এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১২ ঐ নূতনের কেতন ওড়ে

oi Nutoner keton ore

আবসার জামিল

জ্যৈষ্ঠের তপ্ত বিকেল। তবে রোদের তেজ তেমন নেই। শহুরে বাতাসে ছুটির আমেজ। কারণ দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন। শুক্রবার। এমনই দিনে জমকালো আয়োজনে নবীন কবি ও লেখকদের পুরস্কৃত করেছে সাহিত্যবিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম এবং এইচএসবিসি ব্যাংক।

মিলনায়তনটি সাজানো হয়েছিল শৈল্পিকভাবে। সুদৃশ্য মঞ্চের পেছনে ব্যানারে লেখা – ‘তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার ২০১২’। আলোকোজ্জ্বল মঞ্চে উপস্থিত দেশবরেণ্য লেখক ও গুণীজন, সামনের দর্শকসারিতে শিল্প-সাহিত্য সংশ্লিষ্ট নবীন-প্রবীণদের প্রাণোচ্ছল সম্মিলন। এতে তুমুল করতালি ও প্রশংসাসুধায় ভাসলেন চার প্রতিভাবান লেখক।

সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম প্রতি বছর এইচএসবিসি ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় সেরা তরুণ কবি ও লেখকদের দিচ্ছে এই পুরস্কার। এবার এই পুরস্কার প্রদান উপলক্ষে গত ১৭ মে বাংলা একাডেমী মিলনায়তনে আয়োজন করা হয় এক জমকালো অনুষ্ঠানের। তাতে সাহিত্যের চার শাখায় চার তরুণের হাতে তুলে দেওয়া হয় ২০১২ সালের ‘এইচএসবিসি-কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’।

পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকেরা হলেন – কবিতায় ভিখিরিও রাজস্থানে যায় গ্রন্থের জন্য মোস্তাক আহমাদ দীন, কথাসাহিত্যে দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে গ্রন্থের জন্যে মাসউদুল হক, প্রবন্ধ ও গবেষণায় করুণ মাল্যবান ও অন্যান্য প্রবন্ধ গ্রন্থের জন্য পিয়াস মজিদ এবং মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস নক্ষত্রের রাজারবাগ গ্রন্থের জন্য মোশতাক আহমেদ।

নবীন কবি ও লেখকদের সাহিত্যচর্চা ও সাধনাকে গতিময় এবং বাংলাদেশের তরুণদের সৃজনধারাকে সঞ্জীবিত করার লক্ষ্যে এইচএসবিসি ও কালি ও কলম ২০০৮ সাল থেকে তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। সে-বছর দুটি শাখায় দেওয়া হয়েছিল পুরস্কার। সাহিত্যের সব শাখাকে অন্তর্ভুক্ত করার লক্ষ্যে ২০০৯ সাল থেকে পুরস্কার দেওয়া হয় তিন শাখায়। পরের বছর যোগ করা হয় আরো দুটি শাখা। মুক্তিযুদ্ধ ও কিশোরসাহিত্য। ফলে পুরস্কার দাঁড়ায় মোট পাঁচ শাখায়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ জমা না পড়ায় কিশোরসাহিত্য বিভাগে কাউকে পুরস্কার প্রদান করা সম্ভব হয়নি।

চারজন কবি ও লেখক প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে মোট চার লাখ টাকা পুরস্কার প্রদান করা হয়। তাঁদের হাতে এ-পুরস্কার তুলে দেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। এসময়ে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল। সভাপতিত্ব করেন বিচারকমন্ডলীর সভাপতি অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। বিচারকমন্ডলীর পক্ষে অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী পুরস্কারপ্রাপ্তদের সংবর্ধিত করেন। এসময়ে আরো উপস্থিত ছিলেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এবং কালি ও কলমের প্রকাশক বিশিষ্ট শিল্পানুরাগী আবুল খায়ের, এইচএসবিসির করপোরেট ব্যাংকিং প্রধান মো. মাহবুব-উর-রহমান, কালি ও কলম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য লুভা নাহিদ চৌধুরী এবং কালি ও কলম সম্পাদক আবুল হাসনাত।

অনুষ্ঠানের সূচনায় শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক এবং কালি ও কলম সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য লুভা নাহিদ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের তরুণ কবি এবং লেখকদের সৃজনধারা ও সাহিত্যকর্মকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্যে ২০০৮ সাল থেকে বিশ্বের স্থানীয় ব্যাংক এইচএসবিসি ও মাসিক সাহিত্য পত্রিকা কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রবর্তন করেছে। আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের তরুণ কবি ও লেখকদের সাহিত্যচর্চা ও সাধনার মধ্যেই নিহিত আছে এদেশের সাহিত্যের বিকাশ-প্রক্রিয়া। বাংলাদেশের সাহিত্য-আন্দোলনকে আরো গতিশীল করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা দীর্ঘ নয় বছর ধরে কাজ করে যাচ্ছি। এই পথচলার মধ্য দিয়ে সাহিত্য শিল্প ও সংস্কৃতি বিষয়ক মাসিক পত্রিকা কালি ও কলম বাংলাভাষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ সাহিত্যপত্রিকা হয়ে উঠেছে। সেজন্যেই কালি ও কলম নবীন কবি ও লেখকদের সাহিত্যচর্চাকে পরিচর্যা করে আসছে।’

এরপর নবীনের সৃজনকর্মের ওপর লেখা শংসাবচন পাঠ করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। এতে মোস্তাক আহমাদ দীনের সৃজনকর্ম নিয়ে বিচারকরা বলেন, ‘রূপক দিয়ে চিত্রকল্প তৈরির প্রয়াসে মোস্তাক আহমাদ দীন বেশি মগ্ন থাকেন। কবিতা যে একই সঙ্গে বোধ ও শব্দের মিথস্ক্রিয়া – সেই চর্চারই প্রয়াস লক্ষ করা যায় তাঁর কাজে।’ মাসউদুল হক ও তাঁর রচনা প্রসঙ্গে বিচারকরা বলেন, ‘উপন্যাস এখন বিচরণ করে সমাজজীবনের প্রান্তিক পরিসরে। আলো ফেলে সামাজিক স্তরের আনাচে-কানাচে, মনোগহনে, কখনো অজ্ঞাত ভুবনে। প্রকৃতিবৈচিত্র্যে ভরা বাংলাদেশের হাওর-অঞ্চল তেমনি একটি প্রত্যন্ত এলাকা, সেখানে সমাজের স্তরবিন্যাস ও কাঠামো মূল সামাজিক বিন্যাস থেকে আলাদা। মাসউদুল হকের দীর্ঘশ্বাসেরা হাওরের জলে ভাসে উপন্যাসে তেমনি একটি পরিসরকে কাহিনির পটভূমি করেন, তুলে আনেন সেখানকার মানুষের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনা, অস্তিত্বের সংগ্রাম ও স্বপ্নের পসরা। এ-উপন্যাস একান্তই  বাস্তবধর্মী ধারায় রচিত। গ্রন্থনা সরল বর্ণনামূলক, ভাষা প্রাঞ্জল ও নিরলংকার। লেখকের অভিজ্ঞতা ও সহমর্মিতায় উপন্যাসটি আঞ্চলিক জীবনছবির শিল্পপ্রতিমা হয়ে ওঠার দাবি রাখে।’ পিয়াস মজিদ ও তাঁর সাহিত্য সম্পর্কে বিচারকরা বলেন, ‘পিয়াস মজিদ তরুণ কবি, নবীন কথাকার, সৃষ্টিপ্রিয় সমালোচক। গতানুগতিক পথে হাঁটেন না পিয়াস, নতুনের প্রতি তাঁর পিপাসা অন্তহীন, বক্তব্যের পাশাপাশি গদ্যশৈলীতেও নিজস্বতার অভিসারী পিয়াস। পিয়াস অনাবশ্যক কথা বলেন না, বক্তব্যহীন কথার জাল বোনাও তাঁর স্বভাব নয়। তিনি বিন্দু থেকে পৌঁছতে চান সিন্ধুতে – শিল্পমাতাল গদ্যভাষ্যে তুলে আনতে চান জীবনের না-বলা কথামালা। মৌলিক এবং একই সঙ্গে গাঢ়-সংবেদী চিন্তাবৃত্তে বিচরণশীল।’ মোশতাক আহমেদ ও তাঁর রচনা সম্পর্কে বিচারকরা বলেন, ‘তরুণ কথাকার মোশতাক আহমেদ দীর্ঘ চার দশক আগের সেই একাত্তর-দিনে পাঠককে নিয়ে যান বক্ষ্যমাণ উপন্যাসের মাধ্যমে। মোশতাক আখ্যান-নির্মাণে যেমন সতর্ক, তেমনি সতর্ক গদ্য ঢঙে। একইসঙ্গে জীবনসচেতন এবং সমাজ-ডিসকোর্স অনুধাবনে সতর্ক তিনি।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে এইচএসবিসির করপোরেট ব্যাংকিং প্রধান মো. মাহবুব-উর-রহমান প্রথমেই এই আয়োজনের জন্য কালি ও কলমকে ধন্যবাদ জানান। তবে পুরস্কারের পাঁচ বিভাগের মধ্যে শিশু-কিশোর সাহিত্যের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ জমা না পড়ায় হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘শিশু-কিশোরদের জন্য গ্রন্থ প্রকাশ না হওয়া জাতির ভবিষ্যতের জন্য আশঙ্কাজনক।’ তিনি এসময়ে লেখকদের প্রতি শিশু-কিশোর বিষয়ক গ্রন্থ প্রকাশের আহবান জানান। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গ্রন্থ-প্রকাশের হার বাড়ানোরও তাগিদ দেন। এক্ষেত্রে এইচএসবিসি ব্যাংক সর্বাত্মক সহযোগিতা করবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

বিশেষ অতিথি বিশিষ্ট লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবাল তাঁর বক্তব্যের শুরুতেই এইচএসবিসি ও কালি ও কলমকে তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার প্রদানের জন্য ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘তরুণদের সামনে না আনলে, উৎসাহ না দিলে জাতি হিসেবে আমরা কখনো সামনের দিকে এগোতে পারব না।’ তিনিও শিশু-কিশোর সাহিত্যের ওপর জোর দেন। বলেন, ‘এদেশের তিন কোটি ছেলেমেয়ে স্কুলে পড়ে। অথচ তাদের পড়ার জন্য সে হারে বই প্রকাশিত হচ্ছে না। এটা শুভ লক্ষণ নয়।’ তিনি তরুণ লেখকদের এই খরা দূর করতে এগিয়ে আসার আহবান জানান। একই সঙ্গে তিনি জোর দেন পাঠাভ্যাস গড়ে তোলার ওপর। তাঁর মতে, পাঠাভ্যাসই পারে একটি জাতিকে সঠিক পথে এগিয়ে নিতে। এক্ষেত্রে তিনি বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ তুলে ধরেন।

পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখকরা উপস্থিত দর্শক ও গুণীজনদের শোনান সাহিত্য নিয়ে তাঁদের নিজস্ব ভাবনার কথা। পুরস্কার পেয়ে তাঁরা প্রত্যেকেই আনন্দিত, উৎফুল্ল; আপ্লুত। মোস্তাক আহমাদ দীন বলেন, ‘এ পুরস্কার পেয়ে আমি আনন্দিত। আমার সাহিত্যচর্চায় এ সম্মাননা অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’ মাসউদুল হক বলেন, ‘আমার জীবনে ১৪ হাজার সন্ধ্যা আমি অতিক্রম করেছি, কিন্তু আজকের সন্ধ্যা গুণগতমানে অন্য সব সন্ধ্যাকে ম্লান করে দিয়েছে। এই পুরস্কারপ্রাপ্তি এক অলৌকিক আনন্দে আমাকে আপ্লুত করেছে।’ পিয়াস মজিদ বলেন, ‘লেখক জীবনের এই প্রথম পুরস্কার আমার জন্য অফুরান প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে।’ তিনি এ পুরস্কারের জন্য তাঁর পরিবার, স্বজন ও শুভার্থীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। মোশতাক আহমেদ পুরস্কারপ্রাপ্তির জন্য এইচএসবিসি-কালি ও কলমসহ বিশিষ্ট বিচারকদের ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, ‘এই সংবর্ধনা আমার লেখালেখির নতুন যাত্রা শুরুর অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

সম্মাননাপ্রাপ্ত চার তরুণ কবি-লেখকের পর অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁর বক্তব্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন,  ‘এই পুরস্কার-প্রদান তথা লেখকদের উৎসাহিত করার ফলে নতুন লেখক সৃষ্টি হবে। এজন্য এইচএসবিসি ও কালি ও কলমকে ধন্যবাদ।’ বইপড়ার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘পাঠাভ্যাসই পারে একজন মানুষকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে। এজন্য সব ধরনের বই-ই পড়া উচিত।’ তবে শিশুসাহিত্যে উল্লেখযোগ্য বই প্রকাশিত হচ্ছে না বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ‘এটা শুভ লক্ষণ নয়।’ এসময়ে তিনি তরুণ কবি-লেখকদের এ বিষয়ে এগিয়ে আসার আহবান জানান।

অনুষ্ঠানের সভাপতি আনিসুজ্জামান পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘এ পুরস্কার তরুণদের উৎসাহিত করবে।’ নতুন প্রজন্মের ভাব ও ভাষা নতুনরাই বুঝতে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুনদের চিন্তাধারায় যে পরিবর্তন এসেছে তা তুলে ধরতে হলে নতুনদেরই এগিয়ে আসতে হবে। কারণ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুই বদলে যাচ্ছে।’ সবশেষে বক্তব্য রাখেন কালি ও কলম-সম্পাদক আবুল হাসনাত।

অনুষ্ঠানে আয়োজকরা জানান, আগের বছরের তুলনায় ২০১২ সালে তাঁরা তরুণদের অধিক সাড়া পেয়েছেন। জমা পড়েছিল মানসম্পন্ন অনেক বই। চার সদস্যের বিচারকমন্ডলী প্রাথমিক বাছাই করেন। এর কমিটির সদস্য ছিলেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ, লেখক সুব্রত বড়ুয়া, অধ্যাপক বেগম আকতার কামাল ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ হোসাইন। এরপর অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হক, বিশিষ্ট কবি রফিক আজাদ, প্রাবন্ধিক ও গবেষক হায়াৎ মামুদ এবং বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান চূড়ান্তভাবে ফলাফল স্থির করেন। আয়োজকরা আরো জানান, এই বিচার-প্রক্রিয়ায় এইচএসবিসি ব্যাংক এবং কালি ও কলমের কেউ কোনোভাবেই যুক্ত ছিলেন না।

শেষ পর্বে পুরস্কার-প্রদান-অন্তে ২০০৮ সাল থেকে পুরস্কারপ্রাপ্ত পাঁচজন কবির নির্বাচিত কবিতা পড়ে শোনান প্রথিতযশা আবৃত্তিকার ভাস্বর বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একক সংগীত পরিবেশন করেন স্বনামখ্যাত রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী লাইসা আহমেদ লিসা।