প্রাগৈতিহাসিক কালের এক বিশাল তিমি মাছের কংকাল যেন ভেসে আছে যুগপৎ অন্ধকার এবং ঝাপসা আলোর মাঝে। তাকে ঘিরে সভ্যতার বিচিত্র বিচরণ। নরম পলি মাটিতে মানব-ইতিহাসের ছাপ পোড়ামাটির ফলক হয়ে জানান দিচ্ছে।
ঢাকার বেঙ্গল শিল্পালয়ের কামরুল হাসান প্রদর্শনশালায় গত ৫ই জুলাই থেকে ‘মনন খনন’ শীর্ষক যে-দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনী চলছিল, তাতে ঢুকলে এমনই একটা অনুভূতি হচ্ছিল।
বাংলার মানুষের সঙ্গে মাটি, জল, নৌকার একটা সম্পর্ক হাজার বছর ধরেই রয়েছে। তবে নদী শুকিয়ে, সভ্যতার শহুরে বাষ্পে সে-সম্পর্ক বিলীয়মান। ফলে শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান নিয়ে এলেন হাজার বছর ধরে বাংলার নদনদীর বাহন নৌকা। তাকে ব্যবচ্ছেদ করলেন। করলেন খণ্ডিত। নৌকার খণ্ডাংশে জুড়লেন দোতারা। বাংলার যে নরম পলিমাটিতে পা বসালে পড়ে গভীর ঘন ছাপ সেই ছাপ তিনি টেরাকোটার বেশে তুলে আনলেন প্রদর্শনালয়ে। আনলেন শব্দ, অন্ধকার এবং তৈরি করলেন ক্রমশ শেকড় থেকে দূরে সরে যাওয়ার একটি উপাখ্যান।
তিনি প্রদর্শনীর নাম রাখলেন ‘মনন খনন’; শিল্পী হিসেবে বাঙালি জনপদের দর্শন এবং জীবন যাপনের নিগূঢ় অর্থকে খনন করে আবিষ্কার করার প্রয়াসে। এই প্রদর্শনীতে দৃশ্যশিল্প তৈরি করার ক্ষেত্রে তাঁর নৃতাত্ত্বিক অনুসন্ধিৎসু মন কাজ করেছে। ফলে, ওয়াকিলুর রহমানের শিল্পকর্মে নৌকা ভৌত অবয়বের বাইরে গিয়ে একটি প্রতীক হিসেবে দর্শকের সামনে আবির্ভূত হয়। যে নৌকাকে বাংলার মানুষ নিজের দেহ ও জীবনের সঙ্গে বারংবার তার গান ও কবিতায় একাত্ম করেছে, সেই নৌকা তিনি নিয়ে আসেন বেঙ্গল গ্যালারিতে। ওয়াকিলুর রহমানের এই নৌকা আসলে বাঙালির জীবনদর্শনের একটি প্রতীকী প্রকাশ। বাংলার মানুষ ক্রমশ নৌকা এবং তার জীবনবোধের এই দর্শন থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ওয়াকিলুর রহমান যেন সেই দূরত্বের ময়নাতদন্তই করতে চেয়েছেন। মানুষের সঙ্গে নৌকা ও নদীর যে-সম্পর্ক তা ধীরে ধীরে বিলীয়মান এবং সেই সঙ্গে মাটির সঙ্গে সম্পর্কও। ‘মনন খননে’ ওয়াকিলুর রহমান সে-বিষয়েই বোঝাপড়া করতে চেয়েছিলেন। তিনি তাঁর শিল্পভাষা এবং ভাবনা দিয়ে খুঁজতে অথবা খনন করতে চেয়েছেন বাংলার মানুষের সঙ্গে মাটি, পানি এবং নৌকার সম্পর্কের এই মিথস্ক্রিয়া।
বাংলাদেশের নদী ও পানি বিলীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নৌকার সঙ্গেও তার যোগসূত্রটি মানুষ হারিয়ে ফেলেছে। ফলে নগরায়িত এবং কঠোর একটি জীবনবাস্তবতায় আমরা যে নৌকাপ্রতীক এতদিন দেখে এসেছি, তা যেন মানুষের দৈনন্দিন জীবনে মিশে থাকা নৌকা থেকে অনেক বিচ্ছিন্ন। ওয়াকিলুর রহমানের প্রদর্শনীতে নৌকার জারণ-বিজারণের বিষয়টি মানুষের সঙ্গে দৈনন্দিন জীবনে মিশে থাকা নৌকার সেই হারিয়ে যাওয়া যোগসূত্রকেই প্রত্নতাত্ত্বিকভাবে খনন করে। সেই যোগসূত্রকে বের করে দর্শকের সামনে দাঁড় করায়।
নিবিড় ঘন আঁধারে
বাংলাদেশে অসংখ্য নদী। নরম উর্বর পলিমাটিতে এই দেশের জন্ম। যে-দেশে ছিল সহস্র নদী, সে-দেশের ভাষা, সাহিত্য, গান, দর্শন, মনন, কৃষি থেকে শুরু করে অর্থনীতি, জীবিকা এবং জীবন যাপনে নদী ও নৌকা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকবে এটিই স্বাভাবিক এবং বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সেটাই ঘটেছে। নৃতাত্ত্বিকদের মতে, মানুষের দৈনন্দিন জীবনে ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত যে বিষয়গুলি আছে, তার বহুবিধ ব্যবহার ও জীবনসংশ্লিষ্টতার ভিত্তিতে ভাষায় একই বস্তুকে অসংখ্য শব্দমালা দিয়ে প্রকাশ ও পার্থক্য নির্দেশ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, বরফের দেশে বাস করা ইনুইট সমাজে ‘বরফ’ শব্দটির অসংখ্য সমার্থক রয়েছে। সেসব শব্দমালা কোনো ‘একটি বরফ’কে নির্দেশ করে না, বরং বরফের যে অগুনতি রূপ, বৈচিত্র্য ও ব্যবহার আছে, তাকে চিহ্নিত করে। তেমনি বাংলার নৌকার নাম, চেহারা, ব্যবহারের শেষ নেই। বজরা, পানসি, কোষা, ডিঙি, নাও, সাম্পান, গয়না, বাচারি, পাতাম – এসব শব্দের সঙ্গে নৌকার বহুমাত্রিকতা এবং তার সঙ্গে জড়িত হাজার রকম চলমানতা, আবেগ, সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য প্রকাশ পায়। একেক নৌকা একেক জায়গার জীবন যাপন এবং সংস্কৃতির দিক নির্দেশ করে দেয়। সভ্যতার ইতিহাস জানা যায় বিভিন্ন নৌকার দিকে তাকিয়ে। বাংলার গ্রামগুলো গড়ে উঠেছে নদীর তীর ঘেঁষে এবং তাকে সমান্তরালে রেখে। এর একটি অন্যতম কারণ হলো উর্বর পলিমাটির প্রতুলতা। নদী এবং নৌকা তাই বাংলাদেশের মানুষের জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। অন্তত এককালে তাই ছিল। ধীরে নদী এবং নৌকাকে গ্রাস করতে থাকে মৃত্যু। প্রতিবছর গড়ে ১০টি করে নদী মরে যাচ্ছে – এমন বিষাদময় সংবাদ আমরা খবরের কাগজ পড়ে, গবেষণাপত্র থেকে জানতে পারি। নদী শুকিয়ে গেলে নৌকা চলার পথও বিলীন হয়। তার সঙ্গে যোগ হয় যান্ত্রিকতা। ভাটিয়ালি গানের জন্ম এই নদী এবং নৌকাতেই। তবে মোটরচালিত নৌকায় মাঝির পক্ষে গলা খুলে গান গাওয়া যে প্রায় অসাধ্য তা বুঝতে বিদগ্ধজনের গবেষণাপত্র পড়ার দরকার হয় না। সারি গানকে বলা হয় শ্রমসংগীত। তবে সে পুরাণের কথা যেন। বর্তমান শ্রমিকের গান যেন মোটরের একঘেয়ে গম্ভীর যপধ্বনি।
ওয়াকিলুর রহমান একটা বিশালকায় জেলে নৌকা সংগ্রহ করে এনেছিলেন সুদূর সুন্দরবন থেকে। তাঁর প্রদর্শনীর মধ্যমণি ছিল এই নৌকা এবং আলো-অন্ধকার। নৌকাটিকে তিনি বিভিন্নভাবে ব্যবহার করেছেন – প্রথমত, গ্যালারিতে ঢুকলেই দেখা যায় তিনি এই বিশালকায় নৌকার কংকাল শূন্যে ঝুলিয়েছেন। নৌকা তার শারীরবৃত্তীয় আক্ষরিকতার বাইরে গিয়ে একটা প্রতীক হিসেবে দর্শকের সামনে উপস্থিত হয়। নৌকার পাটাতন খুলে ফেলায় দৃশ্যটি চোখে ধাক্কা দেয় এবং অভিভূত করে দর্শককে। নৌকার এই অংশটি ভাসমান এবং এর নিচে লম্বা করে শিল্পী সাজিয়েছেন কাঠের টুকরো কেটে তৈরি করা বিভিন্ন শব্দের বিন্যাস। যেন জল থেকে নৌকা ভেসে উঠেছে শূন্যে এবং তার ফলে দৃশ্যমান হয়েছে নৌকা-নদীর মিলমিশে তৈরি হওয়া বাংলার শব্দ, সংস্কৃতি এবং দর্শন। সেখানে খুঁজলে পাওয়া যায় বিচ্ছিন্নভাবে লেখা, চিন্তা, স্পর্শ, অনুরাগ, শোভা ইত্যাদি। সেখানে বাংলার নদীর নাম থেকে শুরু করে দর্শনের সঙ্গে সম্পর্কিত বিভিন্ন শব্দ যেমন ছিল তেমনি ছিল প্রতিদিন ব্যবহার হয় এমন শব্দও। বাংলার নদী এবং তাকে কেন্দ্র করে মানুষের যে যাপন তার সঙ্গে বাংলার শব্দ, ভাষা-সাহিত্য এবং সংগীতের অনস্বীকার্য সম্পর্কের একটি দলিল যেন এটি।
শিল্পী বাংলার মাটি এবং মানুষের সম্পর্কের গভীরতা নিয়ে যখন ভাবলেন তখন তিনি নরম উর্বর পলিমাটিতে মানুষের পায়ের ছাপ এবং নরম মাটির টেক্সচারকে তুলে আনলেন চৌকোণ আকারের টেরাকোটায়। মাটিতে লম্বা হয়ে তারা শুয়ে। এই সেই মাটি যে-মাটির উর্বরতা বাংলাকে করেছে শস্য-শ্যামলা। নৃতাত্ত্বিকের ভূমিকায় শিল্পী ওয়াকিলুর রহমান এই মাটির নম্রতার সঙ্গে অতীত মানুষের সম্পর্ক যেমন তুলে আনেন, তেমনি এও মনে করিয়ে দেন যে, আমরা এই নরম মাটি থেকে কতটা দূরে বেমালুম চলে এসেছি। এই দাবি তিনি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেননি বটে; কিন্তু দর্শক একবার হলেও ভাবতে বাধ্য হয় যে, এই মাটি তার একদা অতি নিকটের।
ওয়াকিলুর রহমানের দৃশ্যশিল্প প্রদর্শনীতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে আলো এবং এর বিন্যাস। শিল্পী উজ্জ্বলতা এড়িয়েছেন। গ্যালারিতে তৈরি করেছেন ক্ষীণ আলোয় এক রহস্যময় ধোঁয়াশা পরিবেশ। দিনের সময়ে বাইরের আলো এবং ভেতরের অনুজ্জ্বলতা প্রদর্শনীকে দিয়েছিল একটা পরিবেশ। যেন দুপুরেও পড়ন্ত বিকেল। এবং বাইরের আলো যত কমে আসতে থাকে, ভেতরের অন্ধকার আরো জমে উঠতে শুরু করে। তিনি প্রদর্শনীকক্ষের দেয়ালকে অস্বীকার করেছেন। ফলে সেখানে স্থান পায়নি কোনো শিল্পকর্ম। এমনকি কোনো ছায়াও সেখানে পড়েনি। প্রদর্শনীর আলোকসজ্জা নিয়ে তিনি এভাবেই ভেবেছেন। শিল্পী ভাবছেন বৃহৎ একটি বিষয়ে নিয়ে, তাকে বিনির্মাণ করছেন, খনন করছেন বাংলার মানুষের সঙ্গে পানি ও মাটির গভীর সম্পর্ককে। শিল্পী ভাবছেন বিস্তীর্ণ জলাভূমির কথা, যেখানে দৃষ্টি দিগন্তে গিয়ে ঠেকে, অথচ তাঁকে তা উপস্থাপন করতে হচ্ছে চার দেয়ালের সীমিত একটি গ্যালারিতে। ফলে, তিনি গ্যালারির দেয়ালের সীমাবদ্ধতাকে উপেক্ষা করলেন, যা এক অর্থে অগ্রাহ্য। অর্থাৎ তিনি তাঁর ভাবনাকে একটা বিস্তৃত খোলা মাঠের মধ্যেই যেন উপস্থাপন করলেন, যার সীমানা কল্পনা যতদূর যায় ততোটুকু।
দৃশ্যগতভাবে প্রদর্শনীতে নৌকার বৈঠা এবং লগির ব্যবহার ছিল চমকপ্রদ। দেখে মনে হচ্ছিল তারা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে, কিন্তু লক্ষ করলেই বোঝা যায় যে, বিষয়টি তা নয়। তারা মাটি স্পর্শ করে নেই। সূক্ষ্ম নাইলন তারে সোজা হয়ে ঝুলে ছিল মাটি থেকে সেন্টিমিটার দূরে। মাধ্যাকর্ষণ এবং লম্বা বৈঠার মধ্যকার একটি উপভোগ্য টেনশন ছিল এখানে। নৌকার ভাঙা অংশে তিনি জোড়া দিয়েছেন জেলেদের ব্যবহৃত পাতিলের ঢাকনা। তবে সেগুলোকে তিনি বিমূর্ত একটি আকার দিয়েছেন। কখনো মনে হয় মাছ, কখনো শামুক।
প্রদর্শনীর একটা ঘর ছিল একদম অন্ধকারে নিমজ্জিত। সেখানে একটি ছোট নৌকা উলটো করে রাখা। তার গায়ে আলকাতরা মাখা। একটা ধ্যানমগ্ন বোধ সেখানে প্রবেশ করলে সহজেই পাওয়া যাচ্ছিল যেন নদীর পাড়ে, অথবা সাগরের। একাকী কোনো পথিক, হয়তো নাবিক কিংবা জেলে, দাঁড়িয়েছে এসে পরিত্যক্ত নৌকার পাশে। নির্জন আর কান পাতলে শুনতে পাওয়া যাবে মানুষ ও জলের ইতিহাস।
এরূপ আবহ তৈরির পেছনে সুচিন্তিত যে আলোকসজ্জা ছিল তা নিয়ে বিভিন্ন মতামত শোনা গেছে প্রদর্শনী চলাকালে। অনেক দর্শক শিল্পীর তৈরি করা আলোর বাঁধ ভেঙে নিজ নিজ স্মার্টফোনের টর্চ জ্বেলে ‘মনন খনন’- এর শিল্পগুলো আরো খুঁটিয়ে যেমন দেখেছেন, তেমনি অনেক দর্শক সেখানে দীর্ঘ সময় উপস্থিত থেকে উপভোগ করেছেন গ্যালারিতে দিন থেকে রাত হয়ে যাওয়ায় আলোর পরিবর্তন।
অনেকে গ্যালারিতে ঢোকার সময় আক্ষেপ করে বলেছেন, ‘ভেতরে এতো কম আলো কেন?’ কিন্তু ‘মনন খনন’ থেকে বের হয়ে অস্বস্তিতে বলেছেন, ‘বাইরে এতো বেশি আলোর কী দরকার?’
সমারূঢ়
আমি এ নিয়ে বহুবার ভেবেছি যে, শিল্পীকে তাঁর শিল্পের অর্থ সরাসরি জিজ্ঞেস করা ভদ্রলোকের কাজ কি না? আমি এও ভেবেছি যে, দর্শক হিসেবে আমাদের দায় আছে কি না নিজেরা ভেবে, প্রয়োজনে একটু পড়াশোনা করে শিল্পের নিকটে যাওয়ার – নিজের মতো করে অর্থ খুঁজে বের করার। এটা একটা চর্চিত সংস্কৃতির মতোই হয়ে গেছে যেখানে আমরা শিল্পীর কাছেই জানতে চেয়ে বসি তার কাজের গূঢ় অর্থ, কার্যকারণ ইত্যাদি। আমার মনে হয়েছে, এ হয়তো অনুচিত। শিল্পী নিজে থেকে বলতে চাইলেই তবে আমাদের শোনা উচিত, অথবা তাঁর সঙ্গে আড্ডায়। আলাপের উচ্ছ্বাসে, কথা প্রসঙ্গে, তর্কের ঝুলঝুরিতে যদি কিছু জানা যায়! ‘মনন খনন’-এর বিশাল ভাসমান নৌকার কংকালটি দেখে আমি শুরু থেকেই ভাবছিলাম এর মুখ যদি শিল্পী একটু ডান দিকে সরিয়ে দিতেন তবে আরো কতই না বিস্তৃত একটি দৃশ্যপট তৈরি হতো। কেন করলেন না তিনি এই দারুণ বুদ্ধিমানের (!) কাজ, তা মাসখানেক নিজে ভেবে, শেষমেশ আর প্রশ্ন আটকে রাখতে না পেরে যখন তাঁকে জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, তখন দেখলাম আমার স্বল্প শিল্প এবং প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞানের সঙ্গে তাঁর উত্তর মিলে যায়। তিনি যেভাবে এই অংশটি নাইলনের সুতো দিয়ে ঝুলিয়েছেন, তা অন্যমুখ করলে সম্ভব হতো না। তিনি গ্যালারি-স্পেসকে ব্যবহার করেছেন সর্বোচ্চ সুযোগ নিয়েই। দর্শকদের অনেককেই বলতে শুনেছি, নিজে ভেবেছি, দেয়ালগুলো কেন ফাঁকা? সাধারণত প্রদর্শনীতে দেয়ালই মূলত শিল্প-প্রদর্শনের জমিন, অথচ ‘মনন খনন’ বারবার দেখে এটা মনেই হচ্ছিল, দেয়ালে কিছু থাকলে এই প্রদর্শনীর মোহভঙ্গ হতো।
‘মনন খনন’ প্রচণ্ডভাবে একটি প্রতীকী দৃশ্যশিল্পের বলে নিজেকে জানান দেয়। একই সঙ্গে শিল্পীর পরিবেশনা এবং কম্পোজিশন এটাও বলে দেয় যে, ওয়াকিলুর রহমান আক্ষরিক অর্থেই খননকার্য চালিয়েছেন। এই প্রদর্শনীতে তিনি নৃতাত্ত্বিকের মস্তিষ্কে গবেষণা করেছেন। প্রত্নতাত্ত্বিকের বেশে কম্পোজিশন করে শেষমেশ শিল্পীর মতো পরিবেশন করেছেন।
ওয়াকিলুর রহমানের জীবন যাপনে যে স্বল্পবাদী দর্শন, তা তাঁর ‘মনন খননে’ও দৃশ্যমান। রিডাকশনিস্ট নীতিতে তিনি এই প্রদর্শনী সাজিয়েছেন – কাঠ, মাটি অল্প কিছু ধাতু এবং সুচিন্তিত অন্ধকার ছাড়া ব্যবহার করেননি আর কিছুই। অথচ ভেবেছেন কতটা গভীর, বিষণ্ন একটি যাত্রার কথা। প্রদর্শনীটি শেষ হয় ২০শে সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখে।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.