রামকিঙ্করের ছাত্র : ভাস্কর সুরেন দে

সুশোভন অধিকারী

বিশের দশকের একেবারে গোড়ায় রবীন্দ্রনাথ যখন পাকাপাকিভাবে কলাভবন প্রতিষ্ঠা করলেন, তখন সেখানে স্বাভাবিকভাবেই প্রাধান্য পেয়েছে চিত্রচর্চার ভূমিকা। দীর্ঘদিন পর্যন্ত আমাদের দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠানে চর্চার প্রধান বিষয় হয়ে উঠেছে চিত্রকলা। ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে বিচার করলেও দেখব – এদেশে ভাস্কর্য ছিল প্রধানত স্থাপত্যের সঙ্গে একত্রে সংযুক্ত, আর নিঃসন্দেহে তা প্রধানত ছিল

মন্দির-ভাস্কর্য। ত্রিশের দশকের আগে পর্যন্ত ভাস্কর্যকলা সেভাবে স্থাপত্যের প্রাচীর ছেড়ে বেরিয়ে স্বতন্ত্র জায়গা ঘোষণা করতে পারেনি। এই কথা বিশেষত খোলা আকাশের নিচে থাকা স্কাল্পচার-এর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। অবশ্য প্রতিমাশিল্পকে এর বাইরে রাখছি, সে-কথা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। অন্যদিকে প্রতিকৃতি তৈরির একটা বহমান ধারা ছিল।

রাজা-মহারাজা বা অভিজাত ধনী পরিবারে শ্বেতমর্মরের প্রতিকৃতি নির্মাণের প্রচলন অনেক দিনের। যদিও ভাস্কর্যের আধুনিক ধারার সঙ্গে তাকে যুক্ত করা সমীচীন নয়। সেদিক থেকে আমাদের দেশে রামকিঙ্কর বেইজ প্রথম আধুনিক ভাস্কর, যাঁর হাতে ভাস্কর্যশিল্প নতুন মাত্রা পেয়েছে। বলা যায়, মন্দিরের দেয়াল থেকে, স্থাপত্যের বন্ধন থেকে ভাস্কর্যকে মুক্ত করেছেন রামকিঙ্কর। শামিত্মনিকেতনের নানা জায়গায়, কলাভবনের প্রাঙ্গণে ছড়ানো তাঁর উন্মুক্ত ভাস্কর্যগুলো শিল্পরসিক থেকে সাধারণ দর্শক, সকলের কাছেই তীব্র আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে দীর্ঘকাল।

কলাভবনে রামকিঙ্করের যে সকল ছাত্র শিক্ষাগুরুর সেই আলোকবর্তিকাকে সামনে এগিয়ে নিয়ে চলেছেন তাঁদের মধ্যে সুরেন দে ছিলেন অন্যতম। এই সংক্ষেপ্ত লেখায় তাঁকে স্মরণ করি। কলাভবনে পাঁচের দশকে তিনি রামকিঙ্করের ছাত্র ছিলেন। পরবর্তীকালে দীর্ঘকাল বিদেশে থাকা এবং তাঁর অকালমৃত্যুর কারণে সুরেন দে-র নাম আজ হয়তো কিছুটা বিস্মৃত। কিন্তু তাঁর ভাস্কর্যের আবেদন ও তার বলিষ্ঠতাকে অস্বীকার করার উপায় নেই। গুরু রামকিঙ্করের কাজের স্বতঃস্ফূর্ত ক্ষেপ্রতা সুরেনের ভাস্কর্যে বারবার প্রতিফলিত হয়েছে। সে তাঁর প্রতিকৃতিধর্মী কাজ হোক বা আউটডোর স্কাল্পচার। তাঁর সৃষ্ট খোলা আকাশের নিচে রাখা কাজগুলোর মধ্যে প্রধান কাজ ‘ভিস্তিওয়ালা’। শামিত্মনিকেতনে থেকে শ্রীনিকেতনে যাওয়ার পথের ধারে, অ্যাগ্রো-ইকোনমিক রিসার্চ সেন্টারের সামনে নির্মিত ষোলো ফুট উচ্চতার এই ভাস্কর্য শিল্পরসিকের কাছ থেকে পূর্ণ সম্ভ্রম আদায় করে নেয়। কাজটিতে দেখি ‘ভিস্তিওয়ালা’ একটি ছোট গাছে জলসিঞ্চন করছে। অনেকটা মেক্সিকান ভাস্কর্যের আদলে গঠিত ফিগারের মধ্যে একটা ভারি ওজনদার ভাব এর বৈশিষ্ট্য। বিশেষ করে ফিগারের পায়ের দিকটি লক্ষণীয় – যা শরীরের সমস্ত ওজন নিয়ে দৃঢ়ভাবে জমির সঙ্গে প্রোথিত। যা ভাস্কর্যের বিশেষ চরিত্র, যাকে কোনোভাবেই যেন স্থানচ্যুত করা যাবে না। সুদৃঢ় স্থাপত্যের মতো আপন ভূমিতে সে এমনই স্থির-অচঞ্চল ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। একটু সামনের দিকে ঝুঁকে গাছের দিকে তাকিয়ে থাকা ‘ভিস্তিওয়ালা’র মুখম-লে একটা তৃপ্তির প্রচ্ছন্ন হাসি মাখানো আছে। পায়ের কাছে থাকা গাছ, ফিগারের কাঠামো, দুটি হাত দিয়ে ধরা ভিস্তির রেখাসমস্ত যেন জিগজাগ রেখার মতো ক্রমে ওপরে উঠেছে। ভাস্কর্যের মুখম-লে এই অভিব্যক্তির প্রকাশটিতে নিঃসন্দেহে তিনি তাঁর শিক্ষক রামকিঙ্করের দ্বারা অনুপ্রাণিত। খোলা আকাশের নিচে রাখা রামকিঙ্করের প্রায় সব কাজেই কোথাও না কোথাও আনন্দ, বিষাদ, ক্লামিত্ম বা প্রশামিত্মর ছায়া ফুটে ওঠে। সুরেনও ভাস্কর্যের ফর্মের সঙ্গে সমতা রেখে ফিগারের মুখম-লে দেওয়া এক্সপ্রেশনের এই ধারাটিকে বজায় রেখেছেন। সুরেনের কাজ সম্পর্কে আর একটা কথা বলতে হয়। আউটডোর স্কাল্পচারের একটা প্রধান জিনিস হলো ফিগার তথা নির্মিত আকারের ব্যালেন্স – যা ভাস্কর্যের এক নম্বর প্রায়োরিটি। এ ব্যাপারে প্রতিটি কাজে সুরেন দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন। একটু তির্যকভাবে দাঁড়ানো ‘ভিস্তিওয়ালা’ ফিগারটির ব্যালেন্সটিও সুকৌশলের সঙ্গে সামলানো হয়েছে। সর্বোপরি কাজটির দিকে তাকিয়ে মনে হয়, বিষয়-বিন্যাস-অভিব্যক্তি সবটুকু মিলিয়ে এর আঙ্গিক ও স্টাইল রামকিঙ্করের ‘কলের বাঁশি’ বা ‘সাঁওতাল পরিবার’কে স্মরণ করিয়ে দেয়। আবার পাশাপাশি এ-কথাও বলতে হয়, শিল্পীর নিজস্ব টিপছাপ এখানে সুস্পষ্ট। ‘ভিস্তিওয়ালা’র জ্যামিতিক বিন্যাস ফিগারের আকার, গঠনশৈলী ও সারফেস টেক্সচার কাজটিকে প্রথম শ্রেণির শিল্পকলায় উন্নীত করেছে। শামিত্মনিকেতনে সুরেনের আর একটি উল্লেখযোগ্য আউটডোর স্কাল্পচার হলো গোয়েঙ্কা ছাত্রীনিবাসের সামনে বসন্ত-উৎসবের নাচ এটি আকারে ‘ভিস্তিওয়ালা’র চেয়ে বড় এবং এর আঙ্গিক ভিন্নধর্মী। এখানে ফর্মের সারফেস ‘ভিস্তিওয়ালা’র মতো রুক্ষ ও বন্ধুর নয়। এই কাজটির সারফেস বেশ মসৃণ এবং আকারগত শৈলীও কিছুটা স্বতন্ত্র। রামকিঙ্করের ‘সুজাতা’ যেভাবে উলস্নম্ব রেখার মতো ভূমি থেকে উত্থিত হয়েছে, সুরেনের বসন্ত-উৎসবের নৃত্য-কাজটিতে কিছুটা হলেও তাঁর অনুরণন লক্ষণীয়। তবে, এই ভাস্কর্যের বিষয় নৃত্যরত সুন্দরী, ফলে স্বভাবতই এখানে ফিগারের নৃত্যময় গতি ও ছন্দ শিল্পীর কাছে প্রথম প্রায়োরিটি পেয়েছে। নৃত্যরত প্রতিমার পায়ের ভঙ্গি, হাতের মুদ্রা, হাওয়ায় দুলে-ওঠা কাঁধের উত্তরীয় ও মুখের অভিব্যক্তি – সবকিছু মিলে ছন্দিত গতির প্রাঞ্জল প্রকাশ চোখে পড়ে। বিখ্যাত দক্ষেণী চিত্রী কে. কে. হেববার বা চাভ্দার আঁকা নৃত্যভঙ্গিমার ছবিতে দেখা যায় নৃত্যরত শরীরের আশ্চর্য ছন্দময়তা। অধিকাংশ নৃত্যবিষয়ক ছবিতে বা ভাস্কর্যে দেখা যায়, শিল্পীর কাজে নৃত্যের সেই গতিছন্দটি সঠিকভাবে প্রস্ফুটিত হতে পারে না। সুরেন তাঁর ভাস্কর্যে নাচের সেই ছন্দকে উদ্ভাসিত করতে সমর্থ হয়েছেন। অবশ্য কোনো-কোনো শিল্পী মনে করেন এই কাজের জন্য তৈরি ছোট ‘মাকেট’টি (ভাস্কর্যের খসড়া) অধিকতর আকর্ষণীয় ও গতিশীল।

ছবির পাশাপাশি তুলনা করতে চাইলে দেখব, ভাস্কর্যের একটা আলাদা চরিত্র আছে। আকার-আয়তনের বিশালতায় কোনো সাধারণ ভাস্কর্যও দর্শক বা রসিকের কাছে স্বতন্ত্র সমীহ আদায় করে নেয়। অর্থাৎ স্কাল্পচারের ক্ষেত্রে তার সাইজ একটা অন্যতম দিক। অপরদিকে মিনিয়েচার-পেইন্টিং বা অনুচিত্রের সঙ্গে আমাদের পরিচয় দীর্ঘকালের। ম্যুরাল-ছবির বিশালতা আমাদের আকর্ষণ করলেও রাজপুত-পাহাড়ি বা মোগল-পেইন্টিংয়ের আবেদন আমাদের কাছে কিছুমাত্র কম নয়। কিন্তু স্কাল্পচারের ক্ষেত্রে অনু-ভাস্কর্যের মহিমা সর্বত্র আমাদের কাছে তেমন গ্রহণীয় হয়ে ওঠে না, অনেক সময় তা যেন পুতুলের মতো ঠেকে। ভাস্কর্যের বৃহত্ত্ব গুণ, তার আকারের সহজ ক্ষেপ্রতা, আয়তনের ব্যাপ্তি তাকে যে একটা বিশেষ মাত্রায় ভূষিত করে – সে-বিষয়ে আমাদের মনে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু কলাশিল্পের বর্তমান পটভূমিকার দিকে তাকিয়ে মনে হয়, শিল্পীর ভাবনায় আবার বদল ঘটছে।

বর্তমান সময়ে শিল্পধারায় তার অন্তর্নিহিত উত্তাপের কিছুটা অভাব বোধহয় – তা ছবি হোক বা ভাস্কর্য। বিভিন্ন আর্ট গ্যালারিতে গিয়ে মাঝে মাঝে মনে হয় শিল্পকলা বুঝি দৃষ্টিনন্দনেরই নামান্তর। মনে হয়, ষাট-সত্তরের দশক পর্যন্ত শিল্পকলার ধারায় যে-ঋজুক্ষেপ্রতা
যে-ওজস্বিতার উদ্ভাস ছিল, তার অনেকটাই আজ স্তিমিত। রামকিঙ্করের শিষ্য সুরেনের কাজে সেই উত্তাপের ছটা মাঝে মাঝে ঝলসে ওঠে। কয়েকটি ভাস্কর্যে তো গুরুর ছাপ একেবারে সুস্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। বিশেষ করে তাঁর জ্যামিতিক কাঠামোনির্ভর সেমি-অ্যাবস্ট্রাক্ট কাজগুলোর ক্ষেত্রে। তবে রামকিঙ্করের বিমূর্ত কাজের মধ্যে যে গতির তীব্রতা আছে, তা সুরেন দে-র ভাস্কর্যে অনেকটাই অনুপস্থিত। সেক্ষেত্রে তাঁর কাজে অ্যাবস্ট্রাক্ট ফর্মের সরল জ্যামিতিক ডিজাইনটিই প্রাধান্য পায়।

সুরেন দের ভাস্কর্যগুলো গভীরভাবে লক্ষ করলে মনে হয়,  সেমি-অ্যাবস্ট্রাক্ট বা জ্যামিতিক কাঠামো-নির্ভর কাজগুলো তাঁর হাতে বিশেষ মাত্রা স্পর্শ করেছে। ভাস্কর্যের ভার্টিক্যাল ফর্মের বৃত্তাকার গতি যেভাবে দর্শককে শিল্পীর কাজের চারদিকে ঘুরিয়ে প্রদক্ষেণ করাতে চায়, – তা নিশ্চিতভাবেই সমসাময়িক ভাস্করদের থেকে তাঁকে আলাদা করে। এ ব্যাপারে অবশ্য সুরেন তাঁর গুরু রামকিঙ্করের কাছে ঋণী। বিশেষত রামকিঙ্করের ‘মিথুন’ ইত্যাদি নন-ফিগারেটিভ কাজে যে ছন্দময় বিন্যাসের মধ্যে গতির প্রাবল্য সংযুক্ত – তা সুরেনকে বিশেষভাবে অনুপ্রাণিত করেছে, আলোড়িত করেছে। দু-একটা কাজের উদাহরণে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে। উন্মুক্ত পরিসরে গাছের ছায়ায় রাখা তাঁর ‘কাপ্ল’ বা ‘যুগল’বিষয়ক সেমি-অ্যাবস্ট্রাক্ট কাজটি দেখলে মনে হয়, এর কিউবিস্টিক ছাঁদ যেন ধাপে-ধাপে নিচ থেকে ওপরের দিকে উঠেছে। আবার এমনও

হতে পারে, তা শীর্ষবিন্দু থেকে যেন স্তরে-স্তরে নেমে এসেছে নিচের দিকে। এই কাজগুলোর জ্যামিতিক কাঠামো অনেকটা বিপ্রতীপ কোণের ভঙ্গিতে পরস্পরে সংযুক্ত। বেসিক স্ট্রাকচারের এই ছন্দ রামকিঙ্করের ‘মিল কল’, ‘হার্ভেস্ট’ বা অন্যান্য একাধিক ভাস্কর্যে ও তাঁর অজস্র ছবির বিন্যাসে ছড়ানো আছে। ইতিহাসের পটে বিচার করলে দেখা যাবে, ভাস্কর্যের ক্ষেত্রে অ্যাবস্ট্রাক্ট-এক্সপ্রেশনিজম তথা কনস্ট্রাকটিভিস্ট আন্দোলনের একটি স্বতন্ত্র ধারা রামকিঙ্করকে উজ্জীবিত করেছিল। এর নির্যাস আহরণ করে রামকিঙ্করই আমাদের দেশে এমনতর কাজের পথিকৃৎ, যা বারবার ভাস্কর্য আর পুতুলের তফাতটুকু দর্শকের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছে। গুরু রামকিঙ্করের কাজের এই বৈশিষ্ট্য সুরেনকে উদ্বুদ্ধ করেছিল, আর তার ঢেউ এসে ছুঁয়েছে শিষ্যের ভাস্কর্যশৈলীতে।

সুরেন দে-র আর একটি কাজের কথা এখানে উল্লেখ করতে হয়। ‘নন্দন’ মিউজিয়ামে প্রবেশপথের সিঁড়ি দিয়ে বারান্দায় উঠে, মূল দরজার পাশে দেয়াল অলংকৃত করে আছে একটি রিলিফ-ভাস্কর্য, যা সুরেনের আরেকটি উল্লেখযোগ্য কাজ। এই রিলিফ কাজে দেখা যায় প্রবেশদ্বারের পাশে দাঁড়িয়ে করজোড়ে অভ্যর্থনার মতো তিনটি মূর্তি – পুরুষ, নারী ও একটি শিশু। উদীয়মান সূর্যের সম্মুখে এরা পরস্পরে ঈষৎ আনত অবস্থায় প্রণামের ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে। সমস্ত কাজের মধ্যে একটা অলংকরণের ছোঁয়া, ভূমিসংলগ্ন জমিতে অবস্থিত গাছের আকারে ভারহূত-সাঁচির ধরনে নির্মিত ডেকরেটিভ প্যাটার্ন। চিত্রধর্মী এই কাজটির সর্বত্র একটা আলংকারিক ছন্দ ছড়ানো আছে। একটু জ্যামিতিক ছাঁদে গড়া হয়েছে কাজটি –  ফিগারের সারফেস অনেকটা মসৃণ, তবে উত্তল-অবতলের পরিবর্তে কিছুটা কৌণিক আভাস কাজটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে। তা সত্ত্বেও ফিগারগুলোর মূল অঙ্কন যেন শামিত্মনিকেতন ঘরানার কাছাকাছি, একই সঙ্গে কাজটিতে সুস্পষ্ট বাংলার টেরাকোটা মন্দির-ভাস্কর্যের ছাপ। আর আঙ্গিক-উপকরণ-রীতি বা নির্মাণকৌশল যেমনই হোক-না কেন, শিল্পকলায় সবচেয়ে যেটা জরুরি, তা হলো শিল্পীর ভাবপ্রকাশের অভিব্যক্তি। যুক্তি, তর্ক, তত্ত্ব সমস্ত পেরিয়ে কাজটি দর্শকের মনকে ছুঁতে পারল কিনা সেটাই তো আসল কথা। সেদিক থেকে বলতে হয়, উপরোক্ত ভাস্কর্যে ব্যবহৃত উপকরণ, আঙ্গিক ও শৈলী সমস্ত ছাড়িয়ে কোথায় যেন একটা পবিত্রতা জেগে আছে, যা সহজে আমাদের স্পর্শ করে।

সুরেন দে-র কাজ প্রাতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিগতভাবে দেশ-বিদেশের নানা সংগ্রহে রক্ষেত আছে। ষাটের দশকের মাঝামাঝি তিনি জাপানের কিয়োটো সিটি ইউনিভার্সিটিতে কাজ শিখেছেন। দেশে ও বিদেশের নানা প্রতিষ্ঠানে তিনি ফ্রেস্কো-পেইন্টিং ও
রিলিফ-স্কাল্পচার রচনা করেছেন, তাঁর কাজের প্রদর্শনীও হয়েছে। এর মধ্যে জাপানের ওসাকা, আমেরিকার মিশিগান ইত্যাদি অন্যতম। সত্তরের দশকের শেষে তিনি কাজের সূত্রে কিছুকাল প্রবাস-জীবনযাপন করে শামিত্মনিকেতনে ফিরে আসেন। স্বতঃপ্রণোদিতভাবে নানা বিচিত্র কাজের সঙ্গে তিনি নিজেকে যুক্ত রাখতে ভালোবাসতেন। অনেক সময় তাঁকে শিল্প-রাজনীতির শিকারও হতে হয়েছে। আজকের নতুনতর প্রেক্ষাপটে শিল্পরসিকদের কাছে তিনি কিছুটা অচেনা ঠেকলেও তাঁর ভাস্কর্যের সামনে দাঁড়ালে বোঝা যায় তাঁর শিল্পভাবনার প্রবাহটি কোন মহান উৎস থেকে উৎসারিত হয়েছিল। আজ তাঁর পঁচাশিতম জন্মবর্ষে শিল্পী সুরেন দে-র প্রতি আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা রইল।