শিল্প ও বাস্তবতা

মা যখন হাসপাতালে যেত তখনো প্রতিবারই

আমাকে বলে যেত অথচ যখন ও একেবারেই গেল

তখন আমাকে যে কিছুই বলে গেল না!

বলে কী করে – এ-কথা তাকে কী করে বোঝাই

ব্যবচ্ছেদে তার বাকযন্ত্র কী করে সামর্থ্য হারায়

এরপর ও এও জানতে চায় আমাকে ছাড়া

মা একা ওপারে থাকেইবা কী করে! চলো, যে-গর্তে

তাকে মাটি চাপা দিয়ে এসেছ সেখান থেকে তাকে

তুলে আনি। তো –

বাঁকবদলের জন্য আমি তার হাতে রং ধরিয়ে দিই

তাকে আঁকতে শেখাই ডিম, ফুল, পাতা, নদী

কিন্তু ও আঁকে তার মা’র কপালের টিপ

নানা রঙের অসংখ্য টিপ, নাকফুল, প্লেট, গ্লাস

মা’র অন্তিম দিনগুলোয় তাকে খাওয়ানোর ফিডার

এইসব আঁকতে আঁকতে আঁকতে আঁকতে

                      ও শেষে আঁকে এক নারী –

তার চোখ-মুখ-নাক : নানা রঙে রেখায়

আঁকা পরাবাস্তবে    তাকিয়ে বলে, এই আমার মা

অতঃপর মায়ের কোলে আঁকে নিজেকেও

এরই মধ্যে মা’র খোঁপায় গোলাপ আঁকতে গিয়ে

মনে করার চেষ্টা করে মা’র তা ছিল কি না

আমি মিথ্যা করে তার মাকে গোলাপের মহিমা দিই

এভাবে তার মাকে আরো নিখুঁত করতে করতে

তার সৃষ্টি থেকে চোখ তুলে সে প্রশ্ন করে

আমার মা দেখতে ঠিক কেমন ছিল! তো

ততদিনে তবে তার কাছে মা তার আকার, রং, আচার

সব ঘুলিয়ে অ্যাবস্ট্রাক্ট হয়ে গেছে, এ যে হবারই কথা –

সিজার তার মুখ কেটেকুটে জোড়া-তালি দিয়ে তা আর

আগের দশায় ফিরিয়ে দিতে পারেনি, তবে মাকে

রেখায়-রঙে ধরার সাধনার মধ্য দিয়ে ও হয়তো

একদিন এঁকে ফেলবে ম্যাডোনার এক অনন্য পোর্ট্রেইট

কিন্তু তখন নিশ্চয়ই ও এও বুঝবে, এই শিল্পের নারী

তার মা দূরে তার ভগ্নাংশ কিংবা ছায়াও নয়

নানা ধ্রুপদ কারুকাজে তাজমহল আসলে

এক সমাধি সৌধই, মমতাজ নয়