ভাবনাবিলাসী এক দিগন্ত

রিপন আহসান ঋতু

নোরার ক্যাসল অব ক্যাসাবস্নাঙ্কা

কাজী রাফি

অন্বেষা

ঢাকা, ২০১৯

২০০ টাকা

 

নোরার ক্যাসল অব ক্যাসাবস্নাঙ্কা উপন্যাস সৃষ্টিতে আপাদমস্তক কথাশিল্পী কাজী রাফি মস্তিষ্ক অপেক্ষা হৃদয়ের ওপরেই অধিকতর নির্ভর করেছেন। তাঁর ধূসর স্বপ্নের সাসান্দ্রা এবং ত্রিমোহিনীর মতো লেখাগুলো সাহিত্যের আকাশে বেঁচে থাকবে ধ্রম্নবতারার মতো। কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজন এবং ভ্রমণনেশার কারণে চষে বেড়িয়েছেন আফ্রিকাসহ পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তর। এখান থেকেই লেখক অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন। বিচিত্র সামাজিক সম্পর্কের অভিজ্ঞতাকে তিনি তাঁর লেখার উপজীব্য করতে বেশ মুনশিয়ানা দেখিয়েছেন বরাবরই। নিজের দেশ ও কালের সুবিশাল প্রেক্ষাপট কাজী রাফির উপন্যাসের আখ্যানগুলোতে সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো থাকে। উপন্যাসের শুরুর দিকেই কেন্দ্রীয় চরিত্র জাহিনকে যখন কাতার থেকে ইতিহাদ এয়ারলাইন্সের বিমানটা ক্যাসাবস্নাঙ্কা এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিলো তখনই সে ভাবছে –

দেশ না ছাড়লে মাতৃভূমির একটা পদ্ম অথবা কচুরিপানার ফুল ফুটে

থাকা পুকুর, একটা বাঁশঝাড়ের মাঝে লুকিয়ে থাকা ভোরের আঁধার অথবা সন্ধ্যার মায়া কতটা মোহনীয় তা তত তীব্রভাবে উপলব্ধি হয় না।

লেখক চরিত্রের মধ্যে যে দেশাত্মবোধকে দারুণভাবে উসকে দিলেন তা আসলে আমাদের সকলেরই মনের কথা। উপন্যাসটির পরতে পরতে নরনারীর জীবনকে সমাজের দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে বরং সমাজকে ব্যক্তির দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার একটা বলিষ্ঠ প্রয়াস আছে।

‘নোরার দিকে আড়চোখে তাকাল জাহিন, আড়চোখে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎই জাহিনের মনে হলো নোরা তার চিরপরিচিত এক নারী, যাকে কোনোদিন দেখা হয়নি। তার ছায়াস্বপ্নের মতো এই নারী তার স্বপ্নঘোর হয়ে তারই সাথে বাস করছে তার যৌবনের প্রারম্ভকাল থেকে।’

লেখকের কল্পনা যে-কোনো সচেতন পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হবে।

শৈশব-কৈশোরের তরল সব স্বপ্নের কাছে একটা সরিষার আগুনলাগা হলুদ দিগন্তের বিকেল তার কল্পলোকে স্থায়ীভাবে বাস করে বলেই জাহিনের কাছে তা উন্মোচিত হয় এভাবে – ‘শীতের প্রাণসঞ্চারী লকলকে

শাকসবজি ভরা উঁচু বরেন্দ্রভূমি আনত হয়ে মিলে গেছে সেই অগ্রহায়ণের ধানকাটা মাঠে।’

কাজী রাফির উপন্যাসের ভাষা ও প্রকাশভঙ্গি নতুন আলোর মতো পাঠকের মনকে উদ্ভাসিত করে। লেখক নিজে যে-অঞ্চলের অধিবাসী তারই গ্রাম আর নগরজীবনের রূপ তাঁর অধিকাংশ লেখায় বিধৃত হতে দেখেছি এর আগেও। কাজী রাফি লেখালেখিতে তাঁর নিজের পলিস্নসমাজকে মাঝে মাঝেই বেছে নেন এজন্য যে, তিনি অনুভব করেন, মানুষের সত্যিকার পরিচয় পেতে গেলে, তারই নিজস্ব সংস্কৃতির মধ্য দিয়ে মানুষকে ও মানুষের জীবনের সত্যকে চিনে নিতে হবে। এই লেখকের মানবতাবাদী ভাবধারার ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য তিনি তাঁর ভাষায় এত নিগূঢ়ভাবে তুলে আনেন, বাক্যে বাক্যে ছড়িয়ে রাখেন ঐন্দ্রজালিক অনুভব যা পাঠকমানসকে প্রচ-ভাবে আলোড়িত করে। সমকালীন ঘটনাবলির প্রতি গভীর পর্যবেক্ষণ স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে তাঁর লেখায়।

নোরার ক্যাসল অব ক্যাসাবস্নাঙ্কা উপন্যাসে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে শরিক হওয়া অথবা না-হওয়া নিয়ে ছাত্রদের বিবাদ ছাড়াও চাঁদের মধ্যে মানুষ দেখা নিয়ে, সারাদেশে অনবরত হরতাল-অবরোধের তা-বলীলায় ব্যক্তিমানুষের হাজারো ক্ষত নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যে কাউকে স্মৃতিতে নিমগ্ন করবে। জাহিনের মৃত্যুপথযাত্রী পিতার মুখ দেখতে না পাওয়ার যে যন্ত্রণা তা এই রাষ্ট্রযন্ত্রের নতুন করে অনেক কিছুর প্রস্ত্ততি নেওয়ার ইঙ্গিতবহ। জাহিন যখন বাড়ির পুকুরের সঙ্গে ক্যাম্পাসের পুকুরে স্নানের কথা ভাবছে, তখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের পুকুরের স্বচ্ছ জলে ভেসে ওঠে প্রিয় বাবার করুণ মুখখানি। কাকতালীয়ভাবে তখনই ফোনে সে জানতে পারে, বাবাকে শেষ-দেখা দেখতে হলে তাকে দ্রম্নত বের হতে হবে বাড়ির পথে।

‘একজন ছাত্রনেতা এসে কক্ষের সব ছাত্রের উদ্দেশে বলল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে একটা শো-ডাউন হবে। ওদের সাথে আমরাও মিলব। আন্দোলনে এই রুমের যদি কাউকে অনুপস্থিত পাওয়া যায় তাহলে তার বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

একজন প্রতিবাদ করল, ‘ভাই, এটা বুয়েট। এই ফাইনাল ইয়ারে এসে

মিছিল-মিটিং করার সময় আমাদের নেই।’ ঘটনা এখানেই শেষ হতে পারত। কিন্তু

ছাত্র-রাজনীতির অগ্রভাগে থাকা একজন অশস্নীল ভঙ্গিতে সাধারণ ছাত্রটিকে হুমকি দেয় এবং লেখকও হুবহু সেই ভাষাতেই তা তুলে ধরেন, তখনই রসায়নটা অন্যদিকে গড়ায়। একদিকে মূল চরিত্র জাহিনের বাবা মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন, অন্যদিকে দেশে শুরু হয়েছে জ্বালাও-পোড়াও। এই সংকটকালীন সময়ে জাহিন নিজের অঞ্চলে যাতায়াতের সংকটের কথা তুলে ধরে, ‘আমার নিজের শহরে একটা এয়ারপোর্ট আছে। কিন্তু তা আর কখনোই চালুই হলো না।’

শেষমেশ বাড়ি যাওয়ার জন্য কোনো যান, এমনকি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া না পেয়ে জাহিন রেলপথকেই বেছে নেয়। ট্রেনেই দেখা হয়ে যায় একসময়ের বান্ধবী, আরেক কপালপোড়া অর্চনার সঙ্গে। কপালপোড়া বলছি এই কারণে, তারও ঘরে ফেরার ভীষণ তাড়া! বাড়িতে মায়ের লাশ নিয়ে স্বজনরা অপেক্ষা করছে সদ্য মাহারা মেয়েটির জন্য। তারা উভয়েই দেশের রাজনৈতিক সহিংসতার শিকার। সেদিন রাতে ট্রেনটি আক্রান্ত হয় মানবিক বিকারহীন স্বার্থান্বেষী মানুষদের দ্বারা। জীবনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অর্চনাকে হারতে হয় করুণভাবে।

গুলিবিদ্ধ অর্চনা মৃত্যুর ঠিক আগেই তার আজীবন আরাধনা, তার ভালোবাসার কথা জানিয়ে যায় জাহিনকে,

তোমাকে আমি সেই কিশোরীবেলা থেকে হিংসা করেও ভালোবেসেছি। ঘৃণা করেছি তোমার মেধাটাকে। সবসময় মনে হয়েছে, তোমার মেধাটুকু আমাকে তোমার কাছে যেতে দেয় না। অথচ অদ্ভুত ব্যাপার কী জানো? আমি তোমাকে ভালোও বেসেছি তোমার প্রবল মেধার কারণেই … দূর থেকে … অ…নে…ক দূর থেকে …

সাত বছর পর স্বল্পসময়ের এই দেখার মাঝেই সে জাহিনকে আদেশ করে, মৃত্যুর পর যেন তার লাশ ফেলা হয় বন্যার তোড়ে উন্মত্ত নদীতে। অর্চনার আত্মাকে জাহিন পৃথিবীর সব নদী আর সাগরজলে খুঁজে পাবে – এমনই উপলব্ধি অর্চনার। অর্চনা জানে, ভালোবাসা আর কিছু নয় তা কেবল ফেলে আসা জীবনের কিছু স্মৃতিমাত্র। প্রবল তারুণ্যের কালেই একজন তরুণী মৃত্যুকে আলিঙ্গনের সময় ভালোবাসার মানুষের কোলে মাথা রাখতে পেরে দার্শনিক হয়ে ওঠে। মৃত্যুকালে অর্চনার অনুভবকে নির্মোহ অথচ এমন এক বেদনার তুলিতে ঔপন্যাসিক তুলে এনেছেন যে, হৃদয়ের সঙ্গে পাঠকের চোখও ভিজে ওঠে। জাহিন অর্চনার মৃতদেহ ভাসিয়ে দেয় প্রমত্তা যমুনার বুকে। পাঠক এখানে কিছুটা ধাক্কা খেতে পারেন। কিন্তু সত্যিকারের ভালোবাসা কত বড় ত্যাগ করতে শেখায় – লেখক এখানে তারই ইঙ্গিত দিয়েছেন। অর্চনা বিচার-বোধহীন সমাজের চিত্র জানে বলেই তার ভালোবাসার স্বপ্নতরুণকে সে মৃত্যুকালেও অক্ষত রাখতে মরিয়া হয়ে ওঠে। উপন্যাসের এই অংশে মৃত্যুপথযাত্রী অর্চনা চরিত্রের দার্শনিক চিত্রায়ণের

মতো ঔপন্যাসিক ভাষার মোলায়েম স্পর্শে পাঠকের অন্তস্তলকেও নতুন এক বোধে জাগিয়ে তোলেন।

উপন্যাসটির আরেকটি পাঠ হলো, এ-অঞ্চলের মানুষের সঙ্গে ভিনদেশি মানুষ আর তাদের সামাজিক-রাজনৈতিক জীবনের চিত্রায়ণ। ক্যাসাবস্নাঙ্কা মূলত মরক্কোর একটা সমুদ্রবন্দর। আবার ক্যাসাবস্নাঙ্কা নামে পৃথিবীখ্যাত একটি চলচ্চিত্রও রয়েছে। রোমান্টিক চলচ্চিত্র হিসেব স্বীকৃতি পাওয়া ছবিটির আবেদন আজো প্রশ্নাতীত। ছবিটিতে দেখানো হয়, ১৯৪১ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ডামাডোলের অস্থির এক সময়ে প্রেমে পড়ে দুই ভুবনের দুই মানব-মানবী। এই প্রেমটা ছিল আক্ষরিক অর্থেই ব্যাখ্যাতীত। প্রেমের শুরুটাই হয়েছিল এই শর্তে যে, অতীত নিয়ে কোনো প্রশ্ন করা যাবে না। ইউরোপের প্রায় সব দেশেই তখন জার্মান সৈন্যরা আস্তানা গেড়েছে। তেমনি এক ক্রান্তিকালে প্রেমের শহর প্যারিসের কোনো এক কক্ষে সেই প্রেমিকাটি আবেগে মথিত হয়ে প্রেমিককে জিজ্ঞেস করে বসে, ‘ডধংঃযধঃ পধহহড়হ ভরৎব ড়ৎ রং রঃ সু যবধৎঃ ঢ়ড়ঁহফরহম?’ সেই হৃদয় অপূর্ণ রয়ে যায় বিরহের বিচ্ছেদে। প্রেমিক অপেক্ষা করে যায় রেলস্টেশনে। ঝুমবৃষ্টিতে ট্রেন ছাড়ার ঠিক আগমুহূর্তে হাতে পায় একটি চিরকুট। সেই দৃশ্য যিনি দেখেননি তিনি তা  উপলব্ধি করতে পারবেন না কখনো। বৃষ্টির ফোঁটার সঙ্গে সঙ্গে চিরকুটে লেখার কালি যখন ধুয়ে যায় তখন ক্যামেরার জুম-ইন মনে করিয়ে দেয় বিরহেরও একটা সৌন্দর্য আছে; সেই সৌন্দর্যকে লক্ষগুণ বাড়িয়ে দেয় প্রেমিকের স্বগতোক্তি, ‘ঙভ ধষষঃযব মরহ লড়রহঃং, রহ ধষষঃযবঃড়হিং, রহ ধষষঃযব ড়িৎষফ, ংযব ধিষশং রহঃড় সরহবৃ’। প্রায় এক বছর পর সেই প্রেমিকযুগলের আবার দেখা হয় মরক্কোর ক্যাসাবস্নাঙ্কা নামক যুদ্ধ-নিরপেক্ষ একটি শহরে। এবার সেই মেয়েটি সঙ্গে করে নিয়ে আসে তার স্বামীকে। যে প্রাক্তন প্রেমিকটি স্মৃতির রূঢ়তা ভুলতে কঠোর নেশায় ডুবে থাকে, সেই প্রেমিকটিই তার লাস্যময়ী প্রেমিকাকে আবার দেখার পর চুরচুর করে ভেঙে পড়ে। কিন্তু তার কিছুই করার নেই। সেই মেয়েটি এখন অন্যের স্ত্রী। কিন্তু নোরার ক্যাসল অব ক্যাসাবস্নাঙ্কা উপন্যাসে লেখক কাজী রাফি ক্যাসাবস্নাঙ্কায় ঘটে যাওয়া আরো এক দুর্দান্ত গল্প দাঁড় করিয়েছেন, যা হৃদয় ছুঁয়ে যাবে সবার। উপন্যাসের নামভূমিকায় থাকা নোরা এক সাহসিকতার মূর্তপ্রতীক। যে কিনা নিজেই বলে, ‘শোনো জাহিন, মিশর বলো, আর আরবই বলো, মধ্যপ্রাচ্যের নিষ্ঠুর রক্ত আমার ধমনিতে। আমি রানি ক্লিওপেট্রার বংশধর। জানো তো, এই জাতিকা পদ্মিনী হলেও পুরুষের রক্তে স্নান করতে দ্বিধা করে না মোটেই।’

এই হলো নোরা চরিত্র। নানা ঘটনার মধ্য দিয়ে এই ভিনদেশি নারীর প্রেমকে ঔপন্যাসিক দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। এয়ারপোর্টের যাত্রাবিরতিতে ঘটে যাওয়া নোরা আর জাহিনের নিটোল প্রেমের বর্ণনা, তাদের কামনা-বাসনাকে কোনোরকম বাড়াবাড়ি ছাড়াই কাজী রাফি গভীর দরদ ও সহানুভূতি দিয়ে প্রকাশ করেছেন। কাজী রাফি প্রতিটি উপন্যাসে নিজেকে নতুন করে গড়েছেন, ভেঙেছেন উপন্যাসের গল্পবলার প্রথা এবং ধাঁচ। এই উপন্যাসেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। তিনি তাঁর আখ্যানকে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যে, যে-কারো মানসপটে তা পুরো চলচ্চিত্রের দৃশ্যায়নের মতো ধরা দেবে। তিনি শিল্পী হিসেবে তাঁর পবিত্র দায়িত্ব অত্যন্ত নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করেছেন।

উপন্যাসটির ত্রম্নটি অথবা অপূর্ণতা হিসেবে আমার মনে হয়েছে, লেখক এত তাড়াহুড়া না করে গল্পের পস্নট আরো বিসত্মৃত করতে পারতেন। তাঁর প্রবল কল্পনাশক্তিকে এই আখ্যানের স্পেসে তিনি আরো ছড়াতে পারতেন। এছাড়া উপন্যাসটি সম্পাদনায় বেশকিছু দুর্বলতা দৃষ্টিগোচর হয়। কোথাও কোথাও লেখার ফন্ট ভেঙে যাওয়ার মতো ঘটনাও ঘটেছে। এটা অবশ্য একক কোনো প্রকাশনার সমস্যা নয় বলেই আমার মনে হয়েছে। আমাদের প্রকাশনাজগৎই একই ধরনের ত্রম্নটি দ্বারা আক্রান্ত। অনবদ্য সৃষ্টি আর অনাসৃষ্টির মধ্যে একটা সীমারেখা তাঁরা যতদিন বুঝতে না শিখবেন, সত্যিকারের ভালো সৃষ্টি বিপণনে তাঁরা মনোযোগ না দেবেন, ততদিন এ-অবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে না।

বইয়ের বিপণনে প্রকাশকের দিক থেকে যা-ই ঘটুক, নোরার ক্যাসল অব ক্যাসাবস্নাঙ্কা উপন্যাসটি লেখকের ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধের ভাষা, গল্পের চরিত্রকে নিখুঁতভাবে সৃষ্টির প্রয়াসের কারণে সব বিপত্তি উপেক্ষা করে পৌঁছে যাবে একদিন বৃহত্তর পাঠকসমাজের হাতে – তা নিশ্চিত করে বলা যায়। জীবনে প্রথম যখন মৃত্যুপথযাত্রী অর্চনার প্রেমে পড়ে জাহিন, ঠিক তখনই পৃথিবীর সব আলো-অন্ধকার অর্চনার দৃষ্টি থেকে মুছে যাচ্ছে। অর্চনার মৃতদেহ নদীর প্রবল স্রোতে ভাসিয়ে দেওয়া এবং ক্যাসাবস্নাঙ্কায় অর্চনারূপী নোরার প্রেমকে শেষ মুহূর্তে অপারেশন থিয়েটারে রেখে জাহিনের হার্ট-পাউন্ডিং পাঠকের মানসকে আলোড়িত করে।