দেখতে দেখতে কুড়িটা বছর সম্পন্ন করল বাংলাদেশের একটি সাহিত্যপত্রিকা। এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ’৪৭-এর আগে কিংবা দেশভাগের পরে এবং অবশ্যই স্বাধীন বাংলাদেশের ওই পূর্ব ভূখণ্ডে দীর্ঘজীবী সাহিত্য পত্রিকার সংখ্যা খুব কম। সেক্ষেত্রে কালি ও কলম অবশ্যই এক ঐতিহাসিক ভূমিকা রেখেছে। লেখার মান ও মুদ্রণসৌকর্যের বিচারে এবং অঙ্গসৌষ্ঠব এবং উচ্চমানের কাগজের নিরিখে এই পত্রিকা শুধু বাংলাদেশে নয়, দুই বাংলাতেই পথিকৃতের ভূমিকা পালন করে চলেছে বিগত কুড়ি বছর ধরে।
আবুল হাসনাতের দক্ষ সম্পাদনা এবং আনিসুজ্জামানের মতো বিদগ্ধ মানুষের নিবিড় তত্ত্বাবধান ও পর্যবেক্ষণে এই পত্রিকা প্রকাশলগ্নেই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। এর একজন কর্মী হিসেবে এই পত্রিকার সঙ্গে আমার যোগসূত্র তৈরি হয় ২০০৯ সালের জুন-জুলাই মাস থেকে। এ ব্যাপারে দুজন বিশিষ্ট মানুষের কাছে আমার অগাধ ঋণ রয়ে গেছে। এঁরা হলেন কবি অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত এবং কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক। এঁরা দুজনেই হাসনাতভাইকে আমার কথা খুব জোর দিয়ে বলেন একসময়। এই কাজটা আগে যিনি করতেন নানা কারণে তিনি আর তা করতে পারবেন না বলেই ওঁরা ওই সময়ে একজন কলকাতার সমন্বয়ক খুঁজছিলেন।
যথাসময়ে হাসনাত ভাইয়ের মেইল পেলাম এবং সানন্দে কাজে যোগ দিলাম। এর আগে বাংলাদেশের লেখকদের লেখা সংগ্রহ করে এখানকার বিভিন্ন কাগজের দপ্তরে পৌঁছে দিতাম। দীর্ঘ আঠারো বছর (১৯৮৮-২০০৬) তো কলকাতার প্রখ্যাত পত্রিকা অনুষ্টুপ-এর বাংলাদেশ বিভাগটা আমিই দেখতাম। এছাড়া এই বাংলার বহু ছোট-বড়ো পত্রিকার সঙ্গে বাংলাদেশের লেখকদের যোগাযোগ করিয়ে দেবার একটা কাজ নিরলসভাবে করে গেছি বহুদিন। বলা বাহুল্য, এখনো সেটা করে যাচ্ছি। কালি ও কলম পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমার কাজের ধারাটা একেবারেই পাল্টে গেল। তখন থেকে কলকাতার লেখকদের লেখা পাঠাবার দায়িত্বপ্রাপ্ত হলাম। সে-লেখা অবশ্য ছোট কাগজ বা লিটল ম্যাগাজিনের মতো হবে না, সে-কথা প্রথম থেকেই হাসনাত ভাই আমাকে জানিয়ে রেখেছিলেন। তবে অনামী লেখকের মানসম্মত লেখা পাঠাতেও তিনি আমাকে একই সঙ্গে উৎসাহিত করলেন।
পত্রপত্রিকার নেপথ্যকর্মী হিসেবে সুদীর্ঘকাল (পঞ্চাশ বছরের অধিক) এই বাংলায় কাজ করে যাচ্ছি বলে ছোটবড় নানা মাপের লেখকের সঙ্গে আমার একটা নিবিড় যোগসূত্র আগে থেকেই ছিল। কালি ও কলম পত্রিকায় যোগ দেওয়ার পরে তার পরিধিটা ক্রমশ বাড়তে থাকল। অত্যন্ত শ্লাঘার সঙ্গে আজ বলতেই পারি, আমারই সূত্র ধরে কালি ও কলমে লিখেছেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় শঙ্খ ঘোষ, অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, মহাশে^তা দেবী, সমরেশ মজুমদার, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজ, অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়, তরুণ সান্যাল, বাদল সরকার, তপন রায়চৌধুরী, দেবেশ রায়, আশোক মিত্র, মণীন্দ্র গুপ্ত, দেবারতি মিত্র, অমিয় দেব, সৌরীন ভট্টাচার্য, অমর মিত্র, রবিশংকর বল, স্বপ্নময় চক্রবর্তী, নলিনী বেরা, কালীকৃষ্ণ গুহ, উৎপলকুমার বসু, শরৎকুমার মুখোপাধ্যায়, তিলোত্তমা মজুমদার, শচীন দাশ, মৃণাল বসুচৌধুরী, শ্যামলকান্তি দাশ, প্রচেত গুপ্ত, মৃণাল ঘোষ, সুধীর চক্রবর্তীসহ আরো কত গুণীজন। দুই বাংলার সাহিত্যের অঙ্গনে এইসব মানুষ চিরস্মরণীয় হয়ে আছেন ও থাকবেন।
এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার একটি পরম গৌরবময় অধ্যায় শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালের মাঝামাঝি সময়ে। ওই সময়েই জানতে পারলাম কালি ও কলম অনেকদিন ধরেই ঢাকা এবং কলকাতা থেকে একই সঙ্গে প্রকাশ করার এক আন্তরিক চেষ্টা করে যাচ্ছে এর কর্তৃপক্ষ। মূলত আইনি জটিলতায় এর প্রকাশ বিলম্বিত হচ্ছে। অবশেষে জানা গেল, সব বাধা কাটিয়ে এর প্রকাশ প্রায় নিশ্চিত হয়েছে ২০১৫ সালের প্রথমার্ধ থেকেই। পশ্চিম বঙ্গের সংস্করণের সম্পাদক হিসেবে কাজে যোগ দেওয়ার সানন্দ সম্মতি জানিয়েছেন বর্ষীয়ান কবি আমাদের পরম শ্রদ্ধেয় নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। নীরেনদার সঙ্গে আমার পরিচয় অনেক আগে থেকেই। কালি ও কলম পত্রিকার জন্যেই তো কতবার তাঁর কাছ থেকে লেখা আনতে গিয়েছি! ঠিক হলো তাঁর পুত্রবধূ শ্রীমতী কাকলী চক্রবর্তী তাঁকে ওই কাজে সাহায্য করবেন আর আমি ওঁদের সঙ্গে নিত্য যোগাযোগ রেখে করব সমন্বয়কের কাজ। শুরু হলো আমাদের পথচলা। কালি ও কলম পত্রিকার কার্যালয় হলো জওহরলাল নেহরু রোডের এভারেস্ট হাউসের তিন তলায়। এতে যোগ দিলেন এখানকার কয়েকজন। আমার কাজ অফিসে বসার নয়, অর্থাৎ আগে যেমন ছিল – ঘুরে ঘুরে লেখা সংগ্রহ করা, পত্রিকা ও সম্মান-দক্ষিণা ঠিকমতো লেখক পাচ্ছেন কিনা তার নজরদারি করা। একটা স্থায়ী ঠিকানা হয়েছে বলে মাঝে মাঝে সেখানে যাই। অবশ্য কিছুদিনের মধ্যেই অফিস উঠে এলো পার্ক স্ট্রিটের কাছাকাছি ‘চ্যাটার্জি ইন্টারন্যাশনাল’ নামের বহুতল বাড়ির আঠারো তলায়।
অবশেষে ২০১৫ সালের জুলাই মাসে (শ্রাবণ ১৪২২ বঙ্গাব্দ) কলকাতা থেকে প্রকাশিত হলো কালি ও কলম পত্রিকার এই বঙ্গের প্রথম সংস্করণের প্রথম সংখ্যা। ডিক্লারেশন নম্বর ৩৫/১৫ (ফঃ ৮.৫.২০১৫)। সম্পাদক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। প্রথম সংখ্যাতেই তিনি একটি সুন্দর সম্পাদকীয় লিখে দিলেন। শুধু প্রথম সংখ্যাতেই নয়, প্রতি সংখ্যাতেই নীরেনদা একটা জ্ঞানগর্ভ সম্পাদকীয় লিখে দিতেন। বিষয়বৈচিত্র্যে কেবল নয়, ওঁর অসাধারণ লিখনশৈলীর গুণে প্রত্যেকটি লেখাই অত্যন্ত আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে থাকল। বলা বাহুল্য, পত্রিকাটির প্রথম সংখ্যা থেকেই পাঠকদের বিপুল সাড়া পাওয়া গেল। এই সংখ্যায় কলকাতার লেখকদের প্রাধান্য ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রবন্ধ লিখেছিলেন অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত, অনির্বাণ রায়, প্রলয় চক্রবর্তী, আজিজুর রহমান এবং শান্তি সিংহ। এর মধ্যে অনির্বাণ রায়ের ‘জীবনানন্দ দাশের কবিতায় পাখি’ প্রবন্ধটি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। গল্প লিখেছিলেন এই বাংলার অর্ণব রায়, কিন্নর রায় এবং বুবুন চট্টোপাধায়, বাংলাদেশের সেলিনা হোসেন ও ইমদাদুল হক মিলন। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিশিষ্ট কথাকার অমিতাভ ঘোষকে নিয়ে অংকুর সাহার বিশ্লেষণ ছিল চমৎকার। সৈয়দ শামসুল হক, তরুণ সান্যাল, শ্যামলকান্তি দাশ, আসাদ চৌধুরীসহ দুই বাংলার নির্বাচিত কবিদের একগুচ্ছ কবিতা প্রকাশিত হয় এই সংখ্যায়। সংগীত বিভাগে শুচিশ্রী রায়ের ‘সুরগুলি পায় চরণ’ এক অসামান্য রচনা। শিল্প বিভাগে মৃণাল ঘোষ, রফিকুন নবী, আবুল হাসনাত এবং মোবাশ্বির আলম মজুমদারের রচনা পত্রিকার ধ্রুপদী আঙ্গিককে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছিল। এছাড়া ছিল নাট্য সমালোচনা এবং কয়েকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থের আলোচনা। কানাই কুণ্ডূর ভ্রমণবৃত্তান্ত ‘কিন্নরীদের দেশে’ বেশ মনোগ্রাহী। আগাগোড়া বহুমূল্য কাগজে সুমুদ্রিত ক্রাউন সাইজের ১৩৬ পৃষ্ঠার এই পত্রিকার দাম ছিল মাত্র ত্রিশ টাকা। যথারীতি প্রকাশিত হওয়া মাত্রই বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পেল কলকাতা থেকে প্রকাশিত কালি ও কলমের প্রথম সংখ্যা।
পত্রিকা প্রকাশিত হওয়ার মাসচারেক বাদে কলামন্দির মিলনায়তনে বেশ ঘটা করে এর প্রকাশ অনুষ্ঠান হলো। অনুষ্ঠান মঞ্চ আলো করে বসে ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় এবং সম্পাদক নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। শরীর সুস্থ ছিল না, তবু নীরেনদা এসেছিলেন। মূল্যবান বেশ কয়েকটি কথাও বলেছিলেন সেদিন। অনুষ্ঠানে রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার গান, তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদারের সরোদ ও জয় গোস্বামীর কবিতাপাঠের যুগলবন্দি সবাইকে মোহিত করে।
প্রত্যেক বাংলা মাসের এক তারিখে পত্রিকা নিয়মিত প্রকাশিত হতে থাকল। একই সঙ্গে বাংলাদেশ থেকেও ওখানকার সংস্করণ প্রকাশিত হচ্ছিল। কিছু কিছু লেখা দুটো সংখ্যাতেই থাকত। ক্রমশ কালি ও কলম হয়ে উঠল দুই বাংলার সাহিত্য পত্রিকা। তখন নীরেনদার বাঙ্গুরের বাড়িতে নিয়মিত যেতাম, লেখালিখি নিয়ে কথা হতো। বুঝতে পারতাম লেখাপত্র যা পাওয়া যাচ্ছে তা নিয়ে তিনি ততটা সন্তুষ্ট নন। প্রত্যেক সংখ্যায় ভালো লেখা সংগ্রহ করার জন্যে তিনি নিয়মিত লেখকদের ফোন করতেন। একটা তালিকা করে নিয়ে সেইসব লেখকের সঙ্গে যোগাযোগ করতাম। সব সময় যে প্রত্যাশিত সাড়া পেতাম, তা নয়। তবু পত্রিকা নিয়মিতই প্রকাশিত হতে থাকল। আগেই জানিয়েছি, প্রত্যেক সংখ্যায় নীরেনদা বড় একটি সম্পাদকীয় লিখে দিতেন। প্রত্যেক সংখ্যায় আলাদা আলাদা বিষয় নিয়ে লিখতেন। বলা বাহুল্য, পত্রিকায় প্রকাশিত গল্প-প্রবন্ধ-কবিতার পাশাপাশি এই সম্পাদকীয়গুলোও পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করত। মাঝে মাঝেই তিনি আমাকে ডেকে পাঠাতেন ওঁর ওই লেখা পড়ে শোনাবেন বলে। পড়া শেষ হলেই মতামত চাইতেন। কিছু একটা বলতেই হতো। কিন্তু সত্যি সত্যি ভেবে পেতাম না অমন অসাধারণ বিষয়সমৃদ্ধ সম্পাদকীয় সম্পর্কে কী বলব! একটি সংখ্যার একটির খানিকটা অংশ এখানে তুলে দিচ্ছি। অক্টোবর ২০১৭ সংখ্যায় তিনি উষ্ণায়ন প্রসঙ্গে হকিং-এর প্রসঙ্গ টেনে লিখলেন, ‘মানব সভ্যতার ইতিহাসে যেটা একেবারে প্রথম ধাপ, সেই কৃষিকর্মের ব্যাপারটা যাঁরা একেবারে হাড়ে-মজ্জায় চেনেন, গ্রহান্তরে পাঠানো হোক তেমন কিছু কৃষিজীবী গ্রামীণ মানুষকে। কেননা তাঁরাই সবচেয়ে ভাল জানেন যে নিসর্গ প্রকৃতিকে নির্বিচারে ধ্বংস করে নয়, বস্তুত তাকে যত্নভরে বাঁচিয়ে রাখলে তবেই মানুষের পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব। যা-ই হোক, হকিং সাহেবের আর্জি, হাতে তো সময় অতি অল্প, তাই আর বছর পাঁচ-দশের মধ্যেই মহাকাশচারী প্রযুক্তিবিদদের চাঁদে আর মঙ্গলে পাঠানো হোক। তাঁরা সেখানকার পরিবেশকে মনুষ্যবাসের উপযোগী করে রাখুন। ব্যস সে-কাজটা হয়ে গেলেই মহাকাশে আবার একটা নোয়ার নৌকা ভাসিয়ে দেওয়া হবে। তা সেটা হোক আর না-ই হোক, কথাটা ভেবে দেখার মতো। আমি ভাবছি, আপনারাও ভাবুন।’
দুঃখের কথা, এই সংখ্যাটিই কলকাতা থেকে প্রকাশিত শেষতম সংখ্যা। কী কারণে এখানকার প্রকাশ বন্ধ হয়েছিল সেই নেপথ্যকাহিনির অনুসন্ধান করে কোনো লাভ নেই আজ। মাত্র ছাব্বিশটা সংখ্যা প্রকাশের মধ্য দিয়েই পত্রিকাটি রীতিমতো এক প্রত্যাশা জাগিয়েছিল কলকাতার বিপুল পাঠকের মনে। এখনো অনেকের প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে নিরুত্তর হয়েই থাকতে হয় আমাকে। কী উত্তর দেবো জানা নেই তো আমার। তবে সুখের কথা, পত্রিকাটির বাংলাদেশ সংস্করণ এখনো নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে চলেছে। ভাবি, হয়ত আরেক শুভক্ষণে সব বাধা কাটিয়ে কালি ও কলমের কলকাতা সংস্করণ আবার প্রকাশিত হবে। কিন্তু সে তো অলীক স্বপ্ন! আমাদের অনেক অবাস্তব কল্পনাও তো কখনো কখনো সফল হয়। সেই স্বপ্ন যদি সফল হয়ও, সম্পাদক হিসেবে তো আর পাব না আমাদের পরম আদরণীয় শ্রী নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীকে। এই আক্ষেপ আমরা রাখব কোথায়?
কালি ও কলম পত্রিকার সমন্বয়ক হিসেবে নয়, এই পত্রিকায় লিখে লেখক হিসেবেও আমার যেন পুনর্জন্ম হয়েছে। প্রবন্ধ নিবন্ধ ছাড়া এতে নানাসময়ে বই নিয়ে আলোচনা করেছি। নিয়েছি অনেকের সাক্ষাৎকার। এর মধ্যে দুজনের কথা চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। তার একজন শঙ্খ ঘোষ এবং অন্যজন তপন রায়চৌধুরী। এছাড়া অনুলিখন নিয়ে লেখা তৈরি করেছি বেশ কয়েকজনের। তার মধ্যে আশোক মিত্র, সুধীর চক্রবর্তী এবং তপন রায়চৌধুরীর কথা কোনোদিনও ভুলব না। বাংলা ভাষা সাহিত্যের বহু বরেণ্য মানুষের গভীর সান্নিধ্য পাওয়ার সুযোগ হয়েছে এই কালি ও কলম পত্রিকার সূত্র ধরেই। মনে আছে প্রখ্যাত চিত্রকর সুনীল দাসের সাক্ষাৎকার নেওয়ার কথা। তাঁর কালিঘাটের বাড়িতে কয়েকবার গেছি ওটা নেবার জন্যে। চারুকলার মতো এক দুরূহ বিষয়কেও আত্মস্থ করার সুযোগ পেয়েছি এই পত্রিকার সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে। এ ব্যাপারে আমার পথপ্রদর্শক ছিলেন আবুল হাসনাত ভাই। লেখা সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি আমাকে সুনির্দিষ্টভাবে নানারকম নির্দেশ দিতেন। অন্ধের মতো সেগুলো মেনে নিয়ে এগিয়ে যেতাম। তখন আর কোনো বাধাই বাধা মনে হতো না।
আমরা জানি, জায়মান জীবনের জঙ্গমতা থেমে যায় না কখনোই। নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও কালি ও কলমের প্রকাশ অব্যাহত রয়েছে। অতিমারির পর্বে আমরা হারিয়েছি আমাদের অতিপ্রিয় প্রধান সম্পাদক আনিসুজ্জামান সাহেবকে (১৪ মে ২০২০)। এরপর সম্পাদক আবুল হাসনাত সাহেবও প্রয়াত হন ওই বছরেরই পয়লা নভেম্বর। পরপর এই দুজনের প্রয়াণ সত্যি সত্যি আমাদের স্তব্ধ করে দেয়। সাময়িকভাবে পত্রিকার প্রকাশ বিঘ্নিত হলেও অতি অল্পকালের মধ্যেই সকলের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কালি ও কলম পুনরায় নিয়মিতভাবে প্রকাশিত হতে থাকে।
অনেক বাধাবিঘ্ন পেরিয়ে কালি ও কলম তার বিংশতি বর্ষপূর্তি পালন করছে। আমরা জানি কুড়ি সংখ্যাটি উদ্দাম যৌবনকালের এক দিকচিহ্নের দিশারী। সেই আলোর পথের অভিযাত্রায় পত্রিকাটি ক্রমশ আরও সুন্দর আরো মনোময় হয়ে উঠছে। সহৃদয় পাঠকের আন্তরিক আনুকূল্যে এই পত্রিকা পঞ্চাশ, ষাট, সত্তরের সীমানা পেরিয়ে প্রকাশনায় শতবর্ষের গৌরব অর্জন করবে, পরিশেষে এই শুভকামনা।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.