১
ঘুমিয়ে তোমার জন্ম, অথচ দেখেছো
অপরিমেয় আকাশ স্বর্গের সোপান বেয়ে
উঠে গেছে দূর নীলিমায় অনেক উঁচুতে
নক্ষত্রের হাট বসেছে যেখানে, তবে
মায়েরা সেখানে নেই, আছে শুধু
দেবদূত, যার হাত ধরে নিরিবিলি চরাচর
পুষ্প-উদ্যানে তোমার আর অজস্র সাথির –
রাত্রি নিশুথি হলে দেখা দাও মায়েদের
তারাদের সুবর্ণ-মেলায়, জ্বলছে পুষ্প-প্রদীপ
কতশত, আকাশে বসেছে যেন গল্পের আসর
মায়েদের উন্মোচিত বক্ষে নেমে আসে
স্বর্গ-সুখ ঈশ^রের!
২
কেন ঘুমিয়ে পড়লে আগেভাগে
তাই তো জন্মেই দেখোনি মায়ের মুখ
মাও দেখতে পায়নি তোমার মুখ!
হাসপাতালের শয্যায় যন্ত্রণাকাতর সেই
বেদনাহত জননী নির্মম সময় পেরুতেই
বলে উঠলো ‘বিরসা হবে তার নাম
তার কোনো জাত নেই, ধর্ম নেই
পৃথিবীর আদি মানবের একজন
ঈশ^রের পুত্র হয়ে জন্ম যার।’
অথচ বিরসা এক বিদ্রোহের নাম
বিরসা এক সংগ্রামের নাম
বিরসা এক অপরিমেয় শক্তির নাম
বিরসা এক মুক্তিকামী জনতার নাম
বিরসা এক জ¦লন্ত অগ্নিপুরুষের নাম
বিরসা এক আপসহীন আত্মসত্তার নাম
যার হাতের তালুতে জ্বলছে ধিকিধিকি
আহত মানবতার উচ্চকিত ধ্বনি সর্বক্ষণ
– স্বাধীনতা যার নাম
আজীবন শৃঙ্খল ভাঙার গান কণ্ঠে যার
– বিরসা নামই তার!
৩
উড-গ্রিনের নির্জনে পাইন বৃক্ষের সারি
অবিরাম বাজিয়ে চলছে শোঁ-শোঁ
– মমতাময়ী সংগীত
কে যেন এনেছে গিটার সেই সুরে
– মিশিয়েছে ঐকতান
দূরের সাগরজল থেকে উঠে এসে
শীতল বাতাস ছুঁয়ে যায় বুকের ভেতরে
জমে থাকা কঠিন শিলার গিরিকন্দর।
শুয়ে আছো পত্র-পল্লবের নিচে
সূর্যালোক ছোট্ট বুকের প’রে
আলো হয়ে ছায়া হয়ে ধীরলয়ে
কেঁপে যাচ্ছে অনুক্ষণ কখন থেকেই
যেন বা হাত ধরাধরি করে নৃত্যগীতে
মাতিয়ে রেখেছো দেবশিশুদের!
জনক-জননী এসে পুষ্প ছড়িয়ে দিতেই
তোমার বুকের ’পরে টুপ করে পড়ে
– দিদিমার অশ্রুবিন্দু
শাড়ির আঁচলে তুলে নেয় কিছু সজল মৃত্তিকা
দাদু তার বুকপকেটে সযত্নে রেখে দেয়
আজন্ম স্নেহের নিদর্শন কিশলয় কিছু।