খালেদ হোসাইন
রাতের অন্ধকারে বা জোছনায়
আমি হাঁটি
আমি হাসি
আমি কথা বলি –
এত অপরাধ?
নাকি অপরাধটা কাউকে ভালোবাসার?
মাননীয় আদালত,
আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসা যাবে না
এই পৃথিবীতে? ব্রিজের পাশে ছাতিমগাছ
ব্রিজের নিচ দিয়ে জল বয়ে যায় এপাশ থেকে ওপাশে
জলের এই চলাচলে আমি শুনি ঝরনার কল্লোল –
অপরাধ?
মাননীয় আদালত,
আমি যখন হাঁটতে বেরোই
তখন কুয়াশার পাতলা ওড়না জড়িয়ে
নর্থ-সাউথ রোড তার দুইপাশের গাছপালা
হেমন্তশেষের কুয়াশা আর হলদে বিদ্যুতের আলো
মিলেমিশে এক অদ্ভুত মায়াজাল সৃষ্টি করে।
যেন এক রূপকথার জগৎ সমস্ত সীমান্ত খুলে দিয়ে
আমাকে ডাকছে। সেই ডাক আমি ফেরাতে পারি না,
পা বাড়িয়ে দিই রহস্যময় সেই সৌন্দর্যে –
অপরাধ?
আমি যখন হাঁটতে থাকি, পেভমেন্ট আমাকে জিজ্ঞেস করে,
ভালো আছো? কালভার্টের রেলিং জানতে চায় কেমন কেটেছে
সমস্তটা দিন? লেকে ঝুঁকে পড়া হিজল গাছ জিজ্ঞেস করে,
মনটা কি খারাপ তোমার? বয়স্ক একটা মেহগনি গাছ
প্রতিদিন আমাকে সান্ত্বনা দেয়, একটা সেগুনগাছ আমাকে
ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের মতো অনুপ্রাণিত করতে চায়।
অন্ধকারে মিলিয়ে থাকা গ্রহ-নক্ষত্রেরাও কিছু গল্পগাছা করে।
আমি জানাই, আমার জানালা ঘেঁষা লেবুগাছে ফুল ফুটেছে,
আর একটা দোলনচাঁপা শরতের মেঘের মতো শুভ্রতা গায়ে মেখে
দিনভর হাসছে। আমিও তাই হাসি, মাননীয় আদালত। কিন্তু
ভাবিনি এর জন্য আপনি আমাকে দাঁড় করিয়ে দেবেন
কাঠগড়ায়? আর আমাকে শুনতে হবে আমার সমস্ত কর্মকাণ্ডে
নিহিত আছে সুগভীর ষড়যন্ত্র –
না, মাননীয় আদালত,
আমার কোনো কৌঁসুলি নেই, সাফাই সাক্ষী নেই
কোনো বক্তব্য নেই।
আত্মসমর্থনের কোনো সুযোগ না দিয়ে
আপনি অনেকবার আমাকে জেলে আর জেল থেকে
নির্বাসনে, নির্বাসন থেকে জেলে পাঠিয়েছেন।
আর আজ আপনার এই মমতা পরিহাসের মতো
বুকটাকে বিদীর্ণ করে দেয়। শর ক্ষেপণে আপনার
কোনো তুলনা হয় না, মাননীয় আদালত।
আমার সকল ইন্দ্রিয় অপরাধী। হ্যাঁ, মাননীয় আদালত,
আগের মতো আবারো আমি স্বেচ্ছায়, সজ্ঞানে
স্বীকার করছি, আমি অপরাধী। আপনার যত গোয়েন্দা
চার্জশিট প্রদানকারী কর্মকর্তা – সবারই প্রতিভার প্রশংসা করি।
বয়সের কারণে এখন দীর্ঘক্ষণ কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে
কষ্ট হয়। মনের কথা কিছুই বলবো না, মাননীয় আদালত,
এবার আমাকে এই শারীরিক যন্ত্রণা থেকে মুক্তি দিন।
Leave a Reply
You must be logged in to post a comment.