শ্লোকসন্তাপ

এই অনুজ্জ্বল জীবনের অর্থ কী? বন্ধু;

ঝড়ের রাতের বিপন্ন প্রদীপ আমি,

এইটুকু আশা নিয়ে বাঁচি যে

নিভে যাওয়ার আগে যদি একবার উজ্জ্বল হয়।

একটা জীবন হাসি-কান্নায় কেটে গেল

ভাবলাম মৃত্যুর পর অবসরে যাব

কিন্তু আমি তো জানি না, বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবার জন্য

না জানি কত দিন অপেক্ষা করতে হয়।

কাল সবকিছু গ্রাস করবে জানি

তবে যে হাহাকারগুলি লিপিবদ্ধ করেছিলাম একদিন

তারই আওয়াজ তুমি শুনতে পাবে আকাশে আকাশে।

তত্ত্বদর্শীদের কাছ থেকে একটি তত্ত্ব পেয়ে গেছি আমি –

‘নিজেকে খোঁজো’ – সেই থেকে আজও নিজেকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।

শান্তির কথা বলছি – মানে বিশ^শান্তি –

ধৈর্য ধরো অন্তত পৃথিবীর বিলয় পর্যন্ত অপেক্ষা করো, বন্ধু।

পবিত্রতা পবিত্রতা করে রাতদিন কত কিছু করেছি

তবু মনের কালিমা গেল না

তাহলে সত্যি সত্যি তুমি কি মোহর করে দিয়েছ।

সপ্তঝুলন্ত গীতিকবিদের মধ্যে অন্যতম লাবিদ,

সত্যান্বেষী। তিনি বলেছেন : আল্লাহ ছাড়া

সবকিছু অন্তসারঃশূন্য।

                        তুমি কি তাই মনে করো!

যৌবনেই কি শুধু প্রেমের আগমন-নির্গমন

তাহলে এই বৃদ্ধবয়সে হৃদয়ের ভেতর

কীসের আসা-যাওয়া!

মুক্তির সংগ্রাম কাকে বলে, কমরেড

একটি কারাগার থেকে আর একটি কারাগারে প্রবেশ!

এই কাফনে মোড়া হৃদয়

এখন কোনো কথা বলে না

একদিন যে কল্পনাকে ভাষা দিত

আর ভাষাকে দিত কল্পনার বিস্তার।

কী বিশাল কী বিপুল বিশ^ তোমার!

কী অসাধারণ শৃঙ্খলায় চলছে সবকিছু

তবু ভয়ে থাকি, কখন হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে!

কে ডাকে অনাদি অনাদি

কে ডাকে অনন্ত অনন্ত বলে, কেউ তো জানে না বন্ধু

কী আছে আমার দুই মুষ্টির ভেতর!

এই যে বিচূর্ণ আয়না

তাতে দেখেছিলাম ইতিহাসের ভাঙাগড়া

সেখানে মানুষই মানুষের আততায়ী আর

মানুষই মানুষের প্রেমিক।

যে ভালোবাসা আর সম্মান

হাজার রক্তক্ষরণের বিনিময়ে কেনা

মুহূর্তের ভুলে হে সতীর্থ বন্ধু সুজন

কোনো অনুগ্রহের আশায়, তাকে

পাহারাদারের কাছে বিক্রি করো না।