাত তাঁদের বিশেষভাবে উজ্জীবিত করেছিল, এবং তার ফলে তাঁদের রচনাও বিশেষ স্ফূর্তি পেয়েছিল।

তা ছাড়া, ওই ‘স্বাধীনতা’র ফলে পূর্ববঙ্গের দরিদ্র এবং মধ্যবিত্ত বাঙালিও এক নতুন উদ্যম লাভ করেছিলেন। বহির্জগতে বেরিয়ে কাজের সুযোগ তাঁদের অনেক বেড়ে গিয়েছিল। বিশেষ করে চট্টগ্রাম, নোয়াখালীর মানুষরা নাবিক হওয়ার ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে তাঁদের আগে থেকেই প্রচুর যোগাযোগ ছিল, অন্যদিকে সিলেটের মানুষেরাও ব্রিটেনে-আমেরিকায় অনেক আগে থেকেই সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। লন্ডন, নিউইয়র্ক শুধু নয়, ব্রিটেন আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নানা শহরে তাদের প্রচুর রেস্তোরাঁ আর অন্যান্য দোকান ছিল। আর সম্ভবত পাকিস্তান আমলেই তাঁদের প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলির সহানুভূতিশীল দৃষ্টি পড়ে, এবং সস্তা শ্রমের ক্রেতা হিসেবে তাঁরা বাংলাদেশের শ্রমিকদের জন্য দরজা বেশি করে খুলে দেন। এর ফলে দেশের অর্থনীতির একটা সমর্থনের জায়গা তৈরি হয়। পরে আমরা জানি যে, বিদেশে কর্মরত বাঙালিদের উপার্জনের একটা অংশ বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি স্তম্ভ হয়ে দাঁড়াবে।

কিন্তু আমি শুধু অর্থনীতির কথা বলছি না। এই সময়ে বাংলাদেশের বা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ ও পূর্ব পাকিস্তানের বহু নাগরিক বিদেশে গিয়ে বহু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছেন, যা সামগ্রিকভাবে বাঙালি মাত্রকেই গর্বিত করবে। আমি জানি বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু পূর্ববঙ্গীয়, সাময়িকভাবে পাকিস্তানি, অসাধারণ কাজ করেছেন, শিক্ষণে, গবেষণায়, চিকিৎসাক্ষেত্রে, প্রযুক্তিতে, এমনকি চিত্রকলায়, ভাস্কর্যে। এই তরুণ দেশ যে একটি নোবেল পুরস্কার অর্জন করেছে – তৃতীয় বিশ্বের এক আনকোরা দেশের পক্ষে তা কম কৃতিত্বের কথা নয়  – তার প্রস্তুতি ছিল আগের আমলেই। সব খবর আমাদের কাছে আসেও না। যেমন শিকাগোতে আমার মুক্তিযুদ্ধের সময়ে (১৯৭০-৭১) কিছু কাজ করার সুযোগ হয়েছিল ফজলুর রহমান খানের সঙ্গে, বা তাঁর নেতৃত্বে। তিনি কলকাতার বি ই কলেজের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ছাত্র; কিন্তু পাকিস্তান আমলেই মার্কিন দেশে চলে যান। সেখানে গিয়ে নির্মাণ-স্থাপত্যে অসামান্য সব কাজ করে তিন-তিনবার ওই দেশের Construction Man of the Year হয়েছিলেন, এবং মার্কিন দেশের নির্মাণ-স্থপতিদের মধ্যে তাঁর সম্মান ছিল অতি উচ্চে। সাধারণ বাঙালি এটুকু বললে বুঝবেন যে, তিনি সেই সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে উঁচু বাড়ি (নিউইয়র্কের এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিংয়ের চেয়েও উঁচু) শিকাগোর সিয়ার্স টাওয়ার নির্মাণ করেছিলেন তাঁর নিজের নকশা আর তত্ত্বাবধানে।

তাই সমাজবিজ্ঞানী না হয়েও আমার অনুমান, পাকিস্তান আমলে বাংলাদেশের বাঙালি মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে একটা নতুন আত্মবিশ্বাস আর উচ্চাকাঙ্ক্ষার জন্ম হয়েছিল, যার পশ্চাদ্ধাবন করে বেশকিছু মানুষ দেশে-বিদেশে নানা কীর্তি অর্জন করেছিলেন, যা সমগ্রভাবে বাঙালির গৌরব বৃদ্ধি করেছে।

চার

সুখের বিষয়, এঁরা প্রায় কেউই পাকিস্তানপন্থি হয়ে যাননি। বরং তাঁদের দেশপ্রেম আরো উদ্বেল হয়ে উঠেছিল। পরে কানাডার দুই বাংলাদেশি সুসন্তানের ২১শে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে চিহ্নিত করার আপ্রাণ চেষ্টা তার প্রমাণ। আমরা হয়তো লক্ষ করি যে, প্রবাসী হিসেবে বাংলাদেশিদের তাঁদের দেশের সঙ্গে যে নাড়ির যোগ, আমাদের ভারতীয়দের সাধারণভাবে আমাদের স্বভূমির সঙ্গে সেই যোগ নেই। এক ভাষা, কমবেশি  এক   সংস্কৃতি   আর   বহুলাংশে সমগোত্রীয় জনগোষ্ঠীর দেশকে নিজের দেশ মনে করা যতটা সম্ভব, বহু ভাষা, সংস্কৃতি আর নানা ধরনের জনগোষ্ঠীর দেশকে সেভাবে নিজের দেশ মনে করা হয়তো সম্ভব নয়  – জানি না এই কথা বলে আবার সমাজবিজ্ঞানে আনাড়ির অনধিকারচর্চা করলাম কি না। আমরা আমাদের নিজেদের অঞ্চল ও গোষ্ঠীকে দেশের চেয়ে একটু বেশি মূল্য দিই। হয়তো বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে, অন্য দেশের সঙ্গে যুদ্ধ লাগলে বা কোনো বৃহৎ সার্বিক বিপর্যয়ে আমরা দেশের কল্পনায় উদ্বুদ্ধ হই, কিন্তু সচরাচর আমাদের, ভারতীয়দের, দেশের ধারণায় আমার নিজের অঞ্চলটিই বেশি গুরুত্ব পায়। ভারতের ভৌগোলিক বিশালতা এবং বৈচিত্র্যও হয়তো এর জন্য কিছুটা দায়ী। এদেশে ‘আত্ম-অপর’ নির্মাণের অনেক সুযোগ ও উপলক্ষ তৈরি হয়। বাংলাদেশে তা হয় না তা নয়, তবে তুলনায় কম।

অবশ্যই মূল উদ্যোগ তৈরি হয়েছিল ‘বাংলাদেশের হৃদয় হতে’, শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। কিন্তু তাঁর নেতৃত্বের নির্মাণেরও তো একটা ইতিহাস আছে, পটভূমিকা আছে। ভাষার পক্ষে ছাত্র-আন্দোলন, বাঙালির সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের আন্দোলন, শ্রমিকদের আন্দোলন ইত্যাদি নানা ক্ষোভ-বিক্ষোভ ক্রমে রাজনীতির পালে হাওয়া জোগাতে থাকে, এবং বিভাগপূর্ব ভারতের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা বহন করে এসে শেখ মুজিব ধীরে ধীরে কয়েক বছরের মধ্যে মওলানা ভাসানীর উত্তরাধিকারী হিসেবে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হয়ে ওঠেন, তাঁর মাথা শুধু আক্ষরিকভাবে নয়, রূপকার্থেও অন্য সকলের মাথা ছাড়িয়ে ওঠে। সেই ইতিহাস বহুচর্চিত, তার মধ্যে যাওয়ার যোগ্যতা যেমন আমার নেই, তেমনই প্রয়োজনও তত নেই।

শেখ মুজিবের মধ্যে সর্বমান্য নেতা হয়ে ওঠার অনেক সূত্র ছিল। ভাষার আন্দোলন আর আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক সাফল্য নিশ্চয়ই তাঁকে এগিয়ে দিয়েছে, কিন্তু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জনও কম ছিল না। প্রথমত তাঁর শারীরিক গঠন, দীর্ঘতা, তাঁর জলদমন্দ্র কণ্ঠস্বর, তাঁর বীরোচিত দৃপ্তভঙ্গি; দ্বিতীয়ত তাঁর মানসিক গঠন, তাঁর অপরিমেয় সাহস, গভীর মানবিক সহানুভূতি যার অন্য নাম জাতিধর্মনির্বিশেষে তাঁর দেশের আপামর মানুষের প্রতি তাঁর অগাধ ভালোবাসা – যা তাঁর দেশপ্রেমের অঙ্গ, আর তাঁর সুদূরপ্রসারী রাজনৈতিক দৃষ্টি। তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার কথা আমরা আগেই বলেছি, সোহরাওয়ার্র্দী এবং মওলানা ভাসানীর প্রায় দক্ষিণ হাত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কিন্তু পরে যখন একাধিক সুযোগ্য সহকর্মীও তাঁকে ‘দ্য লিডার’ বলে মেনে নিলেন, তখন তাঁর নিজেকে, হয়তো সহকর্মীদের সঙ্গে পরামর্শ করেই, কিছু সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে হয়। ছয় দফার মধ্যে তার ইঙ্গিত দেখি আমরা। আমরা অন্যত্র লিখেছি যে, দক্ষিণ এশিয়া এবং অন্যত্র দেশের মুক্তির জন্য একটা সামরিক বিকল্পের কথা ভাবা সহজ কাজ ছিল না। এই অঞ্চলে বিংশ শতাব্দের প্রথমার্ধে বিপ্লবীরা ছোটখাটো সামরিক সংঘাত নির্মাণ করেছেন, ১৯৩০-এ চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন আর জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধ তার মধ্যে একটি –  কিন্তু তাতে দেশের বৃহত্তর মানবসংহতির সঙ্গে যোগ না থাকায় তা ব্যর্থ হয়; ব্যর্থ হওয়ারই কথা। তাঁদের শৌর্য ও আত্মোৎসর্গ আমাদের মাথা নত করতে বাধ্য করে, কিন্তু তবু এই ক্ষুদ্র এলাকায় বিচ্ছিন্ন সংঘাতের ভবিতব্য আগে থেকেই বলে দেওয়া যায়। নেতাজি সুভাষচন্দ্র আরো বড় পরিসরে আজাদ হিন্দ বাহিনী গড়ে তুলতে পেরেছিলেন, তার গৌরবময় ব্যর্থতার কারণগুলোও আমরা সবাই জানি। এইসব প্রয়াস যতই প্রেরণাদায়ক হোক, এগুলোর ব্যর্থতার পরিপ্রেক্ষিতগুলোও কম নিরুৎসাহকর নয়। তার ওপর বাঙালি জাতিকে দীর্ঘদিন ভীরু, কাপুরুষ, মেয়েলি ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে, তাদের সংহত করে একটি সৈন্যবাহিনী নির্মাণ করা আর পাকিস্তানের দুর্ধর্ষ বাহিনীকে পরাজিত করার কথা ভাবা দিবাস্বপ্ন বলেই মনে হয়েছিল অনেকের কাছে।

শেখ মুজিবের কাছে হয়নি। আমি ঐতিহাসিক নই, ইতিহাসের বা কূটনীতির কোনো দস্তাবেজ আমার দেখার সুযোগ হয়নি, ফলে আমি জানি না তিনি অন্য দেশের সাহায্যের কোনো আশ্বাস ভিতরে ভিতরে পেয়েছিলেন কি না। কিন্তু তিনি এই সামরিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ঢাকার সাতই মার্চের বিখ্যাত ভাষণে সেটা প্রকাশ্য ঘোষণায় পরিণত হলো, এবং সভায় উপস্থিত মানুষের সহর্ষ সমর্থনের মধ্যে দিয়ে শুধু তাঁর দলের কর্মীদের নয়, দেশের মানুষের কণ্ঠস্বর যেন

ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হয়ে উঠল। আমাদের আরো আশ্চর্য লাগল যে, যুদ্ধের পুরো সময়টা তিনি পাকিস্তানের জেলে কাটালেন, যখন তাঁকে হত্যা করাও সেই সরকারের পক্ষে অসম্ভব ছিল না। সুঘটনক্রমে তারা সেই কাপুরুষতা দেখাননি। কিন্তু বোঝা গেল যে বন্দি মুজিবের শক্তি হয়তো মুক্ত মুজিবের চেয়ে দশগুণ, তাই তাঁর দেশ, প্রতিবেশী ভারত আর অন্যান্য দু-একটি বন্ধুদেশের সহায়তায়, ভূরাজনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়ে বাংলাদেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করল। প্রায় এক রূপকথার পরিসমাপ্তি বলা চলে।

পাঁচ

না, রূপকথার পরিসমাপ্তি নয়। যুদ্ধবিধ্বস্ত, মানবিকভাবে বিপুল ক্ষতিগ্রস্ত এই দেশ  তখন অত্যন্ত দুর্বল, তাকে একেবারে মাটিতে শুইয়ে পড়া অবস্থা থেকে খাড়া করার দায় ছিল নেতৃত্বের, সর্বোপরি শেখ মুজিবের, যাঁর ওপরে ওই দেশের সমস্ত মানুষ, অনেক-কিছু হারানো মানুষ – সমস্ত বিশ্বাস ও ভরসা অর্পণ করেছিল। বাইরে প্রায় উদাসীন পৃথিবী। অসীম তৈলশক্তিতে বলীয়ান মধ্যপ্রাচ্যও হয়তো তত খুশি নয়। আমার মনে আছে, আমরা তখনো মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানকার রাষ্ট্রপতি রিচার্ড নিক্সনের বিদেশ সচিব হেনরি কিসিঞ্জার কীভাবে বাংলাদেশ একটি international basket-case বা আন্তর্জাতিক ভিক্ষার ঝুলি হবে বলে অনুকম্পা প্রকাশ করেছিলেন। এই ধরনের সমালোচক এবং শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে বাংলাদেশ তা হয়নি। সে আস্তে আস্তে নিজের পায়ে উঠে দাঁড়িয়েছিল। হ্যাঁ, একটি দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে হয়েছিল এ-দেশকে অল্পকালের মধ্যেই, কিন্তু তাও বাংলাদেশকে দমিয়ে দিতে পারেনি। ১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রসংঘ তার ইতিহাসে প্রথম বাংলায় ভাষণ শুনেছিল এক রাষ্ট্রনায়কের, যিনি ছিলেন আত্মবিশ্বাসে ভরপুর, তাঁর দৃপ্ত ভঙ্গি সারা পৃথিবীকে যেন আশ্বস্ত করেছিল।

কিন্তু বাইরের শত্রু কত ছিল জানি না, ঘরে শেখ মুজিবের শত্রুর অভাব ছিল না। অসামরিক জনসাধারণের মধ্যে একটা দল ছিলই যারা মুক্তিযুদ্ধকে মনেপ্রাণে গ্রহণ করতে পারেনি, পাকিস্তানের পরাজয়ে তারা হতাশ হয়েছিল। যুদ্ধে যারা রাজাকারদের ভূমিকা নিয়েছিল তারা এবং তাদের গোত্রের মানুষরা তো সব নিঃশেষ হয়নি। মূলত ধর্মীয় উগ্রবাদী, একটি ইসলামি দেশ খণ্ডিত হলো – এমন ঘটনা তারা মেনে নিতে পারেনি। তারা হয়তো বাইরের শক্তিশালী নানা গোষ্ঠীর সহায়তাও পেয়েছে। এদের পাশাপাশি ছিল সামরিক বাহিনীর কিছু উচ্চাকাক্সক্ষী কর্তা, যারা যুদ্ধের মধ্য দিয়েই নিজেদের শক্তির স্বাদ পেয়েছিল, এবং মনে মনে ভেবেছিল যে, দেশের ক্ষমতার কেন্দ্র তারাই, অসামরিক মানুষ বা প্রশাসন নয়। ফলে গোপনে তাদের উচ্চাকাঙ্ক্ষাও লালিত হচ্ছিল। তৃতীয়ত ছিল দেশের কিছু অতি বাম রাজনৈতিক দল, যারা চীনের রাজনীতির (চীন পাকিস্তানের প্রতি বন্ধুতার দায়ে প্রথমদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধকে সুনজরে দেখেনি) অনুসারী। আমার মনে আছে, বিশ্ববিখ্যাত বুদ্ধিজীবী এবং ভাষা-দার্শনিক নোয়াম চমস্কি এই সময় (১৯৭১) শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ে আমেরিকা আর আন্তর্জাতিক রাজনীতি সম্বন্ধে একটি বক্তৃতায় আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। তখন মুক্তিযুদ্ধ চলছে। তাঁকে এই নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি খুব একটা গুরুত্ব দিতে চাননি  – আমাদের মনে হয়েছিল তিনি বড় বেশি চীনের মতের অপেক্ষা করছেন, যা আমাদের পছন্দ হয়নি। আমরা ওই সভায় তাঁকে সেটা জানিয়েও ছিলাম। তিনি অবশ্য সহানুভূতি নিয়ে আমাদের কথা শুনেছিলেন।

বাইরের প্রতিকূলতাকে সামলাতে পেরেছিল শেখ মুজিবের নেতৃত্ব, কিন্তু ঘরের প্রতিকূলতার নৃশংস উচ্চাকাঙ্ক্ষার কাছে তাঁকে প্রাণ দিতে হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট – সে-মর্মান্তিক ইতিহাস সকলের জানা। তার পরে ১৩-১৪ বছরের সামরিক শাসনে দেশ অনেকটা পিছিয়ে পড়েছিল। ১৯৯০ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশে আবার ফিরে এলো গণতন্ত্র। নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতায় আরোহণ করল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তবে গণতন্ত্র তখনো টালমাটাল। এরপর ১৯৯৬ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয় বঙ্গবন্ধুর দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা। পরবর্তীকালে ২০০১ সালে আবারো বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে। কিন্তু তাদের ক্ষমতায় থাকাকালে একটা অসন্তোষ যেন ধীরে ধীরে দানা বেঁধে ওঠে। নানা প্রতিকূলতা ও দ্বন্দ্ব-সংঘাতের পর ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ফের দেশ পরিচালনার ভার পায় আওয়ামী লীগ, যা এখনো অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে এই দীর্ঘ শাসনকালে দেশটির নানা বিষয়ে অগ্রগতি ঘটেছে, এটা একটা ঘটনা। শিক্ষায়, অর্থনীতিতে, বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও বণ্টনে দেশের অগ্রগতির পরিমাণ সামান্য নয়। তাছাড়া বাংলাদেশের আত্মসম্মান শেখ হাসিনার হাতে সুরক্ষিত হয়েছে, তার দৃষ্টান্ত প্রায় সমাপ্ত নতুন পদ্মা ব্রিজ  – ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের ঋণ প্রত্যাহারের বিষয়টিকে তিনি উপেক্ষা করেছেন। এ-ঘটনা সারা পৃথিবীর চোখেই তাঁর এবং বাংলাদেশের মর্যাদা বাড়িয়েছে।

কিন্তু সমস্যা তো কিছু থেকেই যায়। সম্প্রতি কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর মূর্তি ভাঙায় যা স্পষ্ট হলো যে, মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা এখনো দেশের সব গোষ্ঠী গ্রহণ করতে প্রস্তুত হয়নি। তারা পাকিস্তানপন্থি, এমন কথা হয়তো বলা যায় না, কিন্তু তাদের বিশ্বাস এমনই প্রাচীন যে, পৃথিবীর অন্যান্য মুসলমান দেশের দৃষ্টান্তও তারা লক্ষ করে না।

আওয়ামী লীগে বহু আদর্শবাদী নেতা আছেন তাতে কোনো সংশয় নেই – আমি নিজেই বহু এমন মানুষকে জানি; কিন্তু তলার দিকে, দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে থাকা কিছু মানুষ হয়তো নিজেদের এলাকায় প্রভুত্ব কায়েম করে উচ্চাশী হয়ে ওঠেন, তাদের যথেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করা, এক সংহত অসাম্প্রদায়িক জনকল্যাণকর আদর্শের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসা ভোটের রাজনীতির কারণে সম্ভব হয় না। সব দেশেই এটা ঘটে। অধিকার ও কর্তৃত্ব বড় হলে যেমন তার দূর-দূরান্তের প্রশাসনে শিথিলতা দেখা দিতে পারে, সেরকম একটা সম্ভাবনার মুখোমুখি সব বড় রাজনৈতিক দলকেই হতে হয়। দেশের স্বার্থেই তাতে একটা তীক্ষ্ণ নজরদারি থাকা দরকার। আর বিষয়টা শুধু সমতল বিস্তারের নয়। যাকে পার্টি হায়ারার্কি বলে – তার নানা ফ্রন্ট – ছাত্র, যুব, কৃষক, শ্রমিক, বুদ্ধিজীবী ইত্যাদি – সেখানেও সংহত সমন্বয়ের নিরন্তর চেষ্টা থাকা দরকার। এ-কথা যখন লিখছি তখন আমার নিজের একটু কুণ্ঠা হচ্ছে, হাসিও পাচ্ছে, কারণ আমি পার্টি সংগঠনের ব্যাপারে খুব অভিজ্ঞ ব্যক্তি বলে নিজেকে জাহির করতে চাই না।

বাংলাদেশের নাগরিকরা এখনো শেখ মুজিবের কন্যার ওপর ভরসা রাখতে চান। তাঁর উজ্জ্বল উত্তরাধিকার, মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে তাঁর পরিবারের রক্তাক্ত আত্মোৎসর্গ এবং তাঁর নিজের সম্ভ্রান্ত ও অমলিন ভাবমূর্তি অন্য কোনো দলের কোনো নেতানেত্রীর নেই – এই ঘটনা হয়তো তাঁর নিজের কাছেও এক গুরুভার এবং কিছুটা সমস্যাজনক। আমরা যারা বাইরে থেকে বাংলাদেশের হিতৈষী, তারা শুধু এই আশা করতে পারি যে, দক্ষিণ এশিয়ার ক্ষেত্রে শুধু নয়, এখন ভূরাজনীতিতেই অতুলনীয়া এক জননেত্রী শেখ হাসিনা, এবং তাঁর নিয়ন্ত্রণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শবদ্ধ তাঁর দল, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সংহত করে, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সমর্থন ও সহায়তা সুনিশ্চিত করে, আরো অনেক দিন অগ্রগতিশীল বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিতে পারবেন এবং এই মহান দেশের নিরন্তর অগ্রগতি অব্যাহত রাখবেন।  তবু বাংলাদেশ সমগ্র বাংলাভাষীদের কাছে এক নতুন এবং স্থায়ী অহংকার। তার উদয়ে এই অহংকার তৈরি হয়েছে, আবার বিশেষ করে কানাডার দুই বাঙালির উদ্যোগে এবং শেখ হাসিনার প্রবল সমর্থনে এই শতাব্দীর গোড়ায় একুশে ফেব্রুয়ারি তারিখ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ঘোষিত হওয়ায় এই অহংকার আরো বেড়েছে। আমরা যারা বাংলাদেশের বাইরের বাঙালি, তারা এই অহংকার উপার্জনের জন্য বিশেষ কোনো সাধনা করিনি। তাই বলে অহংকার করতে ছাড়ব কেন! জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয় আবহমানের বাংলা ও বাঙালি।