মাহবুব উল আলম চৌধুরী ও তাঁর সীমান্ত পত্রিকা

মাহবুব উল আলম চৌধুরীর (১৯২৭-২০০৭) পরিচয় আমাদের কাছে একুশের বিখ্যাত কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’র রচয়িতা হিসেবে। যদিও, একই চট্টগ্রামের মানুষ হওয়ার কারণেই হয়তো, আজো অনেককে দেখি, আমাদের একজন প্রধান কথাসাহিত্যিক

মাহবুব-উল আলমের (মোমেনের জবানবন্দী, মফিজন ও পল্টন জীবনের স্মৃতি খ্যাত) নামের সঙ্গে তাঁর নামটি গুলিয়ে ফেলতে। স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত দৈনিক স্বাধীনতার সম্পাদক হিসেবেও মাহবুব উল আলম চৌধুরী নামটির সঙ্গে কারো কারো পরিচয় থাকতে পারে। তবে ভাষা-শহিদদের নিয়ে লেখা তাঁর ওই দীর্ঘ কবিতাটি উদ্ধার, আশির দশকের শেষদিকে পুস্তকাকারে প্রকাশ (১৯৮৮) এবং তারপর নানা

সভা-অনুষ্ঠানে পাঠের সূত্রে মাহবুব উল আলম চৌধুরী আজ আমাদের কাছে ওই কবিতাটির কবি হিসেবেই সমধিক পরিচিত। ১৯৫২-এর ২১শে ফেব্রুয়ারি ঢাকায় রাষ্ট্রভাষার দাবিতে আন্দোলনরত ছাত্রদের ওপর পুলিশের গুলিবর্ষণ ও তাতে কয়েকজনের নিহত হওয়ার প্রতিবাদে রোগাক্রান্ত শরীরে ওইদিন রাতেই তিনি কবিতাটি লিখেছিলেন (তিনি তখন চট্টগ্রাম জেলা রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক), এবং পরদিন চট্টগ্রামের লালদীঘি মাঠের প্রতিবাদ সভায় তরুণ রাজনৈতিক কর্মী চৌধুরী হারুনুর রশীদ তা পাঠ করেছিলেন। এছাড়াও কবিতাটি ছেপে জনসভায় বিলি করা হয়েছিল। ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় পুলিশ ছাপাখানা থেকে ওই কবিতার সমস্ত কপি বাজেয়াপ্ত এবং কবির নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে এ-সময় আত্মগোপনে যেতে হয়। ফলে চট্টগ্রাম থেকে তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হতে থাকা সীমান্ত সাময়িকপত্রটি বন্ধ হয়ে যায়। মাহবুব উল আলম চৌধুরীর উল্লিখিত প্রতিবাদী কবিতাটির ঐতিহাসিক মূল্য বা গুরুত্ব অস্বীকার না করেও, তাঁর এ-পত্রিকা সম্পাদনা সম্পর্কে আমি আমার আগের এক প্রবন্ধে মন্তব্য করেছি : ‘সমধর্মী কিন্তু প্রভাবের দিক থেকে অনেক বেশি তাৎপর্যপূর্ণ কাজ।’ লিখেছি যে, তাঁর এ ‘অপর অবদানটি সম্পর্কে আমাদের শিক্ষিত সমাজেরও ব্যাপক অংশ আজও বলতে গেলে অনবহিত।’ (‘প্রথম বর্তিকাটি তাঁরাই জে¦লেছিলেন’, বিস্মৃত চিন্তানায়ক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, ঢাকা : ২০০৯, পৃ ৫২)

ভারতভাগ ও পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র তিন মাসের মাথায় ১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে পাকিস্তানের পূর্ব ভূখণ্ডের সীমান্তবর্তী জেলা চট্টগ্রাম থেকে সীমান্ত পত্রিকাটি প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫২ এই পাঁচ বছরই ছিল সীমান্ত-এর আয়ুষ্কাল। প্রথমদিকে পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে মাহবুব উল আলম চৌধুরী ও সুচরিত চৌধুরী দুজনের নাম ছাপা হতো। তৃতীয় বর্ষ থেকে কেবল মাহবুব উল আলম চৌধুরীর নামই ছাপা হয়।  ‘মাসিক’ হিসেবে প্রকাশিত হলেও এর প্রকাশনা যে খুব নিয়মিত ছিল তা নয়। তারপরও সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর ধারণামতে, এই সংক্ষিপ্ত সময়কালে সীমান্ত-এর আটচল্লিশটির মতো সংখ্যা বেরিয়েছিল। যদিও তার সবগুলো তো নয়ই, অধিকাংশ সংখ্যাই সংরক্ষণ বা পরবর্তী সময়ে পুনরুদ্ধার করা যায়নি। ফলে ড. ইসরাইল খান ও জওশন আরা রহমানের সম্পাদনায় প্রকাশিত সীমান্ত সংগ্রহ-এ (২০০৫) যে-তেরোটি সংখ্যা (তারও আবার কিছু খণ্ডিতাকারে) সংকলিত হয়েছে, তার ভিত্তিতেই আমাদের পত্রিকাটির চরিত্র এবং ‘পুরো কার্যক্রম অনুধাবন’ করতে হয়। এই পাঁচ বছর সময়েই পত্রিকাটির অন্তত দুটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল বলে জানা যায়। এই বিশেষ সংখ্যাগুলি প্রকাশের পরিকল্পনা, এমনকি অন্যান্য অর্থাৎ সাধারণ সংখ্যারও বিষয়সূচি ও লেখক তালিকায় দৃষ্টিপাত করলে পত্রিকাটি প্রকাশের উদ্দেশ্য এবং এর সম্পাদকীয় দৃষ্টিভঙ্গি উপলব্ধি করতে কারো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তারপরও আমরা এ-প্রসঙ্গে খোদ সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর বক্তব্য থেকে কিছু অংশ উদ্ধৃত করতে চাই, যা আমাদের পত্রিকাটি প্রকাশের প্রেক্ষাপট এবং উপরিউক্ত সম্পাদকীয় দৃষ্টিভঙ্গি বুঝতে অধিক সহায়তা করবে।

১৯৪৭ সালের নভেম্বর মাসে বের করি ‘সীমান্ত’ – একটি প্রতিবাদী মাসিক সাহিত্য পত্রিকা। আমরা যারা কমিউনিস্ট পার্টির নেতৃত্বে দুনিয়া জুড়ে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদকে বিতাড়িত করার সংগ্রামে জনগণকে সামনে নিয়ে এসেছি, সাম্প্রদায়িকতার অভিশাপ থেকে দেশকে মুক্ত করার সংগ্রাম করেছি, শিল্প [-] সাহিত্যকে জনগণের কাছে এনে তাদের রুটি-রুজির অধিকারকে সুনিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি, বাম চেতনার বিকাশের ক্ষেত্রে কাজ করেছি – তারা দেশকে এই পশ্চাদপদতার দিকে ঠেলে দেওয়াকে কোনোভাবেই গ্রহণ করতে পারিনি। অসাম্প্রদায়িক মানবতাবাদী সংস্কৃতির চর্চা, জাতীয় প্রগতি, বিশ^শান্তি, শিল্পী [-] সাহিত্যিকের সৃষ্টি ক্ষমতাকে মানুষের কল্যাণে নিয়োজিত করা, বাঙলা সাহিত্যের গৌরবোজ্জ্বল ঐতিহ্যকে মূলধারায় এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, সবরকম বিকৃতি, কুসংস্কার, কূপমণ্ডূকতা এবং জাতি ধর্ম বর্ণ ও সম্প্রদায়গত বিভেদের বিরুদ্ধে ‘সবার উপরে মানুষ সত্য’ এই আদর্শকে উচ্চে তুলে সৃষ্টিশীল সাহিত্যচর্চাকে উৎসাহিত করাই ছিল ‘সীমান্তে’র মূল উদ্দেশ্য। (সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ৬)

রাজনৈতিক-সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির দিক থেকে মাহবুব উল আলম চৌধুরী নিজে এবং সম্ভবত তাঁর সহযোগীরাও কেউ কেউ ছিলেন বাম-মনোভাপন্ন, কমিউনিস্ট আন্তর্জাতিকতার নীতিতে বিশ^াসী। তখনকার গোপন কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গেও কোনো না কোনোভাবে মাহবুব উল আলম চৌধুরী যুক্ত ছিলেন। তাঁর নিজের বক্তব্য ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ থেকে যা প্রতিভাত হয়। তবে পত্রিকাটিকে তাঁরা মতাদর্শগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে মোটামুটি উদার মানবতাবাদী ধারায় পরিচালিত করতে চেয়েছেন। ১৯৪৭-উত্তর সাম্প্রদায়িক আবহাওয়ায় যখন এদেশের

লেখক-সাহিত্যিকদের একটা বড় অংশ বাংলা সাহিত্যের আবহমান ঐতিহ্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে নতুন রাষ্ট্র পাকিস্তানে ইসলামী উপাদান সমৃদ্ধ এক নতুন – তাঁদের ভাষায় পাকিস্তানি সাহিত্য-সংস্কৃতি সৃষ্টির উন্মাদনায় মেতে উঠেছেন কষড়ংং

সে-সময়টিতে, রাষ্ট্রনৈতিক বিভাজনের বাস্তবতাকে মেনে নিয়েও, যাঁরা হিন্দু-মুসলমান মিলিত উপাদানে সমৃদ্ধ বাংলা সাহিত্যের চর্চাকে এগিয়ে নিতে চেয়েছেন, তাঁদের সবচেয়ে বলবন্ত মুখপত্র হয়ে উঠেছিল সীমান্ত। এর অতিরিক্ত পত্রিকাটির আরেকটি উদ্দেশ্যও ছিল, যা একে সমকালীন সাময়িকপত্রের সারিতে অনন্যতা দিয়েছিল। পত্রিকার এই উদ্দেশ্য সম্পর্কে দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যায় লেখা হয়েছিল :

‘সীমান্ত’ সেই সাহিত্যই সৃষ্টি কোরবে [য. প্রা.] যা শুধু সমাজের ছবি এঁকেই ক্ষান্ত থাকবে না, সামাজিক প্রগতির পথেরও সন্ধান দেবে। সমাজের প্রত্যেকটি শিল্পী, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবীকে সীমান্তের পাশে সংহত কোরে [য. প্রা.], সমাজের মানুষের দাসত্ব-মুক্তির পথেই ‘সীমান্তে’র সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অভিযান সার্থক হবে একথা আজ জোরের সঙ্গেই বলা যায়। শিল্পী-সাহিত্যিকদের পক্ষ থেকে এটা নিশ্চয়ই আশা করা যেতে পারে যে সাহিত্য ক্ষেত্রে ‘সীমান্তে’র ভূমিকা হবে প্রগতিশীল মুখপত্রের ভূমিকা। (‘আলোচনা’, সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ১৭১-৭২)

ঘোষিত এই লক্ষ্য অর্জনের সামর্থ্য পত্রিকাটির ছিল কি না কিংবা কতটা ছিল, বর্তমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতেই পারে। তাঁদের প্রগতি-ভাবনার মধ্যেও হয়তো কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। কিন্তু তাঁদের উদ্দেশ্যের সততা ও নিষ্ঠার  প্রমাণ পাওয়া যায় পত্রিকার প্রাপ্ত সংখ্যাগুলির বিষয় পরিকল্পনা ও পত্রস্থ রচনাগুলিতে চোখ বুলালে। গণমানুষের স্বার্থের প্রতি প্রত্রিকাটির এই দায়বদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে সেই ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পত্রিকার দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যায় যেখানে রাষ্ট্রভাষার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে লেখা হয় : ‘রাষ্ট্র যদি জনসাধারণের হয় তবে জনসাধারণের ভাষাই রাষ্ট্রে স্থান পাবে। … মানুষের চোখ উপড়িয়ে তাকে যেমন সুন্দর করে তোলা যায় না, জনের ভাষাকে বাদ দিয়ে জনের সর্বাঙ্গীণ উন্নতি তেমন অসম্ভব।’ (‘রাষ্ট্রভাষা’, সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ১০৬)

মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে তৎকালীন পূর্ব বাংলা বা পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিমবঙ্গের লেখকদের মৌলিক রচনা ও অনুবাদ প্রকাশিত হয় এ-পত্রিকায়। পত্রিকার প্রথম বা সূচনা সংখ্যায় (কার্তিক ১৩৫৪) তৎকালীন প্রাদেশিক শিক্ষামন্ত্রী মুহম্মদ হবীবুল্লাহ বাহারের একটি শুভেচ্ছা বাণী ছাপা হয়। যাতে তিনি বলেন, ‘বহুদিন আগে চট্টগ্রাম থেকে আর একখানি কাগজ বেরিয়েছিল [,] নাম ছিল ‘প্রান্তবাসী’। যারা মধ্যদেশে বাস করে তাদের চেয়ে চিরদিনই বেশী প্রাণশক্তির পরিচয় দেয় সীমান্তের লোক।’ এবং ‘বাঙ্গালা সাহিত্যের কারবার এখনো মধ্যবিত্ত সমাজকে নিয়ে। জনগণমনকে সাহিত্যে প্রতিফলিত করা, তারই জন্য পথ রচনা করুক ‘সীমান্তে’র অগ্রপথিকরা।’ [সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ২৮] পত্রিকাটি সম্পর্কে সাহিত্য-অন্ত্যপ্রাণ হবীবুল্লাহ বাহারের এ দুটি মন্তব্য বিশেষ প্রণিধানযোগ্য মনে করি। প্রথম সংখ্যায়ই ‘বাণী’ শিরোনামে প্রকাশিত চার লাইনের একটি পদ্য-রচনায় অন্নদাশঙ্কর রায় লেখেন : ‘যে কথা বলিবার বলিব ধীরে/ বলিব বিনা অপচয়ে।/ শুনিবে যারা তারা শোনাবে সবে/ রহিব এ প্রত্যয়ে।’ [ওই, পৃ ৪৩] এছাড়াও প্রথম বর্ষ প্রথম সংখ্যায় আরো যাঁদের লেখা ছাপা হয়েছিল তাঁরা হলেন – আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ, আশুতোষ চৌধুরী, মাহবুব-উল আলম, ডক্টর মুহম্মদ এনামুল হক, মঈনুদ্দীন, জীবনকুমার চক্রবর্তী, মাহবুব উল আলম চৌধুরী, সুবোধরঞ্জন রায়, সুধাংশু সরকার, সায়ফুল আলম, রেবতীমোহন চৌধুরী, আবুল ফজল, শুভাশীষ চৌধুরী, পরিমল কান্তি রায়, ননী সেনগুপ্ত ও প্রভাতকুমার সেন। এ-সংখ্যাতেই ‘পাকিস্তানের আসল রূপ’ শিরোনামে কবি মঈনুদ্দীনের একটি ক্ষুদ্র কাব্যধর্মী গদ্যরচনা বা আসলে কথিকা ছাপা হয়, যে-লেখাটির সমাপ্তি তিনি টানেন এ-কথাগুলো দিয়ে :

সে হিন্দুস্তান হোক – সে পাকিস্তান হোক – আজাদী আজ ঘরের ভেতর ঢুকে পড়েছে। একে বাঁচিয়ে রাখবে হিন্দুস্তানের হিন্দু-মুসলমান, পাকিস্তানের হিন্দু-মুসলমান। সকল দুর্নীতির আজ অবসান হোক। মাথা উঁচু কোরে [য. প্রা.] সেখানে দাঁড়িয়ে থাকবে হিন্দু-মুসলমান। বেঁচে থাকবে সেখানে হিন্দু-মুসলমান।

এদের মিলিত চেষ্টায়-ই দেশ জয়যুক্ত হবে। সমৃদ্ধিশালী হবে। গাছে-গাছে ডাকবে পাখী। শাখে শাখে ফুটবে ফুল। এই-ই পাকিস্তানের আসল রূপ।

সূচনা সংখ্যা সম্পর্কে উপরোল্লিখিত তথ্যগুলিই সীমান্ত পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি বা দৃষ্টিভঙ্গি সম্পর্কে আমাদেরকে একটা স্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করে। কবি মঈনুদ্দীনের পূর্বাপর পরিচয় একজন পাকিস্তানবাদী কবি হিসেবে। কিন্তু দেশভাগ তথা পাকিস্তান সৃষ্টির মাত্র তিনমাসের মাথায় লেখা তাঁর রচনাটিতেও একটি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিময় সমৃদ্ধ রাষ্ট্রের প্রত্যাশাই ব্যক্ত হয়েছে।

ওপরে যাঁদের নাম উল্লিখিত হলো তাঁরা ছাড়াও

সীমান্ত-এর বিভিন্ন সংখ্যায় আর যাঁদের রচনা ও ভাষণ মুদ্রিত/পুনর্মুদ্রিত হয় তাঁরা হলেন (পূর্ব বাঙলা থেকে) ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, সুফিয়া কামাল, অধ্যাপক মুহম্মদ মনসুরউদ্দীন, জসীমউদ্দীন, শওকত ওসমান, অধ্যাপক যোগেশচন্দ্র সিংহ (সাধনা ঔষধালয় খ্যাত), আবু জাফর শামসুদ্দীন, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, সুচরিত চৌধুরী, ওহীদুল আলম, আবদুল বারী ওয়ারেসী, অমিয়ভূষণ চক্রবর্তী, মোহাম্মদ ফেরদাউস খান, মুনীর চৌধুরী, সানাউল হক, (কবি) মতিউল ইসলাম, (কবি) আতাউর রহমান, শামসুদ্দীন আবুল কালাম, শামসুর রাহমান, আলাউদ্দিন আল আজাদ, আবদুল্লাহ আল মুতী (শরফ উদ্দীন), গোপাল বিশ^াস, এবনে গোলাম নবী, কেশব চৌধুরী, বিজিতকুমার দত্ত, অচিন্ত্য চক্রবর্তী, ইমামুর রশিদ, শুভাশিস চৌধুরী, শহীদুল্লাহ সাবের (শহীদ সাবের), সমরেন্দ্র দত্ত, উৎপল চৌধুরী, সয়ীদুল হাসান, আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ, আবদুল গনি হাজারী, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, আজিজ মিসির (তখন সিরাজুল ইসলাম নামে লিখতেন), দেবপ্রিয় বড়ুয়া, মুর্তজা বশীর, আইনুন্নাহার, নূরুন্নাহার প্রমুখ। আর পশ্চিম বাংলার লেখকদের মধ্যে সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, সুশোভন সরকার, গোপাল হালদার, বিমলচন্দ্র ঘোষ, সুভাষ মুখোপাধ্যায়, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, আবু সয়ীদ আইয়ুব, বিষ্ণু দে, মঙ্গলাচরণ চট্টোপাধ্যায়, জীবন চক্রবর্তী, সলিল চৌধুরী, কিরণশঙ্কর সেনগুপ্ত, বিভূতি চৌধুরী, সুলেখা সান্যাল, রবীন্দ্র মজুমদার, রামেন্দ্র দেশমুখ, রাম বসু, পূর্ণেন্দু শেখর পত্রী (পূর্ণেন্দু পত্রী) প্রমুখ। সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরী, সুচরিত চৌধুরী, শওকত ওসমানসহ কয়েকজন নানা (ছদ্ম) নামে এমনকি একই সংখ্যায় একাধিক লেখাও লিখেছেন। বিদেশি বা বিভাষী যেসব লেখকের রচনা অনুবাদ করে সীমান্ত-তে ছাপা হয়েছে তাঁদের মধ্যে ছিলেন ইকবাল, কৃষণ চন্দর, ইলিয়া এরেনবুর্গ, হাওয়ার্ড ফাস্ট, ক্রিস্টোফার কডওয়েল, জন কনফোর্ড, পি লুকনিৎসকি, জন স্ট্রাচি, নাজিম হিকমত, মুলকরাজ আনন্দ, বলবন্ত সিং, খাজা আহমদ আব্বাস, ইসমত চুঘতাই প্রমুখ। স্বনামে ও বেনামে এসব রচনা অনুবাদ করেছেন শওকত ওসমান, সানাউল হক, আহমেদুল কবির, আবু মোহাম্মদ শাহাবুদ্দীন, ইফতেখারুল ইসলাম ও আরো কয়েকজন। (লেখক-অনুবাদকদের নামের এ-তালিকা আমরা পাই মাহবুব উল আলম চৌধুরীর দেওয়া বিবরণ থেকে, কারণ পত্রিকার বেশিরভাগ সংখ্যাই দেখার সুযোগ আমাদের হয়নি।) শওকত ওসমানের লালসালু উপন্যাসটির কয়েক কিস্তি সীমান্ত-এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি আবার তাঁরই অনুবাদে রুশ লেখক পি লুকনিৎসকির নিশো উপন্যাসটিও ধারাবাহিকভাবে প্রকাশ পায়। এখানে উল্লেখ্য, শওকত ওসমান তখন চট্টগ্রামেই থাকতেন, স্থানীয় কমার্স কলেজে শিক্ষকতা করতেন। সীমান্ত পত্রিকা ও তাকে কেন্দ্র করে অন্য নানা উদ্যোগ-আয়োজনে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ অংশগ্রহণ ছিল তাঁর। মূল রচনা ছাড়াও, সাময়িক প্রসঙ্গের আলোচনা,

বই-পত্রিকা, গানের রেকর্ড, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও চলচ্চিত্রবিষয়ক সংবাদ ও পর্যালোচনা, পাঠকের মতামত ইত্যাদি বিভাগ নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বা আদর্শ সাময়িকপত্র হয়ে ওঠার প্রয়াস সীমান্ত-এর প্রাপ্ত সংখ্যাগুলির মধ্যে পরিদৃষ্ট হয়। এমনকি পত্রিকায় ছোটদের বিভাগও চালু করেছিলেন তাঁরা।

১৯৫০-এর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার পরপরই সীমান্ত পত্রিকা ‘দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যা’ নামে একটি বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করে। ১৩৫৭ বঙ্গাব্দের বৈশাখ সংখ্যা হিসেবে প্রকাশিত এ-সংখ্যাটি ছিল পত্রিকার তৃতীয় বর্ষের প্রথম সংখ্যা। তৎকালীন পূর্ব কিংবা পশ্চিমবঙ্গে আর কোনো পত্রিকা তখন পর্যন্ত এরকম কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল বলে আমাদের জানা নেই। সীমান্ত-এর এই দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যায় যাঁরা লিখেছিলেন এবং অন্য যাঁদের লেখা এতে পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল তাঁদের মধ্যে ছিলেন মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আবুল ফজল, অন্নদাশঙ্কর রায়, শওকত ওসমান, যোগেশচন্দ্র সিংহ, সুচরিত চৌধুরী (ছদ্মনামে), মতিউল ইসলাম, ওহীদুল আলম, মাহবুব উল আলম চৌধুরী প্রমুখ। দেশভাগ, সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর দেশত্যাগ ও দাঙ্গার পটভূমিতে লেখা মাহবুব উল আলম চৌধুরীর কবিতাটি (‘স্মৃতি নেই : হাসিনা নেই : কাকাবাবু নেই’) ছিল দীর্ঘ ও মর্মস্পর্শী। এছাড়া শওকত ওসমানের অনুবাদে কৃষণ চন্দরের একটি গল্পও (‘দুই অমৃতসর’) সংখ্যাটিতে ছাপা হয়েছিল।

সীমান্ত-এর উল্লিখিত দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যার প্রথম রচনাটি ছিল মোতাহের হোসেন চৌধুরীর, একটি সুদীর্ঘ প্রবন্ধ, যার শিরোনাম ছিল ‘পশ্চিমবঙ্গের কবি, শিল্পী-সাহিত্যিকদের নিকট একটি আবেদন’। মৃত্যুর পরে প্রকাশিত লেখকের সুবিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ সংস্কৃতি-কথায় (১৯৫৮) এ-লেখাটি পরিবর্তিত শিরোনামে (‘একটি নিবেদন’) অন্তর্ভুক্ত হয়। কিন্তু সে-সময় কী কারণে জানি না, প্রবন্ধটির বড় অংশ বর্জিত হয়। সদ্য-সামরিক শাসনোত্তর পরিস্থিতিগত বাধ্যতা বা বিবেচনাও এর কারণ হতে পারে। মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর এ-প্রবন্ধে ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশেই সাম্প্রদায়িক শক্তির অপতৎপরতা মোকাবিলায় শিল্পী-সাহিত্যিকদের কর্তব্য সম্বন্ধে বলতে গিয়ে ‘এক বিরাট শান্তিকামী প্রতিষ্ঠান’ গড়ে তোলার আবশ্যকতার কথা লিখেছিলেন। ‘দৃঢ়হস্তে দুষ্কৃতকারীদের দমন এবং

নিপীড়িত ও আতঙ্কগ্রস্ত মানুষের মনে আশা ও বিশ্বাস উৎপাদন’ই হবে যার উদ্দেশ্য। তবে তাঁর মতে, এই প্রতিষ্ঠান বা ‘শান্তিফৌজ’ গঠন করতে হবে ‘রাজনীতি ও ধর্মের নামে নয়, মনুষ্যত্বের নামে’। এ বিষয়ে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করে তিনি আরো লিখেছিলেন, ‘আমি রাজনীতি ও ধর্মের নামে এগিয়ে আসতে নিষেধ করছি এইজন্য যে, দেখতে পাওয়া গেছে, এই দুই নামে মানুষ সংকীর্ণ ও ক্ষুদ্রমনা হয়ে পড়ে, মানুষের ভেতরের মহান  প্রেরণা নষ্ট হয়ে যায় এবং মানুষ দলগত স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠতে পারে না।’ [সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ২২২] সময়ের ব্যবধানে মোতাহের হোসেন চৌধুরীর সে বক্তব্যের তাৎপর্য কি আমরা আজ আরো  গভীরভাবে উপলব্ধি করছি না?

প্রবন্ধে ব্যক্ত মোতাহের হোসেন চৌধুরীর আহ্বান বাস্তব রূপ পেয়েছিল সমসময়ে চট্টগ্রামে ‘শান্তি সম্মেলন’ নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা এবং তরুণদের নিয়ে ‘শান্তি ফৌজ’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী গঠনের মধ্য দিয়ে। দাঙ্গা প্রতিরোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাই ছিল যার উদ্দেশ্য। এদেশের আর কোথাও সেদিন অন্তত ঘোষিতভাবে এমন সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী সাংগঠনিক উদ্যোগের কথা আমাদের জানা নেই। সীমান্ত-এর সঙ্গে যুক্তরাই ছিলেন মূলত এর উদ্যোক্তা। রাজনীতিক রফিউদ্দিন সিদ্দিকীকে সভাপতি করে গঠিত এই সংগঠনের সম্পাদক বা কর্ণধারের দায়িত্বে ছিলেন মাহবুব উল আলম চৌধুরী। সংগঠন থেকে মহল্লায় মহল্লায় গানের স্কোয়াড নিয়ে গিয়ে তাঁরা সেদিন শান্তি ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির আহ্বান এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষকে অভয়বাণী শুনিয়েছিলেন। তাঁদের গাওয়া তেমন একটি গানের কথা ছিল এমন : ‘ও ভাই দেশ ছেড়ে যাইও না/ এক ভাই যখন বেঁচে আছি আর কোনো ভয় কইরো না।’ এ-গানের কথাগুলিও মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা।

মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর উল্লিখিত প্রবন্ধে পশ্চিমবঙ্গের কবি-শিল্পী-সাহিত্যিকদের (প্রবন্ধে তিনি বিশিষ্ট কয়েকজনের নাম উল্লেখ করেন, তাঁরা হলেন : সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার, অন্নদাশঙ্কর রায়, সুশোভন সরকার, সুধীন দত্ত, যামিনী রায়, বিষ্ণু দে, প্রেমেন্দ্র মিত্র, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় ও মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়) প্রতি ‘দলাদলি ভুলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার বিরুদ্ধে একটা ইউনাইটেড ফ্রন্ট বা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তোলা’র আহ্বান জানিয়ে লেখেন, ‘বর্বরতা যে কারণেই ঘটুক না কেন তা বর্বরতাই, … ওখানে আগে হয়েছে, এখানে পরে হচ্ছে, ওখানকার তুলনায় এখানকার মৃত্যুর হার অনেক কম, এ-ধরনের জঘন্য উক্তি শুনে-শুনে মন বিষিয়ে উঠল – আর সহ্য হয় না।’ [সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ২২৪] মোতাহের হোসেন চৌধুরী যেমন নিজ অন্তঃপ্রেরণা থেকে খানিকটা, তেমনি, আমরা সহজেই অনুমান করতে পারি, সম্পাদক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর তাগিদেও প্রবন্ধটি লিখেছিলেন। কারণ সাম্প্রদায়িক উত্তেজনাময় সে-পরিবেশে এমন বক্তব্য ছাপার মতো পত্রিকা কি এপার বাংলা কি ওপার বাংলায় আর দু-একটিও ছিল কি না সন্দেহ। 

সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ বা মোকাবিলায় চট্টগ্রামের অভিজ্ঞতা উল্লেখ করে মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর প্রবন্ধে লিখেছিলেন, ‘এখন আমি পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী ও সাহিত্যিকদের একটা সুসংবাদ দিচ্ছি। আশা করি তাঁরা সংবাদটি পেয়ে খুশি হবেন। আমাদের চাটগাঁ শহরের তরুণ শিল্পী ও সাহিত্যিকরা মিলে এই ধরনের একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। তার নাম দেওয়া হয়েছে ‘শান্তিসম্মেলন’। এই প্রতিষ্ঠানের তরফ থেকে একটি শান্তি-ফৌজও গড়া হয়েছে। তাঁরা মহল্লায় মহল্লায় শান্তির বাণী প্রচার করছেন, এবং যাতে দুষ্কৃতকারীদের মনে ভয় এবং সংখ্যালঘুদের মনে আশা ও বিশ^াসের সঞ্চার হয় তার ব্যবস্থা করছেন। তরুণ শিল্পী ও সাহিত্যিকদের সজীব মনুষ্যত্ববোধে আমরা সকলেই মুগ্ধ। নিরাশার আঁধারে তাঁরাই আমাদের আশার আলো।’ [সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ২২৩]

সীমান্ত-এর দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যার দ্বিতীয় রচনাটি ছিল আবুল ফজলের একটি নাতিদীর্ঘ প্রবন্ধ, নাম ‘ইতিহাসের আহ্বান’। এতে ১৯৫০-এর দাঙ্গা পরিস্থিতিতে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্র ও তরুণ সমাজের নিষ্ক্রিয় ভূমিকার উল্লেখ করে তিনি তাঁর হতাশা ও ক্ষোভ ব্যক্ত করেন। প্রবন্ধে তিনি লেখেন, ‘পাকিস্তানের এখানে ওখানে যখন আগুন লেগেছিল – সাম্প্রদায়িক আগুন, পাকিস্তানের অসহায় নাগরিকের ঘর যখন দুর্বৃত্তের হাতের আগুনে জ্বলছিল, নিরীহ নিরপরাধ নাগরিকের ওপর যখন মুষ্টিমেয় গুপ্ত হত্যাকারীর কাপুরুষোচিত আক্রমণ চলছিল, তখন তারা পূর্বের মতো বিদ্যুদ্বেগে সাড়া দেয়নি, বজ্রশক্তিতে রুখে দাঁড়ায়নি দুর্বৃত্তের সামনে এসে, ছুটে বের হয়নি ঘর থেকে পথে। ঘর ছেড়ে, হোস্টেল ছেড়ে তারা কেন দলে দলে বেরিয়ে এলো না, এগিয়ে এলো না বাইরে, কেন ছুটে গেল না হিন্দু প্রতিবেশীর ঘরের দুয়ারে, সতীর্থ হিন্দু ছাত্রদের কাছে? কেন দাঁড়ালো না দলে দলে রাস্তার পাশে ও পথের মোড়ে মোড়ে

দুর্বৃত্তের হাত থেকে অসহায় পথচারীকে বাঁচাবার জন্যে?’ [সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ২৩২] আবুল ফজলের মতে, ‘এরকম কাণ্ডজ্ঞানহীন সর্বনাশা আগুনের সামনে দাঁড়িয়ে নিষ্ক্রিয় দর্শকের ভূমিকা, নিজের মনুষ্যত্ব ধর্ম ও রাষ্ট্রের প্রতি বিশ^াসঘাতকতা ছাড়া আর কিছুই নয়।’ [ওই, পৃ ২৩১]

দেখা যাচ্ছে সাম্প্রদায়িকতা মোকাবিলায় মোতাহের হোসেন চৌধুরী ও আবুল ফজল আমাদের এই দুই মনীষী লেখকের উভয়েই মৌখিক প্রতিবাদ (ভাষণ-বিবৃতি) বা প্রতীকী কর্মসূচি (যেমন : মানব-বন্ধন)  পালনের চেয়ে, বিশেষ করে তরুণদের উদ্যোগে সক্রিয় প্রতিরোধ গড়ে তোলার ওপর অধিক জোর দিয়েছেন। আর এখানে তাঁদের সঙ্গে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর চিন্তার মিল আমরা লক্ষ করি। উল্লেখ্য, আবুল ফজল ও মোতাহের হোসেন চৌধুরী দুজনই তাঁরা চট্টগ্রাম কলেজে মাহবুব উল আলম চৌধুরীর শিক্ষক ছিলেন। অন্যান্য উপাদানের মতো এ দুজন শিক্ষকের প্রভাবও মাহবুব উল আলম চৌধুরীর মানস গঠনে প্রভাব ফেলে থাকতে পারে।

সীমান্ত-এর এই দাঙ্গাবিরোধী সংখ্যার প্রশংসা করে ওই বছরই কলকাতার পরিচয় পত্রিকায় (শ্রাবণ ১৩৫৭) গোপাল হালদার লেখেন : 

… পূর্ববাঙলায় দাঙ্গা-বিরোধী মানুষ আছেন এবং তাঁরা আপনাদের সেই মতামত ঘোষণা করতে ভীত নন। এই সংবাদ আমরা পশ্চিমবাঙলার মানুষরা কয়জন জানি? কয়জন তা বিশ^াস করি? তবু সেই অভ্রান্ত ঘোষণা নিয়ে এসেছে ‘সীমান্ত’ …। পশ্চিমবাঙলা থেকে এমনি কোনো ‘দাঙ্গা-বিরোধী সংখ্যা’র আশ^াস দিয়ে কোনো সাময়িকী পূর্ববাঙলায় গিয়েছে কিনা  জানি না। এ প্রশ্ন তুলতেও ভয় পাই। কারণ তৎক্ষণাৎই উঠে পড়বে এই তর্ক – কোন বাঙলা কতটা দাঙ্গামুখী, তারপর কে ঢিল ছুঁড়েছিল, প্রথম কবে; আর কারা হত্যা করেছে বেশি, কারা সেদিকে কতটা পিছিয়ে আছে। অসহ্য ঘৃণার সঙ্গে এ তর্ক বর্জন করতে চাই।

… পূর্ব বাঙলার পূর্ব-সীমান্ত থেকে ‘সীমান্ত’ পত্রের আহ্বান আমরা শুনতে পেলাম …। সূর্য পূর্ব দিকেই ওঠে। অন্ধকারের মধ্যেও এই আলোকচ্ছটা সেখানেই আজ বাঙালি

সংস্কৃতি-সৈনিকেরা দেখতে পেল।

(উদ্ধৃত : সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ১৩-৪)

দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের ধ্বংসযজ্ঞ এবং হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে আমেরিকার পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে কয়েক লক্ষ নিরীহ ও বেসামরিক মানুষের হতাহতের ঘটনার অভিজ্ঞতায় যুদ্ধাবসানে দুনিয়া জুড়েই শান্তির জন্য আকাক্সক্ষা এবং পারমাণবিক অস্ত্রপ্রতিযোগিতার বিরুদ্ধে প্রবল জনমত গড়ে ওঠে। এরই পটভূমিতে ১৯৫০ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বিশ^শান্তি পরিষদ। এই সংস্থাটির গঠন ও প্রসারের নেপথ্যে তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন ও অন্যান্য দেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও কর্মীরাই  মুখ্য ভূমিকা পালন করলেও, যুদ্ধ ও সাম্রাজ্যবাদবিরোধী চেতনা থেকে সারাবিশে^ই অনেক দলনিরপেক্ষ লেখক-শিল্পী-বিজ্ঞানী-চিন্তাবিদ তথা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি এই সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন। বিশিষ্ট পদার্থবিজ্ঞানী জুলিও কুরিকে পরিষদের প্রথম সভাপতি এবং ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিঙ্কিতে এর সদর দফতর স্থাপন করা হয়। ভারত ও পাকিস্তানেও বিশ^শান্তি পরিষদের কার্যক্রম বিস্তৃত হয়। চট্টগ্রামেও বিশিষ্ট নাগরিক আবদুল হক দোভাষকে সভাপতি ও মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ^শান্তি পরিষদের শাখা গঠিত হয়। পরিষদের উদ্যোগে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো চট্টগ্রামেও আণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধকরণের দাবিতে স্বাক্ষর সংগ্রহ অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে অনুষ্ঠিত বিশ^শান্তি সম্মেলনে মাহবুব উল আলম চৌধুরী আমন্ত্রিত হন। কিন্তু তাঁর পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত থাকায় তিনি সে-সম্মেলনে যোগ দিতে পারেননি।

সীমান্ত পত্রিকার নানা সংখ্যায় যুদ্ধের বিরোধিতা ও শান্তির আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করে প্রবন্ধ, কবিতা, গল্প ইত্যাদি ছাপা হয়। এর কিছু রচনা ছিল মৌলিক, কিছু অনূদিত। যেমন দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সংখ্যায় সৈয়দ জামাল আহমেদের লেখা প্রবন্ধ ‘সাহিত্য সংস্কৃতি ও বিশ^শান্তি’, তৃতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সংখ্যায় মাহবুব উল আলম চৌধুরী-অনূদিত কৃষণ চন্দরের ‘কোরীয় রণাঙ্গনে আমেরিকার প্রথম নিহত সৈনিকের প্রতি খোলা চিঠি’, সুমিতা মুৎসুদ্দি-অনূদিত পল রবসনের ভাষণ, তৃতীয় বর্ষ পঞ্চম সংখ্যায় গোপাল বিশ^াস-অনূদিত ইলিয়া এরেনবুর্গের প্রবন্ধ ‘যুদ্ধকে আমরা ঠেকাবই’

প্রভৃতি।

সীমান্ত পত্রিকাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা সাংস্কৃতিক বলয় এবং তাঁদের আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়েই চট্টগ্রামে প্রান্তিক নবনাট্য সংঘ গঠিত হয়। ভারতীয় গণনাট্য সংঘের (আইপিটিএ) ঐতিহ্যের ধারায় গণমুখী ও প্রতিবাদী নাটক মঞ্চায়ন তথা

সংস্কৃতিচর্চাই ছিল এই সংগঠনটির উদ্দেশ্য। পাকিস্তান সৃষ্টির পর সেই গোড়ার দিনগুলিতে অনেকটা প্রতিকূল বাস্তবতায় চট্টগ্রামের মতো প্রান্তিক শহরে অবস্থিত এই সংগঠনটি দেশের নাট্য-আন্দোলন কিংবা, আরো বড় অর্থে বলা যায়,

সংস্কৃতিচর্চায় তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছিল। ১৯৫১ সালে চট্টগ্রামে, ১৯৫২ সালে কুমিল্লায়, ১৯৫৪ সালে ঢাকায় এবং ১৯৫৭ সালে কাগমারিতে অনুষ্ঠিত সাহিত্য-সাংস্কৃতিক সম্মেলনের, বিশেষ করে সাংস্কৃতিক পর্বে, সংগঠনগত বা ব্যক্তি পর্যায়ে তাঁদের ভূমিকা যার প্রমাণ দেয়। এর মধ্যে প্রথম সম্মেলনটি আয়োজনের ভাবনা ও আয়োজনের কৃতিত্ব প্রধানত সীমান্ত পত্রিকা বা এর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের। ১৯৫১ সালের ১৬ থেকে ১৮ই মার্চ চট্টগ্রামের হরিখোলা মাঠে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলন উদ্বোধন করেন আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ। তিনিই ছিলেন সম্মেলনের মূল সভাপতি। আর অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন আবুল ফজল। এছাড়া সম্মেলনে আরো যাঁরা যোগ দেন – বিভিন্ন অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন কিংবা চিত্র প্রদর্শনী ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন তাঁরা হলেন বেগম সুফিয়া কামাল, আবুল ফজল, শওকত ওসমান, মোতাহের হোসেন চৌধুরী, আলাউদ্দিন আল আজাদ, মুস্তাফা নূরউল ইসলাম, আমিনুল ইসলাম, বিজন চৌধুরী, হামিদুর রহমান, কলিম শরাফী প্রমুখ। সম্মেলনের সাফল্য কামনা করে বাণী দিয়েছিলেন ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ, অন্নদাশঙ্কর রায় ও ড. মুহম্মদ এনামুল হক। আমন্ত্রিত হয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এই সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছিলেন বিখ্যাত সাংবাদিক ও কলকাতার দৈনিক সত্যযুগ-এর সম্পাদক সত্যেন্দ্রনাথ মজুমদার। এছাড়া শিল্পীদের মধ্যে সুচিত্রা মিত্র, দেবব্রত বিশ^াস, ওস্তাদ বাহাদুর হোসেন খান, হেনা বর্মণ এবং সলিল চৌধুরীর নেতৃত্বে গণনাট্য সংঘের একটি স্কোয়াড এই সম্মেলনে আসেন এবং

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সংগঠিত উদ্যোগের দিক থেকে যদি বিচার করি তবে ১৯৪৭-উত্তর পূর্ব বাংলায় অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ও প্রগতিমুখী সাহিত্য-সংস্কৃতি আন্দোলনের সূচনাবিন্দু বা প্রথম মাইলস্টোন বলা যায় ১৯৫১ সালের এই চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক সম্মেলনকে। এই সম্মেলন থেকে সেদিন বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করা ছাড়াও পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবি জানিয়ে এবং বিশ^শান্তির পক্ষে প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়।

সম্মেলনে প্রদত্ত অভিভাষণ ও পঠিত প্রবন্ধগুলি নিয়ে সীমান্ত-এর চতুর্থ বর্ষ  প্রথম সংখ্যাটি (বৈশাখ ১৩৫৮/১৯৫১) বিশেষ ‘সংস্কৃতি সম্মেলন সংখ্যা’ হিসেবে প্রকাশিত হয়। পত্রিকার

এ-সংখ্যাটি আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসের এক মূল্যবান দলিল হিসেবে গণ্য হওয়ার দাবি রাখে। সৌভাগ্যক্রমে সীমান্ত-এর এই বিশেষ সংখ্যাটি সংগৃহীত ও সীমান্ত সংগ্রহ-তে সংকলিত হতে পেরেছে। বিশেষ সংখ্যায় সংস্কৃতি সম্মেলনের পর্যালোচনা করতে গিয়ে, আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ তাঁর উদ্বোধনী ভাষণে তরুণদের প্রতি যে-‘সর্বমানবের সংস্কৃতি’ গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন, পাঠকদের তা স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়। (আবদুল গনি, ‘সংস্কৃতি সংবাদ’, সীমান্ত সংগ্রহ, পৃ ৫৪৭) আর একই সংখ্যার সংক্ষিপ্ত সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, ‘প্রচুর বাধাবিপত্তি, সুতীব্র প্রতিকূলতা ঠেলে আর সাময়িক বিচ্যুতির ক্ষত নিয়েও ‘সীমান্ত’ পূর্ব-বঙ্গের গণতান্ত্রিক মানুষের সাংস্কৃতিক চেতনার মুখপত্র হিসেবে সগর্বে দাঁড়িয়ে আছে।’ (ওই, পৃ ৫৫০) সময়ের ব্যবধানে দাঁড়িয়েও আজ ‘গণতান্ত্রিক মানুষের

সাংস্কৃতিক চেতনার মুখপত্র’ হিসেবে পত্রিকার এ-ঘোষণা বা দাবিটিকে আমাদের যথার্থ বলেই মনে হয়।

সচ্ছল পরিবারের সন্তান হয়েও অল্পবয়সেই ব্যক্তিজীবনের অর্থনৈতিক টানাপড়েনের অভিজ্ঞতা, চারপাশে দেখা জনজীবনের বাস্তবতা – দারিদ্র্য ও বঞ্চনার সঙ্গে পরিচয়, সেই সঙ্গে তাঁর সংবেদনশীল কবি-মন মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে সাধারণ মানুষের প্রতি সমব্যথী করে তোলে। তাদের ভাগ্য পরিবর্তনের আকাক্সক্ষা জাগে তাঁর মনে। স্কুলজীবনেই হরলাল বাবু নামক একজনকে তিনি শিক্ষক হিসেবে পেয়েছিলেন, যাঁর সঙ্গে কমিউনিস্ট পার্টির সম্পর্ক ছিল। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় চট্টগ্রামে রবার্ট ক্রস নামে ব্রিটিশ বিমানবাহিনীর একজন সদস্যের সঙ্গে ঘটনাক্রমে তাঁর পরিচয় ও ঘনিষ্ঠতা হয়। এই ক্রসও ছিলেন ব্রিটিশ কমিউনিস্ট পার্টির গোপন সদস্য। মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে তিনি মার্কসবাদী সাহিত্য পড়তে দেন। এভাবেই বিপ্লবী বা সমাজ পরিবর্তনকামী রাজনীতিতে তাঁর দীক্ষা ঘটে। তরুণ বয়সে প্রথমে ছাত্র ফেডােেরশন ও তার মাধ্যমে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন তিনি। ১৯৪০ ও ’৫০-এর দশকে এদেশের প্রতিটি গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল আন্দোলন-সংগ্রামে, সামাজিক-সাংস্কৃতিক উদ্যোগ-আয়োজনে তাঁর সক্রিয় ভূমিকা ছিল। দেশবিভাগের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে অসাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার লক্ষ্য নিয়ে পূর্ব পাকিস্তান যুবলীগ (১৯৫১) ও পরে গণতন্ত্রী দল (১৯৫২) গঠিত হলে তিনি এ-দুটি সংগঠনের চট্টগ্রাম জেলা কমিটির যথাক্রমে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক পদে থাকা অবস্থায় ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কবিতা লেখার দায়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি, পরিণতিতে সীমান্ত-এর প্রকাশনা বন্ধ হয়ে যাওয়া, তাঁর হুলিয়া মাথায় নিয়ে আত্মগোপন থাকা অবস্থায়ই দেশে সামরিক শাসন জারি (১৯৫৮) ও রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ হওয়া, ১৯৬০-এর দশকে আন্তর্জাতিক কমিউনিস্ট আন্দোলনে বিভক্তি এবং তার প্রভাবে এদেশেও কমিউনিস্ট তথা বাম-প্রগতিশীল আন্দোলনে বিভেদ-বিভ্রান্তি ও নানামুখী বিচ্যুতি মাহবুব উল আলম চৌধুরীকে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক তৎপরতা থেকে দূরে সরিয়ে নেয়। ইতোমধ্যে এই রাজনীতির কমবেশি সীমাবদ্ধতাও তাঁর কাছে ধরা পড়ে। কিন্তু প্রত্যক্ষ রাজনীতি ও সাংগঠনিক সক্রিয়তা থেকে বিচ্ছিন্ন হলেও, প্রথম জীবনে যে অসাম্প্রদায়িক-গণতান্ত্রিক চেতনা, সংগ্রামী মানবতা ও শ্রমজীবী মানুষের স্বার্থের সঙ্গে একাত্মতাবোধ তাঁকে প্রাণিত করেছিল. আমৃত্যু তিনি তাকে ধারণ ও বহন করেছেন। পরবর্তী জীবনে তাঁর কাব্যচর্চা, সাংবাদিকতা, স্মৃতিচারণমূলক রচনা ইত্যাদিতে যার প্রতিফলন ঘটেছে।

সহায়ক গ্রন্থ ও রচনা     

১. ড. ইসরাইল খান ও জওশন আরা রহমান (সম্পা.), সীমান্ত সংগ্রহ, ঢাকা, পালক পাবলিশার্স, ২০০৫।

২. মোরশেদ শফিউল হাসান, ‘প্রথম বর্তিকাটি তাঁরাই জে¦লেছিলেন’, বিস্মৃত চিন্তানায়ক ও অন্যান্য প্রসঙ্গ, ঢাকা : কাকলী প্রকাশনী, ২০০৯।

৩. সৈয়দ আবুল মকসুদ-সম্পাদিত মোতাহের হোসেন চৌধুরী রচনাবলী,  প্রথম খণ্ড, ঢাকা : বাংলা একাডেমি, ১৯৯৫।

৪. মামুন সিদ্দিকী, ‘মাহবুব উল আলম চৌধুরীর চিন্তাধারা’, অমর একুশের ৭০ বছর, ঢাকা, বাংলা একাডেমি, ২০২২।

৫. মোরশেদ শফিউল হাসান, পূর্ব বাঙলায় চিন্তাচর্চা : ১৯৪৭-১৯৭০ : দ্বন্দ্ব ও প্রতিক্রিয়া, ঢাকা, অনুপম প্রকাশনী, ২০০৭।