বিদ্রোহী ২০১১

মুহম্মদ নূরুল হুদা

জাহেদার আগেই গেলেন ফকির মোহাম্মদ। তবু ছেড়ে এলে বজলে করিম আর চকোর গোদার দরদ। তারপর আলী আকবর খান হয়ে কান্দিরপাড়। কিছুটা তো পায়ে হেঁটে, কিছুটা তো ট্রেনে। নববুই বছর আগে জন্ম হলো তালতলা লেনে। বটে সে-ও কলকাতা, বটে সে-ও নাগরিক কুঁড়ে। এতোটা বয়স গেল, তুমি কিন্তু নও থুত্থুড়ে। হবে যে কখন? যৌবন পেরোতে হবে, এই দীক্ষা করোনি গ্রহণ। দূরদেশি পিতামহ  হুইটম্যান, তারও আগে মহর্ষি মনসুর, খৈয়াম-হাফিজ-রুমি, বৈদিক শ্লোক। লোকবাংলার বুকে এখনো বিলুপ্ত নয় ঢোলক নোলক।  তোমার জীবৎকালে দ্রোণাচার্য মোহিতলাল, ক্ষেত্রমোহন। তুমি সকলের কাছে বাঁধা রেখেছিলে বিদ্রোহীর মন। সবাই প্রণাম পেল বিদ্রোহীর রবীন্দ্রপ্রণাম।  তুমি শুধু দুই হাতে ধরে আছো প্রেম-ঘাম-কাম। মনসুরের চূর্ণ অঙ্গ থেকে যখন অাঁতুড়ঘরে তোমার প্রতিমা। অকালে ফকির গেলেন জান্নাতনিবাস, মাতা জাহেদার শুরু বৈধব্যের দীর্ণ গৃহবাস। তুমি গৃহশিক্ষকের বেশে সংগীতের পাঠ দিলে কিশোরী রাণুকে। প্রতিপক্ষ তাড়া করে অন্ধকারে পুরানা পল্টনে। তুমি লাঠির ভেলকি-যুদ্ধে জিতে নিয়ে শিল্পীর মহিমা, বর্ধমান ভবনে এসে রাত জেগে মাতলে দাবায়। জাতের বজ্জাতি নিয়ে যারা মাতে, তারা তো হারিয়ে যায় বুড়িগঙ্গার ধারায়। গানে গানে মাতিয়ে তুলে এ বঙ্গ-সায়র, পত্নী প্রমীলাকে নিয়ে তুমি গেলে কৃষ্ণনগর। সুহিনহো এজলাসে বসে তোমাকে চালান দিলো আলীপুর জেলে। অভিমানে হিমালয় শৃঙ্গ থেকে গঙ্গাধারা নামে এলেবেলে। তখনি বাংলাজুড়ে গলা সাধে অর্ফিয়ুস, আজরাইল আর বীণাপাণি। মানুষের গান গাই, স্বদেশে ও স্ববিশ্বে একমাত্র মানুষকেই মানি। একহাতে বীণা আর একহাতে অসি। বাংলার রুদ্রাকাশে জ্বলে রবিশশী। এতোসব এতোদিনে চিনেও চিনিনি। বিদ্রোহের রুদ্রনেত্র, তুমি কার অভঙ্গ বিনুনি? আমরা তো চিনি শুধু বিদ্রোহীর মুখ। সেই মুখ শিবনেত্র, সেই মুখ বীরভোগ্যা পৃথিবীর মুখ।

১৯-২০-.৫.২০১১