শিক্ষায় স্যার আবেদ : তাঁর চিন্তা, আদর্শ ও কৃতি

আজ জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে একটা বিশেষ আয়োজন – একটু ব্যতিক্রমী, হয়তো স্ববিরোধী। একদিকে স্যার ফজলে হাসান আবেদ, সবার প্রিয় আবেদভাই, আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন, তাই নিঃসন্দেহে একটা শোক এবং স্মরণের মুহূর্ত, একটা বিশেষ ক্ষত, একটা শূন্যতার বিষাদ, একটা বঞ্চনার বেদনা, আমরা সবাই অনুভব করছি। কিন্তু অন্যদিকে, এবং যুগপৎভাবে, এটা একটা গর্বের সময়, তাঁর জীবন, কীর্তি, প্রচেষ্টা, তাঁর আদর্শ, সংকল্প, আকাক্সক্ষা, তাঁর অর্জন, অবদান, অভিপ্রায় – সেসবও মনে রাখা এবং তা দ্বারা নতুনভাবে অনুপ্রাণিত হওয়ার সুযোগ।
তাই আজ আমরা শুধু শোক প্রকাশ করতে আসিনি, তাঁর জীবনকীর্তি উদ্যাপন করতে এসেছি। কেবল তিনি যা অর্জন করেছেন তা নয়, বরং তিনি কর্মে যে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন এবং বিস্ময়াভিভূত হয়ে বলতে হয়, কী অপরিসীম স্পর্ধা (ধঁফধপরঃু) নিয়ে তিনি তাঁর কর্মপরিকল্পনা (ভিশন) ঠিক করেছেন।
জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের (এঅজঋ) সঙ্গে আবেদভাইয়ের সম্পর্ক অনেক পুরনো এবং সমৃদ্ধ এবং কতগুলো ব্যাপারে একটু কাকতালীয়। একটা উদাহরণ দিই। ১৯৭২ সালে ব্র্যাক যখন প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন সরকারি নিবন্ধনের জন্য প্রয়োজন ছিল কতগুলো কাগজপত্র, দলিল-দস্তাবেজ, তথ্য-উপাত্ত। তার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দলিল ছিল ব্র্যাকের বোর্ড মেম্বারদের স্বাক্ষরিত দরখাস্ত। এতে যে তিনজন সই করেছিলেন তাঁরা ছিলেন আবেদভাই, বেগম সুফিয়া কামাল এবং প্রফেসর আব্দুর রাজ্জাক। তার ঠিক ত্রিশ বছর পর, অর্থাৎ ২০০২ সালে, এঅজঋ যখন প্রতিষ্ঠিত হয় এবং নিবন্ধিত হয়, তখন একইভাবে স্বাক্ষরিত দরখাস্ত প্রয়োজন ছিল। এবং এবার এখানে যাঁদের সই ছিল তাঁদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন এই ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি আবেদভাই। অর্থাৎ ব্র্যাকের জন্মলগ্নে যেমন রাজ্জাক স্যার জড়িত ছিলেন, এঅজঋ-এর সূচনায় সংশ্লিষ্ট ছিলেন আবেদভাই – শুধু শুভেচ্ছাকারী হিসেবে নয়, সক্রিয় অংশীদারিত্বে।
এ প্রসঙ্গে আরো একটা কথা উল্লেখযোগ্য। ১৯৭২-এ রাজ্জাক স্যার যখন ব্র্যাকের ডকুমেন্টে সই করেছিলেন তখন তিনি জাতীয় অধ্যাপক হননি, ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের একজন প্রভাষক মাত্র। একইভাবে আবেদভাই যখন জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হন, তিনিও স্যার ফজলে হাসান আবেদ, কঈগএ, হননি। অর্থাৎ তাঁদের পরস্পরের কাছে নিজেদের মূল্য, এবং সবার কাছে তাঁদের স্বীকৃতি, কোনোদিনও কোনো বাইরের মর্যাদা বা পুরস্কার বা খেতাবের ওপর নির্ভর করেনি। সেটা তাঁরা পেয়েছেন তাঁদের ব্যক্তিত্বের জোরে, নিজগুণে, আপন উৎকর্ষে।
আরো একটা সাদৃশ্য সম্পর্কে ছোট করে বলতে চাই। রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের প্রথম পাবলিক অনুষ্ঠান, অর্থাৎ জনসমক্ষে আমাদের আত্মপ্রকাশ, ঘটেছিল ২০১৭ সালে, আমাদের গুণিজন বক্তৃতামালার উদ্বোধনের মাধ্যমে। এই প্রচেষ্টার প্রথম বক্তা ছিলেন প্রফেসর রেহমান সোবহান, এবং এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেছিলেন আবেদভাই। আজ সন্ধ্যায়, আবেদভাইকে কেন্দ্র করে যে-অনুষ্ঠান, তাতে সভাপতি হিসেবে রয়েছেন প্রফেসর রেহমান সোবহান। তাই ব্যক্তিগতভাবে রাজ্জাক স্যারের সঙ্গে, এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে, আবেদভাইয়ের সম্পর্ক খুবই দীর্ঘ, মজবুত এবং প্রাসঙ্গিক।
তাঁদের ব্যক্তিত্বের এবং আঙ্গিকের গুণাবলিতেও কতগুলো মিল ছিল খুবই স্পষ্ট এবং লক্ষণীয়। তাঁরা দুজনেই ছিলেন খুবই অমায়িক, সদালাপী ও নিরহংকার মানুষ। দুজনের ছিল এক নির্মল অনাবিল হাসি, যাতে সবাই পরাস্ত হতেন, মনোহরিত। দুজনের ছিল একটা নৈতিক স্বচ্ছতা, ব্যক্তিত্বের সরলতা এবং মানবিক উদারতা, যা সাধারণত প্রকাশিত হতো অপরকে সাহায্য করার স্বাভাবিক এবং স্বতঃস্ফূর্ত প্রবণতায়। দুজনই ছিলেন স্বাতন্ত্র্যম-িত মানুষ, নিজের পথে চলতেন, অপরের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হতেন না। এবং সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, দুজনেই ছিলেন রেনেসাঁসের আদর্শে লালিত, বহষরমযঃবহসবহঃ-এর বরপুত্র। বিভিন্ন বিষয়ে তাঁদের কৌতূহল ছিল তীক্ষè, জানার ইচ্ছে প্রবল। দুজনেই ছিলেন সুন্দরের পূজারি এবং সাম্প্রতিক এবং নান্দনিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ। দুজনেই আঁকড়ে ধরেছিলেন একই বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি, জ্ঞানের ওপর আস্থা এবং মানুষের ওপর, মনুষ্যত্বের ওপর, প্রগাঢ় এবং অটুট বিশ্বাস। দুজনেই আলোকিত ছিলেন এবং যারা তাঁদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদেরও আলোকিত করেছেন।
তাঁদের মধ্যে পার্থক্যও ছিল অনেক। প্রধানত রাজ্জাক স্যার বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক জীবনে নিজেকে নিমজ্জিত করেছিলেন, এবং আবেদভাই খুঁজেছিলেন তাঁর চরিতার্থতা তার বাইরে, তাঁর ক্রিয়াশীলতার জগৎ আরো বিস্তৃত এবং বহুমাত্রিক এবং পার্থিব। রাজ্জাক স্যার আমাদের চিন্তা করতে শেখাতেন, আবেদভাই চেয়েছেন সবার, বিশেষ করে দরিদ্র, উপেক্ষিত, শোষিত মানুষরাও যেন চিন্তা করার সুযোগ পায়। সেই পরিবর্তনের ক্ষেত্রটা তৈরি করাটাই তাঁর প্রধান চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখেছেন। তাঁদের অভীষ্ট লক্ষ্য ছিল একই – মানবতার কল্যাণ। কিন্তু তাদের প্রেক্ষিত এবং পদ্ধতি ছিল ভিন্ন, যদিও একে অপরের সম্পূরক।
আবেদভাই সম্পর্কে একটা কথা বলতে ইচ্ছে করছে – তাঁর একটা অসাধারণ ক্ষমতা ছিল, তাঁর সংস্পর্শে যে-ই এসেছে সে-ই মনে করত যে সে খুবই বিশেষ, তাঁর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভিন্ন, এবং উষ্ণ, এবং আন্তরিক। সে যে-ই হোক না কেন। তা সে প্রতাপশালী, বিত্তবান, জ্ঞানীগুণী লোকই হোন, বা গ্রামের শিক্ষাবঞ্চিত গরিব কৃষকই হোন, বা আমার মতো কুশিক্ষিত লোকই হোন (যারা ডিগ্রিতে ভারি কিন্তু প্রজ্ঞায় হালকা)। তারা, আমরা, সবাই বিশ্বাস করতাম যে, তাঁর সঙ্গে আমাদের সম্পর্কটা একটু ‘অন্যরকম’, একটু স্পেশাল।
আমিও তাই ভেবেছি। আমার সঙ্গে যে তাঁর খুব বেশিবার দেখা হয়েছে, তা নয়। তাও সাধারণত মিটিং বা আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বা একাধিক মানুষের কলতানমুখর পরিবেশে। তাঁর সঙ্গে ব্যক্তিগতভাবে অবিচ্ছিন্ন সময় কাটানোর সময় খুব একটা পাইনি। তবু আমার মনে করতে ভালো লেগেছে যে তিনি আমাকে স্নেহ করেন, আমার সম্বন্ধে তিনি ভাবেন, আমার ওপর তাঁর কেমন যেন একটা ভরসা আছে। শুধু আমি না, বহু মানুষই এই বোধ নিয়ে আশ্বস্ত হয়েছে, একটা আত্মতৃপ্তি এবং আত্মবিশ্বাস অনুভব করেছে। তাঁর কাছে অনেকের মাঝে আমিও একজন, সেটা মনে হয়নি, তাঁর কাছে আমি ‘একজন’, সেটাই মনে হয়েছে।
এটা কীভাবে সম্ভব হতো? কোন প্রক্রিয়ায়? কী ম্যাজিকের মাধ্যমে? কিছুদিন আগে আসিফ সালেহ একটা কথা বলেছিল, যার মাধ্যমে এই বিস্ময়কর ব্যাপারটা আংশিকভাবে হলেও কিছুটা বোঝা যায়। ও বলেছিল যে, আবেদভাই প্রত্যেক মানুষকে তাঁর অখ- মনোযোগ দিতেন। তিনি তাদের কথা আগ্রহভরে শুনতেন, মনে রাখতেন, প্রশ্ন করতেন, শিখতে, বুঝতে চাইতেন এবং সর্বদা তাঁর সাহায্যের হাত না হলেও তাঁর সৌহার্দ্যরে স্পর্শ দ্বারা আশ্বস্ত করতেন। প্রত্যেক মানুষকে তিনি মূল্য দিতেন, তাদের ক্ষমতা, স্বাতন্ত্র্য এবং সম্ভাবনায় বিশ্বাস রাখতেন। তাঁর হাসি দ্বারা কাছে টেনে নিতেন।
আমাদের মতো আধা-সামন্ততান্ত্রিক ভীষণ অসম সমাজে যেখানে একটা প্রাধান্য-পরম্পরা খুবই স্পষ্ট এবং নিষ্ঠুর, সেখানে যারা ‘উপরের তলার মানুষ’ তারা অধিকাংশ সময় তাদের ক্ষমতা প্রমাণ করেন অন্যদের প্রতি তাচ্ছিল্যে, সেখানে আবেদভাই ছিলেন সম্পূর্ণভাবে বিপরীতমুখী। অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে অন্যদের সম্মান দিয়ে, কদর করে, নিজের প্রভাব বজায় রাখতেন, আরো সুদৃঢ় করতেন। অপেরার জগৎ থেকে একটা দৃষ্টান্ত টানা যায়। আজকের পৃথিবীটা, হয়তো আমাদের দেশটাও, একটা ড়ঢ়বৎধঃরপ জগতে পরিণত হয়েছে এবং এই জগতের সবচেয়ে আধিপত্যবিস্তারকারী ও কর্তৃত্বপূর্ণ মানুষেরা হচ্ছেন ঃবহড়ৎং (চড়া সুরের গায়ক) এবং ংড়ঢ়ৎধহড়ং (উঁচু গ্রামে বাঁধা যার কণ্ঠ) যাদের বিশাল গ্লাস-ভাঙা গলা, গায়কির নাটুকেপনা এবং চরিত্রের চমক লাগানো বিস্তার তাদের খুব স্বাভাবিকভাবে করে তোলে এই জগতের প্রধান ব্যক্তিত্ব। (আমরা যাদের নাম সাধারণত অপেরার সঙ্গে সম্পৃক্ত হিসেবে জানি, যথা চষধপরফড় উড়সরহমড়, ঔড়ংব ঈধৎৎবৎধং, খঁপরধহড় চধাধৎড়ঃঃর কিংবা খবড়হঃুহব চৎরপব, গধৎরধ ঈধষষধং বা করৎর ঞব কধহধধি, তাঁরা সবাই এই দুই পর্যায়ের শিল্পী)। কিন্তু একই জগতে কিছু ংড়ঃড় াড়রপব (চাপা কণ্ঠস্বর) ভূমিকা বা অংশ থাকত, যখন ছোট গলা, নরম স্বর প্রয়োজন হতো এবং এই অংশগুলো বা এই শিল্পীদের বিশেষ কোনো নাম বা জৌলুস থাকত না। আবেদভাই সেই ভূমিকা বা ঢংটাই নিজের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। তাঁর বৈশিষ্ট্য ছিল এই যে, তিনি কথা বলেছেন খুব নম্রস্বরে, কিন্তু কাজ করেছেন বৃহৎ পরিসরে। এই বৈপরীত্যে তিনি তৈরি করে নিয়েছিলেন নিজের ব্যক্তিত্ব, নিজের স্বাতন্ত্র্য, নিজের মহত্ত্ব।
আমরা সবাই জানি যে, আবেদভাইয়ের জীবনের মূল উদ্দেশ্য ছিল একটাই – প্রত্যেক মানুষের ভেতর যে-সম্ভাবনা, যে-প্রতিভা, যে-প্রতিশ্রুতি রয়েছে তা সুস্থ এবং পরিপূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া। যে ব্যাপক সামাজিক উন্নয়ন এর জন্য প্রয়োজন, সেসবকে নিয়ে একত্রিতভাবে এবং সামগ্রিকভাবে পরস্পর সংযুক্ত বা সমন্বিত করে (ধ যড়ষরংঃরপ রহঃবমৎধঃরড়হ) পরিকল্পনা বা কৌশল অবলম্বন করাটা শুধু বাঞ্ছনীয় নয়, ছিল একমাত্র উপায় বা পথ। তাতে জীবনধারণ, কর্মসংস্থান, স্বাস্থ্য, মানসিক উন্নতি, ব্যক্তিগত নিরাপত্তা এবং সাংস্কৃতিক আনন্দ – সবকিছুই জড়িয়ে রয়েছে। এই কারণেই আবেদভাই ‘উন্নয়ন’-এর মধ্যে একটা নৈতিক বাধ্যবাধকতা (সড়ৎধষ রসঢ়বৎধঃরাব) থাকাটা অপরিহার্য মনে করেছিলেন। এবং এটাকে মানুষের মুক্তি হিসেবে কল্পনা করেছিলেন।
এর মাঝে আরো দুটো চিন্তা অন্তর্নিহিত ছিল। প্রথমত, এই মুক্তি অর্থহীন হবে যদি সেটা সমাজের সবচেয়ে প্রান্তিক, সবচেয়ে নাজুক শ্রেণির মানুষদের অন্তর্ভুক্ত না করে। তাই তিনি ভেবেছিলেন নারীর ক্ষমতায়নের কথা, শিশুর শারীরিক ও মানসিক উন্নতির কথা, হতদরিদ্রের আর্থিক সংস্থানের কথা, যারা স্বপ্ন দেখার সাহস থেকেও বঞ্চিত। দ্বিতীয়ত, এই উন্নয়ন যদি সুদূরপ্রসারী এবং স্থায়ী হতে হয়, তবে তা হতে পারে শুধু শিক্ষার মাধ্যমে। তাঁর চিন্তার স্বচ্ছতা এবং সাংগঠনিক প্রতিভা অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেই একইভাবে প্রকাশ পায় এবং সফলতার সঙ্গেই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়।
তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় গড়লেন তা অচিরেই দেশের প্রাইভেট/ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে অন্যতম, এবং এর অনেক কার্যক্রম, গবেষণা কেন্দ্র, ইনস্টিটিউট বা প্রোগ্রামস বিশ্বনন্দিত এবং প্রভাবশালী। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ তিনি নেন ছোটদের, অর্থাৎ প্রাক্-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও বয়স্ক শিক্ষা প্রকল্পের মাধ্যমে, বিশেষ করে হাওর, চর, পার্বত্য এলাকায়, উপকূলীয় অঞ্চলে, শহরের বস্তিতে ইত্যাদি সব কঠিন, জটিল এবং উপেক্ষিত পরিবেশে। শুধু বাংলাদেশে এখন ৩০ লাখ ছাত্রছাত্রী এইসব স্কুলে পড়ছে, এবং ১৪ লাখ জড়িত রয়েছে বিভিন্ন ধফড়ষবংপবহঃ ক্লাব এবং ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে। এশিয়া এবং আফ্রিকায় ১২০ মিলিয়ন ছেলেমেয়ে বিভিন্ন স্কুল থেকে পাশ করেছে। এটাও লক্ষণীয় যে, এইসব স্কুলে তাদের শিক্ষাদান করা হয় খুবই সৃজনশীল প্রক্রিয়ায় (যার মধ্যে একটা হচ্ছে খেলার মাধ্যমে শিক্ষা), এবং পৃথিবীর কাছে একটা দৃষ্টান্তমূলক শিক্ষার ধারা, নতুন পাঠ্যক্রম, অভিনব পদ্ধতির জন্য প্রশংসিত হয়েছে। গত বছর ২০১৯, আবেদভাইকে দেওয়া হয় ণরফধহ চৎরুব, যেটা শিক্ষার জগতে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে পরিগণিত হয় এবং এক্ষেত্রে নোবেল পুরস্কারের সমতুল্য মানা হয়।
আবেদভাইয়ের চিন্তা, পরিকল্পনা, উদ্যোগ ছিল বিবিধ, বিস্তৃত এবং বিস্ময়কর। তাঁর প্রভাব থাকবে গভীর এবং তাৎপর্যপূর্ণ। তিনি শুধু শারীরিকভাবেই বিদায় নিয়েছেন। রেখে গেছেন তাঁর মানবিকতা, বিশাল প্রেক্ষাপটে চিন্তা করার সাহস, এবং সেটা বাস্তবায়ন করার দক্ষতা ও অনুপ্রেরণা। তাঁকে মনে রাখা শুধু সহজ করে গেছেন তাই নয়, তাঁর স্বপ্ন, তাঁর দৃষ্টান্ত দ্বারা আমাদের প্রত্যেককে স্পর্শ করে গেছেন। ভুলতে চাইলেও তা সম্ভব হবে না। সেটা চাওয়াই হবে নির্বোধ এবং ঔদ্ধত্যপূর্ণ একটা অভিপ্রায়। আবেদভাই ছিলেন, আছেন, থাকবেন।
আমি, আমরা, কৃতজ্ঞ।

[১৬ জানুয়ারি ২০২০ তারিখে জ্ঞানতাপস আব্দুর রাজ্জাক ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘শিক্ষায় স্যার আবেদ : তাঁর চিন্তা, আদর্শ ও কৃতি’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে প্রদত্ত স্বাগত বক্তৃতার ওপর ভিত্তি করে রচিত।]