বিদ্যাসাগরের প্রতি

(অধ্যাপক সনৎ সাহা শ্রদ্ধাভাজনেষু)
মাকিদ হায়দার

আমাদের দোহারপাড়ার সব বিরহের বাড়িঘর আছে
এমনকি,
সকলের বাড়ির পেছনে আছে শান-বাঁধানো পুকুরঘাট।
সেই পুকুরের টলোমল জলে সাঁতরে বেড়ায়
এ পাড়ার মণিদীপা
বয়স একুশ অথবা বাইশ
তারও বিরহ আছে।

আমাদের দোহারপাড়ার শুধু একটি বাড়ির বিরহ নেই, ছিল না
কোনোদিন,
বাড়িটির উঠোনে দুপুর, বিকেলের রোদ,
কেউ কোনোদিন বেড়াতে আসে না
ভুল করে নিজেও যাইনি আমি।

অথচ, বাড়িটির পাহারায় দাঁড়িয়ে থাকে ঝাঁকড়া চুলের দেবদারু বীথি
ভেতরে ভূতের মতো বাঁশঝাড়
সেগুনবাগান।

বাগানের মাথার ওপর চিল আর শকুনের সাজানো-গোছানো সংসার,
সাথে থাকে কাক আর লক্ষ্মীপেঁচা
এরা কেউ ভুল করে ফেরায় না চোখ
ওই বাড়ির গরবিনি মেয়েটির মুখের দিকে
কাক আর শকুনের বিরহের কথা –
এ-পাড়ার লোকজন শোনে নাই কোনোদিন।

সেই বাড়িটির
 দরজায় কে যেন ভুল বানানে লিখেছেন
‘প্রীয়তমা’
 তার নিচে কাঁচা হাতে লেখা দলিল লিখক।

দোহারপাড়ার সকলেই জানে
এ-পাড়াতেই থাকে একজন 
দলিল-লেখক
তাকে নিয়মিত দেখা যায় তিনি সেই বাড়িটির
চারপাশ দিয়ে নিয়মিত ঘোরাফেরা শেষে
থাকেন দাঁড়িয়ে বাড়িটির দরজার পাশে
যদি কেউ খুলে দেন কোনোদিন
হয়তো সেই আশায়।

পাড়ার লোকেরা বলে আমি নাকি সেই দলিল লেখক।
তাই শুনে,
তখুনি রাগ করি নিজের ওপর।

আমাদের পাশের বাড়ির মণিদীপা পুকুরে সাঁতার শিখলেও,
কোন অভিমানে
কেন যে আমাকে শেখালো না, বিদ্যাসাগরের বর্ণমালা,
কেন যেন আমাকে শোনালো না বিদ্যাসাগরের শুদ্ধ বানান।