বিদ্যাসাধক মোহাম্মদ আবদুল কাইউম

বাংলাদেশের শিক্ষা, গবেষণা ও বিদ্যাচর্চার ধারায় একটি বিশিষ্ট ও উজ্জ্বল নাম মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। অধ্যাপনার সঙ্গে দীর্ঘদিন সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। ছিলেন একাধিক বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক, তবু আমার বিবেচনায় গবেষকসত্তাই তাঁর প্রধান পরিচয়। বিদ্যার নিরন্তর অনুশীলন ও জ্ঞানান্বেষণকেই তিনি জীবনের একমাত্র ব্রত হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন। একজন প্রচারবিমুখ নিভৃতচারী গবেষক ও বিদ্যাসাধক ছিলেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। তাঁর মধ্যে আত্মম্ভরিতা ছিল না। নিজেকে পণ্ডিত হিসেবে ভাবেননি কখনো, তাঁর আচরণ কিংবা উচ্চারণে ছিল না কৃত্রিম উজ্জ্বলতা প্রকাশের প্রবণতা, ছিল না প্রদর্শন-মানসিকতা। সমগ্র জীবন ধরেই বিদ্যার সাধনা করে গেছেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। জাগতিক মোহ থেকে দূরে ছিলেন তিনি, পদ-পদবি তাঁকে কখনো করতে পারেনি লক্ষ্যচ্যুত। একজন নিষ্ঠ এবং প্রকৃত জ্ঞানসাধক বলতে যা বোঝায়, মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ছিলেন তার উজ্জ্বল এক প্রতিনিধি।

মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ছিলেন মেধাবী শিক্ষার্থী। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় থেকে ১৯৫৪ সালে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তিনি প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৬৫-৬৬ শিক্ষাবর্ষে লন্ডন বিশ^বিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে তিনি স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করেন। ÔA Critical Study of the Early Bengali GrammarsÕ বিষয়ে অভিসন্দর্ভের জন্য ১৯৭৪ সালে তিনি লন্ডন বিশ^বিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেন। পেশা হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল কাইউম শিক্ষকতাকেই বেছে নেন। তিনি করাচির ইসলামিয়া কলেজ (১৯৫৭-৬০), চট্টগ্রাম ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের (১৯৬৭-৭৫; ১৯৭৫-৯৫) বাংলা বিভাগে অধ্যাপনা করেন। এই সময়পর্বে মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বাংলা একাডেমির গবেষণা বিভাগের অধ্যক্ষ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। নানা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তিনি জড়িত ছিলেন, কাজ করেছেন বিভিন্ন গবেষণা সংস্থায়। নজরুল ইনস্টিটিউট এবং জাতীয় জাদুঘরের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম, দায়িত্ব পালন করেন বাংলা একাডেমির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়ের নানা প্রশাসনিক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন তিনি। যে-কোনো দায়িত্বই অতি নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করতেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। সময়ানুবর্তিতা ছিল তাঁর চরিত্রের একটি বড় বৈশিষ্ট্য।

গবেষক হিসেবে মোহাম্মদ আবদুল কাইউম রেখেছেন উজ্জ্বল কৃতির স্বাক্ষর। তিরিশের অধিক গবেষণাগ্রন্থের প্রণেতা তিনি। তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলি হচ্ছে : পাণ্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ সমালোচনা (১৯৭০),  A Critical Study of the Early Bengali Grammars : Halhed to Haughton (১৯৮২), অভিধান (১৯৮৭), উনিশ শতকে ঢাকার সাহিত্য ও সংস্কৃতি (১৯৯০), নানা প্রসঙ্গে নজরুল (২০০২), ঢাকার ইতিবৃত্ত : ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি (২০০৮) ইত্যাদি। সম্পাদক হিসেবেও তিনি রেখেছেন নৈপুণ্য ও নিষ্ঠার স্বাক্ষর। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে উল্লেখ করা যায় রত্নবতী থেকে অগ্নিবীণা – সমকালের দর্পণে (১৯৯১), প্রাচীন ও মধ্যযুগের বাংলা অভিধান (রাজিয়া সুলতানা সহযোগে; প্রথম খণ্ড ২০০৭, দ্বিতীয় খণ্ড ২০০৯), রবীন্দ্রনাথ : সমকালে পত্রিকায় (তিন খণ্ড, ২০১১) প্রভৃতি গ্রন্থের কথা। মোহাম্মদ আবদুল কাইউম অনেক লেখকের রচনাবলি কিংবা বিশেষ কোনো গ্রন্থ সম্পাদনা করেছেন। দেশে-বিদেশে অনেক সেমিনার-সিম্পোজিয়ামে তিনি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। গবেষণায় অবদানের জন্য মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ১৯৯০ বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার অর্জন করেন। নজরুল ইনস্টিটিউট-প্রদত্ত নজরুল পুরস্কার (২০০৭)-সহ অনেক পুরস্কার ও সম্মাননায় তিনি ভূষিত হন।

কেবল নিজে নয়, একটি গবেষণামনস্ক শিক্ষিত সমাজ গঠনের জন্য মোহাম্মদ আবদুল কাইউম শিক্ষার্থীদেরও গবেষণাকর্মে আহ্বান জানাতেন। গবেষণাকর্মে ব্রতী হওয়ার জন্য তিনি শিক্ষার্থীদের সবসময় উদ্বুদ্ধ করতেন। তাঁর তত্ত্বাবধানে গবেষণা করে আটজন গবেষক এমফিল/ পিএইচ.ডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। মধ্যযুগের সাহিত্য, রবীন্দ্র-নজরুল চর্চা, অভিধান-সংকলন, পুরনো ঢাকার লোকসংস্কৃতি – এসব বিষয়ে গবেষণাকর্মে শিক্ষার্থীদের তিনি উদ্বুদ্ধ করতেন। অভিধানচর্চা ছিল মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের একটি প্রিয় বিষয়। বাংলা একাডেমি, নজরুল ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটি – এসব প্রতিষ্ঠানের অভিধান প্রকল্পের সঙ্গে বিশেষভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। ‘আমার অভিধান-চর্চা’ শীর্ষক এক রচনায় তিনি জানাচ্ছেন তাঁর অভিধানপ্রিয়তার কথা :

… অভিধান প্রণয়ন আমার নেশা। ১৯৫২ সালে আমার প্রথম গবেষণা প্রবন্ধ ‘নজরুলের গ্রন্থপঞ্জি’ সোনার বাংলা পত্রিকায় ১৭ই মে ১৯৫২ তারিখে প্রকাশিত হয়। তখন থেকে শুরু হয়েছে ‘গরু-খোঁজা বা গবেষণা’ – যথার্থ রত্নমানিকের সন্ধান। মনেপ্রাণে বিশ^াস করি, অভিধান প্রণেতা জ্ঞানেন্দ্র মোহন দাসের বিখ্যাত উক্তি – ‘অভিধান জাতীয় সংস্কৃতি বা কৃষ্টির স্তরক্রম।’

মোহাম্মদ আবদুল কাইউম অভিধান সংকলনে কী পরিমাণ যে আগ্রহী ছিলেন, তা সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়ের পাদ্রি মনোএল্-দা-আস্সুম্প সাম্-রচিত বাঙ্গালা ব্যাকরণ (১৯৩১) গ্রন্থের অসম্পূর্ণতা নির্দেশ থেকে বোঝা যায়। মোহাম্মদ আবদুল কাইউম লিখেছেন : ‘সুনীতিকুমারের সম্পাদিত ‘পাদ্রি মনোএল্-দা-আস্সুম্প-সাম-রচিত বাঙ্গালা ব্যাকরণ’ (১৯৩১) গ্রন্থটি আমি সংগ্রহ করি। এ গ্রন্থের অসম্পূর্ণতা দেখে আমি মানোয়েলের অভিধানের পূর্ণাঙ্গ ভোকাবুলারিও বা বাংলা পর্তুগিজ শব্দকোষ সম্পাদনায় উদ্যোগী হই। ঢাকার ভাওয়ালে বসে মানোয়েল এই ভোকাবুলারিও প্রস্তুত করেন। … মূল অভিধানে তৎসম ও তদ্ভব শব্দের পাশাপাশি সেখানে প্রচুর দেশজ ও বিদেশি শব্দ স্থান পেয়েছে। বিশেষ করে ঢাকার ভাওয়াল অঞ্চলের ব্যবহৃত শব্দের সংখ্যা অনেক। উদাহরণস্বরূপ কাউয়া, আতকা, চাটাই, দরমা, ঢং, ডুমা, ডিবিয়া, বাঙ্গী, বরই, টাটা, ঠেঙ্গা প্রভৃতি শব্দের উল্লেখ করা যায়। এক অর্থে আমার সম্পাদিত মানোয়েলের অভিধানটি হবে পূর্ব বাংলার প্রথম আঞ্চলিক ভাষার অভিধান।

আরবি-ফারসি শব্দের বাহুল্য দৃষ্টে মনে হয়, সেকালে, বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে, সাধারণ লোকের কথাবার্তায় আরবি-ফারসি শব্দের বহুল ব্যবহার ছিল। এ জাতীয় শব্দের উদাহরণ – আমল, আওয়াজ, আখের, বারকোষ, বেইজ্জতী, বরুজ, বদ্বোই, কাছারী, কাশেদ, আসবাব, বেগুনা, বেসরিম (বেসরম), খাওন্দ (স্বামী), কুলুপ, ইজার, হামানদিস্তা ইত্যাদি।’

মোহাম্মদ আবদুল কাইউমকে উপমহাদেশের প্রাচীন যুগের এক জ্ঞানতাপস হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন আরেক ভাষা-গবেষক পবিত্র সরকার। মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের A Critical Study of the Early Bengali Grammars গ্রন্থ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন : ‘… এটি যেন যথার্থ গবেষণা কীভাবে করতে হয় তার একটি মডেল। এ বই শুধু যে আমাদের কাছে প্রায় অলভ্য তিনটি মহামূল্যবান ব্যাকরণ সম্বন্ধে অবহিত করেছে, আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতির এক আচ্ছন্ন ইতিহাসকে পুনরুদ্ধার করেছে, তাই নয়, তার তথ্যসংগ্রহ, বিন্যাস, বিচার ও সুচিন্তিত আলোচনা ও সিদ্ধান্ত – যে কোনো গবেষকের কাছে পদ্ধতিগত দিক থেকেও মূল্যবান হয়ে উঠেছে।’ মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের উপর্যুক্ত অভিসন্ধর্ভটি অষ্টাদশ-উনিশ শতকে প্রশাসনিক প্রয়োজনে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের বাংলা ব্যবহারের প্রাথমিক উদ্যোগের ইতিহাস বর্ণন, তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন রচনার তুলনামূলক আলোচনা।

মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ পাণ্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ-সমালোচনা। চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের শিক্ষক থাকার সময় তিনি ছাত্রপ্রিয় এই গ্রন্থটি রচনা করেন। পাণ্ডুলিপি পাঠ, সম্পাদনা ও সমালোচনা বিষয়ে এটিই বাংলা ভাষার প্রথম বই। প্রসঙ্গত, সৈয়দ আলী আহসান লিখেছেন ‘… পাণ্ডুলিপি পাঠ ও পাঠ-সমালোচনা সার্থক গবেষণা গ্রন্থটি এখন পর্যন্ত বাংলা ভাষার একক রচনা। ড. কাইউমের অবলম্বন ছিল সংস্কৃতির [সংস্কৃত?] পাণ্ডুলিপি। এ গ্রন্থে কাইউম গভীর সহনশীলতা, অভিজ্ঞান, কৌতূহল এবং বিচারবুদ্ধির পরিচয় দিয়েছে।’ উনিশ শতকের ঢাকা শহর এবং ঢাকা শহরের সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম নিয়েও মোহাম্মদ আবদুল কাইউম গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। এক্ষেত্রে তাঁর চকবাজারের কেতাবপট্টি (১৯৯০), উনিশ শতকে ঢাকার সাহিত্য ও সংস্কৃতি (১৯৯০), ঢাকার ইতিবৃত্ত ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি (২০০৮) – এসব বই বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

 মোহাম্মদ আবদুল কাইউম বেড়ে উঠেছেন সাহিত্য ও সংস্কৃতিঋদ্ধ একটি পারিবারিক পরিমণ্ডলে। পিতা মোহাম্মদ কাসেম ছিলেন একজন জনপ্রিয় কথাশিল্পী। তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস আগামীবারে সমাপ্য। ছোটগল্প এবং বেতার-নাটক রচনাতেও তিনি বিশেষ কৃতিত্বের পরিচয় দেন। মোহাম্মদ কাসেম সাহিত্য-সংগঠক হিসেবেও ছিলেন খ্যাতিমান। তিনি ছিলেন একটি সুবিখ্যাত বইয়ের দোকানের স্বত্বাধিকারী। মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ছুটির দিনে কিংবা অপরাহ্ণে পিতার বইয়ের দোকানে সময় কাটাতেন। এই বইয়ের দোকানেই বিখ্যাত অনেক লেখকের সঙ্গে অল্প বয়সেই পরিচিত হন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। প্রসঙ্গত তাঁর স্মৃতিচারণ উল্লেখ করা যায় : ‘আমার আব্বার একটি বইয়ের দোকান ছিল প্রথমে বাংলাবাজার ও পরে জনসন রোডে। শিক্ষা-বঞ্চিত ছেলেদের সঙ্গে আমার মেলামেশা ছিল বারণ। তাই, স্কুল ছুটির দিন আব্বা আমাকে তাঁর দোকানে নিয়ে যেতেন এবং প্রায় সারাদিনই সেখানে কাটাতাম। তিনি সাহিত্যিক বা সংস্কৃতিমনা হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন। সেখানে সাহিত্যিক বা সংস্কৃতিসেবীরা এসে সময় কাটাতেন বা আড্ডা দিতেন। যাঁদের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁদের নাম যতদূর মনে পড়ে – মনোরম গুহ ঠাকুরতা, অজিত গুহ, ত্রিপুরাশঙ্কর সেন এবং প্রগতি লেখক সংঘের কয়েকজন। … প্রগতি লেখক সংঘের কয়েকজনের সঙ্গেও আব্বার বিশেষ সখ্যতা ছিল। ঢাকায় অনুষ্ঠিত তাঁদের এক সভায় আমি কবিতা আবৃত্তি করার সুযোগ পাই। কলকাতা থেকে আগত সাহিত্যিক গোপাল হালদার ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আব্বা পরিচয় করিয়ে দেন।’

সজ্জন মানুষ বলতে যা বোঝায়, মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ছিলেন তার যথার্থ দৃষ্টান্ত। স্বল্পভাষী বিনয়ী ডক্টর কাইউম বহু জ্ঞানের আধার ছিলেন, কিন্তু কখনো তাঁর মাঝে গর্ব কিংবা আত্মম্ভরিতা দেখা যায়নি। তিনি ছিলেন গুণী মানুষ, পরিশ্রমী গবেষক – ছিলেন নিষ্ঠ শিক্ষক।

দুই

মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথা আজ বিশেষভাবে মনে পড়ছে। বাংলা একাডেমির একটি সেমিনারে ১৯৮৫ সালে স্যারের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয়। প্রথম দেখাতেই স্যারকে ভালো লেগেছে। স্যারের A Critical Study of the Early Bengali Grammars পড়ে মুগ্ধ হয়েছি। স্যারের সহধর্মিণী ডক্টর রাজিয়া সুলতানা আমার শিক্ষক। উভয় সূত্রেই স্যার কিংবা আপার হাতিরপুলের বাসায় আমি বহুবার গিয়েছি। স্যারের সমৃদ্ধ গ্রন্থাগার থেকে আমি বহু বই পড়ার সুযোগ পেয়েছি। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে রবীন্দ্রনাথ-বিষয়ক একটা গবেষণার জন্য স্যারের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি অভিযান পত্রিকার একটা সংখ্যা আমাকে দেন, যেখানে রবীন্দ্রনাথ ও ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় সম্পর্কে আমি অনেক তথ্য লাভ করি। কাইউম স্যারের গবেষক-সত্তা আমাকে বিশেষভাবে আকৃষ্ট করত।

মোহাম্মদ আবদুল কাইউম ছিলেন, পূর্বেই ব্যক্ত হয়েছে,  একজন নিষ্ঠ শিক্ষক। আমার তত্ত্বাবধানে রচিত একাধিক পিএইচ.ডি/ এমফিল অভিসন্দর্ভের পরীক্ষক ছিলেন ডক্টর কাইউম। নিখুঁতভাবে খুঁটিয়ে-খুঁটিয়ে তিনি অভিসন্দর্ভ পাঠ করতেন, নির্দেশ করতেন ভুল-ত্রুটি কিংবা সীমাবদ্ধতা এবং কীভাবে আরো উন্নত করা যায় সে-পথ বাতলে দিতেন। মৌখিক পরীক্ষার সময় গবেষককে পিতৃসুলভ আচরণে সবকিছু বুঝিয়ে দিতেন স্যার। গবেষণার জন্য স্যারের কাছে বই চেয়ে কখনো হতাশ হতে হয়নি আমাকে। স্যারও অনেক সময় আমার কাছ থেকে বইপত্র নিতেন। স্যারের সান্নিধ্য সবসময়ই ছিল আনন্দদায়ক ও মধুময়। অনেক জটিল বিষয় খুব সহজে ব্যাখ্যা করতে পারতেন মোহাম্মদ আবদুল কাইউম। মোহাম্মদ আবদুল কাইউমের মতো গবেষক আমাদের সমাজের জন্য যে কত প্রয়োজন, তাঁর তিরোধানের পর সে-কথা আজ বিশেষভাবে অনুভব করছি।