আনিসুজ্জামান : পরিমিতির প্রতীক

তখনো পর্যন্ত সামনাসামনি দেখা হয়নি, শুধু তাঁর স্বরূপের সন্ধানে পড়েছি। চট্টগ্রাম সরকারি কলেজে সাহিত্যের স্নাতক শ্রেণির পাঠ্যে কাজে লাগাই আনিসুজ্জামান-রচিত গ্রন্থটি। চর্যাপদ, মধ্যযুগ, বাঙালি মুসলমান লেখকদের তথা বাংলাদেশের সৃজনশীল-মননশীল সাহিত্য ও সমাজের বিশ্লেষণে তাঁর লেখা গ্রন্থর্ভূত চারখানা প্রবন্ধ সত্যিকার অর্থেই ছিল দিকনির্দেশনামূলক। সেই বিখ্যাত লেখক টানা করিডোর ধরে হেঁটে যান ধ্যানী-মৌন এক ভঙ্গিতে আর আমরা স্নাতকোত্তরে নবাগত শিক্ষার্থীরা অবাক তাকিয়ে দেখি দুইধারের মুখরতা কী এক মন্ত্রবলে সহসা নিশ্চুপ। তিনি যে খুব উদ্যত ছন্দে অন্তর্ভেদী দৃষ্টি ছড়াতে ছড়াতে যান তা নয়, কিন্তু তাঁর গম্ভীর প্রতিটি পদবিক্ষেপ তাঁর ব্যক্তিত্ব ও পাণ্ডিত্যের আভিজাত্যের ছাপ রেখে যায়। সবচাইতে অস্থির-বাঙ্ময় প্রকৃতির শিক্ষার্থীকেও দেখেছি আনিসুজ্জামানের সম্মানে পালন করেছে নীরবতার উদ্‌যাপন।
স্নাতকোত্তর শ্রেণিতে আনিস স্যার আমাদের পড়াতেন বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাস এবং রবীন্দ্রনাথের কালান্তর। আপাতদুরূহ বঙ্কিমে তাঁর মসৃণ ক্রমারোহণে আমরা অর্বাচীনের দল কী করে কী করে যেন হয়ে উঠি বঙ্কিমভক্ত। নম্র-অনুচ্চ স্বরে বঙ্কিমের উপন্যাসের সাফল্য ও সৌন্দর্যের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করতেন তিনি। বঙ্কিম পড়াতে গিয়ে বিদ্যাসাগর, ভারতবর্ষ, বাংলা, পাশ্চাত্য শিক্ষা, মধ্যবিত্ত, উনিশ শতকের রেনেসাঁস প্রায় সবকিছুতে আলো ফেলতে ফেলতে যেতেন আনিস স্যার। আনন্দমঠের মতো দুষ্প্রবেশ্য উপন্যাসকে তিনি সামাল দেন পারঙ্গমতার সঙ্গে। বলেন, উপন্যাসটির মূলবিন্দু পরাধীনতার গ্লানি এবং জাতিগত অপমান এবং তা থেকে উদ্ধারের চেতনা। ওই বয়সে সবটা বুঝেছি এমন বলা মুশকিল; কিন্তু মনে হয়েছে, উপন্যাস মানেই আদি-মধ্য-অন্ত প্রভৃতির আশ্রয়ে রূপ পরিগ্রহ করা কোনো গল্প বা কাহিনি নয়। উপন্যাসের চরিত্রগুলোকে নিয়ে চাইলেই রচয়িতা যা খুশি তা করতে পারেন না। কৃষ্ণকান্তের উইল উপন্যাসের নীতি-শিল্প দ্বান্দ্বিকতার প্রসঙ্গে আনিস স্যার জানান, রোহিণীকে গোবিন্দলাল হত্যা করলেও এটা কোনোভাবেই বলা যাবে না বঙ্কিম রোহিণীকে ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখেছিলেন। বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসে তৎসম শব্দের অসাধারণ সৌন্দর্য সৃজনস্পর্শে হয়ে ওঠে অনুপম – বিভিন্ন উপন্যাস থেকে দৃষ্টান্ত দিয়ে স্যার সেগুলো উপস্থাপন করেন। এভাবে বঙ্কিমকে আমরা আবিষ্কার করি। আমাদের মনে হয়, সাহিত্যসম্রাটের ব্যাখ্যাকারী হন আসলে শিক্ষকসম্রাটই। তিনি যে কেবল আমাদেরই বঙ্কিম পড়িয়েছেন তা নয়, পড়িয়েছেন আমাদের শিক্ষকদের শিক্ষকদেরও। বহুকাল পরে এসে তারই সাক্ষ্য পাই আবুল কাসেম ফজলুল হকের লেখায় (অধ্যাপক আনিসুজ্জামান : আমাদের শিক্ষক)। ১৯৬২-৬৩ শিক্ষাবর্ষে, মানে আমাদের প্রায় দুই দশককাল পূর্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে তাঁর শিক্ষকতা প্রসঙ্গে অনেক কথা লিখেছেন আবুল কাসেম ফজলুল হক। সেখান থেকে কেবল একটা বাক্যই উদ্ধার করি – ‘স্যার ক্লাসে কথা ধীরে বলতেন এবং কম বলতেন।’ এই ধীরে বলা ও কম বলার অর্থ আমার কাছে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলা এবং অপ্রয়োজনীয় কথা না বলা। আমরা, তাঁর প্রত্যক্ষ ছাত্ররা সেদিন এভাবেই তাঁকে শনাক্ত করি।
রবীন্দ্রনাথের কালান্তরের প্রথম ক্লাসেই তিনি গ্রন্থস্থ প্রবন্ধগুলোর শ্রেণিকরণ করে বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ রচনায় রবীন্দ্রমানসের বিচিত্র ক্রিয়তার দিকগুলো তুলে ধরেন। তারপর ধারাবাহিকভাবে ভারতীয় রাজনীতি, রেনেসাঁস, হিন্দু-মুসলমান সমস্যা – এইসব ছুঁয়ে-ছেনে রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গল্প-উপন্যাস, অন্যান্য প্রবন্ধ থেকে দৃষ্টান্ত এনে পুরো বিষয়টিকে পরিবেশন করেন সামগ্রিকভাবে। আমরা যেন একটি সহায়ক গ্রন্থ পাঠ করছি এক ঘণ্টার একটি পাঠকক্ষের অভ্যন্তরে। বস্তুত তখন আমাদের মধ্যে অনেকেই কঠিনে অভ্যস্ততা অর্জন করে ফেলি। আমাদের পাঠ্যতালিকায় থাকে রবীন্দ্র-সমালোচনার জন্য আবু সয়ীদ আইয়ুব কি অরবিন্দ পোদ্দার, রবীন্দ্র-উপন্যাসের জন্য সৈয়দ আকরম হোসেন এবং জীবনানন্দ দাশের জন্য আবদুল মান্নান সৈয়দ। কিন্তু আনিস স্যারের ক্লাস করতে করতে আমরা হয়ে উঠি সহজতার অভিসারী। মানে, উপলব্ধ হয়, সারকথার স্পষ্ট-সরল উপস্থাপনাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যেটুকু সময় তিনি শ্রেণিকক্ষে বাঙ্ময় থাকতেন কখনো শুনিনি তাঁর মুখে কোনো অপ্রয়োজনীয় কথা কিংবা কোনো অপ্রাসঙ্গিক বক্তব্য। সাহিত্যকে সমাজ-সংস্কৃতি-রাজনীতি-ধর্ম এইসব দিয়ে সমন্বিত করে আলোচনার বিষয়বস্তুকে জটিল-ঘোরালো না করে বরং উপভোগ্য করে তোলার একটা অদ্ভুত দক্ষতা তাঁর ছিল। হয়তোবা সেটিই ছিল তাঁর বিশেষত্ব বা প্রাতিস্বিকতা। ধরা যাক, আমাদের পড়া থাকে ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, সুকুমার সেন কিংবা অতীন্দ্র মজুমদারের চর্যাপদ-সমালোচনা। আনিসুজ্জামানের চর্যাগীতির সমাজচিত্র প্রবন্ধ পঠিত চর্যাকে নিয়ে যায় অন্যতর অবলোকনের দিকে। আত্যন্তিকভাবে ধর্ম-দর্শননির্ভর সাহিত্যকর্মও সমাজ ও সমকালের বার্তাবাহক হয়ে উঠতে পারে – তাঁর সমালোচনা পাঠককে উসকে দেয় নতুনতর ভাবনার অভিমুখে। পরবর্তীকালে লক্ষ করি, চর্যাসম্পর্কিত প্রবন্ধটির সূত্রে সাহিত্যসমালোচক বেগম আকতার কামাল আনিসুজ্জামান-মানসের বিশেষত্বকে চিহ্নিত করেন যথার্থরূপে। প্রবন্ধটিতে চর্যা সম্পর্কে ব্যক্ত আনিসুজ্জামানের কথার উদ্ধৃতি দেন তিনি –
চর্যার রচনাকালে বাংলার ব্যবসা-বাণিজ্যের, বিশেষত সমুদ্র-বাণিজ্যে যে অবক্ষয় দেখা গিয়েছিল, তার ফলেই মনে হয় চর্যাগীতির বন্দরনগরী ও ব্যবসা-কেন্দ্রের জৌলুস কমে গিয়েছিল। সেই ক্ষয়িষ্ণু নগরই চর্যাগীতির পটভূমি। বৌদ্ধধর্ম-সাধনার ক্ষেত্রেও এই নগরের একটা বিশিষ্ট ভূমিকা ছিল। (বাঙালি-সত্তার স্বরূপসন্ধানী আনিসুজ্জামান)
আনিসুজ্জামানের সাহিত্য-সমালোচনা সাহিত্যাতিরেক দেশকালের সঙ্গে সংযোগ ঘটায় এবং সেই সংযোগের প্রেক্ষাপটে থাকে ইতিহাসচেতনা। তাঁর সেই সমালোচনার সূত্রে পাঠক অনুসন্ধানী হয়ে ওঠে ইতিহাসের খোড়লে থাকা বাস্তবের খোঁজে। গভীরতর অন্বেষণে আমরা লক্ষ করি, চর্যার সমকালীন পাল শাসকেরা ধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অঢেল অর্থ ব্যয় করেন, যার ফলে কালক্রমে তাঁদের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতিতে নেমে আসে বিপর্যয়। পাল শাসকগণ শুধু যে বৌদ্ধধর্মীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অর্থ ব্যয় করেন তা নয়, তাঁরা ব্রাহ্মণ-ক্ষত্রিয়দের নিজেদের পক্ষে রাখার জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্যও ব্যয় করেন প্রচুর। ফলে, পাল শাসনামলে একই সমান্তরালে গড়ে ওঠে বৌদ্ধ এবং সনাতন ধর্মীয় স্থাপনা। এর একটি প্রধান কারণ হলো, পাল শাসনামলে প্রশাসনিক ক্ষমতাধারী অর্থাৎ প্রভাবশালী অমাত্য-প্রশাসকগণ ছিলেন ব্রাহ্মণ এবং ক্ষত্রিয়। কাজেই, বৌদ্ধ পরিপোষণার সমান্তরালে সনাতন ধর্মীয় পরিপোষণারও প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে দেখা দেয়। আনিসুজ্জামানের সাহিত্য-সমালোচনা কাজেই এমন বার্তাই দেয়, সাহিত্য কেবল একমুখী অভিযাত্রা নয়, সেটি একই সঙ্গে একধরনের সামাজিক উৎপাদনও বটে।
স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে পরীক্ষা-ফলের পরিপ্রেক্ষিতে আমার গবেষণা-অভিসন্দর্ভ রচনার সুযোগ ঘটে এবং দুরুদুরু বক্ষে আমি দেখা করি স্যারের সঙ্গে। বাংলা বিভাগের অফিসের লাগোয়া কক্ষটাই স্যারের। সেখানে একটা লম্বা বেত-কাঠের সংমিশ্রণে বিশেষভাবে তৈরি করা একটি ইজিচেয়ারে গা এলিয়ে খানিকটা বিশ্রামের ভঙ্গিতে বসে থাকা স্যার সব শুনে প্রশ্ন করলেন – কেন হাসান আজিজুল হক? যে-ইজিচেয়ারের কথা বললাম সেটির নেপথ্যে একটা ছোট্ট কাহিনি আছে। বাংলা বিভাগের একসময়কার নামী শিক্ষক কবি-সমালোচক সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন মূলত চেয়ারটির অধিকর্তা। তাঁর প্রস্থানের পর থেকে সেটির উত্তরাধিকার বর্তায় আনিস স্যারের ওপর। আমরা মজা করে বলতাম সঠিক পরম্পরা। বস্তুত আমাদের এইসব এনিক্‌ডোটসের জীবন্ত সহায়তা-সূত্র ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রবীণতম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রশীদ। বর্তমানে শয্যাশায়ী নব্বই-ঊর্ধ্ব মানুষটির কাছ থেকে আমরা বাংলা বিভাগ শুধু নয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসেরই অনেক উপাদান সম্বন্ধে জেনেছিলাম। আনিস স্যার প্রসঙ্গে তাঁর কথা ফের আসবে। আমরা তাঁকে বলতাম, বিশেষ করে বিভাগে যোগদান করবার পর তো অবশ্যই – রশীদ সাহেব, আপনি আত্মজীবনী লেখেন না কেন। বাক্যে তাঁর জন্মভূমি সন্দ্বীপের টান মিশিয়ে বলতেন, আমাকে চেনে কে! বাংলা বিভাগের প্রথম সভাপতি আবুল কালাম মনজুর মোরশেদ থেকে শুরু করে সৈয়দ আলী আহসান, মাহমুদ শাহ কোরেশী, আনিসুজ্জামান, আবু হেনা মোস্তফা কামাল, হায়াৎ মামুদ, জাহাঙ্গীর তারেক, মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল, হুমায়ুন আজাদ, রশীদ আল ফারুকী (খায়ের-উল বশর), মনিরুজ্জামান, দিলওয়ার হোসেন এঁদের কথা একমাত্র আবদুর রশীদের পক্ষেই বলা সম্ভব ছিল ঠিক রোজনামচার প্রামাণিকতার আঙ্গিকেই হয়তোবা। এমনকি উপাচার্য এ আর মল্লিক, ইন্নাস আলী, আবুল ফজল, আবদুল করিম এবং আরো অনেকের গল্প শুনেছি তাঁর কাছে। শুনেছি চারুকলার শিক্ষক রশীদ চৌধুরী, মুর্তজা বশীর, জিয়া হায়দার (চারুকলার সঙ্গে নাট্যকলার সমন্বয় ঘটবার পরে) কিংবা সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদের নানা গল্প। উজ্জ্বলতায় উদ্ভাসিত আবদুর রশীদ শুনিয়েছিলেন বাংলা সাহিত্যের অমর লেখক সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ্র বাংলা বিভাগে আগমনের কাহিনি। তখন সারাদেশে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের ছায়া দুলছে আর চারপাশে ফুঁসছে জায়মান আগুনের ফুলকি, যেসব শিখায় রূপ নেওয়ার উন্মাদনায় অস্থির। সেরকম দিনে বাংলা বিভাগে এসেছিলেন তিনি। বক্তব্য রেখেছিলেন বিভাগীয় শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীদের সমুখে বিভাগের ২২০ নম্বর কক্ষে। এ-কক্ষেই আমাদের স্নাতকোত্তর শ্রেণির ক্লাস হতো।
কেন হাসান আজিজুল হক, স্যারের সে-প্রশ্নের উত্তর দিতে আমার তত বিলম্ব হয় না, যদিও সে-উত্তরেরও থাকে এক প্রস্তুতিপর্ব। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধ স্বরূপের সন্ধানের সর্বশেষ প্রবন্ধ ‘স্বরূপের সন্ধানে’ এবং সৈয়দ আকরম হোসেনের প্রবন্ধগ্রন্থ বাংলাদেশের সাহিত্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ ছিল আমার অনুপ্রেরণার দুই উৎস। আনিসুজ্জামানের প্রবন্ধটিতে স্বাধীন-সার্বভৌম জাতিতে পরিণত হওয়া বাংলাদেশ-ভূখণ্ডের বাঙালির জাতিগত বিকাশের ইতিহাসে তার সৃজন ও মননের বিশেষত তার সাহিত্যের প্রভাবের দিকগুলো বিধৃত হয় চমৎকারভাবে। শামসুর রাহমানের ‘স্বাধীনতা তুমি’ কবিতাটি দিয়ে শেষ হওয়া প্রবন্ধটির পাঠ ছাত্রাবস্থায় আমার জন্য ছিল এক অন্যরকম প্রণোদনার সূত্র। সৈয়দ আকরম হোসেনের গ্রন্থটির শিরোনামই আমাকে দারুণভাবে আকৃষ্ট করেছিল। গ্রন্থর্ভূত কয়েকটি প্রবন্ধে বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে আলোচনা রয়েছে, কিন্তু শিরোনামটি মনে গেঁথে যায়। তাহলে, বাংলা সাহিত্য কথাটার অভ্যস্ততায় অন্যতর মাত্রিকতার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। মানে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অঞ্চলের সাহিত্যেরও যে একটা স্বাতন্ত্র্য একটা ভিন্ন রূপরেখা থাকা সম্ভব সে-কথাই প্রমাণিত হয় এমন প্রকাশে। তাছাড়া বাংলা বিভাগেরই পূর্বতন শিক্ষার্থী আবদুল মান্নান গবেষণা অভিসন্দর্ভ রচনা করেছিলেন সৈয়দ শামসুল হকের উপন্যাস বিষয়ে এবং আমার অব্যবহিতপূর্ব বছরের শিক্ষার্থী মিনার মনসুরের গবেষণা অভিসন্দর্ভের বিষয়বস্তু ছিল হাসান হাফিজুর রহমানের কবিতা। আমরা জানতাম, বিভাগেরই শিক্ষক খালেদা হানুম শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন, যাঁর পিএইচ.ডি-অভিসন্দর্ভের বিষয় বাংলাদেশের ছোটগল্প। মোটকথা মাথার ভেতরে ঘুরপাক খাচ্ছিল বাংলাদেশ। আমার বদ্ধমূল ধারণা ছিল, বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কিত প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার মূল অনুপ্রেরণাদাতা ‘স্বরূপের সন্ধানে’ প্রবন্ধটির রচয়িতা এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের শিক্ষক ড. আনিসুজ্জামান। বললাম, বাংলাদেশের সাহিত্য নিয়ে কাজ করতে চাই। স্যার আমার কাছে হাসান আজিজুল হকের গল্পগ্রন্থগুলোর নাম জানতে চান। তখনো পর্যন্ত হাসান আজিজুল হকের প্রথম পাঁচটি গল্পগ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। সমুদ্রের স্বপ্ন শীতের অরণ্য থেকে শুরু করে পাতালে হাসপাতালে পর্যন্ত নামগুলো বলে যাই। হ্যাঁ, তুমি করতে পারো – স্যারের উত্তর পেয়ে মনে মনে ভাবলাম আমার দরখাস্তের অনুমোদন পেয়ে গেছি। মজার কথা, আমার পরপর আমার আরো দুই সহপাঠী গবেষণা অভিসন্দর্ভ রচনার জন্য দরখাস্ত করে – দুজনেরই বিষয় বাংলাদেশের সাহিত্য। বিশ্বজিৎ চৌধুরীর বিষয় আহসান হাবীবের কবিতা এবং শাহীন আরার (পরবর্তীকালে সাংবাদিক ডেইজী মওদুদ) মাহবুব-উল আলমের ছোটগল্প। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগে আনিসুজ্জামানের অনুপ্রেরণার ফলেই সম্ভব হয়েছিল প্রচলিত বাংলা সাহিত্যের পরিবর্তে বাংলাদেশের সাহিত্য বিষয়ে প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণার কাজ।
এই সময় থেকেই উত্তাল আশির প্রখর তাপে পুড়তে থাকে চারপাশ। সামরিক স্বৈরাচারের জাঁতাকলে বিদ্ধ হতে থাকে ব্যক্তি ও সমষ্টি। নগর পুড়িলে বাদ যায় না দেবালয়ও। ক্যাম্পাস, শহর, রাজধানী, মফস্বল সর্বত্র গণমানুষের সংগ্রাম ঢেউ থেকে আরো ঢেউ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে স্রোতোস্বর অবিনাশিতার দিকে। আমরা লক্ষ করি, কি ক্যাম্পাসে কি শহরে এমনকি রাজধানীতে আমাদেরই শিক্ষক আনিসুজ্জামান সশরীর সম্পৃক্ততায় সভা-সমিতিতে, বক্তৃতা-বিবৃতিতে এবং তাঁর নিজের লেখালেখিতে ক্রমাগত উন্মোচিত হতে থাকেন। তাঁর সেই উন্মোচনে থাকে দেশ-সমাজের মঙ্গলাকাঙ্ক্ষা এবং মুক্তিযুদ্ধস্পৃষ্ট অবিনশ্বর চেতনা। বলা প্রয়োজন, উচ্চশিক্ষালাভে আমাদের উচ্চতর প্রতিষ্ঠানে প্রবেশ এবং ধর্মীয়-মৌলবাদী-স্বৈরাচারী ইত্যাকার যাবতীয় নষ্টামির নির্লজ্জ লম্ফ-উল্লম্ফনের ঘটনাধারা এমনই সমকালীন ও সমান্তরাল যে আমরা একটা সম্পূর্ণ প্রজন্ম সাক্ষাৎ ধ্বংসের ঝুঁকির সামনে অবস্থান করতে থাকি। কিন্তু গণমানুষের সংগ্রামের ধাক্কাও হয়ে উঠতে থাকে জোরালো। আনিসুজ্জামান স্যার আমাদের ছেড়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যান বটে, স্রোতের বা আগ্নেয়গিরির আরো কেন্দ্রিকতাতেই গিয়ে পৌঁছান, তথাপি আমাদের চেতনার কাছাকাছিই থেকে যান তিনি। তাঁর সাংস্কৃতিক-সাংগঠনিক তৎপরতা এবং তাঁর লেখালেখিতে আমরা সেই মানুষটিরই প্রতিফলন দেখে যাই যে-মানুষকে আমরা নিবেদিতপ্রাণ শিক্ষাদাতা হিসেবে পেয়েছিলাম এবং যে-মানুষ এই দেশ-জাতিরই পরাধীনতার দিনগুলোতে এগিয়ে এসেছিলেন উদ্ধারের মন্ত্র বয়ে। তাঁর সেই উদ্ধারের মন্ত্র ছিল অমল রবীন্দ্রাশ্রয়। ১৯৬৮ সাল থেকে গণ-অভ্যুত্থান হয়ে সত্তরের নির্বাচন এবং একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ – এই গোটা সংক্ষুব্ধ বলয়টিতে আনিসুজ্জামানের অবস্থান নিঃসন্দেহে নাক্ষত্রিক। পশ্চিম পাকিস্তানি তথা নয়া ঔপনিবেশিক স্বৈরাচারী গোষ্ঠীর রবীন্দ্রবিরোধিতার বিপরীতে আনিসুজ্জামান এবং তাঁর সহযাত্রীদের উজানযাত্রা আনিসুজ্জামান-মানসকে উপলব্ধি করার জন্য যেমন অনিবার্য, তেমনই তা এদেশের ইতিহাসের জন্যও প্রাসঙ্গিক। যে-চেতনা নিয়ে তিনি বাংলাদেশকে পঙ্গু করার জন্য উদ্যত স্বৈরাচারের বিপ্রতীপে নিজেকে দাঁড় করান ঠিক সেই চেতনা নিয়েই তিনি দাঁড়িয়েছিলেন পরাধীন পূর্ববঙ্গেও। রবীন্দ্রনাথকে রুদ্ধ করার মাধ্যমে পশ্চিম পাকিস্তানি সরকার চেয়েছিল বাঙালির জাগরণকেই স্তব্ধ করে দিতে; কিন্তু সে-অপচেষ্টা মুখ দেখে না সাফল্যের। সেই বৈরিতার কালে আনিসুজ্জামানের প্রাথমিক আশ্রয় ছিল রবীন্দ্রনাথ, পরবর্তীকালে সেটি দৃঢ়মূল হয় মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকারে এবং তারও পরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী গণবিরোধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর সামষ্টিক অধ্যবসায়ে। তাঁর সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থটি মুক্তিযুদ্ধের বছর-তিনেক আগেই বাঙালির জাগ্রত চেতনার অবস্থানকে চিনিয়ে দেয় সার্থকভাবে। লক্ষ করা যাবে, গ্রন্থটির মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছিল তখনকার অপেক্ষাকৃত তরুণ প্রজন্মের লেখকদের রবীন্দ্র-অঙ্গীকারের চিত্রটি। এর দ্বারা ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের বাঙালি জাতিসত্তা নির্ভীক এষণার অনুবর্তী এবং সাংস্কৃতিক আগ্রাসন দিয়ে বাঙালির জাগ্রত রাজনৈতিক চেতনাকে আর দমন করে রাখা সম্ভব হবে না। এ-কথার সপক্ষে সেসময়কার সাক্ষ্যও উপস্থিত করা যায়। বস্তুত ষাটের দশক থেকেই বাঙালির স্বাধিকারের চেতনা বহুমুখী রূপ পরিগ্রহ করে। সে-সময়টাতে আনিসুজ্জামান আবুল ফজল এবং আরো অনেকের সঙ্গে দেশের পরিস্থিতি বিষয়ে সক্রিয় তৎপরতা চালিয়ে যান। তাঁর সম্পাদিত রবীন্দ্রনাথ গ্রন্থটিকে সেই প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে তাঁর রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক প্রতিনিধিত্বের বিষয়টি স্পষ্ট হয়। কালক্রমে সেই রুদ্ধতার ঘেরাটোপ সরিয়ে মুক্তিযুদ্ধের আগেই যেন সূচিত হয়ে যায় এক ভিন্ন ভবিতব্যের অবতরণিকা –
‘১৯৭০ সালের ১লা ও ২রা জানুয়ারি বাংলা একাডেমির উন্মুক্ত মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয়েছিল সংস্কৃতি সংসদের নবীন আবাহন উপলক্ষে দুদিনব্যাপী এক সাংস্কৃতিক উৎসব। মঞ্চস্থ হয়েছিল রবীন্দ্রনাথের রক্তকরবী। আমরা তাঁকে অনুরোধ করেছিলাম প্রধান অতিথির আসন অলংকৃত করতে। তিনি অনুকূল সাড়া দিয়েছিলেন। আমরা প্রাণিত ও উজ্জীবিত বোধ করেছি তাঁর ভাষণে। তাঁর বক্তব্যে পূর্ব বাংলার বাঙালির স্বরূপ-চেতনা ও স্বাজাত্যবোধের উল্লেখ ছিল। সংস্কৃতির সংকট-উত্তরণ ও বাঙালির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে রবীন্দ্রনাথ যে অচ্ছেদ্য বন্ধনে জড়িয়ে আছেন – তিনি সে-কথাও বলেছিলেন, মনে পড়ে। এই সাংস্কৃতিক উৎসব বৃহত্তর ছাত্রসমাজের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল। (আবুল হাসনাত, আমার শিক্ষক আনিসুজ্জামান)
আনিসুজ্জামানের রবীন্দ্র-চেতনা অঙ্গীকারবদ্ধ ছিল দেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিকামিতায়। পরবর্তীকালে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাঁর সেই চেতনাও মোড় নিয়েছে; কিন্তু সেই মোড় ফের মুক্তিরই দিকে। ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত তাঁর মুক্তিযুদ্ধ এবং তারপর প্রবন্ধগ্রন্থটি একদিক থেকে বৈরী পটভূমিতে ক্রিয়মান আনিসুজ্জামানের মনন-সৃজনের ফল, অন্যদিকে তা আমাদের দেশ ও জাতিরও কালিক রূপরেখার নির্যাস। প্রবন্ধের শিরোনামগুলো লক্ষ করলে সেটি বোঝা যাবে – ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা’, ‘শহীদেরা’, ‘বাঙালি’, ‘বাংলাদেশ, বাঙালি ও বাংলাদেশী’, ‘ইতিহাসের শিক্ষা’, ‘সাম্প্রদায়িকতার প্রত্যাবর্তন’, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’, ‘দেশ, ভাষা ও জাতি’, ‘বাংলা ও ইংরেজী’, ‘বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষা’, ‘একতা কেন’, ‘সকলের এবং কতিপয়ের’, ‘বাংলাদেশে ধর্ম, রাজনীতি ও রাষ্ট্র’, ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রসঙ্গ’ এবং ‘দেশ’। লক্ষ করা দরকার আশির দশকে সামরিক স্বৈরাচার এবং গণতন্ত্রহীনতার পরিণামে উদ্ভূত সংকট ও জটিলতার প্রেক্ষাপটে নিজেকে নেপথ্যে না রেখে বরং অধিকতর দায়বদ্ধতায় আনিসুজ্জামান প্রকাশ করেছেন নিজেকে। উপর্যুক্ত গ্রন্থটি তারই স্বাক্ষর। যখন ধর্মের প্রাবল্য দেশ-সমাজকে প্রবলভাবে গ্রাস করার অপচেষ্টায় প্রলিপ্ত এবং যখন ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার সীমাছাড়ানো অমানবিকতার দিকে ধাবমান তখন আনিসুজ্জামান স্পষ্টস্বরে বলেছেন তাঁর রচনায় – ‘ধর্মের বিষয়ে মাথা না গলিয়েও রাষ্ট্র চলতে পারে। ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র সেভাবেই চলে। সেখানে ধর্ম ব্যক্তিগত ব্যাপার, – রাষ্ট্রীয় বিষয় নয়।’ (‘ধর্মনিরপেক্ষতা’) এ-কথাকে আরো জোরের সঙ্গে বলেছেন তিনি – ‘আমরা যারা বিশ্বাস করি, ধর্মনিরপেক্ষতা ছাড়া গণতন্ত্র হয় না, গণতন্ত্র ছাড়া বাংলাদেশের অগ্রগতি অসম্ভব, তাদের কর্তব্য নিজের সবকিছু দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার সঙ্গে যুদ্ধ করা এবং রাষ্ট্রীয় জীবনে ধর্মনিরপেক্ষতা ফিরিয়ে আনা।’
এই লেখাটার শেষে এসে আমি আবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বিভাগের প্রবীণতম কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুর রশীদের কাছে ফিরে যাচ্ছি। বর্তমানে শয্যাশায়ী নব্বই-ঊর্ধ্ব আবদুর রশীদ বয়সে আনিসুজ্জামানের চাইতে বড় হলেও তাঁকে দেখতেন সুগভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে। আনিস স্যারের জীবন সম্পর্কিত ঘটনাটি তাঁর মুখ থেকেই শোনা। কলা অনুষদের ডিন নির্বাচনে অন্যতম প্রার্থী ছিলেন আনিসুজ্জামান। বলা বাহুল্য, তাঁর প্রার্থিতা ছিল মুক্তিযুদ্ধ এবং প্রগতিশীল ধারার শিক্ষকদের গোলাপি দল থেকে। ইতিহাস বিভাগের অন্যতম শিক্ষক আবদুল হক (বর্তমানে প্রয়াত) ছিলেন রশীদ সাহেবের বিশেষ প্রিয়ভাজন। প্রায়ই তিনি বাংলা বিভাগে আসতেন তাঁর সঙ্গে গল্প করার জন্য, তাঁর খোঁজখবর নেওয়ার জন্য। আবদুল হক ছিলেন খুবই ধার্মিক এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ-পড়া লোক। নির্বাচনের দিনকয়েক আগে কথাপ্রসঙ্গে আবদুল হক রশীদ সাহেবকে বলেন, তাঁর দৃষ্টিতে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান একজন কমিউনিস্ট মানুষ। শুনে তিনি অবাক হয়ে যান। কিন্তু আবদুল হকের পরবর্তী বক্তব্য শুনে রশীদ সাহেব সত্যিকার অর্থেই হতবাক। তিনি জানান, কমিউনিস্ট হলেও তিনি ড. আনিসুজ্জামানকেই ডিন নির্বাচনে ভোট দেবেন। কেননা, (তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী) ধার্মিক অসৎ ব্যক্তির চাইতে নাস্তিক সৎ ব্যক্তি শ্রেয়। আনিস স্যার সম্পর্কে অনেকের অনেক মূল্যায়ন দেখেছি কিন্তু রশীদ সাহেবের সূত্রে পাওয়া প্রয়াত অধ্যাপক আবদুল হকের এ-মূল্যায়ন আমার কাছে সবসময়ই অনন্য ও ব্যতিক্রমী মনে হয়। মোতাহের হোসেন চৌধুরী তাঁর সংস্কৃতি-কথা প্রবন্ধগ্রন্থে কল্যাণকামী রাষ্ট্র ও সমাজের উপাদান হিসেবে যে-ব্যক্তির স্বপ্ন দেখেছিলেন আনিসুজ্জামান সেই ব্যক্তি যিনি তাঁর সারাটা জীবনের কর্মতৎপরতায় ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন। মানবতাবাদী ভাবনার আরেক নিরাপোস বুদ্ধিজীবী-লেখক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী অনেক কাল আগেই আনিসুজ্জামান-মানসের স্বরূপ ব্যাখ্যা করেছিলেন। তাঁর সেই দীর্ঘ প্রবন্ধের মাত্র পাঁচটি বাক্যও যদি উদ্ধার করি তা-ও তাঁর সম্পর্কে যথার্থ বলা হয় –
নানা কারণে বুদ্ধিজীবী নামটির সম্মানহানি ঘটেছে, কিন্তু সে-অবনতি সাময়িক; আনিসুজ্জামান গৌরবজনক অর্থেই বুদ্ধিজীবী। পৃথিবীকে তিনি অন্তর্দৃষ্টি ও যুক্তির সাহায্যে ব্যাখ্যা করেন, সেই ব্যাখ্যা কার্যকরভাবে পৌঁছে দেন পাঠকদের কাছে এবং আশা রাখেন পৃথিবীটা বদলাবে। তাঁর বিষয়গুলো আমাদের অনেকেরই কৌতূহল ও বিবেচনার বিষয়।
কিন্তু আমরা কেউই তাঁর মতো করে লিখতে পারবো না, এমনকি উদারনীতিকরাও পারবেন না, কেননা তাঁর নিজস্বতা একেবারেই তাঁর নিজস্ব এবং অনন্য। তদুপরি তিনি একই সঙ্গে নম্র ও দৃঢ়, এবং সেখানেও অসাধারণ।’
(‘উদারনীতির অনন্য প্রতিনিধি’)