সিঙ্গাপুরে রবীন্দ্রনাথ এবং টেগোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর জীবনে ভারতবর্ষের বাইরে বিভিন্ন দেশে গমন করেছেন মোট বারোবার। ১৮৭৮ সালে সতেরো বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়ার অভিপ্রায়ে ইংল্যান্ড গমন ছিল তাঁর সর্বপ্রথম বিদেশ ভ্রমণ; ১৯৩৪-এ সর্বশেষ বিদেশযাত্রায় তিনি যান সিংহল তথা আজকের শ্রীলংকায়।

১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্তির পর তাঁর বিদেশ-ভ্রমণ মূলত বৃদ্ধি পায়। পাঁচ মহাদেশের তিরিশটিরও বেশি দেশে ভ্রমণ করেছেন তিনি। এসব ভ্রমণের ভিত্তিতে তিনি রচনা করেছেন য়ুরোপ-প্রবাসীর পত্র, যুরোপ-যাত্রীর ডায়ারি, জাপান-যাত্রী, রাশিয়ার চিঠি, জাভা-যাত্রীর পত্র, পারস্যে শীর্ষক ভ্রমণসাহিত্য।

বিশ্বময় পর্যটনের অংশ হিসেবে কবিগুরু সিঙ্গাপুর বন্দরে আগমন বা সেটি অতিক্রম করেন বিভিন্ন পথের চার সমুদ্রযাত্রায়; যথাক্রমে ১৯১৬, ১৯২৪, ১৯২৭ এবং ১৯২৯ সালে। এর মধ্যে সিঙ্গাপুরের মূল অংশে পদার্পণ করেন তিনবার। সেকালে নৌপথে এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব এবং দূরপ্রাচ্যে যাতায়াতকালে সিঙ্গাপুর ছিল জাহাজের বিরতি বা গন্তব্য পরিবর্তনের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর। ভ্রমণকারীদের যাত্রাবিরতি বা গন্তব্য অনুযায়ী জাহাজ ধরার ক্ষেত্রে সিঙ্গাপুর একটি জংশন হিসেবে পরিগণিত ছিল।

রবীন্দ্রনাথ প্রথমবার ১৯১৬ সালে অনানুষ্ঠানিকভাবে স্বল্প সময়ের জন্য, দ্বিতীয়বার ১৯২৭-এ আনুষ্ঠানিকভাবে এবং তৃতীয়বার অর্ধ-আনুষ্ঠানিকভাবে এই দ্বীপদেশ সফর করেন।

১৯১৬ সালে জাপান গমনকালে সিঙ্গাপুর বন্দরে ১৫ মে তারিখে  তাঁর জাহাজের যাত্রাবিরতি ছিল, সে-কারণে সেবারই এখানে কবির প্রথম আগমন ঘটেছিল। অনানুষ্ঠানিকভাবে সিঙ্গাপুর ভূখ– তাঁর পদার্পণ ঘটে। কবির আসন্ন জাপান সফরের সংবাদ পেয়ে সেদেশের প্রভাবশালী একটি পত্রিকা তাঁদের আয়োজিতব্য এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা প্রদানে কবির সম্মতি আদায়ের জন্য পত্রিকার সিঙ্গাপুরে অবস্থানরত এক ভদ্রমহিলাকে জাহাজে কবির সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য প্রেরণ করে; কিন্তু কবি জাপানে পৌঁছার আগেই এ-বিষয়ে কোনো প্রকারের সিদ্ধান্ত প্রদানে অপারগতা জ্ঞাপন করেন। তবে আগন্তুক এই জাপানি মহিলার আমন্ত্রণে (জাহাজে মালামাল
ওঠানো-নামানোর বিরক্তিকর কর্কশ শব্দের অত্যাচার থেকে পরিত্রাণলাভের উদ্দেশ্যে) দিনব্যাপী তাঁর সঙ্গে গাড়িতে শহর ঘুরে বেড়ান কবি এবং নৈশভোজশেষে জাহাজে প্রত্যাবর্তন করেন। পরদিন সকালে তাঁর জাহাজ সিঙ্গাপুর ত্যাগ করে।

১৯২৪ সালের ৭ এপ্রিল চীন যাওয়ার পথে সিঙ্গাপুর বন্দরে জাহাজ পরিবর্তন করতে হয় কবিকে।

১৯২৭-এ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয় উপদ্বীপ, জাভা, বালি, শ্যামদেশ (থাইল্যান্ড) অঞ্চলে মাসব্যাপী ভ্রমণের অংশ হিসেবে কবি ২০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে সিঙ্গাপুরে যান। ভারতের মাদ্রাজ (বর্তমানে চেন্নাই) বন্দর থেকে ফরাসি জাহাজ Ambroise-এ তিনি সিঙ্গাপুর যান এবং তানজোং পাগার পোতাশ্রয়ে অবতরণ করেন। বিশিষ্ট দক্ষিণ ভারতীয় খ্রিষ্টান বুদ্ধিজীবী এবং শান্তিনিকেতনের অধ্যাপক Arriam Williams মালয় উপদ্বীপে কবির এই সফরের সামগ্রিক ব্যবস্থাপনা করেন। সিঙ্গাপুরের জাহাজঘাটায় বিপুল জনতা সমভিব্যহারে মিউনিসিপ্যাল কমিশনারদের প্রধান এবং কবিগুরু অভ্যর্থনা কমিটির সভাপতি R J Farrer অতিথিকে স্বাগত জানান। স্থানীয় হিন্দু অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষে কে কে পাঠি তাঁকে মাল্যভূষিত করেন এবং বাদ্যসংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে কবিকে বরণ করা হয়। তারপর তাঁকে সরকারি অতিথিশালায় নেওয়া হয়। সিঙ্গাপুরের গভর্নর Sir Hugh Clifford এবং Lady Clifford-এর অতিথি হিসেবে রবীন্দ্রনাথ ২২ জুলাই পর্যন্ত সেখানে অবস্থান করেন। অতঃপর ইরানি বংশোদ্ভূত এবং ভারতবর্ষ থেকে আসা বিশিষ্ট প্রবাসী ব্যবসায়ী Mohammed Ali Namazie-র অতিথি হিসেবে তাঁর সমুদ্র-তীরবর্তী সিগলাপ এলাকার বাগানবাড়িতে অবস্থান করেন (এই নিবন্ধ লেখক কর্তৃক বর্তমান সময়ে এই বাড়িটির অবস্থান চিহ্নিত করার অনেক প্রচেষ্টা নেওয়া হলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়)। এক সপ্তাহেরও কম সময় সিঙ্গাপুরে অবস্থানকালে রবীন্দ্রনাথ বেশকিছু সংবর্ধনা ও বক্তৃতা অনুষ্ঠানে যোগদান করেন। সিঙ্গাপুর বন্দরে পৌঁছে তিনি ‘আহবান’ কবিতাটি রচনা করেন।

২১ জুলাই ১৯২৭ সালে Strait Chinese গোষ্ঠী কর্তৃক রেফ্যালস স্কয়ারের গার্ডেন ক্লাবে আয়োজিত শিক্ষিত এবং অবস্থাপন্ন চীনা ও অন্য ব্যবসায়ীদের মজলিসি অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে তিনি যোগ দেন। কবি এখানে ভারত ও চীনের ঐতিহ্যপূর্ণ পারস্পরিক ইতিহাস হৃদয়ঙ্গমের স্বার্থে ভারতীয় ছাত্রদের চীনের ইতিহাস অধ্যয়নে গুরুত্বারোপের প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে বক্তব্য উপস্থাপন করেন। তিনি উলেস্নখ করেন, ভারতীয় ছাত্রদের নিজস্ব ইতিহাস হৃদয়ঙ্গম করার লক্ষ্যে চীনের ইতিহাস অধ্যয়ন অতিপ্রয়োজন। সিঙ্গাপুরের বিশিষ্ট চিকিৎসক-শিক্ষাবিদ Dr Lim Boon Keng OBE এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

২২ জুলাই ১৯২৭ সালে সিঙ্গাপুরের গভর্নর Sir Hugh Clifford-এর উপস্থিতিতে ভিক্টোরিয়া থিয়েটারে কবিগুরুর জন্য নাগরিক সভার আয়োজন করা হয়। গভর্নর কবির পরিচিতিতে উলেস্নখ করেন, ‘দ্য গ্রেটেস্ট পোয়েট দ্যাট দ্য ইস্ট হ্যাড প্রোডিউসড ইন লিভিং মেমোরি’ অর্থাৎ প্রাচ্যে জন্ম নেওয়া স্মরণকালের শ্রেষ্ঠতম কবি হিসেবে। কবি এ-সভায় আন্তর্জাতিক সৌহার্দ্য এবং মানবজাতির ঐক্য (International friendship and unity of mankind) বিষয়ে বক্তৃতা করেন।

২৩ জুলাই ১৯২৭ তারিখে কবি সরকারি অতিথিশালা থেকে এমএ নামাজির অতিথি হিসেবে তাঁর বাসভবনে পদার্পণ করেন। একইদিন অপরাহ্ণে বাসভবন আঙিনায় তাঁর সম্মানে স্থানীয় ভারতীয় অ্যাসোসিয়েশন-আয়োজিত গার্ডেন পার্টিতে তিনি যোগদান করেন। অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলী খান সুরাটিসহ কয়েকশো অতিথি এ-অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। শ্রোতাদের সুবিধার্থে অনুষ্ঠানে সিঙ্গাপুরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো লাউড স্পিকার ব্যবহার করা হয়। কবিগুরু এ-সংবর্ধনায় ভারতের অতীত ঐতিহ্য বিষয়ে  বক্তৃতা করেন এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী শিক্ষালয়ের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য প্রবাসী ভারতীয়দের প্রতি আহবান জানান। এই অনুষ্ঠানে শিখ, পাঠান, বাঙালি, পাঞ্জাবি, তামিল, গুজরাটি, ভাতিয়া, হিন্দু, মুসলিম, খোজা, বুরাহ প্রভৃতি বিভিন্ন সম্প্রদায়ের প্রবাসী ভারতীয়রা উপস্থিত ছিলেন। কবির সফরসঙ্গী প–ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় কবির বক্তৃতার হিন্দি তর্জমা করে দেন। তাছাড়া তামিল অনুবাদও প্রচার করা হয়।

২৪ জুলাই ১৯২৭ তারিখে স্থানীয় চীনা অধিবাসীদের জন্য কবিগুরুর একটি বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্যালেস গে থিয়েটারে অনুষ্ঠিত এ-সভায় কবি ‘কালচারাল ফেলোশিপ বিটুইন চায়নিজ অ্যান্ড ইন্ডিয়ানস’ বিষয়ে বক্তৃতা করেন। তাঁর এই বক্তৃতা একই সময়ে চীনা ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করা হয়।

২৫ জুলাই ১৯২৭ সালে স্থানীয় স্কুলছাত্র ও শিক্ষকদের উদ্দেশে কবির একটি বক্তৃতা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সিঙ্গাপুরের প্রধান সচিব (কলোনিয়াল সেক্রেটারি) C H Woolfe এ-সভায় উপস্থিত ছিলেন। কবির পরিচিতি প্রদানকালে তিনি উলেস্নখ করেন, ‘ইউ হ্যাভ বিফোর ইউ ওয়ান অব দ্য ওয়ার্লড্স গ্রেটেস্ট ম্যান’।

২৬ জুলাই ১৯২৭ তারিখে স্থানীয় Malay Tribune পত্রিকার সম্পাদক Granville Roberts কবির সম্মানে বিদায়ী ভোজের আয়োজন করেন। এই অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে জার্মানি, আমেরিকা, ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূতরাসহ কলম্বোয় স্থিত জার্মানির রাষ্ট্রদূতও উপস্থিত ছিলেন। এদিনই কবি সিঙ্গাপুর থেকে পরবর্তী গন্তব্য মালাক্কা অভিমুখে যাত্রা করেন। কবিগুরুর দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই ভ্রমণকালে তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন প–ত সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় এবং শিল্পী সুরেন্দ্রনাথ কর।

পরবর্তীকালে ১৯২৯ সালে বোম্বাই থেকে কলম্বো হয়ে কানাডা গমনকালে ৯ মার্চ জাহাজ ভেড়ার কারণে সিঙ্গাপুর অতিক্রম করেন রবীন্দ্রনাথ। ভারতীয় সমিতির সভাপতি আর জুমাভাই জাহাজে এসে কবির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। কবি স্বল্পসময়ের জন্য কবি শ্রীশ গুহের বাড়িতে অবস্থান এবং পূর্বোক্ত এমএ নামাজির বাংলোতে মধ্যাহ্নভোজন গ্রহণ করেন। বহুসংখ্যক ভারতীয় এই ভোজসভায় উপস্থিত ছিলেন। কানাডা থেকে ফেরার পথে ২৬ জুন ১৯২৯ সালে সিঙ্গাপুরে জাহাজ বদল করে মাদ্রাজ অভিমুখে রওনা হন রবীন্দ্রনাথ।

রবীন্দ্রনাথ-রচিত ভ্রমণ বা পত্রসাহিত্যে তাঁর বিদেশ পর্যটন বিষয়ে নিজ-বর্ণনা পাওয়া গেলেও সিঙ্গাপুরকেন্দ্রিক কোনো ভাষ্য বা অভিজ্ঞতাজ্ঞাপক রচনা তেমন চোখে পড়ে না। তাই লভ্য বিভিন্ন গ্রন্থ ও সূত্রের তথ্যাদি ব্যবহার করে এ-লেখাটি প্রস্ত্তত করা হয়েছে।

বিশ এবং তিরিশের দশকে সিঙ্গাপুরে কবিগুরুর এত পদচারণা ঘটলেও তাঁর শিক্ষা বা দর্শনের কোনো প্রভাব অতঃপর সেখানকার মূলধারার সাহিত্য বা সংস্কৃতিতে পরিলক্ষেত হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয় না। বহুদিন বাদে, ষাটের দশকে কবিকে স্মরণ করতে দেখা যায় একটি রাসত্মার নামকরণে। ষাটের দশকের শেষার্ধে সিঙ্গাপুরের শিক্ষক ইউনিয়ন কর্তৃক শিক্ষকদের আবাসন সুবিধা সৃষ্টির লক্ষ্যে শহরের Ang Mo Kio এলাকায় ‘টিচার্স হাউজিং এস্টেট’ নামে একটি আবাসন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছিল।

এই এস্টেটের রাসত্মাগুলোর নামকরণ করা হয় বিভিন্ন ভাষার সাতজন খ্যাতনামা এশীয় কবির নামে, এঁরা হলেন – মুন্সী আবদুল্লা (মালয়), ওমর খৈয়াম (ফারসি), কালিদাস (সংস্কৃত), রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বাংলা), মোহাম্মদ ইকবাল (উর্দু), টু ফু (চীনা) এবং লি পো (চীনা)। এই আবাসিক এলাকার একটি রাসত্মার নাম ‘টেগোর অ্যাভিনিউ’।

এই টিচার্স হাউজিং এস্টেটের পাশেই পরবর্তীকালে গড়ে ওঠে ‘টেগোর  ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট’। সিঙ্গাপুরে প্রতিদিন সবচেয়ে বেশিবার যদি বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নাম উচ্চারিত হয়ে থাকে তা এই টেগোর শিল্প-এলাকার কারণে। প্রতিদিন নিজ নিজ কাজে বহু সিঙ্গাপুরবাসীর যাতায়াত ঘটে সংক্ষেপে টেগোর নামে পরিচিত এ-এলাকায়।

বহু গুণে গুণান্বিত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্য ও শিল্পের সব শাখায় তাঁর ঔজ্জ্বল্য চিরস্থায়ী করে গেছেন। সুকুমার শিল্পের পাশাপাশি ভৌত তথা উৎপাদন শিল্পেও তাঁর আগ্রহ ও সংশিস্নষ্টতার নমুনা পাওয়া যায়। নওগাঁর পতিসরে কিংবা বোলপুরের শ্রীনিকেতনে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ শিল্পের উন্নয়ন ও পৃষ্ঠপোষকতায় কবিগুরুর ভূমিকা আমরা জানতে পারি। বিশেষ করে শান্তিনিকেতন-সংলগ্ন শ্রীনিকেতনে কুটিরশিল্পের টেকসই উন্নয়ন প্রচেষ্টার উদাহরণ এখনো বিদ্যমান। তাই বলে রবীন্দ্রনাথকে শিল্পোদ্যোক্তা হিসেবে পরিচিত করার কোনো প্রচেষ্টা কোথাও চোখে পড়েনি; অথচ সিঙ্গাপুরে তাঁর নামে গড়ে উঠেছে একটি শিল্প-এলাকা!

টিচার্স হাউজিং এস্টেটের উলিস্নখিত সাত কবির মধ্যে কবিগুরুকে তিলক এঁটে সিঙ্গাপুরের উত্তরভাগে বিরাজ করছে এই রবিঠাকুর শিল্পাঞ্চল। এই নামকরণের আর কোনো সংশিস্নষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায় না, তবে আবাসিক এলাকার টেগোর অ্যাভিনিউটি একপ্রান্ত দিয়ে চলে গেছে। এটি হয়তো নামকরণের একটি সূত্র হতে পারে। এখানে উলেস্নখ্য, দুটি এস্টেট রাসত্মা বা অন্য কোনোভাবে সরাসরি সংযুক্ত নয়, বরং অসমান ভূমিতল এবং বৃক্ষরাজির বুনো বিসত্মার দ্বারা পৃথককৃত।

প্রথম যখন এখানকার ‘টেগোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেটে’র নাম দেখি তখন ঘুণাক্ষরেও কল্পনা করিনি এর সঙ্গে কবিগুরুর সম্পর্ক রয়েছে। তবে সহজাত অনুসন্ধিৎসার কারণে বিষয়টির উৎস সন্ধানে আগ্রহী হই। ইন্টারনেট বা সহজলভ্য পুস্তকাদি থেকে এ-বিষয়ে
খুব বেশি তথ্য না পেলেও শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হতে পারি, এই শিল্প-এলাকাটি বাঙালি কবিগুরুর নামই ধারণ করে আছে।

এলাকাটির বেষ্টিত জমির পরিমাণ ৫০ থেকে ৬০ একর হবে এবং এখানকার বিন্যাসিত সব রাসত্মাই কবিগুরুর নামচিহ্নিত যথা – টেগোর রোড, টেগোর ড্রাইভ, টেগোর লেন, টেগোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভিনিউ ইত্যাদি। এমনকি ভবনাদির নামকরণেও টেগোরের প্রভাব লক্ষণীয়। অথচ বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে কবিগুরুর সার্বিক সৃষ্টি, অবদান ও মননের সঙ্গে সম্পর্কবিহীন এবং কাকতালীয়।

যা হোক, ভারতবর্ষ থেকে বেশ দূরত্বে ভিন্ন একটি স্বাধীন দেশে এই ‘টেগোর ইন্ডাস্ট্রিয়াল এস্টেট’ কি চমকপ্রদ নয়?

প্রকৃতই অনন্ত উৎস তুমি রবীন্দ্রনাথ \

 

তথ্যসূত্র

* দ্য নালন্দা-শ্রীবিজয় সেন্টার, ইনস্টিটিউট অব সাউথ-ইস্ট

এশিয়ান স্টাডিজ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় সিঙ্গাপুরের প্রকাশনা।

* জাপান-যাত্রীর পত্র, জাভা-যাত্রীর পত্র, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

* রবীন্দ্রজীবনী, প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়।

* বিশবভ্রমণে রবীন্দ্রনাথ, জ্যোতিষচন্দ্র ঘোষ।

* আরবান রি ডেভেলপমেন্ট অথরিটি, সিঙ্গাপুর।

* ইন্টারনেট।