মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। এই মহাবিশ্বে কতগুলি তারা আছে? বিজ্ঞানীরা তো এত তারা গুনতে পারবেন না, তার পরও একটি আন্দাজ আছে। কিন্তু কেমন করে সে-আন্দাজ করেন বিজ্ঞানীরা? এমনসব প্রশ্ন নিশ্চয়ই মাথায় আসে আমাদের।
মহাবিশ্ব বা ইউনিভার্সে প্রায় ১০০ বিলিয়নের মতো গ্যালাক্সি আছে। আমরা, মানে পৃথিবী, এরকম একটি গ্যালাক্সির মধ্যে আছে। এর নাম মিল্কিওয়ে। এটি একধরনের স্পাইরাল অর্থাৎ সর্পিলাকৃতির গ্যালাক্সি। এই একটি গ্যালাক্সি অর্থাৎ মিল্কিওয়ের মধ্যে আছে আবার ১০০ বিলিয়ন স্টার বা তারা। আমাদের সূর্য এমন একটি স্টার বা তারা বা নক্ষত্র। বিজ্ঞানীরা মিল্কিওয়ের মধ্যে একশ বিলিয়ন তারা আছে বলে ধারণা করলেও মাত্র ৫০ মিলিয়নের মতো তারার অবস্থান চিহ্নিত করতে পেরেছেন এখন পর্যন্ত।
এমন করে পুরো ইউনিভার্সে তারার সংখ্যা প্রায় এক কোয়াড্রিলিয়ন (quadrillion)। একের পর ২৪টি শূন্য! আমাদের নিকটতম তারা সূর্যের বয়স মাত্র ৪.৬ বিলিয়ন বছর। ঠিক কাছাকাছি সময়ে ৪.৫ বিলিয়ন বছর আমাদের পৃথিবীর বয়স। পৃথিবীতে প্রাণের উৎপত্তি ৩.৬ বিলিয়ন বছর আগে।
আমাদের মতো মানুষ বা হোমো সেপিয়েন্সের বয়স মাত্র ২ লাখ বছর। মিল্কিওয়েতে যত তারা আছে, একজন মানুষের মাথায় তার চেয়ে বেশি কোষ আছে। আমাদের মাথার ভেতর কত কোষ থাকে? মাথার কোষকে বলে নিউরন। মাথায় থাকে এরকম প্রায় ১০০ বিলিয়নের বেশি নিউরন! আবার এই ১০০ বিলিয়ন নিউরনের পাশে আরো ১০০ বিলিয়ন অন্য ধরনের কোষ থাকে, যাদের বিশাল অংশের কী কাজ, বিজ্ঞানীরা তা এখনো জানেন না। প্রায় ২০০ বিলিয়ন কোষ দিয়ে মস্তিষ্ক তৈরি! মিল্কিওয়েতে তারা আছে ১০০ বিলিয়নের মতো!
মস্তিষ্কের নিউরন কাজ করে এক নিউরনের সঙ্গে আরেক নিউরনের যেখানে জোড়া হয়। একে বলা হয় সিনোপসিস। ইউনিভার্সে যত গ্যালাক্সি আছে, তার চেয়ে মস্তিষ্কে সিনোপসিস আছে আরো বেশি – প্রায় ১২৫ ট্রিলিয়ন! অথচ পুরো ইউনিভার্সে গ্যালাক্সি আছে ১০০ বিলিয়ন। অন্যদিকে মানুষের শরীরে কোষ আছে গড়ে ১০০ ট্রিলিয়নের বেশি!
যাই হোক, মস্তিষ্ক ও মহাবিশ্বের তুলনা আমাদের আলোচনার বিষয় নয়। মানুষ হিসেবে আমাদের যেমন জন্ম ও সমাপ্তি বা মৃত্যুও আছে; তেমনি মহাবিশ্বেরও জন্ম-মৃত্যু আছে। এই মহাবিশ্বের যেমন শুরু আছে, তেমনি একদিন তার শেষও আছে এবং তাই হবে। কিন্তু কেমন করে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের শুরু এবং শেষ গণনা করেছেন?
মহাবিশ্বের বয়স কত? মীমাংসিত উত্তর ১৩.৮ বিলিয়ন বছর। কিন্তু কীভাবে বিজ্ঞানীরা বের করেছেন যে মহাবিশ্বের বয়স এত?
মহাবিশ্বের বয়স অনুমান করার জন্য বিজ্ঞানী অনেকগুলি পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন। প্রতিটি পদ্ধতির শেষে মোটামুটি একটি কাছাকাছি উত্তরের মধ্য দিয়েই বিজ্ঞানীরা নিশ্চিত হয়েছেন মহাবিশ্বের বয়স কত।
তিনটি উপায়ে বিজ্ঞানীরা এটি জানতে পেরেছেন।
এক. মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ দুই . মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ হার তিন. সবচেয়ে প্রাচীন তারাটির বয়স।
মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারণে একটি পদ্ধতি হলো – মহাবিশ্বের প্রাথমিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ। সৃষ্টির শুরুতে মহাবিশ্বের অবস্থা কেমন ছিল তার ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে এই পর্যবেক্ষণ। বিজ্ঞানীরা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন যে, ইউনিভার্স সৃষ্টির শুরুতে বিকিরণ হওয়া মহাজাগতিক মাইক্রোওয়েভ নামের আলোর একটি ক্ষীণ আভা মহাবিশ্বের সর্বত্র এখনো আছে। এই বিকিরণটি বিগ ব্যাংয়ের একটি অবশিষ্টাংশ। এতে মহাবিশ্বের সময় এবং গঠন সম্পর্কে তথ্য রয়েছে। এই বিকিরণের নিদর্শন এবং ওঠানামা বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ল্যাম্বডা-সিডিএম কনকর্ডেন্স মডেল ব্যবহার করে মহাবিশ্বের বয়স অনুমান করতে পেরেছেন। এই পদ্ধতি অনুসারে মহাবিশ্বের বয়স প্রায় ১৩.৮ বিলিয়ন বছর।
ইউনিভার্স বা মহাবিশ্ব প্রতি মুহূর্তে সম্প্রসারিত হয়। তার মানে মহাবিশ্ব প্রতি মুহূর্তে বড় হচ্ছে। কিন্তু মহাবিশ্ব বড় হওয়া বলতে কী বুঝি আমরা এবং কীভাবে এটি হয়?
মহাবিশ্বের সম্প্রসারণ মানে গ্যালাক্সি এবং মহাবিশ্বে থাকা অন্য সবকিছুর মধ্যে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে দূরত্ব বেড়ে যাওয়া। আবার এর মানে এই নয় যে, মহাবিশ্বে থাকা গ্যালাক্সি কিংবা অন্য কাঠামোগুলি একে অপর থেকে দূরে সরে যায়। তাদের মধ্যবর্তী স্থানটি কেবল বেড়ে যেতে থাকে।
মহাবিশ্ব প্রতি মুহূর্তে বড় হয়ে যাচ্ছে, এমন ধারণাটি প্রথম আবিষ্কার করেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল, ১৯২৯ সালে। তিনি পর্যবেক্ষণ এবং প্রমাণ করে দেখান যে, মহাবিশ্ব স্থির নয় – এটি প্রতিমুহূর্তে প্রসারিত হচ্ছে।
কিন্তু কেন এমন মধ্যবর্তী দূরত্ব বেড়ে যায়? এতে মনে করা হয়, মহাবিশ্ব যেন স্ফীত হচ্ছে ক্রমশ।
কারণটি পুরোপুরি জানা না গেলেও বিজ্ঞানীরা মনে করেন – মহাবিশ্ব সম্প্রসারণের কারণ হলো ডার্ক এনার্জি। মহাবিশ্বের সত্তর শতাংশ এই ডার্ক এনার্জি দিয়ে তৈরি। আর ডার্ক ম্যাটার দিয়ে তৈরি প্রায় পঁচিশ শতাংশ। বাকি পাঁচ শতাংশ হলো দৃশ্যমান এবং বিজ্ঞানীদের জানা ম্যাটার। বিশাল পরিমাণ এই ডার্ক এনার্জির আছে নেগেটিভ প্রেশার। ডার্ক এনার্জির ওপর গ্রাভিটির টান কাজ করে না। তাতে দুটো গ্যালাক্সির মধ্যবর্তী ডার্ক এনার্জি সম্প্রসারিত হতে থাকে এবং একটি আরেকটি থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। তার মানে গ্যালাক্সি নিজে সরে না; কিন্তু তার মধ্যবর্তী অদৃশ্য ডার্ক এনার্জি সম্প্রসারিত হতে থাকে, যা গ্যালাক্সি কিংবা ইউনিভার্সের বিভিন্ন নক্ষত্র, ছায়াপথকে দূরে সরিয়ে দেয়। এমন করেই মহাবিশ্ব বিস্তৃত হচ্ছে, আরো বড় হয়ে উঠছে।
জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবল এটি প্রথম পর্যবেক্ষণ করেন। তিনি দেখতে পান যে, দূরের গ্যালাক্সিগুলি একে অপর থেকে যেন দূরে সরে যাচ্ছে। দূরে সরে যাওয়ার এই ব্যাপারটি তিনি বুঝতে পারেন গ্যালাক্সিগুলি থেকে আসা রেডশিফট পরিমাপ করে। রেডশিফট হলো এমন ঘটনা যেখানে একটি বস্তু থেকে আলো বা অন্যান্য ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ দীর্ঘতর তরঙ্গদৈর্ঘ্যরে দিকে স্থানান্তরিত হয়। আলো তখন ইলেকট্রোম্যাগনেটিক বর্ণালির লাল প্রান্তের দিকে চলে যায়। গ্যালাক্সি এবং মহাকাশীয় বস্তু থেকে আসা আলোতে এমন ধরনের রেডশিফট দেখা যায়। হাবলসহ অন্য অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন যে, এটি মহাবিশ্বের সম্প্রসারণের একটি মূল কারণ। কারণ মহাবিশ্ব প্রসারিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দূরবর্তী বস্তুর আলোও প্রসারিত হয়।
মহাবিশে^র প্রসারণের হার একটা ধ্রুবক দিয়ে প্রকাশ করা হয়। একে বলে হাবল ধ্রুবক। এই ধ্রুবক অনুযায়ী দুটি গ্যালাক্সি প্রতি ঘণ্টায় ৪৬২০০ মাইল গতিতে একে অপর থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। এমনভাবে হাবল ধ্রুবক পরিমাপ করে বিজ্ঞানীরা বিগ ব্যাং পর্যন্ত পিছিয়ে মহাবিশে^র বয়স অনুমান করেছেন।
২০১৩ সালে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্ল্যাঙ্ক মহাকাশযান পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয় মহাবিশ্বের বয়স ১৩.৮২ বিলিয়ন বছর। মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারণের আরেকটি উপায় হলো, প্রাচীনতম নক্ষত্রের দিকে তাকানো। ওল্ডেস্ট স্টার।
মহাবিশ্ব এখন যত বড়, শুরুতে এমন ছিল না। আবার প্রথম যে-স্টার, নক্ষত্র কিংবা তারা সেটি তৈরি হয়েছিল বিগ ব্যাংয়ের ১৫৫ মিলিয়ন বছর পর, প্রাচীনতম তারাও মহাবিশ্বের চেয়ে বয়সে কম হতে পারে না। মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারণ করার জন্য বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বে গঠিত প্রথম নক্ষত্রের বয়স বের করার চেষ্টা করেন। প্রথম তারার কিছুদিন আগেই তাহলে মহাবিশ্ব তার যাত্রা শুরু করেছিল।
বিজ্ঞানীরা দেখতে পেয়েছেন ‘গ্লোবিউলার ক্লাস্টার’ নামে কিছু প্রাচীনতম তারা গ্যালাক্সির বাইরে ঘুরে বেড়ায়। এই তারাগুলি কোনো গ্যালাক্সি তৈরি না করেই একসঙ্গে থাকে। এমন তারার ক্লাস্টারে এক মিলিয়ন তারাও থাকে। তারাগুলি মূলত প্রাচীন তারা। মহাবিশ্বের শুরু থেকে তারাগুলি ছিল। একটি নক্ষত্রের জীবনচক্র তার ভরের ওপর নির্ভর করে। উচ্চ ভরের নক্ষত্রগুলি দ্রুতগতিতে জ্বালানি পোড়ায়। আর তাই দ্রুত মারা যায়। বিজ্ঞানীরা তারাগুলির ভর নির্ধারণ করে দেখেছেন কখন গ্লোবিউ ক্লাস্টার গঠিত হয়েছিল। প্রাচীনতম গ্লোবুলার ক্লাস্টারগুলি প্রায় ১৩ বিলিয়ন বছর পুরনো বলে অনুমান করা হয়। এমন করে সবচেয়ে পুরনো তারার বয়সকাল বের করার পদ্ধতি দিয়ে মহাবিশ্বের বয়স নির্ধারণ করেছেন বিজ্ঞানীরা।
মহাবিশ্বের জন্মের বয়স জানা হলো। কিন্তু যে-জিনিসের জন্ম আছে অথবা শুরু আছে, তা কি চিরকাল থাকবে, নাকি তার মৃত্যু আছে, তার শেষ আছে। যদি থেকেই থাকে এমন কিছু, তাহলে মহাবিশ্ব কি অনন্তকালের জন্য থাকবে। নাকি যে মহাবিশ্বের শুরু ছিল, তারও কোনো না কোনো সময় সমাপ্তি ঘটবে এবং ধ্বংস হয়ে যাবে। যদিও প্রশ্নের উত্তরটি বেশ জটিল, কখন মহাবিশ্বের মৃত্যু ঘটবে তা নিশ্চিত করে বলা হয়তো সম্ভব নয়। মহাবিশ্বের ভবিষ্যৎ অনেক কারণের ওপর নির্ভর করে। যেমন : ডার্ক এনার্জি, ডার্ক ম্যাটার এবং মহাবিশ্বের বিভিন্ন পদার্থ এবং শক্তির পরিমাণ ও প্রকৃতির ওপর। সব ব্যাপার বিজ্ঞানীরা এখনো পূর্ণভাবে জানতে পারেননি।
কেমন করে মহাবিশ্বের মৃত্যু হতে পারে তার একটি সম্ভাবনা হলো – মহাবিশ্ব চিরকাল প্রসারিত হতে থাকবে। মহাবিশ্বে থাকা বিলিয়ন তারাগুলির জ্বালানি ক্রমশ ফুরিয়ে যাবে। সঙ্গে ছায়াপথগুলি একে অপর থেকে দূরে সরে যাবে। এমন দূরত্ব বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারাগুলি শীতল এবং অন্ধকার হয়ে উঠবে। এটিকে বিজ্ঞানীরা বলেন বিগ চিল বা বিগ ফ্রিজ। এমন ঠান্ডা হতে হতে মহাবিশ্ব শেষ পর্যন্ত থার্মোডাইনামিক ভারসাম্যের অবস্থায় পৌঁছে যাবে। তারপর তারাগুলির মধ্যে কিংবা মহাবিশ্বের বিভিন্ন কাঠামো এবং উপাদানের মধ্যে আর কোনো কাজ বা পরিবর্তন ঘটতে পারে না কিংবা পারবে না পদার্থবিজ্ঞানের সূত্র অনুযায়ী। বিজ্ঞানীরা একে মহাবিশ্বের তাপমৃত্যু বলেন। এমন করে মহাবিশ্বের নিয়ম অনুযায়ী যেমন করে তার যাত্রা শুরু করেছিল, তেমন করে তার সমাপ্তি ঘটবে।
বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, মহাবিশ্ব সমাপ্তির ক্ষেত্রে আরেকটি ঘটনা ঘটতে পারে। মহাবিশ্ব শেষ পর্যন্ত সম্প্রসারণ বন্ধ করবে। মহাবিশ্ব আর বৃদ্ধি পাবে না, স্ফীত হবে না, মহাবিশ্বে থাকা ডার্ক এনার্জিগুলি তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলবে। এতে পদার্থের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের কারণে মহাবিশ্ব সংকুচিত হতে শুরু করবে। এটিকে বিজ্ঞানীরা বলেন বিগ ক্রাঞ্চ।
এক্ষেত্রে এমন সংকুচিত হয়ে তাহলে মহাবিশ্বের অবস্থান কোথায় যাবে অথবা উপাদানগুলি কোথায় থাকবে! এই ক্ষেত্রে মহাবিশ্বটি ধসে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রথমে এটি আরো গরম এবং ঘন হয়ে উঠবে। তারপর যতক্ষণ না মহাবিশ্ব তার জন্মের সময় বিগ ব্যাংয়ের শুরুতে যেমন একটি একক বিন্দুতে ছিল সে-অবস্থায় না পৌঁছানো পর্যন্ত সংকুচিত হতে থাকবে। এমন সিঙ্গুলারিটিটাই মহাবিশ্বের মৃত্যু।
আরেকটি ঘটনা ঘটতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন। তৃতীয় একটি ঘটনা হলো, মহাবিশ্ব দ্রুত সম্প্রসারিত হবে প্রথমে। এমন সম্প্রসারিত হতে হতে মহাবিশ্বের প্রধান উপাদান ডার্ক এনার্জির বিকর্ষণীয় শক্তির কারণে মহাবিশ্বের বিভিন্ন উপাদান এবং কাঠামো নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে পরস্পর থেকে। মহাবিশ্বে থাকা ম্যাটার একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এটিকে বিজ্ঞানীরা মহাবিশ্বের বিগ রিপ নাম দিয়েছেন। বলা হয়, এই ক্ষেত্রে, মহাবিশ্ব একটি সীমিত সময়ের মধ্যে শেষ হবে। কারণ, মহাবিশ্বের ছায়াপথ থেকে পরমাণু পর্যন্ত সমস্ত কাঠামো এবং উপাদান দ্রুত প্রসারণের কারণে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ধ্বংস হয়ে যাবে।
মহাবিশ্বের সঠিক সময়কাল নির্ভর করে কোন ঘটনাটি ঘটবে তার ওপর। আবার মহাবিশ্বের আকার কেমন সেটার ওপরও নির্ভর করে তার সময়কাল। যদি মহাবিশ্ব সমতল হয় এবং একটি মহাজাগতিক ধ্রুবক দ্বারা প্রভাবিত হয়, তাহলে বিগ ফ্রিজ ঘটনা ঘটার মধ্যে দিয়ে মহাবিশ্বের মৃত্যু হবে। আবার মহাবিশ্ব তার মধ্যে থাকা কাঠামো এবং উপাদান কিংবা পদার্থ দ্বারা প্রভাবিত হলে বিগ ক্রাঞ্চ ঘটনার মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের সমাপ্তি ঘটবে।
ঘটনার সমাপ্তি যেভাবেই ঘটুক না কেন, বিজ্ঞানীরা অনুমান করেন যে, মহাবিশ্ব আরো প্রায় ২২ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত স্থায়ী হবে। কোনো কোনো বিজ্ঞানী ৩০ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত বাঁচার সম্ভাবনার কথা বলেন। তার মানে, মহাবিশ্বের জন্মের পর থেকে ১৩ বিলিয়নের বেশি সময়ে চলে গেছে এবং আরো ২২ বিলিয়ন বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকলে মহাবিশ্বের জন্ম এবং মৃত্যুর মধ্যবর্তী সময়কালকে বলা যাবে ৩৫ বিলিয়ন বছর।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.