একটি প্রদর্শনী ও প্যারিস-অভিজ্ঞতা

রফিকুন নবী

২৮ সেপ্টেম্বর। প্যারিস শহর। আইফেল টাওয়ার আর ল্যুভ মিউজিয়ামকে পাশ কাটিয়ে ঝকঝকে কয়েকটি এভিন্যু পেরিয়ে গাড়ি গিয়ে থামল সুরম্য ইউনেস্কো ভবনে। তার আগেই ভবন-চত্বরের রেলিংয়ের শিক গলিয়ে দেখা গিয়েছে হেনরি মুরের বিখ্যাত ভাস্কর্য ‘রিক্লাইনিং ফিগার’।
এই ভবন এবং বাইরে থেকে দেখা ভাস্কর্যটি যখনই প্যারিসে গিয়েছি চোখে পড়েছে। প্রত্যেকবারই ভবনের পাশ দিয়ে আসা-যাওয়া করেছি বটে, ভেতরে ঢোকার সুযোগ হয়নি। এবার বাংলাদেশের একটি চিত্রপ্রদর্শনীর সুবাদে তা ঘটল।
তিন-তিনটি নিরাপত্তা বেষ্টনীর কড়া চেকিং শেষে ভবনের ভিতরে ঢোকার নিয়ম। সঙ্গে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এবং পারমানেন্ট ডেলিগেট টু ইউনেস্কো শহিদুল ইসলাম থাকায় নিয়মগুলি আমাদের ক্ষিত্রে তেমন খাটানো হলো না। সহজেই ঢোকা হলো। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের পক্ষে আমি এবং কিউরেটর শিল্পী ঢাকার বিখ্যাত গ্যালারি চিত্রকের অন্যতম কর্ণধার মনিরুজ্জামান নির্দ্বিধায় প্রবেশপথ অতিক্রম করে মূল করিডোরে পৌঁছাতেই চোখে পড়ল পাবলো পিকাসোর আঁকা বিশাল দেয়াল-জোড়া ছবি। তার সামনে করিডোরে কাদের যেন পোস্টার প্রদর্শনী চলছে। ছবিতে দৃষ্টি থমকে গেলেও প্রদর্শনী কক্ষির দিকে এগোতে হলো সবাইকেই। মনে খটকা ছিল প্রদর্শনীর ছবিগুলি কেমনভাবে টানানো হয়েছে তা নিয়ে। সেসব সাজানোর কথা থাকলেও আমরা তা পারিনি দেরিতে প্যারিসে পৌঁছানোর কারণে। কিন্তু গ্যালারিতে ঢুকতেই চোখ জুড়িয়ে গেল। কোন ছবির পাশে কোন ছবি থাকবে, কোন রং আর কোন মাপের ছবির সঙ্গে কোনটা মানাবে ইত্যাদি এমন সুচারু আর দক্ষতায় সমাধা করা যে, প্রশংসা না করে পারা গেল না। পরে জানলাম যে, এই কর্মটির জন্য খুবই দক্ষ লোকজন রয়েছে। যেহেতু প্রতিনিয়ত প্রদর্শনী হয়, অতএব সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা আছে।
গ্যালারির ভেতর লোকে-লোকারণ্য। একদিকে মানানসই একটি মঞ্চ। তাতে বক্তৃতার জন্যে মাইক সেট করা। মঞ্চের পিছনে শিল্পী শাহাবুদ্দিনের বড় একটি ছবি এবং প্রদর্শনীর বৃহৎ পোস্টার। পোস্টারটিতে আমার আঁকা ছবি ছাপানো। বলা বাহুল্য, এই ছবিটি প্রদর্শনীর নয়, দেশের নামি সংগ্রাহক দুর্জয় রহমানের সংগ্রহে রয়েছে। ছবিটি বিশাল হেতু প্যারিসে আনা সম্ভব হয়নি। ছবিটি থাকলে ভালো হতো। কারণ রাষ্ট্রদূতের কথায় জেনেছিলাম কোনো এক ক্যাটালগে এবং ইন্টারনেটের কোথাও থাকা ছবিটি দেখানোর পর নাকি ইউনেস্কোপ্রধান এই প্রদর্শনীর ব্যাপারে ইচ্ছা পোষণ করেন। এ কথা শুনে কী যে ভালো লেগেছিল, তা বলার নয়। তবে ওটার বদলে ঈষৎ ছোট এবং প্রায় একই বিষয় নিয়ে আঁকা আমার অন্য আর একটি ছবি দিয়ে দিয়েছিলাম। আগেরটির মতোই বিষয় নদী, মাছ এবং জেলে।
গ্যালারিতে দেশি-বিদেশি উৎসাহী দর্শকদের হাই-হ্যালো আর কোলাকুলিতে বেশ হুলস্থুল। প্রবাসী বাঙালিরা অনেকেই আমাকে চিনলেন। তাদের সঙ্গে গল্প করতে-করতে মঞ্চকে পাশ কাটিয়ে বাঁয়ে মোড় নিয়ে অন্য ঘরে ঢুকতেই একটি দেয়ালচিত্রের মুখোমুখি। চমকেই উঠলাম বলা চলে। কারণ বইপত্রে মুর‌্যালটির রিপ্রোডাকশন দেখে-দেখে অত্যমত্ম চেনা। সেই পরিচিত মুর‌্যালের অরিজিন্যালটি ঘরের শোভা হয়ে দাঁড়িয়ে চোখের সামনে। দাঁড়ানোর কথা বলছি, কারণ ওটা ঘরের দেয়ালে আঁকা নয়। আলাদা একটি দেয়ালে নির্মিত। মিরোর কাজ। মিরো আমার প্রিয় শিল্পী।
আমাকে মনোযোগ দিয়ে মুর‌্যালটি দেখতে দেখে একজন ফ্রেঞ্চ কর্মকর্তা এগিয়ে এসে বললেন, ‘এটি জোয়ান মিরোর কাজ।’ বললাম, ‘জানি’। তাঁর ইংরেজি ভাঙা-ভাঙা। তার পরও আমাকে বোঝাবার জন্যে চেষ্টা অব্যাহত রেখে বললেন, ‘দিস মুন। ‘আউট ওয়াল সান’। তাঁর কথা বুঝতে অসুবিধে হলো না। কারণ মিরোর বিখ্যাত এই দেয়ালচিত্রের নাম আমার জানা।
তিনি বাইরে নিয়ে গেলেন উঠোনমুখী করিডোরে। দেখলাম দ্বিতীয়টি ওখানে একই রকম পন্থায় আলাদা করে রাখা, ঘরের ভিতরেরটি ‘দ্য ওয়াল অব দ্য মুন’ এবং বাইরের সূর্যালোকিত স্থানেরটি ‘দ্য ওয়াল অব দ্য সান’। আমি সহজ করে বাংলায় ভেবে নিলাম ‘চন্দ্র-দেয়াল’, ‘সূর্য-দেয়াল’। এমনটা ভাবতেই বেশ কয়েক বছর আগে মেক্সিকোতে গিয়ে তাদের অ্যাজটেক পিরামিড ‘সান-টেম্পল’ আর ‘মুন-টেম্পল’ দেখে যে ভালো লাগার এক ধরনের অনুভূতি হয়েছিল, তেমনটাই যেন ঘটল এবারেও।
যাই হোক, বুঝতে পারলাম যে, জোয়ান মিরোর কাজদুটির কারণে গ্যালারির নামকরণ ‘মিরো হল’ রাখা হয়েছে। এও জানলাম যে, আমাদের প্রদর্শনীটিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতেই এই গ্যালারিটি দেওয়া হয়েছে। আসলে নামিদামি প্রদর্শনীই শুধু এই গ্যালারিতে অনুষ্ঠিত হওয়ার সুযোগ হয়। শিল্পী শাহাবুদ্দিনও একই কথা জানালেন।
অবশ্য বিষয়ের কারণেও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রদর্শনী যে ভাবা হয়েছে আমাদেরটিকে তাও বোঝা গেল। অনেকটাই আরোপিত বা নির্ধারণ করে দেওয়া প্রদর্শনীর বিষয়। কঠিনই বটে। ছবি আঁকার জন্যে, কঠিন নয়। বিষয়কে ভাবনায় রেখে সেজেগুজে নতুন করে আঁকতে হবে, সুচারুভাবে উপস্থিত করতে যে হবে সেটাই ছিল কঠিন। কারণ সব শিল্পীই নিজ-নিজ ধারা অনুযায়ী নিজস্ব এবং একামত্ম আপন ভাবনাকে উপজীব্য করে ছবি আঁকায় অভ্যস্ত। তাতে বিমূর্ত-আধাবিমূর্তের ব্যাপারও থাকে নিয়মিত চর্চায়।
অনেকের বিষয়ভিত্তিক বা বাস্তবধর্মিতার বিপরীতে অবস্থান। তবে শিল্পী বলে কথা। বিষয় যেমনই হোক, আর যত কঠিনই হোক, আঁকতে গেলে ভালো কিছুই হয়। অতএব নির্ধারিত বিষয় যা ছিল অর্থাৎ RESILIENT BANGLADESH : LIVING IN HARMONY-এর ক্ষিত্রেও তাই ঘটেছে। শিল্পীরা সবাই বিষয়টিকে নিয়ে অনেক ভেবে ছবিতে উপস্থিত করেছেন।
বেশ লম্বা একটি নাম। বাংলা এক শব্দে পুরোটা বোঝা ভার। তবে চট করেই ধারণায় আসে বিশ্বময় জলবায়ু পরিবর্তনে ভুক্তভোগী এবং জীবন ধারণ সম্পর্কিত ব্যাপারটি জড়িত। বিশেষ করে বাংলাদেশের লড়াকু মানুষের বৈরী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মাঝেও চলমান জীবনকে মানিয়ে নিয়ে চলার যে সংগ্রামী ভূমিকা তা অতুলনীয়। ধারণা করেছি যে, কদিন পর প্যারিসে যে জলবায়ু সম্পর্কিত বিশ্ব সম্মেলন হওয়ার কথা এবং তাতে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার এবং বক্তব্য রাখার কথা, এই প্রদর্শনীটি আগেভাগে অনুষ্ঠিত হচ্ছে সেসবকে উপলক্ষ করে। মোট কথা, বাংলাদেশকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
যাই হোক, বিশদ ব্যাখ্যাটি রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলামের পত্রে পাওয়া গিয়েছিল ‘দেশে বসেই। তিনি লিখেছিলেন, – From time immemorial, the Bengalis have been surviving floods, cyclones and tidal bores, making them one of the most resilient human civilizations. The exhibition titled ÔRESILIENT BANGLADESH : LIVING IN HARMONY WITH NATUREÕ will depict through artworks how the people of Bangladesh have challenged, tamed and befriended the nature, and eventually learned to live in harmony with the nature by developing appropriate practices of agriculture, fishery, housing and transportation systems.
তো – এসব জানার পর আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিতই হয়েছিলাম। মনে হয়েছিল যেন পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ‘কমন’ পড়েছে। কারণ উপরোক্ত বিষয় নিয়েই বেশিরভাগ আঁকাআঁকি করি। নদী, দেশের প্রকৃতি, জেলে-চাষি-শ্রমিকদের মতো খেটে-খাওয়া জীবনসংগ্রামী মানুষদের ছবিতে উপস্থিত করি। শুধু আমিই যে এসবকে বিষয় করি তা নয়। একই রকম চর্চা অংশগ্রহণকারী কয়েকজনও সেই পথের অনুসারী। শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর, শাহাবুদ্দিন, হাশেম খান তাঁদের অন্যতম। তাঁরা নিজ নিজ আঙ্গিকে ঢেলে বিষয়ভিত্তিক ছবি আঁকেন। এই যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ নিয়ে এমনকি মানুষ-সৃষ্ট নানান দুর্বিপাককে নিয়ে বিপর্যস্ততা, শিল্পীদের ক্যানভাসে তা উপস্থিত হয় দায়বদ্ধতা থেকে। শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদিন তেতালিস্নশের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষির হাহাকার এবং সাইক্লোন আর জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ভয়াবহ বিপর্যয়কে নিয়ে ছবি এঁকেছিলেন। কামরুল হাসান-আমিনুল ইসলাম, কাইয়ুম চৌধুরী এঁকেছিলেন যুদ্ধের ধ্বংসলীলাকে নিয়ে। উত্তরসূরি অনেক শিল্পীই তাঁদের অনুসারী হয়েছেন। ‘অ্যান্টি-আর্ট’ বিষয়কে নিয়ে ছবি আঁকলেও সেসবে চিত্রকলার আকর্ষণীয় নান্দনিকতাকে পরিহার না করেই তা করেছেন এবং করে থাকেন। এবারেও তাই হলো। অতি বিমূর্ততার নান্দনিকতার মধ্য দিয়েও প্রতীকী করে আঁকা ছবি উপস্থিত করলেন অনেক শিল্পী। ছবির এই এক মাহাত্ম্য। বাস্তবধর্মী হোক অথবা আধাবিমূর্ত কিংবা বিমূর্ত, অর্থ করলে মানিয়ে যায়
বিষয়ের সঙ্গে। শিল্পানুরাগী প্যারিসীয় কয়েকজন সেই কথা বলে প্রশংসা করলেন প্রদর্শনীর তেমন সব ছবি দেখে।
ঘর জুড়ে গমগমে ভাব। এরই মাঝে শোনা গেল দু-এক লাইন করে গানের সুর। অমত্মরা পর্যমত্ম গিয়ে আবার শুরুটায় গলা সাধা হচ্ছে। কোথায় রিহার্সেল হচ্ছে বোঝা গেল। কোন ঘরে সুরের মূর্ছনা তা দেখার জন্যে অন্য ঘরে পা বাড়াতেই বেশ কয়েকজন বাঙালি এগিয়ে এসে হাত মেলালেন নিজেদের পরিচয় দিয়ে। প্রদর্শনীর জন্যে অভিনন্দিত করলেন। এঁরা সবাই প্রবাসী বাঙালি।
অনেকেই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং মান্যিগুণ্যি। দেশের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন। সেসব নিয়েও আলোচনা করলেন। ভালো লাগাল অতি কর্মব্যস্ততার মধ্যে তাঁরা আমাদের চিত্রপ্রদর্শনী দেখতে এসেছেন।
এক সময় সুবেশী-সুদর্শন আর দীর্ঘকায় একজন এগিয়ে এসে খুবই বিনয়ের সঙ্গে বললেন, ‘আমি এনায়েত। উলস্নাহ এনায়েত।’ আনন্দিত হলাম, কারণ মনে-মনে তাঁকেই খুঁজছিলাম। তিনি আমার শ্যালক জাকিউরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তিনি যোগ করলেন, ‘ও টেলিফোনে আপনার আসার কথা জানিয়েছে।’
তাঁর সম্বন্ধে আগেই অনেক কিছু জেনেছিলাম। বহুকাল ধরে ফ্রান্সে আছেন। প্যারিসেই বসবাস। ব্যাপারটি কিছুক্ষণের মধ্যেই টের পেলাম উপস্থিত দেশি-বিদেশিদের সঙ্গে পরিচয় এবং অবলীলায় ফ্রেঞ্চ বলা দেখে। প্যারিসের দুই বনেদি এলাকায় এভিন্যুতে দুটি রেসেত্মারাঁ রয়েছে। একটির নাম ‘ক্যাফে লুনা’। উলেস্নখ্য, উদ্বোধনীর পরদিন এইটিতে নৈশভোজের দাওয়াতে গিয়েছিলাম। দারুণ ব্যস্ত রেসেত্মারাঁ। এটি ফরাসি খাবার-দাবারের জন্য বিখ্যাত। অন্যটি বাংলাদেশি খাবারের। এসবের পাশাপাশি একটি আমত্মর্জাতিক এয়ার লাইনসের প্যারিসীয় কর্তৃত্ব তাঁর।
ছবি নিয়ে মনোযোগী কেউ-কেউ বলেছেন, ‘আমরা ছবি দেখছি। বিষয়কে বড় করছি না।’ তো, যে যেভাবেই দেখুক, আর যাই-ই বলুক বা বিশেস্নষণ করুক, প্রদর্শনী যে আকর্ষণীয় হয়েছে সে-কথাই প্রকারামত্মরে অথবা সরাসরি সবাই প্রশংসা করতে গিয়ে বারবার উলেস্নখ করেছেন।
যাই হোক, আমিসহ অংশগ্রহণকারী অন্য শিল্পীরা ছিলেন বরেণ্য শিল্পী সৈয়দ জাহাঙ্গীর, মুস্তাফা মনোয়ার, সমরজিৎ রায় চৌধুরী, হাশেম খান, মনিরুল ইসলাম, মাহমুদুল হক, আবদুল মান্নান, শাহাবুদ্দিন, নাজলী লায়লা মনসুর, ফরিদা জামান, মোহাম্মদ ইউনুস, জামাল আহমেদ, রণজিৎ দাশ, শেখ আফজাল, কনক চাঁপা চাকমা এবং মোহাম্মদ ইকবাল।
এই ১৬ জন শিল্পীর আঁকা ৩২টি চিত্রের প্রদর্শনী। আগেই জেনেছিলাম প্যারিসে অবস্থিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের প্রস্তাবনায় বেশ গুরুত্বের সঙ্গে ইউনেস্কো বিশেষ এই প্রদর্শনী করতে আগ্রহী হয়েছিল। অতএব বাংলাদেশ সরকারের সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের ব্যবস্থাপনায় প্রদর্শনীর আয়োজনটি হতে পেরেছে। বলা বাহুল্য, সংস্কৃতিমনা এবং শিল্পানুরাগী মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর প্রদর্শনীটিকে অগ্রতা দেওয়ায় অতি কম সময়ে ত্বরান্বিত হতে পেরেছিল অনুষ্ঠিত হওয়ার ক্ষিত্রে।
প্রদর্শনীটির প্রস্তাবনা, আয়োজন এবং এর সার্বিক সাফল্যের কৃতিত্ব রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলামের। বর্ণাঢ্যতা দিতে দূতাবাসের সব কর্মকর্তা এবং কর্মচারীর ঐকামিত্মকতা ছিল অসাধারণ। তাঁরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠানকে রীতিমতো উৎসবে রূপ দিয়েছিলেন।
প্যারিসবাসী উভয় বাংলার গুণী বাঙালিদের উপস্থিতি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের চমৎকার সংগীতাসর, ভূরিভোজ ইত্যাদির সঙ্গে যুক্ত হওয়া বাইরের করিডোরে অনুষ্ঠিত আর একটি সভার বিভিন্ন দেশের শ্রোতাবৃন্দ। উদ্বোধনের সময় ঠিক করা ছিল ১২ : ৩০ মিনিট। একেবারে কাঁটায়-কাঁটায় তা পালন করে শুরু হয় অনুষ্ঠান। প্রথমেই বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলাম। প্রদর্শনীর তাৎপর্য, মূল্যায়ন এবং বাংলাদেশের শিল্পী ও শিল্পকলার সংক্ষিপ্ত পরিচিতির মাধ্যমে বক্তব্যে তুলে ধরেন বাংলাদেশের জীবনযুদ্ধে জয়ী হওয়া লড়াকু মানুষদের কথা। তুমুল করতালি দিয়ে স্বাগত জানান দর্শকবৃন্দ। পরবর্তী বক্তা আমি। শহিদুল ইসলামের মতো আমারও বক্তব্য ছিল লিখিত। বলা বাহুল্য, সেটিও তৈরি করে দিয়েছিলেন শহিদুল ইসলাম। লিখিত থাকায় কথায় কোনো বিপর্যয় ঘটেনি। সবশেষে উদ্বোধক ইউনেস্কোর ডিরেক্টর জেনারেল ইরিনা বকোভার পক্ষে বক্তব্য রাখেন অ্যাসিসন্ট্যান্ট ডিরেক্টর জেনারেল। তিনিও বাংলাদেশের এবং দেশের মানুষদের ভূয়সী প্রশংসা করেন, সেইসঙ্গে প্রদর্শনীরও। অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের ধন্যবাদ জানান। মজা হলো – প্রত্যেকেরই বক্তব্য রাখার সময় নির্ধারণ করা ছিল। যেমন রাষ্ট্রদূতের জন্যে চার মিনিট, আমার জন্যে ছয় মিনিট এবং উদ্বোধকের জন্যে দশ মিনিট। আমি ছাড়া প্রত্যেকেই টায়-টায় তা পালন করেছেন। আমি কখনো ধীরগতিতে রিডিং সারতে পারি না। আর তা যদি হয় ইংরেজিতে, তবে তো কথাই নেই। যত দ্রম্নত তা পড়ে মঞ্চ থেকে নেমে যাওয়া যায়, সে-দিকটি মাথায় থাকে। অতএব ছয় মিনিটের বক্তৃতা আমি আড়াই মিনিটে শেষ করে ফেলি। অবশ্য রক্ষি যে কারো তা নজরে আসেনি।
বক্তৃতার পালা শেষ হলে শুরু হয় চমৎকার সংগীতাসর। শিল্পীরা সবাই প্যারিসবাসী বাঙালি। প্রদর্শনীর বিষয়ের সঙ্গে মিল রেখে গান বাছাই করা হয়। ধনধান্যপুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা, সর্বনাশা পদ্মা নদী তোর কাছে শুধাই, আলস্নাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দেরে তুই, বরিষো ধরা মাঝে শামিত্মরও বারি, আজ শ্রাবণের আমন্ত্রণে, মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম ইত্যাদি গান পরিবেশনের মাধ্যমে আসর আকর্ষণীয় করে তোলেন সংগীতশিল্পীরা। গান শুনতে-শুনতে আমার মনে হচ্ছিল আমি দেশেই আছি। শিল্পীরা প্রবাসে থেকেও যে সংগীতচর্চায় নিবিষ্ট আছেন প্রবাসী জীবনের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত থেকেও তা দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
এরপর বিরিয়ানিসহকারে ভূরিভোজ। মজা লাগল দেখে যে, অন্য আর একটি অনুষ্ঠানের শ্রোতৃবৃন্দ প্রায় সবাই খাওয়ায় যোগ দিয়ে তৃপ্তির কথা জানালেন। তাঁদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ভিনদেশি।
উপস্থিত বাঙালিদের মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রবাসী নেতারা ছিলেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গে ছবি তুললেন। বিস্মিত হলাম জেনে যে, দেশের অবস্থার খুঁটিনাটি সব খবর তাঁরা রাখেন।
শিল্পী শাহাবুদ্দিন সপরিবারে উপস্থিত থাকায় দেখলাম বিদেশি রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গে আলাপে ব্যস্ত। শাহাবুদ্দিন কোনো এক ফরাসি শিল্পানুরাগীর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। কথা গড়াল প্রদর্শনীর ছবি এবং বাংলাদেশের শিল্পকলার গতি-প্রকৃতির ব্যাপারে। তবে বেশিরভাগই ফ্রেঞ্চ বলায় আমার শুধু হ্যাঁ-হুঁ চালিয়ে যাওয়া ছাড়া বোঝার কোনো উপায় থাকল না।
শিল্পী শাহাদাতের প্যারিসে বসবাস দীর্ঘদিনের। শুরু থেকেই প্রদর্শনীতে উপস্থিত বন্ধুদের সঙ্গে জমিয়ে গল্প করছিল। ছবি আঁকা নিয়ে কথা বলতেই নতুন আঙ্গিকে বেশ কিছু ছবি আঁকছে এবং প্রদর্শনীর কথা ভাবছে খবরটি জানাল।
গল্পে জমিয়ে রেখেছিলেন খ্যাতিমান মাইম শিল্পী পার্থপ্রতিম। তাঁর সঙ্গে বহুকাল পর দেখা। দেখলাম, চিরকালীন হাসিখুশি ভাবটি বিদ্যমান আছে। বদলায়নি একটুও। কথাচ্ছলে ঢাকায় মাইম শিক্ষার একটি প্রতিষ্ঠান তৈরির ইচ্ছার কথাটি জানালেন। ভবনের বাইরের চত্বরে হেনরি মুরের রিক্লাইনিং ফিগার এবং জ্যাকোমিতির ভাস্কর্যদুটির কাছাকাছিতে দাঁড়িয়ে আড্ডায় শামিল ছিলেন কলকাতার প্যারিস প্রবাসী শিল্পী মধুবাবুর সঙ্গে। তিনি ছবি আঁকেন। তাঁর অ্যাটেলিয়ায় এক সন্ধ্যায় জমজমাট আড্ডা এবং খাওয়া-দাওয়ার আসর বসেছিল। বেশ বড়-বড় ছবি আঁকেন। কালোতে আঁকা একটু ভিন্নধর্মী কম্পোজিশনের ছবি ভালো লেগেছে। আসরে বেশ কয়েকজন ভারতীয় শিল্পী ছিলেন। প্যারিসে বসবাসরত আমাদের ছাত্র সোহাগ এই শিল্পীদের খুব ঘনিষ্ঠ মনে হলো।
আবিষ্কার করলাম যে, শিল্পী সোহাগ প্যারিসে বেশ মানিয়ে নিয়েছে, চটপটে হয়েছে। বেশ স্মার্ট। শহরের আনাচ-কানাচ তার নখদর্পণে। দেখা হলো শিল্পী শাহাদাতের প্রাক্তন স্ত্রী বাবলির সঙ্গেও। জানলাম নিজের কর্মক্ষিত্র নিয়ে বেশ ভালো আছে। প্যারিসের প্রাত্যহিক ব্যস্ততার সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে সৃষ্টিশীল কাজে নিয়োজিত আছে।
৩০ সেপ্টেম্বর শাহাবুদ্দিনের বাসার দাওয়াত খুব জমেছিল। অনেকেই উপস্থিত ছিল। শিল্পকলার বর্তমান রকম-সকম থেকে শুরু করে দেশের রাজনীতিও তা থেকে বাদ থাকেনি।
শহিদুল ইসলাম সস্ত্রীকই শিল্পানুরাগী। বিশেষ করে চিত্রকলার প্রতি বিশেষ টান রয়েছে। তাঁদের এই গুণের কথা জানতে পেরেছিলাম দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে অনুষ্ঠিত কয়েকটি প্রদর্শনীর সফল আয়োজন দেখে। অতএব এই প্রদর্শনীর যাবতীয় খুঁটিনাটি যাতে নির্ভুল থাকে সেদিকে দারুণ মনোযোগী ছিলেন। প্রদর্শনীর সার্বিক সাফল্যই তার প্রমাণ।
ঘনিষ্ঠতার কারণে শিল্পীদের ইচ্ছা-অনিচ্ছা এবং অভ্যাসাদির দিকগুলি তাঁর জানা আছে। অতএব নিজ বাসায় শিল্পীদের থাকার
সু-ব্যবস্থাসহ প্যারিসে কোথায়-কোথায় যেতে পছন্দ করবে বা কাদের সঙ্গে আড্ডায় বসলে ভালো লাগবে, এসব দিকেও সুচিমিত্মত ব্যবস্থাদি দেখে ভালো লেগেছে। খুব সুশৃঙ্খল যুগল। অতএব পৌঁছানো মাত্রই আমাদের হাতে ‘আইটিনিরারি’টা দিয়ে দেওয়ায় দেখলাম প্যারিসের দর্শনীয় কোথায়-কোথায় গেলে আমাদের ইচ্ছাপূরণ হবে তার তালিকা। তবে তালিকাভুক্ত বহু জায়গা আমার পূর্বেই দেখা বলে নতুন যেসবের উলেস্নখ ছিল সেগুলিতেই যাওয়া স্থির করলাম।
প্রদর্শনীতে যোগ দিতে পরদিন এলেন শিল্পী মাহমুদুল হক এবং তরুণ শিল্পী ড. মোহাম্মদ ইকবাল। ইকবালের প্যারিসে আসা এই প্রথম। অতএব স্বাভাবিকভাবেই মহাউদ্দীপনা তাঁর। প্যারিসে যা যা আছে তার পুরোটাই তাঁর দেখার ইচ্ছা। বিশেষ করে ‘অরসে’, ‘পম্পেডু সেন্টার’, ‘মডার্ন আর্ট মিউজিয়াম’, ‘ইম্প্রেশনিস্টস গ্যালারি’ ইত্যাদি দেখার ইচ্ছা। সেইসঙ্গে ল্যুভ তো না দেখলেই নয়।
ইকবালের ল্যুভ দর্শন ঘটেছিল নিখরচায়। তা নিয়ে ও মহাবিস্মিত। আসল ঘটনাটি ঘটেছিল মাহমুদের কারণে। এক সময় মাহমুদ ছিলেন বাংলাদেশ জাদুঘরের মহাপরিচালক। এখনো আমত্মর্জাতিক জাদুঘর বা ওই ধরনের কোনো একটি সমিতির সদস্য থাকায় যে-কোনো জাদুঘরে ঢোকার কার্ড রয়েছে তাঁর। সেই কার্ড নিয়ে ইকবালের ল্যুভ দেখা হয়ে গিয়েছিল।
এতবার প্যারিসে এলেও ভার্সাই প্রাসাদ দেখা হয়নি। শুনতাম প্রাসাদ আর এর ঐতিহাসিক সাজানো জলাশয় আর বাগানের সৌন্দর্য নাকি না দেখলেই নয়। তো এবার সে-কাজটি করা হলো। ইতোমধ্যে লন্ডন থেকে আমার বড় পুত্র রাহিলুন নবী টুপুল দেখা করতে চলে আসায় তাকেও সঙ্গী করা হলো। ওর সঙ্গে দেখা হলো চার বছর পর। আবিষ্কার করলাম, দীর্ঘকাল বিলাতে থাকলেও ওর ছেলেমানুষিপনা একটুও কমেনি। সবার সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিতে পেরেছিল।
সফরের দুটি দিক সবচাইতে আকর্ষণীয় হতে পেরেছিল। একটি প্যারিস থেকে প্রায় আশি কিলোমিটার দূরের ক্লোদ মনের গ্রামের বাড়িতে যাওয়া এবং অন্যটি বিখ্যাত ‘ওয়াইন-ফ্যাক্টরি’ এবং আঙুর ক্ষিত দেখতে যাওয়া। এটি শিল্পকলার সঙ্গে যুক্ত কিছু নয়। তবে একটা লিংক আমি ধরিয়ে দিয়েছি। আর তা হলো প্যারিসীয় বিখ্যাত শিল্পীদের অসাধারণ শিল্পকলা রচনা করতে এসবের নিশ্চয়ই বিরাট অবদান ছিল আবেগ আনতে। জায়গার নাম ‘বরদ্যু’। এখানকার ‘রেড ওয়াইনে’র বিশ্বখ্যাতি রয়েছে। কিন্তু কারখানা বন্ধ। বিশাল এলাকা জুড়ে বিসত্মৃত ক্ষিতেও কোনো মানুষ না থাকায় সবাইকে ছেলেমানুষিতে পেয়ে বসল। ক্ষিতে ঢুকে আঙুর খাওয়ার রীতিমতো প্রতিযোগিতায় নামলাম সবাই দুপুরের খাঁ-খাঁ রোদ্দুরকে উপেক্ষা করে। আমরাই শুধু নই। একই কা– আরো পর্যটককে হুলস্থুল করতে দেখা গেল।
আগেই বলেছি, বহু বছর পর আবার প্যারিস যাবার সুযোগ হলো। এই নিয়ে চারবার। ইউরোপে কিছু শহর আছে যেসবে অসংখ্যবার গেলেও ভালো লাগে। দেখার এত কিছু থাকে যে, সবটা দু-একবারে শেষ হয় না। প্যারিস তেমনই একটি। গেলেই
নতুন-নতুন অভিজ্ঞতা অর্জন ঘটে যায়। এবারেও তাই ঘটল।
এর আগে যেমন ক্লোদ মনের গ্রামের বাড়ি এবং তাঁর বিখ্যাত চিত্রমালা ‘ওয়াটার লিলি’ আঁকার জলাশয়টি, চোখ জুড়ানো ফুলবাগান, বাড়িময় জমিয়ে রাখা জিনিসপত্রের জাদুঘর ইত্যাদি আগে দেখা হয়নি। এবার বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শহিদুল ইসলামের সহায়তায় সেসব দেখা হলো। তাঁর কারণে দেখা হলো মহাকবি মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাসস্থানটিও। দেখলাম, এখনো দোতলার বাইরের দেয়ালে একটি নামফলক সাঁটা রয়েছে। ভালো লাগল দেখে যে, নিচের তলায় পুরোটা জুড়ে বইয়ের দোকান। মূলত পুরনো বইপত্রের দোকান হলেও কিছু নতুনের সংযোজন রয়েছে। বেশিরভাগই ফরাসি ভাষার বলে কেনার উপায় থাকেনি, যদিও সস্তায় বিক্রির ব্যবস্থা রয়েছে। তবে লোভ হচ্ছিল, এক ইউরো করে দাম রাখা এলপি রেকর্ড দেখে! তাতে মরিস সেভেলিয়ারের রেকর্ডও ছিল। এই বৃদ্ধ গায়কের গান ষাটের দশকে শুধু সিনেমায়
শুনেছি। দারুণ জনপ্রিয় ছিলেন। প্রায় কিনেই ফেলতাম কিন্তু এতই আঁচড়-পাঁচড়ের দাগ যে, ভালো বাজাবে কি-না সেই সন্দেহে আর কেনা হয়নি।
যাই হোক প্যারিস ছেড়েছিলাম অক্টোবরের চার তারিখে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় যাওয়া। অতএব নির্ধারিত দিনেই সরকারি দায়িত্বের সমাপ্তি। তবে বড় একটি প্রদর্শনীর মতো এই প্রয়োজনীয় কর্মকা–র সুচারু সমাধা করতে ঢাকায় বসে যারা অক্লামত্ম পরিশ্রম করেছেন, আসলে তাঁরাই প্রধান কাজটি করে দিয়েছিলেন। এবং তা যে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবং শিল্পকলা একাডেমি তা বলাই বাহুল্য। সময়মতো জিও দেওয়া, ছবি প্যারিসে পাঠানো ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ কাজ না করলে সবই ভ-ুল হতো। দুর্নামেও পড়তে হতো অব্যবস্থার জন্যে। এক্ষিত্রে সচিব আখতারী মমতাজ, উপদেষ্টা মফিজুর রহমানকে ধন্যবাদের সঙ্গে স্মরণ করছি। প্যারিসে বসেও তাঁদের কথা মনে হয়েছে বারবার। প্রদর্শনীর শিল্পী বাছাই পর্বের কিউরেটর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেনের স্বভাবগত নিঃস্বার্থতা অতুলনীয়।
প্রদর্শনী তো হলো, এবারে বিদায়ের পালা। তবে ইচ্ছে করলে প্যারিসে থাকাও যায় কয়েকদিন। কিন্তু ভাবলাম অতিরিক্ত দু-চারদিন নিজ খরচেই যদি থাকতে হয় তো – আর প্যারিসে নয়, বরং সেনজেন ভিসা যখন আছেই তখন অন্য আর একটি দেশে গেলে মন্দ হয় না। যা ভাবা তাই। সঙ্গীও পাওয়া গেল আমার দুই ছাত্রকে। গ্যালারি চিত্রকের কর্ণধার শিল্পী মনিরুজ্জামান এবং চারুকলা অনুষদের ড্রইং পেইন্টিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ইকবাল ভ্রমণসঙ্গী হলেন। তাঁরা আগেই অবশ্য প্রস্তাবটি দিয়ে রেখেছিলেন। জানতাম – দুজনেরই মনে-মনে তেমন ইচ্ছা রয়েছে। অতএব এবারের ইউরোপ ভ্রমণে আমার অভিজ্ঞতায় আর একটি দেশ তালিকাভুক্ত করে ফেললাম।
তবে আসল উদ্দেশ্যটি ছিল প্যারিস। কারণ সেখানে নেহায়েত বেড়াতে যাওয়া ছিল না। একটি গুরুত্ববাহী উপলক্ষ ছিল, প্রদর্শনী। কিন্তু স্পেন শুধুই ভ্রমণের জন্যে। ঘোরাঘুরি আর পয়সায় কুলালে দু-একটা শহরে গিয়ে গ্যালারি বা দর্শনীয় কিছু দেখা। এই লেখায় স্পেনকে রাখা হলো না। পরবর্তীতে লেখার ইচ্ছা রইল।