দেশকে, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবেসে সকল সুখভোগ বর্জন করে যে-শিল্পী নিপীড়িত মানুষের পাশে নাটক নিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তাঁকে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে সংস্কৃতি ও মানবতার অবক্ষয় দেখতে হয়েছে। – এমন এক মানবিক স্পর্শকাতর নাট্যমুহূর্ত নিয়ে ঢাকার প্রাঙ্গনেমোর নাট্যদল সম্প্রতি মঞ্চে এনেছে অভিনেতা নাটকটি। এটি রচনা করেছেন অনন্ত হিরা এবং নির্দেশনা দিয়েছেন নূনা আফরোজ। নাটকটিতে উঠে এসেছে সমকালের যুগযন্ত্রণা। যে-দেশ স্বাধীন হলো ‘ভাষা’ভিত্তিক সাংস্কৃতিক ধারাকে কেন্দ্র করে, সেদেশেই বিকশিত হলো ভিনদেশি সংস্কৃতি। একজন অভিনয়শিল্পীর এমন মানবিক টানাপড়েন নাটকটির বিষয়। প্রায় এক ঘণ্টা ২০ মিনিট ব্যাপ্তির এ-নাটক জাতীয়তাবাদী চেতনাকেও উসকে দেয়।
ঢাকার অতিপরিচিত নাট্যদল ‘প্রাঙ্গনেমোর’ গত জুনে মঞ্চে নিয়ে এসেছে অভিনেতা এবং নাটকটি দর্শকদের মনোযোগ আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে বলে ধারণা করি। গত দুই দশকে ‘প্রাঙ্গনেমোর’ বেশকিছু প্রযোজনা নিয়ে বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে সাড়া ফেলতে সমর্থ হয়েছে। নাটকগুলি হলো – আওরঙ্গজেব, আমি ও রবীন্দ্রনাথ, হাছন জানের রাজা, রক্তকরবী, ঈর্ষা, কনডেমড সেল প্রভৃতি। বাংলাদেশের পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশ ভারতেও দলটির জনপ্রিয়তা রয়েছে। অভিনেতা নাটকটি তাদের ১৬তম প্রযোজনা।
বাংলা ভাষায় শিল্পীর মনস্তত্ত্ব নিয়ে বহু নাটক নির্মিত হয়েছে। তবে অভিনেতা নাটকটি একটু ব্যতিক্রম। এটি শুরু হয় অভিনেতা চরিত্রের অনুপস্থিতির মধ্য দিয়ে। দৃশ্যপট এমন – মঞ্চে নাটক শুরু হবে, কিন্তু অভিনেতাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। দর্শকরা অপেক্ষা করছেন। নাটক হবে কি হবে না তা অনিশ্চিত। এমন সময় সাংবাদিক উঠে যান নাটকের রূপসজ্জাকর বঙ্গজিৎ দত্তের কাছে। জানতে চান অভিনেতা সম্পর্কে। একে একে নানা দৃশ্যে উঠে আসতে থাকে অভিনেতার বর্ণিল শিল্পীপরিচয়, শিল্পীর সাধনা, শিল্পীর প্রতিশ্রুতি – নানা কিছু। কিন্তু আদৌ কী অভিনেতা শো শুরু হওয়ার আগে উপস্থিত হতে পারবেন? জানা যায়, ‘মঞ্চমহারাজ’খ্যাত এই অভিনেতাকে অপহরণ করা হয়েছে। দেশের সর্বত্র সে-সংবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। চারদিকে আন্দোলন আর উত্তেজনা – ফিরিয়ে আনতে হবে মঞ্চমহারাজকে। এমন সময় মঞ্চমহারাজ-খ্যাত অভিনেতা এসে উপস্থিত হন। তিনি জানান, তাঁকে কেউ অপহরণ করেনি। তিনি স্বেচ্ছায় নির্বাসনে গিয়েছিলেন। ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়। তারপর উন্মোচিত হতে থাকে প্রকৃত রহস্য। নাটকটির গল্প উত্তেজনাপূর্ণ। কাহিনির চূড়ান্ত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য ঘটনাক্রম সুবিন্যস্ত, তবে নাট্যকৌশলে দুর্বলতা স্পষ্ট। নাটকটি এগিয়ে গেছে গল্পকথন ও সংলাপে। যেহেতু নাটকটি একজন অভিনেতাকে ঘিরে তাই অন্যান্য নাটকের ছোট ছোট অংশের সন্নিবেশ দেখা যায় নাটকে। অর্থাৎ নাটকের মধ্যে নাটক। এভাবেই পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে অভিনেতা। অবশ্য কখনো কখনো অন্য নাটকের দীর্ঘ চিত্রায়ন অভিনেতার চিন্তাপ্রবাহকে ভিন্ন দিকে নিয়ে যায়।
নাট্যকার তাঁদের পূর্বের নাট্য-প্রযোজনাকে আশ্রয় করে বাস্তববাদী ধারায় শর্টকাট পথে হেঁটেছেন। দৃশ্যগত নাটকীয়তা না থাকলেও এর নাটকীয়তা আখ্যানভাগে। শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও সৈয়দ শামসুল হকের নাট্যাংশ ব্যবহার যেমন অভিনেতার শিল্পীত্ব প্রকাশে ভূমিকা রেখেছে, তেমনি নানা জটিলতাও সৃষ্টি করেছে। তবে শেষোক্ত নাট্যকারের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় নাটকটি মূল থিমের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। বাকি সব নাট্যাংশ অভিনেতার বৈশিষ্ট্যকে প্রকটিত করেছে। পরিশেষে নুরলদীনের সারাজীবন নাটকে নতুন প্রজন্মযোদ্ধার আহ্বানের মধ্য দিয়ে নাট্যচিন্তা পরিণতি লাভ করেছে।
নাটকের আখ্যানভাগের সময়কাল দুই ঘণ্টা। কিন্তু নাটকে ক্রনোলজিক্যাল সময় অভিনেতার সারাজীবন। মহিলা সমিতি মঞ্চে নাটক হবে কিন্তু অভিনেতা অনুপস্থিত – এমন ঘটনামুখ থেকে নাটক শুরু বলে আকর্ষণটা বাড়ে। নাটকের শুরুতে বোঝা যায় না অভিনেতার নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ কী। কিন্তু গল্প পরম্পরায় আবিষ্কার হতে থাকে রহস্য। ঠিক সফোক্লিসের ইডিপাস নাটকের রহস্য উন্মোচনের মতো। অভিনেতার নিরুদ্দেশের কার্যকারণে যৌক্তিকতা দুর্বল হলেও আবেগের জায়গা থেকে স্পর্শকাতর। আখ্যানের প্রথম অংশে অপেক্ষা, দ্বিতীয়ভাগে মেকাপম্যানের সাক্ষাৎকারে অভিনেতার চরিত্রবৈশিষ্ট্য-শিল্পচিন্তার প্রকাশ এবং শেষে অভিনেতার ফিরে এসে সংবাদ সম্মেলন উপস্থাপিত হয়েছে। নাটকের শেষে ওঠে নৈতিকতার প্রশ্ন। দেশের সাধারণ মানুষ মুক্তিযুদ্ধ কেন করেছিলেন? দেশকে বাঁচাবেন, দেশের সংস্কৃতিকে বাঁচাবেন বলে? নাকি রক্ষকই ভক্ষক হয়ে উঠবেন? অভিনেতার সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরাও এমন প্রশ্নে আত্মদ্বন্দ্বে পড়ে যান।
অভিনেতা নাটকে চরিত্র মাত্র তিনটি। সাংবাদিক, মেকাপ আর্টিস্ট ও মঞ্চমহারাজ উপাধিপ্রাপ্ত অভিনেতা। নাটকের ভেতরের বিভিন্ন নাট্যাংশে এই তিনজনই অভিনয় করেছেন। নাটকে সাংবাদিক চরিত্রটি নিতান্তই কৌতূহলী সত্তা। সাংবাদিক বারবার জানতে চান অভিনেতার নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ। তিনি শিল্পীকে ভালোবাসেন। দেশের প্রতি, শিল্পের প্রতি প্রত্যেকটি মানুষের দায়বদ্ধতাকে তিনি বিশ্বাস করেন। অন্যদিকে মেকাপ আর্টিস্ট, যিনি শিল্পীকে শিল্পে উদ্বুদ্ধ করতেন আপ্রাণ – নিজের জীবনকে তুচ্ছ করেও রঙের তুলি নিয়ে বসে থাকেন। তিনি অভিনেতার মাঝে খুঁজে চলেন শিল্পের আনন্দ। শিল্পের কোনো বাণিজ্যিক মানসিকতা তাঁর নেই। তাই তাঁর প্রতীক্ষা, তাঁর বিশ্বাস – অভিনেতা নাটকের শুরুতে আসবেনই। মঞ্চের আলো জ্বেলে তিনি বসে থাকেন শিল্পের সাধনায়, শিল্পীকে সাজানোর বাসনায়। আর অভিনেতা নির্লোভ কল্যাণমুখী এক শিল্পী, যাঁর অন্তরে, চলনে, জীবনের স্পন্দনে শিল্পের অলিতে-গলিতে ঘুরে বেড়ানোর অদম্য বাসনা। যিনি দেশকে ভালোবাসেন, দেশের সংস্কৃতিকে ভালোবাসেন, মানুষকে ভালোবাসেন। মানুষের মাঝেই খুঁজে ফেরেন নিজের অবয়ব। মঞ্চমহারাজ-খ্যাত অভিনেতা চরিত্রে অভিনয় করেছেন অনন্ত হিরা। নাটকে অসংখ্য চরিত্রে তিনি রূপদান করেছেন। তাঁর অভিনয়ে প্রাণবন্ততা থাকলেও নাট্যীয় ভিন্ন-ভিন্ন চরিত্র নির্মাণে খুব একটা ভিন্নতা চোখে পড়েনি। অবশ্য পোশাকের পরিবর্তন বেশ লক্ষণীয়। অভিনেতার সংবাদ সম্মেলনটিও কৃত্রিমতায় আড়ষ্ট বলে মনে হয়েছে। এ-চরিত্রের সংলাপও খুব সুস্পষ্ট ছিল না। সাংবাদিক চরিত্রে প্রকৃতি সিকদারের অভিনয়ে বিশ্বাসের যথেষ্ট ঘাটতি ছিল। চরিত্রায়ন ও মঞ্চচলনে অল্পবয়সী চাঞ্চল্য থাকলেও চরিত্রগুলির অন্তঃব্যঞ্জনায় আরো স্থিতধী হওয়া জরুরি। বঙ্গজিৎ দত্ত চরিত্রটি নাট্য-ইতিহাসের চরিত্র। তিনি বাংলাদেশের নাট্যাঙ্গনে থিয়েটারের রূপসজ্জাশিল্পী হিসেবে প্রায় চার দশকের বেশি সময় কাজ করেছেন। তিনি পেশাদার মেকাপম্যান হলেও নাটককে খুব ভালোবাসতেন। তিনি মারা গেছেন প্রায় এক যুগ আগে। কিন্তু নানাজন নানাভাবে তাঁকে স্মরণ করেন। সেই বঙ্গজিৎ দত্ত চরিত্রে অভিনয় করেছেন সবুক্তগীন শুভ। নাট্যকার সুকৌশলে এমন চরিত্র জুড়ে দিয়ে শিল্পের প্রতি দায়ভার দেখাতে সচেষ্ট ছিলেন।
নির্দেশক নূনা আফরোজ নাট্যনির্মাণে কোনো অভিব্যক্তিক সুনির্দিষ্ট ডিজাইনে বিশেষ তৎপর না থাকলেও রিয়ালিস্টিক ধারার নিরাভরণ প্রসেনিয়াম মঞ্চবিন্যাসে নাট্যটি উপস্থাপন করেছেন। নির্দেশক মেটাফোর কিংবা বিশেষ শিল্প-উপকরণ তৈরির চেয়ে মূল মেসেজে গুরুত্ব দিয়েছেন। একধরনের আবেগ সৃষ্টি করতে চেয়েছেন। তাতে শিল্পগত আদর্শিক হেজিমনির ভাব তৈরি হয়েছে। মঞ্চে বিশেষ সেট, রং কিংবা প্রতিচ্ছায়া ব্যবহার করেননি। পরিবেশ সৃষ্টির চেয়ে সংলাপের মাধ্যমে গল্পের কাহিনি বিকাশে ছিলেন মনোযোগী। আলো-সংগীত-চলনবিন্যাস অর্থাৎ সামগ্রিক ডিজাইনের মধ্যেও সুসমন্বয় কিংবা পরিকল্পকদের মধ্যে সমন্বয় জরুরি। নির্দেশক নূনা আফরোজ অভিনেতা চরিত্রে অনন্ত হিরাকে এতো উঁচু স্থানে পৌঁছাতে চেষ্টা করেছেন যে, অন্যান্য চরিত্রের সঙ্গে সুসামঞ্জস্যে ছেদ পড়েছে।
নাটক প্রসঙ্গে নূনা আফরোজ বলেন, ‘আমাদের অভিনেতা শিল্পী এবং শিল্পযোদ্ধা। সে বাঁচে বাংলাদেশে কিন্তু সে লড়াই করে পৃথিবীর সকল বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষের জন্য। পৃথিবীর যে-কোনো প্রান্তে যে-কোনো কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা, রাষ্ট্রীয় বা সামাজিক অনাচার, অমানবিককতা ও রুচিহীনতার বিরুদ্ধে সে লড়াই করে। আমাদের অভিনেতা মুক্তিযোদ্ধা। সে তার অস্ত্র জমা দিয়ে সংস্কৃতিকে, থিয়েটারকে একটি অস্ত্র হিসেবে, একটি লড়াই হিসেবে গ্রহণ করে এবং পাঁচ দশক নিরন্তর, নিরবচ্ছিন্নভাবে সেই লড়াইতে নিবেদিত থাকে। আমাদের অভিনেতাকে দর্শক ভালোবেসে মঞ্চমহারাজ বলে ডাকে। কিন্তু হঠাৎ আমাদের অভিনেতা নিখোঁজ হয়ে যায়…।’
অভিনেতা চরিত্রের সংলাপগুলি খুবই আবেগী ও স্পর্শকাতর। তবে অতিরঞ্জিত নানা কথন, বাস্তবতাহীন আবেগী নানা উপকরণ ও বাক্য আছে সংলাপে। অভিনেতা মঞ্চে যখন উচ্চারণ করেন – বাংলা নাটক হাজার বছরের, আবার পরক্ষণে যখন বলেন, মাইকেল মধুসূদন প্রথম নাট্যকার, তখন বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে বাধ্য। সেক্ষেত্রে প্রকৃত ইতিহাস যেন দর্শক বুঝতে পারেন সে-বিষয়ে সচেতন থাকা প্রয়োজন। তথ্যগত ভিন্নতা শিল্পমানকে ক্ষুণ্ন করে। শিল্পীর আবেগ জরুরি – সত্য; কিন্তু সঙ্গে বাস্তবতা বা ইতিহাসের সত্যতাও আবশ্যক। কখনো সংগীত বেড়ে গেছে, সংলাপ শোনা যায়নি। কখনো কখনো সংলাপের সঙ্গে সংগীতের সমন্বয় হয়নি। আঞ্চলিক ও প্রমিত ভাষার নানা মিশ্রণ ছিল সংলাপে। সংলাপে প্রায় সবারই সুস্পষ্টতার অভাব থাকলেও অভিনেতৃগণ মডুলেশনে বেশ জোর দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। কিছু মডুলেশনে এতোই মনোযোগী ছিলেন যে, তা কৃত্রিম সংলাপে পরিণত হয়েছে।
আলোক পরিকল্পনায় ঠাণ্ডু রায়হান নাট্য-চরিত্রের আবেগকে তুলে ধরতে অধিকমাত্রায় স্পটলাইট ব্যবহার করে নাটকটিকে কালারফুল করে তুলেছেন। স্থান-কাল ফোকাস খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল না। সংলাপনির্ভর নাট্যমুহূর্ত তৈরিতে আলো ছিল তৎপর।
নূনা আফরোজের পোশাক ভাবনায় সমকালীন টিনএজ সাংবাদিক, বঙ্গজিৎ দত্তের চরিত্রানুগ পাঞ্জাবি পাজামা চশমা ও অভিনেতার জিন্স প্যান্ট-শার্টের সঙ্গে দেশপ্রেম বোঝাতে সবুজ-লালের জাতীয় পতাকার সিম্বলে উত্তরীয় ব্যবহার করেছেন।
মঞ্চসজ্জায় সাজু খাদেম খোলামেলা ফাঁকা মঞ্চ রেখেছেন। শেষ দৃশ্যে সংবাদ সম্মেলনের সময় একটি চেয়ার ব্যবহার করেছেন। অন্যান্য নাট্যাংশে কিছুটা সাজেস্টিভ উপকরণ ব্যবহার করেছেন। নীল কামরুলের সংগীতে সাবজেক্ট-অবজেক্টের দুর্বোধ্যতা ছিল। হাততালি কখন, কেন, কাকে দিচ্ছে তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। আর রেকর্ডেড মিউজিকের স্বরগ্রাম এতো উচ্চ ছিল যে, তা মাঝে মাঝে বিরক্তি উৎপাদন করেছে। কখনো কখনো মঞ্চ-রিহার্সেল কিংবা মঞ্চ-ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি থাকলেও এমনটা হয়ে থাকে।
নাট্য-নির্দেশক প্রধানত নাট্যবস্তুর নানা উপকরণ নিয়ে দৃশ্যের মালা বুনন করেন। যেখানে কাহিনি, অভিনেতা, সেট, আলো-সংগীত সবকিছু মিলে একরৈখিক ভাষা তৈরি হয়। ফলে সবকিছুর ঐকতানে এক নাট্যছন্দ, নাট্যস্পন্দন ও গতি তৈরি হয়। এ-নাটকে অভিনেতৃবৃন্দের চলনবিন্যাসে নাট্যগতি ছিল বৈচিত্র্যময়। গল্পটি টানটান উত্তেজনায় পরিণতির দিকে এগিয়েছে। তবে বিশেষ কোনো ঝোঁক বা কাজ ছিল না। নির্দেশক বিশেষ নাটকীয়তা হিসেবে অভিনেতার ফেরার প্রত্যাশার মধ্যে ঝোঁক তৈরি করেছেন। উত্তেজনাময় এক ছন্দে এগিয়েছে নাটক।
অভিনেতা নাটকের কাল্পনিক ভুবন বাস্তবের নাট্যমঞ্চ। আর দর্শক নির্দিষ্ট আসনে নিষ্ক্রিয় বাস্তবে বসে মঞ্চে কল্পিত নাট্যভুবন দেখেন। সেজন্য কল্পিত নাট্যভুবনের সঙ্গে বাস্তবতা কিংবা বাস্তবতার সঙ্গে কল্পিত ভুবনের পার্থক্য করা প্রয়োজন। কল্পিত নাট্যভুবনটি বিশ^াসযোগ্য হওয়া বাধ্যতামূলক, যেখানে স্থান-কাল ও পরিবেশের বিশ্বাসমুখী অনুষঙ্গের নিবিড়তা শিল্পসৌন্দর্যে উদ্ভাসিত করে। নাটকটির মঞ্চ ছিল সাদাসিধে। কোনো উপকরণ ব্যবহার করা হয়নি। নির্দেশক প্রতীক, রূপক ও অলংকারের চেয়ে শিল্পীর আবেগকে গুরুত্ব দিয়েছেন। নাটকে কোনো ট্র্যাজিক পরিণতি না থাকলেও আছে সমাজের জন্য, সভ্যতার জন্য, নিজের সংস্কৃতির প্রতি প্রতিশ্রুতিশীলতা। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নাটকটি গুরুত্ববহ। নাট্যবীজের মূলবাণী দর্শকের মধ্যে যে সংস্কৃতির প্রতি দায়বদ্ধতা সঞ্চারিত করে তা বর্তমান বাস্তবতায় খুবই জরুরি।


Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.