খোরশেদ বাহার
হেমন্তের এই সকালে কুয়াশা আমার শরীর ছুঁয়ে যায়
আমি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে আছি
যেমন তুমিও দাঁড়িয়ে ছিলে চৌধুরীদের বাড়ির গেটে।
তখন ছিল রাসউৎসব, আজ আমি একটি ভিসার জন্যে।
কতদিন দেখা হয়নি দুজনের।
এবার দেখা হলে বলতাম
লাল পাহাড়ের দেশ আর কতদূর সুনীলদা?
জানতে চাইতাম হাজার না জানা কথা।
মহারাজের গালে পোতা গোলাপ গাছের খবর
ক্লান্ত অন্ধকারে চোখের জলে সাঁতারকাটা মাছের
নরম জলের তো শরীরের কতো কতো গভীরে আঁধার থাকে।
কিংবা শেষ পর্যন্ত কি অরুন্ধতির ভালোবাসা মিললো?
কতক্ষণ দাঁড়িয়ে আছো বাসস্টপে, এই অবেলায়?
তিন মিনিট নয়, ঘড়ির কাঁটা পেরিয়ে গেছে তিন যুগ।
এবার সত্যি সত্যি তোমার কপালে ফোঁটা ফোঁটা ঘাম
কী নিদারুণ পাশা খেলায় তুমি হেরে যাচ্ছো অবিরাম
পুরোহিতের কাছে।
এই সময়ে মনে কি পরে নীরার মুখ
বেলগাছিয়ায় নেমে গেলো যে নম্র নেত্রপাতে
ভাঁটফুলের গন্ধমাখা শরীরে
কৌতুকময় বিষণœতায় ভরা চোখ
তার চিবুকে কি কোনো তিল ছিল?
আমি ভিসার জন্য দাঁড়িয়ে আছি।
ভিসা পেলে মিলবে এমনসব প্রশ্নের উত্তর।
এখনো কি বাড়ি ফেরার পথে বাড়ি হারিয়ে যায়?
বাতাসে সাঁতার দিয়ে ব্যক্তিগত জাতীয়সংগীত এখনো কি
ভাসে নিরুদ্দেশে?
শিকেয় তুলে রাখা তোমার হাজার গোপন কথা
জানা কি হবে না সব এক জীবনে?
দেখা কি হবে কালের মন্দিরে নীরার সাথে?
যে তুমি পিতামহের দীর্ঘশ্বাসকে বন্দি রেখেছো কাঠের সিন্দুকে
যে তুমি বেঁচে থাকো শুধু গোলাপের পাপড়ি গুনে গুনে।
হঠাৎ টিভির পর্দায় ভেসে ওঠে তোমার একাকী সাদা-কালো ছবি।
চোখের কোটর থেকে বর্ণমালা কেমন ফিকে হয়ে আসে।
তারই ফাঁকে আমি নিমিষে পড়ে ফেলি তোমার সব না-লেখা কবিতা
তখন আনন্দগুলো হলুদ রঙের বৃষ্টি ঝরায়
সে বৃষ্টির করুণ ধারায় দুপুর গড়িয়ে যায়
ভেসে যায় চোখের জলে বাংলার সমস্ত শহর।
এবার কিন্তু ঈশ্বর-প্রতিমা সবাই দিয়েছে কথা
কিছুই বন্ধক চায় না ওরা শুধু তোমাকে ছাড়া
মঞ্জুর তোমার ব্যক্তিগত জিরো আওয়ার।
পিস হ্যাভেনের হিমগাড়িতে,
ফুলের শয্যায় ধীরগতিতে
পিছে ফেলে হাজার আমি’ কে
সুনীলদা একবার গিয়েই দেখো না
অমরত্ব তোমার পায়ের কাছে, শিয়রে বসে মা
মাইরি বলছি এবার যেন ঘুমিয়ে পড়ো না।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.