অমরত্বের অন্য নাম

কোনো কোনো মৃত্যুকে আমার বরং অনির্বাণ অগ্নিশিখা মনে হয়
কোনো কোনো হত্যাকাণ্ডকে মনে হয় আগ্নেয়গিরির অনর্গল অগ্ন্যুৎপাত
ভালোবাসার চেয়ে যারা অস্ত্রকে অধিক শক্তিধর মনে করে
আমার অস্তিত্ববান অবস্থান চিরকাল তাদের বিপরীত কাতারে

ক্ষমাহীন সময়ের অভিঘাতে
বিরুদ্ধ বুটের আওয়াজ ক্রমাগত হারিয়ে যায়
নিসর্গের নির্মম প্রান্তরে
পক্ষান্তরে রুদ্ধকণ্ঠ মানুষের মিছিল দীর্ঘতর হতে হতে
অতিক্রম করে দিগন্তবৃত্ত

বর্ণমালার উপান্তে এসে চন্দ্রবিন্দুতে চাঁদ ওঠে
কালরাত্রির ভ্রূকুটি উপেক্ষা করে
নীলিমায় জাগতিক জ্যোৎস্না জপে যাঁর পরাক্রান্ত নাম
আমি আবাল্য তাঁর গল্প শুনেছি
তাঁর কাছে পাঠ নিয়েছি মমতার
দীক্ষা নিয়েছি সাহসিকতার
শিক্ষা নিয়েছি সংগ্রামের
মন্ত্র নিয়েছি স্বাধীনতার

দৃশ্যবদ্ধ ক্যানভাস ফুঁড়ে স্বর্ণঈগলের অসীম উড়াল
করপুটে প্রতিচ্ছবি হয়ে ডানা মেলে সোনালি রোদ্দুরে
বৃক্ষের শেকড়ে আদিকালের তৃষ্ণা
পত্রমর্মরে তার ধ্বনিময় অভিব্যক্তি

জানালার গরাদের বাইরে সম্মোহনে পথ রাঙায় রুদ্রপলাশ
আমরা তখন একটা বিন্দু থেকে চলমান রেখা হয়ে যাই
অংশ হয়ে যাই অবিনাশী আয়োজনের
অবিস্মরণীয় ইতিহাসের
পরিবর্তিত ভূগোলের
মানুষের মানচিত্রের

রূপকথার সেই জীয়নকাঠি দেখেছি যাঁর হাতে
আমি আবাল্য তাঁর পদচিহ্ন ধরে হেঁটেছি
সামাজিক সকল সড়কে
পশ্চিমের পর্বতমালা মাথা তুলে দেখে পূর্বের পর্বতশৃঙ্গ
অন্তরীক্ষে আলোর পক্ষপুট বিস্তার করে সাহসী সূর্য

আমাদের যূথবদ্ধ জীবনে কখনো নেমে আসে
সময়ের কৃষ্ণকেশী ছায়া
কখনো চমকায় হাস্যোজ্জ্বল চন্দ্রিমা
আমরা কতটুকুইবা পরিণামের শস্য খুঁজে পাই
আগাম ভাবনার ভাঁড়ারে
হিসেবের খাতায় জমা-খরচ-ইজার রং বদলে বদলে যায়
নাটকের মুখস্থ সংলাপ মুখর হয়ে ওঠে মঞ্চে
পরিপার্শ্ব পাক খায় আলো আর অন্ধকারে

যে-মাটিকে ছুঁয়ে আমি প্রতিদিন প্রভাতে পবিত্র হয়ে উঠি
যে-মাটির সুধাপানে আমি প্রতিমুহূর্তে প্রাণবান হয়ে থাকি
সে-মাটির প্রতিটি পরমাণু প্রতিনিয়ত যাঁর কথা বলে
আমি আবাল্য অনুভব করেছি তাঁর মৃত্যুঞ্জয়ী মর্মবাণী
না, তাঁর কোনো মৃত্যু নেই
বরং মৃত্যুহীন অভিধায় লেখা হয় তাঁর নাম
অমরত্বের অন্য নাম শেখ মুজিবুর রহমান